#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৪
৬ মাস পর…
এই ছয় মাসে মেহেরিন আর নির্ঝরের সম্পর্ক অনেকটা গভীর হয়ে যায়। মেহেরিন অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে নির্ঝরের উপর। সব কিছু ঠিকঠাক চলতে থাকে। আজ নিশি লন্ডন থেকে ফিরছে। শুধু নিশি’ই থাকবে কারন ও প্রেগন্যান্ট! তাই এ অবস্থায় নিহা আর আনহা চায় নিশি তাদের সাথেই থাকুক। নিশান ও দ্বিমত করে না কারন ওদের কাছে থাকলে নিশি সুস্থ’ই থাকবে। সবার সাথে থাকলে ওর মন ভালো থাকবে তাই নিশান নিশি কে নিয়ে দেশে ফিরে। আপাতত সেও কদিন থাকবে অতঃপর চলে যাবে। কাব্য, ক্যাট, মেহেরিন আর নির্ঝর গেছে তাদের আনতে। ডেভিল ও এসেছে তাদের সাথে। সবাই দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে তাদের জন্য। ফ্লাইট কিছুক্ষণ আগেই ল্যান্ড করেছে। কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে ক্যাট কে বলছে..
– আমাদের বিয়ে তো নিশি’র আগে হলো, তাহলে তুমি..
ক্যাট চোখ গরম করে কাব্য’র দিকে তাকায়। কাব্য চুপ হয়ে যায়। এদিকে নিশি আর নিশান ও চলে আসে। মেহেরিন হেসে তাকে জরিয়ে ধরে। অতঃপর বলে..
– আমার আরেক খালামনি আসছে!
নিশান বলে ওঠে..
– আমিও বাবা হচ্ছি!
নির্ঝর আর কাব্য বলে উঠে..
– আমরাও মামা হচ্ছি ওকে।
ক্যাট বলে উঠে..
– আর আমি মামানী!
নিশি বলে উঠে..
– কেউ একটু বল আমি মা হচ্ছি!
অতঃপর সবাই হেসে উঠে। নিশান নিশি’র ধরে তাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সবাই গাড়িতে চড়ে রওনা দেয় খান বাড়িতে। অভ্র, আনহা, আহিয়ান, নিহা, নীল আর নীলাশা সবাই অপেক্ষা করছিলো তাদের জন্য। নিশি কে দেখতে পেয়ে সবাই বেশ খুশি হলো। আর খুশির সংবাদ’ই বটে। বেশ কয়েকদিন পর এই খুশি তাদের বাড়িতে এলো। শান্ত,অরনি দৌড়ে এলো নিশি’র কাছে। সবাই কিছুক্ষণ বসে গল্প করার পর নীলাশা নিশি’র কোলে রাইয়ান কে দিলো। একটা জমজমাট পরিবেশে তৈরি হলো!
.
রাত্রি বেলা..
মেহেরিন দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিল। পিছন হঠাৎ কারো উপস্থিতি পেয়ে সে তার সামনে ফলের ঝুড়িতে থাকা ছুরি টা নিয়ে পিছনে ফিরেই গলা তার দিকে ধরল। নির্ঝর গলায় ছুরি দেখে বলে উঠে..
– মেহু পাখি আমি আমি। তোমার লেজ কাটা ব্যাঙ!
মেহেরিন ছুরি টা সরিয়ে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর! সে ছুরি টা সরিয়ে বলে উঠে..
– আপনি!
– উফ আরেকটু হলেই আমার প্রান টা চলে যেত। এটা কি হলো?
– আমি ভাবলাম অন্য কেউ!
নির্ঝর কোমরে হাত রেখে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল…
– এটা কোন ধরনের কথা। সবাই তার ভালোবাসার মানুষের গায়ের গন্ধেই তাকে চিনে যায় আর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না।
– না। কারন সবাই আপনার মতো দিনে দিনে পারফিউম চেঞ্জ করে না। আর এতো পারফিউমের ঘ্রাণ মনে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।
নির্ঝর হেসে পেছন থেকে মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে বলে..
– জানো মেহু পাখি তোমার গায়ের গন্ধ না তোমার উপস্থিতিতে আমার হার্ট বিট বলে দেয় তুমি আমার কাছে।
– হামম হামম!
– কি এমন করছো তুমি!
– কিছু না একটু কাজ করছি!
বলেই মেহেরিন আবারো সেই কাজের মধ্যে ঢুকে গেল। নির্ঝর আস্তে আস্তে তার গাল দিয়ে মেহেরিন’র গালে স্লাইড করতে থাকে। হঠাৎ মেহেরিন বলে উঠে..
– আম্মুউউ!
– কি হলো! ( মেহেরিন কে ছেড়ে )
– আপনার দাড়ি!
– আমার দাড়ি!
– হ্যাঃ আপনার এই খোঁচা খোঁচা রাক্ষস দাড়ি যা আমার গালের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
– তুমি জানো কতো মেয়ে আমার এই চাপদাড়ির পাগল!
