#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২০”
.
.
ফারান- তো ডেকে দিতি আমাকে।
আদন- হইসে আর কথা বাড়াইস না চল এখন।
তারপর তারা আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে বাইরে। নিশা তো চুপ খেয়েই চলেছে আর আড়চোখে বারবার রিদি আর আনিলার দিকে তাকাচ্ছে। ওরা তো কৌতুহলি দৃষ্টিতে নিশার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই নিশা কিছু বলছে না কারণ ও মুখ খুললে অবস্থা খারাপ করে ছাড়বে। আর নিশাই বা কি বলবে সে তো নিজেই বুঝতে পারছে না সে ফারানের বুকে কেমনে গেলো।
এইদিকে,
আদ্র- তলে তলে ভালোই টেম্পু চালাচ্ছিস।(খেতে খেতে)
ফারান খাওয়া অফ করে অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
আদন- হইসে আর না জানার ভান করতে হবে না আমরা সব দেখেছি আহ কি সুন্দর নিশাকে নিয়ে ঘুমিয়েছে।
আদনের কথায় ফারান বিষম খায়। আদ্র তাড়াতাড়ি পানি দিয়ে বলে,”কি হলো আবার?”
ফারান পুরোটা পানি খেয়ে আর কিছু বলে না। তারপর প্রায় ১০মিনিট পরপরই বাসে চলে। এবার আর ফারান নিশার সাথে বসে নি অন্য আদ্রের পাশে বসেছে। আর নিশা আনিলার সাথে বসেছে আর রিদি আদনের সাথে। রিদি আড়চোখে একবার দুবার আদনের কি তাকাচ্ছে আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে। আদনও সেম কাজ টাই করছে।
রিদি-(আচ্ছা এই ছেলেটাকে আজ এতো কিউট কেন লাগছে উফফফ চোখ ফেরানো টাই দায় হয়ে যাচ্ছে।)
আদন-(এই মেয়ে কি জাদু জানে কে জানে বারবার শুধু মন এই মেয়ের দিকেই টানছে। তাহলে কি আমি ওকে…. না তা কি করে হয় কিন্তু অস্বীকারও তো করতে পারছি না যে আমি এই রিদি কে লাইক করি না।)
দুজনের মনে দুইরকম চিন্তাভাবনা। এভাবেই তারা চলে আসে নীলগিরি। নীলগিরিতে এসে যেনো স্বপ্ন দেখছে নিশা।
নিশা- হায় আল্লাহ তুমি এতো সুন্দর প্রকৃতি কি করে বানালা আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছি হায়য়য়য়!!!
লিনা ম্যামের কথায় নিশার ধ্যান ভাঙ্গে।
লিনা- সো স্টুডেন্টস এখান থেকে আমরা এখন এক হোটেলে যাবো সেখানে লাঞ্চ করে বিশ্রাম নিয়ে বিকালে আবার রওনা হবো তোমরা বিকালে রেডি থাকবে কেমন?
স্টুডেন্টস- ওকে ম্যাম।
তারপর সবাই ম্যামের পিছে পিছে হাটতে থাকে। প্রায় ৫মিনিট হাটার পর সবাই চলে আসে হোটেলে। হোটেল টা বিশাল বড়। প্রিন্সিপাল ম্যাম রিসিপশনে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলছে। নিশা এই লিনা ম্যামের কাছে যায় এবং জিজ্ঞেস করে,”আচ্ছা ম্যাম আদ্র ভাইয়া রা আমাদের সাথে কেন?”
লিনা- ও ফারান রা ওরা তো প্রতি ট্রিপেই আমাদের সাথে আসে কেন কিছু হয়েছে?
