Game Part-05

0
652

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫

নিশি রোদ্দুর এর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেঁসে বলে..
– আমাদের রোদ্দুর ভাইয়া ইন অ্যা রিলেশনশিপ এ আছেন।

সবাই তাকিয়ে আছে রোদ্দুর দিকে তবে মেহেরিন এর চাহনি দেখে রোদ্দুর এর ইচ্ছে করছে যেন মরে যায়। কিভাবে ভ্রু নাচিয়ে তাকিয়ে আছে। এখন যখন তখন এটা নিয়ে তাকে ধরবে। পিন্চ মারবে!

নিহা বলে উঠে..
– তুই এই আকাম কবে করলি!

কাব্য বলে উঠে..
– তলে তলে এতো দূর!

মেহেরিন বলে উঠে..
– লা লা লা লা…

রোদ্দুর লজ্জায় লাল হয়ে গেছে! সবাই হাসছে। রোদ্দুর বলে উঠে..
– প্লিজ গাইস বন্ধ কর এবার।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আমি করবো না তুমি তৈরি থাকো!

– আচ্ছা ঠিক আছে ‌কি চাই তোর!

– এত্তো গুলা চকলেট, ইয়ামি ইয়ামি চকলেট!

– আচ্ছা পেয়ে যাবি!

ইহান বলে উঠে..
– তোর এভাবেও লো সুগার। চকলেট সহজে পেয়ে অন্যকিছু বল!

– সবসময় আমাকে বাঁশ দেবার ধান্দায় কেন থাকিস তুই!

সবাই হেঁসে উঠে। নিশি আবারও বলে..
– আরে এখনো বাকি শোন তো!

– হুম বল! কাব্য এর সিক্রেট বল..

– কাব্য! ওর কোন সিক্রেট নেই, মেয়েরা ওকে পছন্দ করে না।

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশি’র দিকে। এমনকি কাব্য ও। পরে নিশি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে..
– মানে ওর কোনো মেয়ে পছন্দ হয় না!

ইহান বলে উঠে..
– এটাই বল! আমি বলি কি না বলছিস!

মেহেরিন বলে উঠে..
– ইহান বেশি বলছে! ওর সিক্রেট কি রে?

নিশি ইহানের দিকে তাকায়। ইহান অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকে। নিশি হাসতে হাসতে বলে..
– ইহান! ওর কথা জিজ্ঞেস করিছ না। ওর যে কি দুঃখ কি বলবো আমি!

ইহান অসহায় ভাবে বলে..
– নিশি বোন অফ যা না ইয়ার!

মেহেরিন বলে উঠে..
– তুই অফ যা। আপু তুই বল না কি হয়েছে!

নিশি সোফায় আসন পেতে বসে বলে..
– শোন তবে! ( সবাই আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে..) ইহান কে যেসব মেয়ে পছন্দ করে সে সবাইকে রিজেক্ট করে দেয়। ওর নাকি কোনো মেয়ে’ই পছন্দ হয় নি। তবে সেদিন কি হয়েছে জানিস! একটা মেয়ে নতুন এসেছে কলেজে! ইহান এই প্রথম মেয়েটাকে দেখে আমাকে খোঁচা মেরে বলে.. “দোস্ত দেখ মেয়েটা কি সুন্দর নাহ” ইহানের কথায় যেন আমি আকাশ থেকে পড়ি। এই প্রথম কোনো মেয়েকে সে সুন্দর বলছে তার মানে নিশ্চিত মেয়েটা সুন্দর। আমি তাকিয়ে দেখি আসলেই মেয়েটা অনেক সুন্দর। অতঃপর পরদিন কি হয়েছে জানিস!

মেহেরিন বলতে যাবে তার আগে নিহা বলে উঠে..
– কি?

মেহেরিন বলে..
– তোমার এক্সাইটেড বেড়ে গেলো কেন আবার।

– আহ্ শুনতে দে না। নিশি বল!

নিশি দাঁত বের করে হেসে হেসে বলল..
– আমি আর ইহান কলেজে গিয়ে দেখি সেই মেয়েটা পুরো কলেজের সামনে রোদ্দুর কে প্রপোজ করছে আর রোদ্দুর ও একসেপ্ট করে ফেলেছে!

সবাই হা আর অবাক হয়ে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইহান একটা কুশন নিয়ে মুখ লুকিয়ে রেখেছে। মেহেরিন হাসতে হাসতে সোফা থেকে পড়ে যেতে নেয় তখন অভ্র ওকে ধরে রাখে। রোদ্দুর কি বলবে বুঝতে পারে না। ইহান মেহেরিন কে বলে..
– আর কতো হাসবি এবার একটু চুপ কর!

– কাহিনী টা কি হলো। ভাবলি বউ হয়ে গেল ভাবি! হায়রে কপাল…

– চুপ কর। একদিনে এতদূর আমিও যায় নি। শুধু দেখতে সুন্দর এটাই বলেছি আর কিছু না

রোদ্দুর বলে উঠে..
– দোস্ত সত্যি তো!

