#In_The_Depths_of_Love
#Mizuki_Aura
#part_01
“আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। আর না মানতে পারবো।” বলে বিছানার চাদর খামচে ধরলাম। সাথে সাথেই উনি আলতো ভাবে আমার ঠোঁটদুটো নিজের ঠোঁটের মাঝে নিলেন। চমকে উঠে বিছানার চাদর খামচে ধরেছি । এক সেকেন্ড পরেই উনি আমার ঠোঁট ছেড়ে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন। হৃদপিন্ডটা রীতিমত বুলেট ট্রেন এর মত ছুটছে।
নিজের সিক্ত মাতাল গলায় বললেন “কি বললে?”
এমনভাবে বললেন যেনো শুনতেই পান নি। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম “অা”’ আমি আপনাকে ….. স্বামী হিসেবে মানি না”
সাথে সাথে আবারো উনি আমার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের দখলে নিয়ে নিলেন। তবে এবার আলতো ভেবে নয় একটু জোর করেই………
আমি ডান হাত দিয়ে তাকে দূরে ঠেলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু লাভ নেই। যথারীতি আবারো আমার ঠোঁট ছেড়ে আমার মুখ বরাবর এসে শান্ত কণ্ঠে বললেন “আবার বলো”
আমি কোনোকিছু বলার ভাষাটাই হারিয়ে ফেলেছি। কি বলবো.. বললে ও কি লাভ। উনি তো শুনছেন না।
“আপনি কিন্তু…..” বলতে না বলতেই আবারো একই কাজ। আমার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। তবে এবার আলতো করে কামড় বসালেন। নিজেকে ছাড়িয়ে বললাম “দেখুন আপনি…….”
কিন্তু আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ উনি দিলেন না । আমার মুখ নিজের বা হাতে চেপে ধরে গলায় মুখ গুজে আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলেন।
আমি ছাড়া পাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। কিন্তু যতই হোক একটা ছেলের শক্তির কাছে মেয়েরা কখনোই পেরে ওঠে না। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। উনি খুব ভালো করেই জানেন আমি ওনাকে ভালোবাসি না। সম্ভব ও না। তবুও কেনো আমার সাথে এমন করছেন।
কিছুক্ষন পর আর কোনো উপায় না পেয়ে আমি এমনিতেই শান্ত হয়ে গেলাম। উনি ধীরে ধীরে নিজের মুখ তুলে নিলেন। আর আমার মুখের ঠিক সামনে নিয়ে এলেন। বা হাতটা সরিয়ে আমার ঠোঁট দুটোকে আলতো আঙ্গুল ছুঁয়ে যাচ্ছেন আর নাক দিয়ে আমার গাল ঘষতে লাগলেন …….
ওনাকে এতো কাছে আমি সহ্য করতে পারছি না “কেনো আমায় বিয়ে করলেন? খুব কি দরকার ছিল?”
উনি আমার গালে আলতো করে চুমু দিলেন আর ফিসফিস করে বললেন “কাওকে চিরতরে কষ্ট দেওয়ার মুক্ষোম রাস্তাটাই হলো নিজের কাছে বন্দী রাখা। আর এই সমাজে তার সবথেকে সহজ উপায় “বিয়ে””
বলে ঠোঁট থেকে আঙ্গুল সরিয়ে গেল ঘষতে লাগলেন ।
“কেনো ? আমি আপনার কোন ক্ষতিটা করেছি? কিসের কষ্ট দিতে চান আর? এর থেকে বেশি আর কি কষ্ট দেবেন আমায়? ”
উনি মুচকি হাসলেন “সময়ের সাথে সাথে কষ্টের ধরণ ও কারণ দুটোই স্পষ্ট হয়ে যাবে …….”
বলে আবারো আমাকে টেনে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
“দয়া করে ছাড়ুন আমাকে …. আমি আপনাকে………”
আমার কথা শেষ করার আগেই আমার মুখ একহাতে চেপে ধরলেন উনি ও রাগান্বিত কণ্ঠে বললেন
“তুমি কি কোনোভাবে আমার কাছে প্রাণভিক্ষা চাইছো? আমি কি গুন্ডা নাকি ধর্ষক? কোনটা? খুব শখ দয়া নেওয়ার! ওকে…….”
