Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-২৩

0
4541

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৩”
,
,
ভোরের দিকে সূর্যের আলো জানালা ভেদ করে ফারানের চোখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আস্তে আস্তে চোখ খুললো আর ঘুমের রেশ কাটানোর চেষ্টা করতে লাগলো। নিজের গায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো একটা কাথা তার গায়ে জড়ানো। ফারান এটা দেখে ভ্রু কুচকালো। তারপর নিশার কথা মাথায় আসতেই চকির দিকে তাকায়। দেখে নিশা গুতিশুটি মেরে চকির এক কোণায় শুয়ে আছে। তারপর ফারান সেই কাথা টা নিয়ে নিশার পাশে রাখলো। এমন সময়ই দরজা খোলার শব্দ পায় ফারান। পিছে তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা এসেছেন।

– মহারাজ(বৃদ্ধ) আপনাদের বলেছেন হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নিতে।

ফারান- ঠিক আছে আমি আগে যাচ্ছি নিশা উঠুক তারপর ও….

-(বলতে না দিয়ে) ঠিক আছে আপনি আসুন আমি যাচ্ছি।

তারপর মহিলা টা চলে গেলো। ফারান আর কিছু না ভেবে বাইরে চলে আসলো। ঘরের মধ্যে ফারানের বন্দি হয়ে থাকতে দম আটকিয়ে আসছিলো। নিশার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো এবং এদিক সেদিক তাকিয়ে ফারানকে খুঁজতে থাকে কিন্তু কোথাও ফারানকে পায়না। নিশা তাড়াতাড়ি দরজার দিকে যেতে নিলেই দেখে দরজা খোলা।

নিশা- আচ্ছা উনি কি বাইরে গেছেন? দেখি তো গিয়ে।

নিশা যেতে নিতেই দুইটা মেয়ে খাবার নিয়ে হাজির আর পিছে দেখা যাচ্ছে ফারান এদিকেই আসছে। মেয়ে দুটো খাবার দিয়ে চলে গেলো আর ফারান রুমে এসে নিশাকে জাগতে দেখে বলে,”যাও ফ্রেশ হয়ে এসে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও আমাদের ৮টার আগেই বাসস্ট্যান্ডে থাকতে হবে নইলে ঢাকা যাওয়া আর লাগবে না।”

নিশা- আচ্ছা কিন্তু কই ফ্রেশ হবো?

ফারান- আমার মাথার উপর করো যত্তোসব বাইরে যাও!(ধমক দিয়ে)

নিশা- ঝাড়ি দেন কেন আমাকে?

ফারান- তো কি করবো তোমার পেত্নি মার্কা চেহারার পূজা করবো স্টুপিড!!

নিশা গাল ফুলিয়ে বাইরে চলে যায়। এক মেয়ের সাথে কথা বলে নিজের গায়ে থাকা ড্রেস টা চেঞ্জ করে নিজের গুলো পড়ে নিলো। তারপর ফ্রেশ হয়ে ঘরে চলে গেলো। গিয়ে দেখে ফারান খাওয়া অলরেডি সেরে ফেলেছে। নিশা গাল ফুলিয়ে বলে,”আমাকে রেখেই খেয়ে ফেলেছেন আপনি?”

ফারান- তো কি তোমার জন্য আমি পেটে কিল মেরে বসে থাকবো?

নিশা- আপনাকে তো মন চাচ্ছে লাথি মেরে দূরের জঙ্গলে ফেলে দিতে শকুনের লেজ একটা।(বিড়বিড় করে)

ফারান- কিছু বললে?

নিশা- আপনার আমথা বলসি।

বলেই রেগেমেগে নিশা খেতে বসে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ করে ওই বৃদ্ধার কিছু লোকের সাথে ফারান নিশা বাসস্ট্যান্ডে আসে। ফারান ধন্যবাদ জানাতেই তারা হেসে চলে যায়। আর নিশা ভেংচি কেটে বলে,”এরা আমার জীবন নষ্ট করসে এদের থ্যাংকস দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।”

ফারান- আর তুমি আমার ফুল লাইফ টাকে হেল করসো স্টুপিড।(রেগে)

বলেই হনহন করে বাসে উঠে যায়। নিশা রেগে ফারানের পিছে পিছে উঠলো।

নিশা- এই এই আমায় রেখে আসছেন কেন আপনি?

