#অন্তরালে_তুমি
#Part_34
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
— আসসালামু আলাইকুম লিসেনার্স। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আজ শেষবারের মত আপনাদের মাঝে হাজির হলাম আপনাদের প্রিয় শো “অন্তরালে তুমি”-কে নিয়ে। শেষবারের মত কেন বলছি তাই তো? এর মুখ্য কারণ হচ্ছে আজকেই আমি এই শো-টির ইতি টানবো।
এই বলে এক দীর্ঘ শ্বাস নেয় সে। তারপর বলতে শুরু করে,
— সকলের প্রশ্ন ছিল যে, “আরিহা কি আদো বেঁচে আছে নাকি মরে গিয়েছে? বেঁচে থাকলে কোথায়? আর ওর বাচ্চাটিরই বা কি হলো? ” তাই তো!
তো উত্তর হচ্ছে হ্যাঁ আরিহা বেঁচে আছে আর সেই বাচ্চাটিও। বাচ্চাটি ভালোই আছে আমার সাথেই আছে কিন্তু আরিহা না ভালো আছে আর না আমার সাথে আছে। সে যে বেঁচে থেকেও মৃত। কেন না সে যে তলিয়ে আছে গভীর নিদ্রায়। বিকোজ সি ইজ ইন কোমা। এখন নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন উঠেছে,” কিভাবে কি হলো? সেইদিন আসলে কি হয়েছিল তাই তো?”
এইসব প্রশ্নের উত্তর আছে সেই ছয় বছর আগে। তাহলে চলুন আবার সেখান থেকেই শুরু করি যেখানে আমি গত এপিসোডে থেমেছিলাম।
________________________________________
ইহান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার দৃষ্টি ওটির দরজার দিকে। চোখ দুটো অসম্ভব লাল। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। মুখটা একদম রক্তশূণ্য দেখা দিচ্ছে। বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যথা করছে। অসহ্যনীয় ব্যথা হচ্ছে বুকের ভিতর। সকলের মুখও রক্তশূণ্য হয়ে আছে। বেশ অনেকক্ষণ কেটে গেল। ইহানের হাত পা রীতিমতো কাঁপছে। সহ্য হচ্ছে সময়ের আক্ষেপগুলো। নিস্তেজ হয়ে পড়ছে সে। ইহানের অবস্থা বুঝতে পেরে জিসান ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আর ওকে জোড় করে চেয়ারে বসায়। ইহানের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কতটা ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে আছে। সকলের মুখেই দুঃশ্চিন্তার ছাপ।
প্রায় কিছুক্ষণ পরই ওটির দরজা খুলে একজন নার্স বেড়িয়ে আসে। ল দরজা খুলতে দেখেই ইহান দাঁড়িয়ে যায়। দৌঁড়ে গেটের সামনে চলে যায় সে। হাতে তার সাদা কাপড়ে মুড়ানো টুকটুকে একটি ছোট বাচ্চা। বাচ্চাটি চুপটি মেরে শুয়ে আছে। কি নিষ্পাপই না তার মুখখানটি।তখন নার্সটি বলে,
— পেশেন্টের হাসবেন্ড কে?
ইহান তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— আমি!
নার্স ইহানের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে,
— কনগ্রেচুলেশ! আপনার একটি ফুটফুটে মেয়ে সন্তান হয়েছে। নেন!
ইহান বিষ্ময়কর চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। তার বিষয়টি যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। সে যেন ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছে। জিসানের ধাক্কায় সে দ্রুত বাস্তবে ফিরে আসে। অতঃপর কাঁপা কাঁপা হাতে ওকে কোলে নেয়। বাচ্চাটিকে কোলে নিতেই পুরো শরীর বেয়ে বয়ে চলে প্রশান্তির হাওয়া। সে এক ধ্যানে বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে থাকে। কি নিষ্পাপই না লাগছে তাকে। একদম নূরানী চেহারা লাগছে। ইহান আস্তে করে ওর গালের সাথে গাল মিলায় তখনই টনক নেড়ে উঠে,” আরিহা কোথায়? ও কেমন আছে? ঠিক আছে তো? ও কি দেখেছে আমাদের মেয়েকে?”
এমন নানান প্রশ্ন মাথার ভিতর ঘুরপাক খেতে থাকে। অতঃপর সে নার্সকে জিজ্ঞেস করে,
— আমার ওয়াইফ? ও কেমন আছে? ঠিক আছে তো?
সাথে সাথে নার্স এর চেহারা রক্তশূণ্য হয়ে যায়। সে কিছু না বলেই চলে যায়। অতঃপর একটু পর একজন ডাক্তার আসে। তাকে দেখে জিসান বলে,
— স্যার আরিহা ঠিক আছে তো? ওর কিছু হয় নি তো?
