#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ০৯”
.
.
ফারান- উমমম ওকে তাহলে হাত থেকে এসে নিয়ে যাও।
ফারানের কথা শুনতেই নিশা খুশি হয়ে গেলো তাই ফারানের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে যেই ফর্ম টা নিতে যাবে ওমনি ফারান ফর্মটা সরিয়ে ফেলে। নিশার বিরক্তি লাগলেও কিছু বললো না।
ফারান- উহু এতো ইজি না যদি আমার সব কথা শুনো তাহলেই এই ফর্ম পাবা।
নিশা- মানে কি করতে হবে আমাকে?(অবাক হয়ে)
ফারান- উমমমম….
ফারান এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বলে,”এই পুরো রুম টা সাফ করো।ওইদিকে জরুরি জিনিসপত্র পাবা ক্লিন করার মতো।”
নিশা রুমটা কে ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে পুরো রুম বই,পিজা-বার্গারের প্যাকেট, জুসের ক্যান, ওয়ানটাইম কফি গ্লাস দিয়ে ছড়াছড়ি। যাকে বলে পুরো ডেঞ্জারাস অগোছানো। দেখে মনে হচ্ছে কতো হাজার বছর কেউ পরিষ্কার করেনা।
নিশা- আমি এসব জীবনেও সাফ করতে পারবো না।
ফারান- তাহলে জীবনেও এই ফর্ম টা পাবা না।
নিশা- আপনিইইইই……
ফারান- তুমিইইইইইই……
নিশা কিছু বলতে যেয়েও বললো না। ফারান হা দিতে দিতে বলে,”তুমি সাফ করো আমরা গেলাম ক্লাস করতে। এসে যেনো দেখি পুরোটাই ক্লিন হয়ে গেছে নইলে তোমার খবর আছে।
বলেউ ফারান আদন আর আফনাদকে নিয়ে চলে গেলো। এইদিকে আনিলা ভার্সিটি পুরো নিশাকেই খুঁযে যাচ্ছে এদিক সেদিন হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খায়।
আনিলা- উফফফফ চোখে কি দেখতে পান না…
বলেই সামনে তাকালো এবং দেখলো আদ্র দাঁড়িয়ে। আদ্র তো আনিলাকে দেখেই রেগে গেলো।
আদ্র- তুমি দেখে চলতে পারো না? চোখে কি কম দেখো না কিছুই দেখো না!!
আনিলা- দেখেন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আমি না হিয় দেখে হাটি নাই আর আপনি? আপনি কি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভ্রমণ করছিলেন?
আদ্র- যেমন তুমি তেমন তোমার বান্ধুবি। তোমাদের সাথে সাধু লজিকে পারা যায়না।
আনিলা- ওরে সাধুর ভান্ডার আসছে রে আপনারা অলয়েজ ভেজাইল্লা লজিক দেখান আবার বলেন সাধু হাউ ফানি!!
আদ্র- মুখে মুখে তর্ক ছাড়া কিছু বুঝোনা? আমি তোমার থেকে সিনিয়র সো সম্মান দিয়ে কথা বলবা।
আনিলা তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে,” সিনিয়র হলেই যা ইচ্ছা তাই করা যায় সেটা শুনিনি। রিয়েল সিনিয়র তারাই যারা জুনিয়রদের স্নেহ করে আর আপনারা তো কি বলবো জাস্ট আস্তাগফিরুল্লাহ! সে যাই হোক আপনার সাথে এইসব ফাউল মার্কা কথা বলার টাইম নাই বাই!!
