অদ্ভুত তোমার নেশা পর্ব-২৫

0
906

#অদ্ভুত_তোমার_নেশা
#লেখিকা_লায়লা_আঞ্জুমান_ইতি
#পার্ট____________২৫




বিভোর গাড়ি চালিয়ে চলেছে আর কুহুকে এদিক ওদিক খুজছে,হঠাৎ বিভোরের ড্রাইভার চাচার কথা মনে পড়লো,বিভোর তাড়াতাড়ি কল করলো,এত খন কেন খেয়াল হলো না বিভোরের।একবার রিং হতেই ড্রাইভার চাচা রিসিভ করলো,বিভোর তাড়াতাড়ি বলল,হ,,হ্যালো চাচা আপনারা কোথায়।ড্রাইভার চাচা বলল,আমরা তো বিভা আম্মার বাসায়।বিভোর বলল, কি বিভার বাসায় কুহুও আছে।ড্রাইভার চাচা বলল,হ্যা আছে তো। বিভোরের মনে প্রশান্তি পেল।

বিভোর আর দেরি না করে বিভার বাড়ীতে গেল,বাড়ীতে পৌছে কলিং ব্যাল দিতেই কাজের মেয়ে এসে দরজা খুললো,বিভোর কিছু না বলে তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকলো, ঢুকে দেখে বিভা কুহু আকাশ বসে আছে,সবাই বিভোরকে এই অবস্থায় দেখে অবাক, কুহু বসা থেকে উঠে দাড়ালো তারপর বলল,আপনি।বিভোর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে দৌড়ে গিয়ে কুহুকে জরিয়ে ধরলো।কুহুও অনেকটা অবাক হয়ে গেল তারপর ধিরে ধিরে বলল,আপনি ঠিক আছেন।

বিভোর কুহুকে ছেড়ে দিল,তারপর বলল,তুৃমি এখানে এসেছো আমাকে একটা বার জানালে না কেন।কুহু বলল,সরি আসলে ফোনে চার্জ ছিল না বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিল আর এখানে আসার পর খেয়ালই ছিল না।আকাশ বলল,তুই তো দেখি ভালো চিন্তায় ছিলি হাহাহা বিভা ওকে এক গ্লাস পানি দেও।

বিভোর আর কুহু কিছুখন ওদের ওখানে থেকে বাড়ী ফিরার উদ্দেশে পাড়ি জমালো,বিভোর শক্ত হয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলেছে। কুহু বিভোরের দিকে তাকিয়ে আছে।
কুহু মিনমিন করে বলল,আপনি রেগে আছেন।বিভোর কিছু না বলে চুপ হয়ে রইলো।কুহু আবার বলল,আর কত বার সরি বলব, ছুটির সময় ক্যাবিনে গিয়ে দেখি আপনি কাজে ব্যস্ত
তাই আর ডাকি নিই সরি আর কখনো এমন করব না।

বিভোর এবারও কিছু বলল না। বাড়ীরর সামনে গাড়ি থামিয়ে ভিতরে চলে গেল,কুহু তাড়াতাড়ি নেমে বিভোরের পিছন পিছন গেল।পিছন থেকে কুহু বলেই চলেছে, সরি আর কখনো এমন করব না সরি। বিভোর হঠাৎ পিছনে ঘুরে রেগে বলল,চুপ কর কুহু তোমার এইসব বাচ্চামোতে আমি বিরক্ত। কুহু কাদু কাদু ফেস করে বলল,
– সরি
– তোমার সরি তোমার কাছেই রাখো
– প্লিজ রেগে থাকবেন না, ভুল হয়ে গেছে
– আমি কোনো কথা বলতে চাই তোমার সাথে
– সরি প্লিজ আর রেগে থাকবেন না
– আমার কত টেনশন হচ্ছিল জানো, না তা জেনে তুমি কি করবে, তা দিয়ে তোমার কি
– সরি বললাম তো আপনি বকছেন কেন
– বকার মতো কাজ কর কেন
– আর হবে না

বিভোর আর কিছু না বলে কুহুর সামনের থেকে চলে গেল,কুহু রুমে গিয়ে বিছানায় বসে কান্না করতে লাগল,বিভোর বাহিরে গিয়ে নিজেকে শান্ত করে আবার রুমের সামনে এসে দেখলো,কুহু বিছানায় বসে বাচ্চাদের মতো কান্না করছে, কুহুর কান্না দেখে বিভোরের অবশিষ্ট রাগ পানি হয়ে গেল।বিভোর কুহুর কাছে গিয়ে বসলো,কুহু একবার বিভোরের দিকে তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকালো।বিভোর কুহুর কাছে গিয়ে বলল,সরি।কুহু বিভোরের দিকে চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ বিভোর কুহুকে নিজের জরিয়ে ধরে, কুহুর মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলল,আর কখনো এমন কর না আমার খুব ভয় হয় তোমাকে হারিয়ে ফেলার।

কুহু বিভোরকে জরিয়ে ধরে বলল,আর কখনো এমন করব না।বিভোর বলল,গুড গার্ল।কুহুকে বুকের থেকে উঠিয়ে, কুহুর চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে দুচোখে চুমু খেল বিভোর, তারপর বলল,তোমার জন্য গিফট এনেছিলাম দেখেছো।কুহু বলল,কোথায়।বিভোর বলল,আরে তোমার পিছনেই। কুহু পিছনে ঘুরে দেখে বলল,ওয়াও আমি তো খেয়ালই করি নিই আপনার ধমক শুনেই চোখে আধার দেখ ছিলাম।