– ভালো তাহলে ওদের নিয়েই থাকেন!
বলেই চলে গেলো।
– আরে মেহু পাখি শোন তো। রেগে যাচ্ছ কেন?
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিল। নির্ঝর কিছু বলতে যাবে এর আগেই দরজা বন্ধ করে দিল। বেচারা নির্ঝর হতাশ নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অতঃপর আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের দাড়ি গুলো দেখতে লাগলো। কি মনে করে বাথরুমে চলে গেল। কিন্তু পর বেরিয়ে এসে নিজের দাড়ি গুলো দেখতে লাগল। না আগের থেকে এখন অনেকটা ছোট লাগছে। নির্ঝর এবার হেসে মেহেরিন’র রুমের দিকে গেল। কিন্তু দরজা তো বন্ধ। তো কি বেলকনি কবে কাজে আসবে। নির্ঝর দ্রুত গ্রিল বেয়ে বেয়ে মেহেরিন’র রুমে এলো। বরাবরের মতো দরজা খোলাই পেল বেলকনির। মেহেরিন’র ঘরে সেই গান বাজছে আর মেহেরিন একা একা নাচছে। হুট করেই নির্ঝর এসে তার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। অতঃপর তাকে নিয়ে নাচতে শুরু করল। মেহেরিন এতোটা অবাক হলো না কারন সে জানত নির্ঝর আসবে। অতঃপর নাচের শেষে নির্ঝর মেহেরিন কে নিজের কাছে টেনে পেছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরল। অতঃপর আবারো তার গালের সাথে মেহেলিন’র গাল স্লাইড করল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল অতঃপর ব্যাথা না পাওয়ায় ফিরে তাকাল। নির্ঝরের দাঁড়িতে হাত রেখে হেসে দিল। নির্ঝর পেছন থেকেই তাকে শক্ত করে জরিয়ে নিল।
অতঃপর মেহেরিন এবার ল্যাপটব নিয়ে বসে পরল। নির্ঝর মুখ ভেংচি দিয়ে মেহেরিন’র সামনে বসল। মেহেরিন কে বার বার খোঁচা দিতে লাগল। কিন্তু মেহেরিন’র কোন পাত্তা নেই। নির্ঝর অসহায় মুখ করে বলল..
– মেহু পাখি!
– হাম।
– চলো ঘুরতে যাই!
– কোথায়?
– লং ড্রাইভে!
– না অনেক বার গেছি আর না। নতুন কিছু থাকলে বলেন।
– আচ্ছা বাইকে চড়ে যাবে।
– অনেক বার গিয়েছি।
– আইসক্রিম!
– বিরিয়ানি, আইসক্রিম, ফুচকা খাওয়া শেষ!
– তার মানে তুমি যাবে না বলেই মনস্থির করে ফেলেছ।
– না বললাম তো নতুন কিছু থাকলে বলুন যাচ্ছি!
– ধুর ছাই যাওয়া লাগবে না কোথাও।
বলেই নির্ঝর চলে গেলো। মেহেরিন মুখ টিপে হাসল কারন মেহেরিন জানে নির্ঝর আবার আসবে। ঠিক তাই হলো খানিকক্ষণ পর আবারো নির্ঝর এলো। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে হুট করেই মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– কি হলো?
নির্ঝর নিজের কপালের সাথে মেহেরিন’র কপাল ঠেকিয়ে বলল..
– সারপ্রাইজ!
– ওকে আই’ম ইন্টারেস্ট!
– ইমপ্রেস না।
– না এখনো না!
– আচ্ছা চলো তাহলে!
অতঃপর নির্ঝর তাকে নিয়ে ছাদে চলে এলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল ছাদের কিনারে একটা টেবিল আর তেমন কিছু না। সবসময় যেমন থাকতো আজও তেমন। নির্ঝর তাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– সারপ্রাইজ টা কি?
নির্ঝর মেহেরিন’র চোখের সামনে হাত দিল। অতঃপর তাকে একটু ঘুরাল তারপর হাত সরিয়ে নিল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। নির্ঝর হাত দিয়ে ইশারা করে মেহেরিন কে সামনের দিকে তাকাতে বলল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– চাঁদ!
– হাম মেহু পাখি! ( পেছন থেকে আবারো জরিয়ে ) আজ জোৎস্না রাত। এই রাতে দুজনেই মিলে চন্দ্র বিলাস করবো। এর আগে কখনো করেছো?
– না করি নি।
– তাহলে তোমার জন্য আনতে পারলাম তো নতুন কিছু!
– হুম!
– আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি!
বলেই নির্ঝর চলে গেল আর যাওয়ার আগে ছাদের আলো নিভিয়ে দিল। মেহেরিন এতোক্ষণ’এ খেয়াল করলো চাঁদের আলোতে পুরো ছাদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। না হলে প্রথমে সে বুঝতেই পারে নি। অতঃপর খানিকক্ষণ পর নির্ঝর এলো। মেহেরিন তার দিকে তাকাতেই নির্ঝর বলে উঠে..
