#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৭
মেহেরিন দুপুর গড়িয়ে বিকালের দিকে ঘুম থেকে উঠলো। সারারাত ঘুমায় নি বলে নির্ঝর আর ডাক দিলো না। মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল। সবাই বসে আছে বসার ঘরে। হয়তো গল্প করছিল কিন্তু নির্ঝরও এখানে আছে। ওই এক কোনে বসে ল্যাপটপ টিপছে সে। মেহেরিন সোজা এসে নির্ঝরের পাশে বসে পড়ে। নির্ঝর বিরক্তিকর চোখে তার দিকে তাকায়। মেহেরিন’র এতে অবশ্য কিছু যায় আসে না। সে সোজা নির্ঝরের কোলে উপর শুয়ে পড়ে। নির্ঝর বলে..
– হোয়াট দ্যা হেল!
– আপনার সাথে কথা আছে।
– বসে বলা যায় না।
– না আপনি আমার কথা না শুনেই চলে যাবেন।
– সবাই এখানে আছে, কি করছো তুমি?
উষা চৌধুরী হেসে উঠে চলে যায়। তিশা আর আমান ও চলে যায়। মেহেরিন হেসে বলে উঠে…
– দেখুন সব্বাই চলে গেছে।
– কি হয়েছে?
– জানেন আজ আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।
– কি স্বপ্ন?
– সেটাই তো বলবো। আমি আজ স্বপ্নে দেখেছি আপনি আমাকে কিস করেছেন। তাও দু’দুবার!
নির্ঝর চুপ হয়ে গেল। মেহেরিন কে যে সে ঘুমের মধ্যে কিস করল এটা কি সে বুঝে গেলো কি না? নির্ঝর প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্যে বলে উঠে..
– তোমার এসব ফালতু স্বপ্ন নিয়ে তুমি সরো!
– না সরবো না।
– ব্যাপার কি বলোতো?
– কোন বিষয়ে!
– অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে তোমায়।
– অস্বাভাবিক থাকার কারন!
নির্ঝরের বুঝতে বাকি নেই মেহেরিন’র মাথা থেকে ভোরের সব ঘটনা উধাও হয়ে গেছে। তবে তার মনে আবার আসবে কিন্তু সেটা আবার হঠাৎ করে। আর যখন আসবে তখন সে যে কি করবে বুঝা কঠিন।
নির্ঝর এসব ভাবতে লাগলো তখন হুট করেই মেহেরিন ঠোঁটে একটা চুমু খেলো। নির্ঝর চমকে উঠলো। মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলল..
– স্বপ্ন টা পূরণ করলাম! কারন আপনি তো আর কিস করবেন না তাই আমিই করলাম!
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। নির্ঝর মেহেরিন’র চলে যাওয়া দেখতে লাগল। এই মেয়েটাকে যত’ই কষ্ট দেবার চিন্তা করে না কেন মেয়েটা সবসময় সেখান থেকে বেরিয়ে আসে। এমন মনে হয় কষ্ট ওকে স্পর্শ করতে পারে না। কোন কিছুতে কিছুই যায় আসে না ওর। এরকম কেনো তুমি মেহু পাখি! তুমি এমন হলে যে আমি দুর্বল হয়ে পড়বো তোমার উপর!
.
নিশি আর ক্যাট আজ এসেছিল হসপিটালে চেকআপ’র জন্য! দেখতে দেখতে আজ ৩ মাস হয়ে গেল। দুজনের সাথে কাব্য এসেছিল কিন্তু একটা জরুরী কাজে তাকে বেরিয়ে যেতে হয়। যেহেতু ড্রাইভার সাথে ছিল তাই কাব্য আর বেশি একটা চিন্তা করে না। ক্যাট আর নিশি ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে চলে যাবে এটা ভেবে সে চলে যায়।
নিশি আর ক্যাট চেকআপ’র পরে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু মাঝপথেই গাড়ি টা থেমে যায়। ড্রাইভার জানায় গাড়ি টা গ্যারেজ’র নিয়ে যেতে হবে। অতঃপর নিশি আর ক্যাট গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। অতঃপর ক্যাব বুক করতে চায় কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না। ক্যাব আসতে অনেকক্ষণ লাগবে এটা তাদের আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিশি’র কাছে বিষয়টা একটু অদ্ভুত লাগল। কারন তারা একদমই একটা নিরব জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছু কি হবে তাহলে এখানে! নিশি কাব্য কে কল করতে যাবে তখন হঠাৎ করেই কেউ তার উপর ছুরি’র আঘাত করতে যায়। নিশি সেটা থেকে বাঁচতে গিয়ে ফোনটা নিচে পড়ে যায়। একজন তাদের ড্রাইভার কেও আঘাত করে। সে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায়।
বুঝতে বাকি নেই তারা ফাঁদে পড়েছে কারন কিছুক্ষণ’র মধ্যেই কয়েকজন মুখোশধারী লোক এসে তাদের ঘিরে ধরে। এই অবস্থায় মারামারি করাটা তাদের জন্য মোটেও ঠিক না। আর এরকম কিছু হবে নিশি ভাবতেও পারে নি। নিশি’র গান টা গাড়ির ভিতরেই ছিল! সেটা সেখান থেকে নেবার চেষ্টা করলে নিশি একজন গান শুট করে। ভাগ্যক্রমে সেটা গাড়িতে গিয়ে লাগে। নিশি আর ক্যাট দাঁড়িয়ে আছে। ভাবছে কি করা যায়। এদিকে ক্যাট’র গান তার সাথেই ছিল। সে সেটা বের করে তাদের দিকে তাক করে। তারা সবাই হেসে উঠে!
