অচেনা শহর ২ পর্ব-১০

0
953

#অচেনা_শহর 💖
#সিজন (২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১০]

রান্নাঘরে ঢুকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। অবস্থা কাহিল রান্নাঘরের ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সবকিছু
আটা পায়ের নিচে কত যে পড়ে আছে হিসেব নাই। পায়ে লেগে পা সাদা হয়ে গেছে আটার গুলার বাটির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম এটার খাওয়ার উপযুক্ত আর নাই এত পানি দিয়েছে যে এটা খাওয়া যাবেনা তাই একপাশে রেখে দিলাম। রান্না ঘরের চারপাশে তাকিয়ে আমার দম বন্ধ হয়ে অবস্থা।রান্না করতে পারেনা তাহলে রান্না করেছে কেন খাবার কিনে এনেও তো খেতে পারতো। এই ভাবে রান্না করা সম্ভব না। রান্নাঘর পরিষ্কার করতে হবে।
ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে ছিলাম কিন্তু কাজ করতে গেলে তো আর এভাবে করা যায় না। এখন আর এদিকে নিশ্চয়ই কেউ আসবে না তাই মাথা থেকে ওড়না ফেলে কোমরে বেঁধে নিলাম। তারপর ঝারু দিয়ে নিচে পরিষ্কার করতে লাগলাম। সবকিছু গুছিয়ে রেখে চাল খুঁজে ভাত বসালাম। ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস বের করলাম আলু কাটা ছিল। আদ্র গোশত ছাড়া খেতে পারে না তাই গোশত রান্না করলাম। রান্না শেষ হতে দু’ঘণ্টা লাগলো।
একটা শশা বের করে ওইটা ছুলছি।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে মুখ দিয়েই নিজেকে বাতাস করার চেষ্টা করছি ফূ দিয়ে। হঠাৎ মনে হল কেউ আমাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের দিকে কেউ তাকিয়ে থাকলে সেটা কিছুটা হলেও বোঝা যায় কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছিল। আমি ওইভাবেই সামনে তাকিয়ে দেখি আদ্র।
রান্নাঘরের দরজার হেলান দিয়ে কোমরে দুহাত রেখে আমার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই নড়ে চড়ে দাঁড়ালো।
আমি আচমকা আদ্রকে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেলাম খুব।
আমি ফটাফট চোখ দুটো নিচে নামিয়ে নিলাম। আদ্র গোসল করে এসেছে চুল থেকে পানি পরছে ট্রাউজার আর কালো গেঞ্জি পরে আছে। ফর্সা গায়ে কালো বরাবর‌ই সুন্দর লাগে আদ্রকেও অপূর্ব লাগছে দেখতে। আমি লজ্জা পাচ্ছি তখন খট করে শব্দ হলো।
আমি চমকে উঠলাম চমকে উঠে দেখি। আর চমকে উঠে ভুল করলাম, হাতে মে আমার চাকু ছিল ভুলেই গিয়েছি। আমি ছিটকে উঠে হাতে পুছ লাগিয়ে দিলাম। হাত কাটতে আহ করে উঠলাম।
ততক্ষনে তাকিয়ে দেখি আদ্র কিছু একটা আমার সামনে ঠাস করে রেখেছে। সেটা আর কিছু না আমার ফোন।
আমাকে আর্তনাদ করতে দেখে আদ্র বিস্মিত হয়ে তাকালো,
আমি আদ্রকে তাকাতে দেখে হাত লুকিয়ে ফেললাম,

কী হয়েছে হাতে দেখি?

আজও আমার দিকে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
আমি হাত লুকিয়ে রেখে বললাম,আদ্রকে দেখালে উত্তেজিত হয়ে পড়বে,,,

কিছু হয়নি আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম শব্দ শুনে তাই..

আমি বোকা নই যে তুমি আমাকে বোকা বানাতে পারবে না হাত লাকাইছো কেন বের করো?
রেগে বলল।

আমি তাও বের করছি না দেখে আদ্র রেগে আমার ডান হাত ওরনার আড়াল থেকে টেনে বের করল,
হাত থেকে গলগল করে রক্ত পরছে। যা দেখে আদ্রর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেল। শক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

কিছু হয়নি তাই না।

আমি ঢোক গিলে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে।সামনাসামনি আমি ভয় পেলেও আদ্রর চিন্তিত মুখে দেখে ভেতরে ভেতরে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে যাচ্ছে আমার মধ্যে।
পৃথিবীতে একজন তো আছে যে আমাকে নিয়ে চিন্তা করে। আমার কষ্টের নিজে কষ্ট পায়।
যে আমার একটু আঘাতে পাগলের মতো ছটফট করে চিন্তায় যার চোখ মুখ লাল হয়ে যায়। একটুতেই হারানোর ভয় পায়।ভালোবেসে সব সময় আগলে রাখতে চাই। অভিমান করে কথা না বলে থাকে। অভিমান করে আড়ালে থাকতে চায় কিন্তু যত্নের একটু অবহেলা করে না। আমি একটু আঘাত পেলে যে সমস্ত রাগ অভিমান ভুলে ছুটে চলে আসে।
তার হাজারটা কঠিন কথা শুনতে আমি রাজি আছি।

কতখানি জায়গা কেটে গেছে। আর রক্ত বের হচ্ছে দেখতে পাচ্ছ না তুমি বললে কিছু হয়নি সব সময় জেদ না দেখালে তোমার ভালো লাগে না তাই না।

আদ্র আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে টেনে রুমে নিয়ে এলো।

আরে আমাকে টেনে নিয়ে আসলেন কেন? আমারতো কাটা শেষ হয় নাই।

আর একটা কথা বলল তোমার গালে চর পরবে।

কিন্তু ওইগুলা,

তোমাকে এত কিছু ভাবতে হবে না। তোমাকে রান্না কে করতে বলেছে জাইন তো রান্না করতে পারে তুমি কেন রান্না করতে গেছো?