বলেই আনিলা আদ্রর পাশ কেটে চলে আসে আর আদ্র সেখানে দাঁড়িয়েই রাগে ফুঁসছে।
আদ্র- পাইসে কি এই মেয়ে আমাকে? সামান্য কথায় এভাবে অপমান করলো জাস্ট ওয়েট এন্ড সি আমি তোমার কি হাল করি।
বলেই আদ্র নিজের ক্লাসে চলে গেলো। এইদিকে ফারান রা চলে যেতেই নিশা মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবতে লাগে কি করবে।
নিশা- এখন কি করবো আমি? কাজ করলে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে আবার না করলে আমার স্বপ্ন শেষ!! হে আল্লাহ আমায় এই কোন বিপদে ফেললা। উফফফ কেন যে এদের সাথে লাগতে গেছিলাম? আর আমিই বা কবে লাগলাম এরাই তো আঠার মতো লাগসে। নাহ কাজ গুলো সেরে ফেলি নইলে আমার ফর্ম ভোগে চলে যাবে। আর ইয়ায়ায়াক এরা এতো ময়লা সাথে নিয়া থাকে কিভাবে? সাধে কি এদের হিরো আলমের বাসার চাকর বলসিলাম?তাই আমারেই চাকরানি বানাইয়া দিসে। ধুর ধুর এতো ভেবে কাজ নেই চুপচাপ কাজ করেই নেই।
বলেই নিশা বই গুলো একটা একটা করে উঠাতে লাগে। তারপর সেগুলা নিয়ে সেলফে একটা একটা করে রাখে। বই সব রাখার পর হাতে পলিথিন লাগিয়ে আর মুখে মাস্ক দিয়ে ময়লা গুলো সব উঠিয়ে ডাস্টবিনে ফেলতে লাগে। তারপর টিস্যু দিয়ে কিছু জায়গা পরিষ্কার করে চকচকে করে ফেলে। এমন সময়ই ফোনের রিংটন শুনতে পায় নিশা। দূর থেকে সোফার দিকে তাকাতেই দেখে একটা ফোন বাজছে। নিশা হাতের পলিথিন গ্লাফস আর মাস্ক খুলে সেদিকে যায় আর ফোন টা হাতে নেয়। ততোক্ষণে কল কেটে যায়। নিশা বেশ বুঝে যায় এটা ফারানের ফোন কারণ ওয়ালপেপারে ফারানের একটা ব্লেক কালারের পাঞ্জাবি পড়া, চোখে সানগ্লাস পড়ে এক স্টাইল দিয়ে তোলা ছবি দেওয়া। নিশা ছবি টা দেখে যেনো একদফা ক্রাশ খেলো। নিশার ধ্যান ভাঙ্গে আবার ফোন বাজার আওয়াজে। “Nowmi” নামে কেউ ফারানকে কল করেছে।
নিশা- এই নওমি কি ব্যাটার গফ নাকি? যদি হয় তাহলে তো ওদের ব্রেকআপ করালে মন্দ হয়না!
বলেই নিশা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
নওমি- হ্যালো বেইবি তোমায় ফোন দিচ্ছি তুমি রিসিভ করছিলে না কেন?
নিশা-(বাহ তাহলে তো আমার ধারণাই ঠিক। যাক এখন এর উপর ঝাল তোলার পালা।)
নওমি- কি হলো বেইবি চুপ কেন?
নিশা- আপনি কে আপু?
নওমি- ওয়ায়ায়াট!! এক মিনিট মেয়ের ভয়েজ! এই মেয়ে কে তুমি আমার ফারানের ফোন তোমার কাছে কি করছে?
নিশা- ওওওও আপনি তাহলে ফারজুর আব্বুর কথা বলছেন?
নওমি- ফারজুর আব্বু মানে?
নিশা- আরে আমার উনি তো আমার ফারজুর আব্বুই হয় তাইনা।
নওমি- ওয়ায়াট দ্যা হেল কে তোমার উনি আর কিসব উল্টাপাল্টা বলছো?
নিশা- আপনি বুঝতে কেন পারছেন না বিয়ের পর স্বামীর নাম নেওয়া পাপ তাইতো তাকে “উনি” অথবা আমার বেবি “ফারজুর আব্বু” করে বলি।
নওমি- মানে?
নিশা- মানে হলো আপনি যাকে ফোন করেছেন সেই তো আমার উনি।
নওমি- কিইইইইইইই তুমি কাকে কি বলছো ফারান ম্যারিড???(অবাক হয়ে)
নিশা- হুম সাথে ১ বছরের বাচ্চাও আছে।😎
নওমি- শাট আপ বলো হু আর ইউ?
