#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩৫”
____________________________
ফারান- আমি জানো অনেকটা বদেজাজী হয়ে গেছিলাম। যে আজ পর্যন্ত ড্রিংক স্মোকিং করতো না সেসবও যেনো আমার পাশে থাকার বন্ধু হয়ে গিয়েছে। দিন রাত শুধু এগুলোই খেতাম বেশিরভাগ সময় ক্লাবেই সময় পার করে দিতাম। কিছুতেই আমি শান্ত হতে পারিনি, বোনের প্রতিটা স্মৃতি আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো। মাঝে মধ্যে নিজেও খুব করে চাইতাম সেই না ফেরার দেশের বাসিন্দা হতে। কিন্তু বাবা মার দিকে তাকিয়ে নেগেটিভ কিছু মাথায় আনলাম না। এইদিক থেকে আমার খুন খারাবি তো চলেই সবার আড়ালে। প্রায় মাসখানেক পর স্বাভাবিক হই মা বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে। আমি তাদের কথা তো প্রায় ভুলেই
গেছিলাম তারা কি অবস্থায় আছে। পরে তাদের সামলাই স্বাভাবিক ব্যবহার শুরু করি তারাও স্বাভাবিক এবং খুশি হয় এই ভেবে যে আমি সব ভুলে গেছি। আসলেই কি সব ভুলা এতো সহজ? দুবছর এভাবেই কেটেছে। তারপর তোমার সাথে দেখা। তোমার সাথে কথা বলে আমি আবার নতুন করে হাসতে শিখেছি, নতুন করে বাচতে শিখেছি। আমার সব টা জুড়ে শুধু তুমিই আছো। বিশ্বাস করো তুমি আমার বিয়ে করা বউ ভাবলেই মনের মধ্যে এক শান্তির অনুভূতি আসে। তোমার মতো ভালোবাসার মানুষ পেয়ে সত্যিই আমি অনেক খুশি৷ তোমায় ছাড়া আমার সবকিছুই অচল! তাই প্লিজ আমার থেকে দূরে সরে যেয়ো না। তোমার চোখে নিজের প্রতি ঘৃণা দেখলে আমি মরে যাবো।
নিশা সেই মুহূর্তে ফারানকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
নিশা- খবরদার মরার কথা একদম বলবেন না বললে আমি তোমায় খুন করে দিবো।
নিশার এমন কান্ডে প্রথমে অবাক হলেও পরে পুরো হতভম্ব হয়ে গেলো। নিশা জীবনে এই প্রথম তাকে “তুমি” করে বলেছে। ফারান যেনো আকাশের চাঁদটা হাতে পেলো।
ফারান- এই তুমি কি বললাম?
নিশা- কি বললাম?
ফারান- তুমি করে বললা যে?
নিশা- হুম তো কি বলা বন্ধ করে দিবো?(ফারানের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে)
ফারান- এই না না আমি কিছু বলেছি নাকি?
নিশা মুচকি হেসে ফারানের দিকে তাকালো। ফারান মুখ গোমড়া করে নিশার দিকে তাকালো এবং বলে,”আমায় খুব ঘৃণা করো তুমি তাইনা?”
নিশা- আমার চোখ দেখে কি বোঝা যাচ্ছে?
