Three Gangsters Love Part-13

0
4130

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_13.

বিয়ে হয়েছে ওদের। হোটেল থেকে গাড়ি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তিনটি গাড়িতে তিন জন বসা। আলতাফ চৌধুরী সাব্বির,ফাহিম এক গাড়িতে । মেয়েরা নাকি বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি আসার সময় কান্না করে । কিন্তু রিমি, সিমি,নিধি কাঁদছে, গ্যাংস্টার দের স্বামী হিসাবে পেয়েছে তাই। কী অদ্ভুত? যে যেটা চায়? সে যেটা পায় না! কী ভাগ্যের খেলা। গাড়িতে বসে কেউ কারো সাথে কথা বলেনি। অনেকক্ষন পর বিশাল বড় একটি বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামল। বাড়িটি দ্বিতীয় তালা এবং খুব সুন্দর । আরো বেশি সুন্দর লাগছে সাজানোর জন্য। ঝাক-ঝমক বাতি দিতে সাজানো হয়েছে বাড়িটি। গাড়ির দরজা খুলে দেয় গার্ডস রা । অভ্র,শুভ্র,রুদ্র গাড়ি থেকে নামে। রিমি,সিমি, নিধি গাড়ির অপর পাশ থেকে নেমে দাঁড়ায়। নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটি দেখে ওদের চোখ ঝলসে যায়। এত সুন্দর বাড়ি আগে কখনো ওদের নজরে পড়েনি। ওদের পায়ের নিচে লাল রঙের কার্পেট বিছানো। কিছু মেয়েরা ফুল ছুঁড়ে দিচ্ছে ওদের গায়ে। আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির, ফাহিম গাড়ি থেকে নেমে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। রিমি রা ততক্ষনে মাথা নিচু করে ফেলে। আলতাফ চৌধুরী মুচকি হেসে রুদ্র দের উদ্দেশ্যে বলে,
-“দাদু রা! তোমরা তোমাদের বউকে কোলে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও।”

কথাটা শুনেই রিমি,সিমি,নিধির বুক দড়ফড় করতে শুরু করল। এ কেমন অনুভূতি । চায় না ওরা ওদের কোলে চেপে বাড়ির ভিতরে যেতে। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র বাঁকা হেসে চটজলদি ওদের কোলে তুলে নিলো। সাব্বির ভিডিও করছে এই সুন্দর মুহূর্তটা। রিমি,সিমি,নিধি পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে। ওদের গলায় হাত দেয়নি। এতে ওদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ভেতরে নিয়ে এসে হল রুমের দাঁড় করায় ওদের। রুদ্র, অভ্র, শুভ্র দোফায় বসে পড়ে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে কিছুটা হয়রান হয়েছে । আলতাফ চৌধুরী সাব্বিরকে আদেশ দেয় কিছু একটা নিয়ে আসছে । সাব্বির দেরি না করে চলে যায়। আর আসার সময় তিনটি গহনার বাক্স সাথে করে নিয়ে আসে। প্রথম বাক্সটি খুলে তার মধ্যে থেকে মাজারি আঁকারের গহনাটি রিমিকে পরিয়ে দেয়। দ্বিতীয় বাক্সটি খুলে নিধিকে পরিয়ে দেয়। শেষের গহনাটি সিমিকে পরায়। এবার আলতাফ চৌধুরী পায়চারি করে বলেন,
-“তোমরা এই চৌধুরী বাড়ির বউ। কে বড়? কে ছোট সেটা দেখার বিষয় না। আমি কখনই রুদ্র,শুভ্র,অভ্র কে বড় ছোট হিসাবে দেখেনি। তিন জনকে বড়ো চোখে দেখেছি। এই বাড়ির সব দায়িত্ব আজ থেকে তোমাদের হাতে তুলে দিলাম। এই সংসার সামলে রাখার দায়িত্ব এখন তোমাদের।”

এটুকু বলে আলতাফ চৌধুরী থেমে যায়। রিমি, সিমি,নিধি আলতাফ চৌধুরীর পা ধরে সালাম করে।

