#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩০
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
“আরে ওইটা তো কোনো ব্যাবসায়ী ট্যাবসায়ী না।”
“তাহলে কে?”
রিদা ফুঁপিয়ে উঠলো।কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললো…
“সামি ভাইয়া।”
আমি অবাক হলাম,মনে মনে আনন্দিতও হলাম বেশ।কিছুটা চিন্তিত হয়ে বললাম…
“পাগল তুই?সামি ভাই কই আর কই তুই?দুইজন দুই মেরুর বাসিন্দা।কিভাবে কি করবি?আমার জানা মতে তুই যা ভিতু,সামি ভাইকে কোনোদিনই এ কথা বলতে পারবি না।”
রিদা বললো…
“সেটাই তো।”
“আচ্ছা শোন আপাততো মাথা ঠান্ডা কর,মাথা গরম করলে,আর এমন ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ করে কাদঁলে হিতে-বিপরীত হয়ে যাবে।যা করবি মাথা ঠান্ডা করে করবি।ওকে?”
“আচ্ছা।ঠি ঠিকআছে?”
কথাটা বলেই আবার ফুঁপিয়ে উঠলে রিদা বললো…
“কিন্তু..!”
আমি ধমকের স্বরে বললাম…
“আবার কাঁদে।কোনো কিন্তু না।একদম চুপ।হাত মুখ ধুয়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।আর ভাবতে থাক বিয়ের পর সামি ভাইকে নিয়ে কই হানিমুনে যাবি ওকে?”
“বললেই হলো বিয়েটা যদি না হয়?আর হলেও আমার সাথে না হয়?দোস্ত আমি কিন্তু মরেই…”
আমার রাগ লাগলো,এবার ইকটু জোড়েই ধমক দিয়ে বললাম…
“ওই চুপ।সবসময় বেশি বেশি,এইটুকু একটা বিষয়কে টেনে একহাত লম্বা করে ফেলতেসে।যা বলসি তা কর,আমার ওপর বিশ্বাস নাই তোর?আছে?”
“আছে।”
“যা করতে বলেছি কর এখন,রাখলাম।”
বলে ফোনটা কেঁটে দিলাম।এই রিদার মতি-গতি হুটহাট বদলিয়ে যায়।আর মাশুল দিতে হয় আমাকে।আমি একা এতোবড় কাজ করতে পাড়বো না,তাই ভেবে ফোন লাগালাম নুপূর আর আচঁল কে।গ্রুপ কল…..
“কিরে শরৎ ভাইয়ের বউ?এতোদিনে মনে পড়লো আমাদের?শরৎ ভাইকে পেয়ে ভুলেই গিয়েছিস না।কেন যে তোরে ওই শরৎয়ের হাতে তুলে দিতে গেলাম!!আফসোস হইতাসেরে খুব।”
নুপূরের কথার সত্যতা পেলাম তার গলায় আফসোসের স্ব শুনতে পেয়ে।আমি ওর এই কথার জবাব না দিয়ে অন্য টপিক তুলে ধরলাম।বললাম…
“আচ্ছা শোন তোরা জরুরী কথা বলার ছিলো।”
আমার কথা শুনে নড়েচড়ে বসলো দুজন।আচঁল বললো…
“কি জরুরী কথা?”
“শোন তাহলে..!”
রিদার বিষয়টা খোলাসা করতেই অবাক হলো নুপূর। হা করা মুখ বন্ধ করে ঠোঁট নাড়িয়ে আঁচলের উদ্দেশ্যে বললো…
“দেখসোস ছেড়ি তলে তলে টেম্পু চালায়,আমরা করলেই হরতাল!আমাগোরে একবার জানালোও না।আমি নাই বাপু এইসবের মধ্য।আমার অভিমান হইসে,হুহ।”
বলেই অভিমান করার ভান করে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো নুপূর।আচঁল ওর পিঠে চাপড় দিয়ে বললো…
“ধুর শালি তোর অভিমানের গুষ্টি কিলাই।সিরিয়াস কথার মাঝে বাংলা সিরিয়ালের অভিমান লাগাইতাসে,একটু পর তারে-নারে-না ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও লাগাইবো।জলদি তোর ঢং বাদদে,নাইলে এক লাত্থি দিয়া তোরে রিদার ওই আচাঁর ব্যাবসায়ীর ছোট ভাইয়ের কোলে বসাই দিয়া আসমু।”
আমি ওদের কান্ড দেখে হুহা করে হাসঁতে হাসঁতে পেটে হাত চেঁপে কোনোরকমে বললাম…
“রিদার উঠবির কোনো ছোট ভাই নাই দোস্ত।”
আচঁল একবার নুপূর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বললো…
“ওরে তাইলে আচাঁর ব্যাবসায়ীর কোলোই ফালাইয়া আমু,খারা তুই!”
