#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২১”(ধামাকা নং ১)
,
,
নিশা প্রায় অনেকক্ষণ ধরে ফারান কে পর্যবেক্ষণ করছে। পর্যবেক্ষণ করার কারণ ফারানের চোখ,মুখ,গাল সব টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে। চুল গুলো কেমন এলোমেলো। চেহারার মধ্যে ক্লান্তি স্পষ্ট,ঠোটে হাসি নেই। নিশাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারান ভ্রু কুচকে বলে,”কি এভাবে কি দেখছো হুম?তোমার নজর আমার লাগলে দেইখো চিম্বুক পাহাড় থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।”
নিশা ভেংচি কেটে বলে,”আমার বয়েই গেছে আপনার দিকে নজর দেওয়া হুহ আপনি কি শাহরুখ খান যে হা করে তাকিয়ে থাকবো?”
ফারান- ভুল বললা। আমি শাহরুখ খানের চেয়েও বেশি হ্যান্ডসাম ওকে। ইরানি বয়েস দেখো নাই কখনো চোখে? না দেখলে আমায় দেখো।(ভাব নিয়ে)
নিশা- ঠ্যাকা পড়ে নাই আপনাকে দেখার হুহ।
বলেই নিশা সামনে চলে যায়। ফারান মৃদ্যু হাসে তারপর সেও এগিয়ে যায়। সবাই পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে। একজন একজন করে বাশ কিনছে পাহাড়ে ওঠার জন্য। ম্যাম রা অনুমতি দিতেই একেক করে সকলে পাহাড়ে ওঠা শুরু করে। প্রায় আধঘণ্টা ওঠার পরপরই নিশা আধমরা হয়ে গেছে। বাকিরা অল্প অল্প। ফারান চুপচাপ পাহাড়ে উঠছে আর নিশার একবার দাঁড়ানো আবার হাটা এসব দেখছে। নিশাদের অনেকটা পিছেই ফারান রা আসছে। একসময় এক শিকলের সাথে উস্টা খেয়ে নিশা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
নিশা- আম্মু গোওঅঅঅঅঅঅ!!!(চিল্লিয়ে)
রিদি আনিলা থেমে নিশার পাশে বসে বলে,”কি হয়েছে তোর ঠিক আছিস তো তুই?”
নিশা- একদমই না পা ছিলে গেছে পাহাড়ে কি করে উঠবো?😭
রিদি আনিলা একে অপরের দিকে তাকায় তারপর নিশার পা হারে এনে দেখে সিরিয়াস অবস্থা।ফারান রা এগিয়ে আসে এতোক্ষণে। আদ্র বলে,”কি হয়েছে নিশা এভাবে বসে আছে কেন?”
আনিলা- পা ছিলে গেছে উঠতে পারছে না।
আদন- ও এম জি এই সময়ে এই অবস্থা! এখন পাহাড়ে কি করে উঠবে?
নিশা পারছে না কেঁদে দেয় এমন অবস্থা। ফারান কিছুক্ষণ নিশার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকায়। তারপর কাউকে কিছু না বলে নিশা কোলে তুলে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে। ফারানের এমন কান্ডে নিশা সহ সবাই অবাক। সাথে আশেপাশে যারা পাহাড়ে উঠছিলো সবাই মিলে। তারা কখনোই ভাবতে পারেনি তাদের ক্রাশ কোনো মেয়েকে এভাবে তুলে নিয়ে যাবে।
নিশা- আরে আরে করছেন টা কি আমায় কোলে নিলেন কেন নামান নামান বলছি।
বলেই হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করে দেয়। ফারান রেগে বলে,”আরেকবার লাফালাফি করবা তো তোমায় পাহাড় থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দিবো বেয়াদব মেয়ে। নিজে তো ঠিক মতো চলবে না সাহায্য করলেও তার গা জ্বলে।”
নিশা- আপনাকে কি বলসি আমায় কোলে উঠাইয়া নিয়া যান। নিজে আমার ব্যাপারে নাক গলাতে আসছেন আবার নিজেই খোচা মারে হুহ।
ফারান আর কিছু না বলে না চুপচাপ নিশাকে নিয়ে পাহাড়ে উঠতে থাকে। আশেপাশের মেয়ে গুলা এমন ভাবে ফারানের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো ফারানকে তারা গিলে খাবে। নিশার দিকেও কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে এতে নিশার অস্বস্থি সাথে কেমন লজ্জা লজ্জাও লাগছে। ফারান নিশার অবস্থা বুঝতে পেরে বলে,”ইগনোর ইট।”