-“দীর্ঘজিবী হও। আর হ্যাঁ! রুদ্র,শুভ্র,অভ্র কখনো,কোনো বিষয় নিয়ে যদি তোমাদের উপর রাগান্বিত হয় বা বকা-ঝকা করে । তাহলে আমাকে বলবে । আমি ওদের খবর নিয়ে ছাড়বো।”
রুদ্র দের দিকে তাকিয়ে বললো।

মুখ চুপশে যায় ওদের। তারপরও বাঁকা হাসে ওদের দিকে তাকিয়ে ।

-“আফা থুক্কু ভাবি লন আপনাগো রুমে দিয়া আছি আমি ।”ফাহিম বলে হেসে হেসে ।

ফাহিমের কথাটা শুনেই যেনো দমটা বন্ধ হওয়ার উপক্রম ওদের। বাসর ঘরে যে ওরা যেতে চায় না। এটা এই বলদটাকে কে বলবে? রিমি রা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে রুদ্র,শুভ্র,অভ্র রা সোফা থেকে ওঠে আগের ন্যায় ওদের কোলে তুলে নিলো। অবাক হয়ে যায় ওরা। এমনটা হবে ওরা ভাবতে পারেনি। আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির মুচকি হাসে। ফাহিম তো লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

রুদ্র একবার রিমির দিকে আরেকবার সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে। ফাজলামো করে রিমির পেটটা একটু জোরে চেপে ধরতেই রিমি ওর হাত দিয়ে পেছন থেকে রুদ্রর শেরওয়ানি খাঁমচে ধরে । রুদ্রের নজর রিমির দিকে পড়তেই রিমি নজর সরিয়ে নেয় । টেডি হাসি দেয় রুদ্র।

অভ্র নিধিকে বিছানায় বসিয়ে দিয়েই ওর গায়ের উপর শুয়ে শরীরের সব ভর ছেড়ে দেয় অভ্র। শুয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানছে। রাগ,বিরক্তির চড়ম পর্যায় পৌঁছে যাওয়ার পালা নিধির । ধাক্কা দিয়ে সরে উঠতেও পড়ছে না। যদি কিছু বলে বা করে বসে এই জন্য। অভ্রের মুখ নিধির ঘাড়ের কাছে। ধীরে ধীরে ওর হাত নিধির কোমড়ে রাখতেই নিধি শরীরে কারেটের শকড লাগে। এক ধাক্কা দিয়ে অভ্রকে সরিয়ে ওয়াশরুমে দৌঁড় দেয়। অভ্র চিৎ হয়ে শুয়ে নিধির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।

শুভ্র রুমে এসেই সিমিকে নিচে নামিয়ে দরজাটা লক করেই দেয়ালের সাথে মিশিয়ে ধরে নাক ফুলিয়ে বলে ,
-“পালিয়েছিলে কেন হু? তখন তো ছেড়ে দিয়েছিলাম? কিন্তু এখন?”

শুভ্র এমনটা করবে সেটা সিমির জানা ছিল না। সিমি শুভ্রর থেকে নজর সরিয়ে মুচড়াতে লাগলো ছুটার জন্য ।

