#Mr_সাইকো_লাভার
#লাবিবা_ওয়াহিদ
“পার্ট ৩৯”
————————
নিশা অতি যত্নে ফারানকে খাইয়ে দিচ্ছে আর ফারান নিশাকে। দুজনই বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। এই সময় টা যেনো তাদের ভালোবাসার একটা বড় স্মৃতি।
প্রায় কিছুদিন ফারান মাঝেমধ্যেই এমন মিসবিহেভ করে। নিশা শুধু চুপচাপ শুনে ফারানের মুখের দিকে তাকিয়ে। একদিন পলক রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলো হঠাৎ এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খায়।
– সরি সরি আমি আসলে দেখতে পাইনি।
পলক মেয়েটির দিকে পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে ফোনে কথা বলা বন্ধ করে। মেয়েটি সামনের চুলগুলো সরিয়ে নিচে বসে নিজের বইগুলো উঠাতে শুরু করে। পলকও নিজের অজান্তে মেয়েটিকে সাহায্য করতে থাকে। মেয়েটি পলকের হেল্প পেয়ে মুচকি হাসে।
দূর থেকে আদ্র,আদন,আফনাদ সবটা দেখছে আর হেসেই যাচ্ছে শুধু আদন ছাড়া। আদন মুখ গোমড়া করে সব দেখছে আর জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আদ্র- ইয়েস!! দেখেছিস আদন রিদির এক্টিং? কিভাবে ওই পলকের সাথে কথা বলছে।
আফনাদ- এক্কেবারে ফাটিয়ে দিচ্ছে ইয়ায়ার!!
আদন- আর আমি যে এখান দিয়ে ফেটে যাচ্ছি তার বেলায়? তোরা অন্য কাউকে বলতে পারলি না আমার জিনিসে কেন নজর দিলি?(মুখ গোমড়া করে)
আদ্র- আরে বুঝ…ওই পলক আনিলা অদ্রি দুইজনকেই চিনে শুধু রিদি বাদে৷ তাইতো রিদিকেও প্লেনে সামিল করলাম।
আদন কিছু বলে না চুপচাপ কান্ড দেখতে থাকে। হ্যাঁ পলকের সাথে যেই মেয়েটি ধাক্কা খেয়েছে সে আর কেউ না রিদি।
পলক রিদির হেল্প করতেই রিদি বলে,”থ্যাংকস আমার এতো হেল্প করার জন্য।”
পলক- নো ইটস ওকে। বাট….
রিদি – জ্বি কিছু বলবেন?
পলক- কপনার নাম টা কি জানতে পারি?
রিদি- হ্যাঁ কেন নয় আমি রিদি আপনি?
পলক- পলক।(আনমনে)
রিদি- ওহ ভালো এখন আমি যাই?
পলক- জ্বি…
রিদি- আমি কি এখন যেতে পারি?
পলক- ওও হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয়ই বাই।
রিদি মুচকি হেসে চলে গেলো। পলক এখনো রিদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। পলক না চাইতেও আনমনে বলে ফেলে “ওসসাম”।
আদন রেগে পলকের দিকে যেতে নিতেই আদ্র আফনাদ আটকিয়ে দেয়। আদ্র ধরেছে আদনের মুখ আর আফনাদ আদনকে। টেনে টুনে আদনকে অন্যদিকে নিয়ে আসে।
এভাবে প্রায়ই পলকের সাথে রিদির দেখা হয়। এদিকে নিশা তো লাইব্রেরি তে কাটায় ফারানের এমন বিহেভের জন্য। এখন নিশা ভার্সিটিতেও যায়। নিশার এক হাতে বই আরেক হাতে একটা খাম। নিশা বই থেকে চোখ সরিয়ে খামটার দিকে তাকায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে বই রেখে খাম থেকে ছবিগুলো বের করে চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। ছবিগুলোতে ফারান একটা মেয়ের সাথে অনেকটা ঘনিষ্ট সেটা দেখাচ্ছে। সাথে একটা চিরকুটও এসেছে সেটায় লেখা,”ফারান তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করে কারণ সে পরকিয়ায় জড়িত তার প্রমাণস্বরূপ এই ছবিগুলো।”
নিশার সেই মুহূর্তে মন চাচ্ছিলো যে চিঠিটা লিখেছে তাকে আলুর তরকারি বানিয়ে শকুনদের খাওয়াতে কিন্তু সব জেনেবুঝেও চুপ করে আছে। তার যে অনেক বড় একটা হিসাব মিলানোর বাকি। এগুলো দেখিয়ে যতোই পা ধরে নিজের লক্ষ্য থেকে টেনে নামাক না কেন পিছের মানুষকে এক লাথি মেরে ঠিকই উপরে উঠে যেতে সক্ষম হবে। নিশা পারছেও না ছবি গুলো আদ্রদের দিতে কারণ পলক নিশার উপর নজর রাখার জন্য অলরেডি একজন গার্ড রেখেছে তা আদ্র নিশাকে বলেছে তাই নিশা কিছুতেই আদ্রদের সাথে দেখা করতে পারছে না। হয়তো পলক বুঝেছে নিশা খুব চালাক একটা মেয়ে তার প্লেনের ফুল ১৪ টা বাজিয়ে দিতে পারে তাই। নিশা এমন ভাব ধরে আছে যেনো ফারানকে সে ভুল বুঝে আছে।
নিশার বই পড়া শেষ হলে সে বুক শেল্ফ থেকে আরেকটা বই নিতে যাবে ওমনি অপরপাশে দেখলো একটা হুডিপড়া ছেলে দাঁড়ানো। নিশার চিনতে অসুবিধা হলো না। সে নরমালি বই খুঁজতে খুঁজতে আদ্রকে বলে,”ওইদিকের কি খবর ভাইয়া?”
