Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-০৪

0
5899

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ০৪”
,
,
নিশু আর আনিলা নাস্তা সেরে সকলকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলো নিজেদের ফ্লাটের দিকে। রাইসাদের বাসা থেকে গাড়ি করে গেলে ৩০ মিনিটের পথ। দুজনে ফ্লাটে এসে সব গোছগাছ করতে শুরু করে। সারাদিনে পুরো ফ্লাট দুজন মিলে সাজায় সাথে হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কিছু লোক সাহায্য করে। খাবার বাইরে থেকে অর্ডার করে কারণ এতো কাজের মাঝে রান্না করাটা অনেকটাই মুশকিল। রাতে আর পারেনা দেখে দুজনেই যে যার রুমে ক্লান্ত হয়ে এক গভীর ঘুম দেয়। সকালে উঠে খাওয়া সেরে আবার কাজে লেগে পড়ে। একেবারে দুপুরে গিয়ে পুরো ফ্লাট সাজানো কমপ্লিট হয়।

আনিলা- থ্যাংক গড সব কাজ শেষ হলো। আমার তো করুণ অবস্থা হয়ে গেছে রে। ইসস দম শেষ আমার।

নিশু- আমারও একই অবস্থা। জীবনেও এতো কাজ করিনাই। আচ্ছা এখন খাবারের কি হবে?

আনিলা- বাইরে থেকে আনাতে হবে। রাধার মতো শক্তি বা সময় কোনোটাই নাই। কাজ করে করে সব এনার্জি শেষ।

নিশু- আচ্ছা দেখি।

বলেই নিশু কল করে খাবার অর্ডার দিয়ে দেয়। অর্ডার দেওয়া শেষ হতেই নিশুর আম্মুর কল। নিশু তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করলো,

নিশু- হ্যালো আম্মু।

আম্মু- হুম কেমন আছিস মা?

নিশু- এইতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আম্মু তুমি কেমন আছো?

আম্মু- আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আনিলা কেমন আছে?

নিশু- হ্যাঁ ভালো কি করছো?

আম্মু- খাওয়া দাওয়া করে বসলাম তুই?

নিশু- ফ্ল্যাট গুছালাম।

আম্মু- খাস নি?

নিশু- না আম্মু রান্নার সময় পাইনি তাই বাইরে থেকে অর্ডার করেছি। কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে।

আম্মু- ও আচ্ছা কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো সেখানে? এতো দূরে যাওয়ার কোনো মানে ছিলো নিশু শুধু শুধু সারাদিন তোদের নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।

নিশু- ওহ কাম অন আম্মু চিন্তার কি আছে আমরা তো বেশ ভালোই আছি। আর আমাদের সখ হয়েছে তাইতো ঢাকায় এসেছি পড়াশোনা করতে। দুনিয়ার আর কেউ কি পরিবার থেকে আলাদা হয়ে পড়ে না শুধু কি আমরা একাই পড়ছি?

আম্মু- সে যাই হোক সাবধানে থাকবি কোনো সমস্যা হলে তোর বাবাইকে বলে দিস সে তোর জন্য বডিগার্ড এর ব্যবস্থা করে দিবে।

নিশু- আমার বডিগার্ড এর দরকার নাই তুমি নিশ্চিন্তে থাকো আমরা ভালো থাকবো।

আম্মু- সেই যেনো হয়।

নিশু- আচ্ছা আম্মু এখন রাখো খাবার চলে এসেছে খেয়ে নেই।

আম্মু- ঠিক আছে তবে বাইরের খাবার কম খাওয়ার চেষ্টা করিস সবসময় হেলদি ফ্রুট আর ভেজিটেবলস খাবি সবসময় সুস্থ থাকবি।

নিশু- ওকে মেরি ডাক্তার মাম্মি আমার এই জ্ঞান আর ভালো লাগে না। তোমার হসপিটালের পেশেন্ট দের এই জ্ঞান দিয়ো।

আম্মু- তাদের তো দেয়ি সাথে নিজের মেয়েকেও দি। আর শুন সেখানে আমার এক ফ্রেন্ড আছে ড.ইয়াসা চৌধুরি। কোনো সমস্যায় পড়লে ওর সাথে যোগাযোগ করিস।

