Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-০৮

0
6078

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ০৮”
.
.
নিশা বাসায় এসেই ওড়না টাকে ধুয়ে শুকোতে দিয়ে পায়ে ছোলা জায়গায় মলম লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মলম লাগানো শেষে নিশার ফারানের সেই ময়লা মাখা ফেস মনে পড়ে। সাথে সাথে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগে।

নিশা- ইসসস আজ ব্যাটাকে সেই রকম শিক্ষা দিয়ে ছেড়েছি। আমার সাথে লাগা তাইনা এখন বুঝ পুরো ময়লা তোর উপ্রে ফেলেছি। আমার তো মন চাচ্ছিলো ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিতে। শুনেছি এদের নাকি কুত্তা পাগল ফ্যানা থুক্কু ভক্ত ভরা। তাদেরও দেখাতাম এদের সো কল্ড হিরো আলমের বাড়ির চাকর।

বলেই আরও হাসতে থাকে। এবার বসা থেকে শুয়ে পড়ে হাসতে হাসতে। এমন সময়ই নিশার বাবা কল করে। নিশা হাসতে হাসতেই রিসিভ করে ফোন।।

নিশা- হ্যাঁ বাবাই বলো।

বাবাই- কেমন আছিস আর এভাবে হাসছিস কেন?

নিশা- আর বইলো না আজ যে কি…..

বলে আর বলে না মুখে হাত দিয়ে চুপ হয়ে যায়। বাবাই আরও বলে,”আজ কি হইসে হ্যা কি রে চুপ করে গেলি কেন?”

নিশা নিজের জিবহায় একটা ছোট কামড় দয়ে বলে,”ইয়ে মানে আব্বু গোপাল ভার দেখলাম তো.. ওইযে গোপাল আর মন্ত্রীর ঝগড়া সেটা দেখেই হাসছিলাম।”(আল্লাহ আরেকটু হলে তো নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারতাম।)

বাবাই- ওহ আচ্ছা তাই বলে এভাবে কেউ হাসে।?

নিশা- আচ্ছা সরি আর হাসবো না এমন করে হয়েছে।(বাবাই যা ঘটেছে তা জানলে তুমিও বুঝতা সবটা।)

বাবাই- না হাসবি আমার মেয়েটা সবসময় এমন করে হাসুক তাই তো আমি চাই তাইনা? এখন বল কেমন আছিস আর ভার্সিটি কেমন লাগছে?

নিশা- আমি অনেএএএএক ভালো আছি আর ভার্সিটি কি বলবো ছবির থেকেও সুন্দর বাবাই। যেমন ভার্সিটি তেমনি টিচারদের প্রশংসনীয় পড়ানো বোঝানো।

বাবাই- যাক তাহলে তো ভালোই ভালো ভাবে পড়াশোনা করবি আর টাকার দরকার হলে বলিস।

নিশা- বাবাই এতো টাকা দয়ে করবো কি? এমনি তেই আমার বেশ আছে। যাইহোক আম্মু কই?

বাবাই- কই থাকতে পারে মেয়বি হসপিটালে গেছে তাই ফোন ধরছে না।

নিশা- ওওওও আচ্ছা। তুমি কেমন আছো সেটাও বলো।

বাবাই- আমিও ভালো।

নিশা- ডাক্তার দেখাও তো ঠিক মতো?

বাবাই- বাসায় একজন ডাক্তার থাকতে অন্য ডাক্তারের কি প্রয়োজন মা?

বাবাইয়ের কথায় নিশা হেসে দিলো। এভাবেই অনেকক্ষণ দুই বাপ বেটি বকবক করে। তারপর কথা শেষে নিশা লিভিং রুমে গিয়ে দেখে আনিলা সোফায় পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে টিভি দেখছে। নিশা কিছু না ভেবে কিচেনে চলে যায় রান্নার জন্য।

নিশা- আজ স্পেশাল কিছু রাধবো তারপর পাশের ফ্লাটের সেই ছোট পিচ্চি কে খাওয়াবো। কি কিউট পিচ্চি টা।

