Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-১০

0
5065

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১০”
.
.
.
ফোন অন করেই দেখে নওমির ৯২ টা মিসডকল। এইটা দেখে ফারান ভ্রু কুচকে তাকায়। তারপর আবার সেগুলা ইগনোর করে রেখে দেয় কারণ এখন নওমির সাথে কথা বলার মুড নেই ফারানের।

নিশা ক্লাসরুম থেকে বেরোতেই তার ডাক পড়ে গেলো। নিশা বিরক্তি নিয়ে রিদি কে বলে যেনো আনিলা যাওয়ার আগে বাসায় দিয়ে আসে তার আসতে লেট হবে। তারপর রিদির ব্যাপার মেনেজ করে নিশা চলে আসে ফারানদের রুমে।

নিশা- প্রব্লেম কি?

ফারান- আজকের কাজে আমরা অনেক খুশি এখন যাও ৪টা ব্লেক কফি নিয়ে আসো কেন্টিন থেকে।

নিশা- মগের মুল্লুক পাইসেন?

ফারান কিছু না বলে ফর্মটা নাড়তে লাগে। নিশা আর কিছু বলতে পারেনা রেগে কটমট করতে করতে কেন্টিন গেলো ব্লেক কফি নিতে।

নিশা- ভাইয়া বিল কতো হলো?

– ৫৬০টাকা আপু।

নিশা- ওয়ায়ায়ায়াট!! এতো টাকা? আমি তো এতো টাকা নিয়ে আসিনি কি করা যায়?

ভাবতে ভাবতেই একটা আইডিয়া আসে তারপর ফোন থেকে একটা ছবি বের করে বলে,”ভাইয়া ওনার থেকে বিল টা নিয়ে নিবেন প্লিজ।”

ভাইয়া- ফারান ভাইয়া কেন দিবে বিল আপনি কিনছেন আপনিই দিবেন।

নিশা- আরে ভাই ব্লেক কফি গুলো আপনাদের ফারান ভাইয়াদের জন্যই।

ভাইয়া- দেখুন ম্যাম আমাকে বোকা বানানো এতো ইজি না।

নিশা এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। ফারানের নাম্বার টাও বেই তার কাছে যেটা দিয়ে প্রুভ দেখাবে। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো নিশার কাছে এটিএম কার্ড আছে। তাই সেটা নিয়ে সেটা থেকে বিল পে করলো সাথে ছেলেটাকেও ১০০ টাকার টিপস দিলো। ছেলেটা এতো টাকা টিপস পেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে এবং বলে,”সরি ম্যাম আপনার সাথে মিসবিহেভ করার জন্য।”

নিশা- ইটস ওকে।

বলেই কফি গুলো নিয়ে রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে আসে।

নিশা- শালার বজ্জাত বিদ্রোহী গুলা আমায় সকাল থেকে খাটিয়েই যাচ্ছে তোদের আমি ছাড়বো না বিশেষ করে ওই ফ্যানফ্যাল থুক্কু ফারান তোর সব কাজের শোধ আমি গুণে গুণে নিবো।

এসব বিড়বিড় করতে করতেই ফারানদের কাছে গেলো। ফারান কফি পেতেই বলে,”আজকের জন্য এইটুকুই কাল ভার্সিটি এসেই রুম পরিষ্কার করে দিবা আজকের মতো। আর হ্যাঁ শুধু কাল না প্রতিদিনই করবা মাইন্ড ইট।”

নিশা- তোদের এই কথায় কথায় অর্ডার দেওয়া জম্মের মতো ঘুচাইয়া দিবো।(বিড়বিড় করে)

ফারান- কিছু বললে?

নিশা- কই না তো কিছুই বলিনি।(দাঁত কেলিয়ে)

ফারান- ঠিক আছে এখন যাও।

নিশা আর কিছু না বলে চলে আসে সেখানে থেকে। বাইরে এসে দেখে আনিলা আর রিদি ম্যামের সাথে কথা বলছে। নিশি ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ানোর আগেই ম্যাম চলে গেলো। নিশি ম্যামের যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,,”কিরে কি বললি ম্যামের কাছে আর ম্যাম কিই বা লিখে নিয়ে গেলো ওই কাগজে করে?”

