#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৫”
,
ফারান নিজের পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে নিশার দিকে এগোচ্ছে আর বলছে,”ওহ রিয়েলি? এখন তুমি আমায় শিখাবা কোনটায় অধিকার আছে কি নেই?”
ফারানের এমন এগোনো দেখে নিশা ভয় পেয়ে পেছনে যেতে থাকে তারপর কাপা কাপা গলায় বলে,”আ… আ… আপনি আমার দ…দ..দিকে এ…এ…এভা..এভাবে এগোচ্ছেন কেন? দ…দ…দেখেন একদম ভ…ভ…ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।”
ফারান একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, “তোমাকে তো অধিকার দেখাতে হবে তাইনা?”
এবার নিশা একটা বুকসেল্ফের সাথে লেগে গেলো পেছোতে পেছোতে। নিশা পিছে তাকিয়ে দেখে নাহ তার আর পেছনে যাওয়ার জায়গা নেই। নিশার হার্টবিট দ্রুত গতিতে বেড়েই চলেছে। ফারান ততোক্ষণে নিশার সামনে এসে দাঁড়িয়েও পড়েছে। নিশা পাশ কেটে পালাতে নিলেই ফারান হাত দিয়ে আটকে দেয়।
ফারান- কই পালাচ্ছো হুম? ভয় লাগছে?(মজা নিয়ে)
নিশা- ভভভভভভভয় কেকেকেকেকেকেন লালালালালাগবে আয়ায়ামি তো ওওওওই এএএএএএমনি..
ফারান- তাহলে এভাবে তোতলাও কেন?
বলেই নিশার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে গেলো। ফারান নিশ্বাস নিশার মুখের উপর পড়ছে নিশার তো অবস্থা একেবারে খারাপে পরিণত হয়েছে।নিশা একদমই সহ্য করতে পারছে না ফারানের এতো কাছে আসাটা।
ফারান- কি এখন আমার কথা মতোন শাড়ি পড়বা নাকি অধিকার কাকে বলে সেটা দেখাবো?
নিশা- অঅঅধিকা…
ফারান- (নিশাকে বলতে না দিয়ে) ইয়েস আই এম ইউর হাসবেন্ড সো তোমার উপর পুরো অধিকার আমার আছে।
ফারানের এমন কথায় নিশা শকড। নিশার এমন চেহারা দেখে ফারান নিশাকে ছেড়ে দিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর স্বাভাবিকভাবে বলে,”আমি অদ্রি কে পাঠিয়ে দিচ্ছি ও তোমায় এসে শাড়ি পড়িয়ে দিবে।”
বলেই ফারান এক মুহূর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে বেরিয়ে গেলো ক্লাসরুম থেকে। নিশা সেখানেই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলো আর ভাবতে থাকে কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ফারান মুচকি মুচকি হাসছে নিশার এমন ফেস দেখে।
ফারান- এমনি তে এই মেয়ে জীবনেও আমায় ভয় পায়না আর আজ… ভয়ে তো মরেই যায় এমন অবস্থা এবার বুঝবে এই মেয়ে হু আই এম!
ভেবেই ফারান অদ্রিদের কাছে গেলো।
অদ্রি- ফারান ভাইয়া কিছু বলবেন?
ফারান- হুম নিশা তোমায় ডাকছে।
অদ্রি- ওকে আমি যাচ্ছি।
বলে নিশা কোথায় আছে সেটা ফারানের থেকে জেনে অদ্রি চলে গেলো। এদিকে নিশা চেঞ্জিং রুমে এসে শাড়ি টা দেখছে আর রাগে ফুসছে।
নিশা- ব্যাটা আস্ত একটা সাইকো আমায় কি করে গোল খাওয়ালো সাইকো একটা! এএএএহ কি দরদ দরদের পাতিল উতলাইয়া পড়ে সে নাকি আমার স্বোয়ামি(মুখ ভেঙ্গিয়ে) তোর স্বোয়ামীর খেতা কিলাই যত্তোসব।
এভাবেই বকাবকি করছিলো এমন সময়ই অদ্রি এসে হাজির।
অদ্রি- কি রে ডেকেছিলি?
নিশা- হুম শাড়িটা পরিয়ে দে।
নিশার কথা শুন্ব অদ্রি শকড। নিজের হাতে একটা চিমটি কাটলো। ব্যথা পেতেই “আউউচ” করে চিল্লিয়ে উঠলো।
নিশা- আরে আরে হলো কি চিমটি কাটলি কেন?
অদ্রি- নাহ ওই এমনি জাস্ট টেস্ট করছিলাম আমি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি ঘটছে।
নিশা- স্বপ্ন কেন মনে হলো?
অদ্রি- কিছুক্ষণ আগে আমরা এতো জোর করলাম শাড়িটা পড়ার জন্য কিন্তু তুই পড়িসনি এখন বলছিস পড়বি সিরিয়াসলি আই এম শকড।
নিশা-(স্বাধে কি রাজি হইসি নাকি? ওই বজ্জাত সাইকো টাই তো….)
