Mr_সাইকো_লাভার পর্ব-১৯

0
5364

#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ১৯”
.
.
ইয়াসা- আচ্ছা ফারান।

ফারান- হুম বলো।(খেতে খেতে)

ইয়াসা- তোর জ্যাকেটের এমন অবস্থা হলো কি করে?

ইয়াসার কথায় ফারান বিষম খেলো। তারপর ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি ক্ষতম করে নিজেকে সামলে বলে,”ওই ময়দাতে পড়ে গেছিলো খেয়াল ছিলোনা।”

ইয়াসা- ওওও আচ্ছা।

ইয়াসা বিশ্বাস করতে পারলো না কথা টা তবুও চুপ রইলো।

পরদিন ভার্সিটিতে জাজ রা রেজাল্ট জানায় ৫জন কাপল ফাইনালে গেছে তারা হলো, আফনাদ অদ্রি, আদন রিদি,আনিলা আদ্র, ফারান নিশা, সাথে আরেক কাপল। রিদি আনিলা ঠিক করে আজই তারা শপিং এ যাবে। নিশা অবাক হয়ে বলে,”আজ কেন? এখনো তো আরও ৫দিন বাকি।”

আনিলা- আরে গাধি আরেকটা এনাউস কি শুনিসনি?

নিশা- কোন এনাউস?(এক ভ্রু নাচিয়ে)

রিদি- আরে আনু নিশু জানবে কি করে নিশু তো তখন সেখানে ছিলোই না।

আনিলা- ওহ আচ্ছা ভুলে গেছি নিশু শুন ম্যাম রা হঠাৎই ডিসাইড করেছে যে কালই আমরা ট্রিপে বান্দরবান যাবো ২ দিন ২ রাতের জন্য।

নিশা- তো আমাদের প্র‍্যাক্টিস এর কি হবে?(অবাক হয়ে)

আনিলা- সেটা বলেছে পিকনিক থেকে আসলে জানাবে।

নিশা- ওহ।

আনিলা- শুন টাকা ওই কাউন্টারে পে করে আয় সাথে আমার টাও পে করে দিস আমি আজ টাকা আনিনি।

নিশা- আমিও তো আজ টাকা আনিনি আচ্ছা আগে এটা বল কতোক্ষণ টাকা পে করার সময় আছে?

রিদি- সন্ধ্যা পর্যন্ত।

নিশা- আজ কোনো ক্লাস হবে?

রিদি- নাহ।

নিশা- আচ্ছা আমি বাসায় গিয়ে নিয়ে আসছি তোরা থাক।

বলেই নিশা ব্যাগ নিয়ে বাসায় চলে আসে। লিফটের বাটন টিপে ভেতরে না দেখে ঢুকেই সামজের মানুষ টার সাথে জোরে ধাক্কা খায়।

ফারান- আউউউউউচ!!!

নিশা ফারানকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। মনে মনে শুকনো একট। ঢোক গিলে ভাবতে থাকে,”এমা এই ফ্যালফ্যাল আমাদের এপার্টমেন্ট এ কি করছে?”

নিশা- আপনি এখানে কি করছেন?(অবাক হয়ে)

ফারান- তোমাকে কৈফিয়ত কেন দিতে যাবো আমি? আগে বলো তুমি এখানে কি করছো?

নিশা- আ…আ….আপনাকে কেন বলবো?

ফারান- ওকে ফাইন বলো না।

বলেই ফারান লিফটে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতে থাকে। নিশা ভ্রু কুচকে বলে,”এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন বের হোন?”

ফারান- বের কেন হতে যাবো?

নিশা- তো আপনি তো নিচে নামলেন তাইনা?

ফারান- আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে থাকবো তুমি কই যাবা যাও আমি কি তোমাকে আটকিয়ে রেখেছি নাকি?(আজ দেখেই ছাড়বো এই মেয়ে কই যায়।)

নিশা পড়ে গেলো মহা মুশকিলে। এখন কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না। শেষে ওদের এপার্টমেন্টের আরেক বাচ্চাকে দেখতে পায়। তাকে কোলে নিয়ে বলে,”আরে ইফ্রাত কেমন আছো তুমি কতোদিন দেখিনা চলো তোমাদের বাসায় যাই।”

ইফ্রাত- চলো আপু।

তারপর নিশা ছেলেটাকে নিয়ে লিফটে উঠে। নিশা ৯ম ফ্লোরের বাটন চাপ দেয় আর আড়চোখে ফারানের দিকে তাকায়।

নিশা-(বেশ বুঝেছি এই শয়তান টা আমার ১৪ গুষ্টির খবর নিয়ে আজ ছাড়বে। উফফফ কি জ্বালায়ই বা পড়লাম আমি।)