নিশা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়। অবশেষে নিশা কে ফারান পাহাড়ে উঠেই ছাড়ে। একটা বেঞ্চে নিশাকে বসিয়ে দিয়ে নিজে নিশার পাশে বসে হাপাতে থাকে। আদ্র তাড়াতাড়ি এক বোতল পানি এনে ফারানকে খাওয়ায়। আর আনিলা ম্যামকে বলে ফাস্ট এইড বক্সের ব্যবস্থা করে নিশার পায়ে মেডিসিন দিয়ে দিচ্ছে। নিশা হাত দুটো মুঠি করে চোখ মুখ খিঁচে জ্বালা টা সহ্য করছে।
ঘন্টা খানেক পর,,
নিশা দুই চোখ ভরে চারপাশের প্রকৃতি দেখছে। নিশা যেনো এই সুন্দর প্রকৃতিতে হারিয়ে যাচ্ছে। দূর দূরান্ত পর্যন্ত সবুজ গাছপালা। কিছুক্ষণ পরপরই ঠান্ডা বাতাস নিশাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ফারাম দূর থেকে নিশার ঠোঁটে লেগে থাকা উজ্জ্বল হাসি টাই দেখে যাচ্ছে আনমনে। হঠাৎ আদন ডাকতেই ফারানের ধ্যান ভাঙ্গে। তারপর ৪বন্ধু মিলে ছবি তুলে। আফনাদ আর অদ্রি কাপল পিক তুলে। অদ্রির জোরাজোরিতে আনিলা,রিদি আর নিশাকে নিয়ে গ্রুপ পিক তুললো। এখন একেবারে নিশা, রিদি, আনিলা, অদ্রি, ফারান, আদন, আদ্র, আফনাদ সবাই একসাথে সেল্ফি নিলো। এভাবেই ছবি তোলা শেষ হতেই সবাই আস্তে আস্তে পাহাড় থেকে নামা শুরু করে। নিশার সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে নেমে আসে। হোটেল এ পৌঁছে ডিনার সেরে যে যার রুমে চলে যায়। সবাই ফ্রেশ হয়ে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে,
নিশা ঘুম থেকে উঠে দেখে ফারান নিশার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নিশা লাফ দিয়ে উঠতে যেতে ফারানের মাথার সাথে নিজের মাথায় খায় জোরে বারি। নিশা তো “আম্মুউউউ” করে চিল্লিয়ে উঠে।
ফারান- এই মেয়ে সাবধানে উঠতে পারো না নিজে মরবা মরো আমায় কেন মরণ ফাদে টেনে নামাও হে?(কপাল ডলতে ডলতে রেগে)
নিশা- আমি কি ইচ্ছা করে দিসি নাকি আপনি এভাবে ভ্যাড়ার মতো তাকিয়ে থাকবেন কেন? আর আপনার মাথা তো নয় পুরাই লোহার খাম্বা উফফফ মনে তো হচ্ছে মস্তিষ্কের পূর্ব দিক টা উত্তর দিকে পাঠাইয়া দিসে।
ফারান- আরেক টা দিয়ে একেবারে মস্তিষ্ক টা বের করে দিবো তবুও তোমার মাথার কু বুদ্ধি গুলা বিলুপ্ত হবে।
নিশা- কি বললেন আমি কুবুদ্ধি দেই?(রেগে চোখ রাঙিয়ে)
ফারান- না নয় তো কি? জীবনে নিজের বুদ্ধি ভালো কাজে প্রয়োগ করেছো? শুধু তো পারো আমার মাথায় ময়লা ঢালতে।
নিশা ফিক করে হেসে দেয় তারপর বলে,”পেছন দিকে একটা ময়লার বালতি দেখেছিলাম সেটা এনে ঢালি?”
ফারান- একদম না!! এমন যদি করো তাহলে থাপ্পড় একটাও মাটিতে পরবে।
নিশা- কচু পোড়া পড়বে। বাই দ্যা রিক্সা আপনি আমার রুমে কি করছেন?
ফারান কিছু না বলে হাত টা বাড়িয়ে দিলো। নিশা চোখ বড় বড় করে বলে কি?
ফারান- কাল যে তোমাকে কোলে ওঠানোর সময় ফোনটা দিয়েছিলাম সেই ফোনটা দাও।
নিশার এতোক্ষণে ফোনের কথা মনে পড়ে কিন্তু কই রেখেছে সেটা মনে নেই। নিশা মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে,”ই.. ই.. ইয়ে মানে আপনার ফোন কোথায় রেখেছি?”
ফারান- মানে কি? আমি কি করে জানবো ফোন তো তোমার কাছে ছিলো। এই মেয়ে তুমি আমার ফোন হারিয়ে ফেলো নি তো?(রাগাম্বিত চোখে)
নিশা একটা ঢোক গিলে বলে,”হ… হ…. হ… হয়তো।”
ফারান- ওয়াআয়ায়ায়াট!!!! তুমিইই…..
