Three Gangsters Love Part-31

0
3518

#Three_Gangsters_Love.
#Sumaiya_Moni.
#Part_31.

-“কী দরকার ছিল ফারিনকে গুলি করার?” মিনি টেবিলে লাথি মেরে চিল্লিয়ে বলে ধ্রুব ।

বিপলপ তালুকদার এটা দেখে রেগে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলে,
-“কারণ,ফারিন দৌঁড়ে ফাহিমের কাছে গিয়ে সব সত্যি কথা বলতে চাইছিল।তাই এটা করা বাধ্যতা মূলক ছিল।”

ধ্রুব বিপলপ তালুকদারের কাছে এসে পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে দাঁত কটমট করে বলে,
-“ফারিন আমার ভালোবাসা ছিল। ও’কে আমি ভালোবাসাতাম। চড়ম ভুল করেছেন আপনি ।”

বিপলপ তালুকদার ধ্রুবর রাগ দেখে ভয় পেয়ে যায় । সান্ত ভঙ্গিতে বলে,
-“সান্ত হও ধ্রুব! এটা করা জরু……..।”

-“জরুরি ছিল না।আমার পারমিশন ছাড়া কেন ফারিনকে মারতে গেলেন কেন?” লাস্টের কথাটা জোরে চিৎকার দিয়ে বলে ধাক্কা মেরে সোফায় ফেলে দেয় বিপলপ তালুকদারকে।

এক পা সোফার উপর উঠিয়ে বিপলপ তালুকদারের চেহারার সামনে ঝুঁকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-“আমার পারমিশন ছাড়া কিছু কাজ করার চেষ্টা করলে সেটার ফল ভালো হবে না। রিমেম্মার ইট।” কথাটা বলেই চলে যায় ধ্রুব।

বিপলপ তালুকদার বুকে হাত রেখে নিশ্বাস নিলো। তারপর ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেনো কল দিল।
____________________________

থ্রি গ্যাংস্টার হাউস……..

রুদ্র,অভ্র,শুভ্র চিন্তিত ভঙ্গিতে বসে আছে চেয়ারে । কী হচ্ছে? কে করছে ওদের সাথে এমনটা? কিছুই জানতে পারছে না ও খোঁজ লাগিয়েও কোনো ওয়ে,ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না ওরা। ওদের অপর পাশে মাথা নত করে বসে আছে ফাহিম। সাব্বির ওর কাঁধে হাত রেখে সান্তনা দিচ্ছে । ওরা এখন হাসপাতালে । তখনকার ফারিনের অবস্থা দেখে ফারিনের সেন্স না থাকলেও রুদ্র রা ফারিনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে। আই,সি,ইউ তে আছে ফারিন । ডাক্তার রা শিওর করে বলতে পারছে না ফারিনকে বাঁচানো যাবে কী না। রুদ্র,অভ্র,শুভ্র সাব্বিরকে হাসপাতালে থাকতে বলে বাড়িতে ফিরে আসে। কেননা,নিধি,রিমি,সিমি,ইশা পুরোপুরি ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। নিজেদের চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে যে কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারবে না। মনের মধ্যে ভয়,আতঙ্ক কাজ করবেই। বাড়িতে এসে হল রুমে আসতেই দেখে রিমি রা এখনো কাঁদছে। নিধি বেশি কাঁদছে এবং পাগলামি করছে। নিজ চোখে মামি ও মামাত বোনকে এবাবে নিহত,আহত হতে দেখে মানোসিক ভাবে প্রচণ্ড ভেঙ্গে পড়ে।