মেহেরিন আর পারে না। ধপাস করে নিচে বসে পড়ে। অতঃপর পেটে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। সবাই মুগ্ধ হয়ে তার হাসি দেখতে থাকে। ছোটবেলা থেকে এই হাসির জন্য’ই সবার কাছে প্রিয় সে। হাসির আওয়াজে ডেভিল ও ছুটে আসে। সেও তার হাসি দেখতে ব্যস্ত। এই হাসির মাঝে নাকি অধরার হাসি লুকানো। মেহেরিন ডেভিল কে হাসতে হাসতে বলে..
– ডেভিল! জানো কি হয়েছে? শুনলে হাসতে হাসতে তোমার পেট ব্যাথা হয়ে যাবে।

অভ্র মেহেরিন কে কোলে তুলে আবারও সোফায় বসিয়ে বলে..
– আচ্ছা শুনবে তার আগে তুই চুপ কর!

মেহেরিন অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে..
– ইহান রোদ্দুরের কথার উত্তর দিলি না!

ইহান তওবা করতে করতে বলে..
– ছিঃ এমন কিছু না। আমি প্রথম দিনও এমন কিছু ভাবিনি আর না আজ। এখন তো উনি আমার ভাবি!

রোদ্দুর বলে উঠে…
– আমি তোকে বিশ্বাস করি দোস্ত!

ইহান অসহায় ভাবে বলে..
– দোস্ত তুই ও শুরু করলি!

এবার আরেকদফা হাসির শব্দ হয়! অতঃপর আবার শুরু হয়। নিশি নীলের দিকে তাকিয়ে বলে..
– নীল দা! তুমি! আমার মনে হয় না কোনো মেয়ে তোমাকে চয়েজ করবে?

মেহেরিন বলে উঠে..
– জ্বি না তুমি ভুল! ভাইয়া তলে তলে অনেকদূর চলে গেছে।

মেহেরিন এর কথায় সবার আগ্রহ এখন তার দিকে।‌ নীল বলে উঠে..
– মানে কি বলছিস?

– বেবী, হুম ১০০ টা মিসকল। ২০০ টা মেসেজ আমি সব দেখেছি!

নিহা বলে উঠে…
– সত্যি! নীল কি শুনছি এইসব!

নিশি বলে উঠে..
– নিশ্চিত মেয়েটা অন্ধ! দা তুই কিন্তু মেয়েটার সাথে অন্যায় করছিস। অন্ধ মেয়েটার সাথে এমন করা কিন্তু ঠিক না।

নীল রেগে বলে উঠে..
– প্লিজ ইয়ার, এটা আর কেউ না ইশা!

– ওহ্ আচ্ছা এই গায়ে পড়া মেয়ে, আমিও ভাবি এই ছাড়া আর কে তোকে পাত্তা দেয়!

– নিশি! তোকে তো আমি!

মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়েট গাইস এই ইশা টা কে?

– তোমার ভাইয়ার ক্লাসমেট।

– আস্তা গায়ে একটা গায়ে পড়া মেয়ে।

মেহেরিন বলে..
– ওর সাথে তুমি! কি করে মানে..

নীল বলে উঠে..
– আরে তেমন না। ও নিজেই নাম আমার ফোনে নাম সেভ করে দিয়েছে। আমি কি করবো। আর যত’ই হোক আমার ফ্রেন্ড ও নাও বলতে পারি না। তবে আমি ভালোবাসি নাহ! এটা সত্য!

কাব্য বলে উঠে..
– দা চিল আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। তবে এটাও জানি এই মেয়ে থাকতে অন্য কোনো মেয়েকে তোমার লাইফে আসতে দেবে না।

নিশি বলে উঠে…
– আহারে বেচারা!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– সবার সিক্রেট তুই খুলছিস তোর টা কে খুলবে?

নিহা বলে উঠে..
– ওর সিক্রেট থাকলে তো!

মেহেরিন বলে উঠে..
– আচ্ছা দি তোমার টা?

নিশি বলে উঠে..
– দি ওর নেই। আমি আর দি বোন বোন তো তাই একই রকম। তবে একটা ঝামেলা হয়েছে?

– কি ঝামেলা!

– গত দু’বছর ধরে একটা ছেলে দি এর পিছনে ঘুরছিল।‌আর আমাদের দি জানোতো কেমন। ছেলেকে পাত্তা দিলো না। দু’বছরের পরিশ্রম শেষে দুঃখে ছেলেটা কয়েক মাস আগে আত্নহত্যা করলো।

মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়াট এটা কোন ধরনের পাগলামি!

নিহা বলে উঠে..
– জানি না। তবে..

– দি বাদ দাও এতে তুমি দায়ী নও।

নিশি বলে উঠে..
– আচ্ছা আমি সবার মুড চেঞ্জ করি ওকে‌। এখন দা এর পালা!

