#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_28.
আকাশজুড়ে ঝাকে ঝাকে পাখি উঁড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সূর্য অস্ত যাচ্ছে পশ্চিম দিকে । ছাদের উপরের সবাই উপস্থিত আছে। শুধু চারজন লোক ছাড়া। সবাই খেলায় ব্যস্ত বলা চলে । পাশের চেয়ারে বসে সেটি উপভোগ করছেন আলতাফ চৌধুরী, ইশা ও জরিনা বেগম। পাশে রেলিং ঘেঁষে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে ফাহিম। মনে শান্তি নেই বললেই চলে। রিমি,সিমি,নিধি ও ফারিম দৌঁড়া দৌঁড়ি খেলে সেখানের পাতানো চেয়ারে এসে বসে। পানির পিপাশা পাওয়ায় সবাই পানি খেতে ব্যস্ত। হঠাৎ নিধির চোখ যায় ফাহিমের দিকে। ফাহিমকে কখনোই এতটা সান্ত দেখা যায়নি। যতটা শান্ত এখন ও’কে দেখাচ্ছে। নিধি পানির বোতল হাতে নিয়েই ফাহিমের পাশে এসে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়। ফাহিম কারো উপস্থিত টের পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিধির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ভাবি কিছু কইবেন?”
নিধি চোখ জোড়া স্থির করে রাখে ফাহিমের দিকে।ফাহিমের কন্ঠের স্বর আজ অন্যরকম লাগছে। কেমন যেনো বেদনায় কাতর মাখা কন্ঠ।
-“ওমন কইরা চাইয়া আছো ক্যা ভাবি?”
নিধি চোখ জোড়া সরিয়ে নেয় ফাহিমের উপর থেকে। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ফাহিম কিছু মানুষকে উপর থেকে যেমনটা দেখায়। আসলে ভেতর থেকে সে তেমন নয়। হয় খারাপ,ভালো বা কষ্ট,দুঃখ লুকিয়ে থাকে তার মনের মধ্যে। বলতে চেয়েও,কাউকে সে বলতে পারে না। পাহাড় সমার কষ্ট বুকের মধ্যে দমিয়ে রাখে।”
নিধির কথায় ফাহিম সহমত। তার ব্যাক্ষা ফারিন! কালকেই বুঝতে পেরেছে ফারিন কোন ধরনের মেয়ে। নিরবে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল ফাহিম। তখনি পিছন থেকে ডাক আসে রিমির। নিধি ফাহিমের দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়। ফাহিম আগের ন্যায় তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে। এতক্ষণ আড়চোখে দুই জোড়া চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে ছিল। একটি চোখে ছিল ক্রোধ। আরেকটি চোখে ছিল ভয়। কিছুক্ষণের মধ্যে চার দিক অন্ধকার হয়ে আসে। সবাই নিচে নেমে যায়। শুধু ফাহিম একাই দাঁড়িয়ে থাকে ছাদে। সবার আড়ালে ফারিন ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় ফাহিমের দিকে। তারপরেই চলে আসে নিচে।
.
রাতে….
রুদ্র সোফায় বসে ল্যাপটপ ঘাটছিল। হঠাৎ-ই ল্যাপটপ বন্ধ করে সোফার সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। কাল রাত থেকে এখন অব্দি রিমির সাথে ওর কথা হয়নি। দেখা হলেও রিমি ভাব দেখিয়ে চলে গেছে। সেটা মনে পড়লেই রাগ হয় রুদ্রের। রুমটা ভীষন খালি খালি অনুভব করছে।আগে রিমি ওর সামনেই বসে থাকত। কিন্তু আজ রিমি রুমে নেই। কেন যে রিমি ওর ভালোবাসাটা বুঝে না। সেই আগের রাগ নিয়ে এখনো জেদ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ ঐভাবে বসে থাকে রুদ্র। রিমির উপর সেদিন কিছুটা অভিমান ঝমেছিল মনের ভেতরে। কিন্তু পরক্ষণে ভুলে যায় অভিমান। অনেক বেশি ভালোবাসে তাই!
ওঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে করিডোরের সামনে এসে দাঁড়ায়। নিচে হল রুমে তাকাতেই রিমি সহ সবাইকে সেখানে দেখতে পায়। রুদ্র তাকিয়ে আছে রিমির দিকে।
কিছুক্ষণ পর ওর পাশে এসে দাঁড়ায় শুভ্র । রুদ্রকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বুঝে যায় শুভ্র । রুদ্র শুভ্রের উপস্থিত টের পেয়েও সেভাবেই তাকিতে থাকে রিমির দিকে । একটু পরেই ওদের পাশে অভ্র এসে দাঁড়ায়। তিন জনেই এক সাথে দাঁড়িয়ে নিচে বসে থাকা ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে আছে। এরি মধ্যে সাব্বির রুম থেকে বের হয়ে দেখে ওর তিন ভাই কার্নিং ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সাব্বিরের সন্দেহ হয়। সাবধানতার সাথে নিচের দিকে উঁকি মেরে দেখে ওর ভাবি তিন জনের দিকে তাকিয়ে আছে । সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসে। মাথা দুলিয়ে ওর রুমে চলে যায়।
.
.
-“মনে হচ্ছে তোমার ভাইয়ের জীবনের মূল্য তোমাদের কাছে নেই।”
-“আছে,আছে।” অস্থির হয়ে বলে ফারিন।
-“তাহলে এখনো ওরা জীবিত আছে কী করে? কী বলা হয়েছিল তোমাকে?”অপর পাশের লোকটি এক প্রকার চিল্লিয়ে কথা গুলো বলে।
-“আ..আমি চেষ্টা করছি তাদের কে মারার। কিন্তু কোনো না কোনো সমস্যা……. ।”
-“অজুহাত দিচ্ছো আমায়? নিজের ভাইকে একবার দেখে নিবে। আমি ভিডিও পাঠিয়েছি।” বলেই ফোন কেঁটে দিল লোকটি।
টুং করে একটি ম্যাসেজ আসে ইমুতে। ভিডিও অন করে দেখে ওর ভাইয়ের মর্মান্তিক দৃশ্য। চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে কল দেয় সেই নাম্বারে। অপর পাশের লোকটি ফোন রিসিভ করে। ফারিন উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“আমি আমার কাজ ঠিক করব। প্লিজ আপনি আমার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করবেন না। ও’কে পলেথিনের ভেতর থেকে বের করুন। আমার ভাই নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। দয়া করুন।” কেঁদে কেঁদে বলে ফারিন ।
-“কাজ শেষ করো। আর নইলে তোমার ভাই আর কখনোই নিঃশ্বাস নিতে পারবে না।” ফোন কেঁটে দিল লোকটি।
-“হ্যালো..হ্যালো….।” ফারিন আবারও সেই নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু এবার নাম্বার বন্ধ পায়। ফারিন কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে। তখনি পিছন থেকে আলি হোসেন এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। ফারিন গুড়ে তাকিয়ে আলি হোসেনকে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। আলি হোসেন চোখ জোড়া বন্ধ করে ফারিনের মাথায় হাত রাখে।
সব কিছুই তার জানা। কিছুই তার অজানা নয়।
পরিস্থিতির শিকার তারা। কিছুই করার নেই তাদের।
.
.
রাতে যে যার রুমে ঘুমিয়ে ছিল। তখনি ফারিন ছুঁড়ি হাতে রুম থেকে বেরিয়ে আসে। চার দিক অন্ধকার। হল রুমে শুধু ডিম লাইট জ্বালানো। সেই আলোতে যতটুকু পারছে তাতেই ফারিন হাতিয়ে হাতিয়ে হাঁটছে। রুদ্রের রুমের কাছে আসতেই ফারিন ওর পিছনে কারো উপস্থিত টের পায়। ফারিনের মনে সন্দেহ জাগে। বড় দেয়ালের পিলারের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। আড়াল থেকে পিছনে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়,কে ওর পিছু নিয়েছে। কাউকেই দেখতে পেলো না। পিলারের পিছন থেকে বের হয়ে সামনে পা ফেলতেই তখনি পিছন থেকে কেউ ওর এক হাত মুখের উপর ও আরেক হাত ছুঁড়ি ধরে রাখা হাতের কবজি ধরে জোর জবরদস্তি করে একটি রুমে নিয়ে আসে। ফারিন বুঝতে পারে এটা কার রুম। তখনি ওর হাত ও মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেয়। আর চার দিকে আলোকিত হয়ে যায়। ফারিন পিছনে তাকিয়ে দেখে ফাহিম বাতির সুইচের উপর হাত রেখে ওর দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে। ফাহিমকে এভাবে দেখে ওর একটু ভয় করছে। তারপরও নিজেকে স্বাভাবিক করে রাখে। রুম থেকে বের হতে নিলে ফাহিম দরজা লাগিয়ে দেয়। ফারিন এবার রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওর দিকে। ফাহিম চোখ,মুখ খিঁচে ফারিনকে প্রশ্ন করে,
-“ছুঁড়ি হাতে নিয়া কারে মারতে যাইতাছিলেন?”