সে কাঠ কাঠ বলে,
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
— এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তার অপারেশন চলছে। সন্তান প্রবসের সময় রক্তের প্রবাহ হুট করে বন্ধ হয়ে যায় যার জন্য বাচ্চাটিকে বের করা দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ এর রহমতে বাচ্চাকে বের করতে আমরা সক্ষম হয় কিন্তু পেশেন্টের অবস্থা ক্রিটিকাল হয়ে যায়। শ্বাস কষ্ট দেখা দেয় তার মধ্যে। তার যে অবস্থা তাতে আমাদের বাধ্য হয়ে এখনই তার ব্রেইনের সার্জারী শুরু করতে হবে।
ইহান তখন একটু উত্তেজিত হয়ে বলে,
— তাহলে করুন না। আপনারা হাতের উপর হাত রেখে বসে আছেন কেন?
ডাক্তার কিছুটা কঠোর কন্ঠে বলেন,
— আপনি এইসব যতটা ইজি ভাবছে ততটা ইজি না। এইখানে তার অপারেশন করতে গেলে তার বাঁচা বা মরার ৫০-৫০ চান্স আছে। এই অপারেশন সাকসেসফুল ও পারে আবার আনসাকসেসফুল ও হতে পারে। তার উপর তিনি আজ অনেক বেশি প্রেশার নিয়ে ফেলেছেন। যার জন্য পরিস্থিতি বুঝতেই পারছেন। কেসটা কত কমপ্লিকেডেট। তাই অপারেশন করার আগে আপনাদের একটা বন্ডে সাইন করতে হবে।
জিসান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ধপ করে বসে পড়ে। ইহান মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে যায়। থরথর করে কাঁপছে সে। পুষ্পিতা তা দেখে দ্রুত বাচ্চাটিকে নিজের কোলে নেয়। ইহান আস্তে আস্তে দেয়ালের সাথে ঠেকে যায়। চোখ দিয়ে না চাইতেও পানি পড়ছে। বুকের ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে সামলানো দায় সমান মনে হচ্ছে। পারছে না এইসব সহ্য করতে। এমন সময় ডাক্তার তাড়া দিয়ে বলে,
— প্লিজ তারাতারি সিদ্ধান্তটা নিন। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। রিক্স এইভাবেও আছে ওইভাবেও আছে। সো ইউ এন্ড উই কান্ট কম্প্রোমাইজ।
ইহান তখন নিজের চোখের পানিটা মুছে শক্ত গলায় বলে,
— অপারেশনটা করুন ডাক্তার। আমি বন্ডে সাইন করতে রাজি।
ইহানের কথায় সকলেই ওর দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ইহান যে এত দ্রুত স্টেপ নিবে তারা হয়তো ভাবতে পারে নি। ডাক্তার আর দেরি না করে চলে যায়। অতঃপর একজন নার্স বন্ডের কাগজ নিয়ে হাজির হয়। ইহান সাইন করে ধপ করে বসে পড়ে। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে তার।
___________________________
প্রায় ঘন্টা খানিক পর ওটির লাইট নিভে যায়। ডাক্তাররা বেড়িয়ে আসে। এসেই তারা জানায় যে অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কথাটি শুনার সাথে সাথে সকলের মাঝে খুশির আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ডাক্তার অতঃপর যা বলে তাতে এই খুশিটা যেন ফিকে পড়ে যায়। ডাক্তার জানায় যে যদি আরিহার জ্ঞান ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরে তাহলে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। এইদিকে বাচ্চাটিও জেগে উঠে কান্না জুড়ে দিয়েছে। সকলের আর বুঝতে দেরি নেই তার খুদা পেয়েছে। তাই জিসান ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ওর জন্য নবজাতক বাচ্চাদের জন্য তৈরি পাউডার মিল্ক আনতে যায়। অতঃপর সেই দুধ ঘুলিয়ে ওকে খাওয়ানো হয়।
দেখতে দেখতে একদিন পার হয়ে যায়। সকলেই তখনো অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে। ইহানের মুখের দিকে তো তাকানো যাচ্ছিল না। রক্তশূন্য মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। চুল গুলো উষ্কখুষ্ক। চোখ দুটো অসম্ভব লাল। পরিধান করা বস্ত্রও বিধস্ত অবস্থা ধারণ করেছে। এমন অবস্থা হওয়ারই কথা। আরিহা হসপিটালে আশার পর থেকে সে না ঘুমিয়েছে আর না এক ফোটা পানি খেয়েছে। এমন কি নিজের সন্তানকেও নেই নি আর। বুকের ভিতরটা বেশ জ্বালা পরা করছিল ওর। কষ্টে বুকটা ভার হয়ে আসছিল।
অতঃপর সকল অপেক্ষার ইতি ঘটে আরিহার জ্ঞান ফিরার খবরে। সকলেই হন্তদন্ত হয়ে যায় আরিহার রুমে৷ আরিহা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। মুখটা একদম মলিন হয়ে আছে। সকলের উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখ খুলে তাকায়৷ চোখ খুলে তাকাতেই ইহানকে সর্বপ্রথম দেখে সে। ইহান নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে ওকে জড়িয়ে ধরে আর কেঁদে দেয়। অভিযোগের ঝুড়ি খুলে বসে সে। আরিহা তখন নিরব শ্রোতার মত সব শুনে। অতঃপর অক্সিজেন মাক্স খুলে আলতো সুরে বলে,
— আমাদের বেবি ইহান?