– চোখ বন্ধ করো মেহু পাখি!
মেহেরিন আবারো চোখ বন্ধ করে দাঁড়াল। অতঃপর নির্ঝর তার সামনে এসে দাঁড়ায়। দুজনেই তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। দূরত্ব নেই একটুও। শুধু দুজনের নিঃশ্বাস আর বয়ে যাওয়া বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। মেহেরিন বলে উঠে..
– চোখ মেলবো!
– হাম তাকাও এবার!
অতঃপর মেহেরিন চোখ মেলে তাকাল..
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৫
মেহেরিন চোখ খুলে নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর দেখতে পেল ওর সামনে একটা কেক নিয়ে নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে। মোমবাতির আলোয় দু’জন দু’জনকে দেখছে। মেহেরিন বুঝতে পারল না কেক কিসের জন্য। নির্ঝর হেসে বলল..
– happy six month anniversary my mahu pakhi!
মেহেরিন ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর কে দেখছে সে। কি বললো এটা ও। নির্ঝর এবার কিঞ্চিত হেসে বলল..
– হাম মেহু পাখি তোমাকে নিজের করে পেয়েছি এর ৬ মাস আজ পূর্ণ হলো। মেহু পাখি ৬ মাস হয়ে গেল আমাদের সম্পর্কের। এরকম’ই এক জোৎস্না রাতে তোমাকে নিজের করে পেয়েছিলাম আমি। দেখো আজ, আজ আবারো সেই জোৎস্না রাত, আমাদের রিলেশন’র ৬ মাস। আশা করি এভাবেই সারাটা জীবন তোমার সাথে আলোকিত এই চাঁদ কে নিয়ে কাটাবো। তাইতো মেহু পাখি!
মেহেরিন হেসে মাথা নাড়ালো। কি বলবে সে, বলার কিছু নেই। সত্যি এমনটা হবে সে আজ অবদি ভাবে নি। শেষে কি না রিলেশন’র ৬ মাস পূর্ণ হওয়াতে এই সারপ্রাইজ! মেহেরিন কিছু বলতে যাবে তখন নির্ঝর তার মুখে আঙ্গুল রেখে চুপ থাকতে বলল। অতঃপর চোখের ইশারায় ওদিক তাকাতে বলল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে কয়েকটা ফানুস উড়ে যাচ্ছে। মেহেরিন এবার এক দৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে রইল। ফানুস গুলো সব একসাথে আকাশে উড়ছে তার সাথে দূরে এই আলোকিত চাঁদ! এরপর আর কি পাওয়ার থাকতে পারে জীবনে। কেউ যদি তাকে এতোটা ভালোবাসে তাহলে আর কার আশা করবে সে।
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। খানিক বাদে কি মনে করে আবার নিচে তাকাল। তাকিয়ে দেখে কাব্য,রোদ্দুর, ইহান, আরিশা আর ক্যাট দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সাথে ডেভিল ও। সবাই তাকে দেখে হাসল। মেহেরিন বলে..
– তাহলে এরাও ছিল!
– হুম এটা আমার সারপ্রাইজ খানিকটা ইউনিক তো হতেই হবে তাই না
– হাম হাম তো এখন!
– এখন আর কি নাও কেক কাটো! সেলিব্রেশন তো করি।
মেহেরিন হেসে নিচে তাকিয়ে বলল..
– আপনারা কি উপরে আসবেন!
সবাই হেসে দিল। ইহান বলল..
– আসছি!
মেহেরিন হেসে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর তার দিকে হাসছে। তার হাসিতে অন্যরকম না সবার মতোই কিন্তু মেহেরিন’র কাছে নির্ঝরের এই হাসি টা খুব ভালো লাগে। নির্ঝরের ঠোঁটের কোনে সবসময়ই হাসি থাকে।
মেহেরিন হেসে নির্ঝরের গালে হাত রেখে বলে..
– এই হাসিতে কারো নজর না লাগুক!
নির্ঝর আবারো হেসে বলে..
– মেহু পা…..
বলার আগেই নির্ঝর কে কেউ গান শুট করল। আর নির্ঝর ছাদের গ্রিলের সাথে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রইল।সব কিছু ছিটকে পড়ে রইল। কিন্তু মেহেরিন! সে সেই এক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। দেখছে তার লেজ কাটা ব্যাঙ টা তার চোখের সামনে মরে যাচ্ছে অথচ সে যেনো কিছু করতে পারছে না। সময়ের সাথে সাথে যেন সে নিজেও থমকে গেছে। হঠাৎ কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে মেহেরিন’র ধ্যান ভাঙল। মেহেরিন বুঝতে পারল এটা তার কল্পনা ছিল কিন্তু এমন মারাত্মক কল্পনা সে আজ অবদি দেখে নি। মেহেরিন হুট করেই তার গালে রাখা নির্ঝরের হাত টা ধরে ফেলল। নির্ঝর বলে উঠে…
– কি হয়েছে মেহু পাখি?
মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। অতঃপর একটা মৃদু হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে যার মানে কিছু হয় নি। কিন্তু এই কল্পনা তার মাথা থেকে যাচ্ছে না। কারন কি এমন একটা কল্পনার। সত্যি’ই কি তাহলে নির্ঝর!
অতঃপর মেহেরিন এসব কথা মাথা থেকে ঝেড়ে নিতে চাইছে কারন সবাই এখানে উপস্থিত। আর এই সময় এসব কথা বলে মজাটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
মেহেরিন খেয়াল করল তার সামনে একটা টেবিলে কেক রাখা হয়েছে। নির্ঝর মেহেরিন কে ঘুরিয়ে নিজের কাছে আনলো। অতঃপর একসাথে কেক কাটলো। উপস্থিত সবাই হাততালি দিলো। সবাইকে কেক খাওয়ানোর পর হুট করেই নির্ঝর তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরল। সবাই অনেকটা অবাক হলো কারন এটাই তো প্ল্যান’র মধ্যেই ছিল না।
নির্ঝর পকেট থেকে একটা রিং বের করে মেহেরিন’র সামনে রেখে বলল..
– আজ এই জোৎস্না রাত, চাঁদের এই আলোকিত রাত। এরকম এক রাতে তোমাকে নিজের করে পেয়েছিলাম। ভালোবাসি বলেছিলাম,তুমিও বলেছিলে আমাকে তুমি ভালোবাসো। দেখতে দেখতে সেই সম্পর্কের আজ ৬ মাস পূর্ণ হলো আর আমার মতে এখন’ঈ ঠিক সেই সময়। আজ এই সময়টা কে নিজের মনে বন্দী করে রাখতে চাই মেহু পাখি। আবারো সেই একই রাতে,একই সময়ে আমাদের আরেকটা নতুন সম্পর্কের সূচনা করতে চাই আমি। তোমার সাথে হাজারো রাত এভাবে একসাথে থাকতে চাই। তো মেহু পাখি will you marry me!
মেহেরিন হা হয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। এরকম কিছুর আশা সে একদম করে নি। ইহান, রোদ্দুর, কাব্য, ক্যাট আর আরিশা চেয়ার আপ করে বলতে লাগল..
– মেহেরিন হ্যাঁ বলে দাও।
কিন্তু মেহেরিন তো অবাক চোখে তাকিয়ে’ই আছে নির্ঝরের দিকে। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। নির্ঝর অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। তার মনে একটাই কথা বাজচ্ছে নির্ঝর তাকে বরাবরের জন্য নিজের করে পেতে চায়। তো এখন সে কি করবে। হ্যাঁ বলে দিবে তাকে। হ্যাঁ ই তো বলা উচিত কারন সেও তো ভালোবাসে নির্ঝর কে।
মেহেরিন হেসে নির্ঝরের দিকে হাত টা বাড়িয়ে দিল। নির্ঝর চোখ মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে নির্ঝর অনেক খুশি। সে দ্রুত মেহেরিন’র অনামিকা আঙ্গুলে রিং টা পড়িয়ে দিল। সবাই খুব জোরে হাত তালি দিতে লাগল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র হাতে একটা কিসি করল। মেহেরিন কেঁপে উঠলো। সে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। এই ফাঁকে এক এক করে সবাই চলে যেতে লাগল। সবাই নির্ঝর আর মেহেরিন কে একা ছেড়ে দিল। নির্ঝর উঠে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়াল। অতঃপর তার কোমর আলতো করে জরিয়ে নিজের কাছে টানল। মেহেরিন নির্ঝরের বুকে দু হাত রাখল। নির্ঝর মেহেরিন’র কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। অতঃপর তার কপালে অনেক ডীপ একটা কিস করল। মেহেরিন বার বার কেন কেঁপে উঠছিল। নির্ঝরের ছোঁয়ায় বারবার তার কাঁপুনি বেড়ে যাচ্ছে। এ কেমন এক অনুভূতি যা সবাইকে বোঝা যায় না।
নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত রাখল আর তাকিয়ে রইল তার দিকে। অতঃপর বলল…
– ধন্যবাদ মেহু পাখি!
– হাম!
– আমার ভালোবাসা কবুল করলে তুমি, সারাজীবন একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি করলে। মেহু পাখি কথা দাও যেরকম’ই পরিস্থিতি আসুক না কেন তুমি কখনো আমায় ছাড়বে না।
মেহেরিন হেসে নির্ঝরের গলায় হাত জরিয়ে ধরল। অতঃপর তার নাকের সাথে নিজের নাক ঘসে বলল..