বলেই উনি রীতিমত আমার ঠোঁট কামড়ে ধরলেন। এই মুহূর্তে আমার উপরে ভালোবাসা নয় তবে আমার বলা একটি বাক্যের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের এই একটাই পথ ওনার কাছে। ব্যাথায় আমার চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়ছে। আস্তে আস্তে উনি আমার শাড়ীর আঁচলটা ফেলে কুচিগুলো খুলতে লাগলেন।
শত ধাক্কা দিয়েও তাকে একচুলও নড়াতে পারলাম না, উল্টো আমার প্রতিটা আঘাতের জন্য ওনার অত্যাচার তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
কষ্টে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম , আর কোনো উপায় নেই আমার…….
……………………..🎊
গালে কিছু একটার স্পর্শ অনুভব হলো। এমনিতেই রাতে তেমন ঘুমোতে পারিনি, চোখ মুখ কুঁচকে বিরক্তিভাব নিয়ে চোখ ডলতে ডলতে তাকালাম।
আমার পাশেই উনি আমার দিকে কাত হয়ে একহাত দিয়ে আমার গালে স্লাইড করে যাচ্ছেন। চোখ চড়কগাছ এ পরিণত হলো আমার। আচমকা সরে যেতে গেলাম, কিন্তু লাভ হলো না। উল্টো আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলেন উনি…….আর রহস্যময়ী এক হাসি ওনার ঠোঁট ছুঁয়েই রয়েছে।
গতরাতের কথা মনে পড়তেই চোখ সরিয়ে নিলাম তার ওপর থেকে।
উনি স্বাভাবিক গলায় বললেন “মানুষ ৩ কারণে চোখে চোখ মেলাতে পারে না…….. হয় লজ্জা নয় ভয় আর নয়তো…….”
“ঘৃণা” আমি দৃঢ় কণ্ঠে প্রকাশ করলাম।
উনি আমার কথা তুচ্ছ করে হেসে গলায় মুখ গুজলেন “মানুষ ঘৃণার ভাগটাও সহজে কাওকে দেয় না। আমি তো তাহলে ভাগ্যবান [[ক্ষীণ কণ্ঠে বললেন]] – তোমার ঘৃণাই সই।”
একটা আলতো ভাবে গলায় কামড় দিয়ে উনি তার হাতের বাঁধন আলগা করে দিলেন। আমি গায়ের চাদর জড়িয়ে তার থেকে দূরে সরে উঠে বসলাম।
উনি দুহাত মাথার নিচে দিয়ে আরাম করার মত ভাবে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
আমি আর কিছু না বলে খাট ছেড়ে উঠতে গেলাম । কিন্তু কপাল আমার ষোলো আনা খারাপ।
পা নামাতে গিয়েই শরীরের ব্যথার কারণে আর এগোতে পারছি না।
আড়চোখে তাকিয়ে দেখি উনি এখনো ওভাবেই শুয়ে আছেন। কোনো হেলদোল নেই।
খুব কষ্ট নিজেকে শান্ত করে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালাম। একপা দুপা সামনে দিতে গিয়েই আবারো পড়ে যেতে গেলাম। সাথে সাথেই খাট ধরে একটু ঠেক দিলাম। শরীরে অসহ্য ব্যাথা। হাটতে অনেকটাই কষ্ট হচ্ছে। আর ওদিকে উনি একটু সাহায্য টুকুও করছেন না।
আবারো হাঁটার জন্য পা বাড়ালাম পেছন থেকে মৃদু অনুরোধের সুর ভেসে এলো “রাই……..”
থেমে গেলাম । উনি বললেন “আজ একটা হলদে রঙের শাড়ি পরবে?”
