অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২৮+২৯

0
445

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৮
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

রেগে মেগে কিছু করা যাবে না।রাগলে কোনো কিছুর লাভ না বরং ক্ষতিই হবে এই ভেবে নাদিম খুব শান্ত গলায় চারুকে বললো…

“চলে যাও এখান থেকে…!”

নাদিমের শান্ত স্বর শুনে ভয় পেয়ে গেলো চারু,সে জানে কেউ যখন খুব বেশি রেগে যায়,আর রাগ নিয়ন্ত্র করার চেষ্টা করে তখন এমন শীতল গলায় কথা বলে তারা।চারু ভয় পেলো। বুঝতে পারলো এতোটাও রিয়েক্ট করার মতো কিছু হয়নি, ঠিক হয়নি এতোটা রিয়েক্ট করা।কাঁপাকাঁপা গলায় বললো…

“স স স রি! আমি আসলে,আ স লে আমা আমারই…”

নাদিম কিছুটা জোরেই বললো…

“চলে যাও এখান থেকে,জাস্ট গো ফ্রম হেয়ার।”

নাদিমের গলায় তীব্র রাগ,চারু বুঝলো বেশ,চোখের এক কোণে জল জমে এলো।কিছু না বলে দ্রুত কদম ফেলতে ফেলতে সিঁড়ি বেয়ে ওপড়ে চলে গেলো।সামনের ১.৫ ধাপ সিঁড়ি পর্যন্তই চারুকে দেখতে পেলো নাদিম এরপর সে উধাও।নাদিমের রাগ বাড়লো সজোড়ে কেঁচি গেইটটাকে এক ধাক্কায় লাগিয়ে দিলো,শব্দ হলো বেশ,শব্দটা ওপড় পর্যন্ত গেলো।চারু শুনতে পেরে বুঝতে পারলো কাজটা নাদিমের টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো গালে।চারু জলটা মুছে নিয়ে আবারও ওপড়ে উঠতে লাগলো।শ্রিজা চোখের জল দেখে কিছু বুঝে গেলে সমস্যা।
চারু দরজা ভিরিয়ে ঘরে ঢুকলো দেখতে লাগলো শ্রিজা আছে কিনা?ও দেখলো শ্রিজা ফোনে যেনো কার সাথে কথা বলছে?চারুর উপস্থিতি টের পেয়ে আমি বলে উঠলাম…

“কিরে চারু?নাইমা আন্টিকে পেয়েছিস?কথা হয়েছে ওনার সাথে?”

চারু শুধু হুম বললো।আমি ওর দিকে তাকালাম কিছু একটা লক্ষ করে বললাম…

“কি হয়েছে বলতো?মন খারাপ?”

“না মন খারাপ হবে কেনো?”

বুঝলাম চারু কিছু লুকোচ্ছে,বললাম…

“মন খারাপ না করলে কেউ কাঁদে না,আর না কাদঁলে চোখের কাজলও এভাবে লেপ্টে যায় না।”

আমার কথা শুনে চারু কিছু বললো না,চুপ চাপ পাশের ঘরের বেলকণিতে চলে গেলো।আমিও বিষয়টাকে আর ঘাটালাম না,মানুষের কিছু বিষয় পার্সোনাল থাকে,তাতে হাত দেয়াটা বোকামো ছাড়া কিছুই না,কিছু জিনিস খুবই ব্যাক্তিগত যা সেই ব্যাক্তি ছাড়া আর কারো জানা উচিঁত না।

