Game 2 Part-40+41+42

0
553

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪০_ও_৪১

[ ৪০ ]

মেহেরিন আর নির্ঝর খান বাড়িতে এসে পড়ে। সত্যি টা এখন অবদি কেউই জানে না! কিছুদিন তারা দুজনেই থাকে খান বাড়িতে। কিন্তু নির্ঝর একবারের জন্যও মেহেরিন’র সাথে ভালো মতো কথা বলে না। মেহেরিন চেষ্টা করে তবে সে বার বার ব্যর্থ হয়। অতঃপর তারা আবার চৌধুরী বাড়িতে চলে আসে। তাদের ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। মেহেরিন বাড়িতে এসেই উষা চৌধুরী কে জরিয়ে ধরে বলে..

– শাশুড়ি আম্মু আমি চলে এসেছি!

– মেহেরিন, তুমি কি আমাকে শাশুড়ি আম্মু বলেই ডাকবে। মা বলবে না!

– না গো শাশুড়ি আম্মু তোমাকেই এই নামেই বেশি মানায়। আমার ননদিনী কোথায়?

– আমি এখানে!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে তিশা আর আমান সিঁড়ি দিয়ে নামছে। তিশা তাকে দেখেই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরে।

– বাহ দেবরজী ও আছে দেখছি!

অতঃপর আমান এসেও কুশল বিনিময় করে। নির্ঝর কোনে দাঁড়িয়ে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে কিন্তু কিছু বলছে না। মেহেরিন কথা বলেই উপরে চলে যায়। নির্ঝর তার মা’কে এসে জরিয়ে ধরে। অতঃপর তিশা আর আমানের সাথেও কথা বলে। তিশা আর আমান চলে যায়। তখন উষা চৌধুরী বলে উঠে..

– মেহেরিন মেয়েটা খুব ভালো নাহ রে!

– মা! ওর এই ইনোসেন্ট ফেস দেখে পটে যেও না। ও মেহেরিন বর্ষা খান, অধরা খানের মেয়ে! এতো সহজে সবকিছু ঠান্ডা হবে বলে মনে করো না।

– নির্ঝর শোন! যখন এতো কিছু হয়েছে তখন ও নিতান্তই ছোট ছিলো।

– ছোট ছিল বলে ভুল করেছে এটা বলতে চাও।‌ভুলে যেও না ওর প্রতিটা পদক্ষেপ তখন ও প্ল্যান মোতাবেক ছিল আর আজ ও আছে! যা করে ফল ভেবেই করে!

উষা চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যার মানে উনি নির্ঝর কে বোঝাতে পারে নি। নির্ঝর কথা বলা শেষ করে উপরে চলে আসে।

মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে সবে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। নির্ঝর দরজা লক করে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে…

– আমার ফ্যামিলির সাথে এতো ভালো ব্যবহার কেন করছো তুমি! প্ল্যান কি তোমার!

মেহেরিন নির্ঝরের কথায় পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ ফোন টিপতে থাকে। নির্ঝর খানিকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আবার বলে..
– কি হলো কথা বলছো না যে!

এতেও মেহেরিন’র কোন ভাবান্তর নেই। সে নির্ঝর কে পাশ কাটিয়ে সোফায় বসতে নিবে তখন’ই নির্ঝর রেগে তার বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে আনে। মেহেরিন এখন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখছে। নির্ঝর আবারো বলে উঠে..

– কি এতো ভাবছো! আমার কথা কানে যাচ্ছে না তোমার। কি জিজ্ঞেস করছি আমি, শুনতে পারছো তুমি!

মেহেরিন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মেহেরিন’র দিকে। খুব শান্ত ভাবেই তাকিয়ে আছে সে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকায়। কিছু বলছে না কেন মেহেরিন। এর কারন কি? এমন শান্ত কেন সে?

অতঃপর নির্ঝর আরো কিছুক্ষণ বকবক করতে থাকে তবুও মেহেরিন’র মুখ দিয়ে একটা কথাও আসে না। হঠাৎ মেহেরিন ঘড়ির দিকে তাকায়। মেহেরিন’র দেখাদেখি নির্ঝর ও ঘড়ির দিকে তাকায়। অতঃপর সামনে ঘুরতেই মেহেরিন নির্ঝরের ঠোঁটে একটা কিস করে। নির্ঝর থতমত খেয়ে মেহেরিন কে ছেড়ে দেয়।

অতঃপর মেহেরিন হেসে নির্ঝরের গলা জরিয়ে ধরে। নির্ঝর বলে উঠে..

– পাগল হলে নাকি তুমি!

– না পাগল কেন হবো জামাই জান! গত কয়েকদিন ধরে আপনি আমার সাথে যা করলেন আজ ও আমি ঠিক তাই করলাম।

– মানে!

– এটাই যে, গত কয়েকদিন ধরে আপনি আমার কথা বলছেন না। কিন্তু জিজ্ঞেস করি তো পাঁচ মিনিট পর উওর দেন। তাই আমিও আজ সেটাই করলাম। দেখলেন তো দেরি করে উওর দিলে কেমন লাগে। তবে হ্যাঁ কিস তো আপনি করেন আমি করলাম এর কারন হলো খুশি। আসলে খুশিতে আমি একটু সেলিব্রেশন করতে চেয়েছিলাম।

– কিসের খুশি!

– আপনাকে কেন বলবো। আচ্ছা বাদ দিন এসব কি জানি বলছিলেন?

– ফ্যামিলি..

– ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে আপনার ফ্যামিলি নিয়ে কিছু বলছিলেন! আসলে আপনি আমার ফ্যামিলির সাথেপ ভালো ব্যবহার করেন তো তাই আমিও করলাম। আর সবচেয়ে বড় কথা এটাই যে মেহেরিন বর্ষা খান কখনো পেছন থেকে ছুরি না। এটা তার শত্রুদের কাজ মানে আপনার!

– আদুরী..

– উফ ভালোই লাগে এই নামটা শুনতে। আচ্ছা শুনুন এখন আমার টাইটেল চৌধুরী হয়ে যাবে নাহ! তাহলে পুরো নাম কি হবে মেহেরিন বর্ষা খান নির্ঝর চৌধুরী! বাহ ভালো কিন্তু নামটা।

মেহেরিন’র হাত ছাড়িয়ে..
– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার!

