Game Part-19

0
735

#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৯

রাতে নিহা ঘরে একা একা বসে আছে। আজকের ঘটনা মনে পড়তেই শরীর শিউরে উঠছে তার। কিভাবে এটা হলো? কেন হলো? সে কেন কিছু বললো না আহিয়ান কে? বলা তো দরকার ছিল। একটা চড় তো মারতেই পারতো। কিন্তু কিছু না বলে এভাবে চলে আসলাম কেন? এটা একদম ঠিক হয়নি।

হঠাৎ বেলকনিতে কিছু’র আওয়াজ পেল। নিহা সেখানে গেল। কিন্তু কিছু দেখতে পেলো না। হুট করেই ‌কেউ বলে উঠলো.. “ভূতনি”!
নিহা চমকে গেল। একটু নিচু হয়ে দেখল আহিয়ান বেলকনিল গ্রিল ধরে ঝুলছে। নিহা বলে উঠে..

– আপনি!

– আরে ভূতনি ধরো আমায় নাহলে পড়ে যাবো।

– মরে যান!

– এভাবে বলো না।

– তাহলে বলুন আমি মেরে ফেলি।

– পারবে আমাকে মারতে!
বলতে বলতে আহিয়ান উঠে গেল। নিহা মুখ ফুলিয়ে রাগে গজ গজ করছে। আহিয়ান বলে…

– এতো রেগে আছো সত্যি মেরে ফেলবে নাকি!

নিহা তাকিয়ে আছে। আহিয়ান নিহা’র হাত দুখানা ধরে নিজের গলায় নিয়ে বললো..
– নাও গলা টাপে মেরে ফেলো।

– বেস্ট আইডিয়া!
বলেই নিহা গলা টিপে ধরল। আহিয়ান তাড়াতাড়ি করে হাত ছাড়িয়ে বলল..

– আরে আরে তুমি তো সত্যি দেখছি আমাকে মেরে ফেলতে চাও। আমি এমনেই বললাম!

– কিন্তু আমি এমনেই বলছি না সত্যি আজকে আপনাকে মেরে ফেলবো আমি।
বলেই আহিয়ান’র দিকে আগাতে লাগলো। আহিয়ান দৌড়ে ঘরের ভিতর চলে গেল। নিহা আহিয়ান’র দিকে বালিশ ছুঁড়তে লাগলো। আহিয়ান একসময় থেমে গেল। নিহা ইচ্ছে মত আহিয়ান’র পিঠে বালিশ মারতে লাগলো। বালিশ থেকে সব তুলো একসময় বের হয়ে আসলো। নিহা থেমে গেল। আহিয়ান হেসে বলে…

– শেষ..!

নিহা রেগে আহিয়ান’র দিকে তাকাল। আহিয়ান দাঁত বের করে হাসল। নিহা রেগে আহিয়ান কে কিল ঘুষি মারতে লাগল। কিছুক্ষণ পর আহিয়ান নিহা’র হাত দুটো ধরে ফেলে। নিহা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। আহিয়ান বলে উঠে..

– অনেক মেরেছে এবার থামো।
নিহা ছোটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। আহিয়ান বলে উঠে..

– তুমি যত’ই যা শিখো মনে কিন্তু আমার সাথে পারবে না।

– কে বললো!
বলেই নিহা বাঁকা হেসে পা দিয়ে মেরে আহিয়ান কে ধপাস করে নিচে ফেলে দিলো। অতঃপর তার উপর বসে বলল..

– ভুলে যেও না আমি নিহারিকা নিহা খান! আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না বুঝলে!

আহিয়ান নিহা’র হাত দুটো শক্ত করে ধরে নিহা কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মেঝেতে বসে বলল..

– আমিও আহিয়ান চৌধুরী বুঝলে। এখন তুমি যত’ই ভূতনি হও না কেন আমিও কম না।

নিহা উঠে বসে, তাকিয়ে থাকে আহিয়ান’র দিকে। আহিয়ান নিহা’র হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে।
– আসলাম রোমান্স করতে আর তুমি কি করলে আমার সাথে!

– কিহহ?

– না কিছু না।

– বের হন আমার বাসা থেকে।

– রেগে যাচ্ছো কেন? সরি!

– বের হবেন না গার্ড ডাকবো।

– তুমি ডেকে শান্তি পেলে ডাকো।

– সমস্যা টা কি আপনার!

– তোমাকে ভালোবাসি এটাই সমস্যা।

– সত্যি ভালোবাসেন!

– বিশ্বাস করে তো দেখো ঠকবে না কখনো!

নিহা খানিকক্ষণ আহিয়ান’র দিকে তাকিয়ে বলল..
– বের হন!

– দেখো তুমি বলো ভালোবাসো কি না। নাহলে অন্য কাউকে খুঁজে নেবো আমি।

– কিহহ বললেন!

