Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-২৬

0
4887

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৬”
,
,
ফারান স্টেজ থেকে নেমে ডাইরেক্ট নিশার পাশে গিয়ে বসলো। নিশা তো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।

নিশা- এই প্রব্লেম কি আপনার আমার পাশে এসে বসেছেন কেন?

ফারান- আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। এখন আমার কান না খেয়ে সামনে তাকাও স্টুপিড।

নিশা আর কিছু বললো না গাল ফুলিয়ে সামনের দিকে ফিরে গেলো। নিশা আর ফারানের ঝগড়াতে আনিলা রিদি মুখ টিপে টিপে হাসছে। কিছুক্ষণ পর কাপল ডান্সের পালা আসলো। সবাই এক এক করে রেডি হতে লাগে। নিশা তো সেইরকম কনফিউশনে আছে। ফারান বুঝেও না বোঝার ভান করে বলে,”কি এভাবে ঘামছো কেন?”

নিশা- কই ঘামছি?

ফারান কিছু না বলে নিশার হাতে হাত রাখলো তারপর শান্ত সুরে বলে,”ফাংশন কে ফাংশনের মতোই নিবা এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি আছি পাশে।”

বলেই ফারান অন্যদিকে চলে গেলো। ফারানের কথায় কেন যেনো নিশার অনেক ভরসা পেলো। নিশা জানে না কিভাবে সে ফারানকে এতোটা বিশ্বাস করে। তার সাথে থাকলেই যেনো নিশা নিজেকে সবচেয়ে সুরক্ষিত মনে করে নিজের অজান্তেই।

ঘন্টাখানেক পর,,

এক এক করে সব পার্টিসিপেন্ট স্টেজে নেচে আসলো কিন্তু এখনো ফারানের খবর নেই। সেই কখন গেছে এখনো তার ফেরার খবর নেই। আদ্র আদন আফনাদ কতোক্ষণ ধরে ফারানের ফোনে ট্রাই করছে কিন্তু কিছুতেই ফারানকে ফোন এ পাচ্ছে না। এখন নিশাও ফারানের জন্য টেনশনে পরে গেলো। কোথায় গেছে ফারান তা কেউ জানে না এবং বুঝতেও পারছে না। টিচার রাও তাড়া দিচ্ছে আফনাদরা কোনোরকমে তাদের সামলাচ্ছে। পরে যখন দেখলো ফারান ফিরছে না তখন নিশা ঠিক করলো তাদের না করে দিবে। যেই ম্যামদের কাছে যাবে এমন সময়ে কোনো এক পরিচিত কন্ঠে কেউ বলে উঠে,”দাঁড়াও নিশা!”

ফারানের কন্ঠ শুনতেই নিশা পিছে ফিরে তাকায়,,হ্যাঁ ফারান এসেছে। ফারানকে দেখে নিশা বেশ খুশি হলো। ম্যামরা ফারানকে দেখতেই বলে যেনো তাড়াতাড়ি পারফর্ম করে। নিশাকে নিয়ে ফারান স্টেজে উঠলো। আস্তে আস্তে সফট টোন বাজতে লাগে। ফারানের এক হাত নিশার কোমড়ে দিলো আরেকহাত নিশার হাতে।

জানাম জানাম জানাম
সাথ চাল না ওয়াহি
কাসাম তুমহে কাসাম আকে মিল তা নেহি
এক জান হে ভালে
দো বাদান হো জুদা
মেরি হোকে হামে শাহি রেহনা
কাভিনা কেহনা আলভিদা
মেরি সুভা হো তুমহি অর তুমহি শাম হো
তুম দারদ হো তুমহি আ রাম হো
মেরি দুয়ান সে
আতি হে সাদা
মেরি হোকে হামেশাহি রেহনা কাভিনা কেহনা আলবিদা….!