– ভয় যে পাচ্ছেন বুঝতে পেরেছি। আর হ্যাঁ নেক্সট টাইম আমার প্রশ্নের উত্তর দেরি করলে ফল কিন্তু ভালো হবে না। এখন উওর ভালো আসুক কি মন্দ আই ডোন্ট কেয়ার টাঠা!

বলেই মেহেরিন ঘুমিয়ে পরল। নির্ঝর রাগে আর কোন কথা বলতে পারল না।

এদিকে অভ্র শুধু উষা চৌধুরী’র কথা ভাবছে। কোথাও না কোথাও তাকে সে দেখেছিল। কিন্তু কোথাও সেটা মনে করতে পারছে না। বার বার চেষ্টা করছে কিন্তু তখন শুধু উষা চৌধুরী’র চেহারা ভেসে উঠছে। কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল সে! কিন্তু বার বার এমন আবছা আবছা দেখার মানে কি?

সকালে..

নির্ঝর এক গ্লাস পানি মেহেরিন’র মুখে ফেলল। সে লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। নির্ঝর তার দিকে একটা কিচেন অ্যাপ্রন ছুঁড়ে দিয়ে বলল…

– জলদি গিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাও আমি নাস্তা খেয়ে অফিস যাবো। এরপর আমার একটা গানের রেকর্ডিং ও আছে!.

মেহেরিন কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে অতঃপর ঘড়ি দেখল। ৭.২০ বাজে এখন। মেহেরিন বলে উঠে..
– এতো সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট কিন্তু আমি তো রাঁধতে পারি না। কি করবো?

– আমি কি করে জানবো কি করবে। আমার নামের টাইটেল নিয়ে ঘুরো এর মানে নিজেকে আমার বউ হিসেবে দাবি করো। তো বউয়ের কাজ কি রান্না বান্না করা তাই না।

– এইজন্য কি বাড়ির সব সার্ভেন্ট দের ছুটি দিয়ে দিয়েছেন!

– তারা থাকলেও তোমার হেল্প করবে না। জলদি যাও বলছি!

মেহেরিন আর কথা বাড়ালো না। উঠে চেঞ্জ করে নিল। জামা কাপড় সব ভিজে গেছে। চেঞ্জ করে একটা জ্যাকেট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরল। মেহেরিন শেষ বার শুধু সেই বৌ ভাতের অনুষ্ঠানে শাড়ি পড়েছিল। এরপর আর পড়েনি।

অতঃপর নিচে চলে এলো নাস্তা বানাতে। সার্ভেন্ট’রা নিচে কাজ করছে। কেউ সোফা ঘর পরিষ্কার করছে কেউ খাবার টেবিল সাজাচ্ছে কিন্তু রান্না ঘরে কেউ নেই। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে রান্না ঘরে এলো। কি বানাবে সে আজ পর্যন্ত রান্না ঘরের কোন কাজ’ই করে নি সে। সার্ভেন্ট দের জিজ্ঞেস করলে বলে গেল “স্যার আপনাকে কিছু বলতে না করেছে”!

মেহেরিন একটা হাসি দিল তবে এই হাসিটা উপহাস করে হাসল। অতঃপর কিছুক্ষণ ভেবে পাউরুটি তে মাখন লাগিয়ে টেবিলে রাখল। অতঃপর ভাবল একটা ডিম অমলেট করবে। কিন্তু তেলের ফুটে উঠা দেখলেই সে শেষ।না থাক এতোটুকু যথেষ্ট! এর বেশি আর কিছু লাগবে না। অতঃপর ফ্রিজ থেকে জুস বের করে গ্লাসে ঢেলে টেবিলে সাজিয়ে রাখল। অতঃপর নির্ঝর নিচে এলো।

খাবার টেবিলে বসে পাউরুটি আর জুস দেখে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল…

– তুমি শুধু এগুলোই করলে!

– আর কি করবো! কিছু পারি না আমি!

– তা পারবে কেন?
বলেই নির্ঝর উঠে দাঁড়াল। মেহেরিন বলে উঠে..
– খাবেন না!

– না অফিসে গিয়েই খেয়ে নিব।
বলেই নির্ঝর চলে গেল।

মেহেরিন কিছুক্ষণ তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল। অতঃপর মুখ ভেংচি দিয়ে টেবিলে বসে নিজেই খেয়ে খেয়ে নিল। তার ও বেশ ক্ষিদে পেয়েছে। খাওয়া দাওয়ার পর প্রায় ২ ঘন্টা টেবিলে বসেই ঘুমাল। ঘুম ভাঙল শাশুড়ি আম্মু’র ডাকে।

– এখানে কেন ঘুমিয়ে আছো মেহেরিন!

– শাশুড়ি আম্মু তুমি!
অতঃপর মেহেরিন সব বলল।

– ও আসলে সকালে । আচ্ছা তুমি বরং ওর জন্য লাঞ্চ নিয়ে যাও। তাহলে দেখবে ওর ভালো লাগবে ‌

– আমি রাঁধতে পারি না শাশুড়ি আম্মু।

– আচ্ছা আমি শিখিয়ে দিচ্ছি আসো!
অতঃপর শাশুড়ি আম্মু’ই পুরো রান্নাটা করল। মেহেরিন সব দেখল কিন্তু তার মাথায় কিছু ঢুকেছে বলে তার মনে হচ্ছে না। শাশুড়ি আম্মু হেসে বলে..

– আচ্ছা তুমি বরং এই খাবার টা নিয়ে ওকে দিয়ে আসো আর বলো তুমি রেঁধেছো!

– না আমি বলবো আপনিই রেঁধেছেন। মিথ্যে বলার দরকার নেই!
( আমি রান্না করেছি জানলে খাবেই না)

অতঃপর মেহেরিন লাঞ্চ প্যাক করে নির্ঝরের অফিসে রওনা হলো!
.
নির্ঝর অফিসে নিজের ক্যাবিনে ছিল। তখন কথা আসে তার সাথে দেখা করতে। দুজনেই পুরোনো বন্ধু তাই প্রায় অনেকক্ষণ আড্ডা দেয়।

– সরি রে শুটিং’র কারনে তোর বিয়েতে আসতে পারি নি।

– ইটস ওকে! বাদ দে!

বলেই ল্যাপটপে চোখ পরল, সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখল মেহেরিন অফিসে ঢুকছে! নির্ঝর বাঁকা হাসল!