কথাটা কানে আসতেই ইহান দ্রুত নীরাকে বেবিটাকে ওর কাছে আনতে বলে। নীরা ধীর পায়ে এগিয়ে আসে ওর দিকে। তারপর ওর পাশেই ওর বাচ্চাটিকে শুয়ে দেয়। আরিহা কিছুক্ষণ তার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে ওর কপালে আলতো করে চুমু দেয়। সে মুচকি হেসে বলে,
— ইহান ওর নাম কি ঠিক করেছ?
ইহান মাথায় দুলায়। যার অর্থ না। আরিহা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,
— আজ থেকে ওর নাম আহানা।
সকলেই মাথা দুলায়। অতঃপর আরিহা সকলকে একটু বাইরে যেতে বলে সে আহানাকে ফিড করবে বলে। সকলেই বেড়িয়ে যায় কিন্তু ইহান রয়ে যায়। অতঃপর আহানাকে ফিড করার পর সে সকলকে আসতে বলে। আরিহা জিসানকে ইশারা করে সামনে আসতে বলে। জিসান সামনে আসতেই ধীর কন্ঠে বলে উঠে,
— যখন সময় পাবি তখন তুই আমার রুমে গিয়ে আলমারির দ্বিতীয় পার্টটি মধ্যে থাকা ড্রয়ারটা খুলে দেখবি। মনে থাকবে তো?
জিসান অবাক কিছু প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই আরিহা নীরা আর পুষ্পিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
— আমার ছোট আহানার ঠিক মত খেয়াল রাখবি কিন্তু তোরা। ওর যাতে কোন কষ্ট না হয়। যদি ওর বিন্দু মাত্র কষ্ট হয় তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
আরিহার কথা শুনে নীরা আর পুষ্পিতা হতভম্ব হয়ে যায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন আরিহা ইহানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
— ইহান আমি আমার মেয়েকে প্রথম স্পর্শ করতে পেরেছি, ওকে আগলে রাখতে পেরেছি। আমি পেরেছি আমার ইচ্ছাটা পূরণ করতে। এখন তোমার কাছে একটাই অনুরোধ তুমি ওর চোখে আমাকে মিসেস হকের মত মা বানিও না। আমি ওর বেস্ট মা হতে চাই। পূরণ করবে কি আমার ইচ্ছেটা?
ইহান অবাক হয়ে বলে,
— এইসব কি বলছো তুমি? আর কথাই বা এখন কেন বলছো?
আরিহা সেই রহস্যময় হাসি হেসে বলে,
— একটা ওয়াদা করবে? যখনই আমার মেয়ে কাঁদবে বা আমাকে চাইবে তখন ওকে আমার কবরের কাছে নিয়ে আসবে। আমার ব্যাপারে ওকে সব বলবে। কিছু লুকাবে না। ওর চোখে কখনো পানি পড়তে দিবে না তুমি। এখন যেমন আছো সবসময় ওমনই থাকবে।
ইহান এইবার কিছুটা ঘাবড়িয়ে বলে,
— কি বলছো এইসব? পাগল হয়ে গিয়েছ,?
আরিহা সেই হাসি বজিয়ে রেখে বলে,
— একটা কথা বলি হয় নি তোমায়। এইটাই যে, অনেক ভালবাসি তোমায়।
সকলের কিছু বুঝার আগেই আরিহার শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে যায়। জিসান দ্রুত সব চেক করতে থাকে। পালস রেট কমে আসতে থাকে। জিসান দ্রুত ডাক্তারদের ডাক দেয়। তারা এসে সকলকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর চেকাপ করতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর তারা বাইরে এসে জানায় যে আরিহা কোমায় চলে গিয়েছে। তার জ্ঞান কবে ফিরবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। হয়তো কোন একসময় ফিরবে অথবা কখনোই ফিরবে না।
সব শুনে ইহান মাটিতে বসে পড়ে। একদম স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর পুরো দুনিয়া যেন থমকে যায়। একে একে আরিহার সকল কথা বুঝতে পারে। ও হয়তো ভেবেছিল ওর মৃত্যু হয়ে যাবে। কিন্তু ওর মৃত্যু হয় নি। কিন্তু এর চেয়ে কমও কিছু হয়নি। পার্থক্য শুধু এইটাই মৃত্যু হলে ওর হার্টবিট অফ হয়ে যেত, সারাজীবনের জন্য ওকে হারিয়ে ফেলতো সবাই।
