#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৭
নির্ঝর গাড়ি ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে বার বার মেহেরিন কে দেখছে। মেহেরিন কেমন জানি গুটিগুটি মেরে বসে আছে। শীতে কাঁপছে সে। নির্ঝর গাড়ি’র এসি’টা বন্ধ করে দিলো। মেহেরিন’র এবার কাঁপা কাঁপি কিছুটা হলেও কমেছে। নির্ঝর ড্রাইভ করতে করতে মেহেরিন কে বলে..
– এতো টুকু ভিজেই শীত করছে তোমার!
– কেন আপনার করছে না।
– তুমি দেখেছো আমার কাপতে।
মেহেরিন কথা না বলে বাইরে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টির এই আবহাওয়ায় তার অনেক পছন্দ। সবকিছু কেমন প্রাণবন্ত লাগে এসময়। বৃষ্টির পানি পেয়ে প্রকৃতি যেনো আবার তার জীবন ফিরে পায়।
গাড়ি এসে থামে খান বাড়িতে, বৃষ্টি থেমে গেছে এতোক্ষণে। মেহেরিন গাড়ি থেকে নেমে কাঁপতে কাঁপতে বাড়ির মধ্যে যায়। আনহা এসে দেখে মেহেরিন আর নির্ঝর দু’জনেই কাকভেজা। আনহা জলদি তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে বলে ফ্রেশ হয়ে আসতে।
খানিক বাদেই নির্ঝর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বসার ঘরে এলো। এদিকে মেহেরিন সোফায় বসে কার্টুন দেখছিল। নির্ঝর মেহেরিন’র পিছনে ছিলো বিধায় মেহেরিন তাকে দেখতে পায় নি। মেহেরিন কারো উপস্থিতি পেয়ে ভাবল হয়তো আনহা এসেছে। সে বলে ওঠে..
– মিষ্টি ভাবী চুল টা মুছে দাও শীত করছে আমার!
নির্ঝর এটা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে সোফার কাছে যায়। সোফায় ওপর থাকা তোয়ালে দিয়ে নির্ঝর মেহেরিন’র চুল মুছতে থাকে। আনহা দু’কাফ নিয়ে আসে ওদের জন্য। এসে দেখে নির্ঝর মেহেরিন চুল মুছছে। আনহা নির্ঝরের দিকে তাকাতেই নির্ঝর হেসে দেয়। আনহা খানিকটা অবাক হয়। কিন্তু নির্ঝর যখন চুপ করতে বলে তখন আনহা সব বুঝে যায়। সে মুচকি হেসে মেহেরিন’র সামনে কফি রাখে। মেহেরিন থ্যাংকু বলে আনহা’র হাত থেকে কফি নিয়ে আনহা’র দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। আনহা এখানে তো তার চুল কে মুছছে। সে কফি টা রেখে লাফিয়ে উঠে পিছনে তাকায়। দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন তাকে দেখে চমকে উঠে। বলে উঠে..
– আপনি! এখানে…
– ইয়াপ মেহু পাখি ইটস মি নির্ঝর চৌধুরী মেঘ!
– নো লেজ কাঁটা ব্যাঙ!
– তোমার যা ইচ্ছা!
– আপনি এখানে কি করছেন?
নির্ঝর সোফায় বসে কফি টা হাতে নিয়ে বলে..
– তোমার চুল মুছছিলাম!
– কিন্তু আপনি কেনো? আপনাকে বলেছি আমি চুল মুছতে!
কফির মগে চুমুক দিয়ে..
– তুমিই তো বললে আমার চুল মুছে দিন, শীত করছে আমার!
– আমি তো মিষ্টি ভাবী কে বলেছি।
– কিন্তু আমার মনে হলো তুমি আমাকে বলেছো!
মেহেরিন রেগে কিছু না বলে কফির মগ টা নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ধপাস করে বন্ধ করে রুমের দরজা। আনহা নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– বেশ ক্ষেপেছে!
– তা আর বলতে! মারাত্মক!
– তুই ও কম না, শুধু শুধু আমার ননদিনী কে রাগিয়ে দিস।
– কি করবো মিষ্টি ভাবী তোমার ননদিনী’ই যে এমন! তবে যাই বলে ওকে রাগাতে বেশ লাগে আমার।
বলেই দু’জনে একসাথে হেসে উঠে!
.
রাতে…
নিশানের ফোন আসার অপেক্ষা করতে করতে নিশি একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে নিশান গ্রিল বেয়ে আসে নিশি’র ঘরে। এসে দেখে নিশি গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। নিশান এসেই নিশি’র মুখে ফু দেয়। নিশি’র এলোমেলো হয়ে থাকা চুল গুলো সরে যায় মুখ থেকে। নিশান হেসে তার চুল গুলো কানে গুঁজে দেয়। কারো ছোঁয়া পেতেই নিশি’র ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে উঠে দেখে নিশান তার সামনে বসে আছে। চোখ ঢলতে ঢলতে বলে..
– এতোক্ষণে আসার সময় হলো।
– কতগুলো ফোন করলাম তোমায় ধরেছ একটাও!
– কিভাবে ধরবো ঘুমিয়ে গেছিলাম।
– অনেক ভালো কাজ করেছো এখন উঠো।
– কোথায় যাবো?
