#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩৪”(রহস্য ফাস)
————————
– না ভাই প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন আমি আর কখনোই ওসব করার চেষ্টা করবো না।
ফারানের কানে যেনো কোনো কথাই ঢুকছে না। তার চোখের সামনে আজ থেকে ২ বছর আগের ঘটনা বারবার ভেসে উঠছে। এই ছেলেটার জন্য ফারান তার প্রিয় ছোট পরিকে হারিয়েছে কি করে সহ্য করবে এসব নাহ সে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। সকল নাটের গুরুকে যে ফারান চাঁদপুরেই পাবে সেটা তো কখনো ভাবতে পারেনি। আজ তার দিন শেষ!
ফারান গান টাকে ছেলেটার কপাল বরাবর রাখলো আর ছেলেটা আকুতি মিনুতি করছে যেনো তাকে ছেড়ে দেয়। ছেলেটাকে ফারানের দুজন লোক ধরে রেখেছে। ফারান রাগে ক্ষোভে ছেলেটার কপাল বরাবর কয়েকটা গুলি চালিয়ে দেয়। গুলিতে ছেলেটার মুখ পুরো থেবলে যায় তবুও ফারান গুলি অওরা বন্ধ করছে না। একটার পর একটা করেই যাচ্ছে। উপরের রাগের থেকে তার ভেতরের কষ্ট যে হাজারগুণ সেটা চাইলেও সে মুছে ফেলতে পারবে না। ফারানের দুচোখ বেয়ে শুধু নোনাজলই পড়েই যাচ্ছে। চোখ গুলো তার ভয়ংকর লাল,চুলগুলো এলোমেলো।
হঠাৎ ফারান চিৎকার শুনলো তাও খুব চেনা। পেছন ফিরে দেখে নিশা! নিশা ঘাবড়ে ফারানের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারানের রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো আর চেহারায় স্পষ্ট ভিয় ফুটে উঠলো। এর মানে কি নিশা ফারানের আসল রূপ জেনে গেলো? এখন ফারান কি করে পারবে নিশার ঘৃণা সহ্য করতে। নিশা কি আদৌ ফারানকে মেনে নিবে নাকি সারাজীবনের মতো…..নাহ এ হতে পারেনা ভাবতে গিয়ে ফারানের দম চলে যাচ্ছে। ফারান নিশার দিকে এক পা এগোতেই নিশা চিৎকার করে বলে,”নাহহহহ একদম এগোবেন না আপনি।”
ফারান- নিশা আমি….
নিশা- আপনি কোনো কথা বলবেন না আপনি একজন খুনি আপনি একজন নিরপরাধ মানুষকে খুন করেছেন।
ফারান- শাট আপ!!!!! নিরপরাধ কাকে বলছো তুমি? ও নিজেই একটা খুনি। ও আমার বোনকে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছে আমার প্রিয় জিনিসটাকে কেড়ে নিয়েছে।(রেগে চিল্লিয়ে)
নিশা অবাক হয়ে ফারানের দিকে তাকালো। নিশার জানামতে ফারানের কোনো বোন নেই তাহলে ফারান কোন বোনের কথা বলছে?
নিশা- আপনার তো কোনো বোন….
ফারান- হ্যাঁ আমার বোন ছিলো।(রেগে চিল্লিয়ে)
বলেই ফারান চুপ হয়ে বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। নিশা ফারানকে এই প্রথম কাঁদতে দেখছে। একটা ছেলের মাঝে কতোটা কষ্ট জমে থাকলে সে কাঁদে তা নিশা নিজেও পরিমাপ করতে পারছে না। ফারান নাক টেনে আবার বলা শুরু করে,
–
আমার যখন ৭ বছর বয়স ছিলো তখন আল্লাহ আমাদের একটা ছোট্ট পরি উপহার দিয়েছিলো। জানোনা পুতুলের মতো সেই মেয়েটাকে নার্স হাসিমুখে আমার কোলেই প্রথমে দিয়েছিলো। নিজ হাতে তাকে কোলে নিয়েছিলাম। সেদিন আমার মতো খুশি হয়তো কেউ ছিলো না৷ এরপর থেকে সবসময় তাকে নিজের কাছে রেখেছি। আমার ছোট্ট পরিটার নাম আমার নামের সাথে মিলিয়ে রাখলাম ফিহা। ছোট থেকে তাকে খুব আদর যত্নে বড় করেছি। নিজের এই আঙুল টা ধরে তাকে হাটা শিখিয়েছি। জানো আমার ফিহা পরিটা সর্বপ্রথম “দাদা” মুখ দিয়ে উচ্চারণ করেছে। বিশ্বাস করো সেদিন আমার খুশি বোঝানোর মতো ছিলো না। ছোট থেকে বেশ আমিই ওকে স্কুল দিয়ে নিয়ে আসতাম। দুই ভাইবোনের ভালোবাসার গিভীরতা টা অনেক ছিলো। না চাইতেও দুজন দুজনের কষ্ট, চাওয়া পাওয়া বুঝতে পারতাম। এভাবে বেশ হাসিখুশি দিনই কাটাচ্ছিলাম আমার বোনটাকে নিয়ে কিন্তু একদিন…
বলেই ফারান থামলো। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার বলা শুরু করে,,
– সেদিন ছিলো আমার বোনের নতুন বায়না। তাকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেদিন আমার ব্যস্ততা এতো পরিমাণে ছিলো যে তাকে না করে দেই এবং বলি পরেরদিন যাবো। কিন্তু সে এতোই জোর করেছিলো যার জন্য ওর সবথেকে কাছে বান্ধুবি ইরা আমার কাজিন ওকে খবর দেই যেনো ফিহার সাথে ঘুরতে বের হয়। হয়তো সেই সিদ্ধান্তই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।
ইরা বাসায় আসতে পারবে না বলে ফিহা একাই চলে যায় তার সাথে দেখা করতে। সেটা ছিলো নিরব জায়গা তেমন কারো আসা যাওয়া নেই। আমার বোনটা জানো বড্ড অবুঝ ছিলো, চারপাশের খারাপ প্রভাবের সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো না। সেদিন কিছু ছেলে তাকে একা পেয়ে…..