এদিকে নির্ঝর সেই রাস্তা দিয়ে তাদের কাজের একটা সাইডে যাচ্ছিল। মাঝ রাস্তায় দুজন কে এভাবে দেখে নির্ঝর গাড়ি থামায়। তাকে গাড়ি থামাতে দেখে সবার নজর এখন তার দিকে। নির্ঝরের সাথে কয়েকজন গার্ড ছিল তারা লোকগুলো কে শায়েস্তা করে। নির্ঝর নিশি আর ক্যাট কে তার সাথে আসতে বলে। নিশি আর ক্যাট প্রথমে রাজি না হলেও পরে গাড়িতে উঠে। নির্ঝর গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
– কোথায় গিয়েছিলি তোরা।
– সেটা তোর না জানলেও হবে!
– এসময় এভাবে একা বের হওয়া উচিত না। যখন তখন কিছু হয়ে যেতে পারে।
– তাইতো লোকের তো আর অভাব নেই। যেই লেভেলের অভিনয় করতে পারে।
নির্ঝর বুঝতে পারল তারা দুজন তাকেই বলছে। নির্ঝর তাদের দিকে পানি এগিয়ে দিয়ে বলল..
– খেয়ে নে ভালো লাগবে!
কিন্তু দুজনের একজন ও সেটা ছুঁয়ে দেখল না। অতঃপর গাড়ি কিছুদূর আগাতেই নির্ঝর তার গাড়ির উপরে হেলিকপ্টার উড়তে দেখল। সে গাড়ি থামিয়ে দিল আর হেলিকপ্টার গিয়ে থামল গাড়ির সামনে!
নিহা বের হয়ে এলো হেলিকপ্টার থেকে। তাকে দেখে নিশি আর ক্যাট নেমে এলো। নির্ঝর ও বের হলো। নিহা দুজনকেই জরিয়ে ধরে বলল, “ঠিক আছো তোমরা”!
– দি ঠিক আছি আমরা।
নিহা হেসে দুজনের কপালেই চুমু খেল। অতঃপর নির্ঝর কে তার চোখে পরল। ক্যাট বলে উঠে..
– আমাদের উপর যখন হামলা হয়েছে তখন নির্ঝর’ই আমাদের বাঁচিয়েছে দি!
– আচ্ছা তোমরা দুজন গিয়ে বসো আমি আসছি!
অতঃপর দুজনেই চলে যায়। নির্ঝর আর নিহা মুখোমুখি!
– কেমন আছো দি!
– প্ল্যান টা ভালোই!
– দি আমি কিছু করে নি।
– সেটা তো আমি পরে জেনেই নেবো কে করেছে।
বলেই নিহা চলে গেল। নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে বসল!
কিছুদিন পর নিহা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারল এটা নির্ঝরের কাজ না। তবে কে করেছে তার খোঁজ নিতে লাগলো। এদিকে ততোক্ষণে নির্ঝর জেনে গেছিল এটা কার কাজ।
দুদিন পর..
আজ সকাল থেকেই বাড়িতে তোড়জোড়! কারন আজ নির্ঝরের বাড়িতে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। সেই ডিলটার সেলিব্রেশন হবে আজ। নির্ঝর খান বাড়ির সবাই কে ইনভাইট জানিয়েছিল। অবশেষে তারা এসেছিল! নিহা, আহিয়ান, নীল,ইহান,রোদ্দুর আর আরিশা। তাদের সাথে শান্ত, অরনি আর রাইয়ান।
তাদের সবাইকে দেখে মেহেরিন দৌড়ে এলো। সবার সাথে দেখা করল। শান্ত, অরনি ছুটে এলো তার কাছে। জরিয়ে ধরল তাকে। মেহেরিন তাদের দুজনকে চুমু খেয়ে জরিয়ে ধরল।
– কেমন আছে আমার আম্মু জান আর ফুফু জান!
– আমরা ভালো আছি ফুপি!
– কিন্তু খালামনি তোমাকে অনেক মিস করি। তুমি কেনো আসোনা আমাদের বাসায়!
– আসবো, কয়েকদিন পরেই আসবো!
অতঃপর শান্ত আর অরনি নির্ঝর কে দেখে তার কাছেও ছুটে যায়। নির্ঝর তাদের অনেক আদর করে। তিশা ইহান কে দেখে বেশ খুশি হয়। তার মনে ইহানের জন্য অনুভূতি আছে তবে ইহানের মনে কি আছে সেটা কেউ জানে না।
মেহেরিন একে একে নিহা, আহিয়ান, রোদ্দুর, আরিশা, ইহান আর নীলের সাথে কুশল বিনিময় করে। সবাই তাকে দেখে খুব খুশি হয়। নীল সেদিন ও চায় মেহেরিন কে তাদের সাথে নিয়ে যেতে! কিন্তু মেহেরিন বলে উঠে..
– ভাইয়া এতো টেনশন কেন করছো? আমার কিছু হয়েছে, দেখছো না আমি একদম ঠিক আছি!
– হতে কতোক্ষণ! আর খান বাড়িতে থাকলে তোর এখন কি হবে?
মেহেরিন একটু ভান নিয়ে বলে..
– আমি এখন শুধু খান না মেহেরিন বর্ষা খান নির্ঝর চৌধুরী!
আহিয়ান হেসে বলে..
– যে কি না মিঃ চৌধুরী কে নাজেহাল করে ছাড়ছে!
– এই যে আমার জিজু, এজন্য এতো ভালোবাসি তোমাকে। আমাকে অনেক ভালো মতো বুঝো তুমি!
রোদ্দুর মেহেরিন’র কান মলে বলে..
– হ্যাঁ তাই তো এখন বলবি না। যে তোর দলে থাকে তখন সেই তোর জন্য ভালো!
– হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই কান ছাড় আমার!