ফারিন সহসা চকিতে তাকিয়ে চমকে গেলেও নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করে ছুঁড়ি টা ওড়নার পিছনে লুকাতে লাগল। ফাহিম ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পাল্টা প্রশ্ন করে,
-“কইতাছেন না কেন?”
ফারিন রাগে কিছুটা জোরে চিল্লিয়ে বলে,
-“আপনাকে খুন করতে এসেছিলাম।”
ফাহিমের রাগ উদাও হয়ে যায়। ঠোঁটে বিষাদময় হাসি ফুটিয়ে তুলে শার্টের দুটি বোতাম খুলে এক আঙুল ঠিক হার্টের উপর রেখে বলে,
-“মারতেই যহন আইছেন,তহন এইখানে ছুঁড়ি মারেন। এক সাথে আপনার প্রতি জমে থাকা ভালোবাসার ও মোর মৃত্যুও হইবো।”
কথাটা ফারিনের বুকে এসে বিঁধে। কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে ফাহিমের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। ফাহিমের কথার উত্তর না দিয়ে ফারিন দরজা খুলে বের হতে নিলে তখনি পাশ থেকে ফাহিম হাত ধরে বলে,
-“কাম(কাজ) শেষ কইরা যান। নাইলে পরে আফসোস হইবো আপনের।”
ফারিন ফাহিমের হাত সরিয়ে দ্রুত রুম ত্যাগ করে। ফাহিম বিছন্নময় দৃষ্টিতে ফারিনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। ফারিন রুমে এসে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না । আজকেও মারতে পারল না । ভাবতেই কান্না চলে আসে ওর। বার বার ওর ভাইয়ের অসহায় মুখ খানা ভেসে ওঠছে। বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে ঐ ভাবেই ঘুমিয়ে যায় ফারিন। সকালে নিধির ডাকে ঘুম থেকে ওঠে।
রুদ্র রা অফিসে যাওয়ার পর আলতাফ চৌধুরীর সাথে খান গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির মালিক মাহিন খান আসে ইনভিটেশন কার্ড দিতে। মাহিন খান ও তার ওয়াইফ মিহিতার ম্যারেজ ডে উপলক্ষে পার্টি রেখেছে। সেটার নিমন্ত্রন দেওয়ার জন্য মাহিন খান তাদের বাসায় আসে। আজ রাতে পার্টি। আলতাফ চৌধুরী পার্টিতে যাবে তাই ‘হ্যাঁ’ বলে দেয় মাহিন খানকে । মাহিন খান কিছুক্ষণ বসে চলে যায় তাদের বাড়ি থেকে ।
রদ্র রা বাসায় ফিরলে আলতাফ চৌধুরী পার্টির কথা জানালা ওরা তিন জন না করে দেয়। কিন্তু আলতাফ চৌধুরী কথা দিয়েছিল বিধায় তার কথা রাখার জন্য পার্টিতে যেতেই হবে। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র দের তেমন কোনো আগ্রহ নেই পার্টিতে যাওয়ার। কিন্তু ওদের চার জনের প্রচণ্ড আগ্রহ আছে পার্টিতে যাওয়া নিয়ে । ফারিন যেতে না চাইলেও নিধি জোর করে। এবং ওরা চারজন মিলে ফারিনকে সাজিয়ে দেয়।
রুদ্র,অভ্র,শুভ্র ওদের রুমে বসে নিজেরা রেডি হচ্ছিল । চোখে,মুখে ফুটে আছে বিরক্ত। তিন জনেই কালো রঙের শার্ট,প্যান্ট,সুজ পড়েছে। শুধু ওরা তিন জন না সাব্বির ফাহিমও একি পোশাক পড়েছে।
গ্যাংস্টারদের কুইন রা ওদেরি সাথে মেচিং করে কালো রঙের সিল্কের শাড়ি পড়েছে। সাথে ফারিনকেও কালো রঙের শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।