সেইদিনের পর আরিহাকে লাইফ সাপোর্ট এর মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়৷ ইহান তো প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয় নি। নীরা আর পুষ্পিতা মিলে আহানার খেয়াল রাখে। ঘটনার দুইদিন পর জিসানের আরিহার বলা কথাগুলো মনে পড়ে। সে দ্রুত আরিহার রুমে যায়। অতঃপর আলমারির ড্রয়ার খুলে সে দুটো খাম পায়, সাথে কিছু কাগজ পত্র। একটা খানের উপর ওর,নীরা, পুষ্পিতা আর ইহানের নাম লিখা। আরেকটা খামের উপর কিছু লিখা নেই। সে দ্রুত সেই খাম আর কাগজ পত্র নিয়ে বেড়িয়ে আসে। বাইরে ড্রয়িং এ গিয়ে সকলকে সেখানে আনে। অতঃপর খামটি দেখায়। ইহান তখনও নির্বাক। তাই জিসানই খামটা খুলে। সেখানে একটা মেমোরি কার্ড পায়। দ্রুত জিসান সেটা কম্পিউটারে ইন করে। মেমোরি খুলে ফাইম চেক করার সময় একটা ভিডিও দেখতে পায়। সে ভিডিও ওপেন করতেই আরিহার হাসি-খুশি চেহেরাটি ভেসে আসে। আরিহা বলতে থাকে,
— তোমরা কেমন আছো সবাই? আশা করি ভালো। না থাকলেও তোমাদের ভালো থাকতে হবে আর যদি আমার সন্তান হয় তাহলে ওকেও ভালো রাখতে হবে। আগলে রাখতে হবে। জানি না এই ভিডিওটি তোমরা দেখতে পাবে কিনা? আসলে এইটা বেকাপ হিসাবে রাখছি। যদি এই যাত্রায় বেঁচে যাই তাহলে ভিডিওটা তোমরা পাবে না সাথে আমি যে কথাগুলো বলতে চাই তা আর শুনা হবে না কিন্তু যদি না বাঁচি তাহলে হয়তো ভিডিওটা তোমরা পাবে সাথে আমার বলা কথা গুলিও। কিন্তু কেন জানি অনেক স্ট্রোং ফিলিং হচ্ছে আমি বেশি দিন তোমাদের মাঝে থাকবো না। আর তোমরা সবাই জানো আমার গাট ফিলিংস কতটা প্রখর। তাই এতটুকু সিউর হতে পারছি যে আমার বেঁচে থাকার চান্স একদমই নেই। অথচ এইটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ একবার ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম তাই এইবার আর ভাগ্যের উপর ভরসা করা বোকামি। তাই এখন বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছি।
কিন্তু নিজের সন্তানকে জীবিত রাখার আশা আমি এখনো ছাড়িনি। আর না কখনো ছাড়বো। ও বাঁচবে। ওকে বাঁচতেই হবে। আর ওকে ভালো রাখার দায়িত্ব তোমাদের সকলের।
এতটুকু বলে দম নেয় আরিহা। চোখ দুটো কেমন বিষাদপূর্ণ। সকলের চোখ ল্যাপটপের স্ক্রিনের দিকে স্থির। হাল্কা ছলছল করছে তাদের চোখ। হুট করে আরিহা জিসানের নাম নিতেই জিসানের বুক ধক করে উঠে। সে আরও গভীর নয়নে স্ক্রিনের দিকে তাকায়। আরিহা বলতে শুরু করে,
— জিসান! শুনছিস তুই? আমার সন্তান যদি এই পৃথিবীতে আসে তাহলে তাকে কিন্তু তুই ভালো মত দেখে রাখবি বুঝলি। ওর বেস্ট মামু হবি তুই। কথা যে ওর বেস্ট মামু হবি তুই? ওকে একদম তোর মত কমিডিয়ান বানাবি৷ আমার মত এরোগেন্ট না। আর হ্যাঁ, সাথে নীরাকে হ্যাপি রাখবি আর ইহানেরও খেয়াল রাখবি। কথা দে রাখবি। আমি জানি তুই রাখবি। জানিস তোকে একটা কথা কখনো বলা হয় নি, ইউ আর বেস্ট ব্রাদার এন্ড বাডি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। ভালো থাকিস।
কথাটা জিসানের কানে আসতেই জিসান কেঁদে দেয়। নিজেকে সামলাতে পারছে না। বার বার মন আর্তনাদ করে উঠছে। এমন সময় আরিহা পুষ্পিতা আর নীরাকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে,
— পুষ্পি! নীরু! শুনছিস তোরা? জানিস তোদের অনেক কিছু বলার আছে। সেই কথাগুলো কখনো মুখে বা আকার ইঙ্গিতে বুঝাই নি তাই হয়তো বুঝতে পারিস নি তোরা। তাই আজ স্পষ্ট ভাষায় বলছি। বন্ধুত্বের আসল মানে আমি তোদের কাছ থেকেই শিখেছি। বন্ধুত্বের গভীরতা যে এত গভীর হয় তা আমার ভাবনার উর্ধ্বে ছিল। তোরা কখনোই আমাকে একা হতে দেস নি। সবসময় আমাকে বোন মেনে এসেছিস।