-“কথা বলো না কেন?” কিছুটা ধমকের স্বরে বলে শুভ্র।

সিমিও তখনো চুপ করেই আছে। শুভ্র সিমির এক বাহু ছেড়ে দিয়ে ওর হাত পেটের উপর রাখে। নিমিষেই সিমির শরীর কেঁপে উঠে । শক্তি খাঁটিয়ে দেয় জোরে ধাক্কা । শুভ্র দু পা পিছিয়ে যায়। সিমি এদিক,সেদিল তাকিয়ে লেহেঙা দু হাত দিয়ে ধরে দেয় দৌঁড় ওয়াশরুমে। হাসি পাচ্ছে। প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে শুভ্রর। ভয় দেখানোর জন্য এই নাটকটা করেছিল। সিমির চেহারা দেখার মতো ছিল ।
.
.
.
সাব্বির ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বারান্দায় আসে। উঁকি মেরে পাশের বারান্দায় একবার তাকায়। তাকাবার যথেষ্ট কারণ আছে । ইশা এই বাড়িতেই আছে। কয়দিন থাকনে এখানে। ওদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। থাকবে শুনে সাব্বিরের মনে মধ্যে দুইটা লাড্ডু ফুটে। আজকে অনেক বারই জ্বালিয়েছে ইশাকে। একবার ‘ইশ!’ বলতে পারলেই হয়। রেগে আগুন হয়ে যায় ইশা। ইশা তো দু চোখের পাতায় সাব্বিরকে দেখতে পারে না। বার বার বলেছে ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে। সাব্বিরও নাছড়বান্দা দূরে তো ভালো ওর পাশ দিয়ে খালি গুর গুর করে বেড়িয়েছে আজকে। এখন বারান্দায় ইশা এসেছে কিনা এটা দেখার জন্য এসেছিল সাব্বির । না দেখতে পেয়ে রুমে চলে আসে। এসেই ফাহিমকে ওর বিছানায় চিন্তায় মগ্ন হয়ে বসে থাকতে দেখে। সাব্বির কুর্নিশ করে জিজ্ঞেস করে,
-“তুই আমার রুমে ক্যা?”

সাব্বিরের কন্ঠ শুনে ফাহিম ঘুরে তাকায় ওর দিকে। বলে,
-“ভাই মোরা একটা ভুল কাম(কাজ) করছি?”

-“কী ভুল কাজ?” ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে সাব্বির ।

-“এই যে ভাইরা বাসর ঘরে গেছে। এখন মোরা…….।”

বাকিটা বলার আগেই সাব্বির ফাহিমকে থামিয়ে দেয়। বলে,
-“তুই কী কইতে চাস,সেটা আমি বুঝতে পারছি। এখন তুই আমার রুম থেকে বের হ।”

-“ও ভাই! তুমি কী বুঝছো? আর কিল্লাই মোরে বের হইতে কইতাছো বুঝতাছি না।”

-“কী বুঝছি যেটা আমি কমু না। তুই বের হ। আমার ঘুম ধরছে,আমি ঘুমামু।”

-“আরে ভাই মোর কথাটা……।”

-“তুই বের হ যাহ্! বের হ।”

-“ভাই শোনো।”

ওক প্রকার জোর করেই ফাহিমকে বের করে দিল রুম থেকে । ফাহিম বিড়বিড় করতে করতে ওর রুমে চলে আসে।
.
.
.
রুদ্র ওয়াশরুমে গিয়েছে এই সুযোগে রিমি বিছানার উপর ওঠে এক পাশে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। লেহেঙা চেঞ্জ করেনি। শুধু গহনা খুলে রেখেছে । কেবল মাত্র নামাজ পড়ে ওঠল। কিছুক্ষণ পর রুদ্র ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে রিমি শুয়ে পড়েছে। মৃদু হাসল। ও’কে ডাক দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ওর নেই। তাই শেরওয়ানি চেঞ্জ করে রিমির পাশেই শুয়ে পড়ে।
.
.
কিছুক্ষণ আগেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে সিমি। এতক্ষন শুভ্রর ডাকাডাকির পর বের হয়েছে।আর নয়তো বের হবার ইচ্ছে ছিল না। বের হওয়ার সাথে সাথে শুভ্র ওজু করে আসতে বলে। সিমি আবারও ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে নিলে হাত দিয়ে দরজা ঠেসে ধরে শুভ্র। কিছুক্ষণ আগে আধা ঘন্টার মতো ওয়াশরুমে সময় কাঁটিয়ে এসেছে। এখন আবার গেলে এক ঘন্টাও বের হবে না এই ভেবে শুভ্র এটা করে। সিমি কিছু বলে না ।ওর কথা মতো দরজা খুলেই ওজু করে বের হয়। নামাজ শেষ করেই সিমি আগে,ভাগে বিছানায় ওঠে উল্টো দিক মুখ করে শুয়ে পড়ে। শুভ্রের শরীর ক্লান্ত অনুভব করছে বিধায় সিমিকে ডিস্টার্ব করে না। অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
.
.
নিধি নামাজ পড়ে এই মাত্র ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। লেহেঙার পিন খুলতে গিয়ে হাতে পিনের খোঁচা লাগে। এক ফোটা রক্তও বের হয়। ড্রেসিং টেবিলের উপরে টিসুর বাক্স রাখা ছিল। বের করে মুছতে নিলে অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়। তাড়াতারি করে টিসু ফেলে দিয়ে বিছানায় ওঠে অপর পাশে ফিরে শুয়ে পড়ে। অভ্ররের চোখে এমন দৃশ্য এড়াই নি। বাঁকা হেসে বলে,
-“আজ ছেড়ে দিলেও। পরের দিন গুলোতে কিন্তু ছেড়ে দেবো না মিসেস.অভ্র।”