অতঃপর আরিশা’র কাছে এসে বলে..
– কি গো ম্যাম আপনার খবর কি?
– আমাদের টা তো ঠিকই আছে। তোর টা বল!
– আমি বিন্দাস আছি। কিন্তু আমি কোন ব্যাপারে কথা বলছি বুঝতে পারছিস?
– কোন ব্যাপার!
– উহুম উহুম! মানে মিয়াও ভাবী আর আপি তো কিন্তু..
আরিশা ওকে চিমটি দিয়ে বলে..
– পাজি মেয়ে একটা দেবো কিন্তু!
– আমার দি কিন্তু এখানে বুঝলে। আচ্ছা দি সেদিন আপি আর মিয়াও ভাবী কেমন আছে!
নিহা সেদিনের কথা মেহেরিন’র থেকে আড়াল করে রাখল। বলল..
– ভালো! তুই বল..
– কি বলবো?
– কি ভাবলি! তুই বললে আমি কিন্তু দেখতে পারি।
– দি! এসবের দরকার কখনো পড়বে না।
আহিয়ান বলে উঠে..
– দু’বোন মিলে কিসের কথা বলছো?
নিহা বলে উঠে..
– ডির্ভোস পেপার!
সবাই চুপ হয়ে যায় তার সাথে অবাক ও হয়। এদিকে নির্ঝর আড়াল থেকেই এসব শুনতে থাকে। ডির্ভোস পেপার’র কথা শুনে সে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তাহলে তার মেহু পাখি সত্যি সত্যি তাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবে। নির্ঝর আর সেখানে দাঁড়ায় না চলে যায় সেখান থেকে। এদিকে মেহেরিন হেসে বলে উঠে..
– বাদ দাও তোমরা এসবের কোন কিছুর দরকার পড়বে না বুঝলে!
– হ্যাঁ আমার শ্যালিকা হেরে যাওয়ার মধ্যে না। সে যখন বলেছে তখন পাড়বে।
– আপনি বার বার কেনো ওর সার্পোট টানেন বলুন তো!
– কেন ভূতনি! দা থাকলে কি করতো। দা থাকলেও মেহেরিন’র সার্পোট নিতো বুঝলে। দা নেই বলে সেই দায়িত্ব আমি নিচ্ছি!
– হুম ভালো নিতে থাকুন!
– আচ্ছা দা কবে আসবে?
– আসবে কিছুদিনের মধ্যেই!
– কথা হয়েছে তোমাদের সাথে!
– না এখনো হয় নি। যোগাযোগের কোন পথ খোলা রাখে নি দা।
– কি করছে দা।
– বুঝতে পারছি না। বাদ দে মন খারাপ করিস না।
– ইহান ও তো এসেছিল। সবাই এখানে ও কোথায়?
রোদ্দুর বলে উঠে..
– জানি না তো! এখানেই তো ছিল!
– গেলো কোথায় শয়তান টা!
এদিকে তিশা বাড়ির পেছন দিকে এসে খুঁজছে ইহান কে। হুট করেই কেউ তার বাহু টেনে তার দিকে ঘুরায়। তিশা তাকিয়ে দেখে ইহান!
– আপনি!
– হুম! আমাকেই তো খুঁজছিলে!
– কে বললো? আমি তো এভাবেই এখানে আসলাম।
ইহান তিশা কে ছেড়ে দিয়ে বলল..
– সরি আমি ভেবেছিলাম…
– কি ভেবেছেন?
– কিছু না!
বলেই সে চলে যেতে নেয়। তখন তিশা ইহানের হাত ধরে বলে..
– আরে দাঁড়ান দাঁড়ান!
– হুম!
– আচ্ছা আপনি এখানে কি করছিলেন?
– কিছু না এভাবেই এসেছিলাম!
– আচ্ছা আপনার কোন গফ আছে!
– না!
– কি সুন্দর করে মিথ্যে বলেন।
– আরে সত্যি আমার কোন গফ নেই।
– বিশ্বাস করলাম না!
– তাহলে আমি আর কি করতে পারি।
– ভালো লাগে না কাউকে!
– লাগে!
– আচ্ছা কে সে?
ইহান দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। দুই হাত বাহুতে গুঁজে বলে..
– আছে একজন!
– কে সেই জন!
– তোমাকে বলবো কেন?
– কেন বললে কি হবে?
– অনেককিছু কারন এটা একটা টপ সিক্রেট!
– আচ্ছা সে কি আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে!
ইহান চুপ হয়ে গেল। কারন সে তিশা কে দেখার জন্য প্রতিদিন ভার্সিটির ওখানে যেত। তবে বেশ সাবধানে থাকতো। তাহলে তিশা কি তাকে চিনে ফেলল!
– তোমাদের ভার্সিটিতে পড়ে মানে!
– তাহলে প্রতিদিন আমাদের ভার্সিটির সামনে কি করেন।
– তুমি কি করে জানলে আমি তোমার ভার্সিটির সামনে যাই। দেখেছো আমাকে কখনো!
– হ্যাঁ দেখেছি তো! ওই যে গাছের পেছন থেকে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে আমাকে দেখছিলেন!
( বলেই তিশা জিহ্বায় কামর দিল। )
ইহান তিশা’র সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। তিশা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে..
– আমাকে ডাকছে আমি গেলাম!
বলেই যেতে নিবে তখন’ই ইহান তার হাত ধরে বলে..
– কেউ ডাকছে না তোমায়?
– না না ডাকছে তো!
– ওহ তাহলে আমি কেনো শুনলাম না!
তিশা দাঁড়িয়ে শুকনো ঢোক গিলল। ইহান তিশা’র দুই হাত পিছনে ঘুরিয়ে তাকে বলল..