মেহেরিন নির্ঝরের কেবিনের দিকে আগাল। রিসেপশন থেকে জেনেছি এসেছে সে রুমে আছে। তাই মেহেরিন আর নক করল না। সোজা দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। মেহেরিন চোখ ছোট ছোট করে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর কথার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন জানে এসব তাকে দেখানোর জন্য। তাই সে কোন ভ্রুপ না করে খাবার বক্স টা টেবিলে রেখে বলল..

– শাশুড়ি আম্মু আপনার জন্য রেঁধে পাঠিয়েছেন। খেয়ে নিবেন আর কথা আপু তুমিও খেয়ে নিও উনার সাথে!

– না মেহেরিন আমি এখন চলে যাবো। তোমরা থাকো দুজন!

নির্ঝর কথার’হাত শক্ত করে ধরে বলে…
– না তুই থাক তোর সাথে আমার কথা আছে। মেহেরিন তুমি চলে গেলে যাও।

– টাঠা কথা আপু!
বলেই মেহেরিন বেরিয়ে গেল। কথা বলে উঠে..
– কিরে তুই এমন করলি কেন?

– পরে বলছি আগে খেয়ে নে!

– কিন্তু!

– তোকে আমি পরে সব বলবো। এখন বরং তুই খেয়ে নে!
বলেই নির্ঝর বসল। তখন হুট করেই ম্যানেজার এসে বলল..

– স্যার স্যার!

– কি হয়েছে! এতো খাবড়ে আছো কেন?

– স্যার! ম্যাম আমাদের একজন স্টাফ এর মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে?

– কিহহ!

– জ্বি স্যার! স্টাফ টা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে আর ম্যাম চলে গেছে গাড়ি নিয়ে!

– অ্যাম্বুলেন্স কল করেছো!

– জ্বি স্যার আসছে?

নির্ঝর আর না দাঁড়িয়ে ছুটে নিচে গেল। আসলেই স্টাফটার অবস্থা খারাপ। মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে সে। মনে হচ্ছে কোন কিছু দিয়ে খুব জোরে মাথায় মেরেছে। মেহেরিন তার রাগ যে এই লোকের উপর ঝেড়েছে এতে তার বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। কথা ও এটা বুঝতে পেরে বলে..

– দেখলি তো রাগিয়ে দিলি ওকে!

নির্ঝর কিছু বললো না। স্টাফ কে দ্রুত হসপিটালে নেবার ব্যবস্থা করল। অতঃপর কেবিনে গিয়ে বসে পরল। কথা এসে বলল..

– দেখ মেহেরিন একা ইচ্ছে করে নি। নিশ্চিত কোন ঘাপলা আছে এর মধ্যে!

– ওয়েট!
বলেই নির্ঝর ম্যানেজার কে ডাকল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো মেহেরিন কেন এমনটা করল। ম্যানেজার বলল..

– আসলে স্যার এই স্টাফ একটা মেয়েকে বিরক্ত করছিল। আর এক পর্যায়ে তার হাত ধরল। তখনই ম্যাম রেগে ওর মাথা ফাটিয়ে দিল।

– কিহহ? এমন লোককে অফিসে রাখো কেন?

– সরি স্যার! ওকে আগে সাবধান করেছিলাম কিন্তু তবুও আবার এই কাজ করল।

– সুস্থ হওয়া মাত্র চাকরি থেকে বরখাস্ত করবে মাইন্ড ইট। আমার অফিসে এমন লোকের জায়গা নেই।

– ইয়েস স্যার!

– যেতে পারো এখন!

অতঃপর সে চলে গেলো। নির্ঝর চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে বসল। কথা এসে ওর মাথায় হাত রাখল। নির্ঝর চোখ মেলে তাকাল। কথা বলল..

– বললাম তো তোকে মেহেরিন যখন করেছে তখন নিশ্চিত কারন আছে। ও এভাবে এভাবে এমন কিছু করে না। তুই বরং ওর কাছে যা। রেগে আছে ও।

– হুম যাবো। তুই কি এখন চলে যাবি।

– হুম আমার শুট আছে। যেতে হবে, ভালো থাকিস।

– সাবধানে যাস।

অতঃপর কথা চলে গেলো। নির্ঝর সেখানেই বসে রইল!
.
মেহেরিন বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে গেল। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। স্টাফ টার মাথা ফাটিয়ে রাগ তেমন একটা কমলো না। মেহেরিন একটা শাওয়ার নিয়ে কিছুক্ষণ বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুই ভালো লাগছে না তার। নির্ঝর কি সত্যি’ই তাকে ভালোবাসে না নাকি কথার সাথে সব দেখানোর জন্য করল। কিছুই ভাবতে চায় না সে। ভাবলেই মাথা ব্যাথা করে!

কিছুদিন পর…

নির্ঝর আজ কিছু একটা ভেবে রোদ্দুর,আরিশা,কাব্য, ক্যাট আর ইহান কে দাওয়াত করল আর তার সমস্ত দায়িত্ব দিলো মেহেরিন কে। তার সাথে একগাদা কথা শোনাল। মেহেরিন জানে নির্ঝর কি বলবে সেই এক কথা রান্না বান্না করো। বউদের কাছ এটা। অসহ্য! যা পারে না সেটা বলার কি দরকার। মেহেরিন শুধু শুনল আজ রোদ্দুর,ইহান, কাব্য ওরা সবাই আসবে। সব দায়িত্ব তাকেই করতে হবে। এরপর আরো কিছু বললো কিন্তু মেহেরিন সেটা শুনল না। কানে ব্লুটুথ গুঁজে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। আর নির্ঝর ও বক বক করে গেল। বেশ লেগেছে এভাবে তাকে বোকা বানাতে।

মেহেরিন সকাল থেকেই রান্না শুরু করল। আজ অফ ডে। তাই নির্ঝর ও বাসায় থাকবে। উষা চৌধুরী একবার এসে মেহেরিন কে সবকিছু বলে দেবে ভেবেছিল কিন্তু নির্ঝর তাকে বের করে দিল। অতঃপর বসে পরল ডয়িং রুমে যেখান থেকে রান্না ঘর ভালোই দেখা যায়। নজর রাখবে তাকে এখান থেকে‌। মেহেরিন রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। ম্যাগাজিন পড়ছে আবার একটু পর পর তার দিকে তাকাচ্ছে। মেহেরিন কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল…

– এভাবে তালগাছের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন রান্না শুরু করো। কিছুক্ষণ পর’ই তো ওরা এসে পড়বে।

– তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে জানেন না নাকি। তা জানবেন কি করে শুধু জানবেন কিভাবে আমাকে ঘাটানো যায়।

– কথা বন্ধ করে কাজ শুরু করো। যেভাবে তোমার মুখ চলে সেভাবে কাজ করলে মনে হয় অনেক লাভ হতো।

– হেই ওয়েট! মেহেরিন বর্ষা খান কোন অবলা নারী না বুঝলেন আর না খান রা আপনার মতো গরীব। ওদের বাসায় সার্ভেন্ট থাকে আর রান্না তারাই করে। আপনার মতো কিপ্টা না বুঝলেন।

– যাই বলো না কেন রান্না তোমাকেই করতে হবে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে ফোন বের করলো। ভিডিও দেখেই আজ রানা করবে সে! অতঃপর…

#চলবে….

