Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-০৭

0
6253

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ০৭”
.
.
.
এইদিকে,,

নিশা- পাইসে কি ওই লেম্বুস এ? অলয়েজ আমার পিছেই লাগে। এরে তো বুড়িগঙ্গায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া উচিত যত্তোসব। এরে পারলে আজ মেরেই ফেলতাম শালা।

এগুলো বলতে বলতেই লাইব্রেরি থেকে একটা বই নিয়ে বাইরে চলে আসে। তারপর বাইরে এসে ভার্সিটির বাগানের একটা গাছের নিচে বসে মন দিয়ে সেই বই টা পড়তে থাকে। এভাবেই ১ঘন্টা চলে যায়। নিশা সময় দেখে উঠে বেরিয়ে গেলো বাগান থেকে। এভাবে হাটতে হাটতে চলে আসে হল রুমের দিকে। সেখানে ফারানের গ্যাং নিউ দের র‍্যাগিং করছে। নিশার পানির তেষ্টা পেতেই হাতে থাকা বোতল টা খুলতে লাগে বোতল এর মুখ টা খুলে যখনই খেতে নিবে উষ্টা খেয়ে পড়ে যায় আর বোতলের পানি ফারানের মুখে গিয়ে পড়ে। ফারান চোখ বন্ধ করে নেয়। আর আশেপাশের সব হা করে ফারানের দিকে চেয়ে আছে। ফারান তো রেগে বোম। ডান হাত দিয়ে পানি মুছে চোখ মেলে সামনের দিকে তাকায়। দেখে নিশা পড়ে আছে।

নিশা- উফফফফ এখানে এই পাইপ ছিলো খেয়ালই তো করিনি। পড়ে গিয়ে পায়ের অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে আর হাটু টা জ্বলছে হয়তো ছিলে গেছে। কোনোরকম ভাবে বাসায় যেতে পারলেই শান্তি।

বলেই আস্তে ধীরে উঠে। সামনে তাকিয়ে দেখে ফারান রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিশা কিছু বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলতে লাগে,”কিচ্চে এমন শকুনের মতো তাকিয়ে আছেন কেন?”

এবার ফারান আরো রেগে গেলো। তারপর নিশার দিকে এগিয়ে নিশা সাইডে থাকা ওড়না টেনে মুখ মুছতে লাগে। আর নিশা ওড়না টানাটানি করে বলে,”আরে আরে হচ্ছে কি আবার আমার ওড়না নষ্ট করতাসেন! কাল আপনার ওড়না নষ্ট করে শান্তি হয়নাই?আমার ওড়না নষ্ট করার মিশনে নামসেন নাকি আপনি ফাজিল পোলা!”(রেগে)

ফারান নিশার কোনো কথায় কান দিলো না। সে ওড়না দিয়ে মুখ মুছে ইচ্ছা করে নিশার ডান পায়ে পাড়া দিয়ে আগের জায়গায় চলে গেলো। নিশা তো “আম্মুউউউউ” করে উঠলো। তারপর রাগী দৃষ্টিতে ফারানের দিকে তাকালো যেনো চোখ দিয়েই ফারান কে কাচা গিলে খাবে।

নিশা- আপনার ওই চেয়ারের কসম করে বলতাসি যদি রাক্ষস থাকতো সত্যি সত্যিই তার খাচায় খাদ্য হিসেবে আপনায় দিয়ে আসতাম।(রেগে)

ফারান- আর মরিচের হাত পা ইয়া বড় মুখ থাকলে আমি তোমাকে সেখানে ফেলে আসতাম তখন মরিচ তোমায় কাচা চিবিয়ে খেতো।

নিশা- পায়ে পড়ে ঝগড়া করা পাবলিক ভার্সিটিতে আসছে মাস্তানি করতে।

ফারান- আমরা মাস্তানি করি বা যাই করি তাতে তুমি তোমার লম্বা নাক টা অলয়েজ ঢুকাতে আসো কেন? অলয়েজ গ্যাঞ্জাম না লাগালে শান্তি হয়না তোমার?

