#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৫”
.
.
ফারান সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার পাশে আদ্র বসে ফোন টিপছে। আদন সিঙ্গেল সোফায় বসে টিভি দেখছে আর আফনাদ আরেক সোফায় বসে টিটেবিলের উপর দুই পা রেখে আরামসে ফোন টিপছে। ফারানকে আস্তে ধীরে উঠে বসে। আদ্র ফারানকে উঠতে দেখে বালিশ দিয়ে ফারানকে আধশোয়া করে। ফারান ডান হাতের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোরা এই রুমে কি করছিস?”
আদন- তোর যদি কোনো কিছু দরকার হয় তাই কি করার এখানেই বসে রয়েছি।
আদ্র- তুই এক্সিডেন্ট করলি কি করে আর একবার ফোন করে আমাদের জানানোর প্রয়োজনবোধ করলি না?? আমরা কি পর?
ফারান- আরে পর কেন হতে যাবি। আসলে তখন পরিস্থিতিই ছিলো এমন কাউকে ফোন করে বলার মতো অবস্থায় ছিলাম না।
আদ্র ফোন রেখে বলে,”এক্সিডেন্ট কেমনে হলো তোর?”
ফারান- টায়ার পানচার!
আদন- আগে থেকে দেখে উঠবি না শালা।
ফারান- আমি কি জানতাম নাকি ধুর। এনিওয়ে মাকে কিছু বলিস নি তো?(ভয়ার্ত কন্ঠে)
আফনাদ- নাহ বলিনি কিছু। কেন তোর মাকে বললে কি সমস্যা?
ফারান- সমস্যা মানে সমস্যার ভান্ডার কাধে উঠাবে। এমনিই সারাদিন আমায় নিয়ে কত চিন্তায় থাকে এখন যদি শুনে আমি বাইক নিয়ে এমন অঘটন ঘটাইসি তাহলে আমার বাইক লাটে যাবে।
আদ্র- হুম সেটা তোকে এখানে দেখেই বুঝে গেছিলাম।
আদন- আচ্ছা এখন কেমন লাগছে সেটা বল?
ফারান- এখন ঠিক আছি। ঘুম টা কাজে দিসে।
আদ্র- যাক ভালো কিন্তু তুই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখানে আসলি কি করে?
ফারান- নিশা নিয়ে আসছে।
আদ্র- ওয়ায়াট! ওই মেয়ে কিভাবে?
ফারান-(নিশার টায়ার পানচারের কথা টা লুকিয়ে সব খুলে বলে তাদের।)
আদ্র- ইয়ায়ায়া আল্লাহ মেয়েটা এমন কেয়ারিং বোঝাই তো যায়না।
আফনাদ- যা বলেছিস কি ডোজ দিলো ফারানকে সন্ধ্যা তেই ফারান সুস্থ? সে যাই হোক ভালোই হয়েছে।
ফারান- হুম ওকে বাদ দে এসব।
আদন- হ্যাঁ সেই ভালো।
পরদিন,,
নিশা ভার্সিটি তে এসেই হোমওয়ার্কের খাতা জমা দিতে গিয়ে ফারানের সাথে ঠাসস করে ধাক্কা খায়।
নিশা- উফফফফ দেখে চলতে পারেন না?
ফারান- তুমি দেখে চলতে পারো না?
নিশা- আপনার দোষ স্বীকার করেন। যাইহোক এখন কেমন আছেন?
ফারান- হুম আগের চেয়ে ব্যাটার।
নিশা- ওহ।
ফারান মুচকি হেসে নিশার পাশ কেটে চলে গেলো। নিশা পিছে তাকিয়ে ফারানের যাওয়া দেখছে। কিন্তু হঠাৎই একটা মেয়ে এসে ফারানের হাত জড়িয়ে ধরে। তা দেখে নিশা ভ্রু কুচকালো তারপর চলে যায় হোমওয়ার্ক জমা দিতে।
ফারান বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার থেকে গাত ছাড়িয়ে বলে,”প্রিয়া তুই না অন্য ভার্সিটিতে পড়িস তাহলে এখানে কি করছিস?”
প্রিয়া- তোমার জন্য ট্রান্সফার হয়ে এখানে চলে এসেছি কজ আই লাভ ইউ সোওঅঅঅঅ মাচ!!!
ফারান- রাখ তোর ন্যাকামি আমি তোর পা ধরে বলিনাই এই ভার্সিটিতে আসতে ওকে?
ফারান প্রিয়ার সামনে থেকে চলে যায় আর প্রিয়া সেখানেই মুচকি হাসি দিয়ে বলে,”তোমায় যে আমাকেই হতে হবে সুইটহার্ট।”
এদিকে নিশা ফোনে কথা বলতে বলতে ক্লাস যাচ্ছে এমন সময়ই অদ্রি হাসি মুখে নিশার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিশা অদ্রিকে দেখে মুচকি হেসে কল কেটে দেয়।
অদ্রি- নিশা রাইট?