[ ৪১ ]

মেহেরিন ফোন বের ভিডিও অন করলো। আজকের রেসেপি হলো মুরগির গোশত আর গরুর গোশত ভুনা আর সাদা ভাত। ব্যস এর বেশি না তার পক্ষে সম্ভব আর না সে পারবে। মেহেরিন চাল নিতে গিয়ে নির্ঝর কে জিজ্ঞেস করল..

– আচ্ছা কত টুকু চাল নেবো বলেন তো!

– কেন জানো না নাকি। মানুষ হিসেব করো।

– জানলে কি আর আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম। বলুন জলদি! নাহলে যদি ভাত কম হয় আপনার মান সম্মান যাবে!

নির্ঝর উঠে ঘরে গেলো মা কে জিজ্ঞেস করতে,অতঃপর জেনে মেহেরিন কে এসে বলল। মেহেরিন সেই পরিমাণ চাল নিলো। সেগুলো ধুতে গেলো ‌ প্রায় ২০ মিনিট ধরেই সেগুলো ধুতে লাগল। কারন সে যত বার পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে তত বারই পানি ঘোলা আসছে। তার ধারনা চাল আরো ধোয়া লাগবে। কিছুক্ষণ এমন করার পর অতঃপর ভাত বসাল। কিন্তু এর মাঝেই গন্ডগোল করল। সেটা পরে জানা যাবে।

নির্ঝরের কাছে এসে বলল..

– মুরগির গোশত আর গরুর গোশত কোনটা?

– চিন না।

– সব এক লাগছে আমার কাছে!

নির্ঝর আবারো উঠে তাকে সব বের করে দিলো আর চিনিয়েও দিল। অতঃপর সে চলে গেল, মেহেরিন কিছুক্ষণ পর আবার এলো তার কাছে।

– লবন কোথায়, আর গরম মশলা!

নির্ঝর উঠে তার হাতে ধরিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর আবার..

– আচ্ছা টক দই কোথায়?

নির্ঝর উঠে টক দই থেকে শুরু করে বাকি যা লাগবে সব তাকে ধরিয়ে দিল। অতঃপর গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর মেহেরিন তার কাছে এলো। নির্ঝর মুখ তুলে বলল..

– এখন আবার কি? সব তো দিলাম!

– পেঁয়াজ কেটে দিন আমি পারবো না এটা কাঁটতে আমার চোখ জ্বলবে।

– বাড়ির বউ হয়ে পেঁয়াজ কাটতে পারো না!

– কি তখন তখন বাড়ির বউ বাড়ির বউ করছেন আপনি ও তো আমার জামাই! কোথায় স্বামীর মতো একবারো কথা বলেছেন, স্বামীরা কি এভাবেই শুধু হুকুম করে নাকি। আমার দা ও মিষ্টি ভাবী’র স্বামী। কোথাও দা কে তো দেখলাম না আজ পর্যন্ত এমন করতে!

নির্ঝর হাত থেকে পেঁয়াজ গুলো নিয়ে বলল..

– যাও কাজ করো গিয়ে। বেশি কথা বলে সবসময়!

– যা বলি একদম ঠিক বলি!
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। নির্ঝর কাটতে যাবে তখনই তার চোখ জ্বলতে শুরু করল। এর মাঝে তিশা এসে হাজির। সে নির্ঝর কে পেঁয়াজ কাটতে দেখে মজা করতে লাগলো। নির্ঝর রেগে সব গুলো পেঁয়াজ তাকে দিয়েই কাটাল। তিশা বেচারি বিড় বিড় করতে করতে সব পেঁয়াজ কাটলো। চোখ ফুলে গেছে তার!

অতঃপর মেহেরিন রান্না শেষ করলো। কিন্তু রান্না করতে গিয়ে ওর হাতে অনেকটা গরম তেল লেগেছে। মেহেরিন এইজন্য বেশি একটা লাফালো না। কেন জানি মনে হলো এর থেকে বেশি ব্যাথা নির্ঝর তাকে দিয়েছে। সে চুপচাপ পানি ছেড়ে হাত কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখল। কিন্তু তবুও পোড়া জায়গাটা ফোস্কা পড়ে গেল

মেহেরিন কোন খাবার’ই চেক করে নি। দেখেনি র
লবন হয়েছে কি না।‌ সে তো এসব জানেই না। রোদ্দুর ওরা সবাই এলো। নির্ঝর ওর মা সবাই তাদের সাথে কুশল বিনিময় করল। ইহানের চোখ গেলো তিশা’র উপর। ভাবছে আজ তার সাথে কথা বলবেই। এদিকে সবাইকে খাবার টেবিলে বসানো হলো। কিন্তু সবাই শুধু মেহেরিন কেই খুঁজছে। ওকে দেখতে চায় সবাই!

কিছুক্ষণ পর মেহেরিন নামল। নির্ঝর ওকে বলল খাবার সার্ভ করতে। সবাই এতে খানিকটা অবাক হলো। কারন নির্ঝর মেহেরিন কে হেল্প করছে না সে বসে আছে। মেহেরিন সবাইকে খাবার দিল। ভাত অনেকটা নরম হয়ে গেছে। আর তরকারি গুলো খুব অদ্ভুত দেখতে। সবাই খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে।

নির্ঝর হেসে বলল..
– তোমাদের আদুরী রেঁধেছে, তাই আজ এই অবস্থা!