এতটা ভালবাসা পেয়ে এসেছি তোদের কাছ থেকে তা আর কি বলবো। আসলেই তোরা এখন আমার জীবনের একটি অংশ। আমার বোন তোরা। এখন আমি থাকবো কিনা জানি না কিন্তু আমার সন্তান যদি বেঁচে থাকে তোরা কিন্তু ওকে দেখে রাখবি। আগলে রাখবি। কথা দে, নিজের সন্তানের মত বড় করবি ওকে। তোরা শুধুমাত্র ওর খালামনি হবি না বরং ওর মাম্মাম হবি। আমি তো মা থাকবোই কিন্তু সাথে তোরা ওর মাম্মাম হবি। শুন আমি না নিজের বাচ্চার জন্য কিছু ড্রেস ডিজাইন করে রেখেছি। এই ভিডিও এর সাথেই পাবি সেগুলো তোরা। আমি জানি না ছেলে হবে নাকি মেয়ে তাই দুইটা করে বানিয়েছি সব। আমার সন্তানকে ওর একেক জন্ম দিনে বয়স অনুযায়ী ড্রেসগুলো পড়াইস প্লিজ। আর যখন ওদের ড্রেস গুলো দিবি তখন বলিস যে এইটা ওর মা দিয়েছে ওকে। আর শুন ডিজাইন পেপারের সাথে আমার ফ্যাশন হাউজের একটা বন্ড পেপারও আছে। তাতে লিখা আছে আমার কিছু হলে ফ্যাশন হাউজের ৩০% ওনারশীপ তোরা পাবি। জানি এর জন্য হয়তো কষ্ট পাবি এই ভেবে আমি মহানতা দেখাচ্ছি বাট আই সোয়ের আমি তোদের আমার জীবনের অংশ ভাবি বলেই এমনটা করেছি। তাই মাইন্ড করিস না। আর হ্যাঁ শেষে একটা কথা বলতে চাই, আই লাভ বোত অফ ইউ। ভালো থাকিস তোরা।
সব শুনে নীরা আর পুষ্পিতা কেঁদে দেয়। আরিহার প্রত্যেকটা কথা আজ ওদের মনে প্রচন্ড আঘাত করছে। হয়তো ও আজ কাছে নেই বলে। নীরার কোলে আহানা ছিল। আহানাও নীরার কান্না দেখে কেঁদে দেয়। নীরা আহানাকে কোলে নিয়ে ওকে চুপ করাতে থাকে। পুষ্পিতা তা দেখে দ্রুত রুমে চলে যায় আহানার জন্য ফিটার বানাতে। ইহান এখনো নির্বাক। চোখ দুটো স্থির ল্যাপটপের স্ক্রিনে। সে আরিহাকে সুক্ষ্ম নজরে দেখছে। আরিহা এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
— ইহান! আছো কি? ভালো আছো? শুনো ভালো না থাকলেও কিন্তু তোমায় ভালো থাকতে হবে। আমাদের সন্তান যদি বাঁচে তাহলে কিন্তু তোমাকেই ওকে দেখতে হবে। ওকে আগলে রাখতে হবে বুঝলে। ও যাতে বিন্দু মাত্র কষ্ট না পায়। ভুলেও কিন্তু তুমি মি হকের মত বাবা হবে না। আমি থাকি আর না থাকি সেটা মূল বিষয় নয়। আমাদের সন্তান থাকে কি না সেটা মূল বিষয়। তাই দায়িত্ব কিন্তু তোমায় ঠিক মত নিতে হবে বুঝলে।
আজ অনেক কিছু বলার আছে তোমায়। কিছু অজানা তথ্যও জানানোর আছে তোমায়। যা তোমার জানার পূর্ণ অধিকার আছে। তাই আজ আমি বলছি। আসলে বলছি বললে ভুল হবে উত্তর দিচ্ছি।
তোমার মনে একটা প্রশ্ন সর্বক্ষণ ছিল যে,” আমি কেন তোমায় বিয়ে করলাম?” তাইতো! আসলে আমি নিজেও জানি না আমি কেন বিয়ে করেছিলাম তোমায়। শুধু এতটুকু জানি তোমার মধ্যে আমি সেই শান্তি খুঁজে পেয়েছিলাম যা আমি এতটা বছর ধরে খুঁজে বেরাচ্ছিলাম। তুমি যখন আমার কাছে থাকতে তখন আমার এতটা নিরাপদ আর শান্তি অনুভব হতো তা বলে বুঝাতে পারবো না। সেইদিন যখন আমি তোমার বুকের উপর পড়ি তখন যেন দুনিয়ার সকল শান্তি খুঁজে পাই। নিজের অশান্ত মন চোখের পলকে শান্ত হয়ে যায়। মনে হচ্ছিল তোমাকে এইভাবে সারাজীবন আঁকড়ে ধরে রাখতে।
কিন্তু তোমাকে নিজের সাথে জড়াতে চাই নি বলে দূরে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো আর শুনলে না। আমার পিছে পড়েই রইলে। না চাওয়া সত্ত্বেও আমার জীবনে ঢুকে পড়লে। তখন জীদ লাগছিল খুব নিজের উপর। এই ভেবে কিভাবে তোমাকে আমার জীবনে হস্তক্ষেপ করতে দিলাম আমি। কিন্তু তাও নিজেকে সংযত রেখেছিলাম। অতঃপর সেই শো এর ঘটনা। তখন আমার আত্নসম্মানে লেগেছিল। যার ফলে রাগ, জীদ আর সামান্য পরিমাণ ঘৃণাও জন্মেছিল এই ভেবে কেন এলে তুমি আমার জীবনে। তাই কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম তোমায়। তাই তো স্বার্থপরের মত জোর করে বিয়ে করে ফেলি তোমায়। আর নিজের কলঙ্কিত জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলি। অতঃপর নিজের ভুল বুঝতে পারলেও তোকে দূরে ঠেলে দিতে পারি নি। ভেবেছিলাম তোমায় কষ্ট দিব তোমায় কিন্তু পারি নি। যখনই তোমার বুকে মাথা রেখে শুতাম তখন সব ভুলে যেতাম। ভুলে যেতাম আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই। কিন্তু তখনও বুঝি নি তোমার প্রতি আমার কোন টান আছে।
তোমার আরেকটা প্রশ্ন ছিল যে, “তোমাকে যখন সবাই ধর্ষকের অপবাদ দেয় তখন আমি সব জেনেও কেন চুপ ছিলাম? কেন সেই থাপ্পড়টা মেরেছিলাম? কেন সকলকে সত্যিটা জানায় নি?”
