অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-২১

0
3296

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২১
#Arshi_Ayat

তিহানের হাত থেকে রক্ত পড়ছে দেখে নিশাত ছুটে এসে ধরতে চাইলে তিহান অন্যহাত দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল”কিছু হয় নি আমার এতো ব্যস্ত হওয়া লাগবে না।”

“গলগল করে রক্ত পড়ছে আর তুমি বলছো কিছু হয় নি।পাগল হয়েছো তুমি?” নিশাত উত্তেজিত হয়ে বলল।

তিহান কিছু না বলে দরজা খুলে চলে গেলো।নিশাত সেই জায়গায়ই কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়লো।আর কতো দুঃখ সইবে সে?না নিজে শান্তি পাচ্ছে না তিহানকেও শান্তি দিচ্ছে।

তিহান বাড়ির বাইরে এসে অয়নকে কল দিলো।অয়ন রিসিভ করতেই বলল”দোস্ত তুই কই?”

“আমিতো বাসায় আসছি মাত্র।

“ঠিকাছে আমি আসছি।হাত কেটে গেছে।”
“কি বলছিস?তাড়াতাড়ি আয়।বেশি ব্লিডিং হলে কিন্তু সমস্যা আছে।তুই জলদি আয়।”
“আসছি।”
তিহান চলে যাবে এই সময় নিশাত এস পিছন থেকে ওর ডান হাত ধরে থামিয়ে দিলো।তিহান পিছনে ঘুরতেই দেখলো নিশাত কাঁদছে।নিশাত কাঁদতে কাঁদতে বলল”এই অবস্থায় তুমি কোথায় যাবে না।বাসায় চলো হাতের কাচগুলো পরিস্কার করে বাঁধতে হবে।”

“না প্রয়োজন নেই আমি অয়নের বাসায় যাচ্ছি।”

“না প্লিজ ততক্ষণে অনেক রক্ত পড়বে।আমি কাচ পরিস্কার করে দিচ্ছি আর অয়ন ভাইয়াকেও আসতে বলছি।”

তিহান কোনো কথা না বলে চলে যেতে নিলেই নিশাত বলল”আমার কসম তুমি যাবে না।”

তিহান আর যেতে নিয়েও যেতে পারলো না।গটগট করে ওপরে চলে গেলো।নিশাত ওপরে এসে ফাস্ট এইড বক্স আর গরম পানি নিয়ে এসে তিহানের হাতের কাচগুলো পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো।একটু পর অয়ন এসে তিহানের হাতে ইনজেকশন দিয়ে দিলো যেনো ইনফেকশন না হয়।ইনজেকশন দেওয়া শেষ হতেই তিহান বাসা থেকে বের হয়ে গেলো পিছন পিছন অয়নও আসলো।তিহান এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে লাগলো।অয়ন ওর পাশাপাশি এসে হাঁটতে হাঁটতে বলল”কি রে তুই এমন করলি কেনো হঠাৎ?”

“নিশাত আমাকে ভালোবাসে না ইয়ার।আমি কি করবো বল?”

“ও কি তোকে বলছে যে ও তোকে ভালোবাসে না।”

“হ্যাঁ এই জন্যই তো রাগ উঠেছিলো।আর হাতের এই অবস্থা করলাম।”

“দোস্ত রাগটা একটু কন্ট্রোল কর আর তোর কি মনে হয় ও বললেই হলো ও তোকে ভালোবাসে না?আমি তোকে গ্যারান্টি দিচ্ছি ও তোকে ভালোবাসে কিন্তু হয়তো আসাদ সাহেবের জন্য কিছু বলতে পারছে না।কারণ ও জানে না আসাদ সাহেব যে ওর বাবা না।তোর উচিত সব বলে দেওয়া।”

“হ্যাঁ,কালই বলবো।আর যাইহোক আমি পারবো না ওকে ছাড়তে।”

আরো কিছুক্ষণ অয়ন আর তিহান কথা বলল।তারপর অয়ন ওর বাসায় চলে গেলো আর তিহান বাসায় চলে এলো।তিহান নিশাতের রুমের সামনে এসে দেখলো দরজা বন্ধ।তিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।

নিশাত ভার্সিটির সামনে আসতেই দেখলো তিহান আগে এসে দাড়িয়ে আছে।ভেতরে ভেতরে চমকে গেলেও ওপর থেকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সাইড কেটে চলে যেতে নিলেই তিহান নিশাতের এক হাত ধরে ফেললো।নিশাত বিরক্ত হয়ে বলল”হাত ছাড়ো ক্লাসে যাবো।”

“আজকে আর ক্লাসে যাওয়া লাগবে না।আজকে আমরা ডেটে যাবো।”

তিহানের এমন কথা শুনে নিশাতের মাথা ঘুরতে লাগলো।’ডেট’ মানে?এই ছেলে কি বলছে!কিছুটা বিষ্ময় কাটিয়ে নিশাত বলল”কি বলছো তুমি এগুলো?আমরা ডেটে যাবো মানে কি?”

“ভার্সিটিতে পড়িস তারপরও জানিস না ডেটে কেনো যায়?আর আমরা তো হবু বর বউ তো আমরা তো যেতেই পারি।”

“ওয়েট,ওয়েট কি বলছো তুমি এগুলো আমার তোমার সাথে না প্রান্তর সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে।”

“হোক তাতে কি?বিয়ে তো আমার সাথেই হবে।এখন চলো বেবি।” এটা বলে নিশাতকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।নিশাত মোড়ামুড়ি করছে।তিহান নিশাতের মোড়ামুড়ি দেখে বলল”মোড়ামুড়ি করলে কিন্তু সবার সামনে কোলে নিয়ে নিবো।তাই শান্তশিষ্ট ভাবে আয়।”

নিশাত আর মোড়ামুড়ি করলো না কারণ এতোবছরে তিহানকে ও হাড়েহাড়ে চিনে তাই আর মোড়ামুড়ি করার সাহস পেলো না।তিহান একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়লো পাশে নিশাত বসলো ঠিক বসলো বলা চলে না তিহানের চোখ রাঙানিতে বসতে হলো।রিকশা চলতে আরম্ভ করলো আর তিহান রিকশার হুড উঠিয়ে দিলো।নিশাত ভ্রু কুচকে বলল”হুড উঠালে কেনো?”

