#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩২”
________________
“মেইন আগার কাহুন তুমসা হাসি,
লুফাকে তুঝে…..”
বলেই শয়তানি হাসি দিলো। সামনে থাকা ছেলেটা আধমরা হয়ে পড়ে আছে৷ সামনের লোকটা হাটু ভেঙে বসে ছেলেটার গালে ছুঁড়ি দিয়ে স্লাইড করছে। ছেলেটা শুধু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তা দেখে সামনে থাকা লোকটা বলে উঠে,”কি? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? সো চল না আমরা ডেটিং এ যাই? কাম কাম সেই মজা হবে। কিরে যাবিনা???”
ছেলেটা কথা বলার শক্তিটাও যেনো হারিয়ে ফেলেছে। ছেলেটা কিছু বলছেনা দেখে ফারান আবার হেসে বলে,,” কষ্ট হচ্ছে খুব তাইনা? আহালে বাবুতাহ চিন্তা করিস না আরেকটু কষ্ট সহ্য কর কিছুক্ষণ পরে খুব ইজিলি তোকে তোর আসল জায়গায় পাঠিয়ে দিবো ওকে আসিফ?”
[কি ভাবছেন লোকটাকে ফারান কেন বললাম? হ্যাহ্যাঁ ঠিক ধরেছেন সেই রেপিষ্ট কিলার আপনাদের নিশার ওয়ান এন্ড অনলি হাসবেন্ড মিঃ সাইকো লাভার ওরফে ফারান চৌধুরি।]
ছেলেটা অবাক দৃষ্টিতে ফারানের দিকে তাকালো আর ভাবছে তার নাম কি করে জানলো? ফারান ছেলেটার বলার আগে আবার বলা শুরু করে,
– কি ভাবছিস আমি তোর নাম কি করে জানলাম? আরে বোকা ছেলে আই এম ফারান। আমার কাছে সব খবর থাকে আর জাস্ট এই তোর নান টা জানতে পারবো না? আমি এটাও জানি সব টাই নওমির প্ল্যান। কি ভেবেছিস তোর আড়ালে কে আছে সেটাও জানতে পারবো না? ওকে তোকে প্রথম থেকেই সবটা বলি। তুই যেদিন সিঙ্গাপুর থেকে এয়ারপোর্টে আসলি সেদিন থেজে তোদের সকল ইনফরমেশন আমার হাতেই তাও প্রুভসহ। তোরা চেয়েছিলি আমার নিশাকে দূরে সরিয়ে নিতে অথবা মেরে ফেলতে। কিন্তু তুই নিশাকে মারতে এসে নিজেই নিশার প্রেমে পড়ে গেলি। তখন তুই তোর প্ল্যান বদলিয়ে ফেললি নওমি কে না বলেই। তুই প্ল্যান করলি নিশাকে কোনরকমে দেশের বাইরে নিয়ে নিজের আয়ত্তে রাখতে ওকে বিয়ে করতে। সব প্ল্যান মতোই চলছিলো কিন্তু তুই ঠিকই ধরা পরে গেলি ঠিক তো?
আসিফ অবাক হয়ে ফারানের দিকে তাকিয়ে রইলো। ফারান আবার বলে,”আমি সব জানি বুঝলি আমার থেকে আমার কলিজাকে আমার চোখের সামনে থেকে নিয়ে যাওয়া এতো ইজি না। আর জানিস নওমি হলো আমার খেলার শুধু একটা গুটিমাত্র। এই গুটি দিয়েই আমি সব সাফল্য পাই। আমার ওয়াইফের দিকে যে চোখ দিবে তার চোখ হাতে ধরিয়ে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আছে।”
বলেই ছুড়ি টা দিয়ে আসিফের চোখদুটো উঠিয়ে ফেলে। আসিফ যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠে। কিন্তু সেই আত্মনাৎ ফারানের কান অবধি গেলো না। খুব নির্মমভাবে আসিফকে খুন করে তারপর নিজের লোকদের দিয়ে এক পুরোনো নর্দমায় আসিফের লাশ টা ফেলে আসে। ফারানের রাগ যেনো এখনো কমছে না। এরা কি করে এসব প্ল্যান করলো ভেবেই ফারানের মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছে। এদের জন্যই সে তার প্রাণপ্রিয় একজন মানুষকে হারিয়েছে দ্বিতীয়বার নিশার সাথে তার বিচ্ছেদ হলে যে ফারান মরে যাবে। নিশাই যে তার প্রতিটা নিশ্বাস নিশার জন্যই সে নতুন জীবন পেয়েছে কি করে সহ্য করবে তার উপর অন্যকারো কুনজর?
°°°°°
নিশাসহ সবাই সেই কখন থেকে ফারানকে খুঁজেই চলেছে। হঠাৎ করে কই হাওয়া হয়ে গেলো ছেলেটা? ফোনও ধরছে না ঠিকমতো।নিশার অনেক চিন্তা হচ্ছে ফারানের জন্য। সে কখন থেকেই সে ফারানকে ওভয়েড করেছে তার জন্যই কি ফারান রাগ করে চলে গেলো? কিন্তু তার জন্য কেন রাগ করে চলে যাবে সেটাই বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ গাড়ির হর্ন শোনা গেলো। নিশা দৌড়ে বাইরে আসলো দেখে ফারান গাড়ি থেকে নামছে। নিশা দৌড়ে ফারানের কাছে আসলো। নিশাকে হঠাৎ এভাবে দৌড়িয়ে আসা দেখে ফারান চমকে উঠলো তারপর ভ্রু কুচকে বলে,”কি হলো এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?”
