Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-১৮

0
4972

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৮”
.
.
নিশা এসবই ভাবছিলো আর হাসছিলো। নিশার ভাবনার মাঝেই ফারান নিশার পাশে এসে যে কখন দাঁড়ায় সেটা নিশা খেয়ালই করেনি। নিশার হঠাৎ পাশে খেয়াল যেতেই দেখে ফারান নিশার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। নিশাও ভ্রু কুচকে বলে,”কি হলো এভাবে শকুনের চাহনীতে কি দেখছেন।”

ফারান- না ওই একটা পেত্নির মনের শয়তানি বোঝার চেষ্টা করছিলাম।

নিশা এক মুহূর্তেই চোখ গরম করে বলে,”কি বললেন আমি পেত্নি?”

ফারান- সেটা সবাই জানে।

নিশা- তাহলে আপনিও শুনে রাখুন আপনি হলেন ল্যাঙড়া ভূত!

ফারান- শকুনের দোয়ায় গরু মরে না এনিওয়ে তুমিই কি প্রিয়ার এমন হাল করেছো?

নিশা- কেন দরদ উতলায় পড়ে?

ফারান- কেন তোমার জ্বলে?(ভ্রু কুচকে)

নিশা- আমার বয়েই গেছে জ্বলতে হুহ আমি তো জাস্ট আমার থাপ্পড়ের শোধ পাই চিত্রের আকারেই নিসি।

ফারান- তার মানে তুমিই…

নিশা- সেগুড়ে বালি আপনার ওই পিরিতি প্রিয়াই আমার এই হাল করতে চাইসিলো ভাগ্যক্রমে আমি বেচে গেছি আর ওই প্রিয়া ঢংগি নিজের জালে নিজের উস্টা খাইয়া পড়সে।

ফারান- মানে? বুঝলাম না।

নিশা- বুঝা লাগবে না আপনার আপনি বাসায় গিয়ে আঙুল চুষেন কাজে দিবে।

বলেই নিশা ফারান কে ভেংচি কেটে চলে গেলো। আর ফারান বেকুবের মতো দাঁড়িয়ে ভাবছে,”এই মেয়ে কি বলে গেলো আমি আঙুল চুষি? ওয়েট তোমার ব্যবস্থা আমি করছি।”

এতো ঝামেলার পর আজ আর জাজ রা সিলেক্ট করবে না। তাই আজকে যারা বাকি ছিলো তাদের কাল টেস্ট নেওয়া হবে। তাই সবাই যে যার বাসায় চলে যায়। কিন্তু সবাই যেতে পারলেও নিশা যেতে পারলো না ফারান নিশাকে ধরে আটকালো।

নিশা- কি হইসে কি আমার পথ আটকিয়েছেন কেন?

ফারান কিছু না বলে নিশাকে টেনে ভার্সিটির পেছনে নিয়ে আসে। নিশার হাত ছেড়ে নিশার মাথায় এক বালতি ময়দা ঢেলে দেয়। ময়দায় নিশাকে পুরো ভূত দেখা যাচ্ছে। ফারান নিশার অবস্থা দেখে হেহে করে হেসে বলে,”আশা করছি আর আমার সাথে লাগার চেষ্টা করবা না।”

বলেই ফারান হাসতে হাসতে চলে গেলো। নিশা রেগে পেছন থেকে ফারানের গায়ে থাকা জ্যাকেট টেনে খুলে তারপর মাথায় মুখে জামায় লাগা সব ময়দা সেউ জ্যাকেট দিয়ে ঝাড়তে থাকে। ফারান রেগে জ্যাকেট নেওয়ার জন্য নিশার হাত ধরতে যেতেই নিশা দেয় এক দৌড়। ফারানও পিছে দৌড় লাগায় কারণ সে তার জ্যাকেট চায়। নিশা দৌড়াতে দৌড়াতেই জ্যাকেট দিয়ে চুল মুখ জামা ঝাড়ছে। প্রায় অনেকক্ষণ দৌড়ানোর ফলে দুজনই এক গাছের নিচে বসে হাপাতে থাকে। নিশা ৫মিনিত জিড়িয়ে জ্যাকেট টা ফারানের মুখে ছুড়ে মেরে দৌড় দেয়। ফারান মুখ থেকে জ্যাকেট নিয়ে দেখে নিশা জ্যাকেট এর অবস্থা নাজেহাল। ফারান রাগে ফুসতে ফুসতে জ্যাকেট নিয়ে বাসায় চলে আসে। নিশা বাসায় ফিরেই একেবারে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার সেরে নেয়। তারপর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।

নিশা- আহ কি শান্তি!!