মেহেরিন বলে উঠে..
– জানি দা এর এমন কিছু নেই! আমার দা তেমন না। কোনো মেয়ের প্রতি তার ইন্টারেস্ট নেই আর হবেও না চিল!

নীল বলে উঠে..
– জ্বি নাহ! আপনার দা এতো ভালো না।

মেহেরিন চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে থাকে। অভ্র বলে উঠে..
– আরে তোরা আবার শুরু করলি!

মেহেরিন বলে উঠে..
– কি হয়েছে দা?

অভ্র বলে উঠে..
– আরে সেদিন একটা মেয়ে আমার সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে গেছিল আমি শুধু তাকে ধরেছি এই!

– ওহ এটা তো একটা নরমাল ব্যাপার!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– আচ্ছা মেয়ে পড়ে যেতে নিলে তাকে ধরে ইটস নরমাল!

কাব্য বলে উঠে..
– দু’জনে দু’জনের দিকে তাকানো ইট’স ও নরমাল! মনে লাড্ডু ফোটা সেটাও নরমাল!

নীল বলে উঠে..
– আবার তাকে ফেলে দেওয়া ইট’স নরমাল!

ইহান বলে উঠে..
– আবার তাকে কোলে তুলে নেওয়া ইট’স নরমাল!

নিশি কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠে..
– সে যদি আবার নতুন পিএ হয় সেটা তো আরো আগে নরমাল!

সবার কথা মেহেরিন বোঝার চেষ্টা করছে, এদিকে নিহা মুখ টিপে হাসছে। অভ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– এটা সত্যি!

নীল বলে উঠে..
– তোমার দি কে জিজ্ঞেস করো!

মেহেরিন নিহা’র দিকে তাকায়। নিহা মুচকি হেসে বলে..
– হ্যাঁ সত্যি!

মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমি সেই পিএ কে দেখতে চাই দা!

অভ্র তাড়াতাড়ি বলে উঠে..
– প্লিজ তুই আর না! এমনেতে সবার পিন্চ শুনে শুনে আমি অস্থির আর না।

অভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগে ডেভিল বলে উঠে..
– স্যার একটা খবর আছে!

– কি?

– ম্যাম ফিরে আসায় সবাই তার ইন্টারভিউ নিতে চাইছে!

নিহা বলে উঠে..
– না বলে দাও ডেভিল, এরকম কিছু হবে না।

– তাহলে কি বলবো ম্যাম।

মেহেরিন বলে উঠে..
– বলে দাও পড়ালেখার জন্য অন্যত্র ছিলাম। এর বেশি উওর যাতে আমার কাছে আসা না করে!

বলেই মেহেরিন উঠে নিজের রুমে চলে যায়। সবাই উঠে ওর পিছনে পিছনে যায়। এতো বছর নিজের ঘরে আসে সে। ঘরে এসে পুরো ঘর কে দেখে ‌একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। সবকিছুই ‌আগের মতো আছে। কোনো কিছুর পরিবর্তন হয় নি। মেহেরিন ঘরের বিছানার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত হাসি দেয়। অতঃপর পিছনে ঘুরে দাঁত বের করে হেসে বলে..
– জানো আমি সবথেকে বেশি কাকে মিস করেছি।

নীল বলে উঠে..
– আমাকে আমি জানি!

কাব্য বলে উঠে..
– না আমাকে করেছে!

ইহান মুখ ভেংচি কেটে বলে…
– তাহলে আমি কে?

রোদ্দুর বলে উঠে..
– আমার জান আমাকে মিস করেছে!

নিশি বলে উঠে..
– না আমার বোন আমাকে মিস করেছে!

নিহা বলে উঠে..
– আমার মনে হয় দা কে!

এদিকে অভ্র মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে মেহেরিন এর দিকে। কারন সে জানে মেহেরিন কার কথা বলবে। ঠিক তাই হলো। মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে..
– ঘোড়ার ডিম! কারো টাই হয় নি।
বলেই বিছানায় চলে যায়। অতঃপর তার পুতুল পান্ডার কোলে বসে বলে..
– আমার এই নাদুসনুদুস কালো চশমা ওয়ালা পান্ডা টা কে বুঝলে। তার কিউট কিউট কালো চশমা, এর মোটা পেট টা কে! হি হি হি!

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। নিহা আর অভ্র দাঁত বের করে হাসতে থাকে।
.
এদিকে সে রাগে পুরো ঘরের জিনিসপত্র ভেঙ্গে ভাঙছে। কারন একটাই আদুরী বেঁচে আছে। কোনোমতে মেনে নিতে পারছে না এটা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃনা শুধু মেহেরিন বর্ষা খান’কেই করে আর তার পরিবারকে। কোনোমতে তাদের শেষ করতে চায় সে যেকোনো মূল্যে!

#চলবে….