বড় চেয়ে একটা ঢোক গিলে নিধি। অভ্ররের কথাটা ঠিক শুনতে পেয়েছে নিধি।
.
.
.
সকালে…..

রিমি,সিমি,নিধিকে সাথে নিয়ে এক সাথে নিচে নেমে আসে রুদ্র,শুভ্র,অভ্র। আজ এই বাড়িতে ওদের প্রথম দিন। সব কিছু ঠিক-ঠাক থাকলেও রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের ভালো লাগছে না ওদের। আলতাফ চৌধুরী আগে থেকেই হল রুমের সোফায় বসে চা খাচ্ছিলেন। ওদের কে নিচে নামতে দেখে মুচকি হেসে বলেন,
-“গুড মরনিং বাচ্চা রা। ঘুম কেমন হলো?”

রুদ্র নিচে নেমে আলতাফ চৌধুরীর পাশে বসে মুচকি হেসে বলে,
-“অনেক ভালো।”

-“হুম, দাদু ভালো।” শুভ্র বলে অপর পাশের সোফায় বসে।

-“জানি তো,ঘুম তো আজ ভালো হবেই।” মৃদু মুচকি হেসে বলে আলতাফ চৌধুরী ।

-“বাহ! দাদু তুমি তো দেখছি বুঝতে পেরেছো।” শুভ্র হেসে হেসে বলে।

-“কী যে বলো তোমরা। যে ঘাটে জল খাচ্ছো তোমরা। সে ঘাটে জন আমি অনেক আগেই খেয়েছি যে দাদু ভাই রা। আরে দাঁড়িয়ে কেন নাতবউ রা বোসো।” আলতাফ চৌধুরী রিমি,সিমি,নিধির দিকে তাকিয়ে বলে।

লজ্জায় ওদের মরে যেতে ইচ্ছে করছে তাদের কথা শুনে। এখন আবার দাদু বসতে বলেছে শুনে সোজা দাঁড়িয়ে আছে। বসতে নিলে তখনি একজন মেয়ে সার্ভেন্ট এসে বলে,
-“স্যার,আপনাদের নাস্তা রেডি।”

-“চলো,তোমরা টেবিলে গিয়ে বসি।” আলতাফ চৌধুরী কথাটা বলেই লাঠি ভর দিয়ে ওঠে দাঁড়ায়।

টেবিলে বসেছে ওরা সবাই। তখনি ইশা এসে আলতাফ চৌধুরীর পাশে বসে।

-“ইশা! আমাদের বাড়িতে তোমার কেমন লাগছে?” ইশাকে প্রশ্ন করে আলতাফ চৌধুরী ।

-“ভালোই লাগছে দাদু। আগে তো ভালো লাগত না। মানুষজন নেই বলে। কিন্তু এখন নতুন ভাবিরা আছে। তাই এখন বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে না।”

-“সেটা ঠিক বলেছো ইশা।”

তখনি সিঁড়ি বেয়ে ফাহিম নেমে আসে । আলতাফ চৌধুরীর কিছুটা দূরে দাঁড়ায়।

আলতাফ চৌধুরী বলেন,
-“সাব্বির কোথায়?”

