Game 2 Part-37+38+39

0
464

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৭ ( #শুভ_বিবাহ )

হলুদের দিন..
দুজনের গায়ে হলুদ এক বাড়িতেই। সকাল থেকেই গায়ে হলুদের তোড়জোড় লেগে আছে। একমাত্র মেহেরিন যে কি না দুপুর গড়িয়ে যাবার পরও তার ঘুম ভাঙে নি। আর এদিকে নির্ঝর যাকে কি না বিয়ের আগে তার বউয়ের সাথে দেখা করতে দেওয়া হবে না। নির্ঝর বেচারা বেশ কয়েকবার এসেছিল দেখা কিন্তু ততোবার’ই না হয় কাব্য, না হয় আরিশা আর না হয় ইহান তাকে ধরে ফেলছে। এমনকি বেলকনি দিয়ে যাওয়ার রাস্তা টাও বন্ধ করে দিয়েছে। নির্ঝর তাই রেগে এক পাশে গালে হাত দিয়ে বসে পরল। তখন তার দুই পাশে এসে নিশান আর আহিয়ান বসল। নির্ঝর একবার এদিক আরেকবার ওদিক তাকাল। আহিয়ান বলে উঠে..

– কি ভাবছিস এতো মনোযোগ দিয়ে!

নিশান বলে উঠে..
– মনে হচ্ছে ড্রিপরেশনে আছে!

– জিজু মজা নিচ্ছ তোমরা। তোমরা জানো না কি হয়েছে?

– না বললে কি করে জানবো?

– তাহলে শোন, তোমার শালা আর শ্যালিকাগনরা আমাকে আমার বউ’র কাছে যেতে দিচ্ছে না।

– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার!

– কি ব্যাপার! সকাল থেকে মেহু পাখি’র মুখ টা দেখলাম না এখন অবদি।

– আপনার মেহু পাখি এখনো ঘুমাচ্ছে!

– সব আমার কপাল বুঝলে। ওকে প্রথম হলুদ আমি লাগাতে চেয়েছিলাম কিন্তু মনে হচ্ছে না এটা এখন আর হবে।

– কেন হবে না!

– আমি তো ওর সাথে দেখাই করতে পারবো না।

– তো কি? ওয়েট কর আমরা দেখছি!

– সত্যি!

– দেখিস কি করি!

অতঃপর নীল আর অভ্র মিলে মেহেরিন কে টেনে ঘুম থেকে উঠালো। তখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেছে। এখন মেহেরিন কে গায়ে হলুদের জন্য তৈরি করতে হবে। আনহা, নিহা আর আরিশা ৩ জন মিলে মেহেরিন কে তৈরি করতে লেগে পড়ে। একটা হলুদ রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয় মেহেরিন কে আর তার সাথে ফুলের গহনা। মেহেরিন কে সাজিয়ে দিয়ে নিহা তাকে বসতে বলে সবাই চলে যায়। মেহেরিন বসে বসে চকলেট খেতে থাকে। হঠাৎ কেউ দরজা নক করছে মনে হলে মেহেরিন উঠে দাঁড়ায় ‌ কিন্তু ততোক্ষণে সে ভিতরে এসে পড়েছে। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর!

– আপনি!

– মেহু পাখি!
বলেই তাকে জরিয়ে ধরল।

– আপনি এখানে, এইভাবে!

– আরে কথা বলো না। জিজু রা বাইরে পাহাড়া দিচ্ছে। তোমার দি আর ভাবী এসে আমাকে এখানে দেখলে শেষ!

– শেষ মানে কেন তারা জানে না আপনি এখানে!

– জানলে তো আমি শেষ। আমাকে তো তোমার সাথে দেখা করাই বারন।

– ওহ আচ্ছা!

– হ্যাঁ ওহ আচ্ছা’ই তো বলবে এতো বার ফোন দিলাম ধরো নি কেন?

– ফোন আমার কাছে নেই কিভাবে ধরব।

– বাহ এটাই তুমি!

– কি বললেন?

– না কিছু না বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে!

– এটা তো সবসময় লাগে আজ নতুন কি?

নির্ঝর কিছু বলতে যাবে তখন আহিয়ান বাইরে থেকে দরজা নক করলো। এর মানে তাকে জলদি বেরুতে বলছে। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল..

– আজ এসব কথা বাদ। আমি যেই কাজটা করতে এসেছি আগে সেটা করি নেই!

– মানে!

অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত ধরে ঘুরিয়ে নিল। অতঃপর নিজের গালে লাগানো হলুদ তার গালে লাগাল। মেহেরিন কেঁপে উঠলো। নির্ঝর পাঞ্জাবি ঘামচে ধরল সে। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র অন্য গালেও হলুদ লাগিয়ে দিল। মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র কপালে খুব জোরালোভাবে চুমু গেল। এর মাঝেই দরজা আবার নক করলো। নির্ঝর মেহেরিন ছেড়ে দিয়ে হেসে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর নিহা, আনহা আর ‌আরিশা এসে দেখে মেহেরিন খাটে শুয়ে শুয়ে চকলেট খাচ্ছে আর গান শুনছে। নিহা মেহেরিন’র দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। বলে উঠে..

– তোর গালে হলুদ কে লাগাল।

– নির্ঝর!

– কিহহহ?

– হুম!

– কখন লাগলো ননদিনী?

– এইতো তোমরা যাবার পর’ই।

– আর মেহেরিন তুই লাগাতে দিল না বললি না।

– আজব! কেউ কি বলেছিস যে হলুদ লাগানো যাবে। আর আজ তো আমার গায়ে হলুদ তো হলুদ তো আমিই লাগাতাম তাই না।

– বাজি টা হেরে গেলাম আমরা ধুর!

– সব তোর জন্য!

– থাক এখন আর কিছু বলে লাভ নেই। চলো তোমাকে নিচে যেতে হবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে এখন!

মেহেরিন খাট থেকে নিচে নামল। ওর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ৩ জন মিলে আবারো সব কিছু ঠিক করে দিল। অতঃপর সবাই নিচে গেল। নিরব দূর থেকেই মেহেরিন কে দেখতে লাগলো। মেহেরিন কে নিচে নামতেই সবাই অবাক। কারন ওর গালে হলুদ লাগানো। কাব্য বলে উঠে…

– কিরে তোর গালে হলুদ কে লাগাল!