অদ্রি- কি রে চুপ কেন বল?
– তুই কি এখন আমায় শাড়ি পড়িয়ে দিবি নাকি নিজের টা নিজেই পড়বো?(রেগে)
– না না আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম। আয় তোকে সুন্দর করে পরিয়ে দেই।
তারপর অদ্রি নিশাকে খুব সুন্দর করে রেডি করিয়ে দিলো। নিশা কে দেখে অদ্রি বলে,
“ইয়ায়ায়ায়ার তোকে দেখে আমি নিজেই অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি ইসসস কতোটা মানিয়েছে তোকে এই কালো রঙে বলতে হবে ফারান ভাইয়ার চয়েজ অসসাম।”
নিশা এতোক্ষণ খুশি থাকলেও ফারান নামটা শুনে মুখ গোমড়া করে ফেললো। তারপর নরমালি বলে,”লেট হচ্ছে চল”
– ওহ সরি চল।
তারপর দুইজন মিলে বেরিয়ে আসলো।
এইদিকে আদ্র না চাইতেও বারবার আনিলার দিকে তাকাচ্ছে। আনিলার হেসে হেসে হাত নাড়িয়ে কথা বলা,মুখের থেকে ছোট ছোট চুল গুলো সরানো। আজ আনিলা নিল কালারের একটা শাড়ি পড়েছে এতে যেনো আনিলাকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। আদ্র তো চোখে হারাচ্ছে আনিলাকে। আদ্র নিজেকে আর দমিয়ে রাখতে না পেরে আনিলার সামনে যায়।
আনিলা রিদির সাথে ফাংশন নিয়ে কথা বলছিলো হঠাৎ সামনে আদ্রকে দেখে আনিলা যেনো শক খায়।
– আ…আপনি এখানে?
– হুম একটু কথা আছে আলাদাভাবে তো….
বলেই রিদির দিকে তাকায়। রিদি আদ্রের চাহনি বুঝতে পেরে আনিলাকে বলে,”যা আদ্র ভাইয়া কি বলছে শুনে আয়। আমি আছি এখানে।”
– আচ্ছা।
তারপর আনিলা আদ্রের পেছন পেছন ফাংশনের বাইরে এসে পড়ে। আনিলা তো বুঝেই উঠতে পারছে না আদ্র ঠিক কি চায়। যে কখনো চোখ তুলেও তাকায়নি সে কি না আজ আলাদাভাবে কথা বলবে লাইক সিরিয়াসলি এটা বিলিভ করা যায়?
“আচ্ছা উনি কি আমার বিষয় টা বুঝতে পেরেছেন যে আমি তাকে….হয়তো তাই জন্যই হয়তো আমায় অন্যকোথাও নিয়ে টাইট দিবে নয়তো মেরে কোথাও ফেলে আসবে। না আনিলা না তুই ওর ফাদে পা দিতে পারিস না।”
ভেবেই আনিলা ঢোক গিললো আর সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। আদ্র পিছে ফিরে দেখে আনিলা এক জায়গা তেই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্র ভ্রু কুচকে বলে,”কি ওখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
– ইয়ে মানে আমি সরি কথা দিচ্ছি আর জীবনেও এমন হবে না প্লিজ এবারের মতো ছেড়ে দিন।
আনিলার এমন কথা শুনে আদ্র পুরোই বেকুব বনে গেলো।
– মানে? সরি কেন বলছো? আর আমিই বা তোমার কি করবো?
– ওইযে ওই বিষয়টা।
– কোন বিষয়?(ভ্রু কুচকে)
-(কি ব্যাপার আদ্র কি জানে না নাকি না জানার ভান করছে? নাহ কিছু না কিছু বলে এখান থেকে যেতেই হবে।)
বলেই হঠাৎ ফোনের দিকে তাকায়। ফোন কানে দিয়ে আদ্র কে ব্যস্ততা দেখিয়ে আনিলা সেখান থেকে কেটে পড়লো। আনিলাকে এভাবে চলে যেতে দেখে আদ্র বেশ বুঝতে পারলো আনিলা তাকে এভয়েড করছে। তা দেখেই আদ্রের মন খারাপ হয়ে গেলো।
-“আমাকে এভাবে এভয়েড কেন করলো? ও কি আমায় পছন্দ করে না যার জন্য এভাবে পালালো।”
এসবই আদ্র ভাবছিলো তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাংশনে চলে আসে।
ফারান কতোক্ষণ ধরে নিশার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু নিশার আসার নাম গন্ধই নেই
“এই মেয়ে টা আবার কই চলে গেলো কে জানে। একটা শাড়ি পড়তে কি মানুষের সারাদিন লেগে যায় নাকি…..