নুপূর মুখ ফুলিয়ে ক্যামেরার সামনে এলো,কোমড়ে হাত বুলাতে বুলাতে বললো…
“লাত্থি দেওয়ার আগেই কোমড়টা ভাংসে আমার।তোগোর শরম লজ্জা নাই,তোরা আমারে আবার গালিও দেস,ছিহ্।আচঁল ছিহ্,তোর এতো অধঃপতন হয়েছে আমি ভাবতেও পারছি না ছিহ্।”
“ওই ঢংগি চুপ।তোর জন্য টাইম ওয়েস্ট হইতাসে।ওই শ্রীজা তুই বল।”
“আচ্ছা আমার মনে হচ্ছে ফোনে পুরো ব্যাপারটা ভালোভাবে মিটমাট করা যাবে না।আগে আমরা দেখা করি,কোনো রেস্টুরেন্টে।হলে গিয়েও তো আর বলতে পারবো না,দেয়ালেরও কান আছে আর আমাদের ওখানকার যা স্টুডেন্ট মাশাল্লাহ্।”
আচঁল বললো…
“তাহলে পিজ্জা ক্লাবে দেখা করি?”
“আচ্ছা।আমি দিন তারিখ বলে দিবো তোকে।”
“ওকে।”
__________
মিনিট পেরিয়ে ঘন্টা,ঘন্টা পেরিয়ে দিন,দিন পেরিয়ে সপ্তাহ্ কেটে গেলো।
বক্সে গান বাজচ্ছে জোড়ে জোড়ে ইতিমধ্যে চারুর এক্সাম শেষ হয়েছে।আমার বলাতে সে এসেছে এ বাড়িতে,ম্যাচিউরিটি প্রকাশ পায় ওর কথা বার্তায় ইদানিং।ব্যাপারটা ভালো।আমি হলুদ থ্রি-পিস পড়েছি আজ।আর শরৎভাই হালকা টিয়ে রঙয়ের পন্জাবি।চারুকে লেহেঙ্গা কিনে দিয়েছেন শরৎ ভাই,তা পড়েই তৈরি ও আমার ঘরে তেমন আহামরি সাঁজগোজের জিনিস নেই তবে বাবার বাড়িতে আছে খুব।চারু চোখে হালকা কাজল দিয়ে লিপবাম লাগিয়ে নিয়েছে এটাই নাকি ওর সাঁজ।আমার ক্ষেত্রেও একই কান্ড।নাইমা আন্টিকে হাতে হাতে কিছু কিছু কাজ করো দিচ্ছি আমি।যদিও তেমন ভারি কাজ নয়।হলুদের ডালা,ফলের থলে আমার আর চারুর হাতে সাথে নাইমা আন্টিও আছেন।এসব স্টেজে রেখে এসে চেয়ারের একটা শাড়িতে বসে পড়লাম আমরা তিনজন।নাদিম ভাইয়ের কাজিনের আত্মীয়রা আছেন এখানে,এদিকটায় মেয়েরাই বসেছেন বেশি কিছু সংখ্যক ছেলেও আছেন।নাইমা আন্টির সাথে চেনা পরিচিতরা কথা বলছেন আমাদেরও চিনিয়ে দিচ্ছেন তাদের।নাইমা আন্টি বললেন…
“শ্রীজা উনি হচ্ছেন সুমি নাদিমের ভাইয়ের ছোট খালামণি।”
আমাকে দেখে সুমি আন্টি বললেন…
“কেমন আছো মা।”
“এই তো ভালো আপনি ভালো আছেন?”
“হ্যা আমিও ভালো আছি।”
কথাটা বলেই আমার পাশে বসে থাকা চারুর দিকে বেশ কিছুক্ষন কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে রইলেন,পরে নাইমা আন্টিকে জিঙ্গেস করলেন…
“মেয়েটা কে গো ভাবি।দেখতে তো ভারি সুন্দর,যদিও গায়ের রঙটা ইইইকটু চাপা।তাও কোনো ব্যাপার না।”
আন্টি বললেন…
“শ্রীজার বোন চারু।”
উনি চারুর দিকে তাকিয়ে হেঁসে চারুকে শুধালেন…
“তা মেয়ে কি করছো এখন।”
চারু হাব-ভাবের কোনো পরিবর্তন দেখলাম না।কিন্তু বুঝলাম ভেতরে ভেতরে সে চরম বিরক্ত।চারু বললো…
“এই তো এইবার এইচএসএসি দিবো,সামনের মাসেই এক্সাম।”
“আচ্ছা।তা বাবা কি করে?”
