#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_15.
ফাহিম সোফায় বসে দাঁত দিয়ে নক কাঁটছে। সাব্বির সোফায় হেলান দিয়ে ঝিমোচ্ছে। আলতাফ চৌধুরী তার হাতের লাঠিটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। ইশা ছোট্ট মেকআপ বক্সের আয়না দিয়ে নিজের চুল আঁচড়াচ্ছে। রিমি,সিমি,নিধি সোফায় সরল ভঙ্গিতে বসে আছে। হল রুমে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। এবার বলি আলস কাহিনী। ওরা কয়জন গেম খেলছে। খেলাটার নিয়ম হলো টাইম অনুজাই সবাই চুপ থাকবে। টাইম শেষ হলে তারপর সবাই কথা বলতে পারবে। এর আগে যে কথা বলবে বা হাসবে তার পিঠে গরম গরম সাতটা তাল পড়বে। তাও এক জনের নয় । সবাই মিলে দিবে। ২০মিনিট সময় দিয়েছে। দশ মিনিট ওভার হয়েছে। সবার অবস্থা ভালো থাকলেও ফাহিমের অবস্থা একটু খারাপ ।ও আবার কথা না বলে থাকতেই পারে না। বিষেশ করে ইংলিশ না বলতে পারলে তো মাথা চক্কর দেয়। তবে,এই খেলায় কোনো না কোনো কারণে সাব্বির কথা বা না হেসে থাকতেই পারে নি। ফট করেই উঁচু স্বরে হেসে দেয় । আর খেলার শর্ত অনুযাই ইচ্ছা মতো ধোলাই খায়। শুধু সাব্বির নয়,ফাহিমও ধোলাই খেয়েছে। যোহরের আজান শুনে খেলা বন্ধ করে যে যার রুমে এসে গোসল সেরে নেয়।
সময় পার হতে লাগলো। ওদের বিয়ের আজ এক সপ্তাহ পূর্ন হলো। রিমি,সিমি,নিধি ওদের রোমান্টিক টর্চারে পাগল হয়ে যাচ্ছে। দিন,দিন এমন রোমান্টিক টর্চার করতে থাকলে ওরা রোমান্টিক পাগল হয়ে যাবে। বুদ্ধি খাটিয়ে তিন জন আইডিয়া বের করল। আইডিয়া অনুযাই কাজ করাও শুরু করে দিয়েছে ।
রাতে……
রুদ্র সোফায় বসে টেবিলের উপর ল্যাপটপ রেখে সব সময় অফিসের কাজ করে। সেটার ফায়েদা উঠিয়েছে রিমি। ওর যত জামা কাঁপড় আছে সব বের করে সোফার উপর রেখে দিয়েছে। এক চুল পরিমানও খালি রাখেনি। শুধু সোফা নয় বিছানার উপর চাদর এলোমেলো করে রেখেছে । দেখলে মনে হয় ঝড়-বন্যা সব বিছানার উপর দিয়ে গেছে। রুদ্র টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় চোখ যেতেই রাগ ওঠে যায়। তারপর যখন বিছানার উপর চোখ পড়ে,তখন রাগ আর কন্ট্রোল করতে পারে না। ঠাটিয়ে চিৎকার দিয়ে রিমিকে ডাকে। রিমি চটজলদি রুমে এসে রুদ্রের সামনে মাথা হালকা নত করে দাঁড়ায় । কারণ,রুদ্রের চেহারার দিকে তাকাবার সাহসটা হচ্ছে না ওর। রুদ্র রাগে ক্ষুপ্ত কন্ঠে বলে,
-“হোয়াট?”
রিমি আস্তে করে বলে,
-“কোনটা?”
-“সোফা,বিছানায় এমন কেন?”
রিমি চুপ….।
-“কথা বলছো না কেন?” সরু ধমক দিয়ে বলে রুদ্র।
ধমক দিতে দেরি রিমির কান্না করতে দেরি হলো না। কান্নার ভান করে চোখ ঢলতে ঢলতে বলে,
-“বিচার দিমু আমি ।”
-“কী! কী দিবে?”
