Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-০১

0
9804

#Mr_সাইকো_লাভার(০১)
#লাবিবা_ওয়াহিদ

১.
শপিংমলে বাবার সাথে কথা বলতে বলতে চেঞ্জিং রুমের দরজা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখি একটা ছেলে আর মেয়ের অপ্রস্তুত ঘটনা। সেটা দেখে আমার চোখ ছানাবড়া। হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। আমি হা হয়ে চোখ গুলা রসোগোল্লার মতো করে তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। ফোন পড়ার আওয়াজে ছেলেটা মেয়েটা কে ছেড়ে দেয় আর মেয়েটা লজ্জায় আমায় পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমি এখনো কোনো এক ভ্রমে আছি। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বললো, “ওয়ায়ায়ায়াট!! এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

ছেলেটার কথা শুনে আমি ভেতরে ভেতরে রেগে শেষ। তবুও কিছু না বলে ফোন টা নিয়ে সেখান থেকে চলে আসি।

(আমি নিশা রহমান। সবাই নিশু বলে ডাকে।এবার এইচএসসি দিয়েছি। সখের ভার্সিটিতে পড়তে ঢাকা এসেছি। আমার বাড়ি চাঁদপুর। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। আর বাকিসব আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।)

আমি- হ্যা বাবাই বলো।

বাবাই- কি হয়েছিলো তোর কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?

আমি- আরে না বাবাই তেমন কিছু না এমনি ফোন হাত থেকে পড়ে গেছিলো।(ওই শালার কর্মকান্ডের জন্য আমায় বাবাই কে মিথ্যা বলতে হচ্ছে যত্তোসব)

বাবাই- ওহ আচ্ছা তাহলে ভালো থাকিস কেমন? টাকা লাগলে ফোন দিবি তোর একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিবো।

আমি- ওকে বাবাই তুমি একদম চিন্তা করিও না আম্মুকে আমার সালাম দিও।

বাবাই- তা তো অবশ্যই যাইহোক এখন ফোন রাখি পরে কথা হবে আর তুই শপিং কর এখন ৪০ হাজার পাঠিয়ে দিয়েছি।

আমি- এতো টাকা দিসো কেন? আমায় কি তোমার শপিং পাগলি মনে হয়?

বাবাই- না তো আমি বেশ ভালো জানি তুই আমার কিপটা মেয়ে।

আমি- বাবাই আবার কিপটা বলছো? টাকা সেভ করা কি কিপতামি?(গম্ভির সুরে)

বাবাই- না তবে সেভ করে লাভ কি? আমার কি টাকার অভাব পড়েছে যে তুই সেভ করবি?

আমি- আচ্ছা রাখো আজ ৫০ হাজারের শপিং করে দেখাবো।

বলেই কল কেটে দিলাম। মাথায় রক্ত উঠে আছে। একেতো বাবাইয়ের খোঁচানি আবার এইদিকে ওই বেয়াদবের কার্যকলাপ। আবার আমায় ডাইরেক্ট “তুমি” করে বলা। ভাই রে ভাই এ কেমন ছেলে একটা অচেনা অজানা মেয়েকে কেমনে ডাইরেক্ট তুমি করে বললো? উফফফফ কি যে লাগছে মন চাচ্ছে চাপায় কয়েকটা থাপ্রানি দিয়ে আসি। ফালতু পোলাপান!

ভেবেই গেলাম লিফটের সামনে। লিফটের বাটন টিপতে যাবো দেখি পাশের ছেলেটাও আমার মতোই বাটনই টিপতে গেলো। মানে দুইজন একসাথে! পাশে তাকাতেই দেখি সেই বেয়াদব ছেলেটা। সে আমায় দেখে হয়তো কিছু টা অবাক হয়েছে। উফফফফ আবার কেন এর মুখোমুখি হলাম???