এমন সময়ই জিশার খুদা পেলো তাই সে চলে গেলো রান্নাঘরে। আনিলা নেই সে রিদির বাসায় গেছে কিছু নোট কালেক্ট করতে। নিশা যায়নি আনিলার থেকে নিবে বলে। নিশা যেই রান্নার জন্য চুলা জ্বালাবে ওমনি ওওর ফোনে কল আসে। ফোনে ইয়াসা আন্টি নাম টা ভেসে উঠে। নিশা মুচকি হেসে ফোন রিসিভ করে আর সালাম দেয়। ইয়াসা সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”কেমন আছো মা?”

নিশা- জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আন্টি আপনি?

ইয়াসা- আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো তা কি করো খাওয়া দাওয়া হয়েছে?

নিশা- না আন্টি এইতো রান্না বসাবো।

ইয়াসা- ওমা সে কি কথা? থাক রাধা লাগবে না আমার বাসায় চলে এসো।

নিশা- না আন্টি সমস্যা নেই।

ইয়াসা- চুপ কোনো কথা না আমি এড্রেস পাঠিয়ে দিচ্ছি।

নিশা- কিন্তু আন্টি….টু টু টু

নিশা- যাহ ফোন কেটে দিলো এখন কই করি? এই দুপুর বেলা কারো বাসায় যেতে একদমই ভালো লাগে না তার উপর না গেলেও ঝামেলা কি করি?

এমন সময়ই ফোনে মেসেজ এর শব্দ হয়। মেসেজ অন করে দেখে ইয়াসা এড্রেস পাঠিয়ে দিয়েছে। নিশা কি করবে ভাবতে ভাবতে রুমে চলে যায় তারপর শেষে বাধ্য হয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে। রিক্সা করে আসতে নিশার ২০ মিনিট সময় লাগলো ফারানদের বাসায় আসতে। বাসার সামনে এসে ভাড়া মিটিয়ে দিলো তারপর ওদের বাড়ি দেখে নিশা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কি বিশাল বাড়ি মনে হচ্ছে কোনো রাজ প্রাসাদ। বাড়িটার বাইরের দেয়াল মারবেল পাথর এবং অধিকাংশ দেওয়াল কাঁচের তৈরি। বাড়ির সামনে সরু রাস্তা আর দুপাশে বাগান,ছোটখাটো বসার ব্যবস্থাও আছে। আরেকদিকে বাস্কেটবল এর কোট। বাগানের ফুলের সুগন্ধে চারদিক যেনো মৌ মৌ করছে। নিশা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ সুগন্ধি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। বাইরে থেকেও ভেতরের পরিবেশ টা আরও সুন্দর এবং অবাক করার মতো। ইয়াসা নিশাকে মেইন দরজার সামনে দেখতেই দৌড়ে এসে নিশাকে জড়িয়ে ধরে তারপর ভেতরে নিয়ে আসে। নিশা চারদিক দেখতে থাকে আর ইয়াসা কিচেনে চলে যায় খাবারের ব্যবস্থা করতে। হঠাৎই একজন সার্ভেন্ট এসে বলে,”আপু ম্যাম আপনায় ফ্রেশ হতে বলেছে আমার সাথে আসুন আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।”

নিশা অনুমতি দিলে মেয়েটির সাথে নিশা যেতে থাকে। উপরের একটা রুমে নিশাকে মেয়েটি নিয়ে যায়। মেয়েটি চলে যেতেই নিশা ওয়াশরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে নেয়। তারপর রুমে এসে দেখে বিছানায় একটা সাদা তোয়াল রাখা। নিশা সেই তোয়াল নিয়ে হাত মুখ মুছে নেয়। তারপর রুম থেকে বেরয়ে পুরো দোতালা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগে। হঠাৎ একটা রুমের সামনে আসতেই নিশার চোখ আটকে যায়। সব রুমে আলো থাকলেও ওই রুম টা অন্ধকার কিন্তু কেন তা নিশা বুঝতে পারে না। তাই কৌতুহলবশত নিশা রুমে ঢুকে পড়ে। রুমে ঢুকেই নিশা প্রচন্ড শীত অনুভব করলো।

