অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১০

0
4721

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১০
#তাসনিম_ জাহান_রিয়া

উনার কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নেই।

লাগবে না আপনার এসব আলগা পিরিতি। আমাকে দেখে যখন আপনার মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমি আর আপনার সামনে আসবো না।

উনি আমাকে ধরতে আসলেই আমি উনাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দ্রুত পায়ে গাড়ি থেকে নেমে আসি।

রিয়া আমার কথাটা শুন। এই রিয়া

রিয়ান ভাইয়ের কথাটা কর্ণপাত না করে এক প্রকার দৌড়ে বাসার ভিতর চলে আসি।

কারো সাথে কোনো কথা না বলে রুমে চলে যাই। দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে পড়ি। হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকি। পাশেই একটা বেল্ট দেখে ইচ্ছে মতো হাত কাটতে থাকি। ছোট বেলা থেকেই এটা আমার অভ্যাস কারো ওপর রাগ হলে তার ওপর ঝাড়তে না পারলে রুমে জিনিস ভেঙে বা নিজেকে নিজে আঘাত করে রাগ কমানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজকে রাগটা কিছুতেই কমছে না। এনের কথায় যতটা রাগ লেগেছিল তার থেকে বেশি রিয়ান ভাইয়ের কথায় রাগ লেগেছিল।

আচ্ছা সত্যিই কি এটা রাগ না অভিমান। আমার এমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে কেনো? ভাইয়াও তো আমাকে কত বলে ‘তুই জানোস না আমি তোকে দুই চোখে দেখতে পারি না তাহলে আমার সামনে আসিস কেনো? কই তখন তো আমার রাগ বা অভিমান কোনটাই হয় না। আমি ভাইয়ার কথাটা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলি, দুই চোখে দেখতে না পারলে এক চোখে দেখো। রিয়ান ভাই ও তো আমার কাজিনই হই। তাহলে রিয়ান ভাইকে কী আমি ভালোবাসি? (বিড়বিড় করে)

না উনি শুধু আমার ভাই আমি উনাকে ভালোবাসি না। (চিৎকার করে)

হাত থেকে টুপটুপ করে রক্ত পড়ছে। আমি উঠে দাঁড়াই।

কারো জন্য আমি কষ্ট পাবো না। আর কোনো দিন আপনার সামনেও যাবো না রিয়ান ভাই।(মনে মনে)

ড্রেসটা চেইন্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসি। নিজেই নিজের হাতে ব্যান্ডেন্জ করে নিলাম। আমার গিটারটা নিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম। আমার মন খারাপের সাথী এই গিটার। বেলকনিতে গিয়ে দোলনায় বসে পড়লাম। চোখ বন্ধ করে গাইতে লাগলাম।

আমার ভিনদেশী তারা..
এক রাতেরই আকাশে..
তুমি বাজালে একতারা..
আমার চিলেকোঠার পাশে..
ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে..
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে..
মুখ লুকিয়ে কার বুকে..
তোমার গল্প বলো কাকে..
আমার রাত জাগা তারা..
তোমার অন্য পাড়ায় পারি..
আমার ভয় পাওয়া চেহেরা..
আমি আলোতে আধারি..
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি..
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি..
আমার আকাশ দেখা ঘুড়ি..
কিছু মিথ্যে বাহাদুরি..

পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে গান বন্ধ করে পাশে তাকায়। ভাইয়া আমার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। আমি ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাই।

তোর কি মন খারাপ?

না।

তাহলে তোর গানের সুর এতো বিষাদ কেনো?

এমনি ভালো লাগছিলো না।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে, প্রেম গঠিত কোনো সমস্যা।

মানে?

ভাইয়া আমার মাথায় চাটি মেরে বলে, ছেকা খায়ছস।

আমি কতক্ষণ ভাইয়ার দিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকি। অতপর ভাইয়ার পিঠে ধুমধাম করে কিল দিতে থাকি। হঠাৎ আমি ফুফিয়ে কেঁদে ওঠি। হঠাৎ এভাবে কেঁদে দেওয়ায় ভাইয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। বিচলিত গলায় বলে,

বনু আমাকে মারতে গিয়ে তুই হাতে ব্যথা পেয়েছি। বল আমাকে কোথায় ব্যথা পেয়েছিস?

ভাইয়া আমার হাত ওল্টে পাল্টে চেক করছে। আমি মাথা না করি আমি হাতে ব্যথা পায়নি।

তাহলে তোকে কেউ কিছু বলছে? একবার নাম বল তার মেরে হাড় গুড় ভেঙে দিব।

আমি এক ফোটা চোখের পানি যেনো ভাইয়ার বুকে কাঁটার মতো বিদে। ভাইয়া আমার কান্না কখনই সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ার জন্য কেউ কোনো দিন আমাকে বকা দিতে পারে নি। আমি হাজার অন্যায় করলেও ভাইয়া আমার কোনো দোষ খুঁজে পায় না। ভাইয়ার জন্য যদি কোনো দিন আমি একটু আঘাত পেয়েছি তাহলে ভাইয়া নিজেকে শতগুন বেশি আঘাত করছে। হয়তো এটাই ভাইয়ের ভালোবাসা।

আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেই। ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কান্না থামানোর জন্য বলছে।

ভাইয়া আপুকে অনেক মিস করছি।

রোজকে ফোন দিব কথা বলবি।

না আমি কাঁদছি শুনলে আপু বিচলিত হয়ে যাবে। পরে দেখা যাবে রাতেই জিজুকে নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এসেছে।

মনে আছে তোর তোকে আম্মু বকা দিচ্ছিলো আর তুই কাঁদছিলি বলে রোজ পরীক্ষা না দিয়ে চলে এসেছিল।

হুম। ভাইয়া আপুর মতো কী আমাকেও বিয়ে দিয়ে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিবে?

তুই জানিস না আমি তোকে ছাড়া এক মিনিটও থাকতে পারি না। সেখানে তোকে বিয়ে দিয়ে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দিবো। তোর ঘুমন্ত মুখ না দেখলে আমার ঘুম হয় না। পরে দেখা যাবে দিনের পর দিন নির্ঘুম রাত কাঠিয়ে আমি পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরছি।

মিম আপু তো অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখে সংসার করবে।

আমি পাগল হয়ে গেলে মিমকে ও পাগলি বানিয়ে আমার সাথে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো।

আমাকে বিয়ে না দিলে তো সারাজীবন তোমার গাড়ে বসে খাবো।

তাও তোকে আমি বিয়ে দিবো না। দরকার পড়লে তোকে সো পিচের মতো ঘরে সাজিয়ে রাখবো।

ভাইয়ার কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে দেই।

তোকে এমন হাসি খুশি মানায়।

ভাইয়া চলো না কয়েকদিনের জন্য খালামনির বাসা থেকে ঘুরে আসি।

নিহান তো কালকে দেশে আসছে।

সত্যি?

হুম।

কতদিন পরে পরে নিহু ভাইয়াকে দেখবো।

নিহান তোর সাথে দেখা হবে এটা ভেবেই অনেক এক্সাইটেট। এই দুই বছরে তো তুই একবারও নিহানের সাথে কথা বললি না।

চলবে…