#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_29.
বাহিরে ঝড় শুরু হয়েছে । তীব্র বাতাস সাথে বৃষ্টি পড়ছে খুব জোরে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আকাশে। এত ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও ফারিন ছাদের এক কোণায় রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মনের মধ্যে যে ঝড় বইছে। সেটা এই ঝড়ের তুনলায় অতি ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে । চোখের পানির সাথে বৃষ্টির পানি গুলো মিলিয়ে যাচ্ছে। এত সুন্দর হাসি,খুশি ভরা পরিবারের লোকদের কিভাবে খুন করবে? কিভাবে এই পরিবারে খুশিকে ছিনিয়ে নিবে? এ কথা ভাবতেই অশ্রু বর্ষিত হয় দু চোখের পাতায়।
ছোট্ট থেকেই নিধিকে আপন বড় বোন মনে করত। জরিনা বেগম যতই নিধিকে বকা দিন,অবহেলা করত ফারিন সব সময় নিধির পাশে থাকত। আর যখন নিধিকে ১১ বছর বয়সে এতিম খানায় দিয়ে আসে,সেদিন ফারিন অনেক কান্না করেছিল। নিধিও যেতে চায়নি এতিম খানায়। নিধি ফারিন আর ছোট ভাইটিকে স্নেহ,আদর করত,ঠিক আপন বোনের মত। আজ সেই বোনের সংসারে ক্ষতি করার জন্য ওর এই বাড়িতে আসা।
ধীরে ধীরে বৃষ্টি পড়ার গতি কমতে থাকে। এখন শুধু গুটিগুটি বৃষ্টি পড়ছে। ফারিন নিচে নেমে আসে। ভেজা অবস্থায় নিধি ও’কে দেখতে পেয়ে বকা-ঝকা করে ওর রুমে নিয়ে আসে। ফারিনকে কাঁপড় চেঞ্জ করতে বলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। ওয়াশরুম থেকে বের হলে নিধি ফারিনকে বিছানার উপর বসিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছিয়ে দেয়। ফারিন তখনো চুপটি করে বসে পড়ে। ফারিনকে এতটা গম্ভীর দেখতে পেয়ে নিধি ওর পাশে বসে থুতনিতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
-“কী হয়েছে তোর বোন? কোনো সমস্যা? আমাকে বল। আমি সব সমস্যার সমাধান করে দেবো।”
ফারিন জোর করে ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে,
-“কিছু হয়নি তো। এমনি কেন জানি ভালো লাগছে না।”
নিধি ফারিনকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“সবার সাথে কথা বল,আড্ডা দে। ভালো লাগবে। এভাবে গম্ভীর হয়ে থাকিস না।”
ফারিনের এক চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরল। মনে মনে বলে,
-“আপু! বলতে চেয়েও আমি তোমাকে কিছুই বলতে পারছি না। আমি যে তোমাদের হাসি-খুশি সংসারে কাল হয়ে এসেছি।”
.
.
সিমি ওর জামা কাঁপড় নিয়ে শুভ্রের রুমে ঢুকে আলমারিতে সব কাঁপড় গুলো বাজ করে রাখে। আবার রুম থেকে বের হয়ে গেস্ট রুম থেকে কাঁপড় নিয়ে এসে তাড়াতারি করে ওর আলমারি খুলতে গিয়ে শুভ্রের আলমারি খুলে ফেলে।আর সাথে সাথে ওর আলমারির ভেতর থেকে একটি কালো রঙের পিস্তল গড়িয়ে পড়ে ওর পায়ের কাছে। সিমি পিস্তলটি দেখে কিছুটা ভয় পায়। বিছানার উপর কাঁপড় দেখে পিস্তল টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো। পিস্তলটিতে বুলেট লোড করা নাকি সেটা সিমি জানে না। ট্রিগারে হাত রাখতেই পিছন থেকে ক্রোধনিয় কন্ঠে চিল্লিয়ে শুভ্র বলে,
-“সিমি! ওটা রেখে দেও।”
কথাটা শুনেই সিমি চমকে ওঠে শুভ্রের দিকে ঘুরতে নিলেই ট্রিগারে চাপ লেগে একটি গুলি বের হয়ে সোজা শুভ্রের ডান হাতের বাহুতে এসে লাগে । শুভ্র দেয়ালের সাথে মিশে যায়। গুলি লাগা হাতের স্থান অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে । রক্ত ঝড়তে শুরু করে শুভ্রের হাত থেকে।সিমি হতভম্ব হয়ে যায়। বিস্ময় চোখে শুভ্রের দিকে তাকায়। পিস্তল ওর হাত থেকে পড়ে যায় ফ্লোরে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে গাল সহ মুখের উপর দু হাত রাখে। সিমির চোখে মুখে আতঙ্ক। শুভ্র চোখ স্থির করে রাখে সিমির উপর। ঐ চোখ দিয়ে যেন বলছিল “কেন করলে এটা সিমি?ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে?”
সিমি আর এক মিনিটও দাঁড়িয়ে না থেকে শুভ্রের কাছে আসে। ততক্ষণে গুলির শব্দ পেয়ে সবাই এক প্রকার দৌঁড়ে শুভ্রের রুমে আসে। শুভ্রের এই অবস্থা দেখে সবাই বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। রুদ্র শুভ্রকে ধরে উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“কিভাবে হলো এটা? কে করেছে?”