নিশু- আচ্ছা এখন বাই আম্মু ভালো থেকো।

আম্মু- বাই মাই চাইল্ড।

নিশু ফোন কেটে দিলো। ওহ আরেকটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি নিশার মা একজন ডাক্তার নাম ড.মাইশা রহমান। চাঁদপুর প্রাইভেট হসপিটালের একজন বড় ডাক্তার।

নিশু আর আনিলা একসাথে খেয়ে দেয়ে দিলো এক লম্বা ঘুম। এভাবেই দুইদিন কেটে গেলো। আজ শনিবার নিশু এবং আনিলার ভার্সিটির প্রথম দিন। দুজনে একসাথে রেডি হয়ে নিলো। তারপর বেরিয়ে গেলো। ভার্সিটি তাদের বাসা থেকে ১৫ মিনিটের পথ তাই দুজন হেটে হেটেই যাবে বলে ঠিক করে।

এইদিকে,

ফারান- মাম্মায়ায়ায়া?

মাম্মা- হ্যাঁ বল।

ফারান- আমি গেলাম আজ ক্লাস আছে।

মাম্মা- আচ্ছা ঠিক আছে যা কিন্তু তোর চেহারার এমন অবস্থা কেন?

ফারান হাত দিয়ে নিজের মুখ মুছে ভ্রু কুচকে বলে,”কোথায়?”

মাম্মা- আমি তোর মা ফারান আমার থেকে ভালো তোকে কেউ চিনবে না। তুই কি আবারও……

ফারান বলতে না দিয়ে বলে,”আরে না না এভ্রিথিং ইজ ফাইন। আচ্ছা লেট হয়ে যাচ্ছি আদ্র আদন ওদেরও আবার ড্রপ করতে হবে বাই মাম্মা।”

বলে একপ্রকার ফারানের মা ইয়াসাকে এড়িয়ে চলে গেলো। ফারানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছলো ইয়াসা।

ইয়াসা- জানিনা আমার ছেলেটা কবে আগের মতো ফিরে আসবে। আল্লাহ কবে আমার ছেলেটার দিকে তাকাবে তুমি আর কতো আমার ছেলেটাকে তিলে তিলে শেষ করে দিবে?

এভাবেই চুপচাপ কিছুক্ষণ ভেবে চলে গেলো রান্নাঘরের দিকে।
,
,
,
নিশু আর আনিলা ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে শান্ত দৃষ্টিতে ভার্সিটির দিকে তাকিয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। রোজ কতো স্বপ্ন বুনতো দুজনে এই ভার্সিটিতে পড়ার জন্য আজ তা পূরণ হতে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই নিশু আর আনিলা মিলে যেই ভার্সটিতে পা রাখবে ওমনি নিশুর পাশ কেটে একটা সাদা গাড়ি ভেতরে ঢুকে সাথে করে বিরাট গন্ডগোলও হয় তা হলো নিশুর ওড়নার কিছুটা অংশ মাটিতে পড়া ছিলো যা সেই গাড়িটার চাকার নিচে গিয়ে সাড়ে সর্বনাশ থেকে ১৮ সর্বনাশ হয়ে গেছে।

নিশু ওড়না টা ধরে টান দিতেই “টিইইইইই” শব্দ করে ছিড়ে গেলো। নিশু তো কেঁদে দিবে এমন অবস্থা। তারপর ওই গাড়িটার দিকে যেই অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাবে ওমনি দেখে কোনো গাড়ি নেই হাওয়া। নিশুর তো মন চাচ্ছে ওই গাড়িতে তরকারির ঝোল ফেলে গাড়িটাকে আর তার মালিককে আলু সেদ্ধ করে দিতে কিন্তু আফসোস! গাড়ি বা গাড়ির ড্রাইভার/মালিকের একটা সুতার চিহ্ন টাও নেই। নিশু রেগে ওড়না টাকে ছুড়ে ফেলে দিলো তারপর সেই ওড়না টাকে ফুটবলের মতো লাথি দিতে লাগে যেন সব রাগ ওড়না টার উপরেই ঝেড়ে ক্ষতম করে দিচ্ছে। নিশু হিজাব পড়ে থাকায় আর আলাদা ওড়নার প্রয়োজন পড়ে না। সবাই নিশুর এমন রাগ মেটানো দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। আনিলা তা দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে নিশুকে টেনে হিচড়ে ভেতরে নিয়ে গেলো।

নিশু- উফফফফ ওই ছেমড়ি তুই আমায় টেনে নিয়ে আসলি কেন?(রেগে)

আনিলা- তো কি করতাম পাবলিকের সামনে তোকে ছেড়ে দিতাম আর তোর কর্মকান্ড দেখে তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিবে?