ফারান- কাল রেখে আসলে বেশি ভালো হতো বিয়ে টা তো আর হতো না।

নিশা- দেখেন আমারেও পাগলা কুকুরে কামড়ায় নাই আপনারে বিয়ের করতে। চাবুকের ভয়েই তো….

ফারান- খোরগোস কি জীবনেও দেখো নাই যে খোরগোসের জন্য নিজের পায়ে নিজে কোপ দিসো সাথে আমাকেও নিসো তোমায় দেখলেই মন চাচ্ছে মেরে বনে ফেলে আসি।

নিশা- তার আগেই আমি আপনার কি অবস্থা করবো সেটা ভেবেও কুল পাবেন না।

ফারান- হইসে এখন সাইড দাও।

বলেই ফারান জানালার পাশের এক সিটে বসে। নিশা হা করে বলে,”এই ওইটা আমার সিট উঠুন বলছি।”

ফারান- সিটের গায়ে কি তোমার নাম লেখা আছে?

নিশা- দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন। আমি জানালার পাশের সিটে বসবো উঠুন!!!

ফারান- কেন কেন জানালার পাশের সিট কি একটাই আছে নাকি অন্যটায় গিয়ে বসো আমি এখানেই বসবো।

নিশা রাগে দুঃখে অপসিটের জানালার পাশে গিয়ে বসে। ফারান আড়চোখে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দেয়। তারপর কানে ইয়ারফোন গুঁজে আরামসে গান শুনতে থাকে। এমন সময়ই ফারানের ফোনে কল আসলো। আফনাদ কল করেছে। ফারান তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো,

আফনাদ- কি রে কই তুই কাল থেকে কোনো খবরই নাই কোথায় হাওয়া হয়ে গেলি আর নিশাই বা কোথায় তোদের কোনো বিপদ হয়নি তো।

ফারান-(আর বিপদ! বিপদ যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে আর কি বিপদ হওয়ার বাকি আছে)

আফনাদ- কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল!!

ফারান- আমার সাথেই নিশা আছে আর আমরা দুজনেই ভালো আছি এখন বাসে আছি দুপুরের মধ্যে ঢাকা পৌঁছাবো এখন বাই।

বলেই ফারান কল কেটে দিলো। কল কেটে নিশার দিকে ফিরতেই দেখে নিশার পাশে একটা ছেলে বসা। সেই ছেলে টা বারবার কেমন দৃষ্টিতে নিশার দিকে তাকাচ্ছে। এটা দেখে ফারান বেশ রেগে গেলো। তারপর ফারান নিজের সিটে ফোন টা রেখে নিশাকে ডাক দেয়,

ফারান- নিশা!

নিশা- কি সমস্যা?

ফারান- এখানে এসে বসো।

– ও ভাই আপনি ওনার কি হোন যে আপনার কথা মতো উনি এখানে সেখানে বসবে?

নিশা যেনো একটা সুযোগ পেয়ে গেলো ছেলেটার কথায়। তারপর সেও ছেলেটার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,”হ্যাঁ তাইতো আমি কি আপনার কথায় এখানে সেখানে যাবো নাকি?”

এবার ফারানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো তবুও নিজেকে সামলে বলে,”আচ্ছা আপনি ফারান চৌধুরি কে চিনেন?”

-তাকে কে না চিনে?

ফারান- দেখেছেন কখনো?

– হুম অনেকবার।

ফারান চোখ থেকে ব্লেক সানগ্লাস আর ব্লেক মাস্ক টা তখনই খুলে ফেলে। ফারানকে দেখে ছেলেটা যেনো টাস্কি খেলো তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,”ফা.. ফা.. ফারান.. চ…”

ফারান- ওও এতোক্ষণে চিনতে পেরেছিস। এতোক্ষণ ভালো কথা বললাম কানে নিলি না তো?