– লং ড্রাইভে!
– এইসময়!
– কেন না, জানো এই সময় লং ড্রাইভে যেতে কি ভালো লাগে। আসো জলদি!
বলেই নিশি কে কেনে উঠালো।
নিশান বলে ওঠে..
– তুমি দরজা দিয়ে বের হও আমি এখান দিয়ে নামছি!
বলেই নিশান গ্রিল দিয়ে নিচে নামতে থাকে। সে নেমে উপরে তাকিয়ে দেখে নিশি নামছে। নিশান আস্তে আস্তে করে বলে..
– এখান দিয়ে কেনো নামছো পড়ে যাবে তো!
– না আমার অভ্যাস আছে, তুমি একটু ওয়েট করো!
অতঃপর নিশি টুস টুস করে নেমে পড়ে । নিশান অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশির দিকে।
– কি দেখছো!
– তুমি এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে নামলে!
– বললাম না অভ্যাস আছে।
– আর কোন ছেলের জন্য এভাবে নেমেছো শুনি!
নিশি কিছু বলতে যাবে এর আগেই কারো আসার শব্দ পায়। নিশি নিশানের হাত ধরে টেনে একটু দূরে নিয়ে সরে যায়। অতঃপর তারা দু’জনে উঁকি দিয়ে দেখে রোদ্দুর, কাব্য আর ইহান আসছে। তারা এসেই নিশি’র পাশের রুম মানে মেহেরিন’র ঘরের বেলকনির নিচে তাকায়। নিশি আর নিশান দু’জনে উপরে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন গ্রিল বেয়ে নামছে। নিশান নিশি’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– ওহ্ আচ্ছা এই ব্যাপার!
নিশি নিশানের দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে..
– ওরা সবাই এখন ঘুরতে যাবে।
– এতো রাতে!
– রাতের ঘোরার মজাই আলাদা বুঝলে।
– এই কথা তুমি বলছো যে কি না লং ড্রাইভে আসতে চাও নি।
– আমার ঘুম পাচ্ছিল তাই কিন্তু এখন তো এসেছি কথা শুনাচ্ছো কেন?
– উদ্ধার করেছো করেছো এখন চলো!
প্রথমে ধরা চারজন বাইকে করে বের হয় অতঃপর নিশান আর নিশি বের হয়। দুজনে গাড়িতে বসে। নিশি গাড়ির সিটবেল বাঁধতে বাঁধতে বলে..
– প্ল্যান কি?
– নো প্ল্যান আজ প্ল্যান ছাড়াই ঘুরবো চলো!
অতঃপর নিশান গাড়ি স্টার্ট দেয়। প্রায় অনেকক্ষণ’ই গাড়ি চালায় নিশান। নিশি দুজনের বাহু ধরে শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পর নিশান এসে গাড়ি থামায় একটা ব্রীজে। গাড়ি থামতেই নিশি বের হয়। নিশান বের হয়ে নিশি’র হাত ধরে হাঁটতে থাকে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর নিশান বলে ওঠে..
– জান পাখি!
– হুম!
– কেমন লাগছে?
– অনেক ভালো সময়টা দারুন!
– অনেক ইচ্ছা ছিল এভাবে তোমায় নিয়ে ঘুরবো।
– পেঁচার মতো রাতে ঘোরার শখ।
– সমস্যা কি ভালোবাসায় পেচায়’ই না হয় হলাম।
নিশি হেসে নিশানের সামনে এসে ওকে জরিয়ে ধরে। অতঃপর এভাবে হাঁটতে থাকে। নিশান নিশি কে ধরে তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে। নিশি বলে উঠে..
– এই ভালোবাসা যেন কখনো শেষ না হয়!
– কখনো শেষ হবে না জান পাখি! অনেক ভালোবাসি তোমায় আর আজীবন বাসবো।
জবাবে নিশি নিশানের বুকে মুখ লুকায়!
.
কয়েকদিন পর…
নির্ঝর এখন হোটেলে থাকলেও প্রতিদিন আসে খান বাড়িতে। এসেই মেহেরিন কে জ্বালায়। মেহেরিন এখন তার জ্বালায় পুরোপুরি ভাবে অতিষ্ঠ!
মেহেরিন দাঁড়িয়ে গান শুট করতে যাবে তখন সেখানে নির্ঝর আসে। মেহেরিন’র হাতে গান দেখে বলে..
– লাইসেন্স আছে এটার!
– আপনার কি মনে হয়?
– ভালো শুট করতে পারো!
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য বরাবর গান শুট করে। গুলিও লক্ষ্য ভেদ করে। তখন রোদ্দুর আর কাব্য হাত তালি দেয়। নির্ঝর হেসে বলে..
– দারুন লক্ষ্য ভেদ করো তো!
– ধন্যবাদ!
অতঃপর নির্ঝর হেসে একটা ছুরি টেবিল থেকে নিয়ে ছুরে মারে। সেটাও লক্ষ্য ভেদ করে। মেহেরিন একটু অবাক হয়ে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর হেসে বলে..
– একজন সিঙ্গার হলেও বিজনেসম্যান আমি। অনেক শত্রু আমার তাই এসব শিখতে হয়।
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আর আমরা তো জন্মগত!
– তাই নাকি!
