#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_25.
সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এলো বলে। চার দিক অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। রক্তিম সূর্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে পশ্চিম দিকে। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র অফিস থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়ে লিফট বেয়ে নিচে নামে। শুভ্র আগে হাঁটছিল। রুদ্র ও অভ্র কোনো একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে এক সাথে হাঁটছে। একজন বডিগার্ড শুভ্রকে আসতে দেখে গাড়ির দরজা খুলে দিল। আর তখনি সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটি ব্লাস্ট হয়ে উপরের দিকে ওঠে নিচে পড়ে আগুন ধরে যায়। শুভ্র গাড়িটির সামনে থাকায় আগুনের ধাপ হালকা ওর গায়ে লাগে। দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। রুদ্র,অভ্র হতভম্ব হয়ে যায়। রুদ্র শুভ্রকে টেনে পিছনের দিকে নিয়ে আসে। অফিসের স্টাফদের ছুটাছুটি শুরু হয়ে যায়। গাড়ির ভেতরে থাকা ড্রাইভার ও দরজা খুলে দেওয়া বডিগার্ডটির ঘটনা স্থানে মৃত্যু ঘটে। বডিগার্ড রা রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের সেফটির জন্য চার দিক ঘিরে ধরে। এবং আসেপাশে নজর রাখে কে এটা করছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সেখানে এসে উপস্থিত হয়। রাস্তার কিছু লোকজন জান বাঁচানোর জন্য দৌঁড়া দৌঁড়ি করছে। স্টাফদের ছুটাছুটি দেখে কিছু গার্ডস রা তাদের সান্ত হতে বলে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে মিডিয়ার লোকরা এসে উপস্থিত হয়। মাইক হাতে নিয়ে জলন্ত আগুন লাগা গাড়িটির দিকে ক্যামেরা ধরে নিউস বলছে। মিডিয়ার লোকরা রুদ্রদের সামনে মাইক ধরে কিভাবে এই ঘটনা ঘটল সেটা জানতে চাইলে বডিগার্ড রা সরিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। পুলিশও ঘটনা স্থানে এসে উপস্থিত হয়। বাহিরে আরো দুটি গাড়ি ছিল। সেই গাড়িতে বোম লাগানো আছে কিনা সেটা দেখার জন্য কিছু দক্ষ্য লোকদের সেখানে আনা হয়।
অফিসের ভেতরে আরো পাঁচটি গাড়ি ছিল। সেখান থেকে তিনটি গাড়ি বের করে নিয়ে আসে গার্ডস রা। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র গাড়িতে ওঠে বসে। মিডিয়ার লোকরা তখনি মাইক ধরে এটা ওটা জিজ্ঞের করছিল ওদের। পাত্তা না দিয়ে গাড়ি অফিসের ভেতর থেকে বেরিয়ে যায়।কিছুক্ষণ আগের ঘটনা ভাবছে রুদ্র। মিলাতেই পারছে না কে? বা কারা ওদের পিছন থেকে এই কাজটা করেছে।হুট করেই রুদ্রের রিমিদের কথা মনে পড়ে। চটজলদি ফোন বের করেই রিমির নাম্বারে কল দেয়। কিন্তু রিমি ফোন ধরছে না। ডায়াল লিস্ট থেকে সাব্বিরের নাম্বারে বের করে কল দেয়। একি অবস্থা সাব্বিরও ফোন ধরছে না। টেনশনে পড়ে যায় রুদ্র। পিছনের গাড়ি দুটিতে শুভ্র ও অভ্র ছিল। রুদ্র কনফারেন্সে কল দিয়ে ওদের এই কথাটা বলতেই ওরাও ট্রাই করছে ওখানে থাকা সবার ফোনে কল দিয়ে কথা বলার। কিন্তু কারো ফোনই কল ঢুকছে না। হয়তো ব্যস্ত বলছে,নয়তো কল ধরছে না। আলতাফ চৌধুরীর ফোন ছিল বন্ধ । ভীষন টেনশন হচ্ছে ওদের।
.