– প্রতিদিন দেখতে আমি আসতাম, এটা জানতে কেন আসতাম তার পরেও জিজ্ঞেস কেন করলে!
– আমি কখন বললাম আমি জানি আপনি কেন পড়েন আসতেন!
– আচ্ছা তাহলে আমি বলে দিচ্ছি কেন আসতাম!
বলেই তিশা’র চোখ বন্ধ করতে বলল। তিশা ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
– চোখ বন্ধ করে করতে বলেছি!
অতঃপর তিশা চোখ বন্ধ করল। ইহান তিশা’র কানের কাছে এসে বলল..
– খুলবে না একদম!
তিশা একটা বড় শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। হুট করেই ইহান তার গালে একটা কিস করল। তিশা গালে হাত দিয়ে তাকাতেই ইহান সেখানে ছিল না। সে উধাও হয়ে গেল। তিশা অবাক হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল।
তিশা আর ইহানের এসব ঘটনা দূর থেকে দেখেছে আমান। সবকিছু’ই দেখল সে। এসব দেখে একটা বাঁকা হাসি দিল সে!
– এতোক্ষণ পর পেলাম তোর দেখা!
ইহান দাঁত বের করে হেসে বলে..
– বুঝতে হবে কে আমি!
– এখানে আয় আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি!
– না থাক আমি এখানেই ঠিক আছি।
মেহেরিন আর ইহান কথা বলছিল। তখন তিশা আসল সেখানে। সে ইহানের দিকে রেগে তাকাল। ইহান তাকে দেখে একটা চোখ টিপ দিল। তিশা মুখ ভেংচি দিল। মেহেরিন তিশা কে দেখে বলল..
– আরে আরে আমার ননদিনী যে! এখানে আসো।
– হুম ভাবী!
– কি ব্যাপার রেগে আছো।
– হ্যাঁ একটা অসভ্য লোকের উপর!
– কি বলো! অসভ্যতামি করল কে তোমার সাথে।
– অসভ্য লোকের অভাব আছে দুনিয়াতে বলো!
বলেই ইহানের দিকে তাকাল। ইহান অন্যদিকে ফিরে তাকাল। মেহেরিন বলল..
– আচ্ছা আমার ভাইয়ার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই। তাকে তো দেখোনি তুমি!
– হুম!
অতঃপর মেহেরিন নীলের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তিশা বলে উঠে..
– ভাবী কে সাথে করে আনলেন না যে!
– রাইয়ান একটু অসুস্থ, তার পরে আবার ক্যাট আর নিশিও বাড়িতে একা তাই নীলাশা কে আনলাম না।
– নিলাশা!
– হুম আমার নীল ভাবী! কিন্তু তুমি মনে হয় একটু চমকে উঠলে।
– না তেমন কিছু না।
অতঃপর এরকম কথা বার্তা চলতে থাকল। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে যেতে নিল। তিশা, মেহেরিন আর উষা চৌধুরী দাঁড়িয়ে সবাইকে বিদায় জানাচ্ছে। ইহান যাবার আগে তিশা’র কানে ফিসফিসিয়ে বললো..
– আমার মনের কথা আমি জানিয়ে দিয়েছি! তোমার টা শোনার অপেক্ষায় থাকলাম!
বলেই সে চলে গেলো!
.
মেহেরিন আর নির্ঝর একসাথে অফিসে এসেছে। তবে গাড়ি দুটোই করে দুজন! দুছনেই গাড়ি থেকে নামল। নির্ঝর দূরে দেখল একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে তার কেমন একটা অদ্ভুত লাগলো। কারন গাড়িটা তার চেনা।
এদিকে মেহেরিন সবে গাড়ি থেকে নেমেছে। অতঃপর নির্ঝর কে ক্রস করে সামনে যেয়েও আবারো এক পা পিছনে নির্ঝরের কাছে এসে বকবক করছে। কিন্তু নির্ঝরের চোখ সেই গাড়ির দিকে। হঠাৎ দেখল কেউ একজন গাড়ি থেকে মেহেরিন’র দিকে গান শুট করছে। মেহেরিন’র গলার কাছে লাল রঙের লেজার পড়ছে। ডেভিল এটা দেখা মাত্রই মেহেরিন’র কাছে দৌড়ে তাকে সরাতে নিল কিন্তু নির্ঝর তার আগে তার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে সরে নিল। অতঃপর গুলি চলল। সবাই দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিল। মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝর দেখল গাড়ি চলে যাচ্ছে। সে মেহেরিন কে ডেভিলের কাছে দিয়ে গাড়ি নিয়ে সেই গাড়ির পিছনে ধাওয়া করতে লাগলো। মেহেরিন এখনো অবাক চোখে নির্ঝরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। ডেভিল তাকে ধরে অফিসের ভেতর নিয়ে গেল।বলল..
– ম্যাম আপনি ঠিক আছেন!
– ডেভিল আমি যা দেখলাম তা সত্যি!
– জ্বি ম্যাম!
মেহেরিন একটা লাফ দিয়ে বলল..
– ইয়াপিইই!
ডেভিল তার লাফালাফি দেখে হেসে দিল। এদিকে নির্ঝর সেই গাড়িকে অনেক পরে ধরতে পারল। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তার ধারনা ঠিক হলো। সে বেশ রেগে গেল! অতঃপর সেই লোকটা কে রেখে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।
রাতে..
মেহেরিন আজ বেশ খুশি! যদি নির্ঝর আজ ভালো করে তার সাথে একটা কথাও বলে নি। শুধু তার ফোনের মধ্যে’ই গুঁজে ছিল তবুও মেহেরিন খুশি। কারন নির্ঝর আজ তার জন্য ভেবেছে! এটাই অনেক!