ফাহিম কিছু বলতে গেলে তার আগেই সাব্বির উপর থেকে নামতে নামতে বলে,
-“দাদু! আমি এসে পড়েছি।”

-“এতক্ষণ লাগে তোদের। যত দেরি করে ওঠেছিস মনে হচ্ছে বাসর ঘরটা তোরাই করেছিস । রুদ্ররা না।” মজা করে কথাটা বলে আলতাফ চৌধুরী ।

সাব্বির ইশার দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে বলে,
-“মনে করো না তা………।”বাকিটা বলার আগেই ফাহিমের পায়ের সাথে ওর পা লেগে ধুপাশ করে উপুড় হয়ে পড়ে যায় সাব্বির । ফাহিন সাব্বিরকে ধরতে নিলে শার্ট সহ ছিঁড়ে আছে ওর হাতে। তবুও সাব্বিরকে পড়া থেকে বাঁচাতে পারেনা। ঘটনায় সবাই আহম্মক হয়ে যায়। পরক্ষণেই ইশা খিঁল খিঁল করে হাসতে লাগলো । রিমি,সিমি,নিধিরও প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসিটা ভেতরে দমিয়ে রেখেছে। আলতাফ চৌধুরী ও রুদ্র রাও মিটমিটিয়ে হাসছে। ফাহিম একবার সাব্বিরের শার্টের ছেঁড়া টুকরোর দিকে।আরেকবার সাব্বিরের দিকে তাকায়। আচমকা এমন ঘটনায় বোকা হয়ে গেছে ফাহিম। সাব্বিরের হাত-পা দু দিকে ছড়িয়ে পড়ে আছে । নাকে,কপালে প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়েছে। পরশু রাতের মারের ব্যাথা সাব্বিরের শরীরের এখনো আছে।তার উপর এখন আবার ধপাশ!

ফাহিম সাব্বিরকে টেনে উঠায়। ফ্লোরে বসিয়ে বলে,
-“ভাই,বেশি ব্যাথা পাইছেন?”

রাগে গদগদ করছে সাব্বির । আবার লজ্জাও লাগছে। সবার সামনে এভাবে পড়ে যাওয়াটা মানতে পারছে না। এদিকে আবার শার্টটাও পিছন থেকে ছিঁড়ে গেছে। ভালো করেই যানে ফাহিমের পায়ে লেগেই যে পড়ে গেছে। হাত দিয়ে ফাহিমের গলা পিছন থেকে পেঁচিয়ে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“ফাহিম্মার বাচ্চা! তোর লইগ্গা পইড়া গেছি আমি। তুই আজকে শেষ!….।” কথাটা বলেই মাথায় গাট্টা মারতে লাগলো ।

-“ভাই মোর…..।”

-“কী দোষ কবি! হপাই তোর উপরের টিকিট কাইটা দিমু।” রেগে বলে।

-“ভাই ব্যাথা পাইতাছি। ছাইড়া দেন মোরে। ভাই!”গলা থেকে সাব্বিরের হাত সরাতে সারাতে বলে ফাহিম।

-“না ছারমু না।” বলে আরো বেশি মারছে।

-“সাব্বির! ছেড়ে দে ফাহিমকে।” রুদ্র বলে।

-“ছারতে কও ভাই? দেখো মোর নতুন শার্টটার পিছন থেকা ছিঁড়া হালাইছে।” হাতের ইশারায় পিছন দিক দেখিয়ে বলে।

-“বুঝতে পেরেছি তো! এবার ছেড়ে দে ও’কে। ফাহিম তো ইচ্ছে করে করেছি এটা।” আলতাফ চৌধুরী বলেন।

সাব্বির ছেড়ে দিল ফাহিমকে। ওঠে দাঁড়িয়ে রাগী দৃষ্টিতে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুই আমার লাগে কথা বলি না।” বলেই উপরে চলে যেয়ে নিলে পিছন থেকে আলতাফ চৌধুরী ডাক দেয়। বলে,
-“সাব্বির রাগ করিস না,খেয়ে যা।”