নিশু এতোক্ষণে বাইরে খেয়াল করে অনেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে কিসব বলছে কানাকানি করছে। নিশু সেসব দেখে জিবহায় কামড় দিলো।

নিশু- ইসসসস এমন রাগ উঠেছিলো আশে পাশে খেয়ালই ছিলো না।

আনিলা- হুম তোর এই রাগের জন্যই ভার্সিটি ঢুকতে না ঢুকতেই লজ্জায় পড়তে হইসে।

নিশু- তো আমার কি দোষ ওই ধলা গাড়িটাই তো আমার ওড়নার ১২টা বাজিয়েছে। ওই শালারে যদি পাই না দেখিস আমি কি হাল করি ব্যাটার শালা।

আনিলা- আচ্ছা আচ্ছা বাদ দে সেসব এখন চল দেখ ওখানে একটা নোটিশ বোর্ড টাঙানো সেখানে নিশ্চয়ই কোম ডিপার্টমেন্ট কোথায় সেটা দেওয়া আছেম

নিশু- হুম চল গিয়ে দেখি।

তারপর দুজন মিলে যেতে নেয়। সেদিক দিয়েই এক মেয়ে এত্তো গুলো বই নিয়ে যাচ্ছিলো তার সাথে নিশু ধাক্কা খায় সাথে বই গুলোও পড়ে যায়। নিশু সরি সরি বলে মেয়েটাকে বই গুলো উঠিয়ে দিতে সাহায্য করতে লাগলো। মেয়েটা বলে,”না না সমস্যা নেই আসলে আমিই খেয়াল করিনি।”

নিশু- না কোনো ব্যাপার না কিন্তু এতো গুলো বই একা কেন উঠালে?

মেয়েটা- ওটা আজই করেছি লতা ম্যাম নিয়ে যেতে বলেছে তাই কিন্তু তোমাদের তো আগে কখনো এখানে দেখিনি নতুন নাকি?

নিশু- হুম আজই নতুন এসেছি আমরা।

মেয়েটা- ওহ ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড আমরা পিরিচিত হতে পারি?

নিশু- হ্যা শিউর। আমি নিশা আর এ হলো আমার বেস্টফ্রেন্ড আনিলা।

মেয়েটা- অও নাইস নেমস। আমি রিদি।

নিশু- ওয়াও তুমি কোন ক্লাস?

রিদি- অনার্স প্রথম বর্ষ হয়তো তোমাদের সাথেই।

নিশু- হুম আমরা কমার্স গ্রুপ।

রিদি- ওয়াও আমিও কমার্সে আছি। আচ্ছা আমি বই গুলো ম্যাম কে দিয়ে লাইব্রেরি তে দ
দিয়ে আসি তোমরা এক কাজ করো থার্ড ফ্লোরের ওই ক্লাসে যাও ওইটাই আমাদের ক্লাস।

নিশু- ওহ থ্যাংকস। বাট আমার মনে হয়না তুমি একা পারবে আমাদের দাও আমরাও হেল্প করি।

আনিলা- হ্যাঁ নিশু ঠিক বলেছে আমরাও হেল্প করি।

রিদি- ওকে থ্যাংকস আসো।

তারপর ৩জন বই ভাগাভাগি করে লাইব্রেরির দিকে চলে যায়। এইদিকে ফারান গাড়ি পার্ক করে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছিলো হঠাৎ পাশে দিয়ে যাওয়া দুটো মেয়ের কথা শুনতে পেলো। কথা গুলো ছিলো,”দেখেছিস ওই মেয়ে কিভাবে ওড়নাকে ফুটবলের মতো লাথি দিচ্ছিলো।”

অপর জন- যা বলেছিস তখন মনে থাকলে তো ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিতাম।

এগুলো বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো। কিন্তু ফারান,আদ্র,আদন তাদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলো না।

ফারান- কি হয়েছে?