_________

কাল রাতে চারু বললো,সে নাকি আপাততো ও বাড়িতে যেতে চাচ্ছে না,কলেজের কথা বলায় বললো সরকারি কলেজ প্রবলেম হবে না তেমন।তাই আর কথা বাড়ালাম না আমি আর শরৎ ভাই,ইদানিং বেশ খেয়াল করছি মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে থাকে,আমি যে ঘরটাতে থাকতাম ও ঘরটাতে একাই থাকে ও বেশ চুপচাপ থাকে।প্রতিদিনের মতো শরৎ ভাই অফিসে চলে গিয়েছেন, আমি ভার্সিটি যাবার জন্য রেডি সেডি হয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছি রিকশার অপেক্ষায়।কিন্তু ভাগ্য আজ বুঝি আমার প্রতি নারাজ।একটা রিকশাও খালি পেলাম না সব মানুষপ ভর্তি,ভালো রোদ উঠেছে আজ,তা দেখে ছাতাটা খুলে দাড়িয়ে রইলাম আমি।
মিনিট পাঁচেক পর দেখলাম আমাদের বাড়ওয়ালার সেই কুখ্যাত ছেলেটা বাইক নিয়ে এদিকেই আসছে, বাইকটা আমার সামনে এসেই থামালেন নাদিম,কিছুটা অবাক হলাম আমি।তবে স্বাভাবিক রইলাম।নাদিম বললো…

“এই যে মিস আপনার নাম টা কি যেনো?”

আমি ওনার দিকে না তাকিয়েই বললাম…

“শ্রীজা।”

“কোথায়ও যাবেন নাকি?না মানে বেশ কিছুক্ষন ধরে খেয়াল করছি দাড়িয়ে আছেন তাই বললাম আরকি।”

আমি ভ্রু কুচঁকে জিঙ্গেস করলাম…

“আপনি কি মানুষ পাহাড়া দেয়ার জন্য বসে থাকেন নাকি?”

নাদিম মাথা চুলকে বললেন…

“না তা না,আসলে ফ্রেন্ডদের সাথে ইকটু আড্ডা দিতে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলাম,পাশেই আরেক ফ্রেন্ডের বাড়ি ওর জন্য এখানে বসে বসে ওয়েট করছিলাম, তো খেয়াল করলাম আপনি দাড়িয়ে আছেন রিকশা পাচ্ছেন না তাই বললাম আরকি্”

“ওহ্ আচ্ছা,বুঝলাম।”

আমাকে আর কোনো কথা বলতে না দেখে নাদিম নিজেই বললেন…

“আপনি যদি চান তাহলে কিন্তু আপনার গন্তব্যে আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি।ডোন্ট মাইন্ড।”

“ইকটু আগেই তো বললেন আপনার নাকি কোথায় যেতে,ফ্রেন্ডের জন্য ওয়েট করছেন?”

নাদিম থতমত খেয়ে গেলেন আমার এমন প্রশ্নে বললেন…

“আরেহ্ ওটা কোনো ব্যাপার হতো?এখনই একটা এসএমএস দেবো আর সব প্রবলেম সল্ফ।”

“আমার মনে হয় না এতো ঝামেলা করা উচিঁত। ”

“আরেহ্ কিছু হবে না,তুমি জাস্ট হ্যা বলো আমি এখনই সব ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি।”

যদিও নাদিমের সাথে একই বাইকে যাওয়ার মতো কোনো ইচ্ছে আমার নেই,কিন্তু ভার্সিটিতে যাওয়াটা জরুরী তাই রাজি হতেই হলো।

শ্রীজার রাজি হওয়াতে নাদিম মনে মনে বেশ খুশি হলো।আস্তে করে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠলো ‘ইয়েস’

পকেট থেকে ফোনটা বের করে ইমান কে ফোন দিলো ইমান ওর ছোটবেলার ফ্রেন্ড,এখনো বন্ধুত্বের বন্ধন আগের মতোই অটুট আছে।বেস্ট ফ্রেন্ড বললেও ভুল হবে না।ইমানের আইডিতে ঢুকে দ্রুত টাইপ করে লিখলো… “সালা কি আইডিয়া দিলি,সাথে সাথে কাজ হয়ে গেসে,আজ তোর ট্রিট কনফ্রাম বেটা।”

___________

“কিরে আজ বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছিস,কি ব্যাপার বলতো?”

