#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৪”
.
.
ফারান বাইক নিয়ে এক গাড়ির সাথে গিয়ে ধাক্কা খায় তারপর বাইক নিয়ে পড়ে যায়। হেলমেট এর জন্য মাথায় ব্যথা পায়নি হাতে আর পায়ে ব্যথা পেয়েছে। রাস্তার অপর পাশ থেকে নিশা তা দেখে রাস্তা পার হয়ে দৌড়ে ফারানের কাছে আসে। তারপর উত্তেজিত হয়ে ফারানের হাত টা দেখে। তারপর তাড়াতাড়ি করে ফারানের হেলমেট খুলে দেখে মাথায় কোনো আঘাত পেয়েছে কি না। ফারান অনেক কষ্টে বলে,”মাথায় লাগেনি।”
নিশা ভেতর থেকে অনুতপ্তে মরে যাচ্ছে। তারপর কয়েকজন লোক ধরাধরি করে সামনের একটা ফার্মেসী তে নিয়ে যায়। নিশা তুলা আর সেভ্লোন নিয়ে ফারানের হাতে খুব যত্ন নিয়ে লাগাচ্ছে। ফারান এক ধ্যানে নিশার দিকে তাকিয়ে আছে। ফারান নিশার চোখে স্পষ্ট ভয় আর অনুতপ্ততা দেখছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না। ক্ষতটা ডেসিং করতে করতে নিশা ভ্যাত করে কেঁদে দিলো। নিশার এমন কান্না দেখে ফারান বেকুব বনে যায় আর পাশে থাকা একজন মহিলা বলে উঠে,,”দেখো দেখো স্বামী এক্সিডেন্ট করেছে আর মেয়ে কেমন মরা কান্না কাঁদছে কি ভালোবাসা দুজনের মাঝে।”বলেই মহিলা টি চলে গেলো।
কথা গুলো ফারান শুনলেও নিশা শুনলো না সে তো এক ধ্যানে ডেসিং করছে আর নাক টেনে ফুপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে।
ফারান- এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন? আমার তো বড় কিছু হয়নি।
নিশা- বড় কিছু তো হতেও পারতো। আজ আমার জন্য আপনার এই অবস্থা কেন আপনার বাইকের টায়ার লিক করতে গেলাম আমি? আমি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবো না।
বলেই আরো কাঁদতে শুরু করে। ফারান অনেক কষ্টে এক হাত দিয়ে নিশার মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে আসে নিশাকে সামলানোর জন্য। নিশা তো কেঁদেই যাচ্ছে নিজের ভুলের জন্য। আর ফারান এক হাত দিয়ে বুঝাচ্ছে। নিশার মাত্র মনে আসে সে ফারানের বুকে। ভাবতেই এক লাফে সরে যায়। তারপর বলে,”স… সরি আসলে আমি বুঝতে পারিনি। আপনার পা টা দেখান আমি সেটাও ডেসিং করে দিচ্ছি।”
বলেই ফারানের হাটুর সামনে বসে ফারানের পা নিজের পায়ের উপর রেখে যত্ন সহকারে ডেসিং করে দিচ্ছে। ফারান মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কখনো তার মা ছাড়া কোনো মেয়ে এতো যতো করেনি তার।
ফারান- আচ্ছা তুমি কি ডাক্তারি পড়ছো?
নিশা- নাহ একাউন্টিং।
ফারান- তাহলে এতো সুন্দর করে ডেসিং করছো মনে হচ্ছে এর আগেও করেছো?
নিশা- মায়ের থেকে শেখা।
ফারান- তোমার মা কি নার্স?
নিশা- না ডাক্তার।
ফারান- ওহ।(এই মেয়ের মধ্যে আসলেই অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। আগে তো ভাবতাম এই মেয়ে গ্রাম থেকে উঠে আসছে এইখানে। কিন্তু এখন তো দেখছি এর মা ডাক্তার আর আমি ভাবলাম নার্স। ধুর! আগে এই মেয়ের চৌদ্দগুষ্টির লিস্ট বের করতে হবে। হ্যাঁ এটাই করা লাগবে।)
নিশা ততোক্ষণে ডেসিং করে দেয় তারপএ হাতে পায়ে মলম দিয়ে দেয়। তারপর ওই ফার্মেসী থেকে কিছু ওষুধ দেয়। একটা একটা করে খুব ভালো ভাবে চেক করছে নিশা। তারপর একটা ওষুধ দেখে নিশা আবলে,”এই মামা আপনার মাথায় কি ডিস্টার্ব আছে? এতো ছোট ক্ষতের জন্য আপনি অপারেশন করা ক্ষতের ওষুধ দিচ্ছেন? ফাইজলামি কম করেন যত্তোসব।”
– আরে আমি ঠিকই দিয়েছি দেখেন ভুল কেন দিবো?