– সরি ভাই সরি আর হবে না আপু আপনি যান ভাইয়ার কাছে।

নিশা অবাক হয়ে গেলো ছেলেটার “আপু” ডাক শুনে। আর ফারান নিশার রিয়েকশন দেখে ভেতরে ভেতরে বেশ হাসছে। নিশা গাল ফুলিয়ে সেই সিট থেকে উঠে ফারানের সিটে গিয়ে বসে আর ফারান নিশার পাশে। নিশা গাল ফুলিয়ে বলে,”আমার জন্য এতো দরদ উতলায় পড়ে কেন আপনার?”

ফারান- আমার তো আর খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমারে নিয়ে দরদ দেখাবো।

বলে আবার কানে ইয়ারফোন গুজে চোখ বুঝে গান শোনায় মনোযোগী হলো। নিশা কিছু না বলে জানালার দিকে ফিরে তাকালো। ঠিক সকাল ৮টায় বাস ছাড়লো। বাস চলছে তার আপন গতিতে আর নিশা চুপচাপ বাইরের সুন্দর পাহাড়ি পরিবেশ দেখছে। আস্তে আস্তে পাহাড় ছেড়ে আসে।

এসবের মাঝেই নিশা ফারানের কান থেকে ইয়ারফোন টা নিয়ে নেয়। এতে ফারান রেগে বলে,”কি হলো কি এভাবে কান থেকে নিলে কেন?”

নিশা- তো কি করবো আপনায় কিছু বললে কি আপনি শুনতেন?

ফারান- আমি তোমার মতো বয়ড়া না।

নিশা- হইসে খোচামারানি কথা অফ দেন আর জরুরি কথা শুনেন।

ফারান- বলেন?

নিশা- আমাদের বিয়ের বিষয় টা কি করা যায়?

ফারান- আই ডোন্ট নো কিন্তু একবার যেহেতু বিয়ে হয়েই গিয়েছে কিছুই করার নেই।

নিশা- ডিভোর্স….

ফারান- ডিভোর্স এ আমি বিশ্বাসি না। ডিভোর্স হলে আমায় কোন মেয়ে বিয়ে করবে? তবে এটা ঠিক আমি চাইলে এক আঙ্গুলেই সব মেয়েদের নাচাতে পারি।

নিশা- আপনার এই ভাব পকেটে রাখেন আপনার ভাব দেখার টাইম নাই। আমি জিজ্ঞেস করসি বিয়ে নিয়ে কি করবো আর উনি তার আকাইম্মা কথা বলা শুরু করসে।

ফারান- তোমাকে কিছু বলাই দায়। ওকে শুনো আপাতত এই বিয়ের বিষয়ে কাউকে কিছু বলবো না। আগে তুমি আমি যেমন নরমাল ছিলাম এমন নরমালই থাকবো।

নিশা- আনিলা রিদি?

ফারান- না বলাই ভালো কারণ ওদের থেকে ঠিকই আমার বন্ধুদের কানে খবর যাবে তখন আবার আমি বিপদে পড়বো।

নিশা আর কিছু বলে না। এরপর আর কোনোরকম কথা হয়নি দুজনের মাঝে। দুপুর ৩টায় ওরা ঢাকা পৌঁছালো। ঢাকায় পৌঁছে যে যার মতো করে বাসায় চলে গেলো।

কলিংবেল এর আওয়াজে আনিলা গিয়ে চটজলদি দরজা খুলে। নিশাকে দেখতে পেয়ে হাগ করে বলে,”আই মিস ইউ। কই ছিলি তুই জানিস কতো চিন্তা হয়েছে?”

নিশা- আমায় কি ভেতরে ঢুকতে দিবি না?

আনিলা- ওওপস সরি ওকে ভেতরে আয় আর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আমি খাবার বাড়ছি।

নিশা- ওকে।

তারপর নিশা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে আর আনিলা নিশাকে খাবার বেড়ে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষে নিশা আনিলাকে সবটা খুলে বলে বিয়ের কথা টা গোপন রেখে।

আনিলা- আচ্ছা এগুলো বাদ দে রেস্ট কর।

নিশা- হুম।

তারপর নিশা রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এভাবেই কিছু দিন কেটে যায়। নিশা বা ফারান এখন কেউ কারো সাথে প্রয়োজন ছাড়া একদমই কথা বলে না। এভাবেই আস্তে আস্তে ফাংশনের দিন চলে আসলো।

ফাংশনের সকালে,
,
,
,
,
,
চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ।)