-“খামু না কইছি! শার্ট চেঞ্জ কইরা আইতাছি।” বলেই চলে যায় সাব্বির ।

সাব্বিরের পিছন দিকের ছেড়া অংশটা দেখে ইশার আরো বেশি হাসি পাচ্ছে। এবার হাসিটা থামিয়ে রাখে। কিছুক্ষণ পর সাব্বির নিচে এসে ইশার পাশে বসে । ফাহিম সাব্বিরের অপর পাশে বসা।ইশার পাশে বসার সাহসও পায় নি। ইশার বিরক্তি লাগছে সাব্বির পাশে বসাতে। খাওয়া শুরু করেছে সবাই। সাব্বির খাওয়ার মাঝে বলে,
-“ইশ! কফিটা কী গরম ।”

ইশা কাঁটা চামুচ হাতের মুঠো চেপে ধরে রাগে গজগজ করছে। সাব্বিরের কাছে বেশ লাগছে ইশাকে রাগাতে। আরেটু রাগাবার জন্য সাব্বির ওর পা দিয়ে ইশার এক পাশে স্লাইড করতে শুরু করে। ইশার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পায়ে সুড়সুড়ি লাগছে তাই সাব্বিরের দিকে তাকায়। দেখে সাব্বির আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে দাঁত কেলিয়ে। ইশা রাগে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টানছে। ইশার পায়ে ছিল হিল জুতো। সহ্য করতে না পেরে দেয় জোরে একটা লাথি। সাব্বিরের পায়ের মাঝখান দিয়ে লাথিটা গিয়ে লাগে ফাহিমের ডান পায়ে। ঠাসস করে ফাহিমের হাত থেকে চামিচটা ফ্লোরে পড়ে যায়। ধড়ফড়িয়ে ওঠে বলে,
-“কোন মিচকা বিলাই রে! টেবিলের নিচে বইয়া লাথি মারে মোর পায়ে?”

ইশা আস্তে করে জিভ কামড় দেয়। রং নাম্বারে ডায়াল করে ফেলেছে বোধহয়। সাব্বির ইনোসেন্ট ভাবে বসে আছে।

-“স্টুপিডের মতো কথা বলছিস কেন? বিড়াল কোথা থেকে আসবে এখানে?” আলতাফ চৌধুরী বলেন ঝাড়ি দিয়ে ।

-“তাইলে মোর পায়ে ধাক্কা মারল কে? ডাইনিতে!”
কথাটা বলেই ইশার দিকে তাকায়। বলে,
-“ইশ! আফা আপনে মারছেন? সাব্বির ভাই তো মারোনের প্রশ্নই নাই।”

-“খবরদার! আমার নাম ঠিক মতো বলবে! ইশ! কী হ্যাঁ? গাধা কোথাকার। নামটাও ঠিক মতো বলতে পারেনা।” রেগে বলে।

-“আইচ্ছা আফা আপনে রাগেন কেন? মুই তো আপনার নামটা ভুলইলা যাই। তাই ভুলের চোডে ইশ! কইয়া হালাই। যান আর কমু না। এহন কন মোর পায়ে কী আপনে লাথি মারছেন?”

-“নাহ! আমি কেন লাথি মারতে যাব?” আমতা আমতা করে বলে ।

কথাটা শুনে সাব্বির হালকা কাশে। কাশির নামে ঠিক বুঝতে পেরেছে ইশা।

-“তয় লাথিটা মারলো কোন চুন্নিতে?” ফাহিম বলে।

আবার খেতে শুরু করে ফাহিম। খাওয়া শেষ হবার আগেই রিমি,সিমি,নিধি ওঠে যায় টেবিল ছেড়ে । সোফায় গিয়ে বসে । তিন জন তিন জনার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা বলতে চাইছে ওরা। কিন্তু বাকিরা টেবিলে বসে খাচ্ছে বিধায় বলতে পারছে না। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র খাওয়া শেষ করে উপরে চলে আসে । অফিসে যাবে বলে ঠিক করে। কিন্তু তিন দিন ধরে অফিসে যাওয়া হয়না।তাই আজ না গেলে হয়না বিধায় রেডি হয়ে নেয়। হাতে কোট নিয়ে নিচে নেমে আসে রুদ্র,শুভ্র,অভ্র রা। রিমি,সিমি,নিধি এক বার ওদের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয় ।