মেহেরিন অবাক হয়ে কাব্য’র দিকেই তাকিয়ে রইল। এটা আবার কেমন প্রশ্ন হলুদ কে লাগিয়েছে। আজ গায়ে হলুদ যখন হলুদ তো লাগাতেই হবে তাই না। আরিশা চোখ ঘুরিয়ে নির্ঝরের দিকে ইশারা করল। কাব্য ওরা সবাই তাকিয়ে দেখল নির্ঝরের গালেও হলুদ। কারোই আর বুঝতে বাকি রইল না এটা কার কাজ।অভ্র বলে উঠে…

– থাক আর কি করার। যা হবার হয়ে গেছে। গায়ে হলুদ শুরু করো।

নীলাশা বলে উঠে..
– হুম বাসি গায়ে হলুদ শুরু হোক!

মেহেরিন আর নির্ঝর দাঁত বের করে হেসে দিল।গায়ে হলুদ শুরু হলো। অতঃপর গান বাজনা দিয়ে গায়ে হলুদ শেষ হলো।
.
অনুষ্ঠান শেষে মেহেরিন নিজের ঘরেই ছিল। তখন হঠাৎ একজন সার্ভেন্ট এলো তার ঘরে। তার হাতে একটা গিফট বক্স। সার্ভেন্ট এসে জানাল এটা তার জন্য’ই এসেছে। মেহেরিন বক্স টা নিয়ে সার্ভেন্ট কে চলে যেতে বলল। অতঃপর খাটে’র মাঝখানে বসে বক্স টা খুলল। বক্স টা খুলতেই ধোঁয়া বের হলো। কিন্তু এটা কোন বিষাক্ত ধোঁয়া ছিল না। শুধুমাত্র ভয় দেখানোর জন্য’ই এটা রাখা হয়েছিল।

মেহেরিন খেয়াল করল বক্সটার মধ্যে একটা চিরকুট আছে। মেহেরিন সেটা হাতে নিল। তাতে লেখা আছে..

– নির্ঝর কে বিয়ে করো না। তাহলে সে তোমার সব কিছু শেষ করে দেবে!

মেহেরিন খানিকক্ষণ সেটার দিকে তাকিয়ে রইল। লেখার ধরন তার চেনা না কিন্তু এই চিরকুট টা দিল কে? আর কেন’ই বা দিল। তার আর নির্ঝরের সম্পর্কের মাঝে ছেদ ধরাতে নাকি। হুট করেই বেলকনি থেকে আওয়াজ আসল। মেহেরিন চিরকুট টা হাতে নিয়েই সেখানে গেল। তাকিয়ে দেখে নির্ঝর বেলকনিতে!

– আপনি এখানে?

মেহেরিন’র কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে..
– তো আমি না আসলে আর কে আসবে?

– কিন্তু এতো রাতে!

– হুম তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল তাই! জানো মেহু পাখি খুব শীঘ্রই এই প্রতিক্ষার অবশান ঘটবে, তুমি শুধু আমার হবে, শুধু আমার!
মেহেরিন কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকাল। দুজনেই ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মেহেরিন নির্ঝরের কোমরের দিকে শার্ট খামচে ধরল। নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে চুমু খেল। অতঃপর তার চুল গুলো সরিয়ে ঘাড়ে একটা চুমু খেল। মেহেরিন বার বার কেঁপে উঠছে। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত ধরে ঠোঁটে দিকে আগাতেই হুট করে মেহেরিন তাকে ছেড়ে দিল। নির্ঝর আবারো ধমকে গেল।

মেহেরিন কে দেখে নির্ঝরের কেমন লাগলো। সে মেহেরিন কে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তার ঘাড়ে থিতুনি রেখে বলল..

– খুব অস্থির লাগছে তোমায়? কি ভাবছো এতো!

– নির্ঝর!

– মেহু পাখি কি হয়েছে?

মেহেরিন চিরকুট টা নির্ঝরের হাতে দিল। নির্ঝর এটা পড়ে অনেকটা অবাক হলো। বলে উঠল..
– কে পাঠিয়েছে?

– জানি না! কারো নাম ছিল না!

নির্ঝর হেসে বলল..
– তুমি বিশ্বাস করো এটা!

নির্ঝরের গালে হাত রেখে..
– না নির্ঝর এ আপনি কি বলছেন? নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস আপনাকে করি। আমার দুর্বলতা আপনি। আমার ভালোবাসাও আপনি! কিন্তু চিন্তা হচ্ছে আপনার! যদি কিছু হয়ে যায় তখন!

নির্ঝর মেহেরিন’র হাতে চুমু খেল। অতঃপর হেসে দিল কিন্তু কিছু বললো না। মেহেরিন বুঝতে পারল নির্ঝর তার কথা বিশ্বাস করছে না। নির্ঝর ভাবছে সে তাকে অবিশ্বাস করে। অতঃপর মেহেরিন নির্ঝরের হাত ধরে ঘরে এলো। নির্ঝর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস ও করল কিন্তু নির্ঝর কিছু বললো না। অতঃপর বুকশেলফ এর কাছে এসে একটা বই কে উঠাতেই একটা গুপ্ত ঘরের দরজা বের হলো। নির্ঝর অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আসুন আমার সাথে!

বলেই তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। নির্ঝর ঘরে এসে চমকে উঠলো। পুরো ঘরের কম্পিউটারের বড় স্কিন লাগানো আর এখানে বেশ কিছু লোকও আছে। তারা সবাই মেহেরিন’কে দেখে দাঁড়িয়ে পরল। মেহেরিন তাদের সবাইকে বসতে বলল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল ‌রুমের ওদিকে একটা ল্যাবরেটর। কিছু লোক সেখানেও আছে। তাদের পরনে ডাক্তারি পোশাক। নির্ঝর এসবের কিছুই বুঝতে পারল না। শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে’ই রইল।

মেহেরিন নির্ঝরের হাতে হাত রেখে বলল..
– দিস ইজ মাই ওয়ার্ল্ড! এটা তো কারো অজানা নয় যে আমি মাফিয়াদের লিডার। কি জানেন তো আপনি!

– মেহু পাখি আমি..