রিদি- সামনের ২৬ তারিখে ভার্সিটিতে ফাংশন আছে সেটায় নাম লেখালাম।

নিশা- ওওও আচ্ছা।

রিদি- তবে হ্যাঁ তোর নামও দিয়ে দিয়েছি গানে নাচে উভয়েই।

নিশা- ওয়ায়ায়ায়াট!! পাগল তোরা? আমি আবার নাচ গান লাইক সিরিয়াসলি?

রিদি- হুম হয়েছে আমি আনিলার থেকে সব শুনেছি নিশু সো চুপ যা আমরা নাচে আছি তুইও থাকবি ব্যাস! আর গানে তো থাকতে হবেই।

নিশা কিছু না বলে ভেংচি কাটে।

রিদি- সে যাইহোক প্ররশু থেকে প্র‍্যাক্টিস শুরু আমি গেলাম বাই।

বলেই রিদি চলে গেলো আর নিশা আনিলাও বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে নিশা ঘুমিয়ে পড়ে বেচারি কে আজ অনেক খাটিয়েছে ফারান। এদিকে ফারান বাসায় এসে শুয়ে শুয়ে গেম খেলতে শুরু করে ফোনে। এমন সময়েই আবার নওমির কল। ফারান হাজার বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে,

ফারান- হ্যালো।

নওমি- থ্যাংক গড তুমি রিসিভ করলে।

ফারান- কি বলবা বলো আমার ইম্পর্টেন্ট কাজ আছে।

নওমি-(তাহলে কি মেয়েটা সত্যি বলেছে?? না না না ফারান শুধুই আমার। আমার থেকে যে আমার ফারান কে কেড়ে নিতে আসবে তাকেই শেষ করে দিবো। হোক সেই বাচ্চা অথবা মেয়েটা কাউকে ছাড় দিবো না।) ওওও আচ্ছা তা কি কাজ করসো যার জন্য আমার ফোন রিসিভ করা গেলো না? ইউ নো হাউ মাচ আই মিস ইউ?

ফারান কিছুই বলে না কারণ তার এসব একদম বিরক্তি লাগছে।

ফারান- ওকে বাই!

নওমি- বাহ নিজের মেয়ের এতো চিন্তা?

নওমির কথায় ফারান ফোন রাখতে গিয়েও আবার কানে দেয় এবং অবাক হয়ে বলে,”আমার মেয়ে মানে?”

নওমি- সাধু সাজছো? আজ সকালেই আমি তোমার বউয়ের সাথে কথা বলেছি। সে বলেছে তুমি ম্যারিড এমন কি তোমার বাচ্চাও আছে! এতো বড় কথা টা লুকালে আমার কাছ থেকে?

ফারান- ওয়ায়ায়াট!! আমার আবার বিয়ে আবার বাচ্চা!!! পাগল নাকি?

নওমি- থাক আর লুকাতে হবে না আমি আজই আমার এক্স আসিফের কাছে চলে যাবো বাই আর নাও ব্রেকআপ।

বলেই নওমি ফোন কেটে দিলো। আর ফারান ২মিনিটের জন্য শকড ছিলো তারপর ফোন রেখে হেহে করে হাসতে শুরু করে।

ফারান- থ্যাংক গড এই নটাংকির হাত থেকে বেচে গেছি। এরে আর সহ্য করাও লাগবে না আহ কি মজা।

তারপর ফোন দিয়ে আদ্র আদনদের ফোন করে সব জানায়। ওরা তো এগুলা শুনে নাচানাচি লাগিয়ে দিয়েছে এমন অবস্থা।

আদ্র- ওহ আল্লাহ আমি সুইসাইড করার হাত থেকে রক্ষা পেলাম।

আফনাদ- তুই সুইসাইড কখনোই করবি না আমরা জানি ওইটা শুধু মুখের কথা।

আদ্র- তার মানে? তোরা কি বলতে চাইছিস আমি ভীতুর ডিম।

আদন- ওই দেখ দেখ একটা ইঁদূর।

আদ্র- কই কই…

বলে চিল্লিয়ে আফনাদের পিছে চলে গেলো। আদ্রর এমন কান্ডে ফারান আদন আফনাদ সবাই ফিক করে হেসে দিলো। আদ্র আদনের চালাকী বুঝে গাল ফুলিয়ে ফেলে।

আদন- আচ্ছা সেসব বাদ ফারান একটা কথা বলতো তোর বউ বাচ্চা কে বললো এসব?

