Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-৩৬ ( বিয়ের পর্ব)

0
5225

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩৬”(বিয়ে পর্ব)

——————————-

সেদিন চাঁদপুর পৌঁছে ফারান তার বাবা মাকে কিছু বাহানা দিয়ে নিশার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো কিন্তু কেউই যেতে দেয়নি জোর করে মাইশাদের বাসায় নিয়ে আসছে৷ ফারান মুখ গোমড়া করে মাইশা রহমানদের বাসায় ফিরলো। ইয়াসাকে দেখে মাইশা ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। যতোই হোক দুই বেস্টফ্রেন্ড বলে কথা। তারপর অতি সম্মানে বাসায় আনা হলো। ফারানের বিরক্তি লাগলেও কিছু করার নেই। অনেকক্ষণ ভাব বিনিময় করার পর ইয়াসা বলে উঠে,”আমাদের মেয়ে কোথায় হুম? দেখছি না যে তাকে।”

মাইশা- ওহ ওকে এক্ষুনি নিয়ে আসছি।

বলেই মাইশা উপরে চলে গেলো। ফারানের সব বিরক্তি লাগছিলো কিন্তু শিড়ির দিকে তাকিয়ে একদম শকড খেয়ে গেলো। নিশা নামছে তাও শাড়ি পরে। নিশাকে এই প্রথম ফারান শাড়িতে দেখলো৷ ফারান একদম হা হয়ে গেলো আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নিশা মাইশা রহমানের বাসায় কি করছে। নিশা নিচের দিকে তাকিয়েই নিচে নেমে আসছে। নিশা সোফার সামনে আসতেই ইয়াসা বলে উঠে, “নিশা মা কেমন আছো?”

ফারান তার মায়ের দিকে অবাক চোখে তাকালো। এর মানে কি ইয়াসা আগে থেকেই নিশাকে চিনতো? এসব নানান চিন্তা ফারানের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শুধু যে ফারানই অবাক হয়েছে তা নয় আদ্র আদনেরও একই অবস্থা। নিশা মাথা উচু করে ইয়াসার দিকে তাকায় পাশের ফারানকে দেখে নিশা অবাক হিয়ে তাকালো এবং বলে,”আপনিইই??”

ফারান- তুমিইই???(অবাক হয়ে)

নিশা- আপনি আমার বাসায় কি করেন?

ফারান- তুমি এই বাসায় কি করো?

নিশা- আমার বাড়িতে আমি থাকবো না তো কি ভূতে থাকবে আজিব প্রশ্ন করেন তো?

সকলে নিশা আর ফারানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।

ইয়াসা- এই এই থামো তোমরা নিশা ফারান তোরা কি দুজন দুজনকে চিনিস?

নিশা- এক সেকেন্ড আন্টি উনি কি আপনার ছেলে?(অবাক হয়ে)

ইয়াসা- হ্যাঁ এই আমার একমাত্র ছেলে ফারান চৌধুরি।

নিশা অবাক হয়ে ফারানের দিকে তাকালো।

মাইশা- কিন্তু তোরা দুজন দুজনকে চিনিস কি করে? আর ঝগড়াই বা কেন করছিস?

আদ্র- আন্টি নিশাকে শুধু ফারান নয় আমরাও চিনি সেই প্রথম দিন থেকে।

ইয়াসা- মানে?

আদন- ও আমাদের ভার্সিটিতেই পরে সেই থেকে ওকে চিনি। তোমার ছেলে আর নিশা সারাজীবন ঝগড়াই করে এসেছে।

ইয়াসা আদনের কথা শুনে কপাল থাবড়ে বলে,”এতো ঝগড়া করিস কেন তোরা?”

নিশা- আমি করি না তোমার ছেলেই সবসময় ঝগড়া করে।

ফারান- এই মেয়ে মিথ্যা কেন বলো তুমি তো….