গান শেষ হতেই নিশা আর ফারান থামলো। নিশার কেমন যেনো লজ্জা লজ্জা করছে কারণ পুরোটা সময় ফারান নিশার দিকে তাকিয়ে ছিলো। নিশা আর ফারানের একেক স্টেপ যেনো সকলের মন ছুঁয়ে গেলো। নাচ শেষ হতেই সবাই জোরে জোরে হাত তালি দিতে থাকলো। তালির শব্দে ফারানের ধ্যান ভাঙ্গে। নিশা সেখানে এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে নেমে পড়ে স্টেজ থেকে। ফারানও একটা টেডি স্মাইল দিয়ে নেমে আসে। ফারান নিশার সাথে কথা বলছিলো এমন সময়ই ফারানের হাতের দিকে খেয়াল করে দেখলো হাতে ব্যান্ডেজ করা।

নিশা- (যখন উনি গান গাচ্ছিলো তখন তো এই ব্যান্ডেজ দেখিনি হঠাৎ এটা কোথা থেকে আসলো অদ্ভুত ব্যাপার তো।)

নিশার মনে খটকা জাগলেও প্রকাশ করলো না।অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম শেষ হতেই যে যার বাসায় চলে যায়।

রাত ১২টায়,

নিশা ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময়ই নিশার ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখে আননোন নাম্বার। নিশা আননোন নাম্বার এর কল রিসিভ করে না এখনও করলো না। রিং হতে হতে কেটে গেলো। আবার বাজলো নিশা এবারও ধরলো না। এভাবে কয়েকবার ফোন বেজে বন্ধ হয়ে গেলো।

নিশা- যাক এবার শান্তিতে শুতে পারবো শালাদের কাজ কাম নাই মাঝ রাত্রে মেয়েদের সাথে লাইন মারতে ফোন দেয় যত্তোসব।

এমন সময়ই টুপ করে মেসেজের শব্দ হলো নিশা ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ টা দেখলো। মেসেজ টা দেখে নিশা বেশ বুঝতে পারে এটা ফারান। মেসেজে লেখা,”ওই মেয়ে ফোন কি ধরবা নাকি তোমার ফর্ম ছিড়ে পানিতে ফেলে দিবো?”

আবার রিং বাজতেই নিশা ফোন রিসিভ করলো।

নিশা- কি হয়েছে কি আপনার মাঝ রাতে ডিস্টার্ব করেন কেন? বাই দ্যা রিক্সা আপনি আমার নাম্বার কই পেলেন?

ফারান- এই ফারান চৌধুরি যা ইচ্ছা তাই করতে পারে এই নাম্বার তো জাস্ট একটা সুতার সমান এইটা জোগার করতে পারবো না?

নিশা- দেখেন আমার আপনার সাথে আজাইরা প্যাঁচাল করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নাই ফোন রাখেন।

ফারান- নাহ ফোন তো রাখা যাবে না।

নিশা- তো?

ফারান- তোমার বাসার এড্রেস দেও।

ফারানের এমন কথায় নিশা শোয়া থেকে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।

নিশা- কেকেকেকেন? আ..আ..আমি দিতে যাবো কেন?

ফারান- দিলে প্রব্লেম কি?

নিশা- ওকে।

বলেই নিশা একটা ভুল এড্রেস দিয়ে দিলো। এতে ফারানের ডাউট লাগলো কারণ নিশা যা ধড়িবাজ মেয়ে এক কথায় কখনোই কিছু করবে না এর মানে এই এড্রেস এ কোনো ঘাবলা আছে। যাইহোক দেখা যাক কি হয়।

এভাবেই কথা বলতে থাকে। কথা বলছে বললে ভুল হবে। বলা উচিত ঝগড়া করছে। ঝগড়া করতে করতে নিশা কখন ঘুমিয়ে পড়ে নিজেই বুঝে উঠে না। নিশাকে চুপ হয়ে থাকতে দেখে ফারান কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করলো কিন্তু নিশার রেসপন্স নেই শুধু নিশার নিশ্বাসই শুনতে পারছে।

ফারান- হে আল্লাহ কোন মানুষ ঝগড়া করতে করতে ঘুমায়? এই মেয়ে কে তুমি কোন ধাতু দিয়ে বানাইসো তুমি?

এগুলোই ভাবছিলো ফারান। কানে ফোন দিয়ে নিশার নিশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে সে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো। দুজনই ক্লান্ত সারাদিনের তাড়ায়।

সকালে,,

ভোরে ফারান ঘুম থেকে উঠেই ফোন টোন ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইয়াসা ফারানকে এভাবে নামতে দেকজে বলে,”আরে আরে এভাবে কোথায় যাচ্ছিস না খেয়ে দেয়ে?”