.
.
এদিকে…
সারা দিন মৈনর ঘাটে ঘুরাফেরা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ভাবে সাব্বির। রাস্তার এপারে ওদের গাড়ি পার্ক করা ছিল। রিমি,সিমি,নিধি,ফারিন,ইশা রাস্তা পার হতে যাচ্ছিল। আলতাফ চৌধুরী আগেই গাড়িতে বসে ছিল। ফাহিম তার পাশে বসে কথা বলছিল। সাব্বির ওদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে বডিগার্ড দের সাথে কথা বলছে। রিমি,সিমি,নিধি,ফারিন রাস্তা পার হয়ে এপাশে এসে গাড়িতে ওঠে বসে। কিন্তু ইশা কোনো একটা জীনিস স্লিপিং চেয়ারে ফেলে এসেছে বিধায় সেটা নিয়ে এসে রাস্তা পার হতে নিলে তখনি ওর নজর পড়ে একটি বড় মাল বাহিত ট্রাকের উপর। সেই ট্রাকটি ধেয়ে যাচ্ছিল রিমি দের গাড়ির দিকে। ইশার শরীর ভয়তে কেঁপে ওঠে। ট্রাক টা যদি ওদের গাড়ির সাথে ধাক্কা খায় তাহলে গাড়ি পাশের খাদে পড়ে যাবে। তাতে ওদের মৃত্যু নিশ্চিত! ইশা ওর সর্ব শক্তি দিয়ে সাব্বির বলে চিৎকার দেয়। ইশার চিৎকার শুনে সাব্বিরের পিছনে ঘুরে তাকাতেই ইশাকে সামনের দিকে তাকাতে দেখে। ও’কে অনুসরন করে সামনে তাকাতেই ধেয়ে আসা ট্রাকটিকে দেখতে পায়। সাব্বির থমকে যায়। কী করবে বুঝতে পারছে না। জোরে চিৎকার করে বডিগার্ড দের বলে,
-“গুলি ছুঁড়ো ট্রাকটির দিকে ।”
কথাটা বলেই সাব্বির ও বডিগার্ড রা অনবরত গুলি ছুঁড়ে যাচ্ছে গাড়িটির দিকে। ইশার চিৎকার ও গুলির আওয়াজ শুনে গাড়ির ভেতরে থাকা সবাই পিছনে ঘুরে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে যায়। গাড়ি থেকে বের হবে নাকি বসে থাকবে ওদের মাথায় কাজ করছে না। সাব্বির দূর থেকে ট্রাক চালকের মুখে রুমাল বাঁধা দেখে বুঝতে পারে এটা ওদের শত্রুর দলের লোকদের কাজ। গুলি ছুঁড়তেই থাকে কিন্তু তাতেও ট্রাকটি থামছে না। ধেয়ে আসছে তো,আসছেই! সাব্বিরের হাতে থাকা দুটি পিস্তলের গুলি শেষ হয়ে যায়। পকেট থেকে আরেকটি পিস্তল বের করে গুলি ছুঁড়তে নিলেই আচমকা ওর পাশ কাঁটিয়ে ফাহিম বিদ্যুৎ-এর বেগে দৌঁড়ে ট্রাকটির কিছুটা সামনে এসে রাস্তার মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে পিস্তলটি ট্রাকটির দিকে ঠিকমতো নিশানা করে টায়ার বরাবর গুলি করে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটির চাকা পামচার হয়ে পাশের বালুর উপরে উল্টে পড়ে। ফাহিমের এমন সাহসিকতা দেখে সবাই আশ্চর্যবোধক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিতে আছে। সাব্বির তখনি আদেশ দেয় বডিগার্ড দের সেই ট্রাকের কাছে যেতে। এবং ট্রাক চালকে ধরে নিয়ে আসতে।