নিশা- নো ম্যাম ঠিক আছে।
তারপর নিশা মুখ টা গোমড়া করে আনিলার কাছে ফিরে আসে। তারপর ম্যাম রা মিলে ঠিক করে কে কোন রুমে থাকবে এবং লিস্টও এনাউস করে দেয়। সবাই শুনতেই লিস্ট অনুযায়ী যে যার রুমে চলে যায়। নিশা,রিদি,আনিলা,অদ্রি এক রুমে থাকবে। অদ্রি নিশাকে দেখতেই মুচকি হাসে।
অদ্রি- হাই! এবার কিন্তু আমরা একসাথে।
নিশা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,”হুম।”
এমন সময়ই আফনাদ অদ্রির কাছে আসে এবং বলে,”তোমাদের পাশের রুমেই আমরা বুক করেছি তাই কোনো প্রয়োজন হলে আমার কাছে চলে আসবা।”
অদ্রি হেসে মাথা নাড়ায় আফনাদ চলে যায়। আফনাদ চলে যেতেই নিশা অদ্রির দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। অদ্রি বুঝতে পেরে লজ্জায় লাল হয়ে বলে,”আসলে আমরা দুজন রিলেশনশিপ এ আছি।”
অদ্রির কথায় রিদি,আনিলা,নিশি ৩জনেরই মুখে হাসি ফুটে তারপর একসাথে কংগ্রেস বলে। অদ্রি উত্তরে শুধু হাসে।
তারপর আর দেরি না করে রুমে চলে গেল এবং একে একে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। এমন সময়ই ম্যামের ডাক করে লাঞ্চের জন্য তাই ওরা আর দেরি না করে নিচে রেস্টুরেন্ট এ চলে যায়। রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে নিশা এক জায়গায় বসতে নিতেই অদ্রি টেনে ফারানদের কাছে নিয়ে যায়।
নিশা- আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
অদ্রি- কোনো কথা না আজ আমরা সবাই একসাথে লাঞ্চ করবো।
বলেই ফারানদের সামনে হাজির।নিশার ফারানের দিকে চোখ যেতেই সাথে সাথে চোখ সরিয়ে ফেলে। নিশাদের পিছে পিছে আনিলা রিদিও আসে।
অদ্রি- হাই গাইস।
বলেই একটা চেয়ারে নিশাকে জোর করে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসালো। সাথে আনিলা রিদি কেও বসায়। নিশা একটু পরপর তাকাচ্ছে ফারানের দিকে না চাইতেও। ফারান এখন একটা নীল টিশার্ট পরেছে আর চোখে ব্লেক সাগগ্লাস। নীল কালার টা যেনো ফারানের গায়ের রঙের সাথে পুরোপুরি মিশে আছে। ফর্সা শরীরে নীল অনেক মানায়। রিদি তো ফারানের হা করে তাকিয়ে আছে তা দেখে আদন জ্বলছে ইচ্ছা মতো। ফারানের এতো দিকে খেয়াল নেই সে খাবারের মেনুতে নাক ডুবিয়ে দেখছে কি খাবে। তারপর সবাই অর্ডার টুকটাক অর্ডার দিয়ে খেয়ে নেয়। এই টুকু সময়ের মাঝেই নিশা ফারান কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলে না।
খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া শুরু করে। আজকের দিন টা সবাই রেস্টে কাটাবে কাল ভোর বেলা চিম্বুক পাহাড়ে যাবে সবাই মিলে। রিদি,অদ্রি,আনিলা সবাই ঘুম একমাত্র নিশা জেগে আছে। সারা বাসে ঘুমানোর ফলে এখন নিশার চোখে ঘুম নেই তাই কি করার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বেরিয়ে কিছুটা দূরে দেখলো একটা ইয়ায়ায়া বড় খোলা বারান্দা। সেখান থেকে অনেক সুন্দর একটা ভিউ আসছে। নিশা দেরি না করে ছুটে সেখানে গেলো।
দূর দূরান্ত পর্যন্ত শুধুই সবুজে ঘেরা গাছগাছালি। কিছুক্ষণ পরপর তার উপর দিয়ে যাচ্ছে ঝাকে ঝাকে পাখি। যাকে বলে একেবারে অসাধারণ একটা জায়গা নিশার এসব দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ পাশে তাকিয়ে দেখে ফারানও সেখানে। ফোনে কার সাথে যেনো খুব হেসে হেসে কথা বলছে। নিশা ভ্রু কুচকে আস্তে আস্তে ফারানের কাছাকাছি গিয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করলো ফারান কি বলছে।
ফারান- লাভ ইউ টু জান জানো তোমায় কতো মিস করি। উমমম একটুও না জানোই তো ভার্সিটি থেকে এসেছি, আরে না না সেরকম না। উফফফফ প্লিজ….আচ্ছা তাহলে থাকো বাই।
ফারান ফোন রেখে যেই পিছে ফিরে ওমনি নিশার সাথে ধাক্কা খায়। নিশা ধাক্কা খেয়ে আরেকটু হলেই বারান্দা দিয়ে রেলিং থেকে পড়ে যেতো কিন্তু তার আগেই ফারান নিশার হাত ধরে নিশাকে বুকে টেনে আনে। ফারানের মনে হচ্ছিলো আরেকটু হলেই কলিজা টা বেরিয়ে যেতো। নিশা ফারান এর থেকে ছাড়া পেয়ে ছুটে পালালো। নিশার এমন পালানো দেখে ফারান বেকুবের মতো তাকিয়ে রইলো আর ভাবতে লাগলো,”এই মেয়ের হলো টা কি?”