সত্যি বলতে আমি যখন তোমায় থাপ্পড়টা মেরেছিলাম তখন আমি নিজেও জানতাম না যে তুমি নির্দোষ। আমি আসলেই তোমায় ধর্ষক ভেবে থাপ্পড়টা মেরেছিলাম। যখন আমি হীনাকে সেই অবস্থায় দেখি আবার তোমাকে উদাম গায়ে তখন আমার সাথে হওয়ার নির্মম অত্যাচারটা চোখের সামনে ভেসে উঠে আর আমি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। হুস ছিল না তাই আর রাগে জীদের বসে থাপ্পড় মারি আর পুলিশ ডাকি। কিন্তু যখন হুস আসে তখন শান্ত হয়ে যাই আর তোমাদের দুইজনকে সুক্ষ্ম ভাবে পর্যবেক্ষণ করি। আমার সাথে যা হয়েছিল তার সাথে মিলাতে থাকি। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার একটা জিনিসও মিলে নেই। তখন বুঝতে দেরি নেই যে তুমি ধর্ষক নও। আস্তে আস্তে আসল কাহিনিটা বুঝি। এর পর পুলিশ আসলে আমি সত্যিটা জানাই। আ’ম সরি ইহান! আমার জন্যই হয়তো তুমি সেই পরিমাণ অপদস্ত হয়েছিলে। আমি তোমায় জানতে দিতে চাই নি যে আমি আসলে প্রথমে সত্যিটা বুঝিনি তাই তখন মিথ্যে বলেছিলাম। সরি!
তোমার সাথে হয়তো আমি সবচেয়ে বেশি অন্যায় করেছি। প্রথমত তোমাকে নিজের জীবনের সাথে জড়িয়ে, বিয়ে করেছি। তোমার মত ছেলের গায়ে আমার মত কলঙ্কিত মেয়েকে চাপিয়ে দিয়েছি। কষ্টে ভরিয়ে দিয়েছি তোমার জীবন। এখন যখন একটু সুখের আভা দেখতে পেয়েছিলে তখন হয়তো আবারও তোমায় কষ্ট দিতে আমি চিরদিনের জন্য চলে যাব। আমি তো শুধু তোমায় কষ্টই দিয়ে গেলাম তাই না? আর তুমি আমাকে ভালবেসে গেলে, আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখালে। আর আমি তোমার অন্ধকারে তলিয়ে দিলাম। পারলে মাফ করে দিও।
জানো ইহান আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে যদি আমি না থাকি তাহলে আমি আর তোমায় ছুঁতে পারবো না। তোমার বুকে মাথা রাখতে পারবো না৷ নিজের সন্তানকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারবো না। মাতৃত্বের স্বাদ নিতে পারবো না। পারবো না একটা হ্যাপি লাইফ লিড করতে। জানো আমার না খুব ইচ্ছে নিজের সন্তানকে একটু বুকে জড়িয়ে রাখবো, ওকে আগলে নিব, ওকে আদর করবো, ওকে একটু ছুঁয়ে দিব। জানি না ইচ্ছাটা পূরণ হবে কিনা। সব যে আল্লাহ এর হাতে।
একটা কথা জানো কি ইহান? তোমায় অনেক অনেক বেশি ভালবাসি। হ্যাঁ এই আরিহা মাহমুদ বলছে সে ইহান মাহমুদকে অনেক বেশি ভালবাসে। আমার অন্তরালে যে সে বাস করে। আমার অন্তরালে তুমি হয়ে। শুনো! আরেকটা খামে কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য আমি কিছু ভিডিও বানিয়ে রেখেছি। ও বড় হলে কিন্তু তুমি ওকে সেইগুলা দেখাবে। আমাকে ভালবাসতে শিখাবে কেমন? আর ওকে বলবে যে আমি ওকে অনেক অনেক ভালবাসি কেন না সে আরিহা মাহমুদের সন্তান। বুঝলে?