আদ্র- নো আইডিয়া।

আফনাদ- আই থিংক আমি জানি আই মিন গেস করতে পারছি।

ফারান- কি?

আফনাদ- তোর গাড়ির চাকায় একটা মেয়ের ওড়না চলে এসেছিলো সেই মেয়ের কথাই মেয়বি। বাট মেয়েটার চেহারা দেখতে পাইনি।

আদন- ওহ মাই গড ইট’স ট্রু?

আফনাদ- ১০০%

ফারান- আচ্ছা বাদ দে ক্যাম্পাসে চল।

আফনাদ- ওকে।

তারপর ৪জন হিরোর মতো বেরিয়ে আসে পার্কিং সাইড থেকে। ৪জন কে দেখে তো মেয়েরা ঘিরে ধরে ওদের আর চেঁচামেচি লাগিয়ে দেয়,”হাউ কিউট,ওহ মাই গড,ফারান লুক এট মি ব্লা ব্লা ব্লা” আরও অনেক কিছু বলে। ফারান জাস্ট একটা টেডি স্মাইল দেয়। মেয়েদের হঠাৎ এমন চেঁচামেচি শুনে নিশু আর আনিলা দুজন দুজনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো।

নিশু- কি হচ্ছে রে এমন চেঁচামেচি কেন?

আনিলা- নো আইডিয়া।

তারপর দুজন লাইব্রেরির এক জানালা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো কি হচ্ছে নিচে যার জন্য মেয়েদের এমন মাথা ব্যথা করার মতো চিল্লানি। নিচে তাকিয়ে দেখে ৪টা ছেলে মাঝে আর তার চারদিক ঘিরে রয়েছে মেয়েরা। তাদের চেহারা দেখতে পারছে না শুধু পেছনের সাইটই দেখা যাচ্ছে।

আনিলা- কে রে এই ৪জন যার জন্য মেয়েরা এমন তাদের ঘিরে রেখেছে? কোনো সেলিব্রিটি নাকি?(খুশি খুশি মনে)

নিশু- রাখ তোর সেলিব্রিটি এইসব মেয়েরা ওদের চামচামি করে বেড়ায়। আর মেয়ে গুলারও লজ্জা শরম বলতে কিছু নাই। কোন না কোন ক্ষত রে দেখসে এতেই লাফানি শুরু করসে যত্তোসব ফাউল পোলাপান।

নিশুর কথা শুনে আনিলা ভেংচি কাটে। নিশুও ডোন্ট কেয়ার ভাব নেয়। এমন সময়ই পেছন থেকে রিদি বলে,”কি হলো তোমরা এখানে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ক্লাসে যাবে না?

নিশুকে বলতে না দিয়ে আনিলা বলে,”এখান দিয়ে ৪টা ছেলে যাচ্ছিলো সাথে অনেক মেয়েরা ঘিরে ধরেছিলো কিন্তু কেন? এরা কে?#

রিদি- ওহ ওরা তো ফারান,আদ্র,আদন আর আফনাদ।

নিশু ভ্রু কুচকে বলে,”এরা কে?”

রিদি- ওরা এই ভার্সিটিতেই মাস্টারস পড়ছে। আর ওরা গান গায় ওদের গান গুলো অনেক হিট বিশেষ করে ফারানের তাই সবাই চিনে সেলিব্রিটি হিসেবে।

আনিলা- অওওওওও তাহলে তো দেখতে খুব কিউট কিউট হবে।

রিদি- কিউত তো বটেই। ওদের জন্য পাগল না এমন মেয়ে একটাও নাই। কেন দেখো নাই তোমরা।

আনিলা- না দেখতে পারিনি সামনের দিকে যাচ্ছিলো তাই।(মুখ গোমড়া করে)

নিশু- আরে রাখ তোর দেখাদেখি কি শুরু করেছিস তুই? সেলিব্রিটি বলে কি মানুষ না? এতো লাফালাফির কি আছে বুঝলাম না। আর রিদি ওদের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই বুঝলা এখন চলো তো ক্লাসে লেট হয়ে যাচ্ছে।

রিদি- আচ্ছা চলো।

তারপর ৩জন চলে গেলো। নিশুর এইসব কথা একজন শুনতে পায় এবং সে সেই কথা টা নিয়ে কানাকানি শুরু করে দিলো।
,
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!