নাইমা বেগমের কথা শুনে নাদিম হাসঁলো,রান্নাঘরের দিকে গিয়ে মাকে জড়িয়ে
ধরে বললো…

“উফফ মাআআ,তুমি কি ভাবে সব জেনে যাও বলোতো? ”

নাইমা বেগম হেঁসে ফ্রাইংপ্যানে থাকা মাছ উল্টেপাল্টে দিতে দিতে বললেন…

“আমি তোর মা,ছোট থেকে বড় করেছি তোকে,তোকে বুঝবো না?”

নাদিম মায়ের ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে বললো…

“উফফ মা তুমি সবচেয়ে সেরা।”

নাইমা হেঁসে বললেন…

“এবার বল তো ওই মেয়েটা কে?”

নাদিম খানিকটা লজ্জা পেলো,না বোঝার ভান করে বললো…

“ক কো ন মেয়ে টা মাআআ?”

নাইমা বেগম শব্দ করে হেঁসে উঠলেন,বললেন…

“তুই ঠিক তোর বাবার মতো ইকটুও সাঁজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারিস না।ধরা পরে যাস।”

নাদিম লাজুক হাসঁলো। রান্নাঘর ত্যাগ করলো যতো দ্রুত সম্ভব।নাইমা বুঝলেন ছেলে তার লজ্জা পেয়েছে, মেয়েটির নাম আর এখন জানা হচ্ছে না তাহলে।কিন্তু তার এটা ভেবে ভালো লাগলো তার ছেলেরও একটা ভালোলাগার মানুষ আছে,এখন সেই মানুষটাকে এই ঘরের বউ হিসেবে তুলে আনতে পারলেই তার শান্তি।

______________

আজ খুব বেশি সাহস করে শরৎয়ের সামনে দাড়িয়েছে শ্রীজা মনে তার প্রবল ভয়।কিন্তু ভয় পেলে চলবে না তার জানতে হবে এই ভেবেই এসেছে শ্রীজা শরৎ বিছানার ওপর বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে যা তার নিত্যদিনের কাজ,শ্রীজা খাটের ওপর বসলো চুপচাপ ধীরে ধীরে ডাকলো শরৎকে…

“শ শরৎ ভাই।”

প্রথমে শরৎ শুনলো না বোধয়,এই ভেবে এবার ইকটু জোড়েই ডাকলো…

“শরৎ ভাই!!!”

শরৎ শুনলো বললো…

“হুম কিছু বলবি?”

“হ্যা, কিছু বলার ছিলো।”

শরৎ কিছু বললো না,ভাবলো এবার বোধয় শ্রীজা কিছু বলবে।কিন্তু শ্রীজা নিশ্চুপ কিছু বলার মতো সাগস পাচ্ছে না সে।বেশ কিছু সময় কেটে গেলো শ্রীজাকে কিছু বলতে না দেখে শরৎ বললো…

“কিরে তুই নাকি কি বলবি বল?”

“আচ্ছা শরৎ ভাই,ডিভোর্সের কথা কিছু কি ভেবেছেন আপনি?পাঁচ মাস হয়ে ছয় মাসে পা রাখলো। একটা সম্পর্ককে শুধু শুধু এভাবে টেনে নেয়ার কোনো মানে তো নেই তাই না।তাই ভাবছিলাম।”

শরৎ এর কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা গেলো না।সে ল্যাপটপের ভেতরে মুখ রেখেই বললো…

“শুনলাম সামনের মাসে তোর আবার এক্সাম আছে?”

শ্রীজা খানিকটা অবাক হলো এমন প্রশ্ন করায় কেনো না, শরৎ তার কথার উত্তর না দিয়ে অন্য কথা বলছে,শ্রীজা বললো…

“হ্যা তা আছে।”

“তো পড়াশোনা ভালো চলছে আদেও?”

