অন্তরালে ভালোবাসা পর্ব-১৯

0
5710

#অন্তরালে_ভালোবাসা
#পর্ব:১৯
#তাসনিম_জাহান_রিয়া

ভাববে আমরা বিয়ে ছাড়া রোমান্স করছি। আমাদের দুজনকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তোর তো বিয়ে করার অনেক ইচ্ছে। আমি তো তোর কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ রাখি না। তাই আজকে এই ইচ্ছেটাও পূর্ণ করে দিবো।

রিয়ান ভাই প্লিজ ছেড়ে দিন।

উহু।

নিজের কথায় নিজেই এভাবে ফেঁসে যাব কল্পনায়ও ভাবিনি। আগে জানলে জীবনেও উনাকে বিয়ের কথা বলতাম না। পায়ের শব্দ শুনে বোঝা যাচ্ছে যে আসছে সে দরজার কাছেই চলে এসেছে। ভয়ে আমার জান যায় যায় অবস্থা।

রিয়ান ভাই আপনাকে আমি জিন্দগিতে বিয়ের কথা বলবো না। এবারের মতো ছেড়ে দেন। ( কাঁদো কাঁদো গলায়)

আমাকে বলবি না তো কাকে বলবি? ( ভ্রু কুচকে)

কাউকেই বলবো না।

দরজার খোলার শব্দ শুনে রিয়ান ভাই আমার কোমড় ছেড়ে দিয়ে চোখে হাত দেন। তিনি কর্কশ গলায় বলতে শুরু করেন,

তোর চোখে কী করে ময়লা পড়ে? তুই সামনে বা নিচে না তাকিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে চলা ফেরা করছ?

উনি নিজের মতো করেই বকাবকি করছেন আর আমি আহম্মকের মতো উনার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। বোঝার চেষ্টা করছি উনি কী করতে চাইছেন। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না। পরক্ষণেই মনে হলো এই রুমে তো কেউ এসেছিল। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি মনি। বুঝতে পারলাম রিয়ান ভাই মনিকে দেখে এসব কথা বলছে। মনি আমাদের কাছে এসে রিয়ান ভাইকে উদ্দেশ্য করে উদ্বিগ্ন কন্ঠে জিঙ্গেস করে,

রিয়ান রিয়ার চোখে কী হয়ছে?

চোখে ময়লা পড়ছে।

তুই সর আমি দেখি।

আম্মু আমি পরিষ্কার করে দিয়েছি।

তবুও আমি দেখবো তুই সর।

রিয়ান ভাই সরে দাঁড়ান জানেন মনি এখন আমার চোখ না দেখলে কিছুতেই শান্ত হবে না। মনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমার চোখ দেখছে। ছোটবেলা থেকেই মনি আপু আর ভাইয়া থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসে। আমি একটু ব্যথা পেলে বিচলিত হয়ে পড়েন। আমার চোখে কিছু খোঁজে না পেয়ে শান্ত হয় মনি।

আম্মু তুমি কিছু বলতে আসছো?

হুম খাবি চল।

———————————————

রিয়ান ভাই ঘুমিয়ে আছেন আর আমি উনার পাশে বসে উনার ফোন গুতাগুতি করছি। ভুলে আমার ফোনটা বাসায় ফেলে আসছি। তাই উনার ফোনে আমার আইডি লগ ইন করে তিশার সাথে মেসেজিং করছি। ফোনের মাঝে এতোটা মগ্ন ছিলাম যে রিয়ান ভাই ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমি খেয়ালি করেনি। উনি টান দিয়ে আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে পকেটে রেখে দেয়। আকস্মিক এমন হওয়ায় আমি প্রচণ্ড চমকে যায়। নিচু মাথাটা উপরে তুলি।

আমি বিরক্তি সুরে বলি, এটা কী হলো?

সারাদিন এতো ফোন নিয়ে পড়ে থাকলে কানা হয়ে যাবি।

আমি কিছু না বলে খোলা চুল গুলো হাত দিয়ে খোপা করে বেড থেকে নেমে পড়লাম।

কোথায় যাচ্ছিস?

বাসায়।

আজকে কেনো?

কালকে প্রথম রোজা ভুলে গেছেন আপনি?

রোজার সাথে তোর বাসায় যাওয়ার সম্পর্ক কী?