গাড়ি থেকে সবাই নেমে পড়ে পরিস্থিতি দেখার জন্য। সেখানে তেমন কোনো লোক-জন ছিল না বিধায় ঘটনা টা কারো নজরে পড়েনি। ফাহিম ওঠে একটু মুড নিয়ে দাঁড়ায়। সাব্বির দৌঁড়ে ইশার কাছে যায়। ইশা ভয়তে থরথর করে কাঁপছে। ইশাকে ধরে রিমিদের কাছে নিয়ে আসে। সাব্বির ফাহিমের কাছে আসতেই বডিগার্ড রা ট্রাক চালক কে ধরে নিয়ে আসে। একজন বডিগার্ড লোকটির রুমাল মুখ থেকে খুলে দুই হাঁটুতে লাথি মেরে নিচে বসিয়ে দেয়। সাব্বির ভালো করেই জানে মুখ খুলবে না। তাই গুলি করতে নিলেই তার আগে ফাহিম গুলি করে দেয় লোকটির মাথা বরাবর । লোকটি মারা যায় সেখানেই। সাব্বির ফাহিমের দিকে কেমন সন্দেহ চোখে তাকায়। এতটা সাহস ওর মধ্যে কী করে আসলো সবটাই সাব্বিরের কাছে অজানা।
ফাহিম হেসে হেসে সাব্বিরকে বলে,
-“ভাই মুই ঠিক হরছি(করছি) না?”
-“হুমম।”
-“এহন চলেন বাড়ি যাই।” কথাটা বলেই ফাহিম পিস্তল টি ওর পকেটে ঢুকায়।
আলতাফ চৌধুরী ফাহিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আজ ওর জন্যই তারা বেঁচে গেছে। বডিগার্ড দের লাশটি পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দিতে বলে। ওরা সবাই গাড়িতে ওঠে বসে। রওনা হয় বাসার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে বসে সাব্বির ওর ফোন বের করে রুদ্রদের কল দিতে যাবে তখনি দেখে অনেক গুলো মিসড কল জমে আছে। ফোন সাইলেন্ট থাকায় শুনতে পারিনি। কল ব্যাক করে সাব্বির।
-“এত বার কল দিয়েছে ফোন দরিসনি কেন?” এক প্রকার ঝাঁড়ি দিয়ে কথাটা বলে রুদ্র ।
-“ভাই একটা অঘটন ঘটেছে।” মৃদু স্বরে বলে সাব্বির ।
রুদ্র উত্তেজিত হয়ে যায়। অস্থির হয়ে বলে,
-“কী অঘটন ঘটেছে? বাকিরা কোথায়? সবাই ঠিক আছে? ”
-“সবাই ঠিক আছে ভাই। আমি বাড়িতে এসে সব বলব। এখন রাখি।”
-“ওকে,তাড়াতারি বাড়িতে পৌঁছা।”
-“জ্বী!”
টু..টু..টু…
ফোন কেঁটে দেয়। তিন ঘন্টা লাগে ওদের বাড়িতে পৌঁছাতে। বাড়িতে এসে সবাই স্বস্থি ফিল করে। সবার চোখে মুখে যে ক্লান্ত ও ভয়ের ছাপ ফুটে আছে সেটা বুঝতে পারছে ওরা। ইশা কিছুক্ষণ রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে। তারপর উপরে চলে যায়। বাকিদেরও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বলে ওরা। হল রুমে এখন শুধু আলতাফ চৌধুরী,সাব্বির ও ফাহিম আর রুদ্র রা আছে। মৈনল ঘাটের ঘটনা ওদের বললে ওরা চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর আজকে ওদের সামনে গাড়ি ব্লাস্ট হয়ে যাওয়ার কথাও আলতাফ চৌধুরীকে বলেন। তিনি খুব চিন্তিত হয়ে যায়। তারপর ফাহিমের সাহসিকতার কথা শুনে অভ্র ফাহিমকে জিজ্ঞেস করে,
-“এটা কিভাবে করলি ফাহিম?”