চারু উত্তর দেবার ভাষা পেলো না।চুপ রইলো।স্পষ্ট দেখলাম ওর চোখে জল চিকচিক করছে,মহিলাটা না জেনেই খুব গভীর ভাবে ক্ষতের যায়গায় আঘাত করে দিয়েছেন।আমিই উত্তর দেবো তার আগে পেছন থেকে শরৎ ভাই উঠে এলেন।মহিলার দিকে তাকিয়ে ভদ্রভাবে একটা হাঁসি দিয়ে বললেন…
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।তোমাকে তো চিনলাম না।”
শরৎ ভাই চারুর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বললেন…
“আমার ছোট বোন চারু।বাবার নিজস্ব ব্যাবসা আছে।আগে ছোট-খাটো একটা চারকি করতো।এখন অবসরে এটাই করছে।”
“আচ্ছা আচ্ছা।তোমার বোন দেখতে বেশ সুন্দর।”
“সবাই সুন্দর আন্টি।আপনিও খুব সুন্দর।”
মহিলাটা আনন্দ পেলেন মনে মনে খুব,যা তার চেহারায় ফুটে উঠেছে।উনি বললেন…
“কি যে বলোনা।”
শরৎ ভাই হাঁসলেন শুধু।
“আমার ছেলে ভালো চাকরি করে,সরকারি চাকরি।বেতনও বেশ,যদিও বয়সটা দেখতে বেশি দেখায়।পড়তে পড়তে চোখ মুখের এমন অবস্থা আরকি।তোমার বো..”
শরৎ ভাই আর কিছু বলতে দিলেন না ওনার উদ্দেশ্যে বললেন…
“প্রবলেম নেই আন্টি,ওনার কলিগ-ঠলিগ দেখে বিয়ে করে নেবেন।আর বয়স বেশি হয়ে গেলেও পাত্রি তো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না,বিষয়টা সত্যিই কষ্টকর।”
“হ্যা তোমার বো..”
“আন্টি নাদিম বোধয় আমাকে ডাকছে।আমি আসি।”
বলেই চলে গেলেন শরৎ ভাই।সুমি আন্টির চোখ মুখে অন্ধকার নেমে এলো,যাকে বলে এক রাজ্যের অন্ধকার।দেখলাম নাইমা আন্টির মুখে চাপা হাঁসি। আমারও হাঁসি পাচ্ছে বেশ্।বেচারি সরকারি চাকরির লোভ দেখাতে চেয়েছিলেন শরৎ ভাইকে কিন্তু ব্যার্থ আর অপমানিত হলেন তাও আমাদের সামনে।আশে পাশের কয়েকজনও ফিসফিস করে এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলছেন আর হাঁসছেন,তাও প্রকাশ্যে।আন্টি বোধয় সহ্য করতে পারলেন না তাই বললেন…
#চলবে…
#অবেলায়_তেমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৩১
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]
“আজ-কালকার ছেলে পেলেগুলোও না,রাগ মাথায় নিয়ে ঘোরে,কি বললাম আর কি বুঝলো।”
ওনার কথার প্রতিত্তোরে আমি বা নাইমা আন্টি কেউ তেমন কিছু বললাম না।তা দেখে উনি আমাকে উদ্দেশ্য করে আবার বলে উঠলেন…
“তোমার ছোট বোন থেকে তুমিও কিন্তু কোনো অংশে কম না।আমারই ভুল ছিলো,বড় বোন রেখে ছোট বোনের কথা বলাটা ভুল।”
নাইমা আন্টি আর আমি এবারও কিছু বললাম না।কোথা থেকে যেনো নাদিম এলেন।ঠোঁট কাঁটা লোকের মতো বলে উঠলেন…
“আরে চাচী কিসব বলতেসো তুমি এইসব হা?ওর সিট তো বুকিং করা হয়ে গেসে কবেই।হেহ্।”
সুমি আন্টি কিছু বুঝতে না পেরে বলে উঠলেন…
“কিসব বলছিস নাদিম?কি সিট কি বুকিং?কিছু বুঝলাম না।”
“ধূর ওসব তুমি বুঝবাও না।তোমার ভূরিয়ালা ছেলের জন্য,অমন ভূরিয়ালি পাত্রি খোঁজো।কিসব বাচ্চা বাচ্চা মেয়ের দিকে নজর দাও?তোমার ছেলে ঠিকমতো বিয়ে করলে ওর মতো ৩টা মেয়ে থাকতো তোমার ছেলের।”
এই বলে নাদিম,শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো্।সুমি আন্টি নাদিমের যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলেন।এরপর লজ্জায় অপমানে ছাদ থেকে চলে গেলেন।
অনুষ্ঠান শেষ হলো রাত ২ টো ২.৩০এর দিকে।
যদিও আমি ১১ দিকেই ঘরে এসে পড়েছিলাম।ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিতেই শরৎ ভাই ঘরে এলেন।মুখে রাগী ভাব স্পষ্ট।কিছু জিঙ্গেস করতে যাবো এর আগেই উনি বললেন…
“ওই নাদিম ছেলেটা কে?”