“চলছে মোটামুটি? ”

“আমি মোটামুটি না,ভালো শুনতে চাই।আজ আমার ঘরে শুতে হবে না চারুর ঘরে গিয়ে ঘুমো।”

আমি কথা বাড়ালাম না যদিও মনে হাজার প্রশ্ন।চুপচাপ ও ঘরে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম শরৎ ভাইয়ের কথা মতো।শরৎ ভাই আবার ডাকলেন পথে, বললেন…

“আর শোন চারুর সাথে কিছুটা ফ্রি হবার চেষ্টা করিস,ইদানিং দেখছি মেয়েটা কেমন মনমরা হয়ে থাকে।বয়সটা ভয়ানক দেখে শুনে রাখবি।আর মনে রাখবি আমরা চারুর দাদীকে ওয়াদা দিয়েছিলাম,ওয়াদা ভঙ্গ কারী মুনাফিকদের দলেই পড়ে।”

আমি শুধু “আচ্ছা” কথাটা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।দরজা ভিরিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম চারুর পাশে,বেশ জানি মেয়েটা ঘুমোয়নি আমার উপস্থিতি টের পেয়েও চুপ রইলো তা দেখে অবাক হলাম।তবুও কিছু না বলে লাইট অফ করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভাংলো আমার।তাও আবার কারো…

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_২৯
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

মাঝ রাতে হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গলো আমার।তাও আবার কারো ফুঁপিয়ে কান্না করার শব্দে।প্রথম প্রথম বিষয়টাকে অতোটা পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে তা বাড়তে থাকলে বিষয়টা দেখবার জন্য বিছানা থেকে উঠে বসলাম আমি।মাঝরাত জানালা পর্দায় ঢাকা
পর্দার ফাক দিয়ে আবছা আবছা আলো আসছে।বিছানার পাশে থাকা সুইচটাতে চাপ দিয়ে ঘরের আলো জ্বালালাম আমি।একবার ভালো করে চারপাশটা পর্যবেক্ষণ করে নিলাম।ঘরে আমি আর চারু বাদে কেউ নেই,শব্দের উৎপত্তিটা ইকটু আগে আমার পাশ থেকেই হচ্ছিলো।তবে আমি ঘুম থেকে ওঠার পর পরই তা থেমে যায়,অনেক কিছু বুঝেও না বোঝার ভান করে আলোটা নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম আমি।চারুর কি হয়েছে তা বোঝা দায়।হাঁসি-খুশি মেয়েটা এভাবে একদিনের মধ্যে কি করে বদলে গেলো কিছুই বুঝতে পারছি না।কিছু করার সুযোগ পেলাম না ঘুমিয়ে পড়লাম আমি।

