#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১১
সন্ধ্যায় অভ্র বাড়িতে ঢুকে দেখে সবাই বসার রুমে বসে আছে শুধু মেহেরিন রোদ্দুর’র কোলে ঘুমাচ্ছে। এই ভোর সন্ধ্যায় ঘুমানোর কারনে অভ্র খানিকটা চিন্তিত হয় অতঃপর নিহা বলে উঠে..
– আজকে ওর জন্য ভাবী দেখতে গেছিলাম,জানো কি হয়েছে?
রোদ্দুর বলে উঠে..
– আমার মনে হয় না মামনি থাকলেও মেয়েকে এতো প্রশ্ন করতো যতটা ও জিজ্ঞেস করেছে!
অভ্র বলে উঠে..
– একটা মেয়েকে’ই দেখেয়ে এই..
নিশি বলে উঠে..
– কিসের একজন! গুনে গুনে আজ ৫ জন মেয়ে দেখলাম।
– কিহহহ ৫ জন, তবুও কাউকে পছন্দ হলো না!
ইহান হেসে বলে..
– জান এক একটা মেয়ের যেই লেভেলের ও খুঁদ বের করল এরপর আবার বিয়ে…
নীল বলে উঠে..
– ভাইয়া তোমার বিয়ে করা আর হলো।আদুরীর তোমার
জন্য যেমন মেয়ে খুঁজছে তেমন মেয়ে সে পাবে না!
সবাই একসাথে হেসে উঠে, তবুও এই হাসির আওয়াজে ঘুম ভাঙে না তার। অভ্র হেসে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কাব্য বলে উঠে…
– আজ সারাদিন অনেকক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করেছে , তাই এখন ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে!
অভ্র কিঞ্চিত হেসে মেহেরিন’র ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, তার এই স্নিগ্ধ ঘুমন্ত মুখ তার মনের সব কষ্ট দূর করে দেয়। অতঃপর রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
কয়েকদিন পর অবশেষে মেহেরিন’র একটা মেয়ে পছন্দ হয়। অবশ্য মেহেরিন’র না সবার’ই পছন্দ হয়। তবে অভ্র মেয়েটিকে দেখে না এমনকি মেয়েটির নাম অবদি জিজ্ঞেস করে না। এদিকে শুভ্রও মেয়েটাকে দেখে অনেক খুশি। কিন্তু অভ্র’র মনে শুধু একটা কথাই বাজছে ৭ দিন পর আনহা’র বিয়ে!
মেহেরিন মেয়েটার ছবি নিয়ে অভ্র’র সামনে রাখল কিন্তু অভ্র ফিরেও তাকাল না। শুধু মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে বলল…
– তোমার পছন্দ হয়েছে এই’ই বেশি! আমি তাকেই বিয়ে করবো দেখা লাগবে না তাকে!
– কিন্তু দা একবার দেখে তো আমার ভাবী অনেক সুন্দরী!
– কিন্তু আমার বোন আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দরী!
– হি হি হি আমি জানি! আচ্ছা দা বিয়ের তারিখ ঠিক করবে না!
– হুম তোমরা করো!
নিহা বলে উঠে..
– তুমি বলো একটা!
কাব্য বলে উঠে..
– তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়াটা ভালো!
নিশি বলে উঠে..
– আমার পরিক্ষার আগে হলে ভালো হবে।
অভ্র আনমনে বলে..
– ৭ দিন পর!
নীল বলে উঠে..
– কি! ৭ দিন পর। এতো কম দিনে কিভাবে কি?
মেহেরিন বলে উঠে..
– আমার দা যখন একবার বলেছে তখন ৭ দিন পর’ই বিয়ে হবে এটাই ফাইনাল। গাইস কাজ শুরু করো! আর ডেভিল কোথায়?
– এই যে ম্যাম!
– গেস্ট দের ইনভাইট দেওয়া শুরু করো। ৭ দিন পর বিয়ে!
রোদ্দুর বলে উঠে..
– অনেক কাজ আছে! শপিং করতে হবে এটা করতে হবে ওটা করতে হবে!
– আপনার জি এফ কেও ইনভাইট করতে হবে, ভাইয়া তোমার ওইই বান্ধবীকেও করো একটু দেখি আমি!
– পাকনা মেয়ে দেবো একটা!
সবাই হেসে উঠে। অভ্র’র কাজের কথা বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসে। খুব অস্থির লাগছে তার কিন্তু এটার কারন কি? আনহা’র বিয়ে হবে বলে। আনহা’র জন্য! কিন্তু কারো প্রতি এমন আবেগের আশা সে করে না আর না চায় এমন কিছু হোক! কারন তার দায়িত্ব অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই তার কাছে। কিন্তু তবুও এখানে তার বিয়ের কথা চলছে, আর এটা মেহেরিন’র কারনেই তাই নাও করতে পারছে না। হয়তো তখন আনহা কেও হ্যাঁ বলতে পারতো তবে তখন কেন সেই মানসিকতা ছিলো না তার। কেন তখন বুঝেনি আনহা’র প্রতি তার মনে একটা সূক্ষ্ম ভালোবাসা ছিলো। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই কারন মেহেরিন’র পছন্দ! মেহেরিন যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবে নাহলে মেহেরিন’র খারাপ লাগবে। আর অভ্র’র কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে তার বোনের মুখের হাসি। আর কিছু না!
পরদিন সকালে…
মেহেরিন রেগে অস্থির! কারন শুভ্র এসে হাজির। মেহেরিন’র এতো মানা করার পরও শুভ্র এখানে। ভয় একটাই যদি শুভ্র’র কিছু হয়ে যায় কারন এটাই তার একমাত্র দুর্বলতা। আর শত্রুরা তার এই দুর্বলতা’র সুযোগ নিবেই নিবে। শুভ্র মেহেরিন কোলে বসিয়ে বুঝিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মেহেরিন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত না। নিহা বলে উঠে..
