#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৭
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
রিয়ান ভাইয়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হলো। বিকেলে বাসায় চলে গেলাম। কেটে গেলো ৪ দিন। এই চারদিন সারাক্ষণ রিয়ান ভাই আমার সাথে সাথে ছিল।
আব্বু, আম্মু, ভাইয়া, আপু, মনি, আংকেল, খালামনি, পপসি, মেহেরিন আপু, নিহান ভাইয়া, আদ্রিয়ান ভাইয়া, পিয়েল ভাইয়া, তিতাস ভাইয়া, জেনি আপু, জেরিন আপু, সাহেল ভাইয়া, আহির ভাইয়া, প্রমি, মহুয়া আপু, নিলয় ভাইয়া ড্রয়িমরুমে সবাই গোল হয়ে বসেছে। যে যেখানে পেরেছে সে সেখানে বসেছে সোফায়, সোফারে ওপরে, টেবিলের ওপরে, চেয়ার টেনে এভাবে বসার কারণ রিয়ান ভাই। সবাই জানতে চায় এক সপ্তাহ রিয়ান ভাই কোথায় ছিল। আমি সোফার ওপরে পা তুলে আম্মুর কাধে মাথা হেলিয়ে বসে আছি। আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে এখনো শরীর অনেকটাই দুর্বল। আমার পাশেই সোফায় আয়েশ করে বসে আছেন রিয়ান ভাই। সবাই উনার কথা শোনার জন্য আকুল হয়ে আছে এতে জেনো উনার কোনো হেলদুলি নেই।
রিয়ান এসব ড্রামা বাদ দিয়ে বল তুই কোথায় ছিলি? (বিরক্তি সুরে বলল তিতাস ভাইয়া)
উনি হাত-পা ঝাড়া দিয়ে কেশে গলা পরিষ্কার করে বলা শুরু করলেন,,
আমি আর রিয়া নদীর পাড়ে পানির ওপর দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন মনে হলো আমার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। আমি পিছনে ঘুরার আগে কেউ আমার মাথায় ভারি কিছু দিয়ে অনেক জুড়ে আঘাত করে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। অঙ্গান হয়ে যাওয়ার আগে আবছা দেখতে পাই নিয়ন রিয়ার মুখে রুমাল চেপে ধরেছে। যখন ঙ্গান ফিরে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করি। ডক্টর আমাকে চেকআপ করে চলে যাওয়ার পরে একজন ভদ্রলোক কেবিনে প্রবেশ করে। উনার কথামতো উনি আমাকে রাস্তার পাশে পান। ওখান থেকে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায়। ৬ দিন কোমায় ছিলাম। উনার কাছ থেকে জানতে পারি আমি সিলেট আছি। ঐদিনই সিলেট থেকে ঢাকার বাসে করে ঢাকায় চলে আসি।
প্রমি (আমার ছোট চাচার মেয়ে) আমাকে একটু পানি খাওয়া আমার গলা শুকিয়ে গেছে।
প্রমি রিয়ান ভাইকে পানি খাওয়ায়।
আম্মু আমার এখানে বসে থাকতে অসহ্য লাগছে। আমি ছাদে যাচ্ছি।
আচ্ছা যা কিন্তু বেশিক্ষণ থাকিস না।
আচ্ছা।
আম্মুর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে ছাদে উঠতে লাগলাম। ছাদে উঠে রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিকেল হওয়ায় সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে। কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখি রিয়ান ভাই দাঁড়িয়ে আছে। রিয়ান ভাইকে দেখে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলি।
সবাই মিঙ্গেল শুধু আমিই সিঙ্গেল।
নিহান ভাইয়ার কন্ঠ শুনে পিছনে তাকিয়ে দেখি পুরো গ্যাং দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে রিয়ান ভাই আমার কাধ ছেড়ে একটু দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ায়। পিয়েল ভাইয়া নিহান ভাইয়ার পিঠ চাপড়ে বলে,
মিঙ্গেল হওয়ার কী জ্বালা ভাই সিঙ্গেল হয়ে বুঝবি না।
রিয়ান ভাই ভ্রু কুচকে বলে,
তোর গার্লফ্রেন্ডের আবার কী হয়েছে?