– শুনুন। বলছি না আপনি জানেন তার মানেই আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল বা কি। পুরো পৃথিবী এই কথা জানলেও কারো কাছে কোন প্রমাণ নেই এটা প্রমাণ করার। আর এটা! এটা আমার কন্ট্রোল রুম। এখান থেকেই আমি আমার সব কাজ করি! সবকিছু’র কন্ট্রোল এখান থেকেই হয়। প্রত্যেক মাফিয়া, ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল সবার রেকর্ড আছে আমার এই খানে। সব কিছু! ওখানে ল্যাব ও আছে সেখানে কিছু পরিক্ষা হয় কিন্তু সেটা আপনি বুঝতে পারবেন না কারন এসবের মধ্যে আপনি নেই। কিন্তু এখন আপনাকে আমি এখানে আনলাম কেন? কারন একটাই আমার এই ঘরে আমি আজ পর্যন্ত আমার ফ্যামিলি ছাড়া আর কাউকে আনি না আর আনবো ও না। সেটা শুধু আপনার পর। এখন বুঝতে পারছেন আপনি আমার জন্য কতোটা ইম্পর্ট্যান্টে! এরকম কারো কথার জন্য আপনাকে আমি অবিশ্বাস করতে পারি না নির্ঝর!

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’কে কোলে নিল। অতঃপর তার কোমর ধরে সামনের টেবিল টাতে বসিয়ে দিল। বলতে শুরু করল..

– সরি মেহু পাখি! খানিকক্ষণ’র জন্য মনে হলো তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না। হয়তো এই বিয়েটা তুমি করতে চাও না। তাই আমি!

– বললাম তো বিশ্বাস আর ভরসা দুনোটাই করি আপনাকে!
বলেই নির্ঝরের কপালে একটা চুমু খেল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র গাল ধরল।
.

আজ বিয়ে..
মেহেরিন কে গাঢ় লাল রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে তার সাথে একটু ভারী সাজ। মাথায় গোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। কিছু ভারী গহনা পরানো হয়েছে। তাকে বাড়িতেই সাজানো হয়েছে আর নির্ঝর কে আজ তার বাড়ি থেকেই আসতে হবে। কারন বিয়ের পর মেহেরিন কে নিয়ে সেই বাড়িতেই থাকবে সে।

মেহেরিন’র সাজানো শেষ। অভ্র এক প্লেট খাবার নিয়ে মেহেরিন’র ঘরে এলো। মেহেরিন সোফায় বসে ছিল। অভ্র কে দেখে উঠে দাঁড়ালো সে। অভ্র হেসে তার পাশে বসে মেহেরিন কে খাওয়াতে লাগল। অভ্র মেহেরিন’কে খাওয়াচ্ছে আর দেখতে। খুব মজা করেই খাচ্ছে মেহেরিন। কিন্তু এরপর কি আবারো মেহেরিন এসে তার কাছে খাইতে যাবে। মেহেরিন তো নিজের হাতে খেতেই চায় না।‌ সকাল সকাল তার ব্রেকফাস্ট ও অভ্র নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। কিন্তু এখন.. এর মাঝেই নীল, নিহা, নিশি, রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য এলো। নীল এসে মেহেরিন’র পাশে বসল। অতঃপর নিজ হাতে তাকে পানি খাইয়ে দিল।

নীল মেহেরিন’র মাথায় হাত রেখে একটা চুমু খেল। সবাই তাকিয়ে দেখছে মেহেরিন কে। আজ চলে যাবে সে। মেহেরিন অভ্র’র হাত ধরে বলে উঠে..
– আর খাবো না দা!

অভ্র হেসে মেহেরিন’র গালে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে..
– এরপর অনেক দেরি হবে খেতে। আরেকটু খেয়ে নে!

– না আর না আমার ক্ষিদে নেই।

নিহা এসে মেহেরিন কে দাঁড় করায়। অতঃপর এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। তার হাত দুটিতে চুমু খেয়ে বলে..

– আমাদের ছেড়ে আজ চলে যাবি তুই! খারাপ লাগবে না তোর!

– এতো ইমোশনাল কথা কেন বলছো আজ। আমি আজ যাচ্ছি তো কি কাল তো আবার চলেই আসবো!

নিশি এসে মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে। অতঃপর রোদ্দুর, ইহান আর কাব্য সবাই এসে তাকে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন ও হেসে সবাইকে জরিয়ে ধরল। হঠাৎ ক্যাট এসে ওদের এমন কাহিনী দেখে বলে..

– বাহ বাহ সময় মিলে দেখি ভালোবাসা নিয়ে যাচ্ছে!

সবাইকে ছেড়ে..
– আরে মিয়াও ভাবী যে!

– হুম খবর নিয়ে এলাম বরের গাড়ি তো চলে এসেছে! তা তোমরা কি আসবে!

মেহেরিন লাফ দিয়ে..
– কি বরের গাড়ি চলে এসেছে!

– হুম আপনার লেজ কাটা ব্যাঙ চলে এসেছে!.

– আমি বর দেখবো!
বলেই মেহেরিন দৌড়ে চলে গেলো। সবাই অবাক হয়ে গেল। নিহা বলে উঠে..

– আরে এই তো নিজেই চলে যাচ্ছে!

– সবাই চলো নাহলে এতো দেখি নিচে গিয়ে গন্ডগোল বাজিয়ে দিবে।

অতঃপর সবাই নিচে গেল। এদিকে নির্ঝর সবে গাড়ি থেকে বেরিয়ে দাঁড়াল। লাল রঙের একটা শেরোয়ানি পড়েছে আর তার মাঝে গোল্ডেন রঙের কারুকাজ। মাথায় পাগড়ি পরা। হঠাৎ অরনি বলে উঠে…

– বউ আসছে!

এটা শুনে নির্ঝর সামনে তাকাল। তাকিয়ে দেখে মেহেরিন নিজেই আসছে। তার দু পাশে আহিয়ান আর নিশান ছিল যারা বর পক্ষ হিসেবে এসেছে। তারা দুজনও মেহেরিন কে এভাবে দেখে অবাক।

শান্ত বলে উঠে..
– ফুপি আসছে এখানে! ফুপি কে পুরো বউ বউ লাগছে!

অরনি বলে উঠে…
– বউ কে তো বউয়ের মতোই লাগবে নাহ!

সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আর নির্ঝর! সে তো মেহেরিন’র মাঝেই হারিয়ে গেছে। এতো সুন্দর লাগছে মেহেরিন কে যে সে চোখ ফিরাতেই পারছে না। মেহেরিন’র পিছু পিছু সবাই আসছে। মেহেরিন এসেই নির্ঝরের সামনে হাত পেতে বলে..

– টাকা দিন!

– কিহহ?

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৮ ( #শুভ_বিবাহ_২ )

মেহেরিন এসে নির্ঝরকে বলল..
– টাকা দিন!