ফারান নিশার চোখে চোখ রাখে। নিশার চোখে যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা এবকং শ্রদ্ধা ফুটে উঠেছে। ফারান অবাক তাকায়। নিশা হেসে ফআরানের ডান গালে হাত রেখে বলে,”আজ থেকে তোমার প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান দুটো আরও দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। তোমার কাছে অনেক সুযোগ ছিলো আমার সাথে নেগেটিভ কিছু করার, আমার দিকে কুনজর দেওয়ার কিন্তু তুমি একবারের জন্যও আমায় বাজেভাবে টাচ করোনি এমন কি তোমার বউ হওয়ার সত্যেও। তার উপর বাইরে তুমি এভাবে মেয়েদের হয়ে এইসব জানোয়ার গুলোকে শেষ
করে দিচ্ছো। জানো আমি প্রথম থেকেই এই রেপিস্ট সাইকো কিলারের ফ্যান ছিলাম। খুব করে চাইতাম যেনো তাকে একবার দেখি আর একটা সালাম দেই৷ কিন্তু আল্লাহর কেমন কুদরত দেখো সেই কিলারই আমার লাভিং হাসবেন্ড। তোমার মতো একজন মানুষ আমাদের দেশে দেখে ওগুলা এখন মেয়েদের দিকে তাকাতেও ভয় করে। আগে এই দেশে চলতো র্যাপের প্রতিযোগিতা আর এখন খুঁজেও পাওয়া যায়না। সত্যি তোমায় নিয়ে গর্বিত আমার মতো হাজারো মেয়ে তবে আমি এত্তো গুলো বেশি গর্বিত।”
ফারান খুশিতে নিশার কপালে একটা চুমু দিয়ে নিশার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকালো এবং দুজনই চোখ বন্ধ করে একে অপরের নিশ্বাস গুণতে লাগলো চুপচাপ। এ যেনো এক সুখের অনুভূতি। নিরবতা ভেঙে একইরকম ভাবে ফারান বলে,”ভালোবাসো?”
নিশা- হুম।(চোখ বুজে)
ফারান- কতোটা?
নিশা- কোনো পরিমাণ নেই মাঝে।
ফারান মুচকি হাসলো এটা ভেবে যে তার নিশা তার থেকে হারায়নি। কিছুক্ষণ পর ফারান বলে,”আচ্ছা চলো বাসায় সবাই হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
নিশা- এখন আপনি এই হুডিওয়ালা স্যুট খুলে পাঞ্জাবিটা চটপট পড়ে ফেলুন ছিটে ছিটে রক্ত লেগে আছে।
ফারান মাথা নাড়িয়ে এক গার্ড ডাকলো এবং তার পাঞ্জাবি টা আনতে বললো। গার্ড পাঞ্জাবি টা এনে ফারানের কাছে দিলো। ফারান পাঞ্জাবি টা নিয়ে নিশার সাথে বাসার দিকে চলে যেতে লাগলো। ওহ আপনাদের তো বলাই হয়নি আপনাদের নিশা এবং ফারানের পারিবারিকভাবে বিয়ে হতে চলেছে। কিন্তু কিভাবে এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব? উমমম….সেটা জানতে হলে তো ফ্ল্যাসব্যাকে যেতে হবে। তো চলুন গিয়ে জেনে আসি।
ফ্ল্যাসব্যাক…
ফারান চাঁদপুর যাওয়ার জন্য যেই রওনা হবে ওমনি ইয়াসার কল।।
ফারান- হ্যাঁ মা বলো।
ইয়াসা- এয়ারপোর্টে আয় আমি যাচ্ছি।
ফারান- ওয়ায়ায়াট? কিন্তু কেন?
ইয়াসা- তোর বাবা আজকের ফ্লাইটে ঢাকা বেক করবে।
ফারান- আজকে মানে? না জানিয়ে হঠাৎ বাবা আসছে কেন?
ইয়াসা- এতো কিছুর ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় আমার নেই। যেখানেই আছিস তাড়াতাড়ি আয়।।
ফারান- বাট মা আমিতো…
ইয়াসা- নো মোর এক্সপ্লেইন ফারান।
ফারান মুখ গোমড়া করে বললো,”আসছি।”
বলেই ফোন কেটে দিলো। ফারানের বাবা ফিয়াজ চৌধুরি বিজন্যসের কাজে বছরের বেশিরভাগ সময় ফরেইন কান্ট্রিতে থাকে। দেশের কোম্পানি ফিয়াজ চৌধুরির একজন বিশ্বস্ত বন্ধু দেখাশোনা করেন। আজ হঠাৎ দেশে আসাটা ফারানের কেমন রহস্যময় লাগছে তবুও এখন চাঁদপুর যেতে পারবে না সেটা ফারান বেশ ভালোই বুঝেছে। ফারানের এমন গোমড়া মুখ দেখে আদ্র বলে,”কিরে ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি গাড়িতে উঠ যাবিনা?”