_______

এর মধ্যেই মাস খানিক কেঁটে গিয়েছে চারুর এক্সাম শেষ হয়ে গিয়ে এখন ফাইলান এক্সাম শুরু হবে হবে অবস্থা।ও বাড়িতেই আছে ও এখন।মামনি বলছে এইচএসসি দেয়ার পর চারুকে কয়েকটা পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরিক্ষা দেয়াবে।যেটাতে টিকবে সেটাতেই পড়াবেন তিনি প্রয়োজনে মেয়েকে ভার্সিটির হোস্টেলের সম্পূর্ন ভাড়া বহন করবেন।তবে মামনি খুব করে চাইছেন চারু যেনো জাবিতে চান্সটা পেয়ে যায়।জাবি তে চান্স পেলে ভালোই সুবিধা হবে।গোসল করে নিয়ে ছাদে গিয়ে কাপড়গুলো ছড়িয়ে দিয়ে এলাম।বারান্দায় গিয়ে নতুন রক্তজবা গাছটার বিশেষ যত্ন নিতে লাগলাম আমি,নানান জৈব-রাসায়নিক সার দেয়া হয় এটাতে।কারণ একটাই রক্তজবা আমার প্রিয়ফুল।তাই এটাকে টিকিয়ে রাখতে নানান কাজ কর্ম করা। আমার বাড়ির রক্তজবা গাছের খবর জানিনা,কিন্তু এ বাড়িতে এসে নতুন চারা গাছ বুনেছিলাম আমি সেটাই দিন দিন এভাবে বেড়ে উঠছে।দির সাথে কথা হয় না তেমন আগে যোগাযোগ ভালো ছিলো।মাঝের কয়েকটা মাস ধরেই দির কোনো খোঁজ খবর নেই,যদিও আমি বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিলাম।তবে ফোন বন্ধ ছিলো।দির বিষয়টা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাইনা আমি।শুনলাম রিদারও নাকি বিয়ে হবে হবে ভাব তার পাত্র দেখা চলছে তবে মন মতো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না,বেশ কয়েকটা সম্বন্ধ এসেছে,কেউ কেউ সরকারি চাকরিজীবী, কেউ কেউ আবার নিজের ব্যাবসা বা বাবার ব্যাবসা সামলায়, সব ভালো হয়ে গেলে হয়তোবা ও বাড়ির পছন্দ পছন্দ নয়,নয়তোবা ছেলের বয়স বেশি।রিদার সাথে বেশ কিছুদিন যাবৎ ভালোই কথা হচ্ছে।বিষয়টা হলো ওর বিয়ের ব্যাপার নিয়ে।গাছে পানি দিয়ে হাতটা ধুয়ে নিলাম আমি।শুনতে পেলাম কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে।কর্নিংবেল থাকতেও দরজায় টোকা দেয়ার অভ্যেস এই বাড়িতে একজনেরই, দরজা খুলে দেখলাম নাইমা আন্টি দাড়িয়ে আছে।বরাবরের মতো হাতে করে একটা বাটি নিয়ে এসেছেন তবে বাটিটা বেশ বড়-সড়।আমি আন্টির দিকে তাকিয়ে বললাম…

”আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?”

“ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি কেমন আছো?”

আমি মুচঁকি হেঁসে বললাম…

“এই তো ভালোই।আসেন আন্টি ঘরে আসেন বাহিরে দাড়িয়ে আছেন কেনো?”

আন্টি বসার ঘরে প্রবেশ করলেন সোফায় বসে হাতে থাকা বাটিটা টিটেবিলে রেখে বললেন…

“তোমার আর তোমার ভাই শরৎয়ের জন্য নিয়ে এলাম।আসলে নাদিমের খুব প্রিয় কাচ্চিটা আজ শুক্রুবার সে উপলক্ষ্যেই এই কাচ্চি রান্না,ভাবলাম তুমি বাচ্চা-মেয়ে আর কতো রাঁধবে, তুমি আর শরৎ তো আমার ছেলে মেয়েরই মতো দুপুরের খাবারের জন্য হয়ে যাবে।নাদিম বলে আমার হাতের কাচ্চি নাকি ওর কাছে সেই লাগে,হাহাহা।
তোমরা খেয়ে পরে রিভিউ দিও কেমন?”

পাশের সোফায় বসে আন্টির আলাপ শুনে হাসঁলাম আমি,শরৎ ভাই যেকোনো স্থানে আমাকে তার বোনরূপে উপস্থাপন করে বিষয়টা আমার কাছে পুরাতন,নতুন নয়।তবে বরাবরের মতোই বিষয়টা আমার মনে আঘাত হানলো তবে আগের মতো না।আমি বললাম…

“আপনার হাতের রান্না বেশ লাগে ,আমার আর শরৎ ভাইয়ের।আমি তো মাঝে মাঝে অপেক্ষাই করি,আপনার হাতের লোভনীয় রান্নার স্বাদ কখন নিবো?এই ভেবে।”

আমার কথা শুনে শব্দ করে হেঁসে ফেললেন আন্টি।হাতে থাকা সাদার মাঝে আকাশি রঙের কার্ডটা আমার হাতে দিয়ে বললেন…