এক সাথে সবাই হল রুমে দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র, শুভ্র,অভ্র,সাব্বিরের চোখে ওদের প্রতি রাগ। যার দরুণ ওদের দিকে তাকাচ্ছে না। আর গ্যাংস্টারদের কুইন রা মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে এক জন আরেক জনার সাথে কথা বলছে,সেলফি তুলছে। ফারিন চুপ করে সোফায় বসে আছে। জরিনা বেগমের শরীর ভালো না বিধায় আলি হোসেন তার কাছে থেকে যায়। তার দু’জন যাবে না। আজ ফাহিমকে নায়কদের চেয়ে কোনো অংশে কম দেখাচ্ছে না। ওর লুক দেখে যে কেউ মনে করবে গ্যাংস্টারদের ছোট ভাই। রিমি রা খোঁচা মেরে অনেক কথায় বলে ফাহিমকে। ফাহিম কিছুই বলছে না। ঠোঁটে লোক দেখানো হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। কিন্তুক্ষণ পর আলতাফ চৌধুরী রুম থেকে বেরিয়ে আসে। সবাই এক সাথে গাড়িতে ওঠে বসে। তিন ভাই তিন গাড়িতে আর গ্যাংস্টারদের কুইন রা মাইক্রোতে ওঠেছে। মাইক্রোর সামনে ড্রাইভারের সাথে ফাহিম বসে। গাড়ি চৌধুরী হাউস থেকে বেরিয়ে পড়ে গন্তব্যে । রিমি রা কথায় মেতে থাকলেও ফারিন কোনো কথা বলছে না। ফাহিমের মুখেও কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে খান বাড়ির সামনে। বাড়িটি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । লাইটিং,ফুলে টইটুম্বুর। গাড়ি থেকে নামার পরি মিসেস.মাহিন খান এসে ওদের রিসিভ করে ভেতরে নিয়ে যায়। ভেতরে নামিদামি অনেক লোকজন ছিল। মিডিয়ার লোকরাও সেখানে উপস্থিত আছে। থ্রি গ্যাংস্টার রা মাহিন খান এর সাথে কথা বলছে। আর তাদের কুইন রা মিহির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত। ফারিন এক কোণায় চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। বার বার ওর চোখ জোড়া না চাইতেও ফাহিমের উপর পড়ছে।
কিছুক্ষণ পর একটি হ্যানসাম ছেলে ফারিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটিকে দেখে ফারিনের রূহ উঁড়ে যাওয়ার পালা। চিনতে কষ্ট হয়নি ছেলেটি কে?
-“মাই কুইন ইউ আর লুকিং সো হট!”ছেলেটি ফারিনের কানের কাছে কিছুটা ঝুঁকে বলে।
ফারিনের বুক ধুক ধুক করছে।কিছু না বলেই নিধিদের কাছে চলে যেতে নিলে পথ আটকে দাঁড়ায় ছেলেটি। ফারিন থেমে যায়।
ছেলেটি ফারিনের মুখের দিকে ঝুঁকে বলে,
-“কোথায় যাচ্ছো? ইউ নো,আমার কাছ থেকে তুমি পালাতে পারবে না। তারপরও ট্রাই কেন করছো?”
ফারিন আরো ভয় পেয়ে যায়। ভীতকর দৃষ্টিতে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ-ই ছেলেটির কাঁধে হাত রেখে কেউ ও’কে ডাক দেয়। ছেলেটি পিছনে তাকায়। ফারিন দেখতে পায় ফাহিমকে । ফাহিমই ছেলেটিকে ডাক দিয়েছে। ফাহিমকে দেখে ছেলেটির চিনতে কষ্ট হলো না। ছেলেটি চোখে মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলে। ফাহিম স্বাভাবিক ভাবে ফারিনের এক হাত ধরে ছেলেটির কাছ থেকে দূরে নিয়ে আসে। ছেলেটি এটা দেখে রাগে আগুন হয়ে যায় । ফারিন তেমন কোনো রিয়েক্ট করল না ফাহিম ওর হাত ধরেছে তাই। ফাহিম ফারিনকে একটু দূরে নিয়ে এসে অন্য দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-“ছেলেটি কে?”
ফারিন প্রশ্নটি শুনে হকচকিয়ে উঠে। তারপর মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিনকে চুপ থাকতে দেখে ফাহিম আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। আগের ন্যায় হাত ধরেই রিমিদের কাছে নিয়ে এসে সেখানে রেখেই হাত ছেড়ে সাব্বিরের কাছে চলে এলো।সাব্বির ফাহিমকে ওর কাছে আসতে দেখে বলে,
-“কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি?”