– যা শুনলে তাই।

– এই না বললেন আমায় ভালোবাসেন।

– তো কি করবো তুমি তো ভালোবাসো না।

– তাই বলো আপনি… আপনি!
বলেই আহিয়ান’র চুল টানতে টানতে থাকে। আহিয়ান কোনো রকমে ‌নিহা কে শান্ত করে বলে..
– এভাবে আমার মা ও কখনো মারে নি জানো। বাহ বাহ কি মেয়ে তুমি। ভালোবাসি বললে কি হয়।

– বলবা না কি করবেন শুনি!

– তখন যা করলাম আর কি!

– এটা আমার বাসা, এমন হাল করবো না।
আহিয়ান নিহা’র নাক টায় টোকা দিয়ে বলে..

– তোমার এইসব ধমক অনেক ভালো লাগে জানো!

নিহা মুখ ভেংচি দিয়ে আহিয়ান’র বুকে শুয়ে পড়ে। আহিয়ান দু’হাত জরিয়ে ধরে নিহা কে!
.
পরদিন সকালে…
নিশি আজ ভার্সিটিতে যায় নি মেহেরিন’র কারনে।‌ নিশি, রোদ্দুর ইহান আর কাব্য সবাই মিলে সারাদিন ঘুরবে বলে ঠিক করেছে মেহেরিন। এদিকে নীল গেছে ভার্সিটিতে আর নিহা অফিসে। অভ্র’র অবর্তমানে এখন অফিসের কাজ তাকেই দেখতে হবে।

এদিকে নিশি আর ভার্সিটিতে যায় নি বলে নিশানের মন বেশ খারাপ। এখন একদিন নিশি কে না দেখলেই অনেক খারাপ লাগে তার।

নীল ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে ইশা মন খারাপ করে বসে আছে। নীল তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করল..

– কি হয়েছে?

– বেবী!

– কি?

– ওই মেয়েটা আজও আমার সাথে ঝগড়া করেছে খুব বাজে বাজে কথা বলেছে!

– কিহহ।

– হুম!

– চল আমার সাথে
বলেই নীল ইশা কে নিয়ে নীলাশা’র কাছে গেল। দেখল নীলাশা তার বান্ধবীর সাথে ফাজলামো করছে।‌ নীল ওখানে ইশা কে নিয়ে গেল নীলাশা’র বান্ধবী নীলাশা কে বলে। নীলাশা পিছনে ফিরে নীল ইশা’র সাথে দেখে জিজ্ঞেস..

– আপনি!

নীল রেগে বলে..
– এই মেয়ে তোমার সমস্যা’টা কি বলো তো!

– আমি আবার কি করলাম!

– কি করলে সিনিয়র’র গায়ের হাত তুলো আবার বলছো কি করলে!

– গায়ে হাত তুললাম মানে! কখন?

ইশা খাবড়ে যায় কারন নীল কে ও মিথ্যে বলেছে। ইশা পরিস্থিতি সামলাতে বলে..

– এই মেয়ে মিথ্যে বলছো কেন তুমি তখন আমার সাথে ঝগড়া করো নি।‌ আমার হাত মুচড়ে দাও নি। আবার মিথ্যে বলছো।

নীলাশা রেগে ইশা সামনে আঙুল তুলে বলে..
– এই চুন্নি দেখ আমার নামে মিথ্যে বলবি না একদম নাহলে ঘুষি দিয়ে তোর নাক ফাটিয়ে দেবো।

নীল রেগে নীলাশা’র বাহু ধরে বলে..
– তোমার সাহস তো কম না। আমার সামনে আমার ফ্রেন্ড কে বলছো মারবে। তোমার ব্যবস্থা আমি করছি আজ।
বলেই নীলাশা কে নিয়ে যেতে লাগলো। কিন্তু নীলাশা’র বান্ধবী এসে অনেক অনুরোধ করায় তাকে ছেড়ে দিলো। কারন তাকে নীল অনেক আগে থেকেই চিনে। নীল শেষবারের মতো বলে গেলো এমন কিছু যাতে না হয়।‌
এদিকে নীল যাবার পর নীলাশা বিড় বিড় করতে করতে বললো..

– ইশ আসছে কোন মহারাজ। উনার কথা শুনে চলতে হবে। দোষ তো ওই চুন্নি’র আমার নাকি।

– নীলাশা দোষ যার’ই হোক কিন্তু তুই কিছু বলবি না।

– কেন বলবো না!

– কারন তুই মধ্যবিত্ত আর তারা বড়লোক। অনেক কষ্ট করে এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছিস বাড়াবাড়ি করলে যদি বের করে দেয় তখন এই কুল ও যাবে আর ওই কুলও বুঝলি।