– কথা দিলাম। যতদিন আমার ভালোবাসা থাকবে আমিও থাকবো আপনার সাথে। আর আমার এই ভালোবাসা কখনো কমবে না আর না আমি কমতে দেবো।
নির্ঝর কথা গুলো শুনে এক ঝটকায় মেহেরিন কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। অতঃপর বলে..
– আই লাভ ইউ মেহু পাখি! খুব ভালোবাসি তোমাকে খুব। তোমার সাথেই আমার অস্তিত্ব জরিয়ে আছে। তুমি শুধু আমার হয়েই থাকবে আজীবন। আমি আগলে রাখবো তোমাকে।
মেহেরিন হেসে বলে..
– হুম আমিও ভালোবাসি!
নির্ঝর প্রায় অনেকক্ষণ’ই মেহেরিন’কে এভাবে জরিয়ে ধরে থাকে!
পরদিন…
আজ একটা পার্টি থ্রু করা হয়েছে নির্ঝর আর মেহেরিন’র জন্য। এখানেই তাদের বিয়ের অ্যানাউসমেন্ট হবে। সবাইকে জানানো হবে তাদের বিয়ে সম্পর্কে।নিশি’র কথায় নিশান বিয়ে অবদি থাকতে রাজি হলো। অভ্র নির্ঝর কে বলল তার ফ্যামিলিকে এসব জানাতে। নির্ঝর বলল সে জানিয়েছে আর তারা বিয়ের সময় আসবে বলে কথা দিয়েছে। অভ্র কথা শুনে বেশ খুশি হলো।
অনুষ্ঠান সন্ধ্যায় শুরু হলো। প্রেস, মিডিয়া, বিজনেস কলিগ সবাই উপস্থিত এখানে। নিহা, আহিয়ান সবাই এই বিয়েতে বেশ খুশি। শান্ত আর অরনি একবার পার্টিতে ছোটাছুটি করছে আবার রাইয়ান’র সাথেও খেলছে। পার্টির ড্রেস আপ ছিল সব ছেলেরা সাদা রঙের স্যুট পড়বে আর মেয়েরা সাদা রঙের গাউন। সবাই সেটা’ই পড়লো।
নির্ঝর অনুষ্ঠানে এসে পরেছে প্রায় অনেকক্ষণ। একটা কালো রঙের স্যুট পরা সে। অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে। সে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে মেহেরিন’র জন্য। অতঃপর সব লাইট অফ হলো। একটা লাইট জ্বলে উঠলো যার মাঝে মেহেরিন কে দেখা গেল। সাজগোজের ছিটেফোঁটা ও নেই তার মাঝে। শুধু মেরুন রঙের একটা গাউন পড়া আর চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে ছেড়ে দিয়েছে। নির্ঝর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। কারন মেহেরিন কে এভাবেই বেশ সুন্দর লাগছে। সে চোখ সরাতে পারছে না তার থেকে। অভ্র হেসে মেহেরিন’র কাছে গিয়ে তাকে সিঁড়ি থেকে নামালো। অতঃপর তাকে নিয়ে এলো নির্ঝরের সামনে। নির্ঝর মেহেরিন’র হাত টা ধরল। অতঃপর তার কোমর ধরে ডান্স করতে লাগলো। তাদের পিছনে নীল – নীলাশা, নিশি – নিশান, রোদ্দুর – আরিশা, কাব্য – ক্যাট তাঁদের কে চারদিকে ঘিরে নাচতে লাগলো। মাঝখানে নির্ঝর আর মেহেরিন নাচতে লাগল।
নির্ঝর মেহেরিন’র কোমর ধরে নিজের কাছে এনে বলল..
– অনেক সুন্দর লাগছে তোমায় মেহু পাখি!
– আমি তো এভাবেই সুন্দর!
নির্ঝর হেসে দিল।
.
নীল নীলাশা’র কোমর জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলাশা নীলের গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীল বলে উঠে..
– জানো নীল আজ আমি অনেক খুশি , আমার বোন সঠিক একজন লাইফ পার্টনার পেল তার জীবনে!
নীলাশা হেসে নীলের কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে..
– ঠিক আপনার মতো নাহ!
নীল হেসে দিল নীলাশা’র কথায়!
.
রোদ্দুর আরিশা কে একবার ঘুরিয়ে নিজের কাছে টেনে আনলো। আরিশা হেসে রোদ্দুরে দিকে তাকাল। রোদ্দুর বলে উঠে..
– বেশ লাগছে আজ তোমাকে আরু!
– তাই নাকি।
– হাম। আর আমাকে কেমন লাগছে!
– একদম ইঁদুর বাচ্চা ইঁদুর বাচ্চা!
– আরু!
আরিশা হেসে রোদ্দুরে’র গালে হাত রেখে বলে..
– আপনি আমার ভালোবাসা! আর ভালোবাসা সবসময় সুন্দর হয়!
রোদ্দুর আরিশা’র কথায় হেসে দিল।
.
