#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৭”
,
,
নিশা লিফটের মধ্যে তাকিয়ে দেখে ফারান আফিয়াকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে। নিশার মতো করেই ফারান নিশাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। আফিয়া তো নিশাকে দেখে খুব খুশি হয়ে যায় এবং বলে,”নিশুপুউউউউউউ।”
আফিয়ার মুখে “নিশুপু” শুনে ফারান আরো অবাক হয়ে যায়। তার মানে আফিয়ার নিশুপুই এই নিশা আর নিশার বাসাই আফিয়াদের পাশের ফ্লাট। বাহ আজ সকালে কার মুখ দেখে ঘুম থেকে উঠেছে সেটাই ভাবছে ফারান একেবারে মেঘ না চাইতেই জল। তবে আফসোস একটা বিষয় নিয়ে যে আগে কেন জেনে নিলো না আফিয়ার নিশুপু কে? সে যাইহোক এটলিস্ট এখন তো পেলো। নিশা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
– আ…আ..আপনি আর আ…আ..আফিয়া…
– নিশুপু আমার ফিফু ভাইয়াকে দেখে এমন করছো কেন? দেখেছো তোমাকে বলেছিলাম না আমার ফিফু ভাইয়া অনেক কিউট হ্যান্ডসাম।
আফিয়ার কথায় নিশা টাস্কি খেয়ে যায়। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না শুধু ভয়ে ঘামছে। নিশার এমন অবস্থা ফারান খুব করে উপভোগ করছে। তারপর বলে,”কি হলো এভাবে ঘামছো কেন গরম লাগছে বুঝি?”(শয়তানি হাসি দিয়ে)
নিশা রুমাল নিয়ে চট করে মুখ মুছে বলে,”ক…ক…ক…কই আপনি হয়তো ভুল দেখেছেন।”(দাতে দাত চেপে)
আফিয়া- আচ্ছা আপু চলো না আমাদের বাসায় ফিফু ভাইয়াও এসেছে একসাথে আড্ডা হবে হিহি কি মজা কি মজা।
নিশা কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারান বলে উঠে,”হ্যাঁ তা তো অবশ্যই দেরি কিসের চলো।”
ফারানের এমন রহস্যময়ী হাসি + কথাবার্তা শুনে নিশা বেশ ভালো বুঝতে পারছে আবহাওয়ার হাল ভালো না। তাই ফারানের কথা টা ইগনোর করে বলে,”আফিয়া আমি একটু কাজে বাইরে যাচ্ছি পরে আমরা নাহয় আড্ডা দিবো কেমন?”
নিশার কথায় ফারান আফিয়াকে কোল থেকে নামিয়ে বলে,”আফুপরি তুমি যাও আমার জরুরি কল করার আছে কথা শেষ করেই তোমার নিশুপু কে নিয়ে আসছি কেমন?”
আফিয়া- আচ্ছা ভাইয়া।
বলেই আফিয়া ভেতরে চলে গেলো। নিশা শিড়ির দিকে যেতে ফারান পথ আটকিয়ে দাঁড়ালো।
ফারান- কই যাও হুম? আড্ডা দিবা না?(ডেবিল স্মাইল দিয়ে)
নিশা- আপনার সাহস তো কম না আপনি আমার পথ আটকে দাঁড়ালেন সরুন সামনে থেকে নয়তো আমি চিৎকার করবো।
ফারান- করো সমস্যা নেই লিফটের সাইড টা ফুল সাউন্ডপ্রুফ। যতো ইচ্ছে চিল্লাও কেউ তোমার ওই গরিলা মার্কা চিল্লানো শুনতে পারবে না।
নিশা- আমার ডায়লগ আমাকেই ফিরাচ্ছেন?আপনাকে ভালো কথায় সরতে বলসি সরেন আমার যেতে হবে।
ফারান- নোপ! তুমি যে এই এপার্টমেন্টে থাকো আগে কেন বলো নাই?
নিশা- আমার এতো ঠ্যাকা না যে আপনাকে নিজের এড্রেস ঢোল পিটিয়ে বলবো ওকে?
ফারান- কাল যে ভুল এড্রেস দিয়েছো তার জন্য তো অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে তোমাকে।
বলেই এক পা এক পা করে ফারান নিশার দিকে এগোতে থাকে আর নিশা ফারানের এমন এগোনো দেখে ভয়ে একটা ঢোক গিললো আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে লাগলো, “স…স…স..সরি আ…আ…আর ভুল ত…ত…তথ্য দিবো না।”
ফারান- সরিতে কাজ হবে না।
নিশা- তো?
ফারান- চলো আফিয়ার বাসায়।
বলেই নিশাকে টেনে আফিয়াদের বাসায় নিয়ে গেলো। নিশাকে দেখে তো আফিয়ার আম্মু বেশ খুশি হলো সাথে ফারানকে দেখেও। আফিয়া তো দুইজন কে টেনে বেলকনিতে নিয়ে গেলো আর বকর বকর করতে লাগে। নিশার এখন একদম বিরক্তি লাগছে কারণ ফারান কিছুক্ষণ পরপরই তাকে খোঁচাচ্ছে। নিশা বেশি সহ্য করতে না পেরে ফারানের হাতে নিজের হাতের নখ ডাবিয়ে দিলো! ফারান ব্যথায় কিছুটা “আউচ” করে উঠলো।
আফিয়া- ফিফু ভাইয়া তোমার কি হয়েছে??