নিশা- আমার ঠ্যাকা পড়ে গ্যাঞ্জাম লাগানের। লাগান তো আপনিই শুধু শুধু আজও আমার ওড়না টা নষ্ট করে দিসেন। এই ২ ওড়না কি আপনার বাপে এসে কিনে দিয়ে যাবে?(রেগে)

ফারান- আমার গায়ে পানি ফেলার আগে মনে ছিলো না? আর খবর দার বাপ নিয়ে কথা বলবা না।

নিশা- নেগেটিভলি বলিনাই জাস্ট বলসি আমার ওড়না কিনে দেওয়ার কথা।

আদন- দেখছিস কোন ক্ষেত থেকে উইঠা আসছে আবার তোরে ক্ষেত বলসে।

বলেই আদন হাসতে হাসতে লাগে সাথে ফারান, আদ্র আর আফনাদও। নিশা তো রেগে আগুন হয়ে যায় তারপর নিজের রাগ কান্ট্রোল করে দাত কেলিয়ে বলে,

নিশা- ছাগলের গলায় মুক্তোর মালা বুঝেন? আপনার অবস্থাও তাই।

আদন- কি বললা আমি ছাগল?(রেগে)

নিশা- নিজের প্রশংসা নিজের মুখে করতে নাই বুঝলেন? আর বেশি বাড়াবাড়ি করলে আরেকটা চড় ফ্রি তে পাবেন।(রেগে)

ফারান- হাউ ডেয়ার ইউ তোমার সাহস কেমনে হয় আমার সামনে আমার কলিজার টুকরা বেস্টফ্রেন্ড কে থ্রেড দেওয়ার।

নিশা- এতোই যদি কলিজা হয় তাহলে কলিজার ভিত্রে ঢুকিয়ে রাখেন রাইরে ৪ হাত দূরে রাখসেন কেন যত্তোসব।

বলেই সামনে যেতে লাগে ওমনি ফারান বলে,”দাঁড়াও।”

ফারানের কথায় নিশা দাঁড়ায় এবং ফারানের দিকে ফিরে। তখনই আদ্রর হাত থেকে বোতল টা নিয়ে সব পানি নিশার দিকে ছুড়ে মারে।

ফারান- হুম এখন যেতে পারো শোধ কমপ্লিট।

নিশা চোখ বন্ধ করে রাগে ফুসছে। তারপর হাত দিয়ে মুখ মুছে চোখ খুলে কিছু না বলেই চলে যায়। ফারান সহ ৩বন্ধু হেহে করে হাসতে থাকে। নিশা ক্লাসে গিয়ে নিজের ব্যাগ নিবে ওমনি আনিলা আর রিদি নিশাকে ঘিরে ধরে।

রিদি- কি রে তুই ভিজলি কেমনে?(অবাক হয়ে)

নিশা- ওই চুস্কি খাটাস পোলায় আমায় ভিজাই দিসে।

আনিলা- তুই কার কথা বলছিস?

রিদি- আই থিংক ফারান ভাইয়া। ওই তুই আবার ওদের সাথে লাগতে গেছোস? হায় আল্লাহ কি যে হবে কে জানে।

নিশা- থাক তোরা তোদের মতো।

বলেই আনিলা আর রিদিকে রেখেই বেরিয়ে আসে ক্লাস থেকে। হঠাৎ বারান্দা দিয়ে দেখে ফারান রা ভার্সিটি থেকে বের হচ্ছে। তারপর পাশে থাকা কাগজের ডাস্টবিনের দিকে নিশার চোখ গেলো। তারপর আশেপাশে দেখতে লাগলো কেউ আছে কিনা কারণ নিশা বেশ ভালো করে জানে ফারানদের চামচার অভাব নাই। পরে দেখে কেউ নাই তাই সেই ডাস্টবিনের ময়লা একেবারে ফারানদের গায়ে ঢাললো উপর থেকে। ঢেলে তাড়াতাড়ি কেউ দেখার আগেই নিশা লুকিয়ে গেলো। ফারানদের গায়ে হঠাৎ কিছু পড়তেই ৪ জনেই হচকচিয়ে যায় আর এদিক ওদিক তাকায়। তারপর গায়ের দিকে খেয়াল করতেই দেখে তাদের গায়ে ময়লা কাগজ আর পলিথিন। আশেপাশের অনেকেই দেখে হাসতে হাসতে মরে যাচ্ছে ওদের অবস্থা দেখে। ফারান রেগে উপরের দিকে তাকালো কিন্তু কাউকেই পেলো না। ফারানের রাগ তো ৭ম আসমানে উঠে গেছে আশেপাশের মানুষদের হাসি দেখে তাই চিল্লিয়ে বলে,”Shut Upppp”

