Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-১৬

0
5628

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৬”
.
.
.
নিশার এমন নাম্বার শুনে ছেলেটা বিরাট বড় শকড খায়। পাশ দিয়ে কিছু মেয়ে যেতে নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি করে বিষয়টা কে নিয়ে। মেয়ে গুলো হাসতে হাসতে ফারানদের পাশ কেটেই যাচ্ছিলো এমন সময় আদন মেয়েদের থামিয়ে বলে,”কি হলো তোমরা এভাবে হাসছো কেন?”

– ওইযে ওখানে এক ছেলে আর মেয়ে দেখছেন না সেখানে ছেলেটা নাম্বার চাইতেই মেয়েটা কি যেনো বললো ও হ্যাঁ মনে পরেছে

জিরো, ওয়ান,নাইন,টু মুখের মধ্যে পটেটু!
লারবেন চারবেন খাইবেন
এই নাম্বারে কল করলেই আমারে পাইবেন।

কথাগুলো বলে মেয়েগুলো হাসতে হাসতে চলে যায়। মেয়েগুলোর কথা শুনে আদ্র, আদন, আফনাদ আর ফারান সবাই ফিক কঅরে হেসে দিলো। হাসারই কথা এমন অদ্ভুত নাম্বার কেই বা কাকে দেয়। ফারান দেরি না করে আস্তে করে ছেলেটার পিছে গিয়ে দাঁড়ায় আর কান পেতে শোনার চেষ্টা করে কি বলছে ওরা।

– এইটা আবার কেমন নাম্বার? মজা নেও আমার সাথে?

নিশা- আচ্ছা এবার সত্যি সত্যিই দিচ্ছি,

ওয়ান টু থ্রি
লাথি খাবি ফ্রি
যদি চাস না খেতে
লুঙ্গি নিয়া পালা!!!

নিশার এমন কবিতা শুনে ফারান মুখ টিপে হাসছে।ছেলেটা এবার মুখ গোমড়া করে ফেলে। নিশা মুহূর্তেই রাগাম্বিত হয়ে বলে,”কি তুই যাবি নাকি জুতার বাড়ি খাবি?”

তাও ছেলেটা সেখানে থম মেরে দাঁড়িয়ে নিশাকেই দেখছে। নিশা এবার জুতা খোলার জন্য পা পর্যন্ত হাত দিতেই ছেলেটা দৌড়ে পালায়। নিশা দুই হাত ঝেড়ে বলে,”এএএএএহ আসছে আমার নাম্বার নিতে। তোর নাম্বার আমি তোর পেটে ইঞ্জেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দিবো শালা ছ্যাসড়া।”

বলেই নিশা হনহন করে চলে যায়। নিশা যেতেই এবার ফারান হু হা করে পেটে হাত দিয়ে হাসতে থাকে। আর দূর থেকে ফারানেএ হাসি আদ্র, আদন, আফনাদ মুগ্ধ হয়ে দেখছে।

আদ্র- দেখেছিস আজ কতোদিন পর প্রাণ খুলে হাসছে?

আদন- হুম লাস্ট ২ বছর আগে ওকে এভাবে হাসতে দেখেছিলাম এখন আবার আজ।

আফনাদ- কতোই না চেষ্টা করেছিলাম ওকে হাসাতে কিন্তু একটা ঝড়ই ওর জীবন অন্ধকার করে দিয়েছে।

আদ্র- আমার কি মনে হচ্ছে জানিস?

আদন- কি?

আদ্র- ফারানের অন্ধকার অতীত থেকে এই নিশাই পারবে বের করে আনতে।

আদন- হুম ঠিক বলেছিস দেখছিস না যবে থেকে নিশার সাথে পরিচিত হয়ে তবে থেকে ওর মুখে একটা উজ্জ্বলতা বিরাজ করেছে।

আফনাদ- হ্যাঁ রে ঠিক বলেছিস তোরা।

এমন সময়ই অদ্রি এসে হাজির।

অদ্রি- কি গো তোমরা কি নিয়ে ফিসফিস করো আমাকেও শুনাও?

অদ্রির কন্ঠ শুনে আদ্র, আফনাদ, আদন সবাইয়া একসাথে অদ্রির দিকে তাকায়। আফনাদ অদ্রি কে দেখতেই বিরক্ত হয়ে চলে যাওয়া ধরলো এমন সময়ই অদ্রি সামনে এসে দাঁড়ালো।

অদ্রি- কি গো জামাইসাব কই যান আফনে?