“সামনের মাসের ১৫ তারিখ আমার ভাতিজা মানে নাদিমের চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে,হলুদটা আমাদের বাড়িতেই হবে সময়- ঠময় দেয়া আছে।বৌভাত হবে কমিউনিটি সেন্টারে,তারিখ,ঠিকানা,সময় সব কার্ডে দেয়া আছে সময় করে দেখে নিও কেমন।”

আমি বললাম…

“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আন্টি কিছু একটা ভেবে বললেন…

“আচ্ছা মাস কয়েক আগে তোমাদের বাড়িয়ে একটা মেয়ে এসেছিলো না।ওই যে চিকন চাকন করে,পাতলা গড়নের মেয়েটা!”

আন্টির বর্ণনা শুনে বুঝতে পারলাম তিনি চারু কথা বলছেন।চারু ছাড়া আমাদের বাড়িতে কেউ আসা যাওয়া করে না।একেবারেই না।আমি বললাম…

“হ্যা ওর নাম তো চারু,চারুলতা।কেনো কিছু হয়েছে?”

“হ্যা, যদি পারো ওকেও সঙ্গে করে নিয়ে এসো তো বিয়েতে।অনেক দিন হলো মেয়েটাকে দেখি না।”

আন্টির হাঁসি-খুশি কথার ভাজে চারুকে না দেখার আফসোস প্রকাশ পেলো ওনার ব্যাবহারে।

আমি স্বাভাবিকভাবেই বললাম…

“আসলে সামনে তো ওর HSC এক্সাম। দেখি এক্সাম শেষ করে যদি সময় পায় তাহলে অবশ্যই আসবে।”

“আচ্ছা তাই বলো,।”

সময় সহজে কাটে না আমার। তাই একবার আন্টিকে কাছে পেলেই হলো সারা রাজ্যেরই গল্প জুড়ে যায় দুজনের।আজও কোনো কিছুর ব্যাতিক্রম হলো না।আমি বললাম…

“তো আপনার কি খবর আন্টি?”

আন্টি মুখটা ছোট করে ফেললেন।বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন…

“আমার আবার খবর,একটা ছেলে হয়েছে! পুরো বাপের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়,বাপটাও কাজ আর কাজ করতেই থাকে।এর মাঝে আমি থাকি পুরো বাড়িতে একা।এসব কি ভালো লাগে বলো তো?”

“আপনার দেখি আমার মতো অবস্থা।”

আন্টি হাসঁলেন বললেন…

“তোমাকে নাদিমের চাচাতো ভাইয়ের বিয়ের কথা বললাম না।”

আমি বললাম…

“হ্যা।”

“সে ছেলেও নাদিমের চেয়ে ছোট,বয়স ২৩-২৪ হবে, প্রেমের বিয়ে।মা বাবা জানতে পেরে দুটোকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।আর আমার এক ছেলে যার কিনা কোনো মেয়েই ভালো লাগে না।বয়স হচ্ছে তো দিন দিন,পরে দেখা যাবে আর মেয়েই পাওয়া যাবে না।”

আমি কিছু বললাম না শুধু হাসঁলাম। আন্টি আবারও বললেন…

“তোমার মতো কোনো মেয়ের খোঁজ পেলে বোলো তো!সংসারী হবে,ভদ্র হবে,এক কথায় তোমার মতো হবে,নাদিমের জন্য তো আর কম মেয়ে দেখালম না।কেনো যেনো শুধু তোমার মতো মেয়েই পছন্দ হয় আমার।”

বলে হেঁসে দিলেন নাইমা আন্টি।আমি হাসঁতে পারলাম না,কিছু কথা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিজের দিকেই আসে।এটা তার পূর্বাভাস হলে সমস্যা,জটিল সমস্যা যাকে বলে।আমি শুধু বললাম আচ্ছা…

“আজ তাহলে আসি।”