কাব্য ক্যাট কে ছেড়ে দিয়ে আবারো নিজের কাছে টানলো। অতঃপর ক্যাট কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে নাচতে লাগলো। কাব্য ক্যাট’র ঘাড়ে মাথা রেখে নাচতে লাগলো। ক্যাট বলে উঠে..
– একটা কথা বলবো তোমাকে।
– বলো!
ক্যাট ঘুরে কাব্য’র সামনে আসলো। কাব্য তার কোমর জরিয়ে ধরল। অতঃপর পা দুটো উঁচু করে কাব্য’র কানে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগলো..
– আপনি বাবা হচ্ছেন!
কাব্য ৪৪০ ভোল্টের একটা ঝটকা খেলো। এর মাঝেই নাচ শেষ হয়ে গেল। ক্যাট কাব্য কে ছেড়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল কিন্তু কাব্য ঠিক ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তার যেন বিশ্বাস’ই হচ্ছে না সে বাবা হচ্ছে। সে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। অতঃপর যখন হুশ ফিরল তখন তাকিয়ে দেখে ক্যাট সেখানে নেই। চলে গেছে। কাব্য ও তার পিছু পিছু সেখানে গেল।
.
সবার নাচ খুব সুন্দর ভাবেই শেষ হলো। সবাই হাত তালি দিচ্ছে। নিহা আর আহিয়ান, অভ্র আর আনহা দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। নিহা’র কোলে রাইয়ান আর আনহা সামলাচ্ছে শান্ত আর অরনি কে। আহিয়ান ও তার সাহায্য করছে। অভ্র এসে বিয়ের অ্যানাউসমেন্ট করল সবার সামনে। সবাই বেশ খুশি হলো। ১৫ দিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। অতঃপর সবাই বাগানে আসল। একসাথে সবাই ফানুস উড়াল। নির্ঝর আর মেহেরিন, রোদ্দুর আর আরিশা, কাব্য আর ক্যাট, নিশি আর নিশান, নীল আর নিলাশা, নিহা আর আহিয়ান, অভ্র আর আনহা, ইহান আর বাচ্চারা সবাই জুটি হয়ে একসাথে ফানুস উড়াল। ফানুস উড়িয়ে দেবার পর সব ছেলেরা তাদের জুটিদের এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরল। সবার চোখ আকাশে। ফানুস গুলো উড়ে চলে যাচ্ছে সব একে একে!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৬
১৫ দিন ধরে সবাই শপিং করতে ব্যস্ত এদিকে নির্ঝর আর মেহেরিন প্রেমে। এই ১৫ দিন ধরে তারা শুধু ঘুরতেই থাকে আর বাড়ির সবাই তাদের বিয়ের শপিং করতে করতেই ব্যস্ত। এখন তো ক্যাট আর নিশি দুজনেই প্রেগন্যান্ট! তাদের দু’জনের ও বিশেষ বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। এদিকে নির্ঝর তো শুধু মেহেরিন কে নিয়েই ব্যস্ত। সারাদিন তার দেখাশোনা করতে করতেই তার দিন শেষ। কয়েকদিন আগেই তারা দুজন মিলে একটা গানে নেচে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে। সেখানে তাদের বিয়ের অ্যানাউসমেন্ট ও করে তারা। সবার কাছেই দ্রুত এই খবর ছড়িয়ে গেল। নিরব আর কথার কাছেও খবরটা গেল। এমনকি তাদের ইনভাইট ও করল মেহেরিন।
কাল মেহেন্দী! রাতের বেলায় মেহেরিন তার বাগানে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ভালোই লাগে বাগানে হাঁটতে। খুব নিরবতা এখানে। কিন্তু মেহেরিন বাগানে তখন’ই আসে যখন সে টেনশনে থাকে। আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। তার চিন্তা হলো সেদিনের সেই কল্পনা। কেন দেখলো এমন কল্পনা সে এটা তার ভাবনার বাইরে। অভ্র কালকের জন্য সবকিছু জোগাড় করে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। তখন দেখতে পায় মেহেরিন বাগানে দাঁড়িয়ে হাঁটছে। অভ্র মেহেরিন’র কাছে গেল। অতঃপর পেছন থেকে তাকে ডাক দিল..
– আদুরী!
– দা!
– এখানে কি করছো কিছু হয়েছে?
মেহেরিন এসে অভ্র কে জরিয়ে ধরল। অভ্র মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাতে থাকল। প্রায় অনেকক্ষণ পর মেহেরিন বলে উঠে…
– দা তোমার কি মনে হয়?
– কোন ব্যাপারে!
– এই যে এই বিয়ে! সবকিছু কি খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
– ৬ মাস তো ছিলে ওর সাথে বুঝতে পারো নি তাকে।
– সেটা কথা না দা!
– তাহলে, কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো
– একটা স্বপ্ন, একটা মারাত্মক কল্পনা।
– তুমি এসবে বিশ্বাস করো নাকি!
মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকাল। অভ্র তার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল..