– Hey আবার দেখছি তোমার সাথে দেখা।(হেসে)

আমি ছেলেটার দিকে একবার তাকিয়েই চোখ নামিয়ে সামনের দিকে তাকালাম আর বাটন চাপলাম। লিফট আসতেই ঢুকে পড়ি সাথে বেয়াদব টাও। বেয়াদব টা ৯ এ চাপে আমি টপ ফ্লোরে চাপি। তারপর লিফটের দরজা অফ হয়ে যায়। লিফটে আমরা দুজনই আছি। টাইম কাটাতে ফোন ইউজ করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। হঠাৎ লিফটের আয়নার দেয়ালে চোখ যেতেই দেখলাম ছেলেটা আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। তার তাকানো দেখে লিফট ডোরের উপরের দিকে তাকালাম এবং দেখলাম প্রায় ৯ নং ফ্লোর চলে এসেছে।আসলেই বাচি তাহলে এই বেয়াদব টা বিদায় হবে।

এমা ৯ম ফ্লোর আসলেও এই বেয়াদব টা বের হলো না কিন্তু কেন? জিজ্ঞেস করবো করবো ভেবে জিজ্ঞেস করেই বসলাম,

আমি- এই আপনি না ৯ম ফ্লোর দিলেন ৯ম ফ্লোর তো চলে এসেছে তো নামুন।

– থ্যাংক গড তুমি কথা বলেছো আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বোবা।

ছেলেটার কথায় রেগে বললাম,”কারো সাথে আজাইরা প্যাঁচাল করে টাইম ওয়েস্ট করি না আমি ওকে।”

বলেই লিফট থেকে বেরিয়ে শিড়ি দিয়ে উপরে গেলাম। কারণ লিফটে ওই বজ্জাত টায় আছে এর সাথে বকবক করার ইচ্ছা বা সময় কোনোটাই আমার নেই। উফফফ কেন যে আজ আসতে গেলাম না আসলে এর সাথে হয়তো দেখাও হতো না নিজেরও কোনো রকম প্যারা থাকতো না অসহ্য।

ভেবেই টপ ফ্লোরের “Galaxy Coffee Park” রেস্টুরেন্টে ঢুকে বেস্টু আনিলার সামনে গিয়ে বসলাম। আনিলা আর আমি মিলেই ঢাকা এসেছি এক ভার্সিটিতে পড়তে। আমরা ছোট থেকে সবসময় একসাথে।

আনিলা- কি রে এতোক্ষণ লাগে আসতে? তোরে বলসি ১০মিনিটে আসতে আর তোর কি না আসতে ৪০মিনিট লাগলো? ওয়াই ওমেন ওয়াই??

আমি- দেখ আজাইরা প্যাঁচাল করার সময় নাই মেনু দে।(রেগে)

আনিলা- ওরে বাস আজ এতো হাইপার কেন বইন? কিছু হয়েছে নাকি?

আমি- কি হয়নি সেটা বল যখন থেকে আসছি এক বেয়াদব ছেলের মুখোমুখি হয়েছি।

আনিলা- কে? দেখতে কেমন? স্মার্ট না উইক?

আমি- উফফফফ এই জন্যই তোরে আমার সহ্য হয়না। সিরিয়াস মোমেন্টে সবসময় মাথায় বাড়ি মারিস।

আনিলা- আচ্ছা সরি আর রাগ করিস না প্লিজ বল কি হয়েছে।

আমি- শুঁটকি মাছের ঘি হয়েছে এবার তো মেনু দে?