একটা কথা জানো কি? ” কিছু কিছু ভালবাসা পূর্ণতা পেয়েও অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। আর কিছু অসম্পূর্ণতা পেয়েও পূর্ণতা পায়।”
আমাদের ভালবাসাও ঠিক এমনই। যা হয়তো পূর্ণতা পেয়ে অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে আবার হয়তো অসম্পূর্ণ রয়েই পূর্ণতা পাবে। আমাদের ভালবাসা হবে “অসম্পূর্ণতায় পূর্ণতা”। ভালো থেক!
অতঃপর ভিডিওটা স্টপ হয়ে যায়। আর ইহান কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার বুকের ভিতর অসহ্যনীয় ব্যথা হতে থাকে। সে কান্না করতে করতে আরিহার নাম নিতে থাকে। অতঃপর আহানার কান্না শুনে সে স্তব্ধ হয়ে যায়। মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে আহানা কান্না করছে। হুট করেই টনক নাড়ে যে আহানাকে তার প্রয়োজন। খুব বেশি প্রয়োজন। সে দৌঁড়ে গিয়ে আহানাকে কোলে নেয় আর নিজের সাথে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়। ইহান কোলে নিতেই সাথে সাথে আহানা চুপ হয়ে যায়। ইহান কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে আগলে নেয়।
সেই থেকে ইহানই আহানাকে বড় করতে শুরু করে। নীরা, পুষ্পিতা ও জিসানও বেশ আগলে রাখে আহানাকে। আরিহা ঠিক যেভাবে বলে সব সেভাবেই করা তারা। যখনই আহানা অনেক কান্না করতো বা কারো কাছে থাকতে চাইতো এমন কি ইহানের কাছেও না। তখন ইহান ওকে আরিহার কাছে নিয়ে আসতো। বেডে পড়ে থাকা নিস্তেজ আরিহার পাশে শুয়ে দিত আর সাথে সাথে আহানা চুপ হয়ে যেত আর খিলখিলিয়ে হেসে উঠতো। মায়ের ছোঁয়া হয়তো বুঝতে পারতো তাই। আহানা যত বড় হতে থাকে তত ওর আরিহার প্রতি টান বাড়তে থাকে। ইহানও ওকে আরিহার ব্যাপারে সব বলতো। এমনকি দেখা করাতেও নিয়ে যেত। আরিহার সাথে আহানা যেইদিনই দেখা করা সেইদিনই গল্পের ঝুলি নিয়ে বসে পড়ে। আহানা জানে তার মা ঘুমিয়ে আছে৷ যা হয়তো ভাঙ্গবে না। কিন্তু তার বিশ্বাস এইভাবে কথা বলতে থাকলে তার মা একদিন ঠিকই উঠবে আর ওর সাথে কথা বলবে। আরিহাকে আহানা অনেক ভালবাসে। বেশ খানিকটা স্বভাবও পেয়েছে অবিকল আরিহার মত। তখন মনে হয় সে যেন আরিহারই প্রতিবিম্ব। ইহান যেহেতু ফ্যাশন হাউজের ৪০% এর মালিক সেহেতু ফ্যাশন হাউজ ওই সামলাতো। পাশাপাশি সোহেলকে নিয়ে নিজের একটা বিজনেস শুরু করে। এর মধ্যেও সে আহানাকে বেশ সময় দিত। ইহান প্রতিদিন রাতে আহানাকে ঘুম পেরিয়ে এসে পড়ে আরিহার কাছে। ওর হাতটি ধরে ওর পাশে বসে থাকে। দুই একসময় নিরবে গড়িয়ে পড়ে জল।
এরই মাঝে জিসান আর নীরার ও পুষ্পিতা আর তীব্রের বিয়ে হয়ে যায়। এর কয়েকবছর পর এরিনা আর সোহেলেরও। দুইজন দুইজনকে ভালবাসে কথাটা শুনে ইহান আর আপত্তি করে নি। সবাই সবার জীবনে এগিয়ে যায় শুধু থেমে যায় আরিহার জীবন।
_________________________________________
কথা গুলো বলতে বলতে ইহানের চোখ দিয়ে দুই ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে। আহানা তা দেখে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে ওর গাল বেয়ে পড়া নোনা পানিগুলো মুছে দেয়। বাইরে উপস্থিত সকলের চোখেই পানি। সকলের মধ্যেই এক চাপা আর্তনাদ কাজ করছে। ইহান কোন মতে নিজেকে সামলিয়ে বলে।
— আজও আরিহা লাইফ সাপোর্টার এর মাধ্যমে বেঁচে আছে। আর আহানা আছে আমার সাথে। ব্যাস এইভাবেই চলছে জীবন। সকলেই অপেক্ষার প্রহর গুনছি কবে আরিহার জ্ঞান ফিরবে আর ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।
