অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ৩২

0
3700

অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৩২
তাসনিম_রাইসা

অধরা থাকলে যা প্রতিদিন দেখা যেতো। রাজ ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেতেই দেখলো অধরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে নীল শাড়ি পরে বসে আছে। রাজ দৌড়ে পাগলের মতো অধরাকে জড়িয়ে ধরে বলে। কেন লুকোচুরি করছো আমার সাথে। আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবে। আর তোমাকে কষ্ট দিবো না। আর বকা দিবো না। এই বুক থেকে তোমাকে কখনো দূরে ঠেলে দিবো না। বলো আর কখনো ছেড়ে যাবে না। রাজ চোখ বন্ধ করে আছে। ভেজা চুল থেকে মাতাল করা সুবাস আসছে। রাজের মনে হচ্ছে চুলের মাতাল করা গন্ধে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে। বুকের ভেতরে অন্যররকম ভালোবাসার ঢেউ বয়ে যাচ্ছে।
– এদিকে আনিশা নিজেকে ছাড়ানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করছে না। তার কাছে সময়টা যেন স্বপ্নের মতো লাগছে। রাজ তাকে বাহুডুরে আবদ্ধ করে রাখছে সেটা সে কল্পনাও করতে পারছে না।

– রাজ আনিশার কানের কাছে মুখটা নিয়ে বললো,’ আমি জানি আমার কলিজার টুকরা আমার সাথে রাগ করে থাকেতে পারবে না। আমাকে ক্ষমা করে দিব। আমি জানতাম তুমি আসবো। ভালোবাসি তো তোমায়। বড্ডবেশি ভালোবাসি।

– আনিশা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আনিশার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে!একটা মানুষকে আরেকটা মানুষকে নিরবে এতটা ভালোবাসে জানা ছিল না। আনিসা মনে মনে ভাবলো তারই ভুল হয়েছে, কেন সে অধরার রাখা শাড়ি, চুড়ি পড়তে গেল। কেনই বা অধরার মতো ভেজা চুলে ভেজা পায়ে তার মতই রুমে প্রবেশ করলো।

– কি হলো কথা বলবে না আমার সাথে?বলো আর কোনদিন আমায় ছেড়ে যাবে না?

– আনিশা এবার চুপ থাকতে পারলো না বলেই দিল, ‘ হ্যাঁ আর তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোথাও না। তোমার কাছেই থাকবো।
– রাজ আনিশার কন্ঠে শুনে সাথে সাথে ছেড়ে দিল।

– আনিশা উঠে দাঁড়াতেই তার গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ তোমার কি করে সাহস হয় অধরার শাড়ি চুড়ি পরার?

– আনিশা কিছু বলছে না। মাথা নিচু করে আছে।

– কি হলো কিছু তো বলো।

– রাজ নীল শাড়িটা দেখে খুব ভালো লেগেছিল। তাই গোসল করে ভেজা শরীরে শাড়ি পরেছি। পারি না ঠিকমতো পরতে। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে!

– রাজ বুঝতে পারলো তার বড় ভুল হয়ে গেছে। অধরার মুহে সে এতটাই পাগল যে,’ আনিশা অধরার শাড়ি চুড়ি পরায়। অধরা ভেবে ছি! আনিশা ক্ষমা করে দিয়ো আমায়। আমি অধরা ভেবে তোমাকে।

– রাজ ক্ষমা তো আমার চাওয়া উচিত। আমি কেনই বা অধরার ব্যবহার করা শাড়ি, চুড়ি পরলাম। তোমার কোন দোষ নেই রাজ।

– আচ্ছা সরি আনিশা তোমাকে ওসব কথা বলার জন্য।

– আনিশার কাছে ভালোও লাগছে আবার খুব লজ্জাও লাগছে। লজ্জায় রাজের দিকে তাকাতে পারছে না। মুখটা অস্ত যাওয়া পূর্বের সূর্যের মতো রক্তিম হয়ে গিয়েছে। হাত পা কাঁপছে।