-“কই? কিছু হয়নাই তো। মুই তো ঠিক আছে।”
-“ফাহিম,এখন তো একটু ঠিক মতো কথা বল। আমরা একটি পার্টিতে এসেছি। সবার সাথে শুদ্ধ ভাষায় কথা বল।”
ফাহিম লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গিতে বলে,
-“ধুর! ভাই আমার সরম করে।”
সাব্বির কিছুটা আহম্মক হলো ফাহিমের কথা শুনে। শুদ্ধ ভাষায় কথা বলাতে লজ্জা পাওয়ার কী আছে? না বুঝা সাব্বির । সাব্বির আর কিছু বলল না। পুরা পার্টিতে ফাহিম ফারিনের উপর নজর রেখেছে । কারণ, ফাহিম কিছু একটা বুঝতে পেরেছে। কিছু তো একটা লোকাচ্ছে ফারিন। যেটা ওর জানাটা দরকার বলে মনে করছে। পার্টিতে কোনো রকম সমস্যা হয়নি। হবেই বা কী করে ওরা ওদের সাথে করে অনেক জন বডিগার্ড নিয়ে এসেছে।
ঠিক মতোই বাড়িতে ফিরে আসে সবাই। রিমি রা আজও গেস্ট রুমেই ঘুমাবে। কালকে হবে তিনদিন পূর্ন। ড্রেস চেঞ্জ করার সময় রিমির মনে পড়ে ওর জামা আনা হয়নি রুম থেকে। এখন আবার রুমে যেতে হবে ভাবতেই বিরক্ত লাগছে। এমনেতেই শরীর টায়ার্ড। কিছু করার নেই ভেবে শাড়ির পিন লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ওর রুমের সামনে এসে রুমের পর্দা হালকা ফাঁকা করে দেখল রুদ্র কী করে। রুদ্র তখন শার্ট খুলে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিল। ওয়াশরুমে ঢুকে গেট বিড়িয়ে দিল। রিমি এই সুযোগে খুব সাবধানে রুমের ভিতরে ঢুকে আলমারি থেকে কাঁপড় বের করে আলমারি লাগিয়ে পিছনে ঘুরতেই রুদ্রকে দরজার সামনে খালি গায়ে পকেটে দু’হাত গুজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। রিমি বুঝতে পারে রুদ্র দেখে ফেলেছে ও’কে রুমে আসতে। রুদ্রের ঠোঁটে ছিল সেদিনের মতো ডেবিল মার্কা হাসি। যেটা দেখে রিমির পরান পাখি উঁড়ে যাওয়ার পালা।
নিরবে ঢোক গিলে কাঁপড় বুকের সাথে মিশিয়ে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। রুদ্র ওর নিচের ঠোঁট হালকা কামড়ে ধরে রিমির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো । রিমি এটা দেখে ভীত কন্ঠে বলে,
-“ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকুন। আর না হলে আমি কিন্তু চিৎকার দিবো।”
রুদ্র ফিক করে হেসে দেয় । হেসে হেসে বলে,
-” রুম সাউন্ড প্রুভ। চিৎকার দেও সমস্যা নেই।”
রুম সাউন্ড প্রুভ শুনে রিমি আরো ঘাড়বে যায়।এ কোন ফেসাতে পড়ল রিমি। এ কয়দিনের ঝাল আজকে তুলবে রুদ্র সেটা ও বুঝে যায়। একে তো খালি গায়ে। দ্বিতীয় ধীরে পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখে রিমির বুকের মাঝে জোরে জোরে ঘন্টি বাজতে শুরু করল। ধীরে পায়ে কতক্ষণে রিমির কাছে পৌঁছাবে। দ্রুত রিমি কাছে এসে হাতে থাকা জামা কাঁপড় ছুঁড়ে ফেলে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপর ফেলে । রুদ্র ওর গায়ের উপর শুয়ে পড়ে। রিমি কান্না ফেইস বানিয়ে রেখেছে। দু হাত দিয়ে রুদ্রকে সরানোর চেষ্টায় আছে। রুদ্র আজ রিমিকে ছাড়তে নারাজ। যে করেই হোক আজ নিজের জীনিস বুঝে নিবেই। হোক আপশে বা জোর করে। দু’হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে। রিমি হাত ছাড়াতে পারছে না। রুদ্র রিমির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। যেই হাসির মানে রিমি বুঝতে পারছে “আজ তু গেয়া কামছে” । রুদ্র রিমির ঠোঁট জোড়া ওর আয়ত্তে নিতে যাবে ঠিক তখনি দরজায় জোরে জোরে করাঘাত হয়। রুদ্র থেমে যায়। চড়ম বিরক্ত ও রাগ নিয়ে দরজার দিয়ে তাকায়। ওর এখম মন চাইছে দরজার অপর পাশে থাকা লোকটিকে খুন করে ফেলতে। রুদ্র পাত্তা না দিতে রিমির ঠোঁটের কাছে যেতেই আবারও জোরে জোরে করাঘাত হয়।
শুয়ে থাকতে পারে না রুদ্র । ওঠে যায় রিমির উপর থেকে । রিমি ওঠে বসে বুকে হাত রাখে। বেঁচে গেছে মনে করছে। রুদ্র গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে গেট খুলে দেয়। দরজার অপর পাশে সিমি ও নিধি দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র ওদের দেখে বিরক্তি ভঙ্গিতে বলে,
-“হোয়াট?”