অবশেষে ৯ম ফ্লোর চলে আসে। লিফট খুলতেই নিশা দ্রুত পা চালিয়ে বেরিয়ে যায়। ফারানও পিছু নেয়। নিশা তা বুঝতেই আরো দ্রুত পা চালায় তারপর একসময় ইফ্রাত দের বাসায় ঢুকে ঠাসসসস করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর লুকিং গ্লাস দিয়ে বাইরে দেখতে লাগে ফারান বাইরে আছে কিনা।

ফারান- তাহলে কি এটাও এই মেয়ের বাসা না? ধুর ধুর শুধু শুধুই খাটলাম। যাকগে এখানে থেকে কাজ নেই।

বলেই ফারান চলে যায়। ফারান চলে যেতেই নিশা দরজা টা আস্তে করে খুলে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে ফারান আছে কিনা। যখন দেখলো নেই তখন নিশা চট করে বেরিয়ে শিড়ি দিয়ে নেমে ৮ম ফ্লোরে চলে আসে। কিন্তু সমস্যা হলো ফারান আফিয়াদের ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়েই আফিয়ার সাথে কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে ভাবলাম,”ফারান কি আফিয়া কে চিনে? যে যাই হোক এখন বাসায় কি করে যাবো গেলেই তো ওই হতচ্ছাড়ার কাছে ধরা পড়ে যাবো নাহ আড়ালে থাকতে হবে।”

নিশা একটা পিলারের পেছনে লুকোয় এবং ফারানের চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। শেষে নিশার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ফারান চলে গেলো।ফারান চলে যেতেই তাড়াতাড়ি নিজের ফ্লাটের লক খুলে ভেতরে চলে গেলো তারপর ক্রেডিট কার্ড টা নিয়ে ভার্সিটি চলে আসে এবং বিল পে করে দেয়। বিল পে করা শেষ হতেই রিদি,আনিলা আর নিশা মিলে চলে যায় শপিংমলে। শপিং টপিং শেষ করে বাসায় ফিরে লাগেজ গোছাতে থাকে।

আনিলা- ইসসসস আমি অনেএএএএক এক্সাইটেড আজ।

নিশা- সেম যখন জানলাম নীলগিরিতে যাবে আমি তো আনন্দে শেষ উফফফফ কি কিউট একটা জায়গা নিজের চোখ এ দেখবো।

আনিলা- হুম আমিও একবার টিভিতে দেখেছিলাম। তবে ওখানে নাকি একটা বৌদ্ধ মন্দিরও আছে।

নিশা- এতো কিছু জানিনা আগে যাই তারপর বোঝা যাবে। এখন তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ঘুমাতে হবে নইলে লেট হয়ে যাবো।

আনিলা- হুম তবে একটা প্রশ্ন আছে।

নিশা- কি?

আনিলা- ফারান আদ্র রা কি যাবে?

নিশা- মনে হয়না কারণ শুনেছি এই ট্রিপ নাকি শুধুই ১ম এবং ২য় বর্ষের স্টুডেন্ট দের জন্য।

আনিলা- ওহ।(মুখ গোমড়া করে)

নিশা- সে যাই হোক আমাদের কি?

আনিলা আর কথা বাড়ায় না কেন যেনো তার খুব মন খারাপ করছে। শেষে লাগেজ গোছানো শেষ করে বাবা মায়েদের সাথে কথা বলে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়ে। ভোরে ফজরের আযানের সুরে আনিলার ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গতেই আনিলা নিশাকে ডেকে দেয়। নিশা চোখ কচলাতে কচলাতে ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে নিলো। তারপর দুই বান্ধুবি একসাথে নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ শেষ করে টুকটাক নাস্তা করে রেডি হয়ে নেয়। তারপর ঘড়ির দিলে তাকিয়ে দেখে ৫:২৫ মিনিট ভার্সিটিতে থাকতে হবে ৫:৫৫ মিনিটের মধ্যে। নিশা আনিলা আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লো আল্লাহর নাম নিয়ে। এতো ভোরে রিক্সা পায় না তাই হেটে হেটেই চলে যায়। গিয়ে তো নিশার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ফারান নিশার দিকে শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আনিলা আগেই বাসে উঠে যায়। নিশা অবাক হয়ে বলে,”আপনি এখানে কেন এসেছেন?”

ফারান- যাবো তাই।

নিশা- কিহহহহহ!! কিন্তু আপনি তো মাস্টারস এ পড়েন আপনি কিভাবে যাবেন?