-“ভাই মুই সিনেমাতে দেখছি নায়ক রা এভাবেই গাড়ির চাকায় গুলি করে চাকা পামচার করে দেয়। তাই মুইও এই টিকানিক(টেকনিক) অবলম্বন করসি। হেরপর দেখি কাম করছে।” হেসে হেসে বলে ফাহিম।
-“তুই যা করেছিস,ভালোই করেছিস। তোর জন্যই ওরা আজ বেঁচে ফিরেছে। ” শুভ্র বলে।
ফাহিম খুশি হয়। আলতাফ চৌধুরী চিন্তিত ভঙ্গিতে বলেন,
-“আমার হাসি-খুশি পরিবারে শয়তানদের কালো ছায়া পড়েছে। আজ হয়তো আল্লাহ্ তার বান্দার উছিলায় তোমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে। সামনে কী হবে জানি না।” দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লের তিনি ।
সাব্বির আলতাফ চৌধুরীর হাতের উপর হাত রেখে বলে,
-“দাদু তুমি টেনশন কোরো না। তোমার প্রেশার ভেড়ে যাবে। চিন্তা মুক্ত থাকো দাদু।”
তারপরও যেনো তিনি নিজেকে স্থির করতে পারছে না।
রুদ্র আলতাফ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে,
-“দাদু তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নেও। তোমার এখন আরামের দরকার।”
-“চলো দাদু মুই তোমারে রুমে দিয়া আহি।” ফাহিম কথাটা বলেই ওঠে দাঁড়াল।
আলতাফ চৌধুরী এক হাতে লাঠি ভর দিয়ে আরেক হাত ফাহিমের কাঁধে রেখে ধীরে পায়ে রুমের দিকে এগিয়ে চলল।
সাব্বির রুদ্রদের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে রুমে চলে আসে।
রিমি কেবল মাত্র শাওয়ার সেরে চুল মুছতে মুছতে বের হচ্ছিল ওয়াশরুম থেকে।হঠাৎ-ই ওর হাতের টান অনুভব করে পরক্ষণেই রিমি রুদ্রের বুকের সাথে মিশে যায়। রুদ্রের এমন কাণ্ডে রিমি অবাক হয় না। বরং বুঝতে পারে এমনটা করার কারণ।রিমিও কিছুক্ষণের জন্য রুদ্রের বুকে স্থির হয়ে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর রুদ্র রিমিকে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে দু’গালে হাত রেখে কপালে চুমু এঁকে দেয়। রিমির কঁপালে রুদ্রের কপাল ঠেকিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নরম স্বরে বলে,
-“হারাতে চাই না তোমাকে রিমি। হারাতে চাই না।”
কথাটা শুনে রিমি অনেকটা খুশি হয়। কিন্তু সেটা বাহিরে প্রকার করে না। রিমি বুঝতে পারে রুদ্র ও’কে কতটা ভালোবাসে।
.
.
অভ্র রুমে এসে দেখে নিধি রুমে নেই। ওয়াশরুমের দরজা খুলে দেখে ওয়াশরুমেও নেই। তখনি বেলকুনি থেকে চুল ঝাড়ার শব্দ পায়। বেলকুনিতে গিয়ে দেখে নিধি ওর লম্ব ভেজা চুল গুলো তোয়ালে দিতে ঝাড়ছে। অভ্র নিধির সামনে এসেই দু হাত দিয়ে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। নিধি কিছুটা অবাক হলেও পরে বুঝতে পারে কেন ও’কে এভাবে জড়িতে ধরেছে। নিধি চুপটি করে অভ্রের বুকের সাথে মাথা ঠেকিয়ে রাখে। অভ্র নিধিকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বলে,
-“ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম আমি।তোমাকে হারানোর ভয় আমার মনের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য তীরের মতো বিঁধে গিয়েছিল। যখন তোমাকে আমি সুস্থ দেখলাম তখন আমি আমার জান ফিরে পেলাম।কোনো কিছুর মূল্যে আমি তোমাকে হারাতে চাই না। হারাতে চাই তোমাকে নিধি ।”
নিধির চোখে অশ্রু চিকচিক করছে। এতটা ভালোবাসে অভ্র ও’কে সেটা আজ ওর কথার মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পেরেছে নিধি। প্রশান্তিতে চোখ বুজে নেয় সে।
.