নিশা- হুম।
অদ্রি- তুমি কি নিউ? আই মিন আগে কখনো তো দেখিনি তো তাই।
নিশা- হ্যাঁ এই ইয়ারেই এসেছি।
অদ্রি- ওহ হাই আমি অদ্রি তোমার থেকে ওয়ান ইয়ারের সিনিয়র।
নিশা- ওহ তাহলে তো আপু বলে ডাকা যায়।
অদ্রি- নো উই ফ্রেন্ডস। আর এই ১বছরের এদিক ওদিকের জন্য কেন ডিসগাস্টিং আপু ডাকবা বলো তো? ডোন্ট কল মি আপু। আপু শুনলে মনে হয় যেনো ১০-১৫বছরের আরও বড়।
অদ্রির গাল ফুলানো কথা শুনে নিশা ফিক করে হেসে দেয়। তারপর আরও কিছুক্ষণ কথা বলে দুজন মিলে।
নিশা- আচ্ছা এখন নাহয় যাই ক্লাস মেয়বি শুরু হয়ে যাবে।
অদ্রি- হুম আচ্ছা বাই।
তারপর যে যার ক্লাসে চলে যায়। নিশাদের ক্লাস শুরু হওয়ার পর ম্যাম জানায় আজ ক্লাস হবে না। আজ নাকি ক্লিন ডে। প্রতি মান্থ এ এই ডে হয়। এই দিনে যার যার ক্লাস সবাই মিলে ক্লিন করবে। ম্যাম কাজের বুয়াদের দিয়ে ক্লিন। করার মোছামুছির সব জিনিসপত্র দিয়ে চলে গেলো। নিশা বিরক্তি নিয়ে কাজে লেগে পড়ে।
রিদি- কি রে মুখটাকে এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন?
নিশা- আজ ভাল্লাগছে না এইসব কাম।
আনিলা- আমাদেরও কম খারাপ লাগছে না কিন্তু কি করার।
নিশা- We বাধ্য।(মুখ গোমড়া করে)
রিদি- হইসে এখন কাজ কর চুপচাপ। তাড়াতাড়ি করতে পারলে বাচি।
নিশা- হুম এখন এই বেঞ্চ উঠাতে হেল্প কর।
এভাবেই সবাই কাজ করতে থাকে। পুরো ক্লাসের সময় কাজ করেই কাটে সবার। সবাই এক্কেবারে ক্লাসরুম টাকে চকচকে করে ফেলে। কাজ শেষে নিশা হাত ধুয়ে পানি খেয়ে ক্লাসরুমে এসে বসে।
রিদি- কি রে ক্লাসরুমে আসলি কেন? কেন্টিন চল কিছু খেয়ে নেই।
নিশা- নাহ ওতো শক্তি নাই তোরা যা আমার ভালো লাগছে না।
বলেই টেবিলে মাথা ঠেকায়। রিদি আর আনিলা কিছু না বলে চলে গেলো। রিদি আনিলা চলে যেতেই নিশা টেবিলের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে। এইদিকে ফারান নিশাকে খুঁজতে খুঁজতে কেন্টিনে চলে আসে। এসে দেখে আনিলা রিদি গল্প করছে আর খাচ্ছে। কিন্তু ওদের সাথে নিশাকে দেখতে পায়না। তাই ফারান ওদের সামনে গিয়ে বলে,”তোমরা দুজন কেন নিশা কই?”
ফারানের কথায় রিদি আর আনিলার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে বিশেষ করে রিদির। কারণ রিদি জানে ফারান কখনো কারো খোঁজ করে না তার উপর নিশাকে নিয়ে ওদের কাছে খোঁজ করছে আসলেই ওর ভাগ্যবান। রিদি হেসে বলে,”ওয় ক্লাসরুমে আছে।”
ফারান- ও আচ্ছা থ্যাংকস।
বলেই ফারান চলে গেলো। রিদি তো খুশিতে আনিলার হাত ধরে বলে,”দেখেছিস আনিলা ফারান আমার সাথে কথা বললো ওওওওও আল্লাহ হাউ মাচ লাকি আই এম।”
আনিলা- হইসে এতো লাফাইস না চুপচাপ খা।
আশেপাশের মেয়ে গুলো এতোক্ষণ ফারান আর ওদের কথা বলা দেখলো। এক মেয়ে তো খাওয়া ছেড়ে উঠে ওদের কাছে এসে বলে,”আচ্ছা ফারান কি বলে গেলো তোমাদের সাথে?”
মেয়েটার কথায় আনিলা আর রিদি একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর আনিলা মুখ খুলে এবং বলে,”কেন আপু আপনায় কি কৈফিয়ত দিতে বসে আছি আমরা?”