– হুম!
এদিকে মেহেরিন কাব্য নিয়ে মারামারি প্র্যাকটিস করার জন্য প্রস্তুত হয়। খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর খেলা টাই হয়। মেহেরিন হেসে কাব্য’র সাথে হাইফাই দেয়। এদিকে নির্ঝর এসব দেখে বলে..
– বেশ ভালো মারামারি জানো দেখছো!
মেহেরিন হেসে বলে..
– মার খাবেন নাকি!
নির্ঝর এটা শুনে মেহেরিন’র সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর দুজনে মারামারি করে। মেহেরিন খুব ভালো ক্যারাটি পারে, এদিকে নির্ঝর ও কম যায় না দু’জনেই খুব ভালো লড়াই করে। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর কেউই জিতে না দেখে কাব্য আর রোদ্দুর দুছনকেই তলোয়ার ছুরে মারে। অতঃপর তারা দুজনেই তলোয়ার নিয়ে লড়াই করে। একসময় মেহেরিন নির্ঝরের হাত থেকে তলোয়ার ফেলে দিয়ে তার গলায় নিজের তলোয়ার ধরে। দুজনেই খুব কাছাকাছি থাকে। এতটা কাছাকাছি যে নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস তার ওপর পড়তে থাকে। মেহেরিন হেসে বলে..
– হেরে গেলেন আপনি!
নির্ঝর হেসে বলে..
– গেম এখনো শেষ হয় নি!
মেহেরিন বুঝতে পারে নির্ঝর তার দিকে গান তাক করেছে। মেহেরিন খানিকটা সরে গিয়ে তলোয়ার টা ফেলে দেয়। নির্ঝর গান টা মেহেরিন’র কপাল বরাবর তাক করে। মেহেরিন হেসে নির্ঝরের হাত থেকে মেরে তা ছুড়ে দেয়। অতঃপর নির্ঝর কে মারার চেষ্টা করে তবে ব্যর্থ হয়। এদিকে গান এসে পড়ে মেহেরিন’র কাছে কিন্তু নির্ঝর তা ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর আবারও তা তাক করে মেহেরিন’র ওপর। মেহেরিন হেসে বলে..
– ইউর গেম ওভার!
বলেই হাত থেকে একে একে গুলি ফেলে দেয়। নির্ঝর গানের দিকে তাকিয়ে দেখে কোনো গুলি নেই। মেহেরিন বাঁকা হেসে চলে যেতে নিলে নির্ঝর বলে..
– এটা কখন করলে তুমি!
মেহেরিন থেমে গিয়ে বলে..
– আপনার আরো অনুশীলনের প্রয়োজন।
বলেই চলে যায়। এদিকে কাব্য এসে নির্ঝরের ঘাড়ে হাত রাখে। রোদ্দুর বলে..
– বুঝলি এটা অধরা খানের মেয়ে মেহেরিন বর্ষা খান! এতো সহজে হারাতে পারবে না ওকে।
জবাবে নির্ঝর মৃদু হেসে বলে..
– আমার মেহু পাখি বলে কথা!
কাব্য বলে উঠে..
– আহা কি প্রেম!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– কি ভালোবাসা!
নির্ঝর আহাম্মক এর মতো দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। দুজনেই একসাথে হেসে উঠে!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৮
নির্ঝর যে মেহেরিন’র চোখের বিষ সেটা জানতে এখন আর কারো বাকি নেই। সবাই জানে মেহেরিন নির্ঝর কে সহ্য করতে পারে না। এদিকে অভ্র’র ভালো লাগে নির্ঝর কে। তার মতে মেহেরিন কে তার পরে যদি কেউ সামলাতে পারে সে নির্ঝর। কিন্তু মেহেরিন তো নির্ঝর কে পছন্দ করে না এখন! বসে ভেবে যাচ্ছে নিহা আর অভ্র। দু’ভাই বোনের এক চিন্তা, কি এমন করবে যার জন্য মেহেরিন নির্ঝর কে পছন্দ করে। এরমধ্যে আনহা আর আহিয়ান আসলো সেখানে। আহিয়ান নিহা’র পাশে বসে বলে উঠলো..
– কি এতো ভাবছো দুই ভাই বোন মিলে!
নিহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে..
– ভাবনা তো একটাই!
আনহা বলে উঠে..
– কিভাবে মেহেরিন নির্ঝর কে পছন্দ করে এই তো!
আহিয়ান বলে উঠে…
– নির্ঝর কে তো আমার ভালো লাগে!
আনহা বলে উঠে..
– আমারও বেশ লাগে। মেহেরিন’র সাথে বেশ মানিয়েছে!
নিহা বলে উঠে..
– কিন্তু ব্যতিক্রম একজন’ই!
সবাই একসাথে বলে..
– মেহেরিন!
অভ্র বলে উঠে..
– আমার মনে হয়, ব্যাপারটায় আমাদের সময় দেওয়া উচিত। ভুলে যেও না এটা কে মেহেরিন!
আহিয়ান বলে উঠে..
– ঠিক’ই এটা মেহেরিন’র জীবন। আমরা আমাদের মতামত ওর ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না।
নিহা বলে উঠে..
– কিন্তু নির্ঝর তো ওর জন্য একদম পারফেক্ট!