কথাটা যতই শুনতে মধুর হোক বা মোহময়ী হোক না কেনো ,,,এখন তার এই ছোট্ট অনুরোধটি ও রাখার মত মানসিকতা আমার মাঝে নেই।
কিছু না বলে আস্তে আস্তে বাথরুমে ঢুকে গেলাম।
ঝর্না ছেড়ে অঝোরে চোখের জল বিসর্জন দিচ্ছি।
কেনো হটাৎ করেই জিবনটা এমনভাবে ঘুরে গেলো! কয়েকটাদিন আগেও তো সব ঠিকঠাক ছিলো। শুধু এই একটা মানুষের জন্যই আমার জীবনের চিত্রটাই বিষাদ হয়ে গেল। এই একটা লোকই চার চারটে জীবনের ছবি ঘুরিয়ে রেখে দিলেন।
কিছুক্ষন পরে বড়ো টাওয়েল পেঁচিয়ে দরজা হালকা খুলে বাহিরে একটু উঁকি দিলাম। ঘর পুরোই ফাঁকা। উনি কি নেই তাহলে? একপা একপা বেরিয়ে পুরো ঘরে চোখ বুলোলাম। নাহ নেই।
“যাক ভালো…..”
তাকিয়ে দেখি খাটের ওপরে একটা হলদে রঙের শাড়ি বের করে রাখা। দেখে ঠাণ্ডা মাথাটায় ও আগুন জ্বলে উঠলো। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম “পরবো না ওটা”
এগিয়ে আমার সুটকেস খুঁজতে লাগলাম। কিন্তু আশ্চর্য। সুটকেসটা নেই। আমার সব কাপড়চোপড় তো ওটাতেই ছিলো। তাহলে?
“মা কি কাল বিদায়ের সময় সুটকেস দিতে ভুলে গেলেন? আরে ধুর এখানেই তো ছিলো। কালকেই তো দেখলাম….. এ কেমন কথা বিয়ের পরেরদিন নাকি কাপড় খুঁজে পাচ্ছি না। হলো কিছু!”
সরঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও সুটকেস এট হদিস মিলল না। নির্ঘাত উনিই সরিয়েছেন। হ্যাঁ…… যাতে আমি এই শাড়িটা পরি।
“ভাবি…… ভাবি….. দরজা খোলো আর কতক্ষন? ভাইয়া তো এসে গিয়েছে এখন সবাই তোমার অপেক্ষা করছে……. কই তুমি?”
“হ্যাঁ…. হ্যাঁ সুমি…. আসছি। তোমরা ,,,, আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি,।।।” বলেই তাড়াতাড়ি শাড়িটা নিয়েই বাথরুমে ঢুকে গেলাম। উপায় নেই।
একেই বলে “ঝড় আসলে সবদিকই অন্ধকার …….”
চলবে✨✨✨✨
#In_The_Depths_Of_Love
#Mizuki_Aura
#Part_02
হলুদ শাড়ি পরে ভেজা চুলগুলো কোনমতে আঁচড়ে আয়নায় দিকে তাকিয়ে আছি। কেনো? কারণ এই আয়নার ভেতরের দৃশ্যমান প্রতিবিম্বটাকে আজ আমার শেষ করে দিতে মন চাচ্ছে। তাকাতেও ঘৃণা হচ্ছে। আজ আমি একজনের স্ত্রী। ইচ্ছেতেই হোক বা অনিচ্ছায়। কিন্তু হ্যাঁ (আয়নায় নিজের চেহারার উপরে হাত রেখে) আমি তার স্ত্রী। তার প্রতিটি স্পর্শের সাক্ষী এই আমিই। স্বামী হিসেবে নিজের সম্পূর্ণ অধিকার টুকু সে নিয়েছে।
“এটাই কি স্বাভাবিক নয় রাই?” তুচ্ছ হাসি বেরিয়ে এলো।
দরজায় ধাক্কার শব্দে হুশ ফিরে এলো। আবারো ডাকতে এসেছে বোধহয়।
এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম । সুমি কোমরে হাত গুজে দাড়িয়ে আছে “এইযে ভাবি,,,, আর কতক্ষন শুনি? সাজগোজ করতে করতে কি দিন পার করে দেবে নাকি?”