.
সিমি বিছানার উপর বসে মাথার চুল মুছছিল। বুঝাই যাচ্ছে এখন শাওয়ার সেরে বের হয়েছে। হুট
করেই পিছন থেকে ওর হাত ধরে ফেলে শুভ্র। পিছনে ঘুরে তাকাতেই শুভ্রের মাথাভরা চেহারা দেখতে পায় সিমি। হাত ধরার কারণটা বুঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সিমি। ঠিক তখনি সিমির সামনে এসে দাঁড়ালো অভ্র। হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে সিমির কোলে মাথা রাখল। কঁপালে বাজ পড়ে যায় সিমির। কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছে সিমি। শুভ্র সিমির হাত দুটো ওর হাতের মাঝে আবদ্ধ করে রেখে বলে,
-“ছোটকালে মম-ড্যাড,চাচা-চাচ্চু দের হারিয়েছি। তখন নিজেকে একা মনে করলেও দাদু আমাদের পাশে ছিল। একাকিত্ব কাঁটিয়ে ওঠেছি আমরা। কিন্তু এখন আমার জীবনে তোমার আগমন ঘটেছে। সঙ্গি বানিয়ে নিয়েছি তোমাকে। হঠাৎ করেই আমার কাছ থেকে হারিয়ে যেও না। আমি তোমাকে হারাতে চাই না সিমি। চাই না তুমি আমার মম-ড্যাড এর মতো হারিয়ে যাও।”
সিমি চুপটি করে শুভ্রের কথা শুনছিল। কথা গুলো শুনে সিমির বুঝতে বাকি থাকে না শুভ্র ও’কে কতটা ভালোবাসে। সিমির চোখের পাতা ভিজে গেছে। তবুও ঠোঁটে এক চিতলে হাসি ফুটিয়ে তুলে। এই হাসি? এই কান্না? সুখের! প্রশান্তির নিঃশ্বাস টানে সিমি।
____________________________
বিপলপ তালুকদার চিন্তিত স্বরে কারো সাথে কথা বলছে। অপর পাশ থেকে কেউ রাগে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কথা বলছিল। লোকটির কন্ঠে ছিল ক্রোধ। সে ক্রোধান্বিত হয়ে বিপলপ তালুকদারকে বলে,
-“এই তোমার কাজ? গাধার দল গুলোকে নিয়েছো কাজে? একটা কাজও ঠিক মতো করতে পারল না। এখন চৌধুরী বাড়ির সবার লাশে পরিনত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী হলো? ”
-“স্যার! আপনি এত উতলা হবেন না। অন্য কোনো একটা প্লান বের করুন।”
-“বোকা কোথাকার! এখন তারা এলার্ট থাকবে। নেক্সট প্লান যা করি না কেন ওরা তো আর আজকের মতো ভুল কাজ করবে না। নিজেরাই সতর্ক হয়ে যাবে।” ক্রোধ নিয়ে বলল লোকটি।
-“তাহলে এখন কী করব স্যার?”হতাশ কন্ঠে বলে বিপলপ তালুকদার ।
-“আমি তোমাকে জানাব! এখন ফোন রাখো। আর হ্যাঁ! ওর দিকে ঠিক মতো নজর রেখো। আফটার অল,হি ইজ মাই ব্রাদার।”
-“ওকে স্যার,আমি নজর ও যত্ন নিবো তার।”
কথাটা শুনেই ওপাশ থেকে ফোন কেঁটে দিল। বিপলপ তালুকদার কিছুক্ষণ বসে ভাবলেন। তারপর রুমে থেকে বেরিয়ে অন্য রুমে প্রবেশ করলেন।
.