– এসব বিশ্বাস কুসংস্কার ছাড়া কিছু না। ভাগ্যে যা থাকবে তাই হবে। এসব বাদ দাও।
– আচ্ছা দিয়ে দিলাম।
– হাম যাও ঘুমিয়ে পরো। কাল তোমার মেহেন্দী।
– তুমি পরিয়ে দেবে আমায় মেহেদী।
– হুম দেবো তো!
– ইয়াপ লাভ ইউ দা!
বলেই তাকে আবারো জরিয়ে ধরল।
খানিক বাদেই মেহেরিন রুমে যেতে নিল তখন হুট করেই কেউ তাকে টান দিল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল নির্ঝর ওর কোমর জরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর নাক দিয়ে মেহেরিনের নাকে ঘসা দিয়ে বলল..
– আমি জানতাম আজ তুমিও আমার মতো ঘুমোতে পারবে না।
– জ্বি না ভুল। আমার অনেক ঘুম পেয়েছে আর আমি ঘুমাতেই যাচ্ছি।
– মানে কি? বিয়ের এক্সাইটমেন্ট কি আমার মাঝেই নাকি। প্রথম বার বিয়ে করছি মেহু পাখি!
– লেজ কাটা ব্যাঙ আপনাকে এভাবে এভাবে বলি না। কেন আমি কি এর আগে ১০ টা বিয়ে করেছিলাম নাকি!
নির্ঝর মেহেরিন কে ছেড়ে দিয়ে বলে..
– সত্যি কথা বলবো!
– হাম!
– তুমি না সেদিন বিয়ে করতে গেছিলে নিরব কে।
– মনে হচ্ছে বিয়ে টা হয়ে গেলে খুব খুশি হতেন।
নির্ঝর আবারো মেহেরিন কে জরিয়ে নিজের কাছে টেনে বলে..
– বিয়ের দিন’ই তোমাকে নিয়ে পালাতাম বুঝলে। তুমি শুধুই আমার। একান্ত আমার। তোমার উপর শুধুই আমার অধিকার বুঝলে।
– ওহ আচ্ছা আর আপনার ওপর। পুরো জাতির অধিকার তাই না।
– আরে মেহু পাখি!
মেহেরিন নির্ঝরের পেটে গুঁতো দিয়ে বলল..
– সরুন এখান থেকে!
বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে রুমে চলে গেল। নির্ঝরও গেল তার পিছু। নির্ঝর মেহেরিন কে বার বার মানানোর চেষ্টা করতে লাগল। অতঃপর একসময় নির্ঝর মেহেরিন’র দুহাত ধরে পিছনে নিয়ে তার কাছে মেহেরিন কে আনল। অতঃপর দুহাত দিয়ে তার গাল ধরে বলল..
– আমি শুধুই তোমার। বুঝলে তুমি! লেজ কাটা ব্যাঙ শুধু তার মেহু পাখির!
– না বুঝলাম না।
– আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি!
বলেই নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে আগাতে লাগলো। মেহেরিন হেসে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল..
– নির্ঝর না!
নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র গালে তার গাল স্লাইড করতে লাগলো।
.
পরদিন মেহেন্দী তে ড্রেস আপ ছিল সব মেয়েরা সবুজ রঙের ঘাগড়া আর সব ছেলেরা কালো আর সবুজ রঙের কুর্তা। সবাই উপস্থিত মেহেন্দী অনুষ্ঠানে। মেয়েরা মেহেন্দী লাগাতে শুরু ও করেছে। আনহা আর নিহা গেছে মেহেরিন কে আনতে। নির্ঝর এক পাশে দাঁড়িয়ে কাব্য, রোদ্দুর আর ইহানের সাথে গল্প করছে। হঠাৎ নির্ঝরের চোখে পড়ল মেহেরিন আসছে। পরনে সবুজ রঙের ঘাগড়া আর একদম হালকা গহনা। হাত ভর্তি সবুজ চুড়ি। সকালেই নির্ঝর নিজ হাতে তাকে এসব পরিয়ে দিয়েছিল। নির্ঝর এবার মেহেরিন’র মুখের দিকে তাকাল। মেহেরিন আজ সেজেছে। মেহেরিন’র সাজ দেখে নির্ঝর ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। শুধু নির্ঝর না ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর ও । এই প্রথম সবাই তাকে সাজতে দেখল। বেশ সুন্দর লাগছে ওকে। তবে সাজ টা একদম’ই হালকা। হঠাৎ কাব্য বলে উঠে…
– এটা জান তো!
ইহান বলে..
– বিশ্বাস হচ্ছে না!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– জান কে এতো সুন্দর লাগছে!
নির্ঝর একবার এদিকে তাকায় আবার এদিকে তাকায়। অতঃপর বলে উঠে..
– গাইস ও আমার বউ। তোমরা নজর কেন লাগাচ্ছ!
সবাই এবার নির্ঝরের দিকে তাকায়। ইহান বলে উঠে..
– ভাই আমরা না দা নজর লাগাচ্ছে। দা কে একবার দেখ!