– কিহহ?

সবাই অবাক! মেয়ে কি না নিজে এসে বরের কাছে টাকা চাইছে। মেহেরিন চুটকি বাজিয়ে বলল…
– কি হলো? হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?

– কি বললে তুমি?

– টাকা দিতে বলেছি, টাকা দিন! ( কোমরে হাত রেখে ) টাকা না দিলে বিয়ে বাড়িতে ঢুকতে দেবো না। শেষে একা একা বাড়ি ফিরবেন!

– না টাকা দেবো না এটা কখন বললাম। কিন্তু তুমি কেন টাকা চাইছো! এটা তো ভাবীদের কাজ!

– মানে! টাকা তো সবসময় ছোট রা নেয় আর এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট আমি। তাই আমিই টাকা নিবো।

আরিশা বলে উঠে..
– টাকা গেল আমাদের!

অরনি বলে উঠে..
– খালামনি তুমি ভুল করছো আমি সবার ছোট!

মেহেরিন হেসে বলে..
– আম্মুজান আপনি বর পক্ষের তাই টাকা নিতে পারবেন না। বুঝলেন!

অরনি মুখ ফুলিয়ে রাখল। শান্ত ফিক করে হেসে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– টাকা দিবেন নাকি একা একা ফিরবেন। টাকা না দিলে কিন্তু বরযাত্রী নিয়ে একা ফিরতে হবে।‌

আহিয়ান বলে উঠে….
– বরযাত্রী একা ফিরলে কিন্তু তোমারও বিয়ে হবে না আদুরী এটা জানো!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে আহিয়ানের দিকে তাকাল। সবাই মুখ টিপে হাসল। মেহেরিন আবারো নির্ঝরের কাছে হাত পেতে বলল..

– আপনি না বিয়ে করলে মানুষের অভাব হবে না। ধরে বেঁধে একজন কে বিয়ে করে দেবো। বুঝলেন! এখন আপনার টা চিন্তা করুন!

নির্ঝর একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল..
– আচ্ছা দিচ্ছি। এক্ষুনি দিচ্ছি!

বলেই নির্ঝর টাকা বের করে মেহেরিন’র হাতে টাকা রাখল। মেহেরিন হেসে টাকা টা হাতে নিল কিন্তু নির্ঝর তার হাত ছাড়ল না। মেহেরিন কপাল কুঁচকে তার দিকে তাকাল। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র হাতে সবার সামনে কিস করল। সবাই এরকম একটা কান্ড দেখে জোরে হেসে দিল। কিন্তু নির্ঝর তবুও হাত ছাড়ল না। অতঃপর নির্ঝর একটা চকলেট তার দিকে ধরল। মেহেরিন হেসে অন্যহাতে সেই চকলেট নিল।

নির্ঝর ভেতরে ঢুকেই মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল। বলে উঠে..

– দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে 😉

মেহেরিন হেসে তার গলা জরিয়ে ধরল। অতঃপর এভাবেই কোলে তুলে তাকে ভেতরে স্টেজ অবদি নিয়ে গেল।

বিয়ে সম্পন্ন হলো! এখন বিদায় দেবার পালা। কিন্তু খান ‌বাড়ির বিদায় টা সবসময় ভিন্ন হয়। কেউ কাঁদে না সবাই হেসে বিদায় দেয়। আজও ঠিক তাই হলো। অভ্র মেহেরিন কে জরিয়ে ধরল। মেহেরিন খুব শক্ত করে ধরে আছে মেহেরিন কে।‌ ডেভিল এসে মেহেরিন’র মাথায় হাত রাখল। মেহেরিনও হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল। একে একে সবাই বিদায় দেওয়ার পর অভ্র নির্ঝরের কাঁধে হাত রেখে বলল..

– আমার এই খান বাড়ির অহংকার কে তোমার হাতে দিচ্ছি, শুধু সামলিয়ে রেখো তাকে।

নির্ঝর হেসে হাত ধরে বলল..
– চিন্তা করো না দা। সবসময় ওকে সামলিয়ে রাখবো।

নিহা বলে উঠে…
– দেখে রাখিস কিন্তু আমার আদুরী কে! নাহলে..

– দি এমন ভাবে দেখে রাখবো না যা তোমরাও কখনো করো নি। তো মেহু পাখি গাড়িতে উঠো।

– আমি একা উঠবো নাকি!

– তাহলে…

– আমার সাথে কেউ যাবে না। কেউ না গেলে কিন্তু আমি যাবো না বলে দিলাম!

নির্ঝর পড়লো বিপদে। অবশেষে মেহেরিন’র ইচ্ছায় আহিয়ান, নিহা, রোদ্দুর, আরিশা, ইহান, শান্ত, অরনি সবাই গেলো তাদের সাথে।

এদিকে নিরব বিয়েতে আসে নি। সে বারে বসে ড্রিংক করছে। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মেহেরিন আর নির্ঝরের এই সম্পর্ক সে মানে না। তাদের কথা ভাবতেই রেগে হাতে থাকা গ্লাস টা জোরে চেপে ভেঙে ফেললো সে!

মেহেরিন আর নির্ঝর চৌধুরী বাড়িতে এসে পড়ল। মেহেরিন গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। পুরো বাড়ির ফুল আর লাইটিং দিয়ে ডেকোরেট করা। সুন্দর লাগছে দেখতে। মেহেরিন হেসে বলে উঠে..

– বাহ খুব সুন্দর বাড়ি তো!

– তোমার পছন্দ হলেই আমার পরিশ্রম সার্থক!

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর আবারো মেহেরিন কে কোলে উঠায়! সবাই এবার ও হেসে উঠে।
নিহা হেসে প্রথমে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। অতঃপর নির্ঝর আর মেহেরিন’কে বরন করিয়ে ভেতরে। মেহেরিন ভেতরে এসেই নির্ঝরের কোল থেকে নেমে গেল। অতঃপর বলল..

– আমি পুরো বাড়িটা একবার ঘুরে আসি ওকে!

বলেই সে চলে গেল। নির্ঝর আর ওকে আটকাতে পারল না। নিহা নির্ঝরের কাছে এসে বলল…

– আন্টি, তোর বোন কবে আসছে!

– কাল সকালেই ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। ফ্লাইটে উঠার আগে কথা হয়েছিল!

– আন্টি ভালো আছে তো!