সবাই মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল। সবার তাকানো দেখে সে দাঁত বের করে হেসে দিল।‌মেহেরিন’র হাসি দেখে সবাই হেসে দিল। খাবার মুখে দিল। খাবারে লবণ অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে কিন্তু তবুও মেহেরিন’র মন রাখতে সবাই খাচ্ছে। তাদের ধারণা মেহেরিন খুব শখ করে রেঁধেছে খারাপ বলে তাকে কষ্ট দিবে না। কিন্তু নির্ঝর..

সে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর মেহেরিন’র ওপর চেঁচিয়ে বলতে লাগল..
– কি রেঁধেছো এইসব! মুখে তোলা যাচ্ছে না কেন? যদি রাঁধতে নাই পারো তাহলে রাঁধতে যাও কেন?

নির্ঝরের এমন ব্যবহারে সবাই অবাক। এমনকি তিশা ও। শুধু অবাক না উষা চৌধুরী আর আমান! তারা জানতো নির্ঝর এমন কিছু একটা করবে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– নির্ঝর এটা কেমন ব্যবহার!

– তো দেখছো না কিভাবে সব রেঁধেছে ও।

কাব্য বলে..
– তুমি তো জানো এসব ও পারে না। তুমি তখন’ই বারন করে দিতে ওকে তাহলেই এসব কিছু হতো না।

– হুম এখন সব ভুল তো আমার’ই!.

মেহেরিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল..
– সরি আমি বুঝতে পারি নি!

সবাই তার দিকে তাকাল। ইহান তার হাতের তলায় পোড়া জায়গাটা দেখে ফেলল। সে খাবার ছেড়ে লাফিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন’র হাত ধরে বলল..
– এটা কি? কিভাবে হলো

– এটা মানে!

সবাই উঠে গেল তার কাছে। আরিশা হাত ধরে বলল..
– অনেক খানি পুড়ে গেছে দেখছি। গরম তেল পড়েছিল নাকি মেহেরিন!

– হ্যাঁ ওই রাঁধতে গিয়ে আর কি!

ক্যাট বলে উঠে…
– ঔষধ লাগাও নি কেন? ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে দেখি!

– নির্ঝর তুই দেখিস নি এইসব!

– না আমি জানি না। ও বলে নি আমাকে।

– ফার্স্ট এইড বক্স কোথায়?

তিশা বলে..
– আমি নিয়ে আসছি!

সবাই মেহেরিন কে নিয়ে সোফায় বসায়। কাব্য বলে…
– নির্ঝর তোর মেহেরিন কে মানা করা দরকার ছিল।

– আজব আমি কি জানি নাকি এতো কিছু হবে। আর রান্না সব মেয়েরাই করে। হাত পুড়িয়ে ফেলল কিন্তু রান্না টা ঠিক করে করতে পারলো না। এতো আদর না দেখিয়ে একটু ঘরের কাজ শিখাতে পারতে!

কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হলো না। খুব অচেনা লাগছে সবার কাছে নির্ঝর কে। অতঃপর নির্ঝর হাত দেখিয়ে খাবার সব ফেলে দিয়ে উপরে চলে গেল। তিশা ফার্স্ট এইড বক্স আনতেই ইহান দ্রুত তার থেকে ওটা নিয়ে মেহেরিন’র হাতে মলম লাগাতে লাগল।

মেহেরিন বলে উঠে..
– তোরা খাওয়া হয় নি না। সরি রে..

কেই কোন কথা বলল না। মেহেরিন আবার বলল..
– আচ্ছা তোরা ওয়েট কর আমি খাবার অর্ডার করছি।

– না লাগবে না। আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আর..

– আর আমাদের সাথে তুই ও যাবি।

– আরে আমার কথা টা তো শোন!

– মেহেরিন আমরা অবুঝ না ঠিক আছে!

– সব বুঝি আর এখন অনেক কিছুই বুঝতে পারছি।

– নির্ঝর রেগে ছিল তাই বলেছে তোরা শোন তো!

ইহান মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল..
– আমাদের কাছে মিথ্যে টা হয়তো নাই বললি!

– সবার কাছে তোর মিথ্যে চললেও আমাদের কাছে আর চলবে না।

– আমরা তোকে ছোট থেকেই বড় করেছি। আগলে রেখেছি! এতো কিছু আজকের এই দিনটা দেখার জন্য করি নি।

কাব্য মেহেরিন’র হাত ধরে টেনে নিয়ে দরজার কাছে গেল‌। বলল..
– এমন মানুষের কাছে থাকার চেয়ে আমাদের সাথে থাকা অনেক ভালো তোর!

– মেহেরিন বর্ষা খান নির্ঝর চৌধুরী না চাইলে কেউ তাকে এই বাড়ি থেকে বের করতে পারবে না। মনে রাখিস!

কাব্য মেহেরিন’র হাত টা ছেড়ে দিল। রোদ্দুর,ইহান আর কাব্য’র চোখ রাগে লাল হয়ে আছে। ইহান কপালে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে খানিকটা ঘসল। অতঃপর হেসে বলল..

– এরপর বাকিটা দি দেখবে!

বলেই সে চলে গেল। রোদ্দুর আর কাব্য মেহেরিন’র দিকে একবার তাকাল। অতঃপর চলে গেল। আরিশা মেহেরিন’র গালে হাত রাখল। ক্যাট বলে উঠল..
– নিজের খেয়াল রেখো। কিছু হলে ফোন করো কিন্তু!

– নিশ্চিন্তে থাকো মিয়াও ভাবী। আমি একদম ঠিক আছি।

আরিশা বলে..
– হুম দেখতেই পারছি!

অতঃপর তারা চলে গেলো।মেহেরিন উপরে গেল। নির্ঝর সোফায় বসে পির্জা খাচ্ছে। মেহেরিন’র রাগ মাথায় চড়ে বসল। সে এসেই নির্ঝরের পির্জা গুলো ছুড়ে ফেলে দিল।

– আদুরী!

মেহেরিন রেগে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর জানে মেহেরিন’র বেশ রেগে আছে। নির্ঝর হেসে বলল..

– কি হলো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড রা চলে গেছে।

– আপনি ভাবতেও পারছেন না এর ফল ঠিক কতোটা খারাপ হতে পারি। আমি সব কিছু সহ্য করতে কিন্তু ওদের কষ্ট পারি না।

– এজন্য’ই তো এতো কিছু করলাম জানেমান। আরো অনেক কিছু হবে রেডি থাকো।

মেহেরিন ছোট করে একটা উপহাসের হাসি দিল। নির্ঝর মেহেরিন’র গাল ধরে বলে..