আমি অবাক হলাম,কারণ নাদিমকে খুব ভালো ভাবেই চেনেন উনি।এখানে আমাকে জিঙ্গেস করার কি হলো?তা সঠিক বুঝতে পারলাম না।তাই বললাম…
“নাদিম কে চেনননা আপনি?নাইমা আন্টির ছেলে।নাদিম।”
“আচ্ছা তা বুঝলাম।কিন্তু ওর সাথে তোর কিসের এতো কথা?”
শরৎ ভাইয়ের কথার ধরণটা বুঝতে পারছিনা আমি,উনি কি রাগ করে এসব বলছেন না জানার জন্য বলছেন।পুরো বিষয়টা আমার অজানা।কি রিয়েক্ট করা উচিঁত আমার?আমি বললাম…
“কিসের কথা মানে?ওনার সাথে আমাকে কথা বলতে দেখেছেন কখনো?”
“ওর সাথে বাইকে করে কোথায় গিয়েছিলি?কাল সন্ধ্যায় ওই মহিলা চারুর বিয়ে নিয়ে যে কথা বলছিলো,ওই মহিলাকে নাদিম কি বলেছিলো তা কি তোর অজানা?”
শরৎ ভাইকে কিছু বলার মতো সাহস হয়ে উঠলো না আমার।কেনোনা যে কোনো ব্যাক্তিই তার স্ত্রীকে কোনো ছেলের সাথে ঘোরা-ফেরা করতে দেখলে,ওই ছেলের তার স্ত্রীকে নিয়ে এতো চিন্তা দেখলে তাদের এমন মনে হবেই।হওয়াটা স্বাভাবিক।
আমি বললাম…
“উনি জানেন আমি অবিবাহিতা। আর এটাও জানেন আপনি আমার কাজিন।তাই উনি ফান করেও কথাটা বলতে পারেন।”
শরৎ ভাই রাগলেন ভিষণ।বললেন…
“তোর কাছে এসব ফান মনে হয়?”
আমি কিছু বললাম না।শরৎ ভাই আবারও বললেন…
“এরপর যদি কখনো দেখি,ওই ছেলের সাথে তোকে কথা বলতে।আমি সাভার ছেড়ে আবার মহাকালী উঠবো।আর মনে রাখবি,আমি ছাড়া কোনো লোকের দিকে দৃষ্টি উঁচিয়ে দেখবি না।কোনো ছেলের দিকেই না।”
আমি ঠিক কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপ হয়ে রইলাম।পরেই আবার বলে উঠলাম…
“তো ডিভোর্সের পর তো আপনি আপনার পথে আমি আমার পথে।কিসের এতো নিয়ম কানুন শর্ত আপনার?কে আপনি?”