বিভোর বেলী ফুলের মালা নিয়ে কুহুর চুলে লাগিয়ে দিল,তারপর কাচের চুড়ি নিয়ে কুহুর দু হাতে পড়িয়ে দিল।কুহু তো এইসব দেখে মহা খুশি। কুহু হাতের চুড়ি গুলো দেখে মনে আনন্দে, বিভোরের গলা জরিয়ে বিভোরের গালে একটা চুমু খেয়ে বলল,থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ।পরক্ষণেই নিজেই লজ্জায় পড়ে গেল।কুহু কাচুমাচু হয়ে বলল,ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন, আপনি নির্লজ্জ হলেও আমার লজ্জা আছে।

বিভোর কুহুর কোমড় টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তারপর বলল,খুব ভালোবাসি তোমাকে বিশ্বাস কর তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত ও ভালো থাকা অসম্ভব, আমি তোমার নেশায় আসক্ত, এই নেশার থেকে কখনো আমি বের হতে পারব না , #অদ্ভুত_তোমার_নেশা।

কুহু বলল,আমিও যে আপনাতেই পরিপূর্ণ, আপনাকে ছাড়া যে আমি নিজেকে কল্পনাও করতে পারি না, ভিশন ভালোবাসি আপনাকে কখনো ছেড়ে যাবেন না তো।বিভোর কুহুর গাল ধরে মুচকি হেসে বলল,কখনো না। বলেই বিভোর কুহুর কপালে ভালোবাসার ছোয়া একে দিল।

পরের দিন বিভোর অফিসে গিয়ে নিজের ক্যাবিনে ঢুকেই দেখলো মিমি দাড়িয়ে আছে,বিভোর মিমিকে পাশ কাটিয়ে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলো,ল্যাপ্টব খুলে কাজ করতে করতে বলল,যা বলার তাড়াতাড়ি বলে চলে যাও।মিমি বলল,
– বিভোর আই এম সরি
– এইসব পুরোনো যা বলার তাড়াতাড়ি বল
– আমি বুঝতে পেরেছি, আমি আর কখনোই তোমাকে নিজের করে পাব না, কারণ তোমার মনে এখন আমার জন্য ভালোবাসা নেই, হয় তো এক বিন্দু আছে, বা তাও শেষ হয়ে গেছে।নিজের ভুলের জন্যই আজ তোমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমি।মাহমুদ এর কাছ থেকে প্রতারণা পাওয়ার পর বুঝতে পেরেছি, তোমার কেমন লেগে ছিল।তোমাকে আগের ন্যায় মনে মনে ভালোবেসেছি ভেবে ছিলাম এক দিন সব আগের মতো হবে কিন্তু তা হলো না।সেই দিন তোমার স্রীর প্রতি তোমার ভালোবাসা দেখে বুঝতে পেরেছি ঠিক কত টা ভুল করে ছিলাম আমি তোমাকে ছেড়ে যেয়ে,ওমন না করলে হয় তো এই ভালোবাসা গুলো আমার জন্য হতো।
ওই দিনের পর থেকে অনেক ভাবলাম,তোমার সাথে আগে যা করে ছিলাম ঠিক করি নিই,আর তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে তোমরা একেঅপরকে খুব ভালোবাসো আর হ্যাপি আছো, এখন তোমাদের মাঝে এসে ঠিক করছি না।তো আর কখনো তোমাদের মাঝে আসবো না, তোমরা হ্যাপি থেকো।

মিমির কথা শুনে বিভোর বেশ অবাক হলো, মিমি তাহলে অবশেষে বুঝতে পারলো,বিভোর ঠোঁটের কোণে সামান্য হাসি এনে বলল,থ্যাংক ইউ মিমি তুমিও তোমার লাইফে ভালোবাসার মানুষ পাবে যে তোমাকে ভালোবাসবে।মিমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল,
– জানি না পাব কি না, কিন্তু তোমরা ভালো থেকো আর হয় তো কখনো দেখা হবে না, আর আমি চাইও না আর মুখোমুখি হবার, বায় দ্যা ওয়ে এটাই আমাদের শেষ দেখা, আমি আজ ফ্লাইটে ইতালি যাচ্ছি আব্বুর কাছে আর হয় তো বাংলাদেশ কখনো আসবো না।বাকি টা জীবনে ওখানেই কাটাবো।
– ওকে সাবধানে যেও আর ভালো থেকো।
– হুম বিভোর আর একটা কথা ছিল
– বল
– আমি কি শেষ বারের মতো একটা বার তোমাকে হাগ করতে পারি
– সরি মিমি
– ইটস ওকে বায়
– হুম

মিমি বেড়িয়ে আসলো ক্যাবিন থেকে, মনের মাঝে কষ্টরা ভালোই বিরাজ করছে,নিজের ভুলের শাস্তি তো পাওয়ারই ছিল তাই হচ্ছে, না চাইতেও চোখ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে,মিমি আবার হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে সেই গড়িয়ে পড়া অশ্রু টা মুছে নিচ্ছে,নিজেকে সাভাবিক করার চেষ্টায় লেগে পড়লো কিন্তু মনের সাথে পেরে উঠছে না, অশ্রু মুছে নিতেই না নিতেই পূর্ণরায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।মিমি বাহিরে গিয়ে গাড়ির ডর খুলে ভিতরে বসতে গিয়ে আরেক বার অফিসের দিকে তাকালো,তারপর গাড়িতে উঠে চলে গেল বিভোর আর কুহুর মাঝের থেকে অনেক দূরে।

চলবে………
ভুলক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 💙