– আদুরী তোমার উপর এতো চেঁচিয়ে আমার মাথা ধরে গেছে। যাও গিয়ে চা করো আর হ্যাঁ চিনি একটু বেশি দিবে।

– আই উইশ আপনাকে আমি বিষ খাওয়াতে পারতাম!

– সেটা তুমি পারবে না জান!

– আদুরীর ধৈর্য্য’র পরিক্ষা নিয়েন না। প্রমিস করছি সুদে আসলে সব ফেরত পাবেন আর সেদিন কিছু করতে পারবেন না।
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর পেছন থেকে বলল..

– আচ্ছা আমিও অপেক্ষায় থাকলাম!

#চলবে….

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪২

মেহেরিন নিচে এসে চা বানাতে লাগল। খুব রাগ হচ্ছে। কিছু না কিছু তো করতেই হবে। ইটের জবাবে পাথর তাকে দিতেই হবে।‌ এমন কিছু করতে হবে যাতে নির্ঝর কে জব্দ করা যায়। যা করার একবারই করবে। আর এই একবারেই তাকে জবাব দিবে। মেহেরিন পানিতে চা পাতা দিল। তখন উপর থেকে নির্ঝর নামল।

মেহেরিন তার দিকে একবার তাকাল। অতঃপর কাজে মনোযোগ দিল। হঠাৎ কেউ দরজা নক করল। নির্ঝর নিজেই গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলতেই নিহা কে দেখতে পায় সে। সে হাসিমুখে তাকে বলে ভিতরে আসতে। নিহা কে দেখে মনে হচ্ছে বেশ রেগে আছে। নিহা ভেতরে এসে দেখে মেহেরিন রান্না ঘরে। মেহেরিন নিহা কে দেখে অবাক!

– তুই রান্না ঘরে কি করছিস?

– চা বানাতে আসলাম দি। তুমি বসো না!

নিহা দ্রুত মেহেরিন’র হাত চেক করলো। অতঃপর বললো..
– হাত পুড়ল কি করে?

– রান্না করতে গিয়ে!

– এরপরও আবার রান্না করতে এসেছিস!

নির্ঝর দাঁড়িয়ে দু’জনের কথা শুনছে। নিহা নির্ঝর কে উদ্দেশ্য করে..
– আদুরীর হাত পুড়ে গেছে! তাও অনেকটা এরপরও তাকে দিয়ে রান্না করাচ্ছিস তুই।

– আমি তো বলেছিলাম শুধু চা বানাতে।‌ হাত বেশি জ্বললে না বলে তো।

– নির্ঝর এসব কি? তুই এটা কি রকম কথা বলছিস?

– যা সত্যি তাই বলছি। আর বিয়ের আগে এমন কোন শর্ত হয় নি তো যে আমি মেহেরিন কে রান্না করতে বলতে পারবো না তা না।

– খুব অচেনা লাগছে তোকে!

– তাহলে চিনে নাও কারন এটাই আমি।

– কিন্তু তোর এই আমি কে আমার সহ্য হচ্ছে না।

– তোমার বোন করে নিয়েছে দেখছো না রান্না করছে।

নিহা মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন চা বানাতেই ব্যস্ত। অতঃপর কাপে চা ঢেলে বলল..

– দি তুমি চা খাবে দেবো।

– তুই আমার সাথে এখন চলে যাবি বুঝলি তুই!

নির্ঝর সোফায় বসে দু বোনের কাহিনী দেখতে লাগল। নিহা এক পর্যায়ে মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে রান্না ঘর থেকে বের করলো। নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। মেহেরিন নিহা’র হাতের উপর হাত রাখল। নিহা অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলল..

– দি আমাকে বিশ্বাস করো তো!

– আদুরী তুই!

– আমি হেরে পিছনে চলে যাওয়ার পাত্র না আপি। তুমি বাসায় যাও। আমি এখানে সব দেখে নেবো।

– কিন্তু..

– দি আমি একবার বলে দিয়েছি। কথার নড়চড় আর হবে না।

নিহা নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর বলল..
– খুব বড় ভুল করছো। কার সাথে কি করছো বুঝতে পারছো না। যখন বুঝতে পারবে তখন তোমার সব যাবে!

– দি তোমার মাথা গরম হয়ে আছে। একটু ঠান্ডা কিছু খেয়ে নাও!

নিহা রাগে চলে গেলো। মেহেরিন রান্না ঘর থেকে চায়ের কাপটা নির্ঝরের হাতে দিয়ে উপরে চলে গেল।

– বাহ দুই বোনের কি রাগ। একজন বাইরে আরেকজন উপরে নাহ একই রক্ত তো শরীরে বইছে। বংশধর বলে কথা। ( চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ) নাহ চা টা ভালোই বানিয়েছে!

অতঃপর সে সোফায় বসে চা খেতে থাকে।
.
নিহা বাড়িতেই আসতেই অভ্র তার কাছে গেল।‌ সবাই ঘিরে ধরল তাকে।

– আদুরী কোথায়? আসে নি তোর সাথে!

– না দা ও আসবেনা বলে দিয়েছে।

– কি বলছিস এসব। আমি যাচ্ছি ওকে আনতে

– দা ও আসবে না কোন মতে।

– নির্ঝর এমন ভাবো ধোঁকা দিলো আমাদের। আর এই ধোঁকা দেবার কারন টা কি?

– জানি না দা। মেহেরিন এসব কিছু বলে নি।

নীল বলে উঠে..
– যদি নির্ঝর আবারো এমন কিছু করে তখন!

– তখন নির্ঝর কে আমি জীবিত ছাড়বো না।
বলেই নিহা চলে গেলো। সবাই চুপচাপ বসে রইল। নিশি’র হাত ধরে বসে আছে নিলাশা। নিশান আজ সকালেই চলে গেছে লন্ডন! এখন তার এই অবস্থায় এমন একটা পরিস্থিতি। অনেক মনোবল হারিয়ে ফেলছে সে। নিলাশা আর নীল তাকে বুঝিয়ে সাত্বনা দিচ্ছে!
.

– মা আমি আসবো!

– তিশা! হ্যাঁ আয় ভিতরে আয়।

– কিছু কথা ছিল তোমার সাথে!

– বল!