আর এদিকে আলি হোসনেরও কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। না আছে খবর ইফাদের। অভ্র লোক পাঠিয়ে স্কুলের হোস্টেলে গিয়ে জানতে পারে ইফাদ সেখানে নেই। এভেন,ইফাদ হোস্টেলে থেকে পড়তই না। তাহলে কেন নিধির মামা, মামি ওদের মিথ্যে কথা বলল?কী রহস্য আছে তাদের মাঝে?এটার হিসাব মিলাতে পারছে না অভ্র। নিধিকে কোন রকম টেনে,জোর করে রুমে নিয়ে আসে। নিধি পাগলের মতো বার বার অভ্রের কাছে একি কথা বলে যাচ্ছে, “ফারিনের কাছে যাব ।” অভ্র বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিধিকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ওর পাশে বসে চোখের পানি মুছে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তারপরও নিধি সান্ত হতে পারছে না। কিছুক্ষণ পর পরি লাফ দিয়ে ওঠে বসে একি কথা বলতে থাকে। শেষমেশ অভ্র ধমক দিয়ে শুইয়ে দেয় । নিধি সান্ত হয়ে যায়। চুপ,চাপ শুয়ে থাকে।
.
.
-“এত সিকিরিউটি থাকতে কে,কখন আমাদের বাড়ির ভেতরে থাকা গাড়ির মধ্যে বোম লাগিয়েছে। অথচ,কেউ টেরও পেল না? কিভাবে সম্ভব এটা?” এক প্রকার চিল্লিয়ে কথাটা বলে অভ্র।

রুদ্র,শুভ্র,আলতাফ চৌধুরী চুপ করে বসে আছে । কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর রুদ্র বলে,
-“মনে হচ্ছে আমাদের কোথাও ভুল হয়েছে। হয়তো যাকে আমরা শত্রু ভাবছি,তার চেয়েও বড় শত্রু আমাদের পিছন থেকে আঘাত করে দুর্বল করতে চাইছে।”

শুভ্র উত্তেজিত কন্ঠে বলে,
-“কিন্তু কে সে? কি চাই তার? আমাদের সামনে কেন আসছে না? এতটাই কালপিট কাপুরুষ সে?”

-“ধৈর্যের সিমা অতিক্রম কোরো না শুভ্র। ঠান্ডা মাথায় ভাবো তাকে কী করে ধরা যায়। ” আলতাফ চৌধুরী বলেন ।

-“কিভাবে ধরবো দাদু? আমাদের খাস ইনফরমারদের ঐ কালপিটের লোকরা মেরে ফেলেছে । কোনো আইডিয়া দেও দাদু।” শুভ্র বলে।

আলতাফ চৌধুরী চুপ করে রইলেন। রুদ্র বলে ওঠে,
-“রিমিদের কয়েক দিনের জন্য সেভ হাউসে পাঠিয়ে দেবো ।”

-“হ্যাঁ! এটাই ঠিক হবে। ওরা ওখানে সেভ থাকবে। ততদিনে আমরা মেইন ভিলেন কে খোঁজার ব্যবস্থা করব।‌” অভ্র বলে ।

-“ডিসিশন যখন নিয়েই নিজেছো।তখন ওদের কাল,পরশু পাঠিয়ে দেও সেভ হাউসে ।” আলতাফ চৌধুরী কথাটা বলে ওঠে দাঁড়ালেন। এবং রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো। রিমি,সিমি,নিধি, ইশা কিছু খেতে চাইছে না। সাব্বির বাড়িতে এসেই আগে ইশাকে খাইয়ে দেয়। রুদ্র,শুভ্র,অভ্র ওদের নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছে। খাওয়ার প্রতি শুধু ওদেরি নয় বরং রুদ্র দেরও রুচি নেই। রিমি দের নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছে ওরা। ফাহিম তখনো হাসপাতালেই ছিল। সাব্বির ইশাকে খাইয়ে দিয়ে নিজে খেয়ে হাসপাতালে আসে । ফাহিম সেই একি অবস্থায় বসেছিল আই,সি,ইউর সামনে। সাব্বিরের কাছে বেশ খারাপ লাগছে। রুদ্র রা ফারিনকে আহত হতে দেখে ফাহিমের রিয়েকশনেই বুঝে যায় ফাহিম ফারিনকে পছন্দ করত বা ভালোবাসতো। এতে ওদের কোনো সমস্যা ছিল না।

সাব্বির ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে বলে,
-“চল,কিছু খেয়ে নিবি।”

ফাহিম চুপ…..।

-“চল ফাহিম। এভাবে বসে থাকতে হলেও তো শক্তির প্রয়োজন। খেতে চল।”

ফাহিম মাথা নত করা অবস্থায় মৃদু স্বরে বলে,
-“ভাই! ফারিন না খেয়ে লাইফ সাপোর্টে আই,সি,ইউ তে পড়ে আছে। মুই কেমনে খাই কও? এখান থেকা যদি ওঠে যাওয়ার পর ফারিন আমার নাম ধরইরা ডাকে । তখন?”