রুদ্র রিমির সামনে এসে হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে রিমির কপালে চুমু দেয়।আলতাফ চৌধুরী, সাব্বির,ফাহিম,ইশা তখন পাশের সোফাতেই বসে ছিল। তারা ব্যাপারটাকে লজ্জাজনক ভাবে নেই নি। লজ্জায় রিমি মাথা নত করে রাখে। “লোকটাকে যে পল বলি। আসলেই একটা পল।” মনে মনে বলে রিমি।

রুদ্র ওর দাদুর উদ্দেশ্যে বলে,
-“দাদু! তোমার কাছে আমর বউকে রেখে গেলাম। অফিস থেকে এসে তোমার কাছ থেকে আমার বউ বুঝে নেবো।”

শুভ্র সিমির হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। গলায় হাত রেখে কপালে চুমু দেয়। সিমির চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“দাদু! আমার জানকেও রেখে গেলাম। এসে বুঝে নিব।”

অভ্র নিধির দিকে ঝুঁকে কপালে চুমু দেয়। থুতনিতে হাত রেখে আলতাফ চৌধুরীকে বলে,
-“দাদু! আমার বউকেও দেখে রেখো। তাকে তোমার দায়িত্বে রেখে গেলাম।”

-“ঠিক আছে দাদু ভাই রা। তোমরা নিশ্চিতে অফিসে যেতে পারো । আমি আমার তিন বউকে দেখে রাখবো।” হেসে হেসে বলে আলতাফ চৌধুরী ।

-“হুম,নিজের বউ মনে করেই দেখে রেখো।” বাঁকা হেসে কথাটা বলেই হল রুম ত্যাগ করে রুদ্র। অভ্র,শুভ্রও চলে যায়।

-“হাউ রোমান্টিক ভাইয়া রা!” খুশি মুডে বলে ইশা।

পাশ থেকে সাব্বির ইশার কানে ফিস ফিস করে বলে,
-“আমিও কম না। ভাইয়াদের ছোট ভাই যো হু!”

ইশা রাগান্বিত চোখে তাকায় সাব্বিরের দিকে। সাব্বির চোখ সরিয়ে নেয়। আলতাফ চৌধুরী ইশা আর সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা আনদাজ করতে পেরেছে। রিমি সিমি ও নিধিকে ইশারায় উপরে যেতে বলে। ওরা দু’জন ইশারা পেয়ে আলতাফ চৌধুরীকে বলে উপরে চলে আসে। রিমির রুমে ওরা প্রবেশ করে। দজরা লক করে দেয়। মাথার ঘোমটা খুলে রিমি বলে,
-“কাল রাতে তোদের সাথে কুচ কুচ হয়েছি কী?”

-“না,সর।” সিমি বলে মুখ বাকিয়ে ।

-“আমার সাথেও না।” নিধি বলে ।

-“বেঁচে গেছোস। আমারও সেম।” রিমি বুকে হাত দিয়ে বলে ।

-“তবে একটা কথা মানতেই হবে,তিনজন বেশ রোমান্টিক ।” গালে এক হাত রেখে বলে সিমি ।

-“হ্যাঁ! সেটা ঠিক।” নিধি বলে।

-“রোমান্টিক নাকি কঁচু। সবার সামনে কিস করেছে । লজ্জা-সরম নেই মোটেও।”রিমি মুখ বাকিয়ে বলে।

-“যাই হোক! লিপ কিস তো করেনি।” দু হাত তুলে বলে সিমি।

-“করতে কতক্ষন।” বিছানায় শুয়ে বলে নিধি।

-“আমি ভাবছি! কতই না গালা-গালি কতেছিলাম। ফেয়ার এন্ড হ্যানসাম কিনে পর্যন্ত দিয়েছিলাম। আর এখন দেখ! তারা কত সুন্দর, হ্যানসাম,ডেশিং।” রিমি বলে ।

-“হুম,সেটা ঠিক বলেছিস।” সিমি বলে।

-“দেখ না! আগে আগে আরো কী করে। সবে আমাদের জ্বালানো শুরু করেছে ওরা।” নিধি বলে।

-“হ রে….।” নিশ্বাস ফেলে বলে রিমি।
___________________________

রাতে…….
‌.
.
.
.
.
‌‌‌Continue To……