– ভাইয়া এমন কেন করছে মা। ভাবী কতো ভালো কিন্তু ভাইয়া সবসময় তার সাথে এমন ব্যবহার কেন করে।

– আমি ওকে বলেছি কিন্তু নির্ঝর বুঝতে চাইছে না।

– কিন্তু মা এটা অন্যায়।

– আমাদের কিছু করার নেই তিশা। তোর ভাই বুঝতে চায় না।

– ওরা কাখনো চাইবেও না!
বলেই তিশা চলে গেল।
.
রাতে…

নির্ঝর অনেক রাত করে বাড়ি ফিরল। রুমে এসে দেখে মেহেরিন ঘুমিয়ে আছে অনেকটা অগোছালো ভাবে। খাটের এক কোনে গুটিসুটি মেরে, মাথার তলে বালিশ টাও নেই।

নির্ঝর মেহেরিন’র কাছে গেল। অতঃপর তাকে কোলে তুলে ঠিক মতো শুইয়ে দিল।মাথার তলে বালিশ দিল অতঃপর গায়ে চাদর টা টেনে দিল। পোড়া হাতটার দিকে খানিকক্ষণ তাকাল। ফোস্কা পড়ে হাতটার অবস্থা খারাপ। রাতে মনে হয় না আর মলম দিয়েছিল। নির্ঝর মলম এনে হাতে লাগিয়ে দিল। কপালে একটা চুমু খেল। খুব গভীরে ঘুমে আছে সে। সারাদিন এতো কাজ করেছে তাই হয়তো। কি করছে কেন করছে জানে না তবে তার মন বলছে এইসব করতে। পাশে বসে তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। অতঃপর উঠে এলো সেখান থেকে। বেলকনিতে এসে দাঁড়াল।

আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল, চাঁদ আজ বেশ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। তারা রা চিক চিক করছে। এখানে এইভাবে তাকাতেই তার আর মেহেরিন’র কিছু স্মৃতি তার চোখে সামনে ভেসে উঠলো। মেহেরিন কে সে বলেছিল..
“এইভাবে শত রাত তোমার সাথে বসে আমি চাঁদ দেখবো।” কিন্তু সেসব আজ অতীত। মেহেরিনকে সে ভালোবাসে এতে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তার লক্ষ্য তার কাছে অতি মূল্যবান। মেহেরিন তার সাথে যা করেছে এর পর তাকে ছেড়ে দিলে তার মন শান্ত হবে না।
.
কয়েকদিন পর..
নির্ঝর সারাদিন কাজ করার পর সন্ধ্যায় বাসায় আসল। নির্ঝর সোজা রুমে গেলো। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে নিল। মেহেরিন তার জন্য এক কাপ চা নিয়ে এলো। নির্ঝর তার দিকে একবার তাকিয়ে বলল..

– দু মিনিট দাঁড়াও!

মেহেরিন দু’মিনিট দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর কি ফাইল বের করছে। হঠাৎ করেই কাপ পড়ে ভেঙ্গে গেল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল মেহেরিন ও পড়ে যাচ্ছে। নির্ঝর দৌড়ে তাকে ধরল।

– মেহু পা.. আদুরী! এই আদুরী,আদুরী!

মেহেরিন’র জ্ঞান নেই। নির্ঝর তাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল। অতঃপর ডাক্তার কে কল করল। ডাক্তার এসে মেহেরিন কে চেকআপ করছে। একপাশে উষা চৌধুরী আর তিশা বসে আছে। ঘরের এক কোনে আমান। নির্ঝর খাটের পাশে দাঁড়ানো। তিশা মেসেজ দিয়ে ইহান কে জানাল এসব। কয়েকদিন আগেই ইহানের সাথে সে পরিচয় হয়েছে। খুব ভালো একটা ছেলে। ভাবী’র অনেক খেয়াল। ওর মতে নির্ঝর মেহেরিন আরো কষ্ট দিবে। তাই সবার থেকে আড়াল করে মেসেজ দিল সে। এদিকে ডাক্তার বলল..

– পেশার লো, ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করার কারনে এমনটা হয়েছে। সুগার ও লো হয়ে গেছে। ওর প্রতি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখুন। ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিয়েছি আর কিছু মেডিসিন লিখে দিলাম। এগুলো এনে তাকে খাইয়ে দিবেন।

– আচ্ছা আসুন আপনাকে আমি দিয়ে আসছি।

অতঃপর নির্ঝর ডাক্তার কে বাইরে ছেড়ে দিয়ে এলো।
ভেতরে আসতে নিবে তখন’ই গাড়ি থামার শব্দ এলো। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল গাড়ি থেকে নিহা, নীল আর ইহান নামছে। নির্ঝর তাদের দেখে অনেকটা অবাক হলো। তারা ৩ জন’ই উপরে চলে গেলো। নির্ঝর ও গেলো তাদের পিছু পিছু!

নিহা, নীল আর ইহান দেখল মেহেরিন বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। তাদের দেখে তিশা আর উষা চৌধুরী উঠে গেল। নিহা আর নীল মেহেরিন’র দু পাশে বসল। নিহা মেহেরিন’র হাত ধরে চুমু খেল। নীল মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাচ্ছে। ইহান দাঁড়িয়ে ওদের দেখছে। উষা চৌধুরী বলে উঠে..

– চিন্তা করো না একটু আগেই ডাক্তার দেখে গেছেন। পেশার লো তাই অজ্ঞান হয়ে গেছে!

উষা চৌধুরী’র কথা কারো কানে ঢুকল বলে মনে হয় না। সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। নির্ঝর রুমে এলো। নিহা তার দিকে তাকাল। নির্ঝর তিশা ওদের কে বের হতে বলল। সবাই চলে গেল। নির্ঝর এসে খাটের এক পাশে দাঁড়াল ‌। নিহা উঠে তার দিকে গেল। নির্ঝর মাথা নিচু করে আছে। নিহা খুব জোরে একটা চড় মারল নির্ঝর কে। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে সেট সহ্য করল। নিহা বলল..

– আমার বোন কখনো তোকে বিয়ে করতে চাইনি, সে ভালোবাসতো না তোকে। আমি জোর করেছি ওকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তোকে বিশ্বাস করা আমার উচিত হয় নি।আমার বোনটাকে শেষে কি না মেরে ফেলার চেষ্টা করলি তুই।

– দি..