মাইশা- নিশা চুপ কর একটা কথাও বলবি না।(চোখ গরম করে)

ইয়াসা- যাক তোরা যেহেতু আগে থেকেই দুজন দুজনকে চিনিস তাহলে আশা করছি বিয়েতে আর কোনো সমস্যাই হবে না।

নিয়াজ- ঠিক বলেছো।

নিশা- বিয়ে মানে?(অবাক হয়ে,)

মাইশা- নিশা আমরা দুই বান্ধুবি মিলে ঠিক করেছি যে তোর আর ফারানের বিয়ে দেবো।

ফারান এটা শুনে খুশিতে কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না। তবে নিজেকে সব থেকে সুখী মানুষ মনে করছে ফারান। ফারান পারেনা সবার সামনে নেচে দেয়। নিশা কোনোরকম রিয়েক্ট করলো না। কারণ বিয়ে তো আগেই হিয়ে গিয়েছে তাহলে এখন আর আপত্তি করে লাভ কি? এর চেয়ে ভালো গুরুজনদের আদেশ মেনে চলা। দুজনের মতামত জানতে চাইলে দুজনেই সম্মত দিলো। সম্মতি পেয়ে উভয় পক্ষই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠে। আদ্র আদন এখনো কোনো এক ঘোরে আছে এই ভেবে নিশা কি করে বিয়েতে রাজি হলো? ফারান নিশাকে ভালোবাসে তাই বিয়েতে রাজি হয়েছে সেটা তারা জানে কিন্তু নিশা কেন রাজি হলো। এক গভীর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে দুজন মিলে।

শুরু হলো দুইজনের বিয়ের আয়োজন। কেউ কোনোরকম কমতি রাখেনি আয়োজনে। খুব সুন্দর শৃঙখলার সাথে সকল আয়োজন করা হয়। তাদের বিয়েতে অনেকেই আমন্ত্রিত হয়েছে। রিদি,অদ্রি আফনাদ সবাই ঢাকা থেকে চলে এসেছে। আনিলা,রিদি তো কামলার মতো খেটেই চলেছে। নিশা সেসব দেখে মজা নিচ্ছে আর ভাবছে “যাক সব কাজের শোধ তুলে নিতে পারছি কামলার মতো খাটিয়ে।” এর মাঝে ফারানের সাথে নিশার বেশ বক্নডিং হয়। ফারান তার সাথে বন্ধুর মতো মিশে এই বিষয়টা নিশার বেশ ভালো লাগে।

ফারান রা আলাদা বড় রিসোর্ট বুকিং করেছে সেখানে বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা থাকবে এবং সেখানেই বিয়ের প্রোগ্রাম করবে। বিয়ের দিন,,

নিশা ফারান স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে। নিশা তার ফ্রেন্ডস রিলেটিভস দের সাথে পিক তোলায় বিজি সাথে ফারানও। হঠাৎ ফারানের ফোন আসে। ফারান ফোন নিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। বিষয়টা নিয়ে নিশার মনে খটকা লাগে কারণ এতোদিনে ফারানের ফোন আসলে নিশার সামনেই কথা বলতো কিন্তু আজ কি এতো পার্সোনাল যার জন্য তার অন্যদিকে চলে যেতে হলো। নিশার ভাবনার মাঝেই মেইন গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলো ফারান রেগে চোখ মুখ শক্ত করে হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছে। এবার নিশার বিষয়টা ঠিক লাগলো না তাই নিশা কিছু একটা বলে সেখান থেকে চলে এসে ফারানের পিছু নেয়। এর পরের ঘটনা তো সবাই জানেনই।

বর্তমান🗯️
,
,
নিশা ফারান একসাথে মেইন গেট দিয়ে ঢুকে। তাদের দেখতেই সবাই দুজনকে ঘিরে ধরে কই গেছিলো জানতে। ফারান বলার আগেই নিশা বলে,”আম্মু আসলে খারাপ লাগছিলো তাই একটু এখান থেকে বেরিয়েছিলাম।”

– খারাপ লাগলে আমাদের বলতে পারতে এই বলে বাইরে চলে যাবে?