– আমি বলছি না নির্ঝর পারফেক্ট না তবে সেটা মেহেরিন কে বোঝাতে হবে। বোঝাতে হবে নির্ঝর ওর জন্য ঠিক।
অভ্র বলে উঠে..
– আর যাই হোক মেহেরিন নিজে থেকে না চাইলে আমি কখনো ওর বিয়ে দেবো না। আমার বোন আমার সাথেই থাকবে।
বলেই অভ্র উঠে চলে যায়। নিহা’র মন খানিকটা খারাপ হয়ে যায়। আনহা নিহা’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– চিন্তা করো না আমরা আমাদের সর্বস্ব নিয়ে চেষ্টা করবো মেহেরিন যাতে বোঝে।
আহিয়ান বলে উঠে..
– বুঝতে পারছি নিহা নির্ঝরকে তোমার খুব পছন্দ তবে একটু সময় দাও। দা ঠিক বলেছে সময় দিতে হবে, সময় পালিয়ে যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।
নিহা জবাবে মুচকি হাসল।
.
ইদানিং একটা মেয়ের সাথে মেহেরিন’র খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে। মেয়েটা হলো আরিশা! তার’ই ক্লাসমেট সেই সুবাদে তাদের পরিচয়। মেয়েটা দেখতে খুব কিউট আর সুন্দর বলেই মেহেরিন’র খুব ভালো লাগে তাকে। এছাড়া মেয়েটাও মেহেরিন’কে খুব পছন্দ করে তাই তাদের বন্ধুত্ব খুব জলদি হয়ে যায়। মেহেরিন আজ জোর করেই আরিশা কে নিয়ে খান বাড়িতে আসে। বাড়িতে শুধু রোদ্দুর, ইহান, কাব্য আর নিশি ছিল। নীলাশা তার ঘরেই বিশ্রাম নিচ্ছিল। তার এখন ৫ মাস চলে। মেহেরিন বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে আশপাশ তাকাল। দেখল নির্ঝরের গাড়ি আছে না। এই নির্ঝরের জন্য তার বাড়িতে থাকাও এখন কষ্টকর হয়ে গেছে। নির্ঝরের গাড়ি না দেখে মেহেরিন খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলো। আরিশা মেহেরিন’র লাফানো দেখে জিজ্ঞেস করল…
– কি হয়েছে এতো খুশি কেন তুই!
– আরে সেই লেজ কাঁটা ব্যাঙ আজকে বাসায় নেই, জানিস কি শান্তি লাগছে আমার।
– একটা কথা বলতো নির্ঝর ভাইয়া কে তোর সহ্য হয় না কেন?
– কারন উনি একটা অসহ্য বুঝলি। একটা মাথাব্যথা, গলাব্যথা।
– মাথাব্যথা শুনেছি, গলাব্যথা আবার কি?
– আরে উনাকে বকতে বকতে আমার গলাব্যথা করে তাই!
– বইন রে বইন তোর দা যে কিভাবে তোকে সামলায়।
– সেটা তোর ভাবতে হবে না তুই এখন বাসায় চল।
– হুম চল!
অতঃপর মেহেরিন আরিশা কে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করল। বাসায় ভিতরে এসে আরিশা দেখল কাব্য, ইহান আর নিশি তিনজনে বসে ভিডিও গেইম খেলছে। তারা আরিশা কে দেখে খুব খুশি হলো। সবাই একসাথে পরিচিত হলো। মেহেরিন ঘরে গেল ফ্রেশ হতে। সবাই একসাথে বসে আরিশা’র সাথে গল্প করছিল। এদিকে মেহেরিন’র বিড়াল বাচ্চা’র পিছনে দৌড়াচ্ছে রোদ্দুর। অতঃপর অনেক ধরে কোলে আদর করতে করতে নিয়ে এলো সে। বসার ঘরে এসে সবার সামনে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ রোদ্দুর’র চোখ পড়ল আরিশা’র দিকে। সে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে আরিশার দিকে। আরিশা হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে। রোদ্দুর’র কাছে প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায় আরিশা কে। সে মুগ্ধ হয়ে দেখছে আরিশা কে।
মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে রোদ্দুর তার বিড়াল বাচ্চা কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন রোদ্দুর’র পাশে গিয়ে দাঁড়াল। মেহেরিন দেখছে রোদ্দুর ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে আরিশা কে। মেহেরিন হালকা ভাবে রোদ্দুর কে ধাক্কা দিয়ে বলল..
– কিরে!
মেহেরিন’র ধাক্কায় হুশ ফিরল রোদ্দুর। সবাই ফিরে তাকাল তাদের দিকে। রোদ্দুর দেখল আরিশা তাকিয়ে আছে তার দিকে। আরিশা দাঁড়িয়ে বলে উঠে..
– ওওওও সো কিউট!
আরিশা’র কথা শুনে রোদ্দুর চমকে উঠে। রোদ্দুর মনে মনে বলতে থাকে…
– মেয়েটা কি আমাকে কিউট বলছে নাকি!