– হুম অনেক ভালো আছে! আচ্ছা তোমরা বরং ফ্রেশ হও। আমি সার্ভেন্ট কে বলে দিচ্ছি তোমাদের রুম দেখিয়ে দেবে।

– তুই এতো চিন্তা করিস না। রুমে গিয়ে রেস্ট নে বুঝলি!
বলেই নিহা চলে গেল। নির্ঝর ও তার রুমে গেল!

খান বাড়িতে..
অভ্র হেটে মেহেরিন’র রুমের কাছে আসল। রুমে ঢুকতেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠল মেহেরিন পুরো ঘর জুড়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। অভ্র দেখল মেহেরিন তার হাত ধরে তাকে বিছানায় বসালো। অতঃপর সারাদিনের কাহিনী বলতে লাগল। অভ্র তাকে ছুঁতে যাবে মেহেরিষ তখন’ই হাওয়ায় মিলে গেল। অভ্র মুচকি হাসল। স্বপ্নও কেমন অদ্ভুত! অভ্র ল্যাম্পশেডের পাশে থাকা মেহেরিন’র ছবিটা দেখছে। হাসি মুখে একটা ছবি। কতো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে অভ্র’র। ছোট থেকে এই বোনকেই আগলে রেখেছে সে।

কেউ তার ঘাড়ে হাত রাখায় অভ্র পাশে তাকাল। দেখল নীল দাঁড়িয়ে আছে। নীল হেসে অভ্র’র পাশে বসে পরল। তার হাত থেকে ছবি টা নিয়ে বলল..

– বাড়ি থেকে গেল সবে ২ ঘন্টা হলো! আর এখন’ই মনে পড়ছে ওকে।

অভ্র বলে উঠে..
– পুরো বাড়ি টা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। প্রাণ চলে গেছে বাড়িটার!

– হুম খুব মিস করছি ওকে। মাঝ রাতে আর কেউ ঘুম থেকে উঠিয়ে জ্বালাবে না।

– এখন আর কেউ বলবে না “দা খাইয়ে দাও আমাকে”! কলিজার টুকরা টা আমার!

– আমার আদুরী টা!

তখন আনহা এসে বলে..
– কাল সকালেই একজনের কলিজার টুকরা আর আরেকজন’র আদুরী কে নিয়ে আসবো।

পেছন থেকে কাব্য বলে উঠে..
– তখন মন ভরে আমার আদর করে দিও জান কে!

– তোমরা!

– অনেক রাত হয়েছে, আর খুব ক্লান্ত তোমরা। ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে নাও। কাল মেহেরিন কে আনতে যেতে হবে সেই খেলায় আছে।

– মিষ্টি ভাবী থাক! আজকে আর তারা কেউ ঘুমাবে না। এই রুমেই থাকবে সারারাত। থাকতে দাও!

– মনে হচ্ছে তুই ও থাকবি এখানে!

– হাম। খুব মনে পড়ছে জান কে?

– কিন্তু ক্যাট!

– তুমি গিয়ে থাকো ওর সাথে!

– আচ্ছা ঠিক আছে।

– হুমম!
.
নির্ঝর রুমে দাড়িয়ে মোমবাতি জ্বালাচ্ছিল। তখন কেউ নক করলো। নির্ঝর পেছন ফিরে দেখে মেহেরিন দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর হেসে তার দিকে আগায়। মেহেরিন বলে উঠে..

– খুব অদ্ভুত নাহ!

– কোনটা মেহু পাখি!

– এটাই! বাসর রাতে নাকি মেয়েরা অপেক্ষা করে আর এখানে আপনি অপেক্ষা করছেন!

– তোমার জন্য আমার সবকিছু’ই উল্টো!

মেহেরিন হেসে সামনে আগালো। অতঃপর দেখল পুরো রুম ও অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো। মোমবাতি আর ফুল দিয়েই সাজানো রুম। নির্ঝর মোমবাতি হাতে নিয়ে সামনে আগায়। মোমের আলোতে দুজন দুজনকে দেখছে। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল। নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে চুমু খেল। অতঃপর তাকে ছেড়ে দিয়ে মোমবাতি টা হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে দরজা বন্ধ করে নিল। মেহেরিন হেসে নির্ঝরের কাছে এলো। অতঃপর তার গলা জরিয়ে ধরল। নির্ঝর মেহেরিন’র কোমর জরিয়ে ধরল।

মেহেরিন এই প্রথম নির্ঝরের ঠোঁটের দিকে আগাতে লাগল। অনেকটা কাছে ছিল মেহেরিন নির্ঝরের! হঠাৎ করেই নির্ঝর মেহেরিন কে এক হাত দিয়ে ছুড়ে মারল। হঠাৎ এমনটা হওয়ায় মেহেরিন ঢাল সামলাতে না পেরে বিছানার কাছে থাকা ছোট কাচের টেবিলের সাথে মাথায় আঘাত পেল। মেহেরিন’র কপাল কেটে গেল। তার কাছে সবকিছুই স্বপ্নের মতো লাগল। মেহেরিন মাথায় হাত ধরে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর বাঁকা হেসে হাতে থাকা মোমবাতি টা মেহেরিন’র দিকে ছুড়ে মারল। চোখের সামনেই নিমিষেই মেহেরিন’র লেহেঙ্গা আগুন ধরে গেল। অতঃপর…

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৯

মোমবাতির আগুনে মেহেরিন’র লেহেঙ্গা’য় আগুন ধরে যাচ্ছে। মেহেরিন এক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন তার কোমরের পিছন থেকে ছোট একটা ধারালো ছুরি বের করে লেহেঙ্গা’র আগুন লাগা অংশ কেটে ফেললো। অতঃপর দাঁড়িয়ে নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়াল। তার কপাল থেকে রক্ত পরছে।

নির্ঝর এক হাত দিয়ে তার গাল ধরতে যাবে মেহেরিন তখনি তার হাত ধরে ফেলল। নির্ঝর হেসে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..

– কেন করলেন এরকম?

– ভয় পেয়ে গেলে নাকি মেহু… না আদুরী!

মেহেরিন অনেকটা অবাক হলো। নির্ঝর আজ পর্যন্ত ওকে মেহু পাখি ছাড়া ডাকে নি আর আজ! মেহেরিন বলে উঠে…

– তার মানে আপনি আমাকে ঠকালেন?

– এটা বুঝতে তোমার এতো দিন লাগল!