নিশা- যাতে ভালো বেচাকেনা করতে পারেন তাই। আপনারা তো ভাবেন টাকা কেমনে পাবেন কিন্তু এটা চিন্তা করেন না একটা অসুস্থ মানুষকে ভুল ওষুধ দিয়ে তাকে আরো অসুস্থ বানিয়ে দিচ্ছেন। আপনার এই ফার্মেসী মাটির তলায় না ঢুকাইসি আমার নাম নিশা রহমান না।(রেগে)
– না না আফা মাফ করেন আর এমন ভুল হবে না। এই ব্যবসা লাটে গেলে যে আমি শেষ।
নিশা- দুই নাম্বারি ব্যবসা থাকার চেয়ে না থাকা ভালো।
তারপর নিশা সঠিক ওষুধ কিনে নেয়। ফারান এতোক্ষণ সবটা খেয়াল করেছে চোখ বড় বড় করে।
ফারান-(আমার মা ডাক্তার হওয়ার পরেও আমি এতোকিছু জানিনা আর এই মেয়ে কিনা পিএইচডি অর্জন করে ফেলসে?)(অবাক হয়ে)
ফারানের এমন চাহনি দেখে বলে,”কি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
ফারান- নাহ কিছু না। আমার জন্য এতো কিছু করার জন্য থ্যাংকস।
বলেই যেই দাড়াতে নিবে ওমনি পড়ে যেতে নেয় নিশা গিয়ে ফারানের একহাত ধরে ফেলে।
নিশা- আরে আস্তে আস্তে এতো উঠার তাড়াহূড়ো কিসের?
ফারান- সরি। আমি এখন চলে যেতে পারবো তোমার আর কিছু করা লাগবে না।
নিশা- আপনি ঠিক থাকলে আমার এখানে থাকার কোনো দরকারও নাই বাসায়ই চলে যেতে পারি আমি। তাই আপনার বাসার এড্রেস দেন আমি আপনায় পৌঁছে দিয়ে আসি।
ফারান- ওকে।
তারপর দুজন বাইরে আসে। একটা টেক্সি নিয়ে আদনদের ফ্লাটের দিকে যায়। বাসায় যায়না কারণ ফারান তার মাকে জানাতে চায়না তার এক্সিডেন্ট হয়েছে। ফারান ফোন করে এক লোককে বলে দেয় যেনো বাইক গ্যারেজ এ নিয়ে ঠিক করে বাসায় রেখে আসে। নিশা ফারান কে সেই ফ্লাটে আসে। ফ্লাট দেখে নিশা বলে,”আপনার মতো এতো বড় সেলিব্রিটি এই ফ্লাটে থাকে?”
ফারান- এটা আমার বন্ধুদের বাসা।
নিশা- ওয়ায়ায়াট!! আপনি আপনার বাসায় কথা না বলে এখানে আসলেন কেন?? এই আপনার কোনো বদবুদ্ধি নেই তো?(আঙুল তুলে ভয়ে ভয়ে)
ফারান প্রথমে নিশার কথা বুঝতে পারে না দেখে ভ্রু কুচকে তাকায়। তারপর যখন বুঝে তখন চোখ বড় বড় করে বলে,”এই মেয়ে তোমার কি আমার ওইসব স্টুপিড দের মতো লাগে?”
নিশা- তাদের থেকে আপনি কম কিসের??
ফারান- দেখো স্টুপিড তোমার প্রতি আমার এক চুল পরিমাণও ইন্টারেস্ট নাই ওকে? আর যদি আমি ওদের মতো হতাম তাহলে তোমায় সেদিন বাসায় ছেড়ে আসতাম না আর না ওই স্টুপিড দের থ্রেড দিতাম।(রেগে)
নিশা- তবুও আমার আপনালে বিশ্বাস নাই। ছেলেদের মনে কখন কি থাকে আল্লাহ ভালো জানে।
ফারান- এতোই যখন নিজের চিন্তা ছিলো তো আসছো কেন? আমি কি তোমার পা ধরে বলসি আমায় বাসায় দিয়ে আসো নইলে সুইসাইড করবো এক থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।
নিশা- আপনার এত্তো সাহস আমায় থ্রেড দেন। আমায় রাস্তার মেয়ে পাইসেন নাকি কাজের বেটি রহিমা পাইসেন যে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেন। আরেকবার চোখ গরম করে কথা বলবেন তো আপনার চোখ তুলে ফেলবো।আমারই ভুল ছিলো ওখানেই পড়ে মরতেন তবুও ভালো ছিলো।(রেগে)
বলেই নিশা হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিশার এমন ঝাড়িতে ফারান টাস্কি খেয়ে যায় আর ভাবে,”এই মেয়ের মনে কখন কি চলে আসলেই বোঝা দায়। এই কেয়ারিং এই ঝগড়াঝাঁটি আবার এই মরিচের মতো ঝাল ধুরর ধুররর! জীবন ডা ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো।”
নিশা ওদের কিচেনে আসে স্যুপ বানাবে বলে কিন্তু স্যুপের কিছুই খুঁযে পাওয়া যাচ্ছে না। আর রান্নাঘর এর অবস্থা পুরোই বেহাল। বেসিনে খাবারের প্লেট গ্লাস কাপ ভরা পরিষ্কার করেনি। নিশা হাতের কাছে নুডুলস পেতেই নুডুলসই বানালো। তারপর নুডুলস এর বাটি নিয়ে ফারানের রুমের দিকে গেলো। ফারান খাবার অর্ডার করার জন্য ফোন হাতে নিতেই নিশা এসে হাজির। নিশাকে দেখে ফারান অবাক হয়ে বলে,”এই তুমি না চলে গেছিলা?”