কথা বলার ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছে সাব্বির । কিভাবে সান্তনা দিবে ও’কে? কিছু বলার নেই।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফাহিমের অবস্থাটা ফিল করে। তখনি ডাক্তার এসে বলে,
-“আপনারা চিন্তা করবেন না। রোগির অবস্থা এখন ভালো আছে। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন। তার অবস্থা যাতে আরো উন্নতির দিকে যায়।”

কথাটা শুনে সাব্বির কিছুটা হলেও স্বস্থি পাচ্ছে। ফাহিমের মনে ফারিনকে হারানোর ভয়টা কেঁটে যায়। ওঠে দাঁড়িয়ে আই,সি,ইউর গ্লাসের মধ্যে ফারিনের দিকে অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকায়। এই অশ্রু বলে দিচ্ছে ফারিনকে কতটা ভালোবাসে ফাহিম। বলে দিচ্ছে আবেগ প্রবল ভালোবাসার ভাষাটা কত গভীর।

সাব্বির ফোন করে রুদ্রের কাছে খবরটা জানিয়ে দেয়। রুদ্র বিষয়টা নিজের মধ্যেই রাখে। ওদেরকে বলে না।

রাতে…..

সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাব্বির বাড়িতে আসেনি। ফাহিমকে খাইয়ে নাকি তারপর বাসায় আসবে। ইশা ঘুমাতে আসে। দরজা হালকা ভিড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরি ঘুমিয়ে যায় ইশা।

সাব্বির ফাহিমকে জোর করে খাবার খাওয়াচ্ছিল।
কিছু সামান্য খাবার খাইয়ে বডিগার্ডদের ভালো ভাবে পাহারা দিতে বলে বাসায় চলে আসে।তখন ঘড়িতে একটা বাজতে চললো। মেইন ডোর লাগিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে ওর রুমে চলে আসে।রুমের লাইট তখন অফ ছিল। লাইট অন করে বেডের দিকে তাকাতেই ইশাকে বেডের নিচে পড়ে থাকতে দেখে। ইশার পায়ের কাছে অনেকটা ফ্লোর জুড়ে ব্লাড ছিল। যেটা দেখে সাব্বির মারাত্মক ভাবে ঘাবড়ে যায়। ইশাকে ধরেই গালে হাত দিয়ে জোরে,জোরে ওর নাম ধরে ডাকতে লাগলো। কিন্তু ইশার তখন সেন্সলেস অবস্থায় ছিল। তাই সাব্বিরের ডাকে ইশার কোনো রেসপন্স নেই। সাব্বির দ্রুত গতিতে ফোন বের করে রুদ্রের কাছে ফোন দিতেই পিছন থেকে কেউ ওর মাথায় জোরে বারি জীনিস দিয়ে আঘাত করে।যার কারণে চারদিক অন্ধকার দেখতে পাচ্ছে সাব্বির। জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