– শুরু থেকে… শুরু থেকে সবটা মিথ্যে ছিল। আপনার ভালোবাসা, কেয়ার, আবেগ, অনুভুতি সব!

নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। অতঃপর বলল..

– না এর মাঝে শুধু তোমার ভালোবাসা’টা সত্যি ছিল যা তুমি আমাকে বেসেছিলে!

নির্ঝরের হাতে হাত রেখে..
– এতো কিছু শুধু আমাকে মারার জন্য!

– না! শুধু মারার জন্য না। কষ্ট দিয়ে ধীরে ধীরে মারার জন্য!

মেহেরিন নির্ঝরের হাত টা ছাড়িয়ে দিয়ে..
– এতো ঘৃণা!

– ঘৃণা না আদুরী! অনেক ঘৃণা আমি প্রচন্ড ঘৃনা করি তোমায়। গত ১১ বছর ধরে তোমাকে ঘৃণা করছি। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছিলাম আমি। আমার সব কিছু আমি হারিয়েছি তোমার জন্য। সব কিছু শেষ করে দিলে তুমি আমার, সব কিছু। জানো এই ১১ বছর ধরে শুধু এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম আমি। আর দেখো আজ তা পেয়ে গেলাম।

মেহেরিন ছুরি টা নির্ঝরের হাতে দিয়ে..
– নিন তাহলে মেরে ফেলুন। নিজের প্রতিশোধ পূর্ণ করুন!

নির্ঝর জোরে জোরে হেসে বলল..
– কি বললাম তোমায় এতো সহজে আমি মারবো না তোমায়।

– কেন করলেন এরকম আমার সাথে।

– চিন্তা করো না। তোমাকে সব বলবো কিন্তু সেটা তোমাকে মারার আগে। কিভাবে তুমি আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলে সেদিন বলবো।
বলেই নির্ঝর যেতে নেয়। তখন মেহেরিন পিছন থেকে বলে উঠে…

– আর যদি এর আগে আমি আপনাকে মেরে ফেলি। কি ভাবছেন আপনি। এতো কিছুর পর আপনি এভাবে এভাবে বেঁচে যাবেন।

নির্ঝর এবার ও এক দফা হেসে বলে..
– ওও কামন আদুরী! আমার জান! আমি জানি তোমার দুর্বলতা আমি। তুমি আমাকে মারবে না আর তুমি কাউকে মারতে দিবেও না।

মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– হাউ ফুল আই এম।

– রাগ হচ্ছে না নিজের উপর খুব। কিন্তু একটা কথা কি জানো তোমার এই রাগ কমবে না। কারন তুমি কাঁদতে জানো না। মানুষের রাগ হলে সে কাঁদে, অনেক কাঁদে তখন তার রাগ কমে যায় কিন্তু তোমার!

– তাহলে আপনি বলতে চান ‌আপনি নিজেও কাঁদেন নি কখনো!

– হুম কেঁদেছি কিন্তু একটা কথা কি জানো নিজের জীবন থেকে যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটাই হারিয়ে যায় না তখন যত’ই কাঁদো না কেন সেই হারিয়ে ফেলা জিনিসটা আর ফেরত পাবে না। ঠিক তখন সেই রাগ টা প্রতিশোধ এ পরিনত হয়।

অতঃপর নির্ঝর একটা চেয়ার টেনে মেহেরিন’র সামনে বসে। মেহেরিন দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে শুধু তার দিকেই তাকিয়ে আছে। নির্ঝর বলে উঠে..
– আদুরী! আচ্ছা তোমার কাছে মানুষের জীবনটা ঠিক গেইম’র মতো না। আর এই গেইমের উইনার সবসময় তুমিই হয়। আর গেইম এর হোস্ট ও তুমি। তো আজ এখন আমি তোমাকে নিয়ে একটা নতুন গেইম শুরু করলাম আর এই গেইমের হোস্ট আর উইনার দুইটাই আমি হবো। কথা দিলাম তোমায়!

মেহেরিন কিছুক্ষণ হাসল। অতঃপর বলল..

– গেইম! নির্ঝর আপনি জানেন আমার লাইফটা নিজেই একটা গেইম। আর এই গেমের প্রতিটা লেভেল অনেক অদ্ভুত আর কঠিন। আপনি বলছেন গেইম এখন শুরু কিন্তু আমি বলছি গেইম সেদিন শুরু হয়েছিল যেদিন আপনি প্রথম আমার জীবনে এসেছেন। গেইম অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। এমন একটা গেইম এর আগেও আমি খেলেছি। আজ আবার! কিন্তু আপনি চান আমাকে মারতে তাই তো! ( মেহেরিন নির্ঝরের চেয়ারের দুই হ্যান্ডেল ধরে নির্ঝরের দিকে ঝুঁকে বলে..)
– আর আমি বলছি এই গেইমে আমি আপনাকে বুঝিয়ে দেবো, আপনি আমাকে ঘৃণা করেন না আমাকে ভালোবাসেন!

– ইন ইউর ড্রিমস!

– স্বপ্ন কিন্তু সত্যি হয় নির্ঝর!

– তাহলে আর কি বের হয়ে যাবে নিশ্চয়ই এই বাড়ি থেকে!

– আমি জানি আপনি আমায় বের হতে দেবেন না। নিজের আসল রূপ টা এতোদিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। যখন আমি এই বাড়িতে এলাম আর আপনি আমাকে নিজের রূপ দেখালেন তার মানে আপনার লক্ষ্য ছিল যাতে আমি বাড়িতে আসি।

– তোমার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় আমি কম পায়নি, তাই এখন আর অবাক হলাম না। কিন্তু এই গেইম এ যদি জিততে হয় তাহলে তোমায় এই বাড়িতেই থাকতে হবে আর তুমি যদি চলে যাও তাহলে নিজের ভীতু বলে স্বীকার করে হার মানবে।

মেহেরিন হেসে নির্ঝরের কাছে যায়। অতঃপর তার গলা জরিয়ে ধরে বলে..
– আপনার মতলব কি বলুন তো! যেকোনো মূল্যে শুধু আমাকে নিজের কাছে রাখতে চান দেখছি। কি ভালোবেসে ফেললেন নাকি।

নির্ঝর মেহেরিন’র হাত সরিয়ে দিয়ে..
– এটা সম্ভব না।

– কিন্তু আপনার চোখ আমাকে অন্য কিছু বলছে।

– চোখ সেটাই বলছে যেটা তুমি দেখতে চাও। এটা তোমার ভ্রম ছাড়া আর কিছু না।

– যদি সত্যি হয় তখন।

নির্ঝর মেহেরিন’র পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নেয়। মেহেরিন বলে..
– সাবধান নির্ঝর,‌বেশি ঘৃণা করতে যাবেন না তাহলে ভুল করে ভালোবেসে ফেলবেন। আমার দা বলতো আদুরী খুব কিউট তাই কেউ কখনো তার উপর রেগে থাকতে পারে না। আর এটা কিভাবে বাস্তব!