নিশা দৌড়ে রুমে চলে আসে। এসে দেখে আনিলা পায়চারি করছে একা একা।
নিশা- কি রে বাকি রা কই?
আনিলা- অদ্রি গেছে আফনাদের কাছে আর রিদি গেছে তোরে খুঁজতে। তোকে খুঁজতে গিয়ে সে নিজেই লাপাত্তা।
নিশা- ওহ সমস্যা নাই চলে আসবে।(উফফফ ওই ফ্যালফ্যাল এর হাত থেকে সেইরকম বাচা বেচেছি নইলে আবার উল্টা পাল্টা কেস খাইতাম পিছে দাঁড়ানোর কারণে…ওহ মাই আল্লাহ!)
এইদিকে,
রিদি- আরে হচ্ছে টা কি এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আজিব তো।
আদন কিছুই বলছে না চুপচাপ রিদি কে একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এসে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
রিদি- এখন কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।(রেগে)
আদন- কি বেশি হচ্ছে? তুমি তখন ফারানের দিএক ওভাবে তাকিয়ে ছিলা কেন? ও কি আমার থেকেও বেশি সুন্দর?(রেগে)
রিদি আদনের এমন কথা শোনার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলো না। চোখ দুটো রসোগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে। রিদির এমন তাকানো দেখে আদন আবার বলে,”অন্য কারো দিকে তাকালে থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো মাইন্ড ইট।”
বলেই আদন রেগে চলে গেলো সেখান থেকে আর রিদি সেখানেই বেকুবের মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয়।
মাঝরাতে,
– ভাইয়া আমাকে বাচা আমায় ওরা মেরে ফেলবে দেখ না কিভাবে আমায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে বাচায়ায়ায়া।(দৌড়াতে দৌড়াতে চিল্লিয়ে)
– কাঁদিস না ফিহা তোর ভাই থাকতে তোর ক্ষতি কেউ করতে পারবে না।
– ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া!!!(চিল্লিয়ে)
ফিহা নামের মেয়েটাকে কয়েকটা ছেলে মিলে রেপ করলো কিন্তু ফারান সেখানে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে শুধু দেখলো কিন্তু কিছু করতে পারলো না। তার কানে শুধু মেয়েটার আত্নৎনাদ শোনা যাচ্ছে।
,
,
ফারান ঘুম থেকে লাফিয়ে “নায়ায়ায়ায়ায়া” করে চিল্লিয়ে উঠে। ফারানের চোখ দুটো রক্ত জবার মতো লাল টকটকে হয়ে আছে। চোখ দিয়ে অঝোড়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। বুক ফেটে চিৎকার করতে ইচ্ছা করছে তার। তাই কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়। সেই রাতেই শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ারের নিচে হাটু গেড়ে বসে ক্ষুদার্থ সিংহের গর্জনের ন্যয় চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে। তার বুকে হাজারো কষ্ট বেদনা যন্ত্রণা যে গেঁথে আছে চাইলেও কাউকে দেখাতে পারে না।
,
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!