-“এ্যা…. এ্যা…।” দুইটা কান্নার গোঙ্গনি দিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রুদ্র পিছন থেকে ডাকলেও সাড়া দেয় না রিমি। বিরক্তি লাগছে খুব। সোফা ও বিছানার দিকে তাকালেই বিরক্তি+রাগ হচ্ছে রুদ্রের।
.
.
.
-“সিমি,সিমি! এক গ্লাস পানি দেও।” ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে শুভ্র।
-“খাটাশ কোথাকার! বিছানার সাথে পানির জগ রাখা,তারপরও ঢেলে খেতে পারে না।” সিমি সোফা বসে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে কথাটা বলে। দেরি না করে ওঠে পানি ঢেলে শুভ্রর দিকে ধরে,শুভ্র ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে পানির গ্লাস নিতে নিলে সিমি সুযোগে গ্লাস ছেড়ে দেয়। ঠাস করে পানির গ্লাস ল্যাপটপ ও কিছুটা পানি গিয়ে শুভ্রের শরীরে পড়ে। চট করে শুভ্র দাঁড়িয়ে যায়। জামা ঝাড়তে লাগলো। ল্যাপটপ ওয়াটার প্রুভ। তাই সমস্যা হবে না। কিন্তু শরীর যে ভিজে গেছে এতে রাগ হচ্ছে শুভ্রর। ক্ষুপ্ত দৃষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে ধমকের স্বরে বলে,
-“কমনসেন্স বলতে কিছু নেই তোমার? কিভাবে গ্লাস ধরেছিলে যে পানি সব গায়ে পড়েছে আমার?”
সিমি মাথা নিচু করে রাখে ।
-“দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
-“তাহলে কী তিড়িং বিড়িং করে নাচব।” দ্রুত কথাটা বলেই সিমি দৌঁড়।
শুভ্র আহম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে । পরক্ষণে মুচকি হাসে।
.
.
.
অভ্র সেই তখন থেকে ওর আলমারিতে কিছু একটা খুঁজছে। খুঁজেই যাচ্ছে তো খুঁজেই যাচ্ছে । নিধি সোফার উপর পা উঠিয়ে ফোন ঘাটছে। নিধি দেখতে পেয়েছে অভ্র কিছু খুঁজছে,কিন্তু এতে ওর কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। অভ্র এবার বিরক্ত হয়ে যায়। শেষে নিধিকে জিজ্ঞেস করল,
-“নিধি আমার ইয়েটা দেখেছো?”
নিধি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে বলে,
-“কিয়েটা?”
-“আরে আমার ইয়ে,ইয়ে।” নিধির দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে ।
-“কিয়ে,কিয়ে?”
অভ্র এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
-“আমার আন্ডারপ্যান্ট দেখেছো? আলমারিতে রেখেছিলাম,এখন একটাও পাচ্ছি না খুঁজে।”
প্রথমে নিধির লজ্জা লাগলেও পরে ফোনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
-“ওটা কাউয়াকে দিয়েদিয়েছি।”
-“কিহ্!” অবাক হয়ে।
-“হ্যাঁ! তাও একটা নয় তিনটি।”
-“আর ইউ ক্রেজি? মাথার তার কী ছিড়ে গেছে নাকি? কাক কে আমার আন্ডারপ্যান্ট দিয়ে দিয়েছো? হোয়াই?” জোরে বলে ।
-“কেনোর উত্তর নেই। দিয়ে দিয়েছি তো দিয়েই দিছি।” নরম স্বরে বলে।
-“দিয়ে দিয়েছো মানে কী?” ধমক দিয়ে বলে অভ্র।
নিধি এবার দাঁড়িয়ে যায়। কান্নার ভান করে বলে,
-“সামান্য আন্ডারপ্যান্ট এর জন্য আপনি আমকে………. ।” কথাটা বলেই নিধি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
-“নিধি, নিধি…..। শিট!”