গার্লফ্রেন্ড মানেই প্যারা। কথায় কথায় সন্দেহ করে। ব্রেকআপ করতে চাইলে সুইসাইড করার হুমকি দেয়।
আহারে বেচারা।
কথাটা বলে আহির ভাইয়া হো হো করে হেসে দেয়। আহির ভাইয়ার সাথে তাল মিলায় আমরা সবাই।
আহির ভাইয়া আপনার কপালেও সুখ জিনিসটা বেশিদিন থাকবে না।
কেনো শালিকা?
দিস ইজ নট ফেয়ার ভাইয়া আগে আমি আপনার বোন পরে শালিকা।
তুই আমার বোন বুঝি তোর ব্যবহারে তো বুঝা যায় না।
কেনো ভাইয়া আমি কোনো ভাবে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি?
এখানে উপস্থিত সবাইকে তুই তুমি করে ডাকিস। শুধু আমাকে রিয়ানকে আপনি করে ডাকিস কেনো?
আপনিই তো আপনি করে ডাকতে বলেছিলেন।
কখন?
।মনে করে দেখেন আপনার সাথে আর রিয়ান ভাইয়ের সাথে প্রথম যেদিন দেখা হয় সেদিন আপনাকে তুমি করে বলেছিলাম বলে আপনি আমাকে বকা দিয়েছিলেন।
সেটা নাহয় বুঝলাম। কিন্তু সবাইকে ভাইয়া ডাকলেও রিয়ানকে ভাই ডাকো কেনো?
উনাকে ভাইয়া ডাকছিলাম বলে উনি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। তাই ভাই ডাকি।
সাহেল ভাইয়া রিয়ান ভাইকে পিঞ্চ মেরে বল,
মামা তোমার বিয়ের পর বাচ্চা-কাচ্চা হলে তারা তোমাকে আব্বা না ডেকে মামা ডাকবে।
এই কথা শুনে হাসির রুল পড়ে গেলো আর আমি লজ্জায় লাল, নীল হতে লাগলাম।
এভাবে ৬ টা পর্যন্ত সবাই মিলে আড্ডা দেই। সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিজ নিজ বাসায় চলে যায়। শুধু থেকে যায় মনি। পরেরদিন আমাকে সাথে নিয়ে মনি আর রিয়ান ভাই তাদের বাসায় আসে ।
বর্তমানে বসে আছি রিয়ান ভাইয়ের রুমের বেলকনিতে আমার সাথে রিয়ান ভাইও আছে। রিয়ান ভাই দোলনায় বসে আছে আমি উনার বুকে মাথা রেখে বসে আছি। রিয়ান ভাই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আমাদের দুজনই চুপচাপ বসে আছি। নিরবতা ভেঙে আমি বললাম,
আপনাকে একটা কথা জিঙ্গেস করি।
একটা কেনো দশটা কর।
সত্যি করে বলবেন কিন্তু।
আমি তোকে কোনোদিন মিথ্যা কথা বলেছি।
বলেননি কিন্তু যদি বলেন। আপনি আমাকে প্রমিস করুন সত্যি কথা বলবেন।
রিয়া তুই ভালো করেই জানিস আমি প্রমিস করি না। আমি যখন বলছি সত্যি বলবো তখনো বলবো।
আচ্ছা প্রতিদিন ঐ চিরকুটগুলো আপনি দেন তাই না?
রিয়ান ভাইয়ের হাত থেমে যায়। আমি উনার বুক থেকে মাথা তুলে উনার মুখের দিকে তাকাই।
কি হলো বলুন না। আপনি মিথ্যে বললে লাভ নেই কারণ আপনার লেখার সাথে ঐ লেখাগুলো আমি মিলিয়ে দেখছি।
তুই জানস ঐ লেখাগুলো আমার তাহলে জিঙ্গেস করছিস কেনো?
মনের শান্তির জন্য। আপনি আমাকে ভালোবাসেন তাহলে বলেন না কেনো?
ভালোবাসি বলাটা কী খুব জরুরী?
যার ভালোবাসা
যত গভীর
তার ভালোবাসার
প্রকাশ তত কম!
ভালোবাসা হচ্ছে
উপলব্ধি করার বিষয়,
প্রকাশ করার বিষয়
নয়।
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
আমার ভালোবাসাটা #অন্তরালে_ভালোবাসা । #অন্তরালে_ভালোবাসা মুখে বলা যায় না বুঝে নিতে হয়। বুঝতে পেরেছেন ম্যাম?
আমি দোলনা থেকে ওঠে রিয়ান ভাইয়ের কোলে বসে পড়ি। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেন। আমি দুইহাতে উনার গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে সুরে বলি,
চলবে…..