নিশা- কোথায় ছিলেন আপনি এতোক্ষণ?
ফারান নিশার চোখে মুখে চিন্তা ভেসে উঠেছে। বেশ বুঝেছে ফারানের না ফেরার জন্য নিশা চিন্তিত ছিলো। ফারান মুচকি হেসে বলে,”ভেতরে আসো ভেতরে গিয়েই বলবো।”
নিশা মাথা নাড়ালো। তারপর দুজন একসাথে ভেতরে আসলো। অনেকেই নিশা ফারানকে একসাথে দেখে অবাক হলো। আফনাদ ফারানকে দেখে স্টেজ থেকে নেমে আসলো।
আফনাদ- ওই হারামি তুই আমাদের না বলে কই হাওয়া হিয়ে গেছিলি হ্যা?
ফারান- আরে মাকে আনতে গেছিলাম।
আদ্র- মিথ্যা বলছিস আই নো।
ফারান- আরে সিরিয়াসলি মিথ্যা কেন বলবো?
আদন- আচ্ছা মানলাম আন্টিকে আনতে গেছিলি এখন বল আন্টি কোথায়?
ফারান- আমার সাথে আসেনি। হসপিটালে ইমার্জেন্সি অপারেশন আছে তাই আসতে পারেনি। মা বলেছে আফনাদকে ফোন করে বলবে।
এমন সময়ই আফনাদের ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ফারানের মা কল করেছে। আফনাদ ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়। ইয়াসা সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”সরি বাবা তোমার হলুদে এটেন্ড করতে পারিনি আসলে বুঝোই তো ডাক্তার মানুষ কাজের শেষ নেই। আমাদের হাতেই মানুষের জীবন কি করে তাদের ফেলে ফাংশনে যাই বলো।”
আফনাদ- প্রব্লেম নেই আন্টি তবে কাল কিন্তু আসতেই হবে।
ইয়াসা- হুম না এসে উপায় আছে?(হেসে) আচ্ছা তাহলে এখন রাখছি তোমরা ইঞ্জয় করো আর অভিনন্দন নতুন জীবনে পা রাখতে চলেছো।
আফনাদ- জ্বি।(মুচকি হেসে)
কথা শেষ হতেই আফনাদ ফারানের দকে তাকায় তারপর আবার স্টেজে চলে যায়। নিশা তো অবাক হয়ে ফারানের দিকে তাকিয়ে রয় আর ভাবতে থাকে একি শুনলো সে? নিশার নিজের মাও তো ডাক্তার আবার ডাক্তার শাশুড়িও পেলো। নিশার এমন অবাক চাহনি দেখে ফারান বুঝলো নিশা কি বলতে চায়। তাই ফারান নিশাকে সাইডে নিয়ে যায়। ফারান দেয়ালের সাথে এক হাত রেখে নিশার দিকে ঝুকে শান্ত সুরে বলে,”মিস করছিলে আমাকে?”
ফারানের এমন কথায় নিশা চোখ বড় বড় করে ফেলে তারপর তোতলিয়ে বলে,”ক…ক…কই আপনাকে মিস করতে আমার বয়েই গেছে।”
ফারান-(আরেকটু ঝুকে) সত্যি?
ফারানের এমন কাছে আসাতে নিশা যেনো দম বন্ধ হয়ে আসছে। ফারানকে কিছুটা ধাক্কিয়ে বলে,”সরুন সামনে থেকে এটা কি ধরণের অসভ্যতামি?”
ফারান- তোমার হাসবেন্ড হই ওকে কোনো পরপুরুষ না যে অসভ্যতামি বলবা।
নিশা- হ্যাঁ আমাকে তো একেবারে উদ্ধার করে দিচ্ছেন এই এক কথা বলে বলে যত্তোসব।
ফারান- তো কোন কথা বলবো?
নিশা কিছু না বলে অন্যদিকে ফিরে যায়। তারপর আবার কি মনে করে ফারানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস যে,”আচ্ছা আপনার মাও কি ডাক্তার?”
ফারান- হুম।
নিশা- সেদিন বললেন না কেন?
ফারান- তোমার রিয়েকশন দেখার জন্য।
নিশা- আপনার মা ডাক্তার হলে আপনি লুজার কেন?
ফারান- কই আমি লুজার?
নিশা- এইযে নিজের ঠিকমতো কেয়ার করেন না।
ফারান- তুমি আছো কি করতে?
নিশা- উফফফ ধুর আপনার কি সমস্যা বলেন তো সবসময় আমার পিছে লেগে থাকেন। (রেগে)
ফারান-(ভালোবাসি তাই) আমার ইচ্ছা!
নিশা ভেংচি কেটে ফারানকে জোরে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। ফারান সেখানে দাঁড়িয়েই মুচকি মুচকি হাসছে। এভাবেই ২দিন কেটে গেলো খুবই সুন্দর ভাবে অদ্রি এবং আফনাদের বিয়ে সম্পূর্ণ হলো। তারা নতুন জীবনে পা দিলো।
এভাবেই নিশা এবং ফারানের দিন কাটতে থাকে। ফারান আড়ালে থেকে নিশার অজান্তেই সবসময় কেয়ার করে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে ইদের সময় চলে আসে। নিশা আনিলা ভার্সিটির ছুটি পেতেই লাগেজ টাগেজ প্যাক করে নেয়। দুজনই বেশ এক্সাইটেড নিজেদের বাবা মায়ের সাথে থাকবে ভেবে। দুজনে রওনা হলো একসাথে।
,
,
,
,
,
চলবে!!!