– রাজ চলে গেলো আনিশার রুম থেকে। রাজ চলে গেলেই আনিশা বিছানায় ধপ করে বসে পড়ল।পুরো ঘটনাটা এখনো তার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সময়টা যদি শেষ না হতো। রাজ অন্তত কাল এভাবেই জড়িয়ে ধরে রাখতো। তাহলে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ হতো। আনিশা এসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় থাকা কোলবালিশটা বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।

– রাজ আনিশার রুম থেকে বের হয়ে দক্ষিণ দিকের রুমটাতে প্রবেশ করলো। ছোট্ট রুম আজ পর্যন্ত রুমটাতে কেউ প্রবেশ করেনি রাজ ছাড়া। রাজের যখন ভীষণ মন খারাপ হয়। খুব করে অধরার কথা মনে পড়ে তখন এ রুমটাতে আসে। ছোটবেলা সবস্মৃতি এ রুমটাতে বন্দী। সারা রুম ভর্তি অধরা আর রাজের ছবি। ডানদিকে ছবিটার দিকে চোখ যেতেই রাজের চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ছবিটা যে প্রায় এক যুগ আগের। রাজ আর অধরার ছোট্ট বেলার বিয়ের ছবি। রাজ ছবিটা বুকের সাথে জড়িয়ে নিল। পাশে থাকা পুতুলটা হাতে নিতেই মনে পড়ে গেল অধরার সেই কথাগুলো, ‘ রাজ আমার কথা যখন খুব মনে পড়বে।যখন তোমার সামনে থাকবো না তখন পুতুলটার সাথে কথা বলবে।মনে হবে তুমি আমার সাথে কথা বলছো।

– রাজ পুতুটা হাতে নিয়ে বললো,’ কলিজা আর কত কষ্ট দিবে?তুমি ফিরে আসো না।বিশ্বাস করো তুমি ছাড়া আমি ভালো নেই। এই তুমি আমার কথা শুনতে পারছো কী? খুব অভিমান আমার উপর তাই না? জানো তুমি যখন তিয়াসের সাথে কথা বলো তখন আমার খুব কষ্টহয়। মৃত্যুর যন্ত্রনার চেয়েও বেশি কষ্ট হয়। আমি পারি না তোমার সাথে অন্য কারো কথা বলা শুনতে। আজ রেস্টুরেন্টে তোমার আর তিয়াসের ফোনালাপ শুনে খুব কষ্ট হয়েছে। মনে হচ্ছিল অাত্মাটা দেহ ছেড়ে বের হয়ে যাবে।

বুকে আসবে কলিজা?
আর রাগ করে থেকো না। আমি যে তোমাক ছাড়া বাঁচতে পারবো না। কি হলো তুমি কোন কথা বলছো না কেন? কথা বলবে না আমার সাথে? তুমি কথা না বললে যে আমে কষ্ট হয়। রাজ পুতুলটার কপালে চুমু দিয়ে বললো আর তোমাকে কোনদিন কষ্ট দিবো না। আর কোনদিন তোমাক বকবো না। তাও ফিরে এসো। রাজ এসব বলতে বলতে পুতুলটা বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে। বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। এভাবে কিছুক্ষণ কান্না করার পর। চোখে -মুখে পানি দিয়ে রুম থেকে বের হলো। চোখের সামনে এখনো বারবার অধরার স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে।

– এদিকে ত্রিযামিনী আর তার মা জান্নাতকে নিয়ে হসপিটালের কথা বলে,তুর্যয়দের বাড়িতে যায়।

– তুর্যয় জান্নাতকে দেখেই চমকে যায়!

– ভয় জড়ানো আড়ষ্ট কন্ঠে বলে, ‘আপনারা কে? কার কাছে অাসছেন?
– তুর্যয় আমাকে চিনতে পারছো না? আমি তোমার জান্নাত। তোমার কলিজার টুকরা।

– সরি আপনি হয়ত ভুল করছেন। জান্নাত নামে কোন মেয়েকে চিনি না। এর আগে আপনাকে দেখিনি কোথাও!