নিশারা যেদিন ফ্লাটে উঠে সেদিন পাশের ফ্লাটের সামনে এক বাচ্চাকে দেখে খুব হেসে খেলে এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে। নিশার আবার ছোট বাচ্চাদের প্রতি আকর্ষণ বেশি। তাই নিশা সেদিন বাচ্চা মেয়েটার সাথে ভাব জমাতে চেষ্টা করে কিন্তু অচেনা বলে কোনো কথা না বলে নিজের বাসায় চলে গয়েছিলো। তারপর থেকে আর বাচ্চা মেয়েটাকে দেখেনি। তারপর আবার আজ সকালে ভার্সিটি যাওয়ার আগে মেয়েটাকে দেখে তখন থেকে ভাবাভাবি শুরু করেছে কিভাবে মেয়েটার সাথে ফ্রেন্ডলি হবে।

নিশা ঠিক করে পুডিং বানাবে কিন্তু সমস্যা হলো নিশা বানাতে জানেনা। তাই আবার লিভিং রুমে ফিরে আনিলাকে জিজ্ঞেস করে, “আনু তুই পুডিং বানাতে পারিস?”

আনিলা- না কেন বানাবি?

নিশা- হুম আচ্ছা তাহলে আমি ইউটিউব দেখে বানাই।

আনিলা- ঠিম আছে বানা।

বলে আবার টিভি দেখায় মন দিলো আনিলা। নিশা রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে আবার রান্নাঘরে গেলো তারপর পুডিং এর রেসিপি দেখতে লাগে। পুরো ভিডিও টা দেখার পরে কিচেন খুঁযে দেখে পুডিং এর জন্য সব প্রয়োজনীয় জিনিস নেই।

নিশা- এখন আবার বাজার যেতে হবে এগুলা আনতে ধুর!!

বলেই নিশা রুমে গিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।

এইদিকে,,

ফারান বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে লেপটপে গেমস খেলছে এমন সময় তার মা ইয়াসা এসে হাজির।

ইয়াসা- ফারান কি করছিস বাবা?

ফারান- এইতো মাম্মা গেইম খেলছি।

ইয়াসা- ওহ হসপিটাল থেকে এসে শুনলাম আজ নাকি তুই পুরো ময়লায় মাখামাখি ছিলি লিলি বললো।

ফারানের মেজাজ চট করে বিগড়ে গেলো। তারপর কোনোরকমে বলে,”ওই পা পিছলে পড়ে গেছিলাম নাথিং ইলস।”

ইয়াসা- আমায় বোকা বানানো এতো ইজি না তাই সত্যি করে বল কি হয়েছিলো।

ফারান শেষে বাধ্য হয়ে সবটা খুলে বলে। ইয়াসা তো হাসতে হাসতে শেষ। তারপর বলে,”যাক আমার ছেলেটাকে কেউ তাহলে জব্দ করতে পারে।”

ফারান- ওহ মাম্মা প্লিজ!(মুখ গোমড়া করে)

ইয়াসা- আচ্ছা যা কিছু বলবো শুন বাজার যা গিয়ে এই লিস্টের জিনিসপত্র এনে দে।

ফারান- ওয়ায়ায়াট!! মাথা ঠিক আছে তোমার? আমি যাবো তাও বাজারে? লাইক সিরিয়াসলি মাম্মা?(অবাক হয়ে)

ইয়াসা- তো কি মানুষ বাজার যায়না? তুই কি এলিয়েন নাকি যে তোর বাজারে যেতে এতো প্রব্লেম? যা বলছি।

ফারান- মাম্মা প্লিজ সে যাই বলো আমি যেতে পারবো না তুমি রফিক কাকা কে বলো সে এনে দিবে। আমি বাজারে গেলে আমার মান ইজ্জত সব শেষ।

ইয়াসা- তুই যাবি না তো তোর ঘাড় যাবে। যা বলছি তাই কর নইলে তোর মান ইজ্জত বাসাতেই আমি শেষ করবো।(চোখ রাঙিয়ে)

ফারান ভয়ে চুপসে গেলো। ফারান কাউকে ভয় না পেলেও তার মাকে প্রচুর ভয় পায়। তাই আর কি করার বাধ্য হয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগে। এমন সময়ই একটা হাত ওয়ানটাম মাস্ক এগিয়ে দিলো। পাশে তাকিয়ে দেখে তার মা। ফারান মাস্ক টা নিয়ে বলে,”হইসে আমায় সাহায্য করে দুনিয়া উল্টাইয়া ফেলসো।”