নির্ঝর এবার ঘুরে দা’র দিকে তাকাল। দা অবাক চোখে দেখছে মেহেরিন কে। মেহেরিন সিঁড়ির কাছে আসতেই দা হেটে ওর কাছে গেল। মেহেরিন এক লাফ দিয়ে বলল..
– দা আমাকে কেমন লাগছে বলো!
– খুব সুন্দর!
– হি হি আমি জানতাম! এই প্রথম আমি সেজেছি জানো!
– হাম জানি!
অতঃপর দা মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে বসাল। অতঃপর নিজেই ওর হাতে মেহেদী পড়াতে লাগল।সবাই অবাক হয়ে দেখছে অভ্র কিভাবে মেহেরিন’র হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে! নির্ঝর ওরা সবাই এসে উঁকি দিল। নির্ঝর বলে উঠে..
– বাহ দা এতো সুন্দর মেহেদী দিতে পারো।
– কোন সন্দেহ আছে আপনার।
– না মেহু পাখি সন্দেহ থাকবে কেন। তোমরা ভাই বোন”রা যে মাল্টিট্যালেন্টেড এটা আমি জানি।
মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি দিয়ে আবারো কাজে মনোযোগ দিল। নীল এসে মেহেরিন’র পাশে ওর আরেক হাতে মেহেদী দিতে লাগল। মেহেরিন হেসে দুজনের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিশান ছবি তুলছে আর আহিয়ান অরনি আর শান্ত কে সামলাচ্ছে। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে কাজে। নিরব এসে এক কোনে দাঁড়িয়ে শুধু মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। সাহস হয় নি মেহেরিন’র সাথে একবার কথা বলার। আর কথা শুটিং থাকার কারনে আসতে পারি নি।
মেহেদী দেওয়া শেষ, শুধু নামটা লেখি নি অভ্র! নির্ঝর নিজের হাতেই লেখল তার নাম। সবাই এটা দেখে কিছুটা মজা নিল। অবশেষে গান বাজনা দিয়ে শেষ হলো মেহেন্দীর অনুষ্ঠান। কাল হলো সঙ্গীত!
অভ্র এসে নির্ঝর কে বলল…
– তোমার মা আর বোন তো এখনো আসলো না নির্ঝর!.
– আসলে দা আমার মার হার্টের প্রবলেম আছে। আর গতকাল রাতে হঠাৎ করেই তার বুকে ব্যাথা উঠে। ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন বেড রেস্ট এ থাকতে।
– কি বলছো? বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেই তাহলে!
– না দা! এখন এটা সম্ভব না। সবাই জানে আমাদের বিয়ে আর এখন সেটা পিছানো হলে..
– তোমার মার কাছে কেউ আছে তো এখন!
– হ্যাঁ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আর ছোট বোন তো আছে।
– হসপিটালে কথা বলে দেখবো একবার।
– দা এতো টেনশন নিবেন না। মা চলে আসবে। আর অসুস্থতা তো বলে আসে না। এখন হঠাৎ করে!
– আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার মা’র সাথে নিহা তো কথা বলেছে।
– হ্যাঁ দি বলেছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে!
.
সঙ্গীতে..
সবার ড্রেস আপ আজ কালো রঙের ছিল। মেয়েরা কালো রঙের লেহেঙ্গা আর ছেলেরা কালো রঙের পাঞ্জাবি! মেহেরিন নিচে নামতেই নির্ঝর হাতে গিটার নিয়ে গান গাইতে শুরু করে..
Kacchi doriyon, doriyon, doriyon se
Mainu tu baandh le
Pakki yaariyon, yaariyon, yaariyon mein
Honde na faasley
Eh naraazgi kaagzi saari teri
Mere sohneya sunn le meri
মেহেরিন’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। অতঃপর তার সাথে নাচতে শুরু করে…
Dil diyan gallan
Karaange naal naal beh ke
Akh naale akh nu milaa ke
Dil diyan gallan haaye
Karaange roz roz beh ke
Sacchiyan mohabbataan nibha ke…
গান বাজনা দিয়ে শেষ হয় সঙ্গীত! অভ্র, নিহা, নীল আর নিশি সবাই অনেক খুশি কারন মেহেরিন খুশি! কাল গায়ে হলুদ! অভ্র’র খুব খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে মেহেরিন চলে যাবে তাদের ছেড়ে। নির্ঝরের নতুন বাড়িতেই থাকবে তারা দুজন। শুধু অভ্র’র কারনে বিয়েটা তাদের বাড়ি থেকেই হচ্ছে। অভ্র বসে ভাবতে থাকে, আদুরী তাদের একমাত্র ভরসা ছিল। তার মুখের হাসি ছিল তাদের মন ভালো করার ঔষধ। খান বাড়ির একমাত্র অবলম্বন আর অহংকার! এই অহংকার যদি চলে যায় তখন খান বাড়ির কি হবে!
#চলবে….