– চুপ কর তুই। তোর থেকে কোন কথা শুনতে চাই না আমি। আমি আমার বোন কে এখান থেকে নিয়ে যাবো রাখবো না তাকে তোর কাছে।

নির্ঝর চুপ হয়ে রইল। নীল তাকে কোলে নিতে যাবে তখন নির্ঝর বলল..
– দি ও কিন্তু আমার বিবাহিতা স্ত্রী তুমি এভাবে ওকে নিয়ে যেতো পারো না।

– আমি কি করতে পারি এই সম্পর্কে তোর কোন ধারনা নেই। নীল চল!

– আদুরীর জ্ঞান ফিরার পর ও কিন্তু আমার কাছেই চলে আসবে দি।

– যখন ওর জ্ঞান ফিরবে তখন দেখে নেবো!

বলেই তারা চলে গেল। নির্ঝর রেগে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করল।
.
মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরার পর সে নিজেকে খান বাড়িতে দেখতে পেল। অবাক হলো না শুধু ভাবল এই বাড়ি থেকে কিভাবে বের হবে সে। অভ্র তাকে কোনমতে যেতে দিবে না। ঠিক তাই হলো। মেহেরিন’র ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলো।

আজ ৩ দিন হলো মেহেরিন খান বাড়িতে। তার বের হবার সব রাস্তা বন্ধ। এদিকে নির্ঝর একবার ও কল করে তার খোঁজ খবর নিলো না। জিজ্ঞেস ও করল না কেমন আছে সে। ভুলে গেলো কি তাকে তাহলে। মেহেরিন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রইল।

এদিকে অভ্র উষা চৌধুরী কে মনে করতে গিয়ে শুধু আবছা কিছু তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আজ অনেক চেষ্টা করার পর একজন কে দেখতে পেলো না। অভ্র দাঁড়িয়ে গেল।তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।সে রুম থেকে বের হয়ে গেল। বসার ঘরে মেহেরিন কে খাবার খাওয়াচ্ছিল নিহা।

– দা! কি হয়েছে তোমার এতো অস্থির লাগছে কেন?

– শোন আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে যাচ্ছি। আমি না আসা অবদি মেহেরিন কে কোথাও যেতে দিবি না।

আনহা বলে..
– এই ভোর সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছেন আপনি আর আসবেন কবে।

– বেশ কয়েকদিন লাগবে, ঠিক বলতে পারছি না।

– কি এতোদিন!

– হুম

শান্ত আর অরনি ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে..
– কোথায় যাবে তুমি বাপি!

– এখানেই যাবো আব্বু আর আম্মু। এসে পড়বো তোমাদের জন্য অনেক চকলেট আনবো ঠিক আছে।

মেহেরিন উঠে অভ্র’র কাছে গেল। অভ্র তার কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– নিজের খেয়াল রাখিস। কোথায় যাবার কোন দরকার নেই তোর দা এখনো বেঁচে আছে। আমি এসে পড়বো তাড়াতাড়ি।

– সাবধানে যেও।

– হুম!

অতঃপর আনহা, নিহা, নিশি সবার সাথে দেখা করল। অতঃপর অভ্র গাড়ির চাবি নিয়ে চলে গেল।
.
মাঝ রাতে..

নির্ঝর মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে আছে।

– খুব আরামে ঘুমিয়ে আছো না আদুরী। কিন্তু তোমার এই ঘুম হারাম করে দেবো আমি।

অতঃপর মেহেরিন’র নাকের সামনে অজ্ঞান করার ঔষধ স্প্রে করল। মেহেরিন অজ্ঞান হয়ে গেল। নির্ঝর তাকে কোলে করে বাইরে নিয়ে এলো। সবাই ঘুমাচ্ছে! নির্ঝর নিহা ওদের সবার রুম লক করে রেখেছিল। তাই কেউ জেগে গেলেও তাদের ধরতে পারবে না। নির্ঝর মেহেরিন’কে নিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই ডেভিল সামনে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর পিছনে তাকিয়ে দেখল সেখানেও গার্ড।

– স্যার আপনি মেহেরিন কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।

– ডেভিল! আমি গেলে আদুরী কে এখান থেকে নিয়েই যাবো।

– না স্যার। ম্যাম এর বাইরে যাবার অনুমতি নেই। আমি আপনাকে যেতে দিতে পারবো না।

– সরি ডেভিল!
বলার সাথে সাথেই পেছন থেকে আমান খুব জোরে ডেভিলের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করল। ডেভিল অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। নির্ঝর আবারো আগাতে যাবে তখন পেছন থেকে একজন গার্ড বলে উঠে..

– স্যার আপনি ম্যাম কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।

নির্ঝর পেছন ঘুরে সবার দিকে তাকাল। সবাই তার দিকে গান তাক করে আছে। নির্ঝর বলল..
– ভুলে যেও না তোমাদের ম্যাম আমার কোলে। ওকে বাঁচানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তোমাদের। ওর কিছু হলে কিন্তু তোমরাই দায়ী থাকবে।

সবাই গান নামিয়ে ফেলল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’কে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। আমান গাড়ি স্টার্ট দিল।
.
ভোরে..

নিহা তাকিয়ে আছে ডেভিলের দিকে, ওর মাথায় ব্যান্ডেজ করানো হচ্ছে। নিহা দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে। ডেভিল বলে উঠে..

– সরি ম্যাম আমি পারি নি। তবে তুমি বললে আমি এক্ষুনি নিয়ে আসতে যাবো।

– না ডেভিল যাবার দরকার নেই।

– তাহলে!

নিহা বাঁকা হেসে বলল..
– ডেভিল এটা খান বাড়ি। এখান থেকে সবাই নিজের ইচ্ছায় আসলেও কেউ নিজের ইচ্ছায় যেতে পারে না। নির্ঝর এখানে নিজের ইচ্ছায় এলেও আমার ইচ্ছায় গেছে।

– ঠিক বুঝলাম না!

– সকাল হতে দাও বুঝে যাবে। এবারের চাল আমরা দেবো।

নিহা রোদ্দুর, কাব্য, ইহান আর নীলের তাকাল।সবাই হাসল। তারা ৫ জন মিলে যে প্ল্যান করেছে এটা বোঝায় যাচ্ছে।
আহিয়ান বলে উঠে…

– তোমরা কি করতে চলেছো!

– অপেক্ষা করুন সব জানতে পারবেন।

#চলবে…