#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ(আয়াত)
“বোনাস – পার্ট(০৫)
.
.
ফারান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুসছে আর আদ্র আদন এবং আদনাদ চুপচাপ ফারানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারান রেগে চিল্লিয়ে বলে,
ফারান- কোন মেয়ের সাহস হলো এই ফারান চৌধুরিকে ক্ষেত বলার? কখনো কি আমার লেভেলে আসতে পেরেছে সে যার কারণে আমায় ক্ষেত বললো?
আদন- ফারান প্লিজ কুল কাকন্ট্রোল ইউরসেল্ফ চিন্তা করিস না আমি খোঁজ নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
ফারান- কুইক ওই মেয়েকে আনার সামনে হাজির কর সময় ৩০মিনিট।
ফারানের কথা শুনে আদন চলে যায় খোঁজ নিতে। আর ফারান চুপচাপ রাগে ফুসতে থাকে। কখনো কেউ তার ব্যাপারে কিছু বলার সাহস পায়নি আর আজ কি না কোন মেয়ে তাকে ক্ষেত বললো ভাবতেই ফারানের গা জ্বলে যাচ্ছে।
নিশা সবে ক্লাস সেরে ক্লাস থেকে বেরোলো। আজ তার অনেক খুশি লাগছে কারণ নিশার রেজাল্ট নিয়ে ম্যাম অনেক প্রশংসা করেছে। নিশা রিদি আর আনিলার সাথে কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলো ওমনি ৫জন ছেলে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো আর তাদের মাঝে আদন। রিদি তো ঠিকই চিনে ফেলে আদনকে কিন্তু আনিলা বা নিশা চিনতেও পারে না আর কিছু বুঝতেও পারছে না।
নিশা- আমাদের পথ আটকালেন কেন?
আদন কিছু না বলে নিশার হাত ধরে টেনে হিচড়ে নিয়ে যেতে লাগে। নিশা কিছু বুঝতে না পেরে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগে আর বারবার বলতে লাগে,”সমস্যা কি আপনার আপনার সাহস তো কম না আমার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছেন আব্বে ওই লুইচ্চা পোলা।”
“লুইচ্চা পোলা” শুনতেই আদন থেমে নিশার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়। আর নিশা আদন কে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দেয়। আদন নিশার হাত ছেড়ে গালে হাত দিয়ে অসহায়ের মতো নিশার দিকে তাকালো। বেচারা ভাবতেই পারেনি নিশা ওকে চড় মারবে। নিশা তো চোখ রাঙিয়ে বলা শুরু করে,”মেয়েদের হাত ধরে ছ্যাসড়ামি করার আগে এই চড়টার কথা মনে করবেন তাহলে আর জীবনেও কোনো মেয়ের হাত ধরার আগে ১০ বার ভাববেন। বেয়াদপ পোলাপান! ভার্সিটি তে কি মাস্তানি গিরি কিভাবে করে সেটা শিখায় নাকি মেয়েদের সাথে অসভ্যতামি কিভাবে করে সেটা শিখায় আপনাদের? পড়তে আসছেন পড়বেন আবার বাসায় চলে যাবেন এর মধ্যে এর ওর হাত পা ধরেন টানেন ধিক্কার জানাই আপনাদের কর্মকান্ডে।”
বলেই আদনের পাশ কাটিয়ে রিদি আর আনিলাকে নিয়ে চলে যায়। আর বেচারা আদন গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে আর নিশার করা অপমান হজম করার চেষ্টা করছে। আশেপাশের মানুষজন তো সব একাকারে দেখেই গেলো আর এতো বড় হা করে দেখলো যে একটা হাতি গিলে খেতে পারবে।
নিশা আনিলা আর রিদিকে নিয়ে কেন্টিনে চলে আসে। নিশা এক চেয়ারে বসতেই ওয়েটারকে ডাক দেয় আর নিজের জন্য লাঞ্চ অর্ডার দেয় এবং আনিলাও অর্দার করে। রিদি তো গালে হাত দিয়ে আনমনে ভাবছে। রিদির এমন চুপচাপ নিশা বা আনিলা বুঝতে পারেনা।
নিশা- কি রে মুখ তালা লাগিয়ে বসে আছিস কেন?