ফারান- কিছু না আফিপাখি আসলে এখানে অনেক মশা তো তাই হাতে কামড়িয়েছে।
কথাটা যেনো নিশাকে খোচিয়েই বলা হয়েছে। নিশা তো রেগে পুরো বোম। শেষ পর্যন্ত কিনা একটা সামান্য মশার সাথে তার তুলনা করলো? দাঁড়াও ব্যাটা তোর কি হাল করি দেখ এবার।
ফারান- আফিপাখি জানো আজ তোমার ইরা আপু আমার সাথে দেখা করেছে।
আফিয়া- ইয়েএএএ কি মজা ইরা আপুর সাথে তোমার দেখা হয়েছে। আচ্ছা ফিফু ভাইয়া আপুকে কবে আনবা আই রিয়েলি মিস হার।
কোনো মেয়েকে নিয়ে কথা বলাটা কেন জানি নিশা সহ্য করতে পারছে না। তার তো মন চাচ্ছে ফারানকে এই বেলকনি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। কোন ইরা খিরাকে নিয়ে বকর বকর করেই চলেছে। ফারান বুঝতে পারলো যে নিশা রেগে আছে তাই আরও রাগাতে বলে, “জানো আফিপাখি তোমার ইরাপি কে তোমার হয়ে চকলেট দিয়েছি।
আফিয়া- ইয়েএএ….(হাত তালি দিয়ে)
নিশা যেনো আরও রেগে গেলো। এভাবেই কিছুক্ষণ ইরাকে নিয়ে অনেক কিছু বললো। নিশা একদম সহ্য করতে না পেরে উঠে চলে গেলো। নিশা লিভিং রুমে আসতেই আফিয়ার আম্মু ডাক দিলো।
– আরে নিশা এখানে কি করছো?
নিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,”ইয়ে মানে আন্টি আপনার কিছু লাগবে কি না সেটা দেখতে এসেছিলাম।”
– ওহ ভালো করেছো একটু কফিটা নিয়ে যাও তো ফারানের জন্য। আমার নিচে গিয়ে দেখতে হবে পানির মটরে সমস্যা হলো নাকি।
নিশা- ওকে আন্টি আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।
আফিয়ার আম্মু হেসে চলে গেলো। নিশার কফির দিকে নজর যেতেই একটা দুস্টু বুদ্ধি মাথায় আসে। নিশা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে কফিটা নিয়ে সোজা গেলো কিচেনে। সেখান থেকে খুঁযে খুঁজে মরিচের বোয়াম টা বের করলো। তারপর প্রায় ৫ চামচ কফিটায় ঢালে। ঠিকমতো মিশিয়ে ফারানের কাছে নিয়ে আসে।
ফারান- সূর্য আজ কোনদিকে উঠলো তুমি আমার জন্য কফি আনলা?(ভ্রুকুচকে)
নিশা- আমার এতো সখ নাই আপনার জন্য আনার ওকে। আন্টি বললো তাই তার কথা ফেলতে পারিনি।(নরমালি কথাগুলো বললো)
ফারান- ওও আচ্ছা থ্যাংকস।
নিশা-(খা খা এমন খাবার খা সখ চুকে যাবে তোর আমার সাথে লাগার শালা নাইজেরিয়ান একটা।)
ফারান কফিতে এক চুমুক দিতেই সব ফুসসস করে নিশার গায়ে গিয়ে ফেললো। নিশা ফারানের সামনাসামনি বসার কারণে সব নিশার মুখে। নিশা জ্বালায় চিৎকার দয়ে উঠে আর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আর ফারান ঝালে সোজা কিচেনের দিকে দৌড় দেয়। ফ্রিজ থেকে মিষ্টি আর দই নিয়ে সেগুলো খেয়ে ঝাল মিটালো। ঝাল লাগায় নিশার চেহারা লাল হয়ে আছে। সে তাড়াতাড়ি ফারানের সামনে পড়ার আগেই নিজের বাসাতে চলে গেলো। ফারান পুরো বাসা খুঁজেও নিশাকে পেলো না।
ফারান- কই গেলো এই মেয়েটা আমায় ঝাল খাইয়ে নিজেই কেটে পড়লো। ওকে আমিও দেখি কতোদিন আমার থেকে পালিয়ে বেড়াও। আমিও এর শেষ দেখে ছাড়বো আমাকে ঝাল খাওয়ানো তাইনা।
বলেই নিশার ফ্লাটের দিকে যেতে নিবে এমন সময়ই ফারানের কল আসে। ফোনে কথা বলতে বলতে ফারান এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো। নিশা দরজার লুকিং গ্লাস দিয়ে এতোক্ষণ দেখছিলো ফারান আছে না গেছে। যখন দেখলো চলে গেছে তখন হাফ ছেড়ে বাচলো। আনিলা সেই কখন থেকে নিশার পিছে দাঁড়িয়ে গালে হাত দিয়ে নিশার কাণ্ডকারখানা দেখেই যাচ্ছে। নিশা পিছে ফিরতেই আনিলা প্রশ্ন করে কেন এমন করছে রাইসাদের বাসায় কেন গেলো না। নিশা সবটা খুলে বলে। সব শুনে আনিলা হাসতে হাসতে বসে পড়লো। নিশা গাল ফুলিয়ে বলে,”এভাবে হাসছিস কেন?”