নির্ঝর মাথা নাড়িয়ে না বলে চলে যায়। মেহেরিন এবার তার বাসর ঘরের দিকে তাকায়। না অনেকটা সুন্দর করেই সাজানো সব। মেহেরিন বলে উঠে…

– ঠিক আছে আমার বাসর ঘর! আজ শেষ বার তোমাকে দেখে নি। এর পর আর দেখবো কি না জানি না!

কিছুক্ষণ রুমের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর রুমের লাইট অন করলো। আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের কপালের কাটা জায়গা দেখতে লাগল। বলল..

– হায়রে আদুরী! তোর ভাগ্যের দেখ কি পরিহাস! বাসর রাতে সবাই তার বউ কে কতো কিছু গিফট করে। চুড়ি, কানের দুল, আন্টি আরো কতো কিছু। আর তুই.. তোর ভাগ্যে একটা চকলেট ও জুটল না। লেজ কাটা ব্যাঙ তোকে এমন একটা গিফট দিল যা তোর ভবিষ্যৎ বদলে দিলো। হায়রে ভালোবাসা! আর বলি মেহেরিন! আর কাউকে ভালোবাসতে পারলি না। এই লেজ কাটা ব্যাঙ টা কেই তোর ভালোবাসতে হলো। আজব! দুনিয়াতে কি ছেলের অভাব ছিল নাকি।

অতঃপর এমন ভাবে বিড় বিড় করতে করতে পাশে তাকাল। দেখল নির্ঝর কপাল কুঁচকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে মেহেরিন কি পাগল হলো নাকি যে এমন আবোল তাবোল বলছে।

নির্ঝর ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে‌ খাটে এসে বসল। মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি দিয়ে নিজের লাগেজ থেকে একটা হুডি আর জিন্স বের করলো। অতঃপর ফ্রেশ হতে চলে গেল। এর মাঝেই নির্ঝর অন্যরুম থেকে চেঞ্জ হয়ে আসল। মেহেরিন এসেই ধপাস করে খাটে শুয়ে পরল। বেশ ক্লান্ত সে। তারমধ্যে রাতের এমন একটা সিচুয়েশন আরো অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। খাটের দিকে এবার ভালো করে তাকাল।

একটু আগেই ফুল দিয়ে সাজানো ছিল কিন্তু এখন কিছু নেই। সবকিছু নিচে ছড়িয়ে আছে। কাজটা নির্ঝরের! নির্ঝর খাটের এক পাশে ল্যাপটব নিয়ে বসল। মেহেরিন তার পুতুল পান্ডা কে সাথে করেই এনেছিল। তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল। নির্ঝরের সাথে কোন কথা বলল না। নির্ঝর অনেকটা অবাক হয়ে গেছে। বিস্ময়কর দৃষ্টিতে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন রীতিমতো তখন ঘুমে বিভোর। অনেকটা শান্ত সে! মনে হচ্ছে যেনো কিছুই হয় নি। নির্ঝর তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। হঠাৎ কপালের কাটা জায়গা টা চোখে পরল। রক্ত জমে আছে! নির্ঝর জানে মেহেরিন আলসেমি করবে, কখনো ঔষধ লাগাবে না সেখানে।

নির্ঝর কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর ফার্স্ট এইড বক্স টা নিয়ে ওর কপালের জায়গায় ঔষধ লাগালো অতঃপর ব্যান্ডেজ করে দিল। মেহেরিন জাগল না। নির্ঝর কিছুক্ষণ ওভাবেই বসে তাকে দেখতে লাগল। মেহেরিন’র মাথায় হাত দিতে যাবে তখন হাত সরিয়ে ফেলল। মেহেরিন’র সামনে নিজেকে দুর্বল করা যাবে না। তাহলে তার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে না। নির্ঝর উঠে তার রকিং চেয়ার’এ এসে বসল। চোখ বন্ধ করে মাথা কিছু স্মৃতি মনে করল। অতঃপর সেখানেই ঘুমিয়ে পরল!
.
সকাল বেলা নির্ঝরের ঘুম’ই আগে ভাঙল। মেহেরিন এখনো ঘুমাচ্ছে। নির্ঝর ‌ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। আজ তাদের বৌ ভাত আছে। আদুরী কে নিয়ে যাবে অভ্র! আচ্ছা আদুরী কি তাদের সব কিছু বলে দেবে। বলে দিলেই বা কি এতে আমার কিছু যায় আসে না। কারন আমার কাজ হয়ে গেছে! আদুরী এখন আমার বউ এটাই যথেষ্ট। সময় নিজ গতিতেই এর ফল দেখাব!

নির্ঝর তার সার্ভেন্ট দের অনুষ্ঠানের জোগাড় করতে বলল। তখন নিহা, আহিয়ান ওরা সবাই এলো। নির্ঝর তাদের দেখে হাসিমুখেই বলল..
– ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। তোমার নাস্তা করে নাও আমি তাদের আনতে গেলাম!

– আদুরী কোথায়?

– রুমে আছে, ঘুমাচ্ছে এখনো। আমি গেলাম!

বলেই নির্ঝর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। নিহা মেহেরিন’র রুমে গেল। পুতুল পান্ডা টাকে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ঘরের অবস্থা দেখে কিছুটা অবাক হলো কিন্তু হুট করেই কিছু ভাবতে পারছে না। নিহা এসে খাটের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে মেহেরিন কে ডাকতে লাগল। তখন তার কপালের ব্যান্ডেজ তার চোখে পরল। নিহা এবার চমকে উঠলো। মেহেরিন টেনে তুলে জিজ্ঞেস করল..

– তোর কপালে এই আঘাত কিসের?

মেহেরিন চোখ ঢলতে ঢলতে..
– কোন আঘাত!

– এই যে ব্যান্ডেজ করা!

মেহেরিন অবাক হয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখল আসলেই ব্যান্ডেজ করা কিন্তু এটা করল কে নির্ঝর! দি কে কি বলে দেবো সব! না এখন আর বলবো না আমি আগে জেনে নিই এর কারনটা কি তখন বলবো।

নিহা বলে উঠে..
– এতো কি ভাবছিস!