শরৎ ভাই এগোলেন।অনেকটা,যতোটা এগোলে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়ার মতো ভয়ানক কাজটা করা যায়।আমি থমকে গেলাম এলোমেলো হয়ে গেলো সব্।মাথা যেনো কাজ করছে না,ফোনের মতো হ্যাং হয়ে গিয়েছে।২-৩ মিনিট ওখানেই দাড়িয়ে রইলাম কোনো রিয়েক্ট করার মতো শব্দ বা ভঙ্গিমা খুঁজে পেলাম না।শরৎ ভাই দূরে সরে গিয়েছিলেন।ফের কাছে এলেন, কিন্তু এবার আমি দূরে সরে যেতে চাইলে উনি আমার হাত শক্ত করে ধরলেন,আমাকে কাছে টেনে নিয়ে মাথা নিচু করে আমার কানের পাশে ফিসফিস করে বলে উঠলেন…
“আমি ভয়ানক খুব ভয়ানক।শান্ত শরৎ এর মাঝে ঘুমিয়ে থাকা ভয়ানক শরৎ কে জাগিয়ে তুলিস না।তাহলে ভয়াবহ কাজ করে ফেলবো।তুই ভাবতেও পারবি না।ভয়ানক শরৎকে ঘুমোতে দে।”
বলেই চলে গেলেন শরৎ ভাই।আমি দ্রুত ওয়াসরুমে গিয়ে ঢুকলাম।পানি ফেইসওয়াশ যা সামনে পেলাম সব দিয়ে মুখ ধুলাম।কেমন যেনো লাগছে আমার,ভালো না খারাপ তাও বুঝে উঠতে পারছি না।একদম না।
একটা রাত কেটে গেলো অদ্ভুত কিছু অনুভূতিকে নিয়ে।রাতের বেশির ভাগ সময়টাতে ঘুমোতে পারলাম না আমি।শেষ প্রহরে ঘুম চলে এলো।ভুলেও শরৎ ভাইয়ের ঘরে ঘুমোনোর মতো দুঃসাহস দেখাইনি আমি।তবে আঁচ করতে পেরেছি সকাল পেরুলেই আমার কপালে মন্দ কিছু আছে।
সকাল বেলা হুট করেই শরৎ ভাই উধাও,মামনি ফোন করে জানালেন চারুকে ও বাড়ি দিয়ে আসতে গিয়েছেন উনি।মামনিও নাকি আঁচ করতে পেরেছেন শরৎ ভাই ভিষণ রেগে আছেন।চারু কে নিয়ে পৌঁছানোর পর নাকি ১ ঘন্টাও ভালো মতো থাকেননি উনি।চলে এসেছেন।মামনি রাগের কারণ জিঙ্গের করলেও কিছুই বলতে পারলাম না।
দুপুর বেলা শরৎ ভাই এলেন,নাইমা আন্টির দূর সম্পর্কের ওই ভাগ্নের বিয়ে আজ।বিয়েতে তেমন কাজ নেই।কাল বৌভাত, যদিও আন্টি আজ যেতে বলেছেন তাও আমি যেতে চাইছি না।আর আজ চারুও চলে গিয়েছে তাই একা একা যাওয়ার ইচ্ছে ও নেই।
টেবিলের সামনে দাড়িয়ে খাবার গোছাচ্ছি, ও বাড়ি থেকে মামনি রান্না করে দিয়েছে।মাংস ভুনা,চিংড়ি দিয়ে পালং শাক।আর পাচঁমেশালি শাক বাটা।সাথে কাঁচা আম দিয়ে টক করে ডাল।
শরৎ ভাই ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলেন।আমার খাবার গোছানো শেষ। শরৎ ভাইয়ের সামনে থাকতে ইচ্ছে করছে না,কারণটা ভয়,কাল রাতের কান্ডের পর থেকে কেমন একটা আলাদা ভয় জন্মেছে ওনার প্রতি।আমি ড্রইংরুম ছেড়ে চারুর জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটাতে পা বাড়াতে নিলেই শরৎ ভাইয়ের ধমকের সুরে ভেসে আসা আওয়াজ আমার কানে এলো উনি বলছেন…
“কি সমস্যা?তোকে আমি যেতে বলেছি?এখানে এসে বোস”
ওনার বিপরীত পাশের চেয়ারে,শরৎ ভাই একটা প্লেট নিয়ে ভাত তরকারি বাড়তে লাগলেন।প্লেটটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,পুরোটা শেষ করে আরেক প্লেট নিবি,শেষ না হলে খবর আছে তোর।
চুপ হয়ে রইলাম কিছু বললাম না।
______
“আচ্ছা নাদিম সত্যি করে বল তো,তুই যেই মেয়েটাকে পছন্দ করিস,সে কি শ্রীজা?”