নিশা- আমি(ফারানের নামের সাথে কি যেনো একটা এডজাস্ট করা নাম? উমমম… ও হ্যাঁ মনে পড়েছে) আমি হলাম মিসেস চৌধুরি।😎
নওমি- তোমার কথায় আমি বিশ্বাস করি না তুমি ফারানকে ডাকো আমি কথা বলবো ওর সাথে।
নিশা- না… আমার ফারজুর সাথে খেলছেন উনি তাই বিজি আছে পরে কথা বলে নিবেন।
বলেই নিশা লাইন কেটে দিলো আর কললিস্ট থেকে নওমির নাম্বার টা ডিলেট দিয়ে ফোন সুইচড অফ করে রাখলো। নিশার তো বেশ হাসি পাচ্ছে এই ভেবে,” ফারান হবে এবার জব্দ কারণ ফারানের জিএফ ওরে লাথি দিয়ে বের করে দিবে।”
ভেবেই হিহি করে হাসতে লাগলো তারপর কাজ সেরে নিজেও চলে গেলো ক্লাস করতে। ফোনটা ফোনের জায়গাতেই রেখে দিয়েছে যাতে করে কেউ সন্দেহ না করে।
নিশা ক্লাসে এসে মুখ টিপে টিপে হাসছে আর রিদি আনিলা নিশা কে দেখতেই নিশার পাশে এসে বসে।
আনিলা- ওই তুই কই গেছিলি জানিস তোকে কখন থেকে আমি খুঁজেই বেরিয়েছি!
নিশা- ওই লেজ কাটা শকুনের কাজ করতে হইসে এতোক্ষণ।
রিদি- ওয়ায়াট বুঝলাম না তুই ইক্জেক্লি কার কথা বললি?
নিশা- তোদের ভার্সিটির ফেমাস বয়।(ভেংচি কেটে)
আনিলা- ওও আচ্ছা তা কি কি করলো?
নিশা প্রিন্সিপালের রুম থেকে একে একে সব ঘটনা ওদের বলে। সব শুনে রিদি আর আনিলার চোখ তো কপালে।
রিদি- কি বলছিস কি তুই এখন দেখিস ওই ফর্ম দিয়েই তোর উপর ঝাল মেটাবে ওরা।
নিশা- মেটাক না আমিও দেখি ওদের দৌড় কতোদূর! সে যাই হোক ওই ফারানের আজ ব্রেকআপ হলো বলে।
বলেই নিশা হেহে করে হাসতে লাগে। আনিলা অবাক হয়ে বলে,”ফারান রিলেশনে আছে?”
রিদি- মেয়বি আমি শিউর না।
নিশা- কিন্তু আমি ১০৯% শিউর ওই নওমি না উড়োনি কি নাম জেনো ওয় ওই বজ্জাতের ফোনে কল দিসে। আমি তো ওরে বলে দিসি ফারানের বউ আমি আর আমাদের ১ বছরের বাচ্চাও আছে।(হাসতে হাসতে)
নিশার কথা শুনে আনিলা ফিক করে হেসে দিলো সাথে রিদিও।
রিদি- তুই আসলে পারিসও বটে।
নিশা- ইয়ায়াপ কাটা দিয়ে কাটা তুলা।(ভাব নিয়ে)
এমন সময়ই স্যার ক্লাসে ঢুকে তাই আর কেউ কথা বাড়ালো না। ফারানদের ক্লাস শেষ হতেই ওরা ওদের কেরিডরে আসে।
ফারান- দেখছিস বলেছিলাম না এখানেই আমি ফোন ফেলে গেছিলাম!
আদন- হুম তাই তো দেখছি থাক এখন আর নো চিন্তা ডু ফূর্তি।
ফারান- হুম।
বলেই ফারান গিয়ে নিজের ফোন টা নিলো।
আফনাদ- দেখ ওই মেয়ে পুরো রুম কি সুন্দর গুছিয়ে গেছে?
আফনাদের কথায় ফারান আদন আর আদ্র এদিক ওদিক তাকিয়ে পুরো রুম দেখলো। হ্যাঁ নিশা সত্যিই অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে দিয়ে গেছে।
ফারান মুচকি হেসে বলে,”হুম তাহলে মেয়েটা কাজের আছে কি বলিস তোরা?”
আদন- তাই তো মনে হচ্ছে।
ফারান কিছু না বলে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ফোন চালালো।
ফারান- কি রে ফোন অন হচ্ছে না কেন?
আফনাদ- ট্রাই কর হবে।
ফারান ট্রাই করতে করতে দেখে ওর ফোন সুইচড অফ ছিলো।
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!