রিদি- তো কি করবো? তুই জানিস তুই কাকে থাপ্পড় দিয়েছিস?আদনকে। আদন ফারানের বেস্টফ্রেন্ড। কখনো কেউ তাদের মুখের উপর দিয়ে কোন কথা বলার সাহস পায়নি আর আজ তুই তাকে থাপ্পড় দিলি লাইক সিরিয়াসলি?
নিশা- ওরা কুমড়া হোক বা বেগুন হোক তাতে আমার কি? ভার্সিটিতে মাস্তানি করবে তাও আমার সাথে আর আমার মুখ হাত পা থাকতেও প্যারালাইজড থাকবো এটা কোন রুলস?আমার সাথে লাগতে আসলে এমনই হবে। আরও করলে আরও দিবো ওরা চিনে না আমাকে।
রিদি- ওরা চাইলে তোর হাত ভেঙ্গে হসপিটালের বেডে শুইয়ে দিতেও এক পা নড়বে না। আর তুই সেই তাদের সাথে লেগেছিস। আমার তো ভয় লাগছে না জানি কি করে ওরা।
নিশা- রাখ তো ওদের বাপের খাই না পরি যে ভয় পাবো?তুই তোর ভয় নিয়ে থাক আমি থাকবো আমার মতো।
আনিলা- বাট রিদি তো ঠিকই বলেছে। দেখ আমরা নতুন আমাদের সাথে যেকোনো কিছু হতে পারে। তবে আমাদের না হলেও তোর কিছু যদি হয় আমি আঙ্কেল আন্টিকে কি বলবো? তাই বলি সাবধানের মার নেই এদের সাথে যে ছে লাগতে যাওয়া ঠিক হবে না।
নিশা- রাখ তোর জ্ঞান। তোরে হাজার বলসি আমার জ্ঞান নেওয়া দেওয়া একদম পছন্দ না। ওরা আমার কিছুই করতে পারবে না তাই চুপচাপ খাওয়া শুরু কর।
রিদি আর আনিলা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারে না তাই আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেতে শুরু করে।
এইদিকে,,
আদন গালে হাত দিয়ে তাদের আড্ডা খানায় ফিরেছে। আদন একা দেখে ফারান রেগে বলে,”কিরে ওই মেয়ে কই? একা আসছিস কেন? বললাম না যেভাবেই হোক ওই মেয়েটাকে আমার সামনে নিয়ে আসবি।”
আদন- আনতেই তো চাইছিলাম কিন্তু ওই মেয়ে উল্টা আমায় চড় মেরে চলে যায়।
আদ্র,আফনাদ,ফারান একসাথে- ওয়ায়াট!!!! ওই মেয়ে তোকে চড় মেরেছে??????
আদন গালে হাত দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
আদন- শুধু চড় না এতো গুলা মানুষের সামনে আমায় কেরেক্টারলেস বলে অপমান করেছে।
আদ্র- কি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা।
আদ্রর কথা শুনে ফারান আদ্রর দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তাতে আদ্র ভয়ে চুপসে যায়।
ফারান- ওই মেয়ের তো ভালোই সাহস যে আমাদের সাথে লাগতে এসেছে। এখন মেয়েটা কোথায় আছে সেখানে যাবো আমরা একসাথে দেখি কি করতে পারে ওই মেয়ে চল।
সবাই মাথা নাড়িয়ে ফারানের পিছে পিছে চলে আসে। ফারান বেরোতেই নওমি এসে ফারানকে জড়িয়ে ধরে। আর আদ্র আদন আফনাদ রেগে এদিক ওদিক তাকায়। কারণ ওদের ৩জনের একজনেরও নওমিকে পছন্দ না।
নওমি- হাই বেইবি আই মিস ইউ।
নওমিকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে ফারান হাসার চেষ্টা করে বলে,”মিস ইউ টু বেইবি। তা আজ না বলেছিলে ভার্সিটি আসবে না?”