ফারান- নাহ যাওয়া ক্যান্সেল এয়ারপোর্টের দিকে চল।
আদন- ওয়ায়ায়াট! এই টাইমে এয়ারপোর্টে কেন?
ফারান- বাবা আসছে মা এতে বলেছে।
বলেই ফারান ড্রাইভিং সিটে বসে মুখ গোমড়া করে গাড়ি স্টার্ট দিলো এবং ফারানের বাগানবাড়ী থেকে বেরিয়ে আসলো। এয়াপোর্টে প্রায় ৫০মিনিটেই পৌঁছে যায়। তারপর ভেতরে গিয়ে দেখে ইয়াসা দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে এক কোণে বসে। ফারান ইয়াসার কাছে গেলো এবিং আদ্র আদন পিছে পিছে। ইয়াসা ফারানকে দেখতেই ফোন কেটে দিলো।
ইয়াসা- ওহ এসেছিস বাব্বাহ আদ্র আদনও তো দেখি এসেছে তা বাবা রা কেমন আছো?
আদন- জ্বি আন্টি ভালো আপনি কেমন আছেন?
ইয়াসা- আমিও আলহামদুলিল্লাহ আছি ভালো।
আদ্র- আন্টি ইটস নট ফেয়ার আংকেল আসছে আমাদের জানালেন না?
ইয়াসা- আরে এতো জলদিই ফ্লাইট ধরেছে যে সবাইকে বলার সময় বা সুযোগ হয়ে উঠেনি। তবে তোমরা এসে বেশ ভালো করেছো।
আদ্র- হুম তুমি বললেও কি না বললেও কি আমরা এসে সবসময় ভাগ বসাবো হুম।।
আদ্রের কথায় ইয়াসা হাসলো। সময়মতো সকল ফর্মালিটি কমপ্লিট করে নিয়াজ চৌধুরী বাইরে আসে। ফারান এতোদিন পর বাবাকে দেখে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
ফারান- কেমন আছক বাবাই?
নিয়াজ- এইতো বাবা তুই কেমন আছিস বল তো।
ফারান- ভালো।
এরপর সবাই টুকটাক কথা বলে গাড়িতে গিয়ে বসে। নিয়াজ চৌধুরী এবং ইয়াসা চৌধুরী একসাথে এক গাড়িতে বসে এবং দ্বিতীয় গাড়িতে ফারান রা উঠে। কন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে ফারানের মা বাবার গাড়ি বাসার দিকে না যেয়ে অন্যদিকে যাচ্ছে তা দেখে ফারান নিয়াজ চৌধুরীকে কল দিলো।।
ফারান- বাবা তোমরা ওইদিকে কই যাচ্ছো? ড্রাইভার কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে?
নিয়াজ- তোর মায়ের থেকেই জিজ্ঞেস করে নে।
বলেই নিয়াজ চৌধুরী ইয়াসাকে ফোন ধরিয়ে দিলো এবং বললো,”আমরা এই মুহূর্তে চাঁদপুর যাচ্ছি।”
ইয়াসার কথায় ফারান হতভম্ব হয়ে গেলো।
-“চাঁদপুর মানে?”
ইয়াসা- তোর মাইশা আন্টির কথা মনে আছে?
ফারান- হ্যাঁ কিন্তু বাবাকে নিয়ে ডাইরেক্ট তাদের বাসায় কেন?
ইয়াসা- কারণ আছে দেখেই তো যাচ্ছি নাকি চুপচাপ চল কোনোরকম বাহানা দিবিনা। আমরা ইদ সেখানেই করবো।
ফারান যেনো মেঘ না চাইতেই জল পেয়ে গেলো। সাথে সাথে ওকে বলে কল কেটে দেয়। প্রায় ৫ঘন্টার লম্বা জার্নিতে ফারানরা চাঁদপুর পৌঁছে গেলো।
চলবে!!!