মেহেরিন গাড়ি নিয়ে এসেছে খান বাড়িতে। একাই এসেছে, ডেভিল কে একটা কাজে একটু বাইরে পাঠিয়েছে। খান বাড়িতে আসার কারন অভ্র ফিরে এসেছে। হ্যাঁ কথাটা তার কানে যেতে বেশি একটা সময় লাগলো না। মেহেরিন বাড়ি ঢুকতেই সার্ভেন্ট’রা তাকে দেখল। মেহেরিন সবাইকে না বলে দিল। অতঃপর সে চুপি চুপি অভ্র’র রুমের কাছে গেল।
দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো অভ্র কে সারপ্রাইজ দেবে। অতঃপর পা বাড়াতেই তার কানে একটা কথা এলো..
– মা’র খুনি!
মেহেরিন সেখানেই দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর সেখানেই দাঁড়িয়ে সমস্ত কথা শুনতে লাগল!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৪৮ ( #অতীত_স্মৃতি )
– দা তুমি কি বলছো এসব?
– আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না এসব। এতোদিন ধরে আমি শুধু এটার’ই খোঁজ করছিলাম!
নিহা ধপাস করে খাটে বসে পরল। নীল ওর পাশে গিয়ে বসল। নিহা নীলের হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলল..
– আমি নিজেই নিজের বোনের জীবনটা নষ্ট করে দিলাম নীল।
– দি তুমি কিছুই জানতে না।
– কিন্তু আমিই তো সব করলাম। যাকে আদুরীর থেকে দূরে রাখবো বলে মা’কে কথা দিলাম, আমি তাকেই আদুরীর কাছে নিয়ে এলাম। আদুরী জানলে কি হবে?
নিশি অভ্র’র ঘাড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র বসে আছে চেয়ারে। চার ভাই বোন শুধু এই ঘরে আর বাইরে মেহেরিন দাঁড়িয়ে। তার পা যেনো ওখানেই ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শক্ত হারিয়ে ফেলছে ও নিজের।
একটু আগের ঘটনা…
– মা’র খুনি! কি বলছো তুমি দা এইসব।
– দা এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে? আর তোমার ফোন বন্ধ কেন?
– তুমি কি বাপি’র কাছে গিয়েছিলে দা!
তিন ভাইবোনের প্রশ্নের জবাবে বসে আছে অভ্র। কি বলবে কোখান থেকে শুরু করবে কিছুই বুঝতে না সে। নিহা অভ্র’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে..
– দা তুমি কি শুধু’ই বসে থাকবে কিছু কি বলবে না!
অভ্র’র গলা গম্ভীর হয়ে গেল। সে চোখ টা খানিকক্ষণ’র জন্য বন্ধ করে বলল..
– মা কে খুন করা হয়েছিল! কে কে করেছিল সেটা আমাদের অজানা ছিল না। ওরা ৫ জন ছিল। মা’র যাবার কয়েকদিন পর’ই মেহেরিন ৪ জন কে তো মেরেছিল কিন্তু সেই একজন বেঁচে ছিল। সে লুকিয়ে ছিল আর ৪ জন থেকেই জানা গিয়েছিল ওই একজন’ই ওদের লিডার ছিল। খুব নির্মম ভাবে আদুরী মেরেছিল ওদের। ওদের লিডার মা’র খুব বিশ্বস্ত ছিলো। আমাদের খান কোম্পানির ম্যানেজার ছিল সে। সে পুরো খান কোম্পানি নিজের দখলে করার জন্য এসব করেছিল।
মা কে মারার পর তারা সবাই ভিন্ন ভিন্ন দেশে লুকিয়ে ছিল। ৪ জন কে খুঁজতে এতো সময় লাগে নি যতটা ওই ৫ম ব্যক্তি কে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু আমরা অবশেষে পেলাম তাকে। মেহেরিন তাকে মেরে ফেলল। কোথায়, কিভাবে কখন মারল আমরা কেউই সেটা জানি না এমনকি তার লাশ অবদি আজ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি কেউ!
লাশ খুঁজে না পাওয়া’য় তার স্ত্রী তার সন্তান কে নিয়ে বাবা’র কাছে এসেছিল। এসেছিল তার স্বামীর প্রাণভিক্ষা চাইতে। কিন্তু বাবা তাকে বলেদিয়েছিল তার স্বামী মারা গেছে। অতঃপর সে চলে গেলো। কিন্তু আমি তাকে আর বাবা কে দেখেছিলাম কথা বলতে। তবে আমি এতো ভালো করেও দেখেনি তাকে। শুধু চোখের দেখা মাত্র।
অতঃপর অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল..
– সেদিন প্রথম আমি নির্ঝরের মা কে দেখে সেখানেই থমকে গেলাম। কোথাও দেখেছি তাকে কিন্তু কোথায়? আমার কিছুতেই মনে পড়ছিল না। অনেক ভাবনার পর আমার বাবা’র কথা মনে পড়ল। দেরি না করে বাবা’র কাছে গেলাম। জানতে পারলাম ওরা লন্ডন থাকতো। আমি আবারো সিউর হবার জন্য ওখানে গেলাম। আর তখন…
নীল বলে উঠে..
– তখন!
– জানতে পারলাম নির্ঝরের বাবার নাম আরমান!
নিহা এই কথা শোনার পর থমকে গেলো। মেহেরিন দরজার সামনে থমকে দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর আরমানের ছেলে। এটা কি করে হতে পারে। নিহা বলে উঠে..
– নির্ঝর আরমানের ছেলে। আমার মায়ের খুনির ছেলে আর এখন ও তাহলে প্রতিশোধ নিতে এসেছে!