-“আসলে রিমি আমার ওড়না…..।” বাকিটা বলার আগেই রিমি রুদ্রকে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে এক প্রকার দৌঁড়ে বেড়িয়ে যায়। যাওয়ার আগে সাথে করে ফ্লোরে ফেলে রাখা জামা নিয়ে যায়। রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়েছে দেখে রুদ্রের রাগ আরো চওড়া হয়ে যায়। সিমি,নিধি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিমির বিষয় কিছু একটা বলছিল । রিমি তো চলেই গেল ।এখন কী বলবে রুদ্রকে?
সিমি দ্রুত বলে,
-“কিছু না।” বলেই দৌঁড়। ওর সাথে নিধিও দৌঁড় দেয়।
রুদ্র রাগে,ক্ষোপে দরজা ধুম করে বন্ধ করে দেয়। পাখি ফুরুৎ! প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে রুদ্রের।
সিমি,নিধি রুমে এসে দেখে রিমি শাড়ির আঁচল ফেলে জগ হাতে নিয়ে পানি খাচ্ছে। ইশা বিছানার উপর বসে না বুঝা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে । সিমি রিমির অবস্থা দেখে দরজা লাগিয়ে দেয়। রিমি কিছুক্ষণ পর পানির জগ টেবিলের উপর রেখে বিছানার উপর ইশার পাশে বসে বুকে হাত রেখে সিমি,নিধির দিকে তাকিয়ে বলে,
-“জানস,পরানডা আমার কু,কু করতাছে এখনো। তোদের জন্য আজ আমি বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি।”
সিমি কিছুটা ভাব নিয়ে বলে,
-“জানতাম,এমন কিছু একটা হবে। তাইতো তোর আসতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি নিধিকে নিয়ে তোর রুমে যায়,তোকে ডাক দেওয়ার জন্য ।”
-“ধন্যবাদ রে,তোদের এত্ত গুলো ধন্যবাদ বোইন।” খুশি মুডে বলে রিমি।
-“যা এখন কাঁপড় পাল্টে আয়।”
-“হ যাই।”
ইশা হাত জাগিয়ে বলে,
-“এক মিনিট! তোমরা কী নিয়ে কথা বলছো? আমাকে বলো তো। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
রিমি ইশাকে বলে,
-“তুমি ছোট মানুষ। বোঝবা না।”
-“হ,তোমার শুনার দরকার নাই।”
ইশা কথাটা শুনে মনে হচ্ছে কিছুটা বিরক্ত ফিল করল। বলে,
-“আমাকে ছোট কোথা থেকে মনে হচ্ছে তোমাদের শুনি? বিয়ে,বাসর ঘর করা শেষ। এখন আবার কয়দিন পর আমার বেবিও হবে। তারপরও তোমরা আমাকে ছোট বলছো?”
রিমি,নিধি,সিমি ইশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।অবাক হবে নাকি আহম্মক হবে ঠিক বুঝতে পারছে না। ইশার বুদ্ধি যে কম এটা জানত। কিন্তু এতটা কম সেটা ওদের জানা ছিল না। এক কথায় বলা যায় বোকা পাখি।
ওর দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশা ওদের তিন জনের দিকে তাকিয়ে বলে,
-“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন বুঝতেছি না।”
রিমি কিছু না বলেই ওয়াশরুমে চলে যায় । সিমি রুম থেকে বের হয়ে যায়। নিধি ফোন হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসে। এবার ইশা আহম্মক হয়ে গেছে । এমন কী বলে ফেললো যার কারণে ওদের চেহারার রং পাল্টে গেল। রিমি,সিমি,নিধি ইশার কথায় এটা ঠিক বুঝেছে ওরা ওদের মতো থ্রি.জি না,পুরাই ফোর.জি।
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..