অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২১

0
979

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২১




বিভোর বাহিরে চলে গেল,কুহু হালকা সাজলো, বিভোর কথা শেষ করে রুমে এসে কুহুকে দেখে এক জায়গায় দাড়িয়ে রইলো বুকে হাত দিয়ে, বিভোর কুহুকে দেখে মনে মনে বলল, এই মেয়েটা পাগল করে ফেলবে আমাকে। বিভোরের এমন চাহনিতে কুহু বেশ লজ্জা পেল,বিভোর ধির পায়ে কুহুর কাছে যেতে লাগল,,কুহুর কাছে গিয়ে কুহুর শাড়ির আচল দিয়ে কুহুর মাথায় ঘোমটা দিয়ে দিল তারপর বলল,নাও ইউ লুকিং পার্ফেক্ট। কুহু মুচকি হাসলো,বিভোর এক অদ্ভুত চাহনিতে ঘোর লাগা কন্ঠে কুহুকে বলল,কুহু ভালোবাসি বড্ড বেশী ভালোবাসি।

কুহু বিভোরের দিকে তাকিয়ে বলল,আমিও খুব ভালোবাসি আপনাকে। বিভোর কুহুর মুখের সামনের থেকে অবাদ্ধ চুল গুলোকে সরিয়ে দিয়ে বলল,কুহু ভালোবাসতে চাই অনুমতি দেবে।
কুহু কিছু না বলে বিভোরকে জরিয়ে ধরলো।বিভোর উওর পেয়ে কুহুকে আর জরিয়ে নিতে লাগল নিজের ভালোবাসার আবেশে।

কিছু দিন কক্সবাজারের সুন্দর সময় কাটিয়ে কুহু আর বিভোর ঢাকায় ফিরলো,বাড়ীতে পৌছে বিভোর অফিসে চলে গেল,আর কুহু বাড়ীরর হালকা কাজের সাথে নিজের পড়াশোনাও ঠিক মতো করতে লাগল।কুহু বাড়ীতে বসে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত, বিভোরকে ফোন করলো,কুহু বলল,
– হ্যালো
– ভালোবাসি
– হুম ভালোবাসি এবার শুনুন
– বল আমার বউ
– আমার বাড়ীতে ভালো লাগছে না
– তাহলে আমি চলে আসি কি বল
– দেত কি বলেন
– তাহলে কি করতে পারি আমি আপনার জন্য
– আমি অফিসে আসি আগের মতো কাজ করব
– কি দরকার
– আপনাকে চোখে চোখে রাখতে পারব, অফিসে তো সুন্দরী মেয়ের অভাব নেই
– হা হা হা তাহলে আসো
– ঠিক আছে আমি এখনি আসছি আকাশের আবহাওয়া ভালো না বৃষ্টি হতে পারে
– ওকে সাবধানে
– হুম রাখি
– এই শোনো
– কি
– ভালোবাসি
– ভালোবাসি পাগল একটা

বলেই মুচকি হেসে ফোন কেটে দিল কুহু।অফিসের জন্য রেডি হয়ে নিলো,দাদু লিজারা আবার আমেরিকায় চলে গেছে বেশী দিন না, কাজের খালাকে বাড়ী দেখে রাখতে বলে বাহিরে গেল কুহু।ড্রাইভারকে বলে অফিসের উদ্দেশে পাড়ি জমালো কুহু।ড্রাইভার চাচা আপন মনে গাড়ি ছুটিয়ে চলেছে নিজের গন্তব্যের উদ্দেশে, আর কুহু বাহিরের কালো মেঘ আচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ গাড়ি থেমে গেল।কুহু ড্রাইভার চাচাকে বলল,
– চাচা কি হলো
– আম্মা গাড়িতে মনে হয় সমস্যা হইসে
– ওহ ঠিক হয়ে যাবে না এখন
– মনে হয় না ঠিক হইবো আর ঠিক হইতে অনেক সময় লাগবো
– কি করি এখন
– তুমি একটা টেক্সি নিয়ে চইল্লা যাও
– তাই করি

কুহু গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় টেক্সি খুজতে লাগল,কিন্তু কেউ যাবে না বলছে,কুহু কিছুটা সামনে গিয়ে টেক্সি খুজতে লাগল,আজ মনে হয় অফিসে পায়ে হেটেই যেতে হবে।কুহু সামনে হাটছিল হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো কুহুর সামনে,গাড়ির ভিতর থেকে এক যুবক মাথা বের করে বলল,হেল্প চাই।কুহু না শোনার মতো সামনে হাটতে লাগল হঠাৎ ছেলেটা বলল,আমি সামনেই যাচ্ছি কিছুখন পর বৃষ্টি শুরু হতে পারে ভিতরে আসুন আপনাকে আপনার জায়গায় নামিয়ে দেবো।কুহু বলল,না আমি হেটেই যেতে পারব।

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,আমি অপরিচিত বলে আসতে চাইছেন না সামনে রাস্তা অনেকটা নির্জন আপনার একা যাওয়া ঠিক হবে না।কুহু কিছু বলল না।ছেলেটা আবার বলল, আমার সাথে সেফ থাকবেন আসুন। কুহু ভাবনায় ডুবে গেল,কি করা উচিৎ হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি শুরু, ছেলেটা বলল,বৃষ্টিতে ভিজছেন কেন ঠিক আছে আপনার ইচ্ছে বায়।