– তুর্যয় প্লিজ এমন করে বলো না। তুমি না বলেছিলে আমায় বিয়ে করবে? জানো আমাদের সন্তান পৃথিবীতে আসছে।এখন যদি তুমি এমন করো তাহলে মৃত্যু ছাড়া আমার আর কোন রাস্তা নেই।

– জান্নাত এক কাজ করো এখন তো মানুষ বিয়ের পরেও এর্বারশন করে। আর তুমি বিয়ের আগে করলে দোষ কী? এই বলে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো চলে যাও এখান থেকে। আর এই নাও কার্ড। ডাক্তার ইভার। উনি গাইনী বিভাগে আছে।

– জান্নাত আর কিছু বলতে পারছে না। দৌড়ে গিয়ে তুর্যয়ের পায়ে পড়ল। তুর্যয় প্লিজ তুমি এমনটা বলো না তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।

– ত্রিযামিনী আর তার মা বললো,’ তুর্যয় তোমার বাবা -মা কোথায়? উনারা থাকলে তাদের সাথে বিয়ের বিষয়ে কথা বলতাম। তারা যতটাকা চাই তত টাকাই দিতাম।

– মা- বাবা দেশে নেই। আর তারা চাইলেও আমি এই পতিতা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না। যে বিয়ের আগেই সন্তানের মা হয়ে যায়। তার চেয়ে পতিতা ভালো। আপনারা আসতে পারেন। আর হ্যাঁ ভবিষৎতে আপনাদের পতিতা মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবেন না। আজ অপমান করলাম না। এর পর বাসায় আসার আগেই দাড়োয়ান দিয়ে বের করে দিবো।

-ত্রিযামিনীর খুব খারাপ লাগছে। সত্যিই প্রকৃতি কখনো কাউকে ছাড় দেয় না। একটা সময় অধরাকে তার মা আর সে পতিতা, চরিত্রহীনের ট্যাগ দিয়েছিল। আজ সেই ট্যাগ তার বোনেরই গায়ে।

– এদিকে রাজ রাত্রে কিছু খায়নি। আনিশা খেতে বললে রাজ বললো তা খিদে নেই। আনিশা মনে মনে ভাবছে তার দিনের কাজটা করা ঠিক হয়নি। হঠাৎ আনিশার ফোনটা বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো বাবার ফোন আমেরিকা থেকে।

– ফোন রিসিভ করতেই, ‘ হ্যালো মা কেমন আছিস?
– আর তোর রাজের কি খবর? ছেলেটাকে দেখালিও না?
– আনিশা কি বলবে ভেবে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনিশা রাজকে ভালোবেসে ফেলে। আমেরিকা গিয়েও ভুলতে পারেনি। পারেনি রাজকে বলতেও যদি বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়। রাজ কোনদিন অধরার কথা আনিশাকে বলেও নি। আনিশা দেশে এসেছিল রাজকে নিয়ে যেতে। কিন্তু তার রাজ তার নয় শুধুই অধরার। তাই চোখের পানি মুছে বললো,’ বাবা আমি ওকে নিয়ে তোমার কাছে খুব শ্রীঘ্রই যাবো। এখন রাখি।
ফোন রেখে দিয়ে রুমে আসতেই দেখলো রাজ অধরা একটা ছবি বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
– আনিশা রাজের পাশে গিয়ে রাজের মাথায় হাত ভুলাতে ভুলাতে বললো,’ রাজ চলো লন্ডন যায়। আমি আপুকে সব বুঝিয়ে বলবো। আর আমি লন্ডন যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। এখন খেয়ে নাও তুমি ।

– রাজ খেতে বসছে এমন সময়, আননোন বিদেশী একটি নাম্বার থেকে ফোন আসলো। রাজ অধরা ভেবে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বললো,’ আপনি কি মিঃ রাজ?
– জ্বি!

– শুনেন অধরা ম্যাডাম তার বাচ্চা এর্বারশন করতে চাচ্ছে। হয়তো দু’একদিনের মধ্যে বাচ্চা এর্বারশন করে ফেলবে। আর তিয়াসের সাথে ””

চলবে””””’