জোরপূর্বক হেসে তাকালাম “আসলে….. আমি আসছিলাম …”
“আর আসা লাগবে না চলো এবার” বলে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
ড্রইং রুমে এসে আমি থেমে গেলাম।
কারণ আমার শ্বশুর…. অর্থাৎ জনাব
রেজোয়ান আহমেদ খুশিতে হৈ হুল্লোর করছেন। ড্রইং রুম ভর্তি অনেকগুলো মানুষ । যাদের মধ্যে ৩–৪ জনকে আমি চিনি। তারা সম্পর্কে আমার চাচী শাশুড়ি, চাচা শ্বশুর, আর বাদবাকি এরকমই অনেকে আছেন। আমার শ্বশুর লোকটা খুবই ভালো মনের বলা চলে। এক কথায় তাকে বাবা বলে সম্বোধন করাটাও ভুল হবে না।
উনি হাসিখুশি মুখে জোরে জোরেই বলছেন “আরে কাশেম ভাই তুমি কেনো কিছু খাচ্ছ না ? নাও মিষ্টিমুখ করো….. ভাবি আপনারাও নেন। আম্মা….[অর্থাৎ আপনার দাদী শাশুড়ি] আম্মা আপনি এইভাবে কেনো বসে আছেন। ”
বলছেন আর হাতে হাতে মিষ্টি ভর্তি পিরিচগুলো সোফার সামনের টেবিলে রাখছেন। ওখানে যতগুলো লোকজন উপস্থিত থাকুক না কেনো তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই মুখে হাসির ছিটেফোটাও নেই। শুধু কিছু কিছু মানুষকে আমি একটু খুশি দেখছি।
তার মধ্যে আমার এই ননদ সুমি ,(আমার স্বামীর ফুফাতো বোন) আর দু একজন আছেন।
আর বাদবাকি আমার শাশুড়ি, দাদী শাশুড়ি, চাচা শ্বশুরের পরিবার এনারা কেউই এই বিয়েতে খুশি নন।
যথারীতি আমিও নই।
“এই ভাবি , কি ভাবছো চলো?” বলে সুমি আমাকে হাতের কনুই দিয়ে ধাক্কা দিলো।
আমি মাথা নেড়ে এগোতে যাবো কেউ তখনি আমার ডান হাতটা ধরে টান দিল আর পেছন দিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
“এই ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাস ভাবিকে এই??” পেছন থেকে সুমি ডাকছে।
তাকিয়ে দেখি উনি আমাকে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
আমাকে আমাদের ঘরে এনে হাত ধরে সোজা আয়নার সামনে দাড় করালেন উনি। আর এসে সোজা পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আয়নায় আমার চোখের দিকে তাকালেন। আমি পুরোই অবাক।
“কি করছেন কি? ছাড়ুন। ”
ওনার হেলদোল নেই । ওই একভাবেই আয়নায় আমার দিকেই তাকিয়ে আছে আর আমার ডান কাঁধে তার থুতনি রাখা, মুখে অনুসন্ধানী ভাব। কি দেখছেন এতো নিখুঁত পর্যবেক্ষণ দিয়ে?
“শুনতে পান নি? ছাড়ুন….”
বলে বিরক্তি নিয়ে তার প্রতিবিম্বের দিকে তাকালাম। নীল রঙের একটা পাঞ্জাবি , কিছু চুল কপালে এসে লেপ্টে আছে, তার শান্ত মন্থর দৃষ্টি খুব অন্যরকমের। চোখ দুটো কিছু একটা বলছে এমন। আচমকা একটা লজ্জা কাজ করলো। উনি এতো কাছে আবার এভাবে তাকিয়ে, তাই চোখ নামিয়ে নিলাম।
“লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলে? (বলে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো) কিন্তু তুমি তো আবার ঘৃণা করো… তো?”
অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম। উনি বাক হেসে হাতের বাধন আলগা করে দিলেন আর আমাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে দাড় করালেন। আমি মাথা নিচু করেই তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছি। উনি ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে একজোড়া ছোটো সাদা পাথরের ঝুমকো বের করে হাতে নিলেন [ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি]
একটা ঝুমকো নিয়ে আমার গালে হাত স্লাইড করে কানের কাছে গেলেন আর ঝুমকোটা পরিয়ে দিতে লাগলেন।
পেছন থেকে কিছু চুল সামনে এনে আচড়ে দিলেন , হাতে দুটো স্বর্ণের বালা (যেটা তাদের বংশপরম্পরায় বউ দের দেওয়া হয়) সেটা পরিয়ে দিলেন।
অবশেষে ড্রেসিং টেবিলের উপরে একটা স্বর্ণের আংটি রাখা ছিল। এনগেজমেন্ট রিং বলা চলে। উনিই পরিয়ে দিয়েছিলেন।
গতকাল রাগের বশে খুলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম । সেটাই উনি এনেছেন বোধহয়, আমার বা হাত ধরে অনামিকা আঙ্গুলি তে আস্তে আস্তে পরিয়ে দিলেন। তার দিকে তাকালাম।
উনি আংটির দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললেন “নিজের পরিচয়কে ফেলে কি আদৌ বাঁচা সম্ভব? ”
মুখ তুলে আমার দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করলেন “এটা তোমার পরিচয়। যেখানেই যাও না কেনো যাই করো না কেনো….. এখন থেকে তুমি শুধুমাত্রই এই পরিচয়ের অধীন। ঠিক না?”
কথাটা সোজা বুকে গিয়ে বিধলো। চোখ সরিয়ে নিলাম। অসহ্য লাগছে। এটাকেই বোধহয় কষ্ট বলে। এমন চিনচিনে ব্যাথা মস্তিষ্কে হচ্ছে যা বলার মত নয়।
উনি টেবিল থেকে কাজলটা হাতে নিয়ে আমার দিকে একপলক তাকালেন। তারপর বাকা হেসে কজলটা রেখে দিলেন আর আমার হাত ধরে বললেন “কাজল দিয়ে চোখের রাগটুকু ঢাকতে চাই না। তোমার চোখের ওই রাগটুকুই কাজলের কাজ করে দেবে। ” বলে শাড়ির আঁচল টেনে মাথায় ঘোমটার মতো করে দিলেন। আর হাত ধরে আবারো বাহিরে নিয়ে যেতে লাগলেন।
ড্রইং রুমে এসে আমরা দুজনেই উপস্থিত। সবাই গল্প করছিলেন। আমি গিয়ে সবাইকেই ভদ্রতার খাতিরে সালাম দিলাম। সুমি আর তার পরিবার বেশ ভালোই জানেন আমাকে। বাবা (আমার শ্বশুর) উঠে দাড়ালেন “মা আয় এখানে। এখানে বসে পড়। সবাই দেখ তোর অপেক্ষাতেই ছিলো। ”
আমার চাচী শাশুড়ি বলে উঠলেন “কীরে আবির বাড়িতে বউ এনে কি ভদ্রতা ও ভুলে গিয়েছিস? হাত ছাড়”
আবির রাই এর হাত আরো শক্ত করে ধরলো আর নির্ভীক কণ্ঠে বলে উঠলো “ভদ্রতা ভুলি নি বিযায় তোমরা আজ এখানে উপস্থিত আছো…… আর (রাই এর দিকে তাকিয়ে) হাত ছাড়ার সময় এলে … ছেড়েই দিবো….”
রাই অবাক চোখে আবিরের কথা শুনছিল। এই কথাটার মানে কি হতে পারে? এমন কথা কেনো বললো….
দাদী বলে উঠলেন “সব কথার জবাব যে দিতেই হবে সেটা কেনো মনে করো দাদুভাই?
এখন ওকে বসতে দাও…..”
আবির আর কথা বাড়ালো না। আমি গিয়ে একটা সোফায় বসে পড়লাম।
চাচা বলে উঠলেন
“রেজোয়ান, তোর কোনো কথায় তো আমি কখনো অমত করি নি…. তাহলে আজ তুই কিভাবে এত বড়ো সিদ্ধান্ত নিয়েও নিলি আর আমরাই জানলাম না?”