আরিশা হাঁটতে হাঁটতে এসে দাঁড়াল রোদ্দুর’র দিকে। রোদ্দুর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। কি করতে চায় এই মেয়ে। হঠাৎ করেই আরিশা হাত বাড়িয়ে কোলে তুলে বিড়াল টাকে। রোদ্দুর যেন আহাম্মক’র মতো তাকিয়ে রইল। তার মানে এই মেয়েটা কে বিড়াল টাকে কিউট বলছিলো। আরিশা বিড়াল টাকে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। একবারও ফিরে তাকাল না রোদ্দুর’র দিকে। মেহেরিন মুখ টিপে হেসে বলল..
– আরিশা তোকে না আমার বিড়াল বাচ্চা টাকে কিউট বলছিলো।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বলল..
– ওহ্ আচ্ছা ওর নাম তাহলে আরিশা!
– এতো কি দেখছিস আমার বান্ধবীকে।
রোদ্দুর’র মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– জান ও আর তোমার বান্ধবী থাকবে না ভাবী হবে।
মেহেরিন একটু সরে দাঁড়িয়ে বলল..
– এটা আপনার ইশা না যে একটু তেই পটে যাবে। এটা আমার বান্ধবী আরিশা! চাপ আছে বস।
রোদ্দুর হেসে বলল..
– দেখা যাক!
অতঃপর রোদ্দুর আরিশা’র দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসল। এদিকে আরিশা বিড়াল বাচ্চা কে বসে আছে। মেহেরিন গিয়ে ওর পাশে বসে বলল..
– এটার নাম বিড়ার বাচ্চা!
– ও কি এখনো বাচ্চা আছে!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– না তবে আমাদের বিড়াল বাচ্চা এখনো বাচ্চা!
বলেই মেহেরিন’র পাশে বসল। আরিশা একটু উঁকি মেরে রোদ্দুর’র দিকে তাকিয়ে বলল..
– আমাদের বিড়াল বাচ্চা মানে!
নিশি হেসে বলল …
– আমাদের আদুরী! ওকে সবাই বিড়াল বাচ্চা বলে ডাকে।
আরিশা মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল..
– ঠিক নাম দেওয়া হয়েছে তোকে। একদম মিলে গেছে তোর সাথে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে রোদ্দুর’র কোলে মাথা রেখে বলল ..
– মাথাব্যথা করছে, মাথা টা টিপে দে!
রোদ্দুর হেসে মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাতে লাগলো! আরিশা হেসে বলল..
– তোর মাথাব্যথা তো বাসায় নেই তাহলে এখনো মাথাব্যথা!
– 🙄
কাব্য হেসে বলল..
– তোমাকেও বলেছে নির্ঝর’র কথা।
ইহান বলে উঠে …
– বেচারা’র বদনাম করে ছেরেছে!
আরিশা হেসে বলে ..
– বদনাম বলে বদনাম। মাথাব্যথা, গলাব্যথা!
সবাই হেসে উঠলো।
.
কয়েকদিন পর..
নির্ঝর মেহেরিন কে খুঁজছিল হঠাৎ তার সামনে এসে নিরব দাঁড়াল। নির্ঝর তাকে দেখে খানিকটা অবাক হলো কিন্তু কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগল। কিন্তু নিরব তার পথে এসে দাঁড়াল। নির্ঝর শান্ত ভাবেই বলে উঠে….
– কিছু বলবে আমায়!
– আমার মেহেরিন থেকে দূরে থাকো।
– তোমার মেহেরিন!
– হ্যাঁ আমার মেহেরিন, আমি ভালোবাসি ওকে।
– মেহেরিন বাসে তো।
– সেটা জেনে তুমি কি করবে, তোমাকে বলছি দূরে থাকতে তুমি দূরে থাকবে ব্যস!
নির্ঝর হেসে বলল..
– তোমার কথা আমি শুনবো এটা তুমি ভাবলে কি করে!
নিরব হেসে নির্ঝরের কলারে হাত রেখে শান্ত ভাবেই বলল…
– বুঝতেই পারছো কি হতে পারে!
নির্ঝর নিরবের হাত টা সরিয়ে বলল..
– বুঝলাম না যা পারো করো!
বলেই চলে যেতে নিলো। নিরব পেছন থেকে বলল..
– এটার ফল কিন্তু খুব খারাপ হবে।
নির্ঝর পেছনে ফিরল। অতঃপর…
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৯
নির্ঝর পিছনে ফিরে নিরবের মুখোমুখি হয়। অতঃপর কিঞ্চিত হেসে বলে..
– মেহেরিন শুধু আমার মেহু পাখি! তুমি বরং ওর থেকে সামলে চলো। নয়তো এটার পর ভালো হবে না।
– মেহু পাখি!
– হুম আমার মেহু পাখি!
নিরব হেসে বলে..
– সময় বলবে কার মেহু পাখি হয় আর কার জীবন সঙ্গী!
নির্ঝর হেসে বলে..
– মেহু পাখি একান্ত’ই আমার। এর জন্য সময়ের উপর নির্ভর করবো না। তাকে আমার’ই হতে হবে!
বলেই চলে আসে নির্ঝর। তার কথায় রেগে যায় নিরব।সে কিছু না কিছু একটা করবে বলেই মনস্থির করে। অতঃপর মেহেরিন’র কাছে যায় সে।
নির্ঝর অবশেষে খুঁজে পায় মেহেরিন কে। তার কাছে যেতেই দেখে নিরব সেখানে। মেহেরিনের কিছু কথা তখন কানে যায় নির্ঝরের!