মেয়েটা মুখ গোমড়া করে চলে যায় আর রিদি মুখ টিপে টিপে হাসতে লাগে। ফারান ক্লাসে এসে এদিক ওদিক তাকায়। ক্লাসে কিছু মেয়ে ছিলো তারা ফারানকে তাদের ক্লাসে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকে আর ভাবতে থাকে ফারান কেন তাদের ক্লাসে? ফারান সবাই কে ইগনোর করে দূরে তাকিয়ে দেখে নিশা জানালার পাশের বেঞ্চ টায় বসে টেবিলে মাথা রেখে আরামসে ঘুমোচ্ছে। ফারান মেয়ে গুলো কে বলে,”প্লিজ গো আউট ফ্রম রুম।”
ফারানের কথায় মেয়েগুলো চলে গেলো। মেয়েগুলো যেতেই ফারান মুচকি হেসে নিশার কাছে গিয়ে একটা চেয়ার নিয়ে বসে আর গভীর মনোযোগ দিয়ে নিশাকে দেখছে। নিশা আরামসে ঘুমোচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর জানালা দিয়ে বাতাস আসে এবং নিশার সামনের চুল গুলো মুখে চলে আসে।এতে নিশা ভ্রু কুচকালো। ফারান আলতো করে মুখের সামনে থেকে চুল সরিয়ে দিলো। আস্তে আস্তে নিশা স্বাভাবিক হলো আর একটা মুচকি হাসি দিলো। নিশার হাসিতে নিশার গালে টোল আসে। ফারান মুগ্ধ নয়নে নিশাকে দেখছে। ঘুমন্ত নিশার প্রতি ফারান যেনো প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ফারানের মাথায় কিছু আসতেই ফোন টা বের করে নিশার ঘুমন্ত মুখটার ছবি তুলে নেয়।
ফারান- যাক এটা দিয়ে ছোটখাটো ব্লেকমেইল করা যাবে।
বলেই ফারান পকেটে যেই ফোন ঢুকাবে এমন সময়ই রিং টার কথা মাথায় আসে। সাথে সাথে সেই রিং টা নিয়ে নিশার বা হাতে আলতো করে পরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। বাইরে থেকে কিছু মেয়ে ফারানের এসব কেয়ারিং সব দেখে ফেলে। আর যারা দেখে তারা ছিলো প্রিয়ার লেজ ধরে বসে থাকা ফ্রেন্ড গুলি।প্রিয়া ওদের কাজ দিয়েছে যেনো ফারান কখন কোথায় যায় কি করে না করে সকল ইনফরমেশন যেনো গুণে গুণে দেয়।
– দেখ দেখ ফারান ওই মেয়ে কে কেমন করে রিং পরিয়ে দিলো?
– হুম চল চল প্রিয়া কে গিয়ে সব জানাতে হবে।
– হুম চল চল।
বলেই মেয়েগুলো চলে গেলো। এদিকে প্রায় ১০-১৫মিনিট পরপরই নিশার ঘুম ভাঙ্গে। ভালো একটা ঘুমের জন্য নিশা ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। হাত তুলে এএএএ করতে নিতেই নিজের আঙুলে ফিল করে কিছু আছে। তারপর তাড়াতাড়ি হাত টা সামনে এনে দেখে নিশার পুরোনো রিং টা।
নিশা- এইটা তো সেই রিং টা যেটা আমি কাল ফেলে এসেছিলাম ওই স্টাডিরুমে। তাহলে আমার হাতে আসলো কি করে??(অবাক হয়ে)
ভাবতে ভাবতেই নিশা ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে যায়। দূরেই ফারান দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। নিশার ক্লাসরুমের দিকে চোখ যেতেই নিশাকে দেখতে পায়। নিশা ভাবছিলো এমন সময়ই এক ছেলে এসে বলে,
ছেলেটা- হেই লুকিং গরজিয়াস! তোমার নাম্বার টা দিবা??
নিশা প্রথমে রেগে গেলেও পরে এক গাল হাসি দিয়ে বলে,”ঠিক আছে ফোন বের করুন আমি নাম্বার দিচ্ছি।”
নিশার কথায় তড়িঘড়ি করে ছেলেটা ফোন বের করে বলে,”হুম বলো।”
ফারান পেছন থেকে সবটাই দেখছে আর রাগে ফুসছে।
নিশা- লিখে নেন!
জিরো, ওয়ান, নাইন, টু,মুখের মধ্যে পটেটু,লারবেন চারবেন খাইবেন!
এই নাম্বারে কল করলেই আমারে পাইবেন!🐸
.
.
.
.
.
.
চলবে!!!
(গঠনমূলক কমেন্টের প্রত্যাশায় রইলাম।)