আফনাদ- মাইন্ড ইউর ল্যাঙুয়েজ। আমি তোমার হাসবেন্ড না ওকে?

অদ্রি- হইতে কতোক্ষণ?

আফনাদ- উফফফফফ আদন এরে সড়া তো সামনে থেকে অসহ্য।

অদ্রি- আদন ভাইয়ায়া আপনি কি আমায় কিছু করবেন?

আদন- নো মাই ডিয়ার ভাবিজি অল ইজ রাইট এখন আমরা আসি। আর আদ্র চল আমরা কেটে পরি ফারানকে নিয়ে।(আদ্রর কানে ফিসফিসিয়ে)

আদ্র- হ্যাঁ সেই ভালো।

বলেই দুজন ফারানকে নিয়ে হলরুমে চলে গেলো। আফনাদ পেছন থেকে কয়েকবার ডাকলে শুনেও না শোনার ভান ধরে ছিলো। তারপর আফনাদ পিছে পিছে যেতে নিতেই অদ্রি আফনাদের হাত ধরে একটা খালি রুমে নিয়ে আসে। তারপর আফনাদের গলা জড়িয়ে ধরে অদ্রি ছলছল চোখে বলে,”জানো এই ১ টা মাস কতো টা কষ্টে কেটেছে আমার?”

অদ্রির এমন দৃষ্টিতে আফনাদ চুপচাপ তাকিয়ে আছে। অদ্রির চোখে আফনাদের জন্য স্পষ্ট ভালোবাসা দেখতে পারছে আফনাদ। আজ কেন যেনো আফনাদ অদ্রিকে ফিরিয়ে দিতে পারছে না। মনের কোনো এক কোণায় অদ্রির জন্য কেমন যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে খুব। অদ্রি কাঁদতে কাঁদতে আফনাদকে জড়িয়ে ধরে এবং বলে,”প্লিজ আফনাদ আমায় বুঝো সত্যি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তোমায় ছাড়া নিজেকে উপলদ্ধি করতে পারিনা। তুমি মানে আমার বেঁচে থাকার কারণ। আই লাভ ইউ সো মাচ।”

আফনাদ কিছু বলছে না চুপচাপ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। অদ্রি আফনাদের চুপ থাকা দেখে আফনাদকে ছেড়ে দিলো। কিছুক্ষণ আফনাদের দিকে তাকিয়ে রইলো তারপর চোখ মুছে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,”সরি আসলে আমি ভুলে গেছিলাম তুমি আমায় সহ্য করতে পারো না। তাই তোমার মুখে ভালোবাসি কথা টা আসলেই হাস্যকর। সে যাইহোক ভালো থাকুন আর কখনোই ডিস্টার্ব করবো না এতোদিনের জন্য দুঃখিত।”

বলেই যেই অদ্রি ফনাদের পাশ কেটে চলে যাচ্ছে ওমনি আফনাদ অদ্রির হাত ধরে টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো। আচমকা আফনাদের এমন কাজে অদ্রি শকড খায়। আফনাদ অদ্রির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”কই যাচ্ছো আমায় ছেড়ে? আর আমায় ছাড়া কাকে ডিস্টার্ব করবা তুমি হ্যাঁ? খবর দার আমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের কথা মাথায় এনেছো তো তোমার অবস্থা খারাপ করে দিবো আমি মাইন্ড ইট।”

বলেই অদ্রির কপালে একটা চুমু দিয়ে অদ্রিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আফনাদ ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে গেলো এবং অদ্রি সেখানেই পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আর ভাবতে থাকে আফনাদের বলা কথা গুলো।

এইদিকে,

প্রিয়া- নায়ায়ায়ায়ায়ায়া ফারান অনলি মাইইইইন। যেই আমার ফারানকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইবে তাকেই আমি শেষ করে দিবো মাইন্ড ইট!!!! ওই মেয়ের সম্পর্কে সকল ডিটেইলস আমার চাই তাও এক্ষুণি। আমায় এখনই মেয়েটার কাছে নিয়ে যাও ওরে আজ আমি দেখে নিবো।(রেগে চিল্লিয়ে)

মেয়েগুলো ভয়ে কয়েকটি ঢোক গিলে বলে,”চলুন ম্যাম।”