মেহেরিন বলে..
– একসময় খুব ভালো বন্ধু ছিলে তুই তাই সব ভুলে আবার বন্ধুত্ব’ই করছি। আশা করি এবার সেরকম কিছু করবি না।
নিরব হেসে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– বিশ্বাস রাখ এবার আর ভাঙবো না।
অতঃপর মেহেরিন পেছনে তাকাতেই দেখে নির্ঝর দাঁড়িয়ে। নির্ঝর মেহেরিন’কে বলে..
– দা বলেছে তোমাকে বাসায় নিয়ে যেতে!
– আমার হাত পা আছে!
– হ্যাঁ তবে গাড়ি নেই, ডেভিল গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। তাই দা বলেছে আমার সাথে আসতে।
মেহেরিন বিরক্ত মাখা মুখে নিরব কে বাই বলে হাঁটা শুরু করে। নিরব ভ্রু কুঁচকে তাকায় নির্ঝরের দিকে। নির্ঝর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে চলে যায় মেহেরিন’র সাথে!
.
মাঝ রাতে…
নীলাশা কে আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে নীল। নীলাশা চিমটি দিয়ে দিয়ে নীল কে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। ঘুম ঘুম চোখে নীলাশা কে জরিয়ে ধরে বলে..
– হাতি বাচ্চাটার কি হয়েছে?
– ক্ষুধা পেয়েছে!
– এতো রাতে!
– ভুলে যাবেন না আমি প্রেগন্যান্ট!
নীল চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে। অতঃপর নিলাশা কে নিজের কোলে বসিয়ে বলে..
– কি খাবে বলো!
– চিপস আর চকলেট!
– হেলদি কিছু খেলে বলো এসব দিচ্ছি না।
নীলাশা ঠোঁট উল্টে বলে…
– এমন করছেন কেন একটু এনে দিন না।
– কিছুদিনে পর বাচ্চার মা হবা এখন বাচ্চামি করো না।
নিলাশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে..
– আপনি এখন আমায় আর ভালোই বাসেন না। সবসময় বকা বকি করেন। এ্যা এ্যা…
নীল নীলাশা’র গালে আলতো ভাবে কিস করে বলে..
– কে বললো ভালোবাসি না অনেক ভালোবাসি তবে এভাবে তুমি আমাকে দিয়ে কাজ হাসিল করতে পারবে না। আমি কিছু ফল এনে দিচ্ছি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
অতঃপর নীলাশা কে বিছানায় রেখে নীল বাইরে যায়। নীলাশা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর নীল ট্রে তে করে কিছু ফল, এক গ্লাস গরম দুধ চিপস আর চকলেট আনে। চিপস আর চকলেট দেখে নীলাশা এক গাল হেসে বলে…
– আমি জানতাম আপনি আনবেন!
নীল মুচকি হেসে বলে..
– এনে তো দিয়েছে তবে এক শর্ত আছে বুঝলে, প্রথমে ফল গুলো খাবে, অতঃপর দুধের গ্লাস পুরোটা খালি করবে এরপর চিপস আর চকলেট।
নীলাশা চোখ ঘুরিয়ে বলে..
– ঘুমানোর আগে খেয়েছি!
– এখন আবার ঘুমানোর আগে খাবে। আর আগে তো হাতি বাচ্চা ছিলে এখন তো প্রেগন্যান্ট খেতে সমস্যা হবে না।
– আপনি খাবার নিয়ে আমাকে খোঁটা দিচ্ছেন!
– আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা বলো! কিন্তু আমার কথা না শুনলে তুমি কিছুই পাবে না।
নীলের কথায় নীলাশা মুখ ভেংচি দেয়। নীল বিছানার পালে ট্রে টা রেখে বিছানায় বসে। অতঃপর নীলাশা কে নিজের কোলে বসিয়ে খাওয়াতে থাকে। এখানে নীলাশা বক বক করতেই থাকে। খাচ্ছে আর বক বক করছে। ওর কথা জেনো কিছুতেই শেষ হয় না। এক কথা একশ বার শোনাবে নীল কে। কিন্তু নীলের এখন এসব অভ্যাস হয়ে গেছে! সে খুব আনন্দের সাথেই নীলাশা’র প্রত্যেকটা কথার জবাব দেয়!
.
পরদিন ভার্সিটিতে…
মেহেরিন আর আরিশা বসে আছে। তাদের সাথে নিরব ও। ৩ জন বসে গল্প করছে। কথার এক পর্যায়ে মেহেরিন আরিশা কে জিজ্ঞেস করে..
– তোর কোনো বফ আছে আরিশা!
– এক কথা কতো বার বলবো!
নিরব বলে উঠে..
– মেহেরিন কে বার বার বলতে হবে অভ্যাস করে নে।
মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– আচ্ছা এমন কেউ যাকে ভালো লাগে!
আরিশা হেসে বলে..
– আরে আমার ক্রাশ রানবির কাপুর!
মেহেরিন হেসে বলে..
– গাধী একটা, ওকে কখনো বিয়ে করতে পারবি।
– স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়?
নিরব হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– ঠিক বলেছিস স্বপ্ন দেখতে দোষ কোথায়? তবে বাস্তবে কেউ এমন আছে যাকে বিয়ে করতে চাস!