নিশা- মাগো এতো ঠান্ডা কেন রুমে আর বেডে মনে হচ্ছে কে যেনো শুয়ে আছে।

তারপর চারপাশ ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে এসি ছাড়া তাও হাই পাওয়ার দেওয়া।

নিশা- যে ছেড়েছে তার কি ঠান্ডা লাগে না? কোন মানুষ এতো হাই পাওয়ার রেখে গন্ডারের মতো ঘুমায় না বাবা এখানে থেকে কাজ নেই। তবে রুমের মধ্যে কেমন একটা চেনা চেনা পারফিউম নাকে লাগছে। ধুর ধুর আমি এখান থেকে বেরোই।

বলেই নিশা রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে। নিশা যে রুমে ঢুকেছে সেটাতে ফারান ঘুমোচ্ছিলো কিন্তু অন্ধকার থাকায় নিশা ফারানকে দেখতে পায় না। নিশা নিচে যাওয়ার আগেই আরেক রুমে নজর গেলো। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো পুরো রুমটাই গোলাপি কালারের। বেডশিট থেকে শুরু করে পড়ার টেবিল টেডিবিয়ার সব। এমন সাজানো গোছানো দেখে বোঝাই যাচ্ছে এটা কোনো মেয়ের ঘর কিন্তু কার মেয়ে?

এগুলো ভাবতে ভাবতেই নিশা নিচে নেমে আসে। নিচে এসে দেখে ইয়াসা খাবার টেবিলে অলরেডি সাজিয়েও ফেলেছে যাকে বলে আহামড়ি আয়োজন।

নিশা- এহহ আন্টি এতো কিছুর কি প্রয়োজন ছিলো?

ইয়াসা- ছিলো দেখেই তো করলাম। এখন তাড়াতাড়ি এসে বসো দেখি আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

নিশা- না না আমি নিজেই খেতে পারবো।

ইয়াসা- তা বললে কি হয় চুপচাপ বসো।

নিশা আর না করতে পারেনা ইয়াসার কথমতো একটা চেয়ার টেনে বসে তারপর ইয়াসা খুব যত্ন করে নিশাকে খাইয়ে দিতে লাগে। খাওয়ার শেষ হতেই নিশা চলে যেতে চাইলে ইয়াসা জোর করে বসিয়ে গল্প করতে শুরু করে দেয়। গল্পের মাঝেই নিশা ইয়াসাকে প্রশ্ন করে,”আচ্ছা আন্টি উপরে এক রুমে দেখলাম অন্ধকার।”

ইয়াসা- ওহ ওটা আমার ছেলের রুম। সেই ঘুমোচ্ছে।

নিশা- এখনো?(অবাক হয়ে)

ইয়াসা- নাহ ভার্সিটি থেকে ফিরেই।

নিশা- ওও আচ্ছা।

নিশা আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে নিবে এমন সময়ই আনিলার কল।

নিশা- হ্যাঁ বল!

আনিলা- কই তুই?

নিশা- এইতো ইয়াসা আন্টির বাসায় কেনো?

আনিলা- তাড়াতাড়ি আয় আমার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি নেই।

নিশা- ওহ আচ্ছা আমি এক্ষুণি আসছি।

বলেই নিশা ফোন কেটে দেয় তারপর ইয়াসাকে বলে,”আন্টি আমার এখন যেতে হবে। আনিলা ফিরেছে কিন্তু ওর কাছে চাবি নেই।”

ইয়াসা হতাশ হয়ে বলে,”ঠিক আছে সাবধানে যেও আমি গাড়ি করে পাঠাবো?”

নিশা- না আন্টি ঠিক আছে আমি যেতে পারবো।

ইয়াসা- ঠিক তো?

নিশা- হ্যাঁ। বাই।

ইয়াসা- বাই।

তারপর নিশা ফারানদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। একটা সিএনজি পেতেই নিশা সেটায় উঠে বাসায় চলে গেলো। ইয়াসা বাইরে থেকে নিশার যাওয়া দেখে ভেতরে চলে আসে। ভেতরে এসে দেখে ফারান চোখ কচলাতে কচলাতে শিড়ি দিয়ে নামছে।

ফারান- আম্মি কেউ কি বাসায় আসছিলো?

ইয়াসা- ওহ আমার বান্ধুবির মেয়ে এসেছিলো।

ফারান- ওওও আচ্ছা। এখন খাবার দাও খিদে পেয়েছে।

ইয়াসা- হুম তুই বস আমি দিচ্ছি।
,
,
,
,
,
চলবে!!!