– আসলে দি কাল পা পিছলে পড়ে গেছিলাম তখন! আচ্ছা বাদ দাও উনি ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। কিন্তু উনি কোথাও?

– তোর শাশুড়ি কে আনতে গেছে! এখন উঠে জলদি করে একটা শাড়ি পড়ে নে। শাশুড়ি’কে দেখাতে হবে তো।

– এগুলো আমার দ্বারা হবে না সরি। আমি ঘুমালাম!
বলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল। নিহা মেহেরিন কে টেনে তুলল। অতঃপর কোনমতে তাকে শাড়ি পরাল আর কিভাবে পরতে শিখিয়ে দিল। মেহেরিন বুঝল আর না বুঝল কিন্তু শুধু মাথা নাড়ল।

মেহেরিন’র শাশুড়ি উষা চৌধুরী আর বোন তিশা চৌধুরী এসে পরল। তার সাথে নির্ঝরের বেস্ট ফ্রেন্ড আমান ও এলো। মেহেরিন সবার সাথে পরিচিত হলো। কিন্তু তখনো কেউ নির্ঝর আর মেহেরিন’র মাঝে কাল রাতের কোন ঘটনা সম্পর্কে জানে না। উষা চৌধুরী মেহেরিন কে দেখে অনেক খুশি হলো। একটা সবুজ রঙের শাড়ি পড়ানো হয়েছে তাকে। বেশ লাগছে দেখতে তবে নির্ঝর একবার ভালো ভাবে তাকে দেখল না। তিশা’র সাথে মেহেরিন’র বেশ ভাব জমে গেলো। আমানের সাথেও কথা হলো তবে বেশি না।

নির্ঝর তার মাকে রুমে নিয়ে গেল। উষা চৌধুরী বলে উঠে..
– তুমি শেষে খান বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করলে!

– মা তুমি তো..

– কথা শেষ করতে দাও আমায়!

নির্ঝর মাথা নিচু করে দাঁড়াল। উষা চৌধুরী বলে..
– তুমি কি ভুলে গেলে খান রা আমাদের সাথে কি কি করেছিলো। এতো ছোট ছিলে না তুমি যে সব ভুলে যাবে। সব’ই জানতে তুমি তাই না।

– মা আমি আদুরী কে শুধু প্রতিশোধ নেবার জন্য বিয়ে করেছি।

– আমি মানা করেছিলাম এসব করতে।

– এইতো তুমি বললে মা ওরা আমাদের সাথে করেছে সেটা যাতে ভুলে না যাই। আর আমি ভুলি নি। তাই তো প্রতিশোধ নিতে এসেছি!

– এর ফল কি হবে তুমি কি সেটা জানো। তোমার বোন আছে এটা কি ভুলে গেছো!

– না মা সব মনে আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি যা করবো সব ভেবে চিন্তে করবো। তিশা’র কিছু হবে না।

– শুধুই কি তিশা!

– তোমাদের কারোই কিছু হবে না। অনেক জার্নি করে এসেছো। রেস্ট নাও আমি আসছি!
বলেই নির্ঝর চলে গেলো। উষা চৌধুরী বলেন..

– এর ফল খুব ভয়ানক হবে নির্ঝর! তুমি ঠিক করছো না এসব!
.
বিকালে বৌ ভাতের অনুষ্ঠান শুরু হলো। খান বাড়ি থেকে মেহমান আসল। ক্যাট আর নীলাশা রয়ে গেলো। ক্যাট’র শরীর বেশ একটা ভালো না তাই সে যেতে পারে নি। এদিকে রাইয়ান ও অসুস্থ তাই নীলাশা রয়ে গেলো। তাদের দুজনকে দেখে রাখতে নীল আর কাব্য সেখানেই রয়ে গেল। শুধু অভ্র, আনহা, নিশি আর নিশান’ই এলো অনুষ্ঠানে।

মেহেরিন কে একটা সাদা রঙের লেহেঙ্গা পড়ানো হয়েছে। এর উপর গোল্ডেন রঙের কারুকাজ! নির্ঝর ও সেম রঙের শেরোয়ানি পরেছে। দুজনকেই স্টেজে বসানো হলো।মেহেরিন ফিসফিসিয়ে নির্ঝর কে বলল..

– আপনি যে আমাকে ঠেকাচ্ছেন আপনার ফ্যামিলি কি এটা জানে!

নির্ঝর শান্তি গলায় বলল..
– যেমন তোমার ফ্যামিলি ঠিক তেমনি আমার ফ্যামিলি।

– 😒। লেজ কাটা ব্যাঙ একটা। আগে কতো রোমান্টিক রোমান্টিক কথা বলতো আর এখন আমার দিকেই তাকায় না।

নির্ঝর মুখে কিছু বলল না। মনে মনে বলল..
– তোমার প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না। আমাকে আমার লক্ষ্য পূরণ করতে হবে!

এর মাঝেই তিশা এসে হাজির সেলফি তুলবে। মেহেরিন ও তার সাথে জুড়ে গেল‌‌। দুজনেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত। ইহান দূর থেকে দেখছে তিশা কে। ভারী মিষ্টি দেখতে মেয়েটা।

অভ্র ওদের সবাইকে দেখে মেহেরিন ছুটে অভ্র’র কাছে গেল। জরিয়ে ধরল তাকে। অভ্র তার মাথায় চুমু খেতে গিয়ে কপালের আঘাত দেখল। অতঃপর নিহা সবটা বলল।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নির্ঝর উষা চৌধুরী নিয়ে এলো সবার সাথে পরিচয় করানোর জন্য। অভ্র উষা চৌধুরী কে দেখে চমকে উঠলো। কিন্তু আবছা আবছা স্মৃতি তার মনে পড়তে লাগলো। কোথায় জেনো দেখেছে তাকে। কিন্তু কোথায়? মনে পড়ছে না কেন? অভ্র ভাবার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুই মনে করতে পারছে না।

অনুষ্ঠানের শেষে অভ্র নির্ঝর আর মেহেরিন কে সাথে করে সবাইকে নিয়ে খান বাড়িতে চলে এলো। তিশা ও খুব জেদ করছিল আসার কিন্তু নির্ঝর তাকে না বলে দিল। তাকে মা’র খেয়াল রাখতে বলল!

#চলবে….