নিহার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।
অতঃপর বর্তমানে…
মেহেরিন আর সেখানে দাঁড়াল না। দ্রুত বেরিয়ে গেল গাড়ি নিয়ে। এদিকে নিশি বলে উঠে..
– আদুরী! এখন আমাদের আদুরীর কি হবে?
নীল বলে উঠে..
– এসব ও সহ্য করতে পারবে না।
নিহা বলে উঠে..
– ও ভালোবাসে নির্ঝর কে!
অভ্র বলে উঠে..
– আদুরী কে আপাতত এসব কিছু জানানো যাবে না।
– কি বলছো তুমি এসব দা।
– যা বলছি ঠিক বলছি। আদুরীর এসব শুনলে অনেককিছু হয়ে যেতে পারে। চৌধুরী বাড়ি কে শ্বশান বানিয়ে ফেলবে সে।
– তাহলে এখন কি করবো!
– দেখছি কি করা যায়। আপাতত এখন চুপ থাকো আমাকে ভাবতে দাও।
– আমার আদুরীর কি হবে এখন!
.
মেহেরিন গাড়ি নিয়ে সোজা খান বাড়িতে গেল। অতঃপর সে ছাদে গিয়ে দাঁড়াল। পুরো ছাদে একা সে। মেহেরিন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রাত এখন অনেকটাই গভীর তবে আকাশে মেঘ জমে আছে হয়তো বৃষ্টি নামবে। মেহেরিন হাতের দিকে তাকিয়ে দেখছে ওর হাত কাঁপছে। শুধু হাত না ওর পুরো শরীরে কাঁপছে। চোখ দুটো আজ এতো বছর পর হয়তো ভিজে উঠছে। মেহেরিন হাতের দিকে তাকিয়ে আছে চোখের এক ফোঁটা পানি তার হাতের মাঝে এসে পড়ল।
মেহেরিন একটা বড় শ্বাস নিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করছে। হাতের দিকে তাকতেই দেখল অজস্র পানি পড়ছে। মেহেরিন বুঝতে পারল আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে। সেসব পানির ফোঁটা তার হাতে পড়ছে। এই বৃষ্টির সময় মেহেরিন আকাশের দিকে তাকাল। চোখ বন্ধ করে বলে উঠলো..
– মা!
অতঃপর মেহেরিন ধপাস করে বসে পরল। চোখ থেকে অস্রু গড়িয়ে পড়ছে। মেহেরিন জোরে চিৎকার করে “মা মা” বলে ডাকতে লাগল!
১১ বছর আগে..
– মা মা মা! আমি এখানে!
– কোথায় আমার জান টা!
পর্দার আড়াল থেকে মেহেরিন উঁকি দিয়ে বলল..
-মা আমি এখানে!
অধরা হেসে মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল। অতঃপর তাকে আদর করতে লাগল। মেহেরিন খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো। মেহেরিন বলে উঠে…
– মা তুমি আজ আমাকে নিয়ে যাবে নাহ বলো। আমি আজ দা’র সাথে দেখা করবো দি’র সাথে খেলতে যাবো।
অধরা হাসিমাখা মুখটা মলিন হয়ে গেল। তবুও ঠোঁটের কোনে হেসে বলল..
– আম্মু আমি তোমাকে আর ১ মাস পরে নিয়ে যাবো।
মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর তার মা’র কোল থেকে উঠে গেল। রেগে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়ে রইল। অধরা হেসে পেছন থেকে কোলে তুলে নিল তাকে নিল।
– রেগে আছে আমার আম্মু টা।
– কথা বলবো না তোমার সাথে!
– কেন?
– তুমি দা, দি, ভাইয়া আর আপু দের সাথে থাকতে দেও না কেন আমায়। তুমি ও থাকো না আর বাপি ও না। আর ওই যে লম্বু লম্বু ৩ টা বাদর আছে না!
– ছিঃ মেহেরিন এসব বলে না! ওরা তোমার বড়! ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য। আমার ৩ বান্ধবীর ৩ ছেলে!
– তোমার বান্ধবী’র ছেলে হলে তো আমার ও বান্ধবী না। তাহলে আমি কেন ওদের বড় বলবো! আর আমার ভালো লাগে না এখানে একা একা থাকতে।
তখন পিছন থেকে শুভ্র এসে বলে..
– কি হয়েছে, ডেভিল কি আমার প্রিন্সেস’র ভালো মতো খেয়াল রাখে না।
ডেভিল মাথা নিচু রাখল। মেহেরিন এসে শুভ্রর কোলে উঠে গেল। বলল..
– আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই বাপি।
– এইতো প্রিন্সেস আর ১ মাস! এরপর তোমাকে আমি নিয়ে যাবো। নিজের সাথে রাখবো বুঝলে। আমরা সবাই একসাথে থাকবো।
– এখন কেনো নয়!
অধরা মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– তোমার অনুশীলন এখনো বাকি আম্মু। এই তো আর ১ মাস! এরপর’ই নিয়ে যাবো তোমাকে!
– আম্মু আমি অনেক ভালো গান চালাতে পারি তুমি জানো। এই টুকুস টুকুস করে সবাইকে মেরে ফেলবো দেখো! ডেভিল আমাকে অনেক ভালো ভাবে শিখিয়েছে। তাই না ডেভিল!
অধরা আর শুভ্র ডেভিলের দিকে তাকাল। ডেভিল মাথা নাড়ালো। শুভ্র মেহেরিন’র হাতে চুমু খেয়ে বলে..
– এই না হলে মেহেরিন বর্ষা খান! দেখো তুমি তোমার নাম ঠিক করবে।
মেহেরিন হেসে দিল। ওর হাসি দেখে সবাই হেসে দিল। অতঃপর শুভ্র ওকে চকলেট দিয়ে কোনোমতে মানিয়ে নিল।
.