আমি একলা যাব না আপনিও আমার সাথে যাবেন।

না আজকে যাবি না।

না আমি যাবো আর সাথে আপনিও যাবেন।

আজকে মঙ্গলবার তোকে নিয়ে আমি বৃহস্পতিবার তোদের বাসায় যাব।

আচ্ছা।

বাইরে যাবি?

আপনি নিয়ে গেলে যাবো।

রেডি হয়ে নে একটু পরেই বের হবো।

আমি খোপা করা চুলগুলো খোলে দিলাম। গায়ে জড়ানো উড়নাটা মাথায় দিয়ে দিলাম।

চলুন আমি রেডি হয়ে গেছি।

রিয়ান ভাই আমার দিকে একবার তাকিয়ে অন্য দিকে ঘুরে লম্বা লম্বা শ্বাস নেন। আমি ভ্রু কুচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। বোঝার চেষ্টা করছি হঠাৎ উনি এমন বিহেভ করছেন কেনো?

রিয়া তোকে আমি বলছি না আমার সামনে এভাবে আসবি না।

কীভাবে আসছি?

খোলা চুলে উড়না মাথায়। লাল উড়না মাথায় দিয়ে তোকে একদম লাল পরীর মতো লাগছে। তোকে এভাবে দেখে আমার ভয়ংকর প্রেমিক হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম। উনি এখনো অন্য দিকে ফিরে আছেন। আমি উনার রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে গিয়ে একটা কালো রঙের হিজাব পড়ে এলাম।

এবার ঠিক আছে?

হুম চল।

মনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম।

তুই এখানে দাঁড়া আমি গাড়ি নিয়ে আসছি।

আমি উনার হাতের কাছে শার্টটা খামছে ধরি। উনি ভ্রু নাচিয়ে জিঙ্গেস করেন কী হয়ছে?

গাড়ি দিয়ে ঘুরবো না।

তাহলে?

রিকশা দিয়ে ঘুরবো।

তুই তো জানিস রিকশা চড়ার অভ্যাস আমার নেই। যদি পড়ে যাই?

পড়বেন না আমি সাথে আছি তো।

একটা রিকশা ডেকে দুজন ওঠে পড়লাম। উনার হাতটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। উনি পড়ে যাওয়ার ভয়ে জড়ো সড়ো হয়ে বসে আছেন। আমি আমার হাতটা একটু আগলা করে দিলাম। উনি আমার হাতটা ঝাপটে জড়িয়ে ধরেন। আমার অনেক হাসি পাচ্ছে ঠোঁট কামড়ে হাসি থামানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলাম। একসময় হো হো হো করে হেসে দিলাম উনি আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। আমি মুখে আঙ্গুল দিয়ে মিটিমিটি হাসছি। রিয়ান ভাই ফুচকা স্টলের সামনে রিকশা থামাতে বলেন। রিয়ান ভাই রিকশাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিলেন।

দুজন দাঁড়ালাম ফুচকা স্টলের সামনে। রিয়ান ভাই দুই প্লেট ফুচকা অডার করলেন। আমি তিনটা ফুচকা খাওয়ার পড়ে জ্বালে চিংড়ি মাছের মতো লাফাতে শুরু করলাম। রিয়ান ভাই আমার হাতে আইসক্রিম দিলেন। আইসক্রিম খাওয়ার পর জ্বাল কমে গেছে।

মামুনি তোকে ননির পুতুল বানিয়ে ফেলছে। এটুকু জ্বালও সহ্য করতে পারিস না।

আমি কিছু না বলে মুখ বাকালাম। রিয়ান ভাই আমার বাম হাত ধরে হাঁটছে আর আমি ডান হাতে আইসক্রিম খাচ্ছি। উনার দৃষ্টি সামনে স্থির থাকলেও আমার দৃষ্টি উনার দিকে। সূর্যের রক্তিম আভা মুখে পড়ায় উনাকে দেখতে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে।

প্রিয় মানুষটার হাত ধরে বিকেলবেলা পাশাপাশি হেঁটে যাওয়ার অনুভূতিটাই অন্যরকম। এতক্ষণের ভালো লাগাটা কয়েক মিনিটে অসহ্যে পরিণত হলো। রাগে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।

চলবে…..