আদ্র- তোমার বান্ধুবি একদম ফাটিয়ে দিচ্ছে। তবে তুমি যেনো কোন ছবি গুলোর কথা বলেছিলে সেগুলো তাড়াতাড়ি দাও কেয়ারফুলি।
নিশা আস্তে করে বইয়ে খাম টা ঢুকিয়ে শেল্ফে রাখে আর আরেকটা বই নেয়। নিশা বইটা শেল্ফে রাখতেই আদ্র সেই বই টা নিয়ে খুব কেয়ারফুলি খাম টা নিয়ে আদ্র লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেলো। নিশা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো এবং ভাবতে লাগলো কবে আবার তাদের জীবনে সুখ আসবে।
বিকালে,
নিশা বাগানে বসে গরম গরম চা খাচ্ছে আর চারপাশে থাকা নানান জানা অজানা ফুলের দিকে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। ইয়াসা হসপিটালে, ফারানের বাবা দুইদিন আগেই ইউএস এ ব্যাক করেছে। ফারান রেগেমেগে কোথায় গেছে নিশা জানেনা। বাড়িতে নিশাই একা পরে থাকে সবসময়। ফারান আগে একবার ভালো একবার খারাপ হলেও এখন সে সবসময় রুডলি বিহেভ করে কোনো পরিবর্তন পায়না। হঠাৎ নিশার ফোন ভাইব্রেশন হয়। তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে দেখে আদ্রের মেসেজ।
আদ্র-“তুমি ঠিক ধরেছো ছবিটা ফেক। এখানে যেই ছেলেটা আছে সেটা অন্য কেউ। এডিটিং করে ফারানের ফেস টা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিশা-“এর কিছু না কিছু বিহিত করতেই হবে।”
বলেই নিশা মেসেজ কনভারসেশন টা ডিলেট করে দিলো। আদ্র আর মেসেজ করেনি। হঠাৎ নিশা সামনে তাকিয়ে দেখে পলক আসছে তার দিকে। নিশা দেখে সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরে যায় এবং এমন একটা ভাব ধরে থাকে যে সে এখনো পলককে দেখেইনি। পলক অপজিট আরেকটা চেয়ারে বসে এবং বলে,”ভাবি একা একা বসে আছেন যে?”
নিশা- ওহ ভাইয়া আপনি? কি করার বলুন কেউই বাড়িতে নেই তাই বাগানে এসে বসেছি।
পলক- ওওও আচ্ছা তাহলে আজ নাহয় আপনার সাথে আড্ডা হয়ে যাক?
নিশা- হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।
বলেই নিশা নিজের চায়ের কাপ টা সামনে থাকা টিটেবিলে রাখে। পলক মুচকি হেসে টিটেবিলে থাকা আরেকটা চায়ের কাপ নেয় এবং ফ্লাক্সে থাকা চা টা কাপে ঢালে। তারপর কাপে এক চুমুক দেয়।
পলক- আহহহহ ওয়াট এ টেস্ট। বাই দ্যা ওয়ে ভাবি ফারান কই?
নিশা মুহূর্তে মুখ গোমড়া করে বলে,”জানিনা।”
পলক- আচ্ছা ভাবি মুখ টা এমন করে ফেললেন কেন আপনাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?(চায়ে চুমুক দিতে দিতে)
নিশা- নাহ কি হবে কিছুই না হঠাৎ আপনি এভাবে জিজ্ঞেস কেন করলেন?
পলক- না তেমন কিছু না তবে…..
নিশা- তবে কি?(জানতাম এখানে কোনো না কোনো প্যাঁচ লাগাতেই আসছে। দাড়া ব্যাটা তুই শুধু দেখ তোরে আমি কি করি।)
পলক- আসলে সেদিন আমার এক ক্লায়েন্ট এর সাথে দেখা করতে গেছিলাম ক্লাবে আপনিন্তো বুঝেনই সেখানে কতো ধরণের ছেলেমেয়েদের আনাগোনা। তো হঠাৎ দূরে খেয়াল করে দেখি যে ফারান ভাই একটা মেয়ে সাথে…..
– খুবই ঘনিষ্ঠ সেটাই বলতে চাস তো তুই?
পলক অবাক হয়ে যায় কারো কন্ঠ শুনে সাথে নিশাও। দুইজন পিছে তাকিয়ে এমন কাউকে দেখার মতো প্রস্তুত ছিলো না। পলক তো চোখ দুটোকে রসোগোল্লার মতো করে তাকিয়ে আছে। আর নিশা সে এখন কি রিয়েক্ট করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।
—————————
চলবে!!!