ফারান- আসলেই আমিও সেটাই ভাবছি আবার তখন আমার ফোন টাও সুইচড অফ ছিলো অথচ আমি ফোন খোলাই রেখে এসেছিলাম।

আফনাদ- ঘাবলা আছে কে করতে পারে?

আদ্র- ধুর যেই করুক ভালোই হয়েছে শুন ফারান আজ আমাদের দিয়াবাড়িতে কন্সার্ট আছে সেখানে তুই মাস্ট থাকবিই।

ফারান- ওকে আমি টাইম মতো পৌঁছে যাবো। আচ্ছা কল রাখ পরে কথা বলবো।

আদন- ওকে বাই।

তারপর যে যআর মতো কল কাটে। এতোক্ষণ চারজন গ্রুপ ভিডিও কলে ছিলো। আদ্র,আদন,আফনাদ একসাথে থাকে আলাদা ভাবে আর ফারান নিজের বাড়ি।

কল রেখেই ফারান গভীর ভাবনায় ডুব দেয় আর রহস্যের পরিসংখ্যান মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

ফারান- আমি ফোন আমাদের স্টাডিরুমে রেখে এসেছিলাম আর এর মাঝেই এসব হলো তার উপর ফোন ছিলো সুইচড অফ নওমির ৯২টা সরি ৯৮ টা মিসডকল। এই এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড তখন তো স্টাডিরুমে নিশা ছিলো তাহলে কি এসব ও করেছে? কিন্তু ওই বা কেন করবে? নাহ এই নিশাই হয়তো কিছু করেছে ১০০% শিউর আমি। সে যাই হোক এই বিষয়টা আদ্র আদন আর আফনাদ কে বলা যাবে না। নিশা চাঁদ আমার এতো উপকার করলা তার জন্যে তো আমার তরফ থেকে তোমার জন্য বিশাল উপহার আছে!!

বলেই শয়তানি হাসি দেয় ফারান। এইদিকে নিশা ঘুম থেকে সন্ধ্যার দিকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে দেখে রিদি তার পাশে বসে। নিশা চোখ ডলতে ডলতে বলে,”কি রে তুই এখানে কেন আর আনিলা কোথায়?”

রিদি- আনিলা ওর আন্টির বাসায় গেছে বলেছে কাল চলে আসবে।

নিশা- আমায় বললো না কেন?

রিদি- তুই ঘুমাচ্ছিলি তোরে কি করে বলবে? তাই আমায় বলে চলে গেছে আর শুজ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় ঘুরতে যাবো।

নিশা- আচ্ছা আমি আসছি তুই ওয়েট কর।

বলেই নিশা চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে লিভিং রুমে আসে কারণ রিদি সেখানেই আছে। তারপর দুইজন একসাথে বেরিয়ে গেলো। বাইরে আসতেই দেখে আফিয়া তার মায়ের সাথে কোথায় যেনো যাচ্ছে। নিশাকে দেখতেই আফিয়া ছুটে আসে “নিশুপি” বলে।

আফিয়া- নিশুপি কোথায় যাচ্ছো গো তুমি?

নিশা- এইতো সোনা আশেপাশেই যাবো তুমি কোথায় যাচ্ছো?

আফিয়া- আজ আমার ভাইয়ার কন্সার্ট আছে সেখানেই মাম্মার সাথে যাচ্ছি।

নিশা- ও আচ্ছা তাই তা কে তোমার ভাইয়া?