বাবা মুচকি হেসে উঠলেন “কাশেম ভাই…. আমি হয়ত সিদ্ধান্তটা খুব দ্রুত নিয়ে ফেলেছি, কিন্তু ভুল নেই নি সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই” ।
চাচী বিরক্তিভরা মুখে বললেন “ভাই আপনি তো সব জানেনই তবুও কিভাবে আবিরের সাথে এই মেয়ের বিয়ে দিলেন বলেন তো.!”
আমার শাশুড়িও তাল মিলিয়ে ইজে রেগেই বললেন “জিজ্ঞেস করো…. আর দেখো উত্তর পাও কিনা। আমার মতামতের প্রয়োজন বোধ এ বাড়িতে কেউই করে না। ”
রাই এই অপমানগুলো একটুও সহ্য করতে পারছে না। মাথা নিচু করে শুধুই একটা ভদ্রতা পালন করছে রাই। এনারা যদি কোনো সম্পর্কের মধ্যে না পড়ত তাহলে রাই এতক্ষনে এনাদের মুখের উপর জবাব দিয়ে দিত। কিন্তু সেটা সম্ভব না। হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এলো।
তখনি একজন খুব ব্যস্ততার সাথে বাহিরে যাচ্ছিলো দেখে চাচা ডাকলেন “এই নিয়াস কোথায় যাচ্ছিস দাড়া…… বড়ো ভাইয়ের কীর্তিকলাপ তো দেখে যা”
“আমি …..” এই নিশান কে বলতে না দিয়ে বাবা বললেন “বসো এখানে”
নিশান বিরক্তিভাব নিয়ে ঠিক রাই এর সামনের একটা চেয়ারে বসে পড়লো।
আবির বাবার পাশেই দাড়ানো ছিলো। একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলে আবির বলে উঠলো
“এখানে কোনো ভাস্কর্যের প্রদর্শনী চলছে না। আর আপনারা কোনো বিচারক নন….. যে যা ইচ্ছে মন্তব্য করে যাচ্ছেন” বলতে বলতে আবির রাই এর দিকে এগিয়ে গেলো আর ওর পাশেই বসে পড়লো ।
“ও এখন আবির চৌধুরীর স্ত্রী……রাই চৌধুরী……” বলে সবার দিকেই একটু কড়া চোখেই তাঁকালো আবির।
আবিরের কথা শুনে নিশান মাথা তুলে আবির এর দিকে আর রাই এর দিকে তাকালো।
বাবা পরিস্থিতি সামলাতে বলে উঠলেন “তোমরা একটু বাড়াবাড়িই করছো এখন। আর রাই কে দোষা বন্ধ করো…..”
বলে উনি একটা চামচে মিষ্টি তুলে রাই এর দিকে ধরলেন “নে মা….”
রাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মিষ্টি টুকু খেয়ে নিল। গলা দিয়ে কিছু নামছে না।
সবাই কিছু না কিছু একটা খোটা আমাকে দিয়েই যাচ্ছে। অথচ আমি কি কিছু করেছি? আমার দোষটা কোথায় ছিল? চোখ ভিজে এসেছে। খুব কষ্ট চোখের পানি আটকে বসে রইলাম।
বিকেলের দিকে মা আর চাচীর একটা কথা কানে এলো । চাচী মা কে বলছিলেন “তোমাকে এজন্যই আগেই বলেছিলাম আমার মেয়েটার সাথে আবিরের বিয়ে দিয়ে দাও। তুমি শুনলে না। এখন ছেলে যে মোচড় টা দিলো সহ্য করতে পারবে তো..”