ফারান- সমস্যা নেই আন্টি আমরা তো এসেই গেছি।

ফিয়াজ- হ্যাঁ যাইহোক কাজি সাহেব অপেক্ষা করছেন চলো তোমরা তাড়াতাড়ি।

ফিয়াজ চৌধুরীর কথায় ফারান নিশা মাথা নাড়ায়।
,
,
,
নিশার কেমন অস্বস্তি লাগছে কবুল বলতে। ফারান তো গড়গড় করে বলে দিয়েছে এতে নিশাকেও কম লজ্জা পেতে হয়নি। কিন্তু সে তো আর সবার সামনে বেহায়াপনার পিরিচয় দিতে পারে না। সবাই নিশাকে জোর করছে যেনো নিশা কবুল বলে কিন্তু নিশা কি করে বলবে। শেষে নিশা বলেই দিলো। এখন আসে বিদায়ের পালা।

নিশা আজ তার মাকে ধরে খুব কাঁদছে। এতোদিন দূরে থাকলে কি হবে মাই তো৷ আজ তার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে এখন থেকে সে তার বাড়ির মেহমান হয়ে যাবে। বাস্তবতা এমন কেন? যেই বাড়িতে ছোট থেকে বড় হয় সেই বাড়ি একটা মেয়ের জন্য চিরস্থায়ী থাকার জায়গা নয়। ফারান নিশাকে সামলে গাড়িতে বসালো এবং নিজেও নিশার পাশে বসলো। গাড়ি ছেড়ে দিলো, নিশা ফারানের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে আছে আর ফারান নিশার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর প্রথম থেকে সবটা ভাবছে। নিশার সাথে প্রথম দেখা,তারপর ঝগড়া, একে অপরের উপর শোধ তোলা সব মনে পড়ে যাচ্ছে ফারানের। এসব ভাবতে ভাবতে ফারানও ঘুমিয়ে গেলো। ভোর প্রায় ৬টায় ফারান রা বাসায় এসে পৌঁছালো। নিশাকে ফারান আস্তে করে ডেকে ঘুম থেকে উঠালো। পিটপিট করে নিশা চোখ খুলে চারপাশে তাকালো এবং নিজেকে ফারানের বুকে দেখে চট করে মাথা সরিয়ে ফেলে আর লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ফারান নিশার লজ্জামাখা চেহারা দেখে মুচকি হাসলো। নিশাকে নিয়ে ফারান বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। নিশা ফারান সামনে অবাক চোখে তাকায়। বিশেষ করে ফারান সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে। নিশা একবার সামনে তাকিয়ে ফারানের দিকে তাকালো। ফারান কিছুক্ষণ শকড থেকে কিছুক্ষণ পরপর বলে,”তুইই..!!”

– ইয়াপ সারপ্রাইজ!!!(হেসে)

ফারান নিশাকে ছেড়ে সামনে থাকা ছেলেটাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। পেছন থেকে সবাই একে একে নিশার পিছে এসে দাঁড়ায়। ইয়াসা ছেলেটাকে দেখে বলে,”আরে পলক যে এতোদিন পর বাংলাদেশে কি ব্যাপার হুম?”

পলক ফারানকে ছেড়ে মুচকি হেসে বলে,”তোমার ছেলের বিয়ে আর আমি না এসে পারি বলো? হারামি টায় আমায় দাওয়াতও দিলো না আর এড্রেসও দিলো না। এড্রেস টা দিলে তো বিয়েটা খেয়ে আসতে পারতাম কিন্তু আফসোস তোমার ছেলের শশুড়বাড়ি চিনিনা বলে বিয়েটা গিয়ে খেয়ে আসতে পারলাম না ধুর!!

আদ্র- আরে ভাই চিন্তা করিস না সব রেকর্ড করা আছে। তা এতোদিন পর আসলি এই বাড়িতে যে?

পলক- ভেবেছি সকলকে চমকে দিবো তাই আগেই এই বাড়তে এসে হাজির। তবে একটা কথা তোরা আসার ১ঘন্টা আগেই আমি এখানে এসেছি।

ইয়াসা- সে যাইহোক ভালো করেছিস এসেছিস। এখন আমি যাই আমার নতুন বউমাকে তো বরণ করতে হবে নাকি।

বলেই ইয়াসা চলে গেলো সাথে ফারানের ফুপি খালামনিরাও গেলো। আফিয়ার ইক্সাম দেখে আসতে পারেনি তবে কালকের বউভাতে আসবে বলে কথা দিয়েছেন ফারানের ফুপি(আফিয়ার মা)।নিশা এতোক্ষণ হতভম্বের মতো দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনেছে। নিয়াজ চৌধুরী এবং আদ্র রা ভেতরে চলে আসতেই ফারান গিয়ে আবার নিশার পাশে এসে দাঁড়ালো। নিশা ফিসফিস করে ফারানকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা এই লোকটা কে?”