আদ্র কথা বলতে বলতে আমাকে বিছানায় বসিয়ে হলে ফার্স্ট ওয়াক্সের বক্স নিয়ে আসলো।

আমি থাকতে আপনারা কেন রান্না করবেন। তাই আমি ওনাকে চলে যেতে বলে ছিলাম।

সবকিছুতে মাতব্বরি না করলে তো তোমার চলে না। দিলে তো হাত কেটে।

কথা বলছে আমার আঙ্গুলে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে পরম যত্নে। আমি যাতে ব্যথা না পায় তাই একটু পরপর ফূ দিচ্ছে। আমি মুগ্ধ হয়ে আদ্রর ব্যান্ডেজ করা দেখছি। আদ্রর যত্নে ব্যান্ডেজ করা দেখে আমার চোখ দুটো ছল ছল করে উঠলো।

ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে বক্স রেখে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় আদ্র,

কে বলেছে তোমাকে রান্নাঘরে যেতে? পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।

কে বলবে আমি তো গিয়েছিলাম বললামই তো। আমি চোখে জল মুছে আদ্র ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।

রেগে, কেন যাবে?

বিরক্ত হয়ে, রান্নাঘরে কেন যায় রান্না করতে গিয়েছিলাম।

দাঁতে দাঁত চেপে, তাহলে হাত কাটলে কেন?

দেখুন হাত কাটা নিয়ে একদম বকবেন না হাত কাটার জন্য দায়ী কিন্তু আপনি।

আদ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,, কি আমি?

হ্যাঁ আপনি তো রান্নার সময় তোমার হাত কাটিনি। আপনি তো আমাকে ভয় দেখালেন ওইভাবে কেউ ফোনটাকে রাখে আপনার জন্যই তো আমার হাত কাটল।

অনেকদিন পর আবার আর্দ্র সাথে আমার ঝগড়া লেগে গেল। আমিতো আনন্দের সাথে কথাটা বললাম কিন্তু আদ্রর পাশ থেকে কোন রেসপন্স পেলাম না। আদ্র উঠে দাঁড়িয়েছে আর বলল,,,

নিশাত কে?

নিশাত নাম শুনেই চমকে উঠলাম। ফট করে দাড়িয়ে বললাম। আদ্র আমায় দিকে প্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আদ্রর দিকে না তাকিয়ে ছোটে রান্না করে এলাম। কতক্ষণ হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি ওইদিকে তো কাকিমা নিশাত অনেক চিন্তা করছে। কোথায় আছি আমি চিন্তা তো করবে তারা তো আর আমার খবর জানেনা
ইশ আগে তাদের ফোন করে জানানো উচিত ছিল।
তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে নিশাতের নাম্বারে কল করলাম,

আদ্র কথা আমার মাথায় নেই।

রিং বাজছে শেষে নিশাত ফোন ধরল। আর ফোন ধরেই উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,

হ্যালো স্নেহা আপনি ঠিক আছেন? কথা বলছেন না কেন? একটু আগে আপনার ফোন কে রিসিভ করল। আপনি কোথায় আছেন? বাসায় আসেন নি কেন এখনো? আপনি ঠিক আছেন তো আপনার কোনো বিপদ হয়নি তো? আমরা সবাই কিন্তু অনেক চিন্তা করছি রাত দশটা বেজে গেছে এখন আপনি বাসার বাইরে? মা কিন্তু আপনার চিন্তায় না খেয়ে বসে আছে।

নিশাত এত এত কথা বলছে যে আমি কথা বলার সুযোগই পাচ্ছি না।
অবশেষে বললাম,

নিশাত আপনি চুপ করুন একটু আমাকে কথা বলার একটু তো সুযোগ দিন।

লাগে বলন আপনি ঠিক আছেন আপনার কিছু হয়নি তো।

আরে বাবা আমার কি হবে আমি একদম ঠিক আছি সুস্থ আছি।

এবার নিশাত একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আর বলল,

আপনি ঠিক আছেন তাহলে বাসায় কেন আসেন নি এত রাত পর্যন্ত আপনি বাইরে কি করছেন?

সরি আমার আপনাদের আগে জানানো উচিত ছিল আসলে আমি এক জায়গায় আছি পর আপনাদের সব বলবো কাকিমা চিন্তা করতে মানা করেন আমি একদম ঠিক আছি। আমি আজকে বাসায় আসব না। আর.

আমি কথা বলছিস তখনি আদ্র এসে আমার কাছ থেকে টান মেরে ফোনটা কেড়ে নিল। আদ্রর কাজে আমি স্তব্ধ হয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্রর চোখ-মুখ রক্তবর্ণ হয়ে গেছে। রাগের ফুসফুস করছে আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি রাগের কারণটা ধরতে পারছি না উল্টা আমার রাগ লাগছে এভাবে ফোন কেড়ে নিল কেন?

কি করছেন ফোন দিন দেখতে পাচ্ছেন না কথা বলছি এইভাবে ফোন কেড়ে নিলেন কেন?

এভাবে ফোন কেড়ে নেওয়ার আমি একটু রেগে কথাটা বললাম আর আদ্র এতে আরো ক্ষেপে গেল,, ফোনটা আমার চোখের সামনে ঠাস আছাড় মারল ফ্লোরে আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ফোন আর আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।

~~চলবে~~