বলেই ফারান কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিলো। এদিকে নিশার চোখ বেয়েও পানি অঝোরে পরতে থাকে। সত্যি একটা মেয়ের সুরক্ষা কেউই দিতে পারেনা। এই নরপশু গুলো ভুলে যায় সেও কোনো মেয়ের গর্ভ থেকে এসেছে আর সেই নারীজাতির কাউকে এভাবে….ছিহ। ধিক্কার জানাই এই নরপশুদের। ফারান ডান হাতের উল্টো দিক থেকে চোখ মুছে আবার বলা শুরু করে,,
– যেই বোনটাকে প্রথম নিজের হাতে নিয়েছি সেই বোনটার প্রাণহীন দেহটাকে কবরে নিজে শুইয়েছি। এরা এমন কেন বলতে পারো? আমার বোনটা ক দোষ করেছিলো যার কারণে আমার বোনটাকে এভাবে আমার থেকে কেড়ে নিলো। এদের কেউই আমার বোনটাকে এক মুহূর্তের জন্যও রেহাই দিলো না। আমার বোনের আত্ননাৎ এরা একবারের জন্যেও শুনলো না শুধু নিজেদের লালসার জন্য আমার ফুলের মতো বোনটাকে শেষ করে দিলো।
আবার কিছুক্ষণ থেমে চোখ গুলো রক্তবর্ণ করে বলে,”সেদিনই আমার বোনকে ধরে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সবকটাকে নিজের হাতে শেষ করবো। দেশের কোনো রেপিস্ট কেই মন খুলে হাসতে দিবো না। সেই থেকে হয়ে যাই একজন রেপিস্ট কিলার, সবার আড়ালে থেকে শুরু করি আমার এই খুন খারাবি। প্রথমে শুরু করি আমার বোনের রেপিস্ট দের দিয়ে কিন্তু একজনকে খুঁজে পাইনি।”
নিশা- পুলিশদের খবর দিলেন না কেন?
ফারান তাচ্ছিল্ব্যের একটা হাসি দিয়ে বএল,”এই আইন নামক শব্দ টা আমি বরাবরই খুব হেট করি জানো। তুমিই বলো নিশা যদি ওদের নামে পুলিশদের কাছে কমপ্লেন করতামও তারা কি করতো? হয়তো ২-৩ মাস জেলে রেখে ছেড়ে দিতো। তারপর? তারপর তো বুক ফুলিয়ে ঘুরাঘুরি করতো এই সমাজে। তা কি আমার বোনের সাথে হওয়া অন্যায় এতো সহজে ঘুচে যেতো? কখনোই না তাইতো সবার আড়ালে এসব করতাম। কিন্তু পুলিশ রা আমার উপর সন্দেহ করতো কারণ আমার বোনের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে সবাই অবগত ছিলো। তাই পুলিশ আমার দিকে কয়েকবার আঙ্গুল তুলেছিলো ইনফেক্ট আমার পেছনে গোয়েন্দাও লাগিয়ে দিয়েছিলো। তাই তাদের নজর এড়াতে বাধ্য হই এতো এতো রিলেশন করা মেয়েদের ধারেকাছে থাকার, কিন্তু কোনোটাই ইচ্ছা করে করতাম না। সেদিন তুমি আমায় যেভাবে শপিংমলে দেখেছিলো সেটাও ছিলো আমার সাজানো প্ল্যান। আমি জাস্ট ড্রামা করছিলাম এমন সময়ই তুমি চলে এসেছিলে আর দূর থেকে সবটাই ওইসব গোয়েন্দারা দেখেছিলো। এভাবে আরও ১ সপ্তাহ আমাকে এমন মেয়েদের প্রতি ক্লোজ দেখে পুলিশরা আমার উপর থেকে সন্দেহ টা নামিয়ে ফেলে। সেই খবর জানতেই আমি আবার আগের মতো হয়ে যাই মেয়েদের সাথে মিশি না ইনফেক্ট তাকাইয়ো না।
তখন তুমি এলে আমার জীবনে। প্রথমে তোমায় নিয়ে সিরিয়াস না হলেও কেন যেনো চোখ বুঝলেই তোমার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠতো।
,
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!