হঠাৎ করেই কেন জানি রুদ্রের ঘুম হালকা হয়ে আসে। চোখ মেলে রিমিকে বুকের কাছ থেকে সরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ফোন নিয়ে চলে আসে বাহিরে। করিডোর ও হল রুমের লাইট জ্বালানো ছিল। করিডোরে আসতেই ফাহিম আর সাব্বিরের কথা মনে পড়ে। সাব্বিরের কাছে ফোন দিতে নিলে ওর নজর পড়ে সাব্বিরের রুমে। সেখানের লাইট জ্বালানো ছিল এবং গেট খোলা ছিল সেটাও বোঝা যাচ্ছে। রুদ্র হেঁটে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। এক,দুই বার সাব্বিরের নাম ধরে ডাকার পর ভেতর থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে রুদ্রের মনে খটকা লাগে। দেরি না করে পর্দা সরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে ইশা ফ্লোরে রক্তাত অবস্থায় পড়ে আছে। সাব্বির রুমে নেই। রুদ্রর ইশার অবস্থা দেখেই গা শিউরে ওঠে। ইশাকে ধরার আগেই অভ্র ও শুভ্রকে ফোন দেয়। তারপর ইশাকে ধরে ডাকতে শুরু করে। অভ্র,শুভ্র ফোন পেয়েই দ্রুত গতিতে সাব্বিরের রুমে আসে। ওদের সাথে সিমি,নিধিও আসে। ইশার অবস্থা দেখে সবার মনের মধ্যে ভয়ের রেশ এসে জড়ো হয়। বডিগার্ড দের খবর দিয়ে ইশাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। ততক্ষনে হৈ চৈ শুনে আলতাফ চৌধুরীও ঘুম থেকে ওঠে যায়। যে হাসপাতালে ফারিনকে রাখা হয়েছে সেই হাসপাতালে ইশাকে নিয়ে আসে। নিধি দের বাসায় একাই রেখে যায়। রুদ্রদের সাথে আলতাফ চৌধুরী হাসপাতালে আসে।

ফাহিম ইশাকে দেখে অবাক হয়ে যায়। তারপর যখন ইশার অবস্থা জানতে পারে তখন আরো খারাপ লাগতে শুরু করে। ইশার অবস্থা ভালো না বিধায় হাসপাতালে আসার সঙ্গে সঙ্গে ওটিতে নিয়ে যায়। প্রচণ্ড ব্লাড যাওয়ার কারণে ইশাকে ব্লাড দেওয়া হয়। আর সেই ব্লাড দেয় ফাহিম । হাসপাতালে ইশার গ্রুপের ব্লাড না থাকায় ফাহিম দিতে রাজি হয়। ফাহিমের ব্লাডের গ্রুপ ইশার ব্লাডের গ্রুপ এক ছিল। ফাহিমের শরীর থেকে এক ব্যাক রক্ত নিয়ে ইশার শরীরে দেওয়া হয়। এদিকে ডাক্তার রা রুদ্রদের জানায় ইশার বাচ্চা আর বেঁচে নেই। বাচ্চাটি মারা গেছে। ইশার কিছুক্ষণ পরি জ্ঞান ফিরে আসবে। এবং ইশা সুস্থ আছে কথাটা বলে ডাক্তার চলে যায়। রুদ্র কথাটা শুনে থমকে যায়। সেখানের সিটে বসে ভাবতে থাকে কী বলবে এখন ইশাকে? আর এদিকে সাব্বির নিঁখোজ? জ্ঞান ফিরলে কিভাবে সামলাবে ইশাকে? ভাবতেই রুদ্রের বুক ভার হয়ে আসছে। আলতাফ চৌধুরী রুদ্রের পাশে বসে আছে। রুদ্রকে সান্তনা দেওয়ার ভাষা তার কাছে নেই বললেই চলে।

অভ্র ফোন করে নিধিকে ইশার কথা বলে। ইশার কথাটা শুনে ঠিক থাকতে না পেরে ফোন কেঁটে দেয় নিধি। তিন বোন এক সাথে কান্না করছে।

-“এত সুন্দর হাসি-খুশিতে ভরা পরিবারটা কার এমন কালো ছায়া পড়ল?কেন এমন হচ্ছে?”কান্না করে বলছে রিমি।

সিমি রিমিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে । সমান তালে সিমিও কাঁদছে। নিধি পুরা থম মেরে বসে আসে। এক শোক না কাঁটাতেই আরেক শোক এসে দরজায় করাঘাত করল। সব কিছুই কেমন বিষাদে পরিনত হয়েছে। চারদিক শুধু শোকের ছায়া।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
Continue To……..