আনিলা মুখ গোমড়া করে খাবারের মেনুলিস্ট টা দিলো। আমি তো আমার ফেভারিট লাচ্ছি আর চিকেন শর্মা অর্ডার দিয়েছি। অর্ডার না আশা পর্যন্ত ফোনে ফ্লাট চেক করছি। এখন আপাততের জন্য খালামনির বাসায় উঠেছি। ফ্লাট পেলে আমি আর আনিলা মিলে সেখানে থাকবো। ফ্লাট বুকিং ওয়েব সাইটে গিয়ে একে একে দেখছি কিন্তু মন মতো পাচ্ছি না। এমন জায়গায় চাচ্ছি যেখানে আমার রুমের বেলকনি থেকে একটা সুন্দর ভিউ দেখা যাবে। খুঁজতে খুঁজতে একটা ভালো মানের ফ্লাট পেয়েছি। সেটা আনিলাকে দেখাতেই সেও পছন্দ করে ফেলে। ফ্লাট এ ৪ রুম,এক টা কিচেন কিচেনটাও একটা রুম সমান। আর প্রতি রুমেই এডজাস্ট ওয়াশরুমম, দুই রুমে এডজাস্ট বেলকনি, আর একটা বিরাট ড্রয়িংরুম। তাই আমি আর দেরি না করে বুকিং দিয়ে দিলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ডার চলে আসে। দুজনে গল্প করতে করতেই খাওয়া শেষ করলাম। তারপর চলে গেলাম শপিং করতে। এক এক করে ড্রেস দেখতে লাগলাম। একটাও পছন্দ হচ্ছে না শেষে কয়েকটা পছন্দ হলেই কাউন্টারে চলে যাই বিল পে করতে। সেখানে আবারও বজ্জাত টার সাথে দেখা। এবার রাগ চরম মাত্রায় চলে গেলো।

– এই তুমি কি আমার পিছু করছো নাকি?

আমি- আমার ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনার পিছু নেওয়ার। আপনার কথায় তো মনে হচ্ছে আপনি আমার পিছু নিচ্ছেন।(চোখ গরম করে)

– এই তুমি কি সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারো না জম্মের পর মধু খাওয়াতে কি ভুলে গেসিলো তোমার মা বাবা?

আমি- না আমায় মধু না আস্ত মানুষের মাথা খাইয়েছে হইসে? এখন চোখের সামনে থেকে সরেন যত্তোসব।

– শপিং মল টা কি তোমার বাবার? এখানে যে যা ইচ্ছা করবে তাতে তোমার এতো হাইপার হওয়ার আছে স্ট্রেঞ্জ।

আমি- আপনি…..

আর কিছু না বলে অন্যদিকে চলে আসলাম। কথায় কথা বাড়ে আর এই ছেলেটা তো একেবারে পায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসছে। যত্তোসব ফাউল পোলাপান।

– ম্যাম আপনার এই ড্রেস গুলো প্যাক করে দিবো?

আমি- হুম আমি এখানে আছি আপনি এগুলা প্যাক করে বিল বলুন আমি পে করে দিবো।

– ওকে ম্যাম ওয়েট।

বলেই মেয়েটা আমার হাত থেকে ড্রেসগুলো নিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ড্রেস গুলো শপিং এ করে আনে আমি মেয়েটার সাথে যাই এবং বিল পে করে দেই। তারপর আনিলা কে নিয়ে খালামনির বাসায় চলে আসি। আমি আসতেই রাইসা “আপ্পুউউউ” বলে দৌড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে। রাইসা আমার খালামনির একমাত্র মেয়ে। বয়স ৮ বছর ২য় শ্রেণিতে পরে।

আমি রাইসাকে ছাড়িয়ে হাটু গেড়ে ওর সামনে বসে বলি, “কি করছিলে এতোক্ষণ হুম?”

রাইসা- মাম্মাকে না দেখে মুখস্থ কবিতা পড়ে শুনিয়েছি।

আমি- ওরে আমার দুস্টু পাখিটা এই নাও চকলেট।

বলেই ওর হাতে ডেইরি মিল্কের এক বড় বক্স এগিয়ে দিলাম। রাইসা খুশিতে আত্নহারা হয়ে বক্সটা নিয়ে ভেতরে চলে যায় খালামনিকে দেখাতে। ওর খুশি দেখে আমি আর আনিলা হেসে ভেতরে চলে গেলাম।
,
,
,
,
,
চলবে!!