নীলাশা আর কিছু না বলে মাথা নামিয়ে নিলো। সত্যি’ই সে একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বেশি বাড়াবাড়ি করলে ভালো নাও হতে পারে। এই সত্য তাকে মেনে নিতে হবে।
.
অভ্র আর আনহা আজ সারাটা দিন ঘুরেছে। কালও অনেক জায়গায় ঘোরার প্ল্যান আছে। সন্ধ্যার সময় দুজনে চলে আসল রিসোর্টে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে হালকা নাস্তা করল। আনহা একা একা রিসোর্টের পাশে একটা বাগানে ঘুরতে লাগলো। বাগান টা অনেক সুন্দর, অনেক ফুল আগে এখানে। ভালোই লাগছিল আনহা’র। তার মতে এখন অভ্র ল্যাপটব নিয়ে বসবে। তো সেখানে গিয়ে বসে বোর না হয়ে এখানে থাকা ভালো। অনেক রাত হয়ে গেল! অভ্র এখনো আসে নি আনহা’র কাছে। আনহা ভাবল হয়তো কাজের মধ্যেই ঢুবে আছে। তাই রেগে রুমের দিকে গেল।

আনহা গিয়ে রুম নক করলো। কিন্তু কেউ খুললো না। সে আবারও নক করলো তখন বুঝতে পারলো রুম লক করা নেই। আনহা’র ভয় হলো। কিছু হয় নি তো আবার অভ্র’র। সে দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল। রুমে ঢুকেই চমকে উঠলো আনহা। পুরো রুম মোমবাতি দিয়ে ডেকোরেট করা। মোমবাতির আলোয় আলোকিত ঘর। আনহা অনেকটা অবাক হলো কারন এরকম কিছু’র আশা অভ্র’র কাছে কখনো করে নি সে। কিন্তু অভ্র কোথায়?

আনহা অভ্র কে ডাক দিলো কিন্তু কোনো উত্তর পেলো না। আনহা’র আবারও চিন্তা হতে লাগলো তাই সে লাইট জ্বালাতে গেল।লাইটের সুইচ টিটতে যাবে এর আগেই কেউ তার হাত ধরে ফেলল। এই স্পর্শ অচেনা নয়, এটা অভ্র! আনহা যেমন ছিলো তেমনই ‌দাড়িয়ে আছে। অভ্র পেছন থেকে আনহা’র কোমর ধরে ওর ঘাড়ে থিতুনি রাখল। আনহা’র পুরো শরীর কাপতে লাগলো। অভ্র ফিসফিসিয়ে বললো…

– এতো নার্ভাস কেন তুমি! এতোদিন কতো অভিযোগ ছিল এই নিরামিষ বর কে নিয়ে। আজ বলবে না!

আনহা লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো। অভ্র আনহা কে ছেড়ে একটা গিটার নিয়ে গান বাজাতে লাগলো। গান গাইতে শুরু করল….

Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya
Oh Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya

Yeh Marziyon Ka Malik
Kaise Mana Liya
Oh Mere Paas Ek Dil Tha
Woh Bhi Tumne Chura Liya……

গান গাইতে গাইতে আনহা’র সাথে নাচতে লাগলো।‌ অতঃপর গান শেষ হলে অভ্র আনহা’র কোমর জড়িয়ে ধরে। আনহা অভ্র’র গলা জরিয়ে ধরে তাকিয়ে আছে অভ্র’র দিকে। অভ্র মুচকি হেসে বলে…

– এতো কি দেখো আমার মাঝে, ক্লান্ত হয়ে যাও না!

– আপনাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।

– কেন?

– কারন আমি ভালোবাসি আপনাকে।

– যদি এই ভালোবাসা কখনো কমে যায়।

– কমতে দেবো আমি। সারাজীবন আপনার হয়ে থাকবো। আমি শুধুই আপনার!

অভ্র মুচকি হেসে আনহা’র গালে হাত রেখে কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো। আনহা কে কোলে তুলে নিলো। আনহা অভ্র’র গলা জরিয়ে তাকে দেখতে লাগলো। অভ্র আনহা কে চোখ টিপ দিলো। আনহা লজ্জায় অভ্র’র বুকে মুখ লুকাল। অভ্র ধীরে ধীরে আনহা কে নিয়ে বিছানায় চলে যায়…

❤️
❤️
.
সকালে আনহা ঘুম থেকে উঠে দেখে ‌অভ্র তাকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আনহা এখনো অভ্র কে দেখতে থাকে।‌ আসলেই অভ্র কে দেখতে বেশ ভালো লাগে তার কাছে। আর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার চাপা স্বভাব, কথায় কথায় লজ্জা পাওয়া সবকিছু! এমন একজনকে ‌ভালোবাসার সৌভাগ্য সবার হয় না। আনহা অভ্র’র কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে উঠে পড়ে ঘুম থেকে। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে দেখে অভ্র এখনো ঘুমাচ্ছে। আনহা ফাজলামো করে তার চুলের পানি অভ্র’র মুখে ছিটায়। অভ্র পানির ছিটায় ঘুম থেকে উঠে পড়ে। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আনহা’র দিকে। আনহা দাঁত চেপে বলে..

– গুড মর্নিং নিরামিষ বর!

অভ্র মুচকি হেসে আনহা কে নিজের কাছে টেনে নেয়। অতঃপর তার নাকে নাক ঘষে বলে..

– গুড মর্নিং আমিষ বউ।

– আর কতো ঘুমাবেন যান ফ্রেশ হয়ে আসেন।

– হুম যাচ্ছি!

#চলবে….