বলে ছেলেটা গাড়ির জানালার কাচ উঠাতে লাগল,কুহু কি ভেবে বলল,ঠিক আছে কিন্তু আমি ভাড়া দিয়ে যাব।ছেলেটা বলল,এক তো হেল্প করতে চাইছি আর আপনি আমাক ড্রাইভার বানিয়ে দিচ্ছেন নোট ফেয়ার।কুহু বলল,ঠিক আছে।কুহু গাড়িতে গিয়ে বসলো, ছেলেটা কিছু না বলে সামনে ড্রাইভ করতে থাকলো,কুহু বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে,হঠাৎ কুহুর ফোন বেজে উঠল, দেখলো বিভোরের ফোন, কুহু রিসিভ করে বলল,
– হ্যালো
– কোথায় তুমি বৃষ্টি শুরু হয়েছে বাড়িতে থাকলে আসতে হবে না
– আমি রাস্তায়, আসছি
– ঠিক আছে সাবধানে
– হুম

কুহু ফোন কেটে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিল আবার বাহিরে তাকালো।পাশের ছেলেটা হঠাৎ বলল,কে ফোন করে ছিল ওহ সরি এটা আপনার একান্ত ব্যাপার।কুহু বলল,আমার হাসব্যান্ড।ছেলেটা বলল,ওহ আপনি ম্যারিড। কুহু বলল,হুম।ছেলেটা বলল,আপনার হাসব্যান্ড কি করে।কুহু বলল,বিজনেস ম্যান নেক্সট ইন কোম্পানির সিও উনি।ছেলেটা বলল,বাহ তাহলে আপনি, মিস্টার বিভোর চৌধুরীর ওয়াইফ।কুহু বলল,হুম।ছেলেটা বলল,রাস্তায় কি করছিলেন।কুহু বলল,গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়ে ছিল রাস্তায় তাই।ছেলেটা হঠাৎ গাড়ি থামলো আর বলল,আপনার অফিস। কুহু বলল,থ্যাংকস।ছেলেটা বলল, হুম বায়।

ছেলেটা চলে গেল।কুহু ভাবলো ছেলেটা খারাপ ছিল না, প্রথম দিকে দিয়ে মনে মনে ভয় পাচ্ছিল কুহু। কুহু অফিসে ঢুকলো,লিফটে উঠলো,হঠাৎ দুতলায় লিফট থামতেই দেখলো রেহান, রেহান ভিতরে ঢুকলো,কুহু বলল,কেমন আছো।রেহান মুচকি হেসে বলল,আলহামদুলিল্লাহ তুমি।কুহু বলল,আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো।রেহান বলল,হঠাৎ অফিসে।কুহু বলল,আজ থেকে আবার কাজ করব।রেহান বলল,এত বড় কাম্পানির মালিকের ওয়াইফ তুমি তোমার আবার কাজ করা লাগে নাকি।কুহু বলল,বাড়ীতে বসে থাকতে ভালো লাগে না। রেহান বলল,ভালো তাহলে এখন থেকে রোজ দেখা হবে।কুহু বলল,হুম

উপরে আসতেই কুহু, বিভোরের ক্যাবিনে গেল,কুহুকে দেখে বিভোরের ঠোটের কোণে এক রাজ্য হাসি জোড়ো হলো,বসা থেকে উঠে কুহুর কাছে গিয়ে কুহুকে জরিয়ে ধরলো বিভোর।
কুহু বলল,কি করছেন এটা অফিস কেউ চলে আসবে।বিভোর বলল,কেউ আসবে না।বিভোরের কথা শুনে কুহু মুচকি হেসে বিভোরকে জরিয়ে ধরলো, হঠাৎ ক্যাবিনের দরজা খুলে আকাশ বলতে বলতে আসলো,বিভোর আমাদের নতুন প্রজে……

বলার আগেই চুপ হয়ে গেল,কুহি আকাশকে দেখে বিভোরকে ছেড়ে দিল,আকাশকে দেখে লজ্জায় কুহুর মুখ লাল হয়ে গেল।বিভোর বলল,ওই ভদ্রতা সব ভুলে গেছিস নাকি নক করে আসতে পারিস না।আকাশ দাত কেলিয়ে বলল,সরি আমি জানতাম না কুহু এখানে ওকে নেক্সট টাইম খেয়াল রাখবো।বিভোর বলল,বল কি বলতে এসে ছিলি।আকাশ বলল,আমি আর একটু পরে আসছি। বলেই আকাশ বেড়িয়ে গেল।কুহু রেগে বিভোরকে বলল,বলে ছিলাম।বিভোর বলল,বাদ দাও বল আসতে সমস্যা হয় নিই তো।কুহু বলল,রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়ে ছিল।

বিভোর বলল,সে কি কথা তাহলে আসলে কিভাবে।কুহু বলল,টেক্সি খুজছিলাম কিন্তু কেউ আসতে রাজি হচ্ছিল না কিন্তু হুট করে একটা গাড়ি এসে থামলো পরে বলল,হেল্প করবে আমি প্রথমে রাজি হলাম না পরে আর উপায় না পেয়ে উঠলাম কিন্তু লোকটা অতোটা খারাপ ছিল না।
বিভোর বলল,ভিতরে আসতে বলতে।কুহু বলল,আমি তো বলি নিই আসতে উনি আপনাকে চেনে। বিভোর বলল,ওহ কিন্তু শোনো যাকে তাকে বিশ্বাস করবে না এখনকার মানুষ বেশী ভালো হয় না।কুহু বলল,ঠিক আছে আচ্ছা এখন আমি কাজে যাই।বিভোর বলল,এত কিসের তাড়া তোমার কাজ তো আমার কাছে থাকা।কুহু বলল,আপনিও না।বিভোর বলল,কি।কুহু বলল,কিছু না।বলেই বাহিরে চলে গেল।

চলবে…….
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