নাইমা আন্টি চলে গেলেন।এর মাঝামাঝি সময়টাতেই ফোন করলো রিদা কন্ঠ অগোছালো, একদম এলোমেলো।বারে বার দ্রুত শ্বাস ওঠানামা করছে।কানে ফোন অডিও কলে থাকা শর্তেও মনে হলো আমি ওর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছি।আমার চোখে ভাসছে ভয়ে আতঙ্কিত এক রিদার ভয়ার্ত চেহারা।ঘেমে-ফেপে একাকার,ও বেশ অগোছালো ভাবে যত দ্রুত সম্ভব বলতে লাগলো…

“আমা আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে শ্রীজা।”

ভয় কাটলো আমার।মনে হলো বুকের ওপর থেকে ভারি একটা পাথর সরে গেলো। ওকে বকতে দু দন্ডও সময় নিলাম না,অশ্রাব্য ভাষায় একটা গালি দিয়েই দিলাম।নিয়ন্ত্রন জিনিসটা বোধয় বন্ধুমহলের মাঝে নেই তাই এতো হেয়ালি।এরপর বললাম…

“তোর বিয়ে ঠিক হইসে কই, কার্ড ছাপাইবি দ্রুত দাওয়াত দিবি!এগুলা না কইরা এসব কি করা শুরু করসোস বিয়ের খবর দিতাসোস ভালো কথা।তাই বলে এমন হুতাস নিয়ে বড় বড় শ্বাস নিয়ে বলতে হইবো?মানে বোঝাইতেই হইবো তুমি বিয়ে নিয়ে কতোটা হাইপার তাই না।”

বাক্যগুলো বলেই আরেকটা অশ্রাব্য গালি ছুড়ে মারলাম।আমার কথাগুলো বেশ মন দিয়ে শুনলো রিদা।ফোনের ওপাশ থেকে মাথা নেড়ে বার বার হাত দিয়ে ঘাম মুছে,হাতের কনুই দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বললো…

“আ’ম ইন লাভ দোস্ত।”

বলেই এক কান্নার ধারায় ভাসিয়ে দিলো সব।কি ভাসলো না ভাসলো তা জানি না,তবে আমি এটা শিওর ওর কান্নার বন্যায় আমার শান্তি ভেসে কোনো অজানায় যেনো হারিয়ে গিয়েছিলো।মানে শান্তি ভেসে গিয়ে গুম যাকে বলে।আমি কিছু একটা বুঝেও তা সম্পর্কে একদম ভালোভাবে সঠিক কিনা বা আমার ধারণায় কোনো ভুল-খুঁত আছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে এবং অপর পাশের ঘটনা জানার উদ্দেশ্যে বললাম…

“বাহ্ বিয়া ঠিক হইসে,নতুন জামাইয়ের প্রেমে পড়মা,এম ইন লাভ হইবো, এন ইন লাভ হইবো,এস,জে,কে,আর,টি,ইউ,ভি সব ইন লাভই হইবো।কিন্তু এডা নিয়া এতো আবেগ-আল্পুত হওয়ার কি আছে ভাই?হোয়াই?কেন এতো ইমোশোনাল হইতাসোস?আবার কাইন্দা কাইট্টা সব ভাসাইয়াও দিতাসোস।”

রিদা নাক টেনে টিস্যু প্যাপার দিয়ে চোখ মুখ মুছে বললো…

“দোস্ত, আমি তো ওই বেডা আঁচার ব্যাবসায়ীর লগে ইন লাভ টিন লাভে না।ওইটা হইলে তো কোনো সমস্যা হইতো না।”

বলেই আবার কাদঁতে লাগলো রিদা।আমি প্রশ্ন করলাম…

“তাইলে আবার কোন ব্যাবসায়ীরে ধোরসোস?”

“আরে ওইটা তো কোনো…”

#চলবে_

রিচেক করা হয়নি,জনগণ!