নিশা- হুম আবার আসছি কোনো সমস্যা?
ফারান- না বাট…
নিশা- এইটা ঝটপট খেয়ে নিন তারপর মেডিসিন গুলো খান।
ফারান মাথা কিছুটা উঁচু করে দেখে নুডুলস।
ফারান- নুডুলস! তুমি বানিয়েছো?(অবাক হয়ে)
নিশা- হুম তো?
ফারান- না কিছু না বাট…
নিশা- বকবক কম করেন তাড়াতাড়ি খেয়ে আমার উদ্ধার করেন। আমার বাসা আছে যেতে হবে সারাদিন আপনার জন্য বসে নাই আমি।
নিশার কথায় ফারান নিশার থেকে বাটি টা নিয়ে খেতে থাকে খুব তৃপ্তি নিয়ে। নিশা ফারানের মুখ দেখেই বুঝে গেছে নুডুলস না ভালোই হয়েছে তাই আর কোনো চিন্তা না করে ওষুধের লিস্ট নিয়ে দেখতে লাগে কোন ওষুধ টা এখন খাওয়াবে। ফারানের নুডুলস খাওয়া শেষ হতেই নিশা দুইটা মেডিসিন হাতে ধরিয়ে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে যায়। ফারান খেয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছে নিশার কেয়ারিং গুলো। তারপর মেডিসিনের হাই পাওয়ারের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে।
নিশা বাসায় এসে একটা শাওয়ার নিয়ে রুমে আসে। বিছানায় বসতেই আনিলা এসে হাজির আর হাজার টা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। “কই ছিলি কি হয়েছিলো? এতোক্ষণ কেন লেগেছে বাসায় আসতে ব্লা ব্লা ব্লা!” নিশা চুপচাপ শুনে তারপর বলে,”ফারান এক্সিডেন্ট করেছে তাও আমাএ একটা ভুলের জন্য।”
নিশার কথা শুনে আনিলা অনেক অবাক হয়ে যায় তারপর বলে,”মানেএএএ?”
তারপর নিশা সবটা খুলে বলে আনিলাকে। আনিলা সব শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
আনিলা- থাক আর ভাবিস না এখন তো সব ঠিকঠাক?
নিশা মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বুঝায়। কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে নিরবতা থাকে। তারপর আনিলার মাথায় কিছু আসতেই নিশাকে খোঁচিয়ে বলে,”তা ফারান ভাইয়া কে কি ভালোবাসিস?”
আনিলার কথায় নিশা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। তারপর রেগে বএল,”কিসব আবোলতাবোল বলছিস তুই? আমি ভালোবাসবো তাও ওই ফারানকে নেভার!!”
আনিলা- তাহলে তখন এভাবে কাঁদলি কেন?
নিশা- অনুতপ্তের কারণে।
আনিলা- ওহ। আসলে হইসে কি তুই যে একটা নিরামিষ মাইয়া আমি সেটা ভুলেই গেছিলাম। তোর কাউরে ভালোবাসা লাগবে না দূরে যাইয়া মর যাহ হুট!!
নিশা- ওওওও আচ্ছা তাই?? তা দুইদিন ধরে যে ওই আদ্রের সাথে চিপকাই আছোস তা নিয়ে আমি কিছু বলসি?
আনিলা- ক…ক…কই চোখে কি বেশি দেখোস? ওই ব্যাটা তো আরেক খাটাস। প্রথম দেখায় কি সুন্দর ক্রাশ খাইসিলাম আর ওই বজ্জাত টায় প্রথমদিন থেকেই ঝগড়া লাগে আমার সাথে।
আনিলা কথা শুনে নিশা ফিক করে হেসে দেয়। নিশার এমন হাসি দেখে আনিলা ভেংচি কেটে নিজের রুমে চলে যায়। আনিলা যেতেই নিশা শুয়ে পড়ে আর গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে লাগে,”আচ্ছা এখন উনি কি করছে? কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? ধুর ধুর আমি এসব কি ভাবছি। নিশা রিলেক্স!”
এমন সময়ই আনিলার বলা কথা টা মনে পড়ে নিশার।”তুই কি ফারান ভাইয়াকে ভালোবাসিস?”
নিশার নিজের মাথায় একটা বাড়ি দিয়ে ভাবে,”নাহ আমি তাকে ভালোবাসি না। এতো অল্প দিনে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না তাও আবার ওই বজ্জাত কে নেভার!চোখের পানি আসা টা তো ছিলো এমনি। আমার জন্য একজন মানুষের ক্ষতি হয়েছে তো কি কাঁদবো না ভিলেন দের মতো হা হা হা করে হাসবো? এই আনিলার মাথায় আসলেই গোবর।”
এগুলো ভাবতে ভাবতে নিশাও ঘুমিয়ে পড়ে।
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!