.
.
.
তিন জনেই এক সাথে আলতাফ চৌধুরীর রুমে ঢুকে। আলতাফ চৌধুরী তখন বিছানায় শুতে যাবে তখনি ওদের তিন জনকে রুমে হুড়মুড় করে ঢুকতে দেখেই তার আর সোয়া হলো না। চট করেই ওঠে বসে। একে,একে কান্নার ভান করে আলতাফ চৌধুরীর কাছে সব কথা খুলে বলে। আলতাফ চৌধুরী সেই লেভেলের রেগে গেছে ওদের কথা শুনে। রাগী স্বরে বলে,
-“আজ ওদের খবর আছে। আসো আমার সাথে।”
কথাটা শুনে রিমি,সিমি,নিধি খুশি হয়ে যায়। আলতাফ চৌধুরী হল রুমে এসে জোরে চিৎকার দিয়ে রুদ্র, শুভ্র, অভ্রকে ডাকতে লাগলো। সাব্বির আর ইশা তখন হল রুমের দোফায় বসা ছিল।
-“কই গেলিরে! গাধার দল তিনটে।”
দাদুর চিৎকার শুনে রুদ্র,অভ্র,শুভ্র এক সাথে নিচে নেমে আসে। ওরা নিচে নামতে নামতে রিমি,সিমি, নিধিকে দাদুর পাশে দাঁড়ানো দেখতে পায়।
-“কী হয়েছে দাদু? এভাবে ডাকছো কেন?” রুদ্র বলে।
-“কী হয়েছে নাকি?” অভ্র বলে।
-“কী হয়েছে? সেটা তো আমার চেয়ে তোরা ভালো জানিস।” দাদুর উত্তর ।
-“আমরা জানি মানে?” শুভ্র বলে।
-“হ্যাঁ! তোরাই জানিস। তোদের সাহস তো কম না। আমার নাতিবউ দের বকা-ঝকা করিস? বলি তোদের এমন সাহসটা কে দিল?”
-“দাদু তোমার নাত বউ দের দোষ ছিল,তাই বকা দিয়েছি ।”
-“কিসের দোষ আছে। ওরা এখনো ছোট। বুঝিয়ে বলবি। বকা দিস কেন?”
-“বকা দিলাম কই। জাস্ট বললাম কাঁপড় গুলো গুছাতে।” রুদ্র বলে।
-“আমার গায়ে পানি ফেলেছে তাই তো…….।”
-“থাক আর বলতে হবে না । আমি সব জানি।”
-“ওদেরটা বাদ দেও দাদু। আমারটার কী করবে সেটা বলো। নিধি নাকি আমার তিনটি আন্ডারপ্যান্ট প্যান্ট কাক কে দিয়ে দিয়েছে। এটা কোন ধরনের কথা বলো?”
-“দিয়েছে তো কী হয়েছে । আরো পাঁচটা কিনে নিবি । এর জন্য তুই ও’কে পাগল বলবি।”
তর্ক জুড়ে দেয় ওরা দাদুর সাথে। আলতাফ চৌধুরী রিমিদের পক্ষ্য নিয়ে কথা বলছে। সাব্বির ও ইশা নিরিহ দর্শকের মতো তাদের তর্ক শুনছে।এদের সবার মাঝে অনুপস্থিত ছিল ফাহিম। ফাহিম ওর রুম থেকে ফ্রেশ মুড নিয়ে হল রুমে এসে দাঁড়ায়।দাদু ও ভাইদের তর্ক দেখে ফ্রেশ মুড খায়েব হয়ে যায়। কী নিয়ে তর্ক হচ্ছে বুঝতে পারছে না। তখনি সাব্বিরের পাশে বসে আস্তে করে কানে কানে জিজ্ঞেস করে,
-“ভাই হোয়াট ইজ দ্যা মেটার ইজ দ্যা গেটার?”