বলেই নিশার দিকে কয়েক অয়া এগিয়ে নিনের মাথার চুল ধরে চলে গেলো ফারান। নিশার তো ভাবতেই ভয় করছে ফারানকে না জানি ফোন হারানোর কারণে ফারান নিশাকে কি করে।
নিশা- এখন কি করি আমার জন্য ওনার ফোনটা হারালো। এটা কি ঠিক হলো ধুর আমি না সব ভুলে বসে থাকি। (মাথায় বাড়ি দিয়ে)
এইদিকে,,
আফনাদ- শুন আমি কতৃপক্ষ কে জানিয়েছি আমার বর্ণনা অনুযায়ী নাকি তারা পাহাড়ের উপরে একটা ফোন পেয়েছে। সেটা আমাদের কাছে খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবে।
ফারান- ওকে দোস্ত।
আদ্র- আহ এখনো কেন রেগে আছিস বল তো বলেছেই তো পেয়েছে নো টেনশন।
আদন- মানুষ মাত্রই ভুল ইয়ায়ায়ার সো রিলেক্স!
সবার কথা ফারান একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। প্রায় দুপুরে ফারান তার ফোন পায়।
সকলে লাঞ্চ করে বেরিয়ে পড়ে একটা ভাস্কর্য মন্দির দেখতে। তার পাশেই রয়েছে বড় জঙ্গল। সবাই প্রায় ৩০-৪০মিনিটেই পৌঁছে যায়। সেখানে সবাই ঘুরে মন্দির টা দেখছে মন্দিরের ভেতর বাহির সবটাই দেখছে। কিন্তু নিশা নজর জঙ্গলে। জঙ্গলে কিছু খরগোশ দৌড়াচ্ছে এদিক সেদিক যাচ্ছে। নিশা আর লোভ সামলাতে না পেরে সেদিকে চলে যায়। নিশাকে জঙ্গলের দিকে যেতে দেখতেই ফারান নিশাকে পেছন থেকে ডাকে কিন্তু এতো ভিরের মাঝে নিশা শুনতে পায়না। নিশাকে দাড়াতে না দেখে নিশার পিছেই ছুটলো ফারান। নিশা হাসতে হাসতে একটা খোরগোসের পিছে ছুটতে থাকে আর ফারান নিশার পিছে। এভাবেই দুজনে গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেছে। নিশা আরো ভেতরে যেতে নিতেই ফারান এসে নিশার হাত ধরে ফেলে। নিশা কিছুটা ভয় পেয়ে পিছে ফিরে দেখে ফারান। একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলে,”কি হলো হাত ধরে আটকালেন কেন?”
ফারান- তোমার মাথা কি ঠিক আছে? দেখছো কোন জঙ্গলে ঢুকে পড়েছো তুমি?
নিশা এতোক্ষণে খেয়াল করে সত্যি সত্যিই গিভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে সে। চারপাশে কতো বড় বড় গাছপালা। নিশা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে,”আমি ফিরে যাবো আমায় নিয়ে যান প্লিজ।”
ফারান- কিভাবে ফিরবো?
নিশা- কিভাবে ফিরবেন মানে? আপনি রাস্তা চিনেন না?
ফারান- একদমই না বান্দরবান আমার এই প্রথম আসা তেমন কিছুই চিনিনা। তবে শুনেছি এই জঙ্গল অনেক গভীর বের হওয়া পসিবল না।
নিশা- ভয় কেন দেখাচ্ছেন গুগোল ম্যাপে ঢুকে রাস্তা খোঁজ করার চেষ্টা করুন নিশ্চয়ই কিছু না কিছ পাবো।
ফারান- আইডিয়া টা খারাপ না ওয়েট চেক করি।
বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে নেট ওপেন করলো কিন্তু আফসোস নেট কানেকশন একদমই নেই। ফারান কিছু না বলে নিশাকে নেট কানেকশন দেখালো। নিশার তো মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজেই টেনে ফেলুক।
নিশা- শালার বাটপার গুলা। এই না এনাউস করে বলোস তোগো আকাইম্মা নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের মাটির তলায়ও পাওয়া যায় এখন জঙ্গলে কেন পায়না হ্যাঁ? শালারা একবার এই জঙ্গল থেকে বেরোই তোগোরে গোবরে চুবামু আকাইম্মার দল।(রেগে চিল্লিয়ে)
ফারান- ইয়ায়ায়ায়ায়াক এগুলা কোন ধরণের লেঙ্গুয়েজ ইউজ করছো তুমি?
নিশা- এই আপনি চুপ করেন ওদের বকা দিয়া কলিজা ঠান্ডা করার চেষ্টা করতাসি আপনি আসছেন আমার লেঙ্গুয়েজ নিয়ে জ্ঞান দিতে যত্তোসব!(রেগে)
ফারান- লিসেন তোমার নিজের দোষে এইখানে চলে আসছো সাথে আমাকেও আনসো সো দোষ তোমার আর তুমি কি না আমায় রাগ দেখাও?
নিশা- আচ্ছা সরি আর হবে না এখন ফিরবো কি করে সেটা তো বলেন?
,
,
,
,
,
চলবে!!!