ইয়াসা হেসে হেসে বলে,”তা তো অবশ্যই।”

ফারান আর কিছু না বলে মুখ গোমড়া করে মাস্ক টা পড়ে নেয় তারপর বড় ব্লেক ফ্রেমের সানগ্লাস করে আর মাথায় ক্যাপ। এর কারণ ফারানকে যেনো কেউ না চিনে তাই। ফারান বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। এদিকে বাজারে এসে নিশা পৌঁছালো। তারপর দোকান থেকে কিনতে নিতেই দূরে খেয়াল করে এক ছেলে নাক মুখ চোখ ঢেকে কি যেনো কিনছে।

নিশা- মাথায় কি গন্ডগোল হইসে নাকি এই ব্যাটার? এতো গরমের মধ্যে কেউ এভাবে আসে তাও আবার বাজারে?

নিশা কৌতুহল সামলাতে না পেরে নিশা ছেলেটার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ফারান নিশাকে দেখতেই বিরক্তি নিয়ে ভাবতে লাগে,”ওহ গড এই মেয়েটা এইখানে কি করছে উফফফফ এ যদি কিছু টের পায় আমি শেষ না ফারান না রিলেক্স!”

নিশা- আচ্ছা ভি বেরাদার! আপনি কি পাবনা মেন্টাল হসপিটালের ১০৫ নং সিটের সেই পাগল যে ২দিন আগে পালিয়ে গেছিলো?

ফারান তো রেগেমেগে শেষ। অন্যভাবে বলে,”ওয়ায়ায়াট!! আর ইউ ক্রেইজি?”

নিশা- না। আসলে হইসে কি যা গরম তার উপরে আপনি এমন পর্দা করে আসছেন ছেলে হয়েও তাই আর কি….

ফারান কিছু না বলে গাড়ি করে বাসাতেই চলে গেলো রেগে। নিশা তো বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগে,”ছাগলের গায়ে মুক্তোর মালা! এমনে পালালো কেন? সে কি আমায় চিনে? কে জানে ধুর আমি শুধু শুধুই এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করছি।”

বলেই নিশাও সব কিনে বাসায় চলে আসে। তারপর কোমড়ে ওড়না বেধে শুরু করে দেয় রান্না আর আনিলা এক চেয়ারে বসে নিশার কান্ড দেখতে থাকে আর আপেল খেতে থাকে। নিশা খুব মনোযোগ দিয়ে পুডিং বানাচ্ছে শেষে সফলও হলো কিন্তু টেস্ট কেমন হবে সেটা নিয়ে বেচারি নার্ভাস।

আনিলা- ফ্রিজে রাখ আর রিলেক্স মজাই হইসে দেখিস।

নিশা- হুম।

তারপর নিশা গরম পুডিং টাকে ফ্রিজে রেখে দেয় ঘন্টাখানেক পর নামাবে বলে। এতোক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছিলো তাই দুজনেই পড়তে বসে।

পরদিন সকালে,

নিশা- ওওও মাই ক্রাশ কোথায় তুমি তা বলে দাও
তোমহারি বিনা মে মার যাওবা।

আনিলা- সক্কাল সক্কাল কি শুরু করলি বলতো?

নিশা- তোমার কেন জ্বলে বন্ধু তোমার কেন জ্বলে?
পাগলে খাইলে ঘি লাথি দিলে হবে কি?

নিশার গানে আনিলা ফিক করে হেসে দিলো।

নিশা-
“ওওও চিকনি চামেলী
তালগাছের পেত্নি
গরুর ঘাস নিয়া
কামড় খাইলিনি?”

আনিলা হাসতে হাসতে শেষ তারপর বলে,”বইন তোর এই এলিয়েন মার্কা অফ কর আর পারুম না হাসতে।”

নিশা- হপ ছ্যাড়ি শিল্প রে সম্মান দিতে শিখ এলিয়েন বলতে তোর লজ্জা লাগে না?
,
,
,
,
,
চলবে!!