সবাই সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো তবুও অনেকে মুখ টিপে টিপে হাসছে।

আদ্র- ইয়ায়ায়াক ছি!! এই ময়লা আমাদের গায়ে পড়লো কেমনে?? কার এতো বড় সাহস যে আমাদের উপর ময়লা ফেলবে?

তখনই নিশা কিছু জেনেও না জানার ভান ধরে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে ফারানদের পাশ কেটে যাচ্ছিলো ওমনি পাশে তাকিয়ে দেখে ওদের অবস্থা আর ফিক করে হেসে দেয়।

নিশা- বাহ আপনারা যে বাসায় বাসায় গিয়ে ময়লা পরিষ্কার করেন জানতাম না তো।

বলেই আবার হাসতে হাসতে শেষ। আদ্র বলে,”এই তোমার কি আমাদের ময়লা পরিষ্কার করার লোকজন মনে হচ্ছে?”

নিশা- দেখে তো তাই মনে হচ্ছে পুরাই হিরো আলমের বাড়ির চাকর।(হাসতে হাসতে)

নিশার কথায় সবাই হেহে করে হেসে দিলো। ফারান চোখ রাঙিয়ে সবার দিকে তাকালো তাই সাথে সাথে চুপ হয়ে গেলো একমাত্র নিশা বাদে। সে তো হেসেই যাচ্ছে।

ফারান- আই নো এটা তোমারই কাজ সো নো নিড ওভার এক্টিং ওকে। তোমাকে তো পরে দেখে নিবো।

বলে নিজের শার্ট আর চুল ঝেড়ে হনহন করে চলে গেলো সাথে আদ্র,আদন আর আফনাদও। নিশা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,”আমিও দেখবো কেমন পাঙ্গা লাগেন আমার সাথে। আমিও নিশা রহমান আমায় ক্ষেত বলসেন তাই আপনাদের এই অবস্থা করসি নেক্সটে যাই করেন না কেন সব কিছুরই রিভেন্স নিতে আমি রেডি।”

বলেই পাশে তাকায় দেখে রিদি আর আনিলা হেসেই যাচ্ছে। নিশা ওদের হাসি দেখে সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর বলে,”কি কেমন দিলাম?”

আনিলা- ফাটাফাটি বাট এতোটাও লাগিস না।

নিশা- কদের গায়ে ময়লা ফেলসি আর তোরে একেবারে ময়লার মধ্যে চুবামু জ্ঞান দিতে আসলে যত্তোসব।

রিদি- আরে ও তো তোর ভালোর জন্যই বলসে।

নিশা- আমার এতো ভালো লাগবে না। আনিলা বাসায় চল আর রিদি আসি আবার কাল দেখা হবে।

রিদি- ওকে বাই।

তারপর নিশা আনিলা দুজন মিলে বাসায় চলে আসে। এদিকে ফারান বাসায় এসে শাওয়ার নিচ্ছে আর রাগে ফুসছে।

ফারান- ওই মেয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করছে এর কিছু না কিছু ব্যবস্থা করতেই হবে। মাথায় উঠাইতে চাইসিলাম কিন্তু এই মেয়ে তো আমার হাটুরও যোগ্য না। সে যাই হোক কাল কিছু তো করবোই করবো এই অপমান আমি জীবনেও ভুলবো না। মিস নিশা তোমায় তো সুখে থাকতে ভূতে কিলাইসে তাই আসছো আমার সাথে লাগতে আসছো নাও ওয়েট এন্ড সি চোখের জল আর নাকের জল একসাথে কিভাবে করি।

বলেই ফারান মুখে পানি দেয়। তারপর শাওয়ার শেষ করে বেরিয়ে আসে।
,
,
,
,
,
চলবে!!