আফিয়া বলতে নিবে এমন সময়ই আফিয়ার আম্মু দূর থেকে তাড়া দিয়ে বলে,”আফিয়া লেট হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আসো।”

আফিয়া- আসছি মাম্মা! আচ্ছা নিশুপি এসে তোমায় বলবো কেমন এখন টাটাহ।

নিশা আফিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বলে, “টাটা মিস্টি টা আমার।”

আফিয়া মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলো। ওরা চলে যেতেই রিদিকে নিয়ে নিশা বেরিয়ে গেলো। তারপর দুজন মিলে এক রিকশায় উঠে আর বকবক করতে থাকে। রিদি রা একটা ফুচকা গাড়ির কাছে এসে রিকশা থামায়।

রিদি- জানিস ওনার ফুচকা অনেক টেস্টি জাস্ট মুখে লেগে থাকে।

নিশা- ওকে তাহলে ট্রাই করে দেখি।

বলেই দুজন মিলে ফুচকা ওয়ালার কাছে গিয়ে ২ প্লেট ফুচকা অর্ডার দিলো। তারপর ফুচকা রেডি হয়ে দুজন মজা নিয়ে খেতে লাগে। এমন সময়ই এক মেয়ে পাশ থেকে কাকে যেনো বলে,”জানিস আজ দিয়াবাড়ি কন্সার্ট আছে।”

কন্সার্ট শুনতেই নিশার মনে যেনো লাড্ডু ফুটলো। ছোট থেক নিশার ফেমাস পার্সোনদের কন্সার্টে যাওয়ার অনেক সখ। এটা শুনতেই নিশা গপাগপ ফুচকা খাওয়া শেষ করে ফুচকার বিল পে করে রিদির হাত ধরে টানতে লাগে। রিদি বেচারীর মুখে এখনো একটা ফুচকা আছে।

রিদি- আরে হাত ছাড় খেতে তো দিবি নাকি গরুর মতো টানাহেঁচড়া লাগিয়েছিস কেন আজিব তো।(ফুচকা চাবাতে চাবাতে)

নিশা- পরে খাইস আগে কন্সার্ট এ চল শুনেছি দিয়াবাড়ি বেশি দূরে না এখান থেকে।

রিদি পুরোপুরি গিলে বলে,”একটু আগে তো ওই বাচ্চা মেয়েটা কন্সার্ট এর কথা বলেছিলো তখন গেলি না কেন তাদের সাথে?”

নিশা- আরে ওটা তো নরমাল শুনলি না তার ভাইয়ের কন্সার্ট বলেছে। ওর ভাই যে সেলিব্রিটি সেটা তো বলেনাই। সে যাই হোক পথ চিনিয়ে দিয়াবাড়ি নিয়ে যা।

রিদি- আচ্ছা।

তারপর দুই বান্ধুবি মিলে দিয়াবাড়ির কন্সার্ট এর দিকে ছুটলো। এদিকে ফারান গিটার নিয়ে ভাবছে কোন গান গাইবে।।

আদন- ওহ এতো ভাবছিস কেন? একটা গাইলেই তো হয়।

ফারান- হুম চল।

তারপর আদনদের নিয়ে ফারান স্টেজে উঠে। ফারানকে দেখতেই সব মেয়ে হইহুল্লুর শুরু কঅরে দিলো। ফারান মাইকের সামনে এসে হাতে গিটার টা নিয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালো। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই গিটারে টোন দিতে দিতে গান শুরু করে,

“আসমান কো ফের জামিনপে
ইটনি মোহাব্বত হো,
ওয়াফা ফাইলি হো জামিনপে
চাহাতকি সওবাতহো।”

এমন সময়ই নিশা আর রিদি দৌড়ে টিকিট কেটে ভেতরে আসে। এতো মানুষের ভিরে বুঝতে পারছে না নিশা কে গাইছে কার কন্সার্ট আজকে।

“ঝিল কি পানি মে
ইস্ক হি বেহতা হো,
ইস্ক হো দুয়া বাস হো
ইস্ক কি ইবাদাত হো

খোদা ভি জাব তুমহে
মেরে পা…স দেখ তা হো গা।
ইটনি আনমল চিজ দে দি কেসে
সোচতা হো- গা…”

গানটার সফট টোন আর ভয়েসে যেনো নিশা পাগল হয়ে যাচ্ছে এত্তো ভালো লাগছে তার। তাই নিশা চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে গান টাকে।
,
,
,
,
,
চলবে!!!