ফারান- ও হ্যালো এইটা আমার বাবার ভার্সিটি আমি যখন যা ইচ্ছা করতে পারি বুঝলা এখন বেশি বকর বকর না করে বাসে উঠো নইলে তোমাকে রেখেই চলে যাবো।

নিশা কথা না বলে বাসে উঠে যায় এবং একটা সাইট গিয়ে বসে। ফারানও বাসে উঠে। আজ তারা চাইছিলো নিজেদের গাড়িতে করে যেতে কিন্তু সমস্যা হলো ফারান এর আগে কখনো বান্দরবান যায়নি তাই রাস্তাও ঠিকঠাক চিনেনা তার উপর ভার্সিটি থেকে ট্রিপ। তাই আর কি করার বাসেই যেতে হবে। নিশা বাসে উঠে দেখে আনিলা রিদির সাথে বসেছে তাই নিশা ভেংচি কেটে অন্য সিটে গিয়ে বসে। ভাগ্যবশত ফারান নিশার পাশের সিটই খালি পায়।

ফারান- (আবার এই মেয়ের সাথেই আমার যেতে হবে। কি করি এখন এর সাথে গেলে তো আমার কানের মাথা খাবে ধুর ধুর কাজ টা কি ঠিক হলো?)

তারপর ফারান আর কোনো উপায় না পেয়ে নিশার পাশের সিটেই বসলো। ফারানকে নিজের পাশে দেখে নিশা চোখ গরম করে বলে,”আবার আমার পাশে বসছেন কেন অন্য সিটে কি ঠাডা পরসে?”

ফারান- আমার ঠ্যাকা পড়েনাই তোমার পাশে বসার ওকে? সব সিট ফুল শুধু এইটাই খালি ছিলো। এখন তোমার জন্য কি আমি সারাপথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাবো?

নিশা- দরকার পরলে তাই করবেন।

ফারান- তোমার যদি এতোই সমস্যা হয় তাহলে তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাও আমার এতো সখ নাই।

নিশা ভেবে দেখে,”সত্যি তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তো আমার কোমড় এবং পায়ের ১২টা বাজবে। না বাবা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারতে চাইনা।”

নিশা আর কিছু না বলে চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরপরই বাস স্টার্ট দেয়। মোট চারটা বাস যাবে। ১ম বর্ষের দুইটা আর ২য় বর্ষের দুইটা। বাস ছাড়তেই নিশা ধ্যান দেয় বাইরের প্রকৃতি দেখায়। এখনো আলো কড়াভাবে ফুটে নি।

বাস চলছে তার আপন গতিতে। নিশা জানালা দিয়ে বাহির টা দেখছে আর ফারান কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছে আরামসে।দুজনের মধ্যেই নিরবতা বিরাজ করছে। এভাবে দেখতে দেখতে নিশা কখন ঘুমিয়ে পড়ে নিশার খেয়াল নেই। নিশার মাথা টা আস্তে করে জানালার পাশে থেকে ফারানের কাধে নিয়ে আসে। ফারান কেন এমন করলো সে নিজেই জানেনা। তারপর নিশাকে দেখতে দেখতে সে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে নিশার মাথার উপর মাথা রেখে। প্রায় ৬ঘন্টা পর বান্দরবান শহরে এসে পৌঁছায়। নীলগিরিতে যেতে প্রায় আরও দেড় থেকে দুইঘন্টা সময় লাগবে। তাই সবাই এখন কিছুটা ব্রেক নিয়ে খাওয়া দাওয়া সারবে তারপর আবার জার্নি স্টার্ট। আদ্র আদন ফারান কে ডাকতে এসে দেখে ফারান নিশা দুজনই আরামসে ঘুমোচ্ছে আর আনিলা রিদি তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আদ্র আনিলা কে জিজ্ঞেস করে,”এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন তোমরা ওদের ডাকছো না কেন?”

আনিলা- ওরা যেভাবে ঘুমিয়ে আছে ডাকলে যদি বকে?

আদ্র- ধুর হুদ্দাই। বলেই আনিলার দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফারানকে ডাকতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আদ্র- ফারান ফারান কিরে উঠ? আর কতো ঘুমাবি উঠ শালা।

আদ্রর ডাকে নিশার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাকিয়ে দেখে সে কারো বুকে। যেই মাথা উচু করে দেখে ফারান তখন চট করে মাথা টা সরিয়ে নেয়। আদ্র বলে,”কি নিশা ঘুম ভেঙ্গেছে?”

নিশা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেমন জানি লজ্জা লজ্জা ফিল হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফারানেরও ঘুম ভেঙ্গে যায় পাশে তাকিয়ে দেখে নিশা নেই। শুধু নিশা কেন কেউই নেই শুধু আদ্র আদন ছাড়া।

ফারান- কিরে সব কই?

আদ্র- খাইতে গেছে আর আমরা আমাদের খিদা সহ্য করে তোর ঘুম ভাঙ্গার অপেক্ষা।
,
,
,
,
,
,
চলবে!!!

(গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম ধন্যবাদ।)