“উফফ মা,নিজের ছেলের সাথে এতো ফ্রিলি কথা কেমনে বলো বলোতো!আমি শরম করে না।”
“তা তোর এই লাজ-শরম কাল কই ছিলো?ঠিকই তো সুমির সামনে উল্টা-পাল্টা বলে দিলি।”
“আরেহ্ ওটা তো রেগে গিয়ে ঝোঁকের বশে করেছিলাম।”
“আচ্ছা,তাহলে আমি কি ওর কাজিনের সাথে কথা বলবো না।”
“আমি তোমারে বলসি,ওরে আমার ভালো লাগে।বেশিই ভাবো”
নাদিমের মা বেশ রেগে গিয়ে বললেন…
“হ্যা আমিই বেশি বলি।আর বলবো না।খেতে আয়,দুপুর হয়েছে।ইকটু পরই বিয়ের কাজ শুরু হয়ে যাবে সব।ঝামেলা তো আর কম নাই আমার।”
এসব বলতে বলতে রান্নাঘরের পাশে থাকা ড্রইং রুমে গিয়ে খাবার গোছাতে লাগলেন মিসেস নাইমা।কালকের অনেক খাবার বেঁচে গিয়েছে সেসব ওভেনে হালকা গরম করে নিয়ে টেবিলে খাবার গোছাতে লাগলেন তিনি।নাদিমের বাবা খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছেন নাদিম সবে মাত্র এলো।নাদিমের বাবা বিরিয়ানির মাঝ থেকে মশলা পাতি সরিয়ে রাখতে রাখতে বললেন…
“নয়নের(নাদিমের চাচা)ছেলের বিয়েটা শেষ হলে ভাবছি এবার নাদিমের বিয়ের বিষয়টা নিয়েও দেখতে হবে।নয়নের ছেলে নাদিমের ছোট,আর নাদিম ওর বড়, ছোটটার বিয়ে হয়ে গেলো আর বড়টার হলো না।বিষয়টা লোকেরা ভালো ভাবে নিবে না।”
নাদিমের মা বললেন…
“ভালো কথা বলেছো।আমারও একটা সঙ্গি হলো।তা ছেলের কোনো পছন্দ টছন্দ আছে কিনা জিঙ্গেস করো।”
“মেয়ে আমার দেখাই আছে।রূপে-গুণে সম্পূর্ণা।পড়াশোনায়ও বেশ ভালো।নাদিমকে আগ থেকেই চেনে।পছন্দও করে বোধয়।মেয়েকে রিজেক্ট করার মতো কিছু দেখছি না আমি।”
“কিন্তু তাও ওর একটা মতামত আছে।ওকে ওর মতামত জিঙ্গেস করলে ভালে হয় না?”
“আমি মেয়ের ছবি নিয়ে এসেছি।ড্রেসিংটেবিলের এলবামের ভেতরে আছে।”
“তোর কোনো মতামত আছে নাদিম?”
নাদিম খেতে খেতে মাথা নাড়লো।যা দেখে বোঝা গেলো এখন তার কোনো মতামত নেই।
নাইম মনে মনে খুশি হলেন।বললেন…
“তাহলে নয়নের ছেলের বিয়ের পর পরই তোদের দুজনের বিয়ের কথাটা পাকা করি?”
নাইমা বললেন…
“তুমি কি পাগল হয়েছো?চেনা নেই জানা এভাবে বিয়ে হয়?নিজের বেলায় ১৬ আনা।আর ছেলের বেলায় তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছো?নাদিম আগে ওই মেয়েকে দেখুক, কথা বলুক।ওর যদি ভালো লাগে তাহলে বিয়ের কথা এগোবে তা না হলে না।”
” আচ্ছা আচ্ছা,ঠিক আছে।এতে হাইপার হচ্ছো কেনো?”
“আমি হাইপার হচ্ছি?”
” না না আমি হাইপার হচ্ছি।”
“তুমি আমায় পিঞ্চ করে বলছো?”
নাইম দীর্ঘ’শ্বাস ফেললেন বললেন…
“ঠিক আছে।”
_________
“শোন আজ থেকে তোকে ভার্সিটিতে আমি দিয়ে আসবো।তোর হাব-ভাবের গতি মতি ভালো না।”
“আমার আজ এক জায়গায় যেতে হবে শরৎ ভাই।”
“কোথায় যাবি?”
“ইকটু ক্যাফেতে যাবো।নুপূর,রিদা,আচঁলের সাথে কথা ছিলো ইকটু তাই।”
“ক্যাফের লোকেশনটা দিয়ে দিস আমি নিয়ে যাবো তোকে।”
“আচ্ছা।”
#চলবে_
ভুল-ত্রুটিগুলোকে ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি।
আসসালামু আলাইকুম,
ফিআমানিল্লাহ্,💙