– তুমি এখন হঠাৎ করে..
– হঠাৎ করে মানে! আমার বড় ছেলের বিয়ে আর আমি আসবো না!
মেহেরিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে..
– ছেলের বিয়ে আর সে এসে হাজির, যদি কিছু হয়ে গেলে যেত তখন! আর হবে না তার গ্যারান্টি কি?
– গার্ড আছে মামনি!
– কথা বলবা না তুমি আমার সাথে!
কাব্য বলে উঠে..
– আচ্ছা জান যা হবার হয়ে গেছে। এখন থাক!
– কেন থাকবে! সোজা কথা বিয়ের দিন’ই বাপি আবার ব্যাক করবে!
শুভ্র বলে উঠে…
– বিয়ের দিন!
– তো! তুমি ৬ দিন আগেই চলে এসেছো, আবার কি?
– আচ্ছা বিয়ের পরদিন যাবো, সত্যি!
– কি শখ ছেলের বিয়ে দেখার!
নিহা মেহেরিন’র কান মুলে দিয়ে বলে..
– তোমার শখ ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার তাহলে বাবার শখ থাকবে না ছেলের বিয়ে দেখার!
– দি লাগছে আমার!
শুভ্র বলে উঠে..
– নিহা ছেড়ে দাও ব্যাথা পাচ্ছে!
– বাবা আর মেয়ের কতো নাটক!
– কেন তোমার হিংসে হয় নাকি!
– হুহ!
অতঃপর সবাই হেসে উঠে। ৬ দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। আজ গায়ে হলুদ! সবাই সুন্দর করে সেজে উপস্থিত হয় অনুষ্ঠানে। একদিকে আনহা’র গায়ে হলুদ তো অপরদিকে আজ অভ্র’র গায়ে হলুদ। তবে অভ্র’র বিয়ের কথাটা আনহা’র কানে যেতে বেশি দিন লাগে নি। গায়ে হলুদের দিন কেঁদে কেঁদে অস্থির আনহা। এদিকে অভ্র ও মনমরা তবুও সবার খুশি দেখে আজ সেও খুশি। সারারাত আনন্দ করে কেটে যায় তাদের।
এদিকে আনহা বিয়ের দিন সকালে উঠে ঠিক করে নেয় আজ অভ্র’র মুখোমুখি হবে সে। তাকে শেষবারের মতো ভালোবাসি বলবে।
বিয়ের দিন সকাল থেকেই তোড়জোড় সব শুরু হয়ে গেছে। মেহেরিন তো যেন বেশি অস্থির হয়ে গেছে। এই করছে তো ওই করছে। এভাবে তাদের কারো মুখেই কোনো সাজ নেই। শুধু লেহেঙ্গা পড়ে লম্বা চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে। এতেই যেন তাদের সৌন্দর্য ধরছে না। অভ্র আজও ল্যাপটব নিয়ে বসে আছে। শুভ্র এসে অভ্র’র পাশে বসল। অতঃপর জিজ্ঞেস করল…
– বিয়েতে খুশি তো তুমি!
– হুম অনেক খুশি। আর বেশি খুশি কারন আদুরী খুশি!
– জানি! আদুরীর খুশির জন্য’ই বিয়েতে রাজী হয়েছে তুমি!
– আমার কাছে ওর খুশি টাই আগে বাবা।
শুভ্র কিঞ্চিত হেসে অভ্র’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল..
– তৈরি হয়ে নাও! কিছুক্ষণ বাদেই যেতে হবে আমাদের!
– হুম!
অতঃপর শুভ্র চলে গেলো। অভ্রও উঠে তৈরি হতে যাবে এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো। হয়তো মেসেজ এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ হতে পারে বলে অভ্র চেক করল। মেসেজটা ছিল আনহা! আনহা পাঠিয়েছে মেসেজ, লিখেছে…
– “আপনার সাথে আমার কথা আছে, জলদি এসে দেখা করুন। আমি অপেক্ষা করছি! ঠিকানা দেওয়া জায়গায় চলে আসুন।”
অভ্র খানিকটা অবাক হলো। আজ তো আনহা’র বিয়ে তবে সে তাকে কেন ডাকছো। অভ্র ভাবলো যাবে না। এর মধ্যে আবার মেসেজ আসল…
– “আপনি না আসলে কিন্তু অনেক খারাপ হবে। আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।”
অভ্র এবার চরম অবাক হয়ে গেল। বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে মানে। অভ্র আর দাঁড়ালো না বেরিয়ে পড়ল। তবে সামনের না পিছনের গেট দিয়ে কারন সামনের দরজা দিয়ে গেলেই এখন সবার মুখোমুখি হতে হবে।
আনহা’র দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে গেল অভ্র! দেখল একটা কালো রঙের থ্রি পিস একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে মেয়েটাকে ডাক দিলো!
– আনহা!
সাথে সাথেই ঘুড়ে গেল আনহা! আনহা দেখে অভ্র বিষ্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। না ঘুমাতে ঘুমাতে চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে। মুখ চোখ লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে কান্না করেছে। হুট করেই অভ্র কে জরিয়ে ধরল আনহা। আর বলতে লাগল..
– আমি এই বিয়ে করবো না! প্লিজ আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন। খুব ভালোবাসি আপনাকে। পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে! বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি আমি! প্লিজ ছেড়ে যাবেন না আমায়!
#চলবে….