ফারান- কাজ আছে।

বলেই যেতে নিবে ইয়াসা পথ আটকালো এবং বললো,”আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোথাও যেতে পারবি না।”

ফারান চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয় তারপর একটা ইশারা করতেই ইয়াসা পথ থেকে সরে গেলো তারপর ফারান কিছু না বলে চলে গেলো। ইয়াসার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। ভেতরের ক্ষতটা যে অনেক বেশি। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ কেঁদে উপরের এক রুমের দিকে তাকালো। তাকাতেই যেনো কষ্ট আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।

এইদিকে,,

নিশার ঘুম ভাঙ্গতেই আস্তে ধীরে উঠে গেলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ১০টা বাজে। চটপট ফোন চার্জ দিতে গিয়ে দেখলো ১০ ঘন্টা ২১ মিনিট ১৮ সেকেন্ড ফারানের সাথে কলটাইম। আর এখনো চলমান। নিশা তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলো।

নিশা- আল্লাহ আমি সারারাতে একবারও কাটিনি?আর ওই বজ্জাত টা? সে কি কাটতে পারতো না শুধু শুধুই বেলেন্স নষ্ট। বাই দ্যা উস্টা আমার এতো ভেবে কাজ নাই পেটের মধ্যে তো ইন্দুর দৌড়োচ্ছে।

বলেই নিশা ওয়াশরুম গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে এসে লিভিং রুমে দেখে আনিলা আরামসে পায়ের উপর পা তুলে টিভি দেখছে আর কফি খাচ্ছে।

নিশা- ওই ছ্যাড়ি পা নামাইয়া রাখ আর সারাদিন টিভিতে তোর কোন জামাই রে দেখোস?

আনিলা- ওলেলে যতো দোষ নন্দোঘোষ। নিজে যখন দেখো তোমারে কিছু বলি হুহ..(গাল ফুলিয়ে)

নিশা- তোর মতো আর সারাদিন বসে থাকি না তুই তো…. এই এক সেকেন্ড দাড়া দাড়া এই চ্যানেল রাখ দেখ কি বলে।

আনিলা চ্যানেল বদলায় না। আজও সেই রেপিস্ট কিলারের নিউজ কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে ভার্সিটির আশেপাশেই খুন টা করা হয়েছে। আর আগে মাঝ রাতে খুন করা হতো আর কাল নাকি রাত ৮-৯ টা নাগাত খুন টা করা হয়েছে। নিশা তো ভ্রু কুচকে তাকায়।

নিশা-(আচ্ছা কাল তো আমরা সবাই ভার্সিটিতে ছিলাম ওই সময়ে এর মাঝে কি করে খুন হলো। কই আমরা তো কেউ টের পেলাম না তো?)

আনিলা- এই এবার তো ভার্সিটির আশেপাশেই হইসে খুন আমরা কেন টের পেলাম না?

নিশা- সিরিয়াল কিলার কি তোরে দেখিয়ে দেখিয়ে খুন করবে বলদের মতো কথা কেন বলিস।

আনিলা- তা তো বলিনি।(মুখ গোমড়া করে)

নিশা কথা না বাড়িয়ে খাবার টেবিলে চলে গেলো। সেখান থেকে খাবার খেয়ে নিলো। খাবার আগেই রেখে দিয়েছে আনিলা। তারপর নিশা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো রাইসাদের বাসায় যাবে বলে। আজ ভার্সিটি অফ তাই একটু ফ্রেশ মুডে আছে নিশা।

নিশা-(আচ্ছা এই কিলার কি আমাদের আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে অথচ আমরা দেখেও চিনতে পারছি না? আহা এই কিলার কে পাইলে তো আমি এর হাত ধরে কাজি অফিসের দিকে দিবো দৌড়। এহ যাহ আমি তো ভুলেই গেছি আমি ম্যারিড উফফফফ আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মাড় হয়ে গেলো আল্লাহ গো এ কেমন বিচার তোমার এভাবে আমার দিল টা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে দিলা?)(ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে)

ভাবতে ভাবতেই নিশা লিফটের সামনে চলে আসে।লিফটের বাটন চাপতেই দরজা খুলে গেলো এবং ভেতরে যাকে দেখলো দেখার মতো একদমই প্রস্তুত ছিলো না।
,
,
,
,
,
চলবে!!!