ফারান- আমার চাচাতো ভাই পলক। অস্ট্রেলিয়াতে চাচ্চুসহ থাকে।

নিশা- ওহ আচ্ছা।

এরপর ইয়াসা অতি যত্নে ফারান নিশার বরণ করে বাড়িতে প্রবেশ করালো। নিশাকে ইয়াসা বললো যেনো নিশা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। নিশা ইয়াসার কথামতোন ফারানের সাথে ফারানের রুমে গেলো। এটা সেইদিনের রুম যেদিন নিশা এসে অন্ধকার দেখেছিলো। নিশা এবার বুঝলো এতো ঠান্ডা অন্ধকারে কে ঘুমোয় নিশা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,”এই আপনি এমন জমের মতো ঠান্ডায় ভূতের রুমের মতো অন্ধকার রুমে ঘুমান কেমনে?”

ফারান- কই অন্ধকার রুমে তো বেশ আলোই আছে আর ঠান্ডা কই পাও তুমি?

নিশা- আরে এখনকার কথা বলিনি। আপনি যখন ঘুমান তখন এতো এসি বাড়িয়ে আর রুম অন্ধকার করে ঘুমান কেন?

ফারান- তুমি কি করে জানলে আমি ওইভাবে ঘুমাই।(চোখ বড় বড় করে)

নিশা- একবার এসেছিলাম আপনার বাসায়।

ফারান- কিইইই কবে কখন কেমনে?

নিশা- আপনার মায়ের থেকে জিজ্ঞেস করে নিয়েন। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।

ফারান- আসলে অন্ধকার হলে আমার ভালো ঘুম পায় আর যদি খেলে এসে ঘুমাই তখন এসি বাড়িয়ে দেই।

নিশা- ওহ আচ্ছা।

বলেই নিশা একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সারাদিন বেশ মজাতেই কাটলো দুজনের। বিকালের দিকে ফারান পলকের সাথে বেরিয়েছিলো। দুজন দুজনকে পেয়ে যেনো আর কিছু চেনে না। ফারান পলকের সাথে সন্ধ্যার দিকে ফিরে। নিশা ফারানের অপেক্ষা করছিলো ওমনি ফারানের কাজিন গুলা নিশাকে অন্যরুমে নিয়ে সাজাতে লাগলো। প্রায় ১ঘন্টা সাজানোর পর নিশাকে নিয়ে উপরে ফারানের রুমে চলে আসে। পুরো রুম ফুলের মোহ সুগন্ধে ভরে আছে। ফারানের বোন গুলো নিশাকে বেডে বসিয়ে কিছক্ষণ টিটকারি মেরে চলে গেলো। নিশার হঠাৎ কেমন অস্বস্তি ফিল হতে লাগে। অস্বস্তিতে ঘেমে একাকার। যেকোনো মেয়েরই বাসররাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে নিশার মধ্যেও এর ব্যতিক্রম নেই।
,
,
,
রাত ১২টা বাজতে চললো এখনো ফারানের আসার খবর নেই। নিশা বারবার ঘড়ি দেখছে তো আবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে।

নিশা- আচ্ছা আমি কি দরজা খুলে গিয়ে দেখবো উনি কোথায়? যাওয়া টা কি ঠিক হবে? নাহ থাক আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। যদি না আসে চুপিচুপি বেরিয়ে দেখবো। কিন্তু এরকম একটা দিনে চুপিচুপি বেরিয়ে যাওয়া কি ঠিক হবে? ধুর এতোক্ষণ কোথায় গিয়ে আছেন উনি আমার জন্য কি একদমই তার চিন্তা হচ্ছে না যে আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি?

নিশার ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেলো। দরজার দিকে তাকাতেই নিশা দেখলো ফারান রুমে ঢুকছে। নিশা বিছানা থেকে নেমে ফারানের সামনে গেলো এবং যেই তাকে সালাম করতে যাবে ওমনি ফারান নিশার গালে খুব জোরে চড় বসিয়ে দিলো৷ নিশা তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে গেলো গালে হাত দিয়ে। তারপর ছলছল দৃষ্টিতে ফারানের দিকে তাকালো। ফারান নিশাকে মারবে তাও এমন একটা দিনে নিশা কখনো ভাবতেও পারেনি।

——————————

চলবে!!!