– না এখনো এমন সৌভাগ্য আমার হয় নি।
নির্ঝর পেছন থেকে বলে উঠে..
– তবে সেই সৌভাগ্য আমার হবে।
মেহেরিন বিড় বিড় করে বলে..
– শুরু হয়ে গেল মহাভারত!
আরিশা হেসে বলে উঠলো…
– আরে নির্ঝর ভাইয়া যে, কেমন আছেন?
নির্ঝর হেসে তাদের সাথে বসে বলল..
– ভালো আছি তুমি!
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
মেহেরিন আরিশা কে খোঁচা মেরে বলে…
– এতো আদিখ্যেতা দেখাচ্ছিস কেন?
আরিশা মেহেরিন দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে কিছু বলার আগেই নির্ঝর বলে উঠে…
– তা এতো ভাগ্য নিয়ে সবাই পড়লে কেন?
– না ভাইয়া আসলে জীবনসঙ্গী নিয়ে কথা হচ্ছিল। তা আপনার কেউ আছে নাকি।
নির্ঝর কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– জীবনসঙ্গী হতে হলে প্রথমে কি প্রয়োজন বিশ্বাস না ভালোবাসা!
– হঠাৎ এই কথা কেন?
– জিজ্ঞেস করলাম বলো তোমার কি মনে হয়?
নিরব বলে উঠে..
– ভালোবাসা!
আরিশা বলে উঠে..
– এর কারন কি? বিশ্বাস কেন নয়!
নির্ঝর হেসে বলে..
– কারন মানুষের মস্তিস্ক অদ্ভুত! তারা যত সহজে কাউকে ভালোবাসতে পারে তত সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। তবে যদি কাউকে ভালবাসে তবেও তাকে বিশ্বাস করে। ভালো না বাসলে তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারন নেই। ভালোবাসে বলেই তাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে। আর এই আকাঙ্ক্ষা তখন জোরালো হয় যখন সে তাকে বিশ্বাস করে। তাহলে যদি ধরো আমার মতে ভালোবাসা আগে। আর ছোট শব্দে যদি বলি… “ভালোবাসা এভাবেই হয়ে যায় এতো ভাবতে হয় না কিন্তু যদি বিশ্বাসের কথা আসে তখন সেটা নিয়ে অনেক ভাবতে হয়। ভালোবাসা মন থেকেই হয় আর বিশ্বাস মস্তিষ্ক থেকে”!
আরিশা আর মেহেরিন হা হয়ে শুনতে থাকে। আরিশা বলে উঠে..
– আপনার তো কবি হওয়ার দরকার ছিল।
মেহেরিন বলে উঠে..
– আচ্ছা এগুলো শুনে লাভ কি!
আরিশা হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। নির্ঝর একটা মুচকি হাসে কারন এটা হবে সে জানত। তবে নিরব একটু জোরেই হেসে উঠে। বলে..
– তোকে কি বোঝাল আর তুই কি বুঝলি!
নির্ঝর বলে উঠে..
– আমি তো আরিশা কে বোঝাচ্ছিলাম। এনিওয়ে তোমার কেউ আছে আরিশা এরকম জীবনসঙ্গী যাকে তুমি ভালোবাসো!
– না নেই ভাইয়া! তবে ভাইয়া একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই গেলো!
– কি?
– আপনি বললেন জীবনসঙ্গী’র জন্য প্রথমে ভালোবাসা দরকার অতঃপর বিশ্বাস তবে এটা কি বলবেন একটা সম্পর্কের জন্য তো প্রথমে বিশ্বাস দরকার তাই না। কারন হলো..
এখানে মেহেরিন বলে উঠে..
– দু’টো অচেনা মানুষ তখন’ই একটা সম্পর্কে আবদ্ধ হয় যখন তারা একে অপরকে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস না থাকলে সেই সম্পর্কের কোনো মূল্যে থাকে না এটাই তো!
আরিশা বলে উঠে…
– ঠিক বললি! তো ভাইয়া বলুন কি বলবেন!
নির্ঝর মৃদু হেসে বলল…
– কথার যুক্তি ঠিক। একটা সম্পর্কে প্রথমে বিশ্বাস দরকার তবে একটা কথা বলি। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ এর ক্ষেত্রে কি হয়। দুটো অচেনা মানুষ বিয়েতে মতো একটা চমৎকার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়। কিন্তু তারা কেন এরকম একটা মানুষকে বিয়ে করে যার সম্পর্কে তার কোনো ধারনাই নেই। সে এটাও জানে না সে তার বিশ্বাসের যোগ্য কি না কিন্তু তবুও তাকে বিয়ে করে। তাকে ভালোবাসে বলে না তা কখনো হয় না কারন তাকে তো সে দেখেই নি তাহলে! তাহলে আবার আসে সেই বিশ্বাসের মতো একটা শব্দ! একবার তাকে বিশ্বাস করেই দেখা যাক না জীবন কোথাও যায়। কিন্তু এখানে আরেকটা কথা আছে সেটা হলো যদি তার কোনো ভালোবাসার মানুষ না থাকে তখন’ই কিন্তু সে সেই বিশ্বাসের আশ্রয় টা নেয়। কারন ভালোবাসা সহজ তবে কাউকে বিশ্বাস করা খুব জটিল। যদি তুমি কাউকে ভালোবাসে তখন’ই তাকে বিশ্বাস করার ভাববে। বিশ্বাস করতে শুরু করবে। বিশ্বাসের প্রকিয়া খুব জটিল।কোনো সম্পর্কেই একেবারেই তাকে বিশ্বাস করে সম্পর্ক শুরু হয় না। তারা শুধু তাদের ভাগ্যের উপর বিশ্বাস করে একটা চান্স দেয়। দেখে তাদের জীবন কোথায় যায়। তবে এটা সবার জন্য এক না। আমি তো আমার মনের কতাটা বললাম। ছোট একটা মুক্তি!
মেহেরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে..
– আমি ক্লান্ত এসব শুনে!
আরিশা চোখ ঘুরিয়ে বলে..
– তুই শুনেই ক্লান্ত তাহলে একটা সম্পর্কে তুই থাকবি কি করে।
মেহেরিন দাঁড়িয়ে বলে…
– থাকবো না! কারন আমি কাউকে ভালোই বাসি না তাহলে সম্পর্ক কিসের। আর এগুলো আমার জন্য না, লাইক বিয়ে, সংসার, বাচ্চা নো ইট’স নট ফর মি!
নিরব বলে উঠে..
– কারন তুই নিজেই একটা বাচ্চা, তোকেই সামলাতে হবে তুই আবার কাকে সামলাবি!
– এই তো তুই বুঝেছিস!
নির্ঝর বলে উঠে…
– এক জনের বোঝ আরেকজন’র তরমুজ!
মেহেরিন জোরে হেসে উঠে!
.
বিকালে…
মেহেরিন বসে বসে চকলেট খাচ্ছে আর টম অ্যান্ড জেরি দেখছি। হঠাৎ করেই ওর পাশে ধপাস করে রোদ্দুর বসল। মেহেরিন জানে রোদ্দুর এখন কি জিজ্ঞেস করবে তাকে। তবুও সে চুপচাপ থাকে। এদিকে রোদ্দুর খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর বলে উঠে..
– চুপচাপ বসে আছিস যে কিছু বল!
– আমি কি বলবো!
– এটাই যে..
– যে…
রোদ্দুর এবার জড়োসড়ো হয়ে বসে। অতঃপর বলে…
– আরিশা কি বললো?
– কি আবার বলবে!
– জান!
– ওয়াট!
রোদ্দুর পকেট থেকে চকলেট’র দুটো প্যাকেট বের করে মেহেরিন’র হাতে দিয়ে বলল..
– এবার বল!
– এতে আমার কি হবে?
– আচ্ছা আরো দেবে এবার বল!
মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– শোন ওর কোনো বফ নেই আপাতত সিঙ্গেল আছে!
– সত্যি!
– হ্যাঁ তবে কতদিন থাকবে জানি না!
– বেশি দিন আর সিঙ্গেল থাকবে না ওয়েট কর তোর ভাবি হয়েই আসবে!
– আমিন!
রোদ্দুর মেহেরিন’র কথা শুনে হেসে উঠে!
.
রাতে…
নির্ঝর হোটেলে নিজের রুমে বসে মেহেরিন’র ফটো দেখছে।তার চোখে ঘুম নেই। তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে তার ঘুম পরি মেহু পাখি! নির্ঝর মেহেরিন’র ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..
– কি আছে তোমার মাঝে আমি বুঝতে পারি না। শুধু মন চায় সারাদিন তোমার ভাবনায় ঢুবে থাকি। তবে এই কি ভালোবাসা! ভালোবাসা কেন এতো নির্দয় বলো তো, তোমাকে এতো ভালোবাসি অথচ তুমি বোঝ না আর ভালো না বেসেও থাকতে পারি না। কারন আমি যে নিরুপায়। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমায় মেহু পাখি। মন চায় ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। তো বসে আসি কেন যেয়ে দেখি আসি আমার ঘুম পরি কে।
বলেই নির্ঝর এই রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ল মেহেরিন কে দেখার উদ্দেশ্যে! খান বাড়ির কাছাকাছি এসে গাড়ি থামাল নির্ঝর! অতঃপর গাড়ি থেকে সামনে যেতেই কাউকে দেখল বাড়ির প্রাচীর টপকাতে। নির্ঝর খানিকটা অবাক হলো। এসময় কে যাচ্ছে এই বাড়িতে। নির্ঝর তার পিছু পিছু যেতেই দেখল সে একটা মই নিয়ে মেহেরিন’র রুমের বেলকনিতে রাখল। নির্ঝরের কৌতূহল এবার বেড়ে গেল। কে এ? নির্ঝর দেখল সে মেহেরিন’র ঘরের মধ্যে চলে গেছে। নির্ঝর দেরি না করে দ্রুত মই বেয়ে মেহেরিন’র ঘরে এলো। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আড় চোখে চেয়ে রইল ঘরের মধ্যে! সে মেহেরিন’র বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়র। তাকিয়ে রইল মেহেরিন’র দিকে। অতঃপর তার হুডির টুপি’টা নামিয়ে ফেলল। নির্ঝর এবার তার মুখ দেখে চমকে বলে উঠে..
– নিরব!
#চলবে….