ফারান কিছু বলতে পারলো না সামনের দিকে তাকিয়ে একদম হা হয়ে গেলো নিশাকে দেখে। আজ নিশাকে পুরো হুরপরির মতো লাগছে। সব ছেলেরা হা করে তাকিয়ে আছে নিশার দিকে। ফারানের তো দৃষ্টি সরছেই না নিশার থেকে। না চাইতেও মুখ দিয়ে “মাহ শা আল্লাহ” বলে ফেললো। নিশা দূর থেকে ফারানকেও দেখলো। ফারান কে এতোক্ষণে নিশা ভালোভাবে দেখলো। ফারানকে দেখে নিশা একপ্রকার ক্রাশ খেলো।
– (ইসসস ছেলে রা এতো কিউট কি করে হয় আল্লাহ এর থেকে তো চোখই সরাতে পারছি না। বিশ্বাসই হচ্ছে না এই কিউট ছেলে টা আমার বর। এমা ছি ছি এসব কি ভাবছি আমি। একটুও ভালো না এই বজ্জাত টা। কিন্তু অস্বীকারও তো করতে পারছি না।)
এরকম নানান ভাবনার মাঝেই নিশা ফাংশনে আসে। মেয়েদের দৃষ্টি ফারানের দিকে আর ছেলেদের দৃষ্টি নিশার দিকে। নিশার কোনো দিকেই খেয়াল নেই সে স্টেজের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিশা লক্ষ্য না করলেও ফারান ঠিকই খেয়াল করছে যে ছেলে রা নিশার দিকে তাকিয়ে। ফারান কেন যেনো সহ্য করতে পারছে না একপ্রকার অস্বস্তি তে ভুগছে। ফারানের কিছু বিষয় নিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে বুঝে আদ্র জিজ্ঞেস করলো,”কি রে এমন করছিস কেন?”
– কেমন?
– মনে হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তিত।
– ও কিছু না।
– বল! তোকে অনেকক্ষণ ধরে আমি খেয়াল করছি।
আদ্রর জোরাজোরি তে ফারান মুখ খুললো, “আমি বুঝতে পারছি না, সব ছেলে গুলা নিশার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমার রাগ লাগছে ওদের উপর ওয়াই?”
ফারানের এমন কথায় আদ্র একদমই অপ্রস্তুত ছিলো না। চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে ফারানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদ্রর এভাবে তাকানো দেখে ফারান বলে,
– কি এভাবে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছিস কেন?
-(এই ফারান কি আবার নিশার প্রেমে ট্রেমে পড়লো নাকি? নাহ ব্যাপার টা খুটিয়ে দেখতে হচ্ছে তো।)
– কি হলো কোথায় হারালি?
– তুই কি নিশাকে ভালোবাসিস?
আদ্রর এমন কথায় ফারানের কাশি উঠে গেলো। তারপর নিজেকে সামলে বলে,”ককককইইইই নাহ তো তোর কি মাথা খারাপ? ওই মেয়েকে আমি ভালোবাসবো লাইক সিরিয়াসলি হাহহহ!!”
ফারানের কথা গুলো কেন যেনো আদ্রর বিশ্বাস হলো না। তবুও কিছু বললো না সামনের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিলো,
“(দোস্ত তোর কথায় যতোটুকু বুঝলাম আমাদেরই কিছু না কিছু করতে হবে যার মাধ্যমে তুই নিজে স্বীকার করতে বাধ্য হবি।)”
কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারানের ডাক পড়লো গান গাওয়ার। ফারানে নাম শুনতেই সবাই যেনো চিল্লিয়ে উঠলো। ফারান মুচকি হেসে একটা গিটার নিয়ে স্টেজে উঠলো। মেয়েদের হইহুল্লুর যেনো থামে না। ফারান সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিশার দিকে তাকায়। তারপর নিশার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। ফারানের হাসিতে নিশা হাসার বদলে ভেংচি কাটলো। এতে ফারান হাসলো। ফারানের হাসিতে যেনো মেয়েরা পাগল হয়ে যাচ্ছে। ফারান নিশার দিকে তাকিয়েই গিটারের টোন বাজানো শুরু করলো,
তেরি বারিশে….ভিগায়ে মুঝে….
তেরি হাওয়ায়ে….বাহায়ে মুঝে…
পায়ো তালে মেরে…জামিনে চালপাডি
এয়সা তো কাভি…হুয়া হে নেহি..
ইয়ে মেরে দিল মুবারাক হো
ইয়েহি তো পেয়ার হে…..
গানের প্রতিটা লাইন যেনো নিশাকে ডেডিকেট করা। নিশা তো চোখ অফ করে গান শুনছে। ফারানকে ভালো না লাগলেও নিশা ফারানের গান খুব পছন্দ করে কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয়না। পুরোটা গান নিশার দিকে তাকিয়েই গাইলো এবং ফারানের গান যে নিশার পছন্দ তা ফারান বেশ বুঝতে পেরেছে। গান শেষ হতেই নিশা চোখ খুলে ফারানের দিকে তাকালো এবং দেখলো ফারান নিশার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে রহস্যময়ী হাসি। এই হাসির মানে নিশা বুঝতে না পারলেও এটা ভালো বুঝতে পেরেছে যে কিছু না কিছু কান্ড ঘটাবে ফারান।
,
,
,
,
,
চলবে!!!