“আরে রোমান্স করতে সুবিধা হবে তাই।” এটা বলে তিহান চোখ মারলো।

“তিহান ভা…”
এরপর আর কিছু বলতে দিলো না তিহান। নিশাতের ঠোঁটে আঙুল ঠেকিয়ে বলল”শুধু তিহান নট ভাইয়া।আমরা ভাই বোন না।”

“আমি তোমাকে ভাইয়ের চোখে দেখি।”

নিশাতের কথা শুনে তিহান নিশাতের কোমরে হাত দিয়ে কানের কাছে মুখ এনে বলল”এখন থেকে সাইয়ার চোখে দেখবি।”
নিশাত পুরোপুরি শকে আছে।তিহান কখনো ওর কোমরে এভাবে হাত রাখে নি।আর এভাবে কথাও বলে নি।এখনো হাতটা কোমরেই আছে।নিশাতের হুশ আসতেই বলল”আমার কোমর থেকে হাত সরাও।”

“আমি আমার হবু বউয়ের কোমরে হাত রেখেছি তোর কি?”

“আচ্ছা তুমি এতো অসভ্য,অভদ্র কেনো?”

তিহান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল”তুই বাধ্য করেছিস।আমিতো হতে চাই নি।”

রিকশা অয়নদের বাসায় থামলো।তিহান আর নিশাত দুজনই নামলো।নিশাত জিগ্যেস করলো”এখানে আনলে কেনো?”

“আরে বললাম না আমরা ডেট করবো।সেইজন্য এটাই পারফেক্ট প্লেস।”

“মানে ক কি ববববববলছো?” নিশাত মোটামুটি ভয় পেয়েছে তিহানের কথা শুনে।তিহান ঠোঁট টিপে হেসে বলল”হ্যা,সত্যিই বললাম।অয়ন আর ভাবি কেউ নেই।ওরা কুষ্টিয়া গেছে।আমাকে বাড়ির চাবি দিয়ে গেছে।আহা!পুরো বাড়িতে কেউ নেই।আমি আর তুই।”

এটা বলে আবার একটা বাঁকা হাসি দিলো।নিশাত ভয়ে ভয়ে বলল”এএএএমন ককককরছো ককককেনো?প্লিজ যেতে দদদাও।”

তিহান পারছে না হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়।কিন্তু এখন হাসলে সব প্ল্যান ভেজতে যাবে তাই হাসিটা কন্ট্রোল করে বলল”আরে ভয় পাচ্ছিস কেনো?চল ভেতরে যাই।”

এটা বলে নিশাতের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো।তারপর ভেতর থেকে দরজায় তালা আটকে দিয়ে তিহান পা উঠিয়ে সোফায় বসে পড়লে।নিশাত ওর মুখোমুখি সোফায় গুটিশুটি হয়ে বসলো।তিহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল”ইশশ!প্রথম ডেট ফিলিং এক্সাইটেড!!তোর কেমন লাগছে?”

নিশাত মনে মনে বলল’ডরে মরে যাচ্ছি আর ওনি এক্সাইটেড।আল্লাহই জানে কি করবে।বেশি কিছু করতে আসলে বাথরুমে ঢুকে বসে থাকবো।নিশাতের মনে মনে এই প্ল্যান চললেও ওপরে ওপরে বলল”কি করবা তুমি আমার সাথে?”

“ডেটে এসে মানুষ কি করে?তাও আবার রুম ডেট।” এটা বলে তিহান নিচের ঠোঁট কামড়ে চোখ মারলো।

তিহানের কথাবার্তায় ভয় লাগছে নিশাতের।কোনোমতে পালাতে পারলেই বাঁচা যেতো।কিন্তু পালানোর কোনো উপায় নেই।নিশাতের চিন্তিত মুখ দেখে তিহান মুচকি হেসে কিচেনে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর এক মগ কফি এনে নিশাতের পাশে বসে বলল”ভাবলাম এক কাপেই হবে আমাদের দুজনের তাই না?”

“আমি খাবো না।” নিশাত অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।

নিশাতের কথা শুনে তিহান ওর কোমর চেপে ধরে কিছুটা কাছাকাছি এনে বলল”এখন খাবি?নাকি আরেকটু…”

তিহানের আর কিছু বলতে হলো না নিশাত কফির কাপ থেকে এক চুমুক দিয়ে আবার তিহানের হাতে দিলো।তিহান বাঁকা হেসে নিশাতের ঠোঁট ছোয়ানো অংশ থেকে খাওয়া শুরু করলো।
খাওয়া শেষে বলল”চল বেডরুমে চল।

নিশাত ভয় পেয়ে বলল”বেডরুমে যাবো কেনো?”

“আরে যা হবে সবতো ওইখানে হবে।”

তিহানের কথায় নিশাত ঢোক গিললো।তিহান নিশাতের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলো।নিশাত হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে করতে বলল”না না প্লিজ আমার সাথে এমন করো না।নামাও আমাকে।”

তিহানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই ও বেডরুমে এসে নিশাতকে বেডে বসিয়ে দরজা আটকে দিলো।তারপর শার্ট খুলে নিশাতের দিকে এগুতে লাগলো….

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)