-“কোনো শত্রুর দলের লোক বাড়িতে ঢুকেছে নাকি?” অভ্র দ্রুত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল।
-“কথা পরে হবে,আগে ডক্টরকে খবর দেও।” আলতাফ চৌধুরী বলেন ।
যন্ত্রনায় শুভ্রের চেহারার রং পাল্টে গেছে। সিমি ওর পাশে বসেই কাঁদছে। রুদ্র ডক্টরকে খবর দিয়ে দিয়েছে । শুভ্রকে ধরে বিছানায় শুইয়ে দেয়। পরনের গেঞ্জির হাতার অংশ ছিঁড়ে একটি রুমাল বেঁধে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর এসে উপস্থিত হয়। সবাইকে রুম থেকে বের করে দেয়। শুধু অভ্র,রুদ্র ও আলতাফ চৌধুরী শুভ্রের পাশে থাকে। প্রথমনে শুভ্রকে অজ্ঞান করে নেয়। তারপর ওর হাত থেকে গুলি বের করে। শুভ্রের ভাগ্য ভালো ছিল বিধায় গুলিটা হাড্ডিতে না লেগে শুধু মাংসতে লেগেছে। যার কারনে পরবর্তিতে হাতের কোনো সমস্যা হবে না। এবং খুব তাড়াতারি সুস্থ হয়ে যাবে শুভ্র ।ডাক্তার কিছু মেডিসিন লিখে দিয়ে যায়। শুভ্র এখন অজ্ঞান অবস্থায় আছে ।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর সবাই শুভ্রের রুমে আসে। সিমিকে শুভ্রের গুলি লাগার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে সিমি সত্যিটা বলে দেয়। কিভাবে শুভ্রের হাতে গুলি লেগেছে। কেউ কিছুই মনে করেনি। কারণ এতে সিমির কোনো দোষ ছিল না। কিন্তু সিমি ভেতরে ভেতরে নিজেকে অপরাধী মনে করছে। আজকে ওর জন্যই শুভ্রের এই অবস্থা হয়েছে। রিমি,নিধি সিমিকে সান্তনা দিচ্ছে । কিন্তু তাতেও সিমির মন সান্ত হচ্ছে না। বার বার শুভ্রকে গুলি করার দৃশ্য চোখের সামনে ভাসছে। আর অজানতেই পানি ঝড়ছে চোখ থেকে।
প্রায় এক ঘন্টা পর শুভ্রের সেন্স ফিরে আসে। সবাই টুক টাক কথা বলে রুম ত্যাগ করে।এখন শুধু সিমি আর শুভ্র রুমে আছে। সিমি মাথা নত করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র সিমিকে দেখেও ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বলে,
-“ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ভুলের জন্য কাছে এসে আদর করবে?”
সিমি শুভ্রের কথা শুনে অতিসরল চোখে ওর দিকে তাকায়। এই অবস্থাও শুভ্রের চোখে,মুখে দুষ্টমির ছাপ। সিমি নরম ভঙ্গিতে শুভ্রের পাশে এসে বসে মৃদু স্বরে বলে,
-“স্যরি! আমি আসলে ইচ্ছে করে……….।”
বাকিটা বলার আগেই শুভ্র বাম দিয়ে টেনে ও’কে ওর বুকের উপর ফেলে দেয়। বাম হাত দিয়ে সিমিকে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরে। সিমি মনে মনে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলে “এই অবস্থাও রোমাঞ্চ করা থামে না এই লোকটার। বেটা কত বড় রোমান্টিক বাজ।”
শুভ্র সিমিকে ওর মুখের কাছে নিয়ে এসে ঠোঁটে ওর ঠোঁট জোড়া আলত করে ছুঁয়ে দেয়। ঠোঁটে বাঁকা হাসি রেখে বলে,
-“আমাকে তুমি আহত করেছো। এর জন্য তোমাকেই সুস্থ করতে হবে আমায়।”
-“আপনি কখনো শোধরাবেন না।”মাথা এদিক সেদিক দুলিয়ে বলে সিমি ।
-“গ্যাংস্টার রা সম সময় গ্যাংস্টারি থাকে। শুধু চেঞ্জ হয় তাদের Attitude ।”
সিমি ওর হাত দিয়ে শুভ্রের হাত ঠেলে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
-“সরুন,আমাকে ওঠতে দিন।”
-“এভাবেই শুয়ে থাকো।”
-“ঠেকা পড়ে নি।”
শুভ্র এবারও ঠোঁটে হাসি এঁকে বলে,
-“সিমি তোমার মধ্যে মনোভাব,আচরণ গুলো আমার কাছে খুব ভালো লাগে। আগে যেমন ভয় পেতে এখন তুমি আমাকে ভয় পাও না। কথা বললে পাল্টা জবাবও দিয়ে দেও। এখন বুঝা যাচ্ছে তুমি গ্যাংস্টার মিসেস.শুভ্র।”
শুভ্রের চোখে চোখ রেখে কথা গুলো শুনছিল সিমি। ভয়ংকর নেশা জড়ানো শুভ্রের চোখ। যা সিমিকে ওর কাছে টানছে। তাকিয়ে থাকার এক পর্যায় সিমি শুভ্রের হাত সরিয়ে ওঠে দাঁড়ায়। বলে,
-“কিছু খাবেন?”
-“হুম?”
-“কী খাবে……।
-“তোমাকে!”
সিমির চোখ জোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম শুভ্রের কথা শুনে। শুভ্রের ঠোঁটে লেগে আছে সেই দুষ্ট হাসি।সিমি ভাবছে গুলি তো হাতে লেগেছে। তাহলে তাঁর মাথা নষ্ট হলো কী করে? সিমি বিরক্তিতে নাকমুখ কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। শুভ্র মুচকি হেসে বলে,
-“কিছু বলবেন কী মিসেস.শুভ্র।”
-“ধ্যাৎ! ফালতু লোক ।” বিড়বিড় করে বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় সিমি।
শুভ্র তখনো হাসছিল।
.
.
.
.
.
.
.
Continued To….