মা জবাবে বললেন “ভাবি বিশ্বাস করো আমি কখনোই ভাবি নি এমনটা হবে। আমার রক্ত আমাকেই এমনভাবে ঠকালো……”
সারাদিন সেভাবেই চলে গেলো। রাতে বারান্দায় বসে আছি । ঘরে যাবার ইচ্ছে নেই। ওই খাটে আমি শুতে চাই না। যেখানে উনি আছেন। যাবো না।
আজ সারাদিনে সকলে যতগুলো কথা শুনিয়েছেন তার একটাও ভুলতে পারছি না। চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলাম সেগুলো।
“শুধুমাত্র নীলা (চাচী শাশুড়ির একমাত্র মেয়ে) এর সাথে ওনার বিয়ে হয় নি বলে চাচী আমাকে এইভাবে বললো! আমি কি করেছি!?” বলে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদতে লাগলাম।
হটাৎ কেউ আমাকে ধরে থুতনি ধরে মুখটা উপরে তুললো । দেখি আবির তাকিয়ে আছে। উনি আমার চোখের পানি আলতো করে মুছে দিলেন । আমি সাথে সাথে ওনার থেকে একহাত দূরে সরে গেলাম।
হাতদুটো গুটিয়ে আবির আমার পাশেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লো আর শূন্যে চোখ রেখে বললো “কিছু স্বার্থপর মানুষের অযৌক্তিক কথায় কান্না করার মত মেয়ে ,,,অন্তত আমি তোমাকে ভাবি নি……”
“তবুও তো কথাগুলো একমাত্র আমাকেই শুনতে হচ্ছে ……..” কাঁদো গলায় জবাব দিলাম।
উনি চোখজোড়া বন্ধ করে বললেন “একমাত্র তোমাকেই!?” তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে “যেখানে তোমার আমার নামটাই এখন এক সেখানে কথাগুলো একমাত্র তোমাকেই শুনতে হলো এমনটা ভাবার কারণ?”
“চাই না আপনার নাম। চাই না এই পরিচয়, যেখানে আজীবন শুধু আমাকে সহ্যই করে যেতে হবে ….”
সঙ্গে সঙ্গে আবির রাই এর বা হাত ধরে হ্যাঁচকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। আর ওর ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নিলো।
ক্রমেই যেনো তা কামড়ে পরিণত হচ্ছে। রাই আবিরকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে গেলো । কিন্তু উল্টো নিজের ব্যথার পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়িয়ে নিলো।
রাই এর কোমরে হাত দিয়ে ওকে আরো কাছে টেনে নিল।
কিছুক্ষন পর রাই এর ঠোঁট ছেড়ে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলো আবির
“এই নাম , এই পরিচয় আর এই (কোমরে হাত দিয়ে চেপে ধরে) আমিকে নিয়েই তোমাকে সারাটি জীবন বাঁচতে হবে……আর এই আমিটা তোমার সাথে এমনভাবেই মিশে গেছে যে (গালে গভীরভাবে চুমু এঁকে) তোমার থেকে আসা গন্ধটুকু তেও এই আমিটাকে তুমি খুঁজে পাবে….. ”
বলে উঠে আমাকে সোজা একটানে দাড় করিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেলো। অন্ধকার ঘরটায় আমি মোটামুটি অন্ধের মতই হেঁটে যাচ্ছি। ঘরে ঢুকেই আমাকে খাটের উপর ফেলে উনি আমার পাশে শুয়ে পড়লেন “বারান্দায় থাকার থেকে বেশি কষ্ট বোধহয় আমার পাশে থাকার তাইনা হলদেটিয়া?”
বলে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলেন উনি। আমি ছোটাছুটি করার চেষ্টাও করছি “দেখুন আপনি সবসময় এই ধরনের বাড়াবাড়ি করছেন। আমি কিছু বলছি না মানে এই না যে…..”
“হলুদ শাড়িতে খুব মানায় তোমায় ,,,,,হলদেটিয়া” উনি স্বাভাবিক কণ্ঠে বললেন।
হলদেটিয়া! শুনে বুকটা কেঁপে উঠলো। “আমি……”
আমার মুখ শক্ত করে চেপে ধরলেন আর বাকা হেসে বললেন
“ইনজয় দিস হেল …. রাই….” বলে আমার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলেন আর শাড়ির আঁচল শক্ত করে চেপে ধরলেন………
চলবে✨✨✨✨✨✨✨