শুভ্র আর অধরা দু’জনেই মেহেরিন কে ডেভিলের কাছে রেখে গাড়িতে উঠলো। ডেভিল ছোট থেকেই মেহেরিন কে দেখছে! মেহেরিন’র বয়স এখন ১০ বছর। এই ১০ বছর মেহেরিন তাদের থেকে আলাদা থাকে। এটার একটা কারন ছিল। অধরার প্রথম ৪ সন্তান যথেষ্ট বড় আর অধরা তাদের নিজের সুরক্ষা’র ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তারা নিজেরা নিজেদের সুরক্ষা করতে পারে। ব্যতীক্রম শুধু মেহেরিন!
মেহেরিন জন্মের পরও তাকে বেশ কয়েক বার মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। এই ছোট মেহেরিন কে বাঁচাতে গিয়ে তার ৪ সন্তানের উপর বিপদ আসতে পারে বলে অধরা ছোট থেকেই মেহেরিন কে আলাদা রাখে। বিশেষ বিশেষ উৎসবে তাদের ভাই বোনদের দেখা হয় এছাড়া তারা কারো কেউ’র সাথে দেখা করতে পারে না।
১ মাস পর মেহেরিন’র অনুশীলন সম্পুর্ণ হবে। তখন’ই তাকে নিয়ে যাবে অধরা এর আগে না।
অবশেষে ১ মাস পর…
অধরা সেদিন প্রথম বার মেহেরিন কে নিয়ে আসে খান বাড়িতে! মেহেরিন সেদিন অনেক খুশি ছিল। খুশিতে আত্মহারা ছিল সে। অবশেষে সবার সাথে থাকতে পারবে সে। সেদিন আর রাতে ঘুমাল না মেহেরিন। সারারাত জেগে ৪ ভাই বোন আর ৩ বন্ধুদের নিয়ে গল্প করল সে। অধরা এসে তাকে জানাল আগামীকাল তাকে স্কুলে নিয়ে যাবে তাকে। ভর্তি করিয়ে দেবে নতুন স্কুলে।
এসব শুনে মেহেরিন খুশিতে লাফাতো লাগল। পুরোটা দিন মেহেরিন’র হাসিতে পুরো খান বাড়ি মেতে উঠলো।
অতঃপর পরদিন অধরা মেহেরিন কে নিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। অতঃপর তাকে স্কুল থেকে ফিরার পথে তখন হঠাৎ করেই তাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হলো। কিছু লোক বের হয়ে এলো গাড়ি থেকে। অধরা মেহেরিন জরিয়ে ধরল। গার্ডরা তাদের আটকানোর চেষ্টা করলেও সেদিন তাদের ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না। অধরা মেহেরিন কে পালানোর পথে একটা গাড়ি এসে তাদের ঘিরে ফেলল। তখন পিছন থেকে একটা গাড়ি এসে থামল। গাড়ি থেকে আরমান বের হয়ে এলো। মেহেরিন তাকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো।
মেহেরিন আরমান কে চিনতো। অধরা ভেবেছিল হয়তো আরমান ওদের বাঁচাতে এসেছে কিন্তু প্রতারণা টা সেই করলো। ছুরি ধরল মেহেরিন’র গলায়। অধরা’র তাদের কাছে নিজেকে সমর্পণ ছাড়া আর কোন গতি ছিল না। তবুও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার সময় পেছন থেকে কেউ খুব জোরে তার মাথায় আঘাত করল। অধরা জ্ঞান হারালো তবে জ্ঞান হারানোর আগে তার সামনে তার ছোট মেয়ে মেহেরিন কে কাঁদতে দেখল সে। সে শুধু মা মা বলে কাঁদছে!
অধরার জ্ঞান ফিরল। সে ঝাপসা ঝাপসা চোখে দেখল তার সামনে মেহেরিন! মেহেরিন কে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। নিচে লুটিয়ে পড়ে আছে সে। অধরা তার কাছে যেতে নিলে বুঝতে পারল তাঁকেও শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে! এর মাঝেই আরমান এলো আর তার সাথে তার ৪ জন বন্ধু! অনীশ, ফাহিদ, নাহান আর তিহান! সবাই তাকে দেখে হাসতে লাগলো। অধরা রেগে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।
– কাজটা ঠিক করছো না আরমান। এখন সময় আছে ছেড়ে দাও!
– হ্যাঁ আমিও এটা বলছি সময় আছে তোমার সব সম্পত্তি আমাদের নামে লিখে দাও তাহলে তোমার মেয়ে কে বাঁচাতে পারবে
– তুমি আর তোমার মেয়ে জীবন্ত এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবে।
– আর তা না হলে..
– তা হলে তোমাকে আর তোমার মেয়েকে এখানেই মেরে মাটিতে পেতে দিবো।
অধরা হাসতে লাগল। জোরে জোরে হাসতে। সবাই ওর হাসি দেখে অবাক।
– কার সাথে লাগছো ভুলে যেও না। আমি মরে গেলেও তোমরা একজন বেঁচে থাকতে পারবে না। আমি কি এটা ভুলে যেও না। অধরা বর্ষা খান আমি!
– জানি জানি! আর এইজন্য’ই তো তোমার সেই রাজত্ব চাই আমাদের!
– আরমান! তুমি যে প্রতারনা করলে এর খুব খারাপ ফল পেতে হবে তোমায় মনে রেখো। আমার কোন সন্তান তোমাকে ছেড়ে দিবে না।
– তার আগে নিজেকে তো বাঁচাও। তোমাকে আর তোমার মেয়েকে এখানে মারবো। তারপর তোমার সন্তানদের!