আনিলা- তো কি হাসবো না? তোদের দুইটার কান্ডে যে কেউই হাসবে। তোরা এই জীবনে আর শোধরাবি না একজন আরেকজনের পিছে অলয়েজ ফেভিকলের মতো লেগেই থাকিস।
নিশা- আমি না ওই বজ্জাত টাই আমার পিছে লাগতে আছে। কিছু মানুষের স্বভাব জানিস না অন্যের সুখে তাদের শরীর চুলকায় তেমন টাই ওই ফ্যালফ্যাল করে হুহ।
বলেই নিজের রুমে চলে যায়। আনিলা সেখানে বসেই কিছুক্ষণ হাসে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে,,
ফারান নিশার পিছে ১ঘন্টা ধরে দৌড়াচ্ছে পুরো ভার্সিটি। নিশা কিছুক্ষণ পরপর লবডঙ্কা বলে দৌড়াচ্ছে আর ফারান এতে আরও রেগে আরও জোরে দৌড়ায়। ফারান আর নিশার কান্ড পুরো ভার্সিটির সব স্টুডেন্টস দেখছে। কেউ কেউ হাসছে,কেউ কেউ রাগে জ্বলছে,কেউ কেউ কানাকানি করছে।
ফারান- এই মেয়ে দাঁড়াও বলছি নইলে সত্যি সত্যি তোমার খবর আছে বলে দিলাম। আমার কফিতে ঝাল মিশিয়ে এখন আমায় ছুটানো?(রেগে চিল্লিয়ে)
নিশা- আমি কি বলসি আমার পিছে দৌড়ান? আর আপনি যেমন আপনার সাথে তেমনই হবে।
ফারান- সাহস থাকলে দাড়াও তারপর দেখো তোমার কি হাল করি।
নিশা সাহস দেখিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো তারপর পিছে ফিরে বললো,”নেন দাঁড়ালাম এখন দেখি আপনি কি করেন।”
নিশা বলতে দেরি কিন্তু ফারানের নিশার মুখে কালি লাগাতে দেরি নেই। দুই হাত ভর্তি কালি ডলে ডলে একেবারে লাগিয়ে দিলো ফারান। নিশা চোখ মুখ খিচে ফারানকে দিলো এক ধাক্কা।
নিশা- এই আপনি আমার মুখে কি মাখালেন?
বলেই ফারানের হাতের দিকে তাকালো এবং দেখলো কালি।ফারান তো হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে যারা আছে তারা নিশার এমন ফেস দেখে হেহে করে হেসেই যাচ্ছে। নিশা থাই গ্লাসে নিজের চেহারা দেখে নিজেই চিল্লিয়ে উঠে তারপর ব্যাগ দিয়ে মুখ ঢেকে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যায়। ফারান এখনো সেই জায়গাতে দাঁড়িয়ে পাগলের মতো হেসেই চলেছে। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলে,
ফারান- এবার বুঝবে মজা আমার সাথে লাগার। খুব তো আমায় ঝাল খাইয়ে ছিলে হুহ।
এইদিকে ভার্সিটিতে এসেই আনিলা আদ্রর চোখাচোখি হয়। তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে আদ্র পাশ কেটে চলে যায়। এরকম কয়েকবার দুজন দুজনের সামনে এসে পড়েছে আর আনিলা বরাবরই আদ্রর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।আনিলার কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে আদ্রর সামনে বা আদ্রকে দেখলে তাই যত পারছে আদ্রর থেকে দূরে থাকছে। এদিকে আনিলার এমন এভয়েড আদ্র মানতেই পারছে না। তার ভেতর টা যেনো ফেটে যাচ্ছে এমন অবস্থা। কেন নিজের মধ্যে এতো যুদ্ধ চলছে আদ্রর? তাহলে কি সেও আনিলার প্রেমে পড়ে গেছে নাকি এটা খনিকের মোহ? খনিকের মোহে এতোটা কস্ট থাকবে বলে মেনে নিতে পারছে না আদ্র। তাহলে কি ভালোবেসে ফেলেছে আনিলাকে?
এদিকে,,
নিশা- নাইজেরিয়ান, গন্ডার,খবিশের গুষ্টি,বজ্জাত আমাকে কালি মাখানো ইসসসস আমার মুখের কি অবস্থা করেছে এএএএএএ আমি তোরে ছাড়বো না এর শেষ দেখে ছাড়বো আমি। নিশা কখনো হারে না নিশার জয় সবসময়ই নিশার মাঝে বিদ্যমান মনে রাখিস তুই। তুই বুনো ওল হলে আমিও যে বাঘা তেঁতুল!!
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!