.
.
.
থ্রি গ্যাংস্টার হাউস……
ফারিন রুমে পায়চারি করছে। ফাহিমের কথা ভাবছে। যতটা ভীত ও’কে দেখায় ততটা ভীত নয় ফাহিম সেটা আজকে বুঝতে পেরেছে ফারিন। কিন্তু একটা জীনিস ঠিক বুঝতে পারছে না ফারিন। যদি ওর মধ্যে এতটা সাহস থেকে থাকে তাহলে ফারিনকে দেখলে এত ভয় পায় কেন? নাকি ভয় পাওয়ার নাটক করে ওর সাথে। এটার হিসাব মিলাতে পারছে না ফারিন। ফারিন রুমের দরজা খুলে রুম থেকে বের হয়। ওর উদ্দেশ্য ফাহিমের রুমে উঁকি দিয়ে দেখবে ফাহিম বর্তমানে এখন কী করছে। যেই ভাবা, সেই কাজ। ফাহিমের রুমের সামনে এসে আগে ফারিন আশেপাশে তাকিয়ে নিলো কেউ আছে নাকি সেটা দেখার জন্য। কাউকে না দেখতে পেয়ে খুব স্বাভধানে দরজা টা খুলে আল্প একটু ফাঁকা করে দেখে ফাহিম পিস্তল হাতে মুড নিয়ে সোফায় বসে আছে। দেখে মনে হচ্ছে একটা গুন্ডা। ফারিন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। চট করেই ফাহিম সোফা থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ভারি কন্ঠে বলে,
-“আমার কাছ থেকা পালাতে পারবি না ছেঁমড়ি। তোরে আমি দেখছি।”
কথাটা শুনেই ফারিন নিজের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে ধপ করে ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে যায়। ফাহিম দরজার দিকে তাকিয়ে ফারিনকে দেখে অবাক হয়ে যায়। ফারিন পড়ে যাওয়া অবস্থায় চোখ তুলে ফাহিমের দিকে তাকাতেই ফাহিমকে ওর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে।
ফারিন তাড়াতারি করে ওঠে রুম থেকে চলে যেতে নিলে ফাহিম ফারিনের দিকে পিস্তল তাক করে বলে,
-“ঐ হ্যানকাপ! হ্যানকাপ…দাঁড়াও কইতাছি।”
ফাহিমের হ্যানকাপ কথাটা শুনে ফারিন না দাঁড়িয়ে ওর রুমের দিকে বো দৌঁড়। রুমে এসেই দরজা ধারাম করে লাগিয়ে দেয়।
ফাহিম পুরাই আহম্মক হয়ে গেছে। পিস্তলের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলে,
-“কী হইলো? হেতিরে এত বার হ্যানকাপ,হ্যানকাপ কইলাম বুট(বাট) হেতি দাঁড়াইল না,হাতও উপরে তুলল না। ব্যাপারটা কেমন যেনো ঠেকতাছে মোর। নাকি মোর ইংলিশ এ আবারও ভুল হইছে?” পিস্তল থুতনিতে ঠেকিয়ে ভাবতে থাকে ফাহিম।
এদিকে ফারিন কিছুক্ষণ দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পরক্ষণে বিছানায় শুয়ে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে এক পর্যায় নিজে নিজে বলে,
-“বোকা কোথাকার! হ্যান্ডস আপ না বলে, হ্যানকাপ,হ্যানকাপ বলে গাধাটায় হি হি হি……।” বলেই আবারও হাসতে লাগলো ফারিন।
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To…..