– এতো সহজ না! আরমান এতো সহজ না খান দের মারা। আমার কোম্পানির একজন কর্মচারী তুমি আর এখন’ই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখছো।
– এটা তো শুরু থেকেই ছিল। এজন্য তো তোমার বিশ্বাস অর্জন করেছি আমি!
– অধরা খান! তোমার সম্পর্কে যা শুনেছি একটাও ভুল শুনি নি। মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে আছে তবুও তোমার অহংকার একটু কমছে না।
– কারন আমি অধরা বর্ষা খান। কখনো পিছন থেকে ছুরি মারি না।
– আচ্ছা তাহলে আমিও এবার একটু সামনে থেকে ছুরি মারি দেখি তুমি সহ্য করতে পারো কি না।
বলেই অনীশ মেহেরিন’র চুলের মুঠি ধরে তাকে উঠালো। মেহেরিন অজ্ঞান। অধরা অনেক চেঁচামেচি করছে মেহেরিন কে ছেড়ে দেবার জন্য। কিন্তু তারা কেউই ছাড়লো না তাকে। ফাহিদ এসে মেহেরিন’র মুখে পানি ফেলল। মেহেরিন লাফিয়ে উঠলো। অতঃপর আরমান, নাহান আর তিহান তিনজনে অধরা কে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে লাগলো। মেহেরিন দূর থেকে বসে বসে কাঁদতে লাগল। অধরা শুধু তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। অশ্রু ঝড়ছে তার চোখ থেকে। অধরা শুধু বলে যাচ্ছে.. “আম্মু কাঁদে না”!
কিন্তু মেহেরিন’র কান্না যেনো থামছেই না। সে “মা মা” বলে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে। এরকম অত্যচার চলতে থাকলো প্রায় ৩ দিন। এই ৩ দিন’ই তাদের কাউকে খাওয়া দাওয়া দেওয়া হয় নি। মেহেরিন’র সামনে শুধু অধরা কে মারা হয়েছে আর মেহেরিন কেঁদেছে। তাদের ধারণা ছিল মেহেরিন অধরার সামনে হয়তো কাঁদতে থাকলে অধরা হার মেনে নিবে। কিন্তু অধরা কিছুতেই হার মানে নি।
মেহেরিন দেওয়ালের সাথে ঠেকিয়ে বসে কেঁদে কেঁদে বলছে..
– মা মা তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে!
অধরা হেসে বলল..
– না আম্মু। তুমি আরেকটু অপেক্ষা করো তোমার বাপি এখনই চলে আসবে।
– তাহলে তো আমরা চলে যাবো এখান থেকে না মা।
– হ্যাঁ আম্মু চলে যাবে। তুমি কান্না থামাও! কখনো কাঁদবে না। কাঁদলে তোমাকে একটু ভালো লাগে না।
বলেই থেমে গেল অধরা। ছুরির আঘাতের কারণে খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কথা বলতে পারছে না ঠিক মতো আর না পারছে কাঁদতে। এখন এখানে কাঁদলে তো মেহেরিন হার মেনে পড়বে। আর এটা সে কখনোই হতে দেবে না। আরমান ওরা অধরা কে আঘাত করেছে ঠিক তবে আঘাত ওতোটা গভীর না। এর কারন তারা ওকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় কিন্তু আবার কষ্ট ও দিতে চায়।
এদিকে আরমান ওরা হঠাৎ করেই দৌড়ে আসল। শুভ্র ওরা সবাই এই স্থানের খোঁজ পেয়ে গেছে। চলে আসবে তারা। এখানে আরমানের একটা সুযোগ ছিল যে কেউ জানে না আরমান এখানে অধরা আর মেহেরিন কে আটকিয়ে রেখেছে। তাই ওদের মেরে এখান থেকে চলে গেলো ওদের খবর কেউ পাবে না। তাই শেষবারের মতো অধরা কে শাসায় সে কিন্তু অধরা তার কথায় অটল থাকে।
অতঃপর আরমান তাকে মারার জন্য তাকে জলন্ত আগুন লাগিয়ে দেয়। মেহেরিন চোখের সামনে নিজের মা কে আগুনে জ্বলতে দেখে “মা” বলে একটা চিৎকার করে। অতঃপর অজ্ঞান হয়ে যায়। এদিকে আরামান মেহেরিন কে মারতে ওর কাছে আসা মাত্রই শুনতে পারে ওরা আসছে। তাই তারা তাকে না মেরে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
শুভ্র এসে মেহেরিন কে বাঁচাতে পারে তবে অধরা কে নয়। অধরাকে হসপিটালে নেবার পর কিছুক্ষণ বেঁচে ছিল সে। মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরার পর নিজেকে হসপিটালে দেখতে পায় সে। অতঃপর সে সেখান থেকে দৌড়ে বাইরে বের হয়ে এসে তার মা কে খুঁজতে থাকে। ইহান আর রোদ্দুর তাকে নিয়ে যায় অধরার কাছে!
মেহেরিন দেখতে পায় অধরা কে একটা বেড এ রাখা হয়েছে। তবে সেটা পুরোই আলাদা। পুরো দিক দিয়ে অধরা কে ঘিরে রেখেছে শুধু অধরার মাথা দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন তার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। তখন অধরা হেসে বলে..
– আমার আম্মু’র চোখে আজকের পর যেন আর জল না আসে অভ্র। তোরা ৪ ভাই বোন আগলে রাখবি ওকে সবসময়!
মেহেরিন এসব শুনে আরো জোরে কেঁদে উঠে। তখন ডাক্তার তাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়। মেহেরিন একবার ঘুম থেকে উঠে জানতে পারে অধরা মারা গেছে অতঃপর আবার সে জ্ঞান হারায়। অবশেষে ৩ দিন পর জ্ঞান ফিরে তার।
#চলবে….