তারপর প্রিয়া মেয়েগুলোর সাথে হলরুমের দিকে গেলো কারণ নিশা সেখানেই ডান্স প্র‍্যাক্টিস করছে।
নিশা আর ফারান ডান্স প্র‍্যাক্টিস করছে আর ঝগড়া করছে কিন্তু সেটা কেউই বুঝতে পারছে না।

নিশা- হাতির লেজ।

ফারান- শুকটির লেজ।

নিশা- গন্ডারের পা।

ফারান- তিমি মাছের দাঁত।

নিশা- এখন কি মনে হচ্ছে জানেন? আপনার এক্সিডেন্ট হইসে ভালোই হইসে সেখানে পইড়াই মরতেন আমি শান্তি পাইতাম।

ফারান- আমি মরলে মরার পরে ভূত হয়ে তোমায় মাটিতে পুঁতে দিতাম।

নিশা- ল ব ড ঙ্কা!(ভেংচি কেটে)

এমন সময়ই প্রিয়া ছুটে আসে আর এদিক সেদিক তাকিয়ে ফারানকে খুঁহে এবং পেয়েও যায় কিন্তু নিশার সাথে প্রিয়া আশা করেনি। রেগে সবার মাঝে গিয়ে নিশাকে ফারান থেকে ছাড়িয়ে নিশাকে দিলো এক ধাক্কা। নিশা পড়ে যেতে নিতেই ফারান গিয়ে ধরলো এবং ঠিকভাবে দাঁড় করালো। প্রিয়া এটা দেখে আরও রেগে যায়। আবারও ওদের মাঝে দাঁড়ায় আর নিশাকে খুব জোরে একটা চড় মেরে দেয়। নিশা গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রিয়া- হাউ ডেয়ার ইউ!!(চিল্লিয়ে) তোমার সাহস কি করে হলো আমার ফারানের এতো ঘনিষ্ঠ হওয়ার? ফারান শুধু আমার ওকে? সো ওর সবকিছুর উপর শুধু আমার অধিকার আর অন্য কারো না। আর নিজের দিকেও তাকাও কই তুমি কই ফারান। দেখতে তো রাস্তার মেয়ের মতোই দেখায় আর সেখানে একজন হাই লেভেলের ছেলেকে দেখে লোভ সামলাতে পারো নি তাইতো? যত্তোসব ক্ষেত! বলো তোমার কতো টাকা লাগবে হুম? কতো লাগবে দিয়ে….

প্রিয়া আর বলতে পারে না নিশা প্রিয়ার চেয়েও জোরে প্রিয়াকে চড় দেয়।

নিশা- অন্যের আচরণ দেখেই বোঝা যায় কে রাস্তার মেয়ে আর কে হাই লেভেলের। আরে তোরা পোশাককে যাচাই করে যা ইচ্ছা বলে দিস। কেন রে তুই কোন জোকারের বংশ যার জন্য অন্য কাউকে এভাবে অপমান করবি তাও সবার সামনে কিছু না জেনে। ফারানকে নিয়ে সমস্যা তাই তো? তাহলে শুন ফারান আর আমার বিয়ে একদম ঠিক পারিবারিক ভাবে তাই যত্তো ইচ্ছা মিশবো তোর চাচ্চুর কি? যাহ ভাগ এখান থেকে। আর জীবনেও আমি যদি তোরে ফারানের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি দেখি তাহলে তোর সব চুল টেনে তোর হাতে ধরিয়ে দিবো।

বলেই নিশা হনহন করে চলে যায়। রিদি আনিলা একবার ফারানের দিকে আরেকবার প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে তারাও চলে গেলো নিশার পিছু পিছু। হলরুমে যেনো ছোটখাটো একটা সাইক্লোন হয়ে গেলো। প্রিয়া গালে হাত দিয়ে অসহায় চোখে ফারানের দিকে তাকায়। ফারান তো নিশার বলা কথাতেই একদম শকড।

ফারান-(এই মেয়েটা কি বলে গেলো? ওর সাথে আমার বিয়ে কোন জম্মে ঠিক হলো? মাথার তাড় কি সব ছিড়সে? নাকি মাথার মধ্যে অন্যকিছুর ফন্দি আঁটছে? নাহ সাবধানে থাকা লাগবে বলা তো যায়না কখন কি করে। এই নিশাকে বিশ্বাস করা আর জেনেশুনে কুমিরে ভরা পুকুরে ডুব দেয়া একই বিষয়।)

প্রিয়ার দিকে একবারো ফারান তাকায় না। তাই এবার প্রিয়া আদন দের দিকে তাকায়। সবাই প্রিয়ার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!