তো আজ এইখানেই শেষ করছি আর ইতি টানছি আমাদের শো “অন্তরালে তুমি” এর। আশা করি সবাই ভালো থাকবে, সুস্থ থাকে। টিউন উইথ এবিসি রেডিও ৮৯. ০২ এফএম এন্ড আল্লাহ হাফেজ।
এই বলে ইহান মাইক অফ করে আহানাকে কোলে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে
_________________________________________
হসপিটালের একটি কেবিনে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। বেডের উপর শুয়ে আছে একটি নিস্তেজ দেহ। মুখ একদম মলিন। এক হাতে তার ক্যানেল বসানো। মাথার উপর স্যালাইন ঝুলানো। মুখে অক্সিজেন মাক্স। বা পাশে বড় আকারের কিছু যন্ত্রপাতি। আরিহার পাশে আহানা বসে আছে। আশার পরপরই সে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে নিজের কথা ঝুলি শেষ করতে। বেডের এক কিনারে ইহান বসে আছে আর এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আরিহার মুখপানে। নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে সে। আজ প্রায় ৬ বছর পেরিয়ে গেল আরিহা এইভাবেই নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে। কোন হেলদোল নেই তার। সে তো একদম সর্বশান্ত। আদো কি তার কোন দিন জ্ঞান ফিরবে নাকি এইভাবেই অনন্তকাল ঘুমের দেশে তলিয়ে থাকবে সে কাউরো জানা নেই।
ইহান এক দৃষ্টিতে আরিহার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
— ঠিকই বলেছে তুমি। তুমি হচ্ছো সেই সাদা রঙ যার নিজের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও সকলের মাঝে ঠিকই তার অস্তিত্ব আছে। আজ বুঝতে পারছি তোমার সকল বলা কথাগুলির অর্থ। তুমি সব জানতে কিন্তু তাও কাউকে কিছু বলো নি। তুমি সব বুঝতে তাও কাউকে বুঝতে দাও নি। কেন আরিহা? কেন?
জানো এতকিছুর পরও তোমায় ঘৃণা করতে পারি না। এর কারণ জানো কেন? আমার অন্তরালে তুমি আছো বলে। আর যত যাই হোক নিজের অন্তরালকে ঘৃণা করা যায় না। দেখ না আজ তুমি আছো, আমি আছি, আমাদের সন্তান আছে। কিন্তু তাও সব থেকেও যেন সব নেই। সব কিছু পূর্ণতা পেয়ে অপূর্ণ। তুমি ঠিকই বলেছিলে কিছু ভালবাসা অসম্পূর্ণতায় আসল পূর্ণতা পায়। যেমন তোমার আর আমার। কিন্তু দেখ তুমি একদিন ঠিকই জেগে উঠবে আর তখনই আমাদের ভালবাসা পূর্ণতা পাবে। অসম্পূর্ণ শব্দটা মুছে যাবে আমার মাঝ থেকে। আর আমি সেইদিনটির এই অপেক্ষা করছি।
অতঃপর ইহান আহানাকে নিয়ে সে বেড়িয়ে যায়। এইভাবে আর কত দিন চলবে কাউরো জানা নেই। হয়তো তাদের ভালবাসা একদিন পূর্ণতা পাবে। আর সেইদিন সকলের জীবন থেকে মুছে যাবে অসম্পূর্ণ শব্দটি। কিন্তু সেই দিনটি আসবে কবে? সত্যিই কিছু কিছু ভালবাসা অসম্পূর্ণতায় পূর্ণতা পায়। আর এতেই তাদের ভালবাসার আসল সৌন্দর্য বেড়িয়ে আসে। যেমনটা আরিহা আর ইহানের ভালবাসার মধ্য দিয়ে বেড়িয়ে এসেছে। থাকুক না কিছু ভালবাসা এমন। সব কিছুর যে পূর্ণতা পেতে নেই। কিছু কিছু ভালবাসা অসম্পূর্ণই ভালো।
?সমাপ্ত?
জানি অনেক এর হয়তো এন্ডিংটা ভালো লাগবে না। কিন্তু আপনারাই একবার ভেবে দেখুন গল্পটা যদি আমি হ্যাপি এন্ডিং দিতাম তাহলে কি আদো মানাতো? এর আসল সৌন্দর্যটা কি বিনষ্ট হয়ে হয়ে যেত না? সকল গল্পে হ্যাপি এন্ডিং মানায় না। এই গল্পের বেলায়ও তাই। কিছু জিনিস অসম্পূর্ণতায় পূর্ণতা পায়। আর আমার মতে গল্পটির এন্ডিংটা এর চেয়ে ভালো হতে পারতো না। আশা করি বুঝবেন।
আর গল্পটি কেমন লেগেছে প্লিজ জানাবেন। যদি কেউ হার্ট হয়ে থাকেন তাহলে সরি। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না।❤️