শুনেই সাব্বিরের মন চাইছে যে কী…….। দাঁত কটমট করে রাগ কন্ট্রোল করে সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়,
-“বাংলায় বল।”
ফাহিম এবার বাংলায় বলে,
-“কী হইছে ভাই? হেরা কোন বিষয় নিয়া তর্ক করতাছে?”
-“দেখতে থাক বুঝে যাবি।” সামনের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়।
ফাহিম সামনের দিকে তাকিয়ে শুনতে থাকে তর্ক। কিন্তু মাথায় কিছু ঢুকছে না। ফাহিম সাব্বিরের কানে কানে ফিসফিস করে বলে,
-“ভাই,আজকে একটা জাদু হইছে ।”
-“কী জাদু?” সামনে তাকিয়ে উত্তর দেয়।
-“আমি বাথরুমে গোসল করতে গেছিলাম। বাইর হইয়া দেখি আমার বিছানার উপর তিনটা আন্ডারগ্রাউন রাখা। মুই কতক্ষণ ভাবলাম। কেডা দিয়া গেলো মোরে এই আন্ডারগ্রাউন তিনটা। আর সে বুঝলই বা কেমনে যে আমার আন্ডারগ্রাউন ছিঁড়া। হগ্গলের ( সবার) কাছে জিগাইতে চাইছিলাম। কিন্তু এই বিষয় কাউরে কওয়া যায় কও তো। হেই জন্য আর জিগাই নাই। মাথা থেকা উষ্টা মাইরা হালাইয়া দিলাম। যে দিতে দিছেই। আমিও খুশি,দুনিয়া খুশি। এইটা আমার লগে জাদু ঘটছে। এহনো একটা আন্ডারগ্রাউন পইরা আছি আমি।”
এদিকে এমনেতেই আন্ডারপ্যান্ট নিয়ে যুদ্ধ শুরু হইছে। তার উপর ফাহিম আন্ডারপ্যান্ট কে আন্ডারগ্রাউন বানিয়ে দিছে। সাব্বির এবার আর চুপ থাকতে পারে না। রাগে এক প্রকার চিল্লিয়ে বলে,
-“হারামজাদা ঐটা আন্ডারগ্রাউন না আন্ডারপ্যান্ট হইবো।”
সবার তর্ক থেমে যায় সাব্বিরের চিৎকার শুনে। সেখান কার সবার নজর সাব্বিরের উপর। সাব্বির দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগে ফোস ফোস করে বলে,
-“তখন থেকে আন্ডারপ্যান্ট নিয়া কথা হইতাছে।আরে ভাইয়ার আন্ডারপ্যান্ট ফাহিমের কাছে। কেমনে গেছে সেটা ভাবিরে জিগান। আর ওই হারামি শোন,আন্ডারপ্যান্ট হইবো আন্ডারগ্রাউন না।কইতে পারলে কবি,না পারলে কবি ছোট প্যান্ট।” লাস্টের কথাটা ফাহিমের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে।
ইশা,রিমি, নিধি,সিমি মুখ চেপে হাসে। ফাহিম তো বেকুব হয়ে গেছে।
অভ্র নিধির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“তুমি নাকি আন্ডারপ্যান্ট কাক কে দিয়েছো? তাহলে ফাহিমের রুমে আন্ডারপ্যান্ট গেল কী করে?”
নিধি মিন মিন করে বলে,
-“ফাহিমেই তো বড় কাউয়া। তাই তো আন্ডারপ্যান্ট ও’কে দিয়ে দিয়েছি।”
কথাটা শুনেই সেখানকার উপস্থিত সবাই জোরে জোরে হাসতে লাগলো। ফাহিম করুন চোখে তাকিয়ে আছে সবার দিকে। বলদ হয়ে গেছে পুরা। শেষমেশ নিধি ফাহিমকে ‘আন্ডারপ্যান্ট আলা কাউয়া’ বানিয়ে দিল।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……