নওমি- বলেছিলাম তো কিন্তু আজ পার্লারের অফ ডে তাই কি করার চলে আসলাম তোমার সাথে দেখা করতে।
ফারান ভেতরে একটা বিরক্তিবোধ করলেও উপর দিয়ে হাসি দিয়ে বলে,”হুম ভালো করেছো এখন বাই বিকালে ক্যাফেতে এসো সেখানে মিট করবো।”
ফারান আর নওমির ভাব দেখে আদ্র আফনাদের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,”আচ্ছা এই আলগা ময়দা মাখা মেয়ের সাথে কেমনে ফারান রিলেশনে গেলো বল তো?”
আফনাদ- আমি কি জানি আর আমার জানা মতে ফারান বেশ ভালো করে জানে এই মেয়ে ফুল কেরেক্টারলেস তবুও কিভাবে এরে সহ্য করে?
আদন- পাগলা কুত্তায় কামড়াইলে যা হয় আর কি এখন চুপ যা ফারান শুনলে আমাদের বাশ দিবে।
আদ্র- আরে ধুর রাখ তোর বাশ! এই মেয়েরে বাশ দিতে পারলে খুশি হতাম কিন্তু ওই ফারান টার জন্য পারিনা দিতে। বিলিভ মি এই মেয়েরে যদি ফারান বিয়ে করে না আমি সত্যি সত্যিই সুইসাইড করবো।
আদন- যে সামান্য ইঁদুর রে ভয় পায় সে আবার সুইসাইড করবে হাসালি।।
আদনের কথায় আদ্র মুখ গোমড়া করে ফেলে। এবার আফনাদ বলে,”আমার মনে হয়না বিয়ে পর্যন্ত এগোবে দুইদিন পর দেখিস লাথি মেরে বের করে দিবে। তাই ধৈর্য ধর।”
আদ্র- তাই যেনো হয়।
নওমি- কেন এখন গেলে কি প্রব্লেম বেইবি?
ফারান- কিছু ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে যেতে হবে।
নওমি- অও ওকে বেইবি আই উইন ওয়েটিং ফর ইউ।
বলেই ঢং করে ফারানের গালে হাত দিয়ে চলে গেলো। নওমি যেতেই ফারান টিস্যু দিয়ে গাল ঘষাঘষি লাগিয়েছে। গাল ঘষার কারণ নওমি ফারানকে টাচ করেছে। ফারানের কান্ডে আদ্র,আদন,আফনাদ অবাক হয়ে যায়।
আদ্র- কি রে যারে বেইবি বেইবি বইলা পিরিত উতলাইয়া ফেলাস এখন এমন টিস্যু দিয়ে গাল ঘষোস কেন?
ফারান- ডাস্টবিনের ময়লা কেন আমার গালে থাকবে তাই পরিষ্কার করছি। আর বেইবি বলি সেটার কারণ আছে।
আদ্র- তুই তাহলে নওমিকে ডাস্টবিনের ময়লা বলছিস?(অবাক হয়ে)
ফারান- তো আর কি বলবো?
আদন- কবে থেকে এই চিন্তা করিস।
ফারান- যবে থেকে এরে দেখসি।
আদ্র- তাহলে রিলেশনে গেছিস কেন?
ফারান- প্রুভের জন্য। যাইহোক বাদ দে এতো প্রশ্ন করে মাথা খাস না।
বলেই ফারান কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেলো। আদ্র,আদন আর আফনাদ সেখানে দাড়িয়েই হা হয়ে আছে। কোন প্রুভের কথা বললো সেটাই বুঝতে পারছে না। তারপর আর কিছু না বলে ফারান যেদিকে গেছে ওরাও সেইদিকেই চলে যায়।
,
,
,
,
চলবে!!