Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-২৮

0
4538

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ২৮”
,
,
আদ্র- কেন আমায় এভাবে এভয়েড করছো বলতে পারো?

আনিলা অবাক হয়ে বলে,”ওভয়েড করছি মানে?”

আদ্র- তাহলে আমায় দেখলে পালিয়ে কেন যাও? কি দোষ আমার যার জন্য এভাবে আমায় কষ্ট দিয়েই যাচ্ছো।

আনিলা- আসলে….

আদ্র- কোনো কথা না আজ শুধু আমি বলবো আর তুমি শুনবে।

আদ্রের ঝাড়িতে আনিলা ভয়ে চুপসে গেলো এবং নিচের দিকে একমনে তাকিয়ে রইলো। আদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,”I Love You I can’t live without you please Don’t give me back”

আদ্রের কথায় আনিলা চট করে মাথা উঠিয়ে নিলো আর চোখদুটোকে রসোগোল্লার মতো করে তাকিয়ে রয়। আনিলা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না ইনফেক্ট সে কখনো ভাবেও নি আদ্র এতো ইজিলি তাকে প্রপোজ করবে আর সবচেয়ে বড় কথা সে কখনো এক্সেপ্টই করেনি যে আদ্র তাকে ভালোবাসবে। আনিলাকে এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র কয়েকবার চুটকি বাজালো কিন্তু আনিলার কোনো রেস্পন্স নেই কারণ আনিলা অতিরিক্ত শকড! সে নিজের মধ্যে নেই। আদ্র এবার আনিলাকে কাধ ধরে ঝাকি দিতে আনিলার জ্ঞান ফিরে।

আদ্র- কি হলো উত্তর দাও আমি কিন্তু কিছু বলেছি।

আনিলা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বোধক মাথা নাড়ায়। আদ্র অল্প অল্প বিষয় টা বুঝলো।

আদ্র- তার মানে তুমিও…

আনিলা লজ্জায় লাল হয়ে আবার মাথা নাড়ায়। আদ্র তো খুশিতে আনিলাকে জড়িয়ে ধরে। এ যেনো এক তৃপ্তিময় প্রাপ্তি!

এভাবেই কয়েকদিন কেটে যায়। এই কয়েকদিনে নিশা একবারের জন্যেও ভার্সিটি যায়নি। বলা যায় ইচ্ছা করে যায়নি। এদিকে ফারানের অবস্থা তো প্রায় পাগল প্রায়। নিশাকে ফোন দিলেও রেস্পনস করে না নিশা। নিশার বাসাতে আসলেও নিশা আনিলাকে দয়ে মিথ্যা বলায় যে নিশা বাসায় নেই নিজের বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে গেছে। এভাবেই ফারান নিশার দিন কাটছিলো।

একদিন,,

ভোর ৬টা বাজে। এমন সময়ই নিশাদের কলিং বেল বাজছে। নিশা এতে বিরক্তি হয়ে উঠলো ঘুমের মধ্যে।

নিশা- উফফফ কে এই সক্কাল সক্কাল আমার ঘুমের জগা খিচুড়ি করলো?(ঘুম কন্ঠে)

বলেই নিশা কানে আরেক বালিশ চেপে ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কলিংবেল এতো জোরেই বাজছে যেনো কলিংবেল এর স্ট্রক হবে। নিশা সহ্য করতে না পেরে “আসছি” বলে চিল্লিয়ে উঠে বসলো। তারপর গাল ফুলিয়ে দরজার সামনে এসে দরজা খুললো। দরজা খুলে সামনের মানুষটাকে দেখে নিশার যেনো ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠলো কারণ ফারান তার সামনে দাঁড়িয়ে With রাগী ফেস। ফারানের পড়নে জগিং স্যুট। নিশা একটা ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলে,”আ..আ..আপনি এখানে তাও এই ভো..ভো..ভোরে?”

ফারান কিছু না বলে নিশা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে সোফায় গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে। নিশা হাত দুটোকে মুঠি করে আবার সাভাবিক হয়ে দরজা লাগিয়ে লিভিং রুমে আসে।

নিশা- কি হলো আপনায় কিছু জিজ্ঞেস করেছি আর আপনার সাহস কি করে হয় একটা মেয়ের বাসায় এভাবে ঢুকার?

ফারান- আই এম ইউর হাসবেন্ড মাইন্ড ইট। সবে তো বাসায় ঢুকেছি চাইলে তোমার সাথে একই বেডরুমেও থাকতে পারি কারো কিছুই বলার সাহস নেই।

নিশা- ছি মার্কা কথা ব….

নিশাকে বলতে না দিয়ে ফারান বলে, “চুপপপপ! পুরোটা না শুনে সারাক্ষণ মাছির মতো ভ্যা ভ্যা করে।”

নিশা- কি বললেন আমি মাছি?(রেগে চিল্লিয়ে)

ফারান- আবার?(চোখ রাঙিয়ে)

নিশা এবার কিছু বললো না কিন্তু ঠিকই ভেতরে ভেতরে রাগে ফুসছে। ফারান চুপ থেকে বলা শুরু করে,”আমার তোমার সাথে থাকার সখ ইচ্ছা টাইম কোনোটাই নাই সো ব্যাডরুম কি তোমাকে আমার সামনে থেকে দেখতেই ঘৃণা লাগে।”

‘ঘৃণা” শব্দটা কেন যেনো নিশার বুকে গয়ে আঘাত করে। তবুও সেসব পাত্তা না দিয়ে বলে, “এতোই যখন ঘৃণা এখানে কি নিজের চেহারা দেখাতে আসছেন নাকি আপনাকে গিয়ে বলসি,’বাবু আসেন না কাছে এসে বসেন না” যত্তোসব।”

নিশার কথায় ফারান না হেসে পারলো না। হাসি থামিয়ে নিশাকে দুস্টুমি সুরে বলে,”তুমি যদি বাধ্য করো তাহলে ভেবে দেখতে পারি।”

ফারানের এমন কথায় নিশা চোখ বড় বড় করে ফেলে তারপর আঙুল উঠিয়ে বলে,”খবরদার কোনোরকম চালাকীর চেষ্টা করবেন না নইলে কিন্তু…”

ফারান- নইলে কি হুম? আমায় মারবা হাহা তোমার ওই শলার কাঠির ন্যয় হাত আমার কিছুই করতে পারবে না।

নিশা- আর আপনি তো গন্ডারের ফর্মুলাযুক্ত বুইড়া!!!

ফারান- ওয়ায়াট? এইটা আবার কি জিনিস?(ভ্রু কুচকে)

নিশা- কিছু না আমার বাসা থেকে বের হন এখানে আপনার কোনো কাজ নেই।

ফারান- আছে বলেই তো আসছি।

নিশা- এখানে আবার কি কাজ?

ফারান- নাস্তা বানাও আমার খিদে পেয়েছে।

নিশা- ওয়ায়ায়ায়াট!!!(চেঁচিয়ে) আমি আপনার জন্য নাস্তা বানাবো? মগের মুল্লুক পাইসেন?(রেগে)

ফারান- তো নাস্তা কি আমি বানাবো?

নিশা- তো কি…নিজের বাসায় যেয়ে নিজে নাস্তা বানান এএএএএহ ঠ্যাকা পড়সে তারে আমি বানিয়ে দিবো।

ফারান- এইটাও আমার বাড়ি ওকে?

নিশা- এহ আসছে এটা তার বাড়ি এইটা আমার নিজের ওক্কে?? এখানে আপনার কোনো অধিকার নাই!!

ফারান- আছে সব আছে।

নিশা- কি করে?

ফারান- ওকে এক্সাম্পল দেই। তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ সো তোমার যা কিছু সব আমার আবার আমার যা কিছু সেসবও তোমার।

নিশা- এই সকাল সকাল আমার ঘুম ভাঙিয়ে রঙতামাশা শুরু করসেন আপনি? কিসের বউ কিসের স্বামী? এই বিয়ে টাকে না আমি মানি আর না আপনি সেটা আপনি ভুলে যাবেন না।

ফারান- তো ডিভোর্সও তো দিতে পারবে না এখন মানা না মানা আসছে কোথা থেকে?হ্যাঁ একসময় আমি মানতাম না কিন্তু এখন মানি।

নিশা অবাক হয়ে বলে,”তাহলে কি আপনি আমায়….”

ফারান কিছু গম্ভির হয়ে বলে,”নো আই ডোন্ট বিলিভ লাভ সাইটস।”

ফারানের কথা শুনে নিশা কিছু বললো না। ফারান আবার বলে,,

ফারান- এই কেমন বউ তুমি বলো তো? এই সাত সকালে আমায় হুকুম করছো? আল্লাহ পাপ দিবে পাপ জামাই কে দিয়ে কাজ করালে।

নিশা- আপনার মতো জামাই কে গঙার জলে বস্তায় ভরে ভাসিয়ে ফেলা উচিত!

ফারান- তোমার শরীরে এতো শক্তি নাই এখন যা বলছি তা করো তাড়াতাড়ি যাও।

নিশা- পারবো না। আপনি এখন এখান থেকে যান তো ধুর আমার ঘুমের ১২টা বাজাইসেন।

ফারান- নো এই কয়েকদিন আমায় অনেক ঘুরাইসো বাসায় থেকেও সবাই কে দিয়ে মিথ্যা বলিয়েছো যে তুমি বাড়ি নেই। এখন শাস্তিস্বরূপ আমি যা বলবো তাই করতে হবে

নিশা- তো কি করতাম? ঢোল পিটিয়ে পিটিয়ে বলে বেড়াতাম আমি বাসায় আমায় এসে জ্বালান।

ফারান- সেটা তুমি ভালো জানো এখন যাও বলছি তাড়াতাড়ি নইলে তোমায় তুলে নিয়ে আছাড় মারবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)

নিশা নাক ফুলিয়ে হনহন করে কিচেনে চলে গেলো। ফারান সেখানে বসেই নিশব্দে হাসতে লাগে। এই কয়েকদিনে ফারান অনেকটাই উপলদ্ধি করতে পেরেছে যে নিশার প্রতি সে দুর্বল। শুনেছে যাকে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে মিস করে, যাকে ছাড়া সবকিছু বিরক্তিকর লাগে, যাকে একবার না দেখতে পেলে নিজেকে পাগলের মতো লাগে, তাকে ঘিরেই সকল ভাবনা কল্পনা যদি হয় তাহলে সেই মানুষটিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে।

ভালোবাসা কি এবং তার অনুভূতি কি সেটা এখনো ফারান বুঝতে পারছে না শুধু এইটুকুই বুঝেছে সে নিশার প্রতি দুর্বল। নিশাকে ছাড়া সে নিজেকে অমাবস্যা রাতের ন্যয় নিজেকে ভাবে। সেখানে পুরো অন্ধকার শুধু একটি আলোভরা চাঁদের অনুপস্থিতিতে। হয়তো এটাই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধন। এই পবিত্র বন্ধনের শক্তিতেই হয়তো দুজন দুজনার প্রতি এক অজানা টান। তবে ফারান এখন পর্যন্ত নিশার চোখে তার প্রতি অনুভূতি দেখতে পায়নি। তবে ফারানও হার মানবে না। সে যতোই বলুক না কেন ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নেই মনে মনে সে ভালোবাসাকেই বেশি প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে। মুখে বলা আর মনে থাকা কথা কি সবসময় এক হয়? অনেক সময় কিছু কথা প্রকাশ না করাই উত্তম আবার অন্যায়ও।

ফারানের ভাবনায় ছেদ ঘটালো কিচেন থেকে ভাঙচুরের মতো শব্দ। ফারান মিটিমিটি হাসছে কারণ সে বেশ বুঝেছে নিশা নিজের রাগ হাড় পাতিলেই ঝাড়ছে। নিশা চামচ,পাতিল সব শব্দ করে করে রাখছে মনে হচ্ছে যেনো কতো বছরের শত্রুতা এইসব জিনিসপত্রের উপরেই ঝাড়ছে।

নিশা- শালা বদ একটা! বাসায় থেকেও এর জন্য শান্তি পাওয়া যায়না। কই একটু আরামসে ঘুমাবো তা না আমার বাসায় এসে আমাকেই ধমকানো আবার এখন নাস্তা বানানো। উফফ কেন যে মরতে এই ঢাকা আসলাম? এর জন্য আমার জীবন জাস্ট ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলো। সারাবছর খবর নাই এই সক্কাল সক্কাল বউ বউ করে হাজির হইসে। এএএএএহ এতোদিন তোর জামাইগিরি কই ছিলো না আসমানে না জমিনে? দাড়াও না ব্যাটা তোর যে কি হাল করবো সেটা তুই নিজেও বুঝে উঠতে পারবি না যত্তোসব।

আনিলা নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সারারাত আদ্রের সাথে কথা বলে ফজরের নামাজ পরে তারপর ঘুমিয়েছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই আনিলা আদ্রের সাথে ফোনে কথা বলে রাত পার করে। তাই তো বেচারির কানে কিছুই যাচ্ছে না অথচ এদিক দিয়ে কতো বড় যুদ্ধই না চলছে।

নিশা এখন ভেবে পাচ্ছে না ফারানকে কি খাওয়াবে। পরে দিয়ে একটা কৌটার দিকে নজর যেতেই নিশা শয়তানি হাসি দিলো। সেটা থেকে খাবার নিয়ে লিভিং রুমে গেলো। ফারান সোফার সাথে হেলান দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে। নিশা মুচকি হেসে প্লেট দিয়ে ঢাকা খাবার টা টি-টেবিলের উপর রাখলো। ফারান ফোন রেখে উৎসাহিত দৃষ্টিতে নিশার দিকে তাকায় এবং বলে,”কি এনেছো?”

নিশা- নিজেই দেখে নিন কি এনেছি আপমার আপনার জন্য?(এক গাল হেসে)

নিশার কথার উত্তর না দিয়ে ফারান প্লেট টা উঠিয়ে নেয়। প্লেটের মধ্যের খাবার দেখে ফারান হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। এইদিকে নিশা তো মুখ টিপে টিপে হেসেই